বাজেট: উচ্চাকাঙ্ক্ষী কিন্তু নিরাপদ নয়

আলী আহমদ
Published : 27 August 2010, 01:42 PM
Updated : 13 June 2011, 01:54 PM

খুব স্বস্তির সাথে একটি বিষয় বেশ ক'বছর যাবৎ আমরা লক্ষ করছি। জাতীয় বাজেট ঘোষণা শেষ হওয়ার প্রায় সাথে সাথেই ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের পক্ষ থেকে দু'টো মিছিল বের করা হতো ঢাকার রাজপথে। দুটো মিছিলেরই সামনে শোভা পেত সুবিশাল ব্যানার। সরকারি দলের মিছিলের ব্যানারে লেখা থাকত 'গণমুখী' বাজেটকে স্বাগত জানিয়ে প্রশংসাসূচক বেশ ভালো ভালো কিছু কথা। অপরদিকে, বিরোধী দলের ব্যানার 'গণবিরোধী' বাজেটকে প্রত্যাখ্যান করার দ্ব্যর্থহীন ঘোষণা। বলার অপেক্ষা রাখেনা যে ঐ ব্যানারগুলো লেখা হতো বাজেট ঘোষণার বেশ আগেভাগে; আর মিছিলেরও আয়োজন করা হতো ওভাবেই। আমাদের সংবাদ মাধ্যমগুলো বেশ গুরুত্ব দিয়েই দু'টো মিছিলের সংবাদ পরিবেশন করতো। সংবাদ মাধ্যমে ওগুলো দেখতে দেখতে ও শুনতে শুনতে আমাদের মত দুর্জনেরা মুচকি হেসে তখন প্রশ্ন করেছি, আচ্ছা, বাজেট ঘোষণার আগেই তাঁরা জেনে গেলেন কি-করে যে ওটা গণমুখী না গণবিরোধী? বেশ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গই দু'দলের ঐ শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন তখন। তাঁরা যে আমাদের মুচকি হাসি দেখতে পেয়েছেন কিংবা সে বিষয়ে ধারণা করতে পেরে হাস্যকর ঐ শোভাযাত্রা বন্ধ করে দিয়েছেন–এমনটি ভেবে গর্বিত হবার মতো অতখানি উদ্ধত আমরা নই।

তবে বেশ স্বস্তি পাচ্ছি এই ভেবে যে হাস্যকর এই বিষয়টি থেকে তাঁরা বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। এবং আশা করছি, আরো অনেকগুলো হাস্যকর এবং দেশের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর বিষয়গুলোও তাঁরা পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে আসতে পারবেন। গণমানুষের আন্দোলনের সুফল হিসেবে দেশ গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এলেও, সেই ধারাকে বারবার হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছেন রাজনীতিকগণ। তার একটি হচ্ছে সংসদে ধারাবাহিক অনুপস্থিতি। তেমনি এক বিরোধীদলীয় অনুপস্থিতির মধ্যেই উপস্থাপিত হলো এবারের জাতীয় বাজেট, গত ৯ জুন।

গত ক'বছর ধরে বাজেটের আকৃতি ক্রমাগত বাড়ছে, আর অনেকেই তাঁর সমালোচনা করছেন 'বৃহৎ', 'উচ্চাকাঙ্ক্ষী' ইত্যাদি অভিধা দিয়ে। এবারের বাজেট উপস্থাপনার একেবারে শেষ পর্যায়ে অর্থমন্ত্রি তার উত্তর দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে অর্থনীতির আকৃতি যত বড় হবে, বাজেটও তত বড় হতে থাকবে। এটি যথার্থ। বড় হতেও হবে। কিন্তু প্রশ্ন থাকে বাস্তবায়ন নিয়ে। আর ঐটিই হচ্ছে মূল চ্যালেঞ্জ। এই বাস্তবায়ন মূলত দু'টো বিষয়ের; তার একটি হচ্ছে সুবিশাল অংকের টাকার যোগান দেয়া। এবারের বাজেটে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১,৬৩,৫৮৯ কোটি টাকার। এবং আপাতদৃষ্টিতে খটকা লাগলেও, তারও চেয়ে অধিকতর কষ্টসাপেক্ষ হচ্ছে এই টাকা ব্যয় করার। এই আয় ও ব্যয়ের খাতগুলো সুনির্দিষ্ট ও পূর্বনির্ধারিত এবং সরকারের তা ভালোভাবেই জানা। আশঙ্কা থাকে প্রাক্কলন কিংবা প্রক্ষেপন অনুযায়ী, মোদ্দা কথায়, হিসেব মতো ঐ টাকাগুলো পাওয়া এবং খরচ করা যাবে কি-না, তাই নিয়ে। সরকারি আয়ের প্রধানতম উৎস হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। গত কয়েক বছর যাবৎ রাজস্ব বোর্ড অসাধারণ সাফল্য দেখিয়ে আসছে। চলতি অর্থ বছরেও উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়ে তার আগের বছরের তুলনায় ২৭% বেশি রাজস্ব আয় করেছে। এটি সন্দেহাতীতভাবে অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। এই সাফল্য অর্থমন্ত্রিকে অনেক বেশি প্রত্যয়ী করে তুলেছে বলা যেতে পারে। নতুন বাজেটে সুবিশাল অর্জনের এই বিস্তৃত ভিত্তির ওপর আরো ২৪% অতিরিক্ত রাজস্ব আদায়ের মাধ্যমে পূর্বোল্লিখিত ১,৬৩,৫৮৯ কোটি টাকা সংগ্রহ করতে হবে। এই বিশাল অংকের রাজস্ব আয়ের জন্য অর্থমন্ত্রি রাজস্ব বোর্ডের সংস্কারের কথা বলেছেন, মাঠ পর্যায়ে রাজস্ব-প্রশাসন বিস্তৃতির কথা বলেছেন, এবং পাঁচ বছর মেয়াদী সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দক্ষতা বাড়িয়ে ২০১৬ সাল নাগাদ কর-জিডিপির অনুপাত বর্তমানের ৯.৩ থেকে বাড়িয়ে ১৩% শতাংশে উন্নীত করার কথাও বলেছেন। সংস্কার কর্মসূচি ও পরিকল্পনা হিসেবে এগুলো অবাস্তবও নয়, অসাধ্যও নয়। কিন্তু তা অর্জনের জন্য অনেকগুলো শর্ত পূরণ করা দরকার। রাজস্ব-প্রশাসনের দেশব্যাপী বিস্তৃতি অবশ্যই অধিকতর রাজস্ব সংগ্রহে অবদান রাখবে, কিন্তু তার সুফল পেতে বেশ সময় লাগবে। আর বাজেট হচ্ছে এ বছরেরই ব্যাপার। তাছাড়া, আইনের শাসন বলতে যা বুঝায় তার প্রচলন যতদিন না করা যাবে, ততদিন জাতীয় জীবনের অন্যান্য সকল ক্ষেত্রের মত রাজস্ব প্রশাসনেও তার কালো ছায়া পড়তেই থাকবে। এবারের বাজেট ঘোষণার অত্যন্ত প্রশংসনীয় একটি দিক হচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও মন্ত্রি-এম.পিদের আয়ের ওপর কর আরোপ করা। কিন্তু কর প্রশাসন কি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত হওয়া ছাড়া কোনো মন্ত্রি-এম.পি অথবা বড় ব্যবসায়ীর করদায়িতা পরীক্ষা করে দেখতে পারবে? আমার ধারণা, সবাই বলবেন তা' পারবে না। এই বিশ্বাসটি কি কোনো সরকার দেশের গণমানুষের মনে সঞ্চার করতে পারবে যে সামাজিক অবস্থান ও দলমত নির্বিশেষে কর প্রদানসহ আইনের সকল বিষয় সবার ওপর সমানভাবে প্রযোজ্য হবে? এটি করতে পারলে, আমার বিশ্বাস, কর আদায়ের লক্ষমাত্রায় পৌঁছা কখনোই অসম্ভব হবে না।

কর আরোপের আরো দুয়েকটি বিষয় নিয়ে সংক্ষেপে কিছু আলোচনা করতে চাই। বেশ ক'বছরের অগ্রহণীয় অবস্থা কাটিয়ে উঠে অর্থমন্ত্রি এবার সব ধরনের সিগারেটের ওপর কর বাড়িয়েছেন। অধিকতর রাজস্ব আয় ও জনস্বাস্থ্যের সহায়ক ভূমিকা রাখবে এই পদক্ষেপ। কিন্তু, দুর্ভাগ্যক্রমে, অর্থমন্ত্রি এবারও নতি স্বীকার করলেন বিড়ির স্বার্থ রক্ষাকারি সংঘবন্ধ চক্রটির কাছে। গ্রামাঞ্চলের অদক্ষ, নারী ও শিশু শ্রমিকরা কাজ করে বিড়ির কারখানায়। কিন্তু বাংলাদেশের অত্যন্ত শক্তিশালী কয়েকটি শিল্পপতি পরিবার গোটা বিড়ি শিল্পের মালিক ও নিয়ন্ত্রণকারী। সমাজের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকে তারা বুঝাতে সমর্থ হন যে বিড়ির ওপর কর বাড়ালে দেশের লাখ লাখ অসহায় ও অদক্ষ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। অর্থমন্ত্রি তাঁর বিপুল সংখ্যক সহকর্মীদের চাপের মুখে বারবার নতি স্বীকার করেন। কিন্তু ব্যাপারটি আসলে মোটেই সে রকম নয়, যেরকম করে তারা বোঝেন অথবা আমাদেরকে বলেন। বিড়ির ওপর কর না বাড়ানোর ফলে জনস্বাস্থ্যের যে ক্ষতি হয় এবং তার ফলে অর্থনীতির ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ যে চাপ বাড়ে তা সম্ভাব্য বেকারত্বের চেয়ে অনেক বেশি। গবেষকরা দেখিয়েছেন যে বিড়ির ওপর কর বাড়ালে যে পরিমাণে রাজস্ব আয় বাড়বে তার চেয়ে অনেক কম ক্ষতি হবে বেকারত্বের দ্বারা। সম্ভাব্য ঐ বেকারদের ক্ষতিপূরণ দিয়েও সরকারের রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকবে। আর এর ফলে ধুমপান নিরুৎসাহিত হয়ে গণস্বাস্থ্যের যে উপকার হবে তা অনেকগুন বেশি সহায়তা যোগাবে জাতীয় অর্থনীতিতে।

অর্থমন্ত্রির নিজের এবং অন্যান্য মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের না-জানা থাকার কথা নয় যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার উৎখাত করতে সরকার আন্তর্জাতিক একটি কনভেনশনে দস্তখতকারি। ঐ কনভেনশনের আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ নামে একটি আইনও প্রণয়ন করা হয়েছে। কিন্তু বিড়িকে কর বাড়ানো থেকে অব্যাহতি দিয়ে সরকার নিজের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছে, আইন অমান্য করছে ও জনস্বাস্থ্যের ক্রমাগত ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করা থেকে বিরত থেকে অন্যায় করছে। অর্থমন্ত্রিকে এ ব্যাপারে আরো দৃঢ় হতে হবে।

আসবাবপত্র বা ফার্ণিচার আমাদের একটি উঠতি শিল্পখাত। এর রপ্তানী সম্ভাবনাও প্রচুর। ইতোমধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করে এই খাত লক্ষ্যযোগ্য পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও অর্জন করেছে। সুখের বিষয়টি হলো অর্থমন্ত্রি এর স্বীকৃতি দিয়েছেন, এবং এই খাতকে আরো প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে চাইছেন। তারই ফলশ্রুতি হলো একদিকে তৈরি আসবাবপত্র আমদানীর  ক্ষেত্রে ৫% রেগুলেটরি ডিউটি আরোপ করা এবং স্থানীয় উৎপাদনের দুইটি প্রধান উপাদান পার্টিকেল বোর্ড ও এম.ডি.এফ বোর্ড আমদানির ক্ষেত্রে ৫% রেগুলেটরি ডিউটি প্রত্যাহার করা। আশা করা যাচ্ছে, এর ফলে সম্ভাবনাময় এই খাতটি উৎসাহ পাবে। তবে এ-ব্যাপারে সরকারের আরো করণীয় আছে বলে আমার মনে হয়।

কর কর্তৃপক্ষের কাছে অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা বৈধ করার জন্য অনেক বছর থেকেই সুযোগ দিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু কখনোই এ ব্যাপারে আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি। তার সবচেয়ে প্রধান কারণ অনুরূপ সুযোগের মেয়াদ শেষে কোনো কালো টাকার মালিককে কখনো খুঁজে বের করার চেষ্টাই হয়নি; শাস্তি দেয়া তো দূরের কথা। সুতরাং এই অন্যায় সুযোগ প্রদানের কাংখিত ফল পাওয়া যায় না; আর অন্যদিকে সৎ করদাতাদের সততাকে শাস্তি দেয়া হয়। এ বিষয়টি সরকারকে ভালো করে ভেবে দেখতে হবে। কর অবকাশের ব্যাপারেও একই কথা প্রযোজ্য।

এবারে বাজেটের ব্যয়ের দিকটায় আসা যাক। এবারের বাজেট একটি ঘাটতি বাজেট। এমনিতে ঘাটতি বাজেটে দোষের কিছু নেই। এর খুব সাধারণ অর্থ হচ্ছে সরকারের যা বছরভিত্তিক মোট আয় ঐ একই সময়ে খরচ তার চেয়ে বেশি। ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি খুব ভালো লক্ষণ না-হলেও, রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে প্রায়শই এটি ভালো জিনিস। সরকারের ব্যয়ের একটি অংশ উন্নয়নমূলক; আরেকটি অনুন্নয়নমূলক। প্রথমটি সহজহবোধ্য। রাস্তা-ঘাট-স্কুল-কলেজ-হাসপাতালসহ যা কিছু জনকল্যাণমূলক সে-সবই হচ্ছে এর অন্তর্গত। কিন্তু অনুন্নয়নমূলক ব্যয় সরকারি উন্নয়নের সাথে জড়িত না-হলেও অত্যাবশ্যকীয়। যেমন সরকারি কর্মচারিদের বেতন-ভাতা, সরকারি সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, ইত্যাদি। আমাদের মত কম আয়ের একটি দেশে বার্ষিক নিজস্ব আয় দিয়ে বহুত কষ্টে-সৃষ্টে হয়তো অনুন্নয়ন ব্যয় নির্বাহ করা যেতে পারে; কিন্তু উন্নয়নের জন্য আরো ব্যয় দরকার এবং তা করতে হলে প্রায়শই ঘাটতি বাজেট করতে হয়। বাজেটের এই ঘাটতি অংশের টাকা কিছু আসে সরকারি রাজস্ব আয় থেকে, কিছু বৈদেশিক সাহায্য ও ঋণ এবং কিছু প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ থেকে। এর কোনোদিকে একটু ঘাটতি পড়লেই সরকারকে হয় দেশী ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় নতুবা টাকা ছাপাতে হয়। শেষের ব্যাপারটি করা খুবই সহজ কিন্তু তাতে মুদ্রাস্ফীতি হয়ে অর্থনীতির এবং দেশের মানুষের অবস্থা খুব খারাপ করে দিতে পারে বলে আধুনিক সময়ে কোনো সরকারই ও-পথে পা' বাড়াতে চায় না। ব্যাংক ঋণ নেয়া যায় এবং তা নেয়ার কথা বলাও হয়েছে এই বাজেটে। কিন্তু অতিরিক্ত ঋণ নেয়া হলে ব্যক্তি মালিকানাধীন শিল্প-বাণিজ্য খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ সরবরাহ কমে গিয়ে দেশের উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হবার আশংকা থাকে। এবারের বাজেট ঘোষণার পর ব্যবসায়ীরা এই আশংকা প্রকাশ করেছেন।

বাংলাদেশে উন্নয়নের  ক্ষেত্রে একটি আঞ্চলিক বৈষম্য রয়েছে। দেশের উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চল অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে অর্থনৈতিক ও অন্যান্য বিষয়ে পিছিয়ে আছে। এই পশ্চাদপদতা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে । এটি দূর করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রথম, এবং এই সরকার ক্ষমতায় আসার পরও, এনিয়ে বাজেটে কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা হয়েছিল। তার ফলাফল কোনোদিন জানা যায়নি। দুঃখের বিষয় অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটে এ বিষয়ে একেবারে চুপ। এ বিষয় তাঁকে অবশ্যই ভাবতে হবে এবং বাজেটে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের সুস্পষ্ট ঘোষণা দিতে হবে।

আমাদের দেশটি ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে উন্নীত হবে– এই লক্ষ সামনে রেখেই আমাদের ষষ্ঠ পাঁচশালা পরিকল্পনা প্রণীত হয়েছে। সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর অংশ হিসেবেই নতুন অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ৭% বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাতে যে বেশি পরিমাণ বিনিয়োগ লাগবে তা' জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়, বৈদেশিক ঋণ, ব্যাংক ঋণ ইত্যাদি থেকে আসবে বলে হিসেব করা হয়েছে। এগুলো সংগ্রহ করতে অনেক পরিশ্রম করতে হবে জাতিকে।

তবে শত পরিশ্রম করে এই অর্থ সরবরাহ নিশ্চিত করা গেলেও তা যদি যথাসময়ে যথাযথ খাতে দুর্নীতিহীনভাবে দক্ষতার সাথে ব্যয় করা না-যায় তাহলে ৭% প্রবৃদ্ধি হবে না। জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে। সেজন্য দক্ষ ও দুর্নীতিহীন প্রশাসন লাগবে যারা ভয়-ভীতি ও পক্ষপাতিত্বের উর্ধ্বে থেকে উন্নয়নখাতের ঐ অর্থ যথযাথভাবে ব্যয় করতে পারেন। অর্থমন্ত্রি ও গোটা সরকারের সামনে বাজেট বাস্তবায়নের এটি অন্যতম প্রধান চ্যালেঞ্জ। তাঁদের নেতৃত্বের মূল পরীক্ষাও আসলে এখানে।

আলী আহমদ : লেখক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য।