খদ্দের চান পণ্যের মান

আ কা রাজিউল হক
Published : 8 June 2011, 04:52 PM
Updated : 8 June 2011, 04:52 PM

কোয়ালিটি বা গুনগত মান সম্পর্কে ধারণা নতুন নয়। হাজার হাজার বছর আগের কথা, যখন থেকে মানুষ ব্যবসা শুরু করে এবং বাড়তি মালামাল তৈরি করতে সক্ষম হয় যা অন্যের পছন্দনীয় পণ্যের সাথে বদলি করতে পারে, তখন থেকে মানুষ পণ্য সম্পর্কে সচেতন হতে শুরু করে। শুরুতে মান শুধু প্রয়োজনীয়তার সাথে সামঞ্জস্য রাখা সীমাবদ্ধ ছিল।

গুণগতমান

দরকারি শর্তের সাথে যা সামঞ্জস্যপূর্ণ।
এই সংজ্ঞাটি অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। কেননা যে দু-পক্ষের মধ্যে বিনিময় নিয়ে কথাবার্তা চলছে, তারা যদি দরকারি শর্তের বিষয়ে একমত হতে পারে, শর্তগুলো যদি পরিষ্কারভাবে বোধগম্য হয় এবং শর্তগুলো যদি চেক করার মত হয় তাহলে কোন সমস্যা থাকবে না। কিন্তু সমস্যাটা হলো দু-পক্ষের মধ্যে ব্যবধান শূন্য হওয়া। কিন্তু বর্তমান পৃথিবীতে উৎপাদক বা সেবা প্রদান করে তাদের সাথে ক্রেতা/সেবা ব্যবহারকারীর দূরত্ব অনেক। তাই আজকের পৃথিবীতে ভোক্তা কোন কোন বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে, সেটা জানা প্রয়োজন। সেটা নিখুঁতভাবে জানা থাকলেই উৎপাদনকারী বা সরবরহকারী প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণে সচেষ্ট হতে পারে। যে সব প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত ভোক্তার বর্তমান দরকারী গুণাগুণ সম্পর্ক থেকে ভোক্তার প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করতে পারে তারাই গ্রাহককে সন্তুষ্ট করতে পারে বিধায় ব্যবসায় টিকে থাকতে পারে।

এখন কোয়ালিটির আরেকটি সংজ্ঞা আমরা দেখতে পারি।

কোয়ালিটি ব্যবহারকারীর প্রয়োজনীয় শর্তের সাথে সামঞ্জস্য

এ সংজ্ঞা আগের মূল সমস্যাটা দূর করলেও নতুন অনেক সমস্যা নিয়ে আসে। যেমন একজন ক্রেতা যে শর্তে রাজী হচ্ছে অন্য ক্রেতা আরেকটি নতুন শর্ত জুড়ে দিতে পারে। তাহলে উপায় কী?

কোয়ালিটি: ব্যবহারের জন্য উপযুক্ততা বের করা ক্রেতার দরকারী শর্তের চেয়ে কিছুটা সোজা। ব্যবহারের উপযুক্ত করে পণ্য বা সেবা তৈরি করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়াবে না যদি গুনাগুণকে ষ্টান্ডারাইজড (মান নির্দিষ্টকরণ) করা হয়।
কিন্তু সমস্যাটা দেখা দেয় অন্য জায়গায়, উপযুক্ততা, দরকারী শর্ত এগুলো সময়ের সাথে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল।

আমরা আজকের পৃথিবীতে কি দেখতে পাই?

প্রয়োজনীয় গুণাগুণের শর্তগুলো নিয়ন্ত্রণ, সংবিধিবদ্ধ, ফ্যাশন ও প্রতিযোগিতার উপর নির্ভর করে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হচ্ছে। তার মানে পণ্য বা সেবার মান সম্পর্কে মানুষের ধারণাও পরিবর্তিত হচ্ছে। আমরা যে কোন একটা পণ্যকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি। আমরা সকলেই যানবাহন ব্যবহার করি। আমরা মোটর কারের উদাহরণ নিলে দেখবো-ব্যবসায়ে টিকে থাকার জন্য গাড়ির মান কোথায় আসছে। শার্ট, সাবান, কলম, ক্যাসেট প্লেয়ার, টিভি, ফার্নিচার যে কোনটার অবস্থা একই রকম। তাহলে আমরা দেখছি পণ্যমান সম্পর্কে ধারণা, বিধিনিষেধ, শর্ত, অনবরত পরিবর্তন হচ্ছে। অর্থাৎ গুণগতমান একটি চলমান লক্ষ্য ।

একমাত্র সেই সব ব্যবসায়ীই টিকে থাকবে যারা এই চলমান লক্ষ্যের দিকে দৃষ্টি রাখছে এবং তাকে চলমান অবস্থায় পূরণ করতে পারছে।

সুতরাং ব্যবসায়ের ধরনটা কী রকম হওয়া উচিত:
১. কোম্পানির সিনিয়র কর্মকর্তাগণ ব্যবসাকে এমনভাবে চালাবেন যাতে করে কোম্পানির মধ্যেই ক্রেতার প্রয়োজনীয়তা জানার একটা পদ্ধতি থাকবে। সে অনুযায়ী মান নিশ্চিত করারও ব্যবস্থা থাকবে।
২. মান নিশ্চিত করার জন্য কাচাঁমাল কেনা, পণ্য উৎপাদন বা যোগান, এমনকি ক্রেতার কাছে পৌঁছানো, বিক্রয়োত্তর সেবা, সমস্ত ধাপ পরিষ্কারভাবে লিখিত হলে শুধু চলবে না এটা পালন করার প্রতিষ্ঠিত নীতি থাকতে হবে।
৩. পদ্ধতি নিজেই দরকার মতো মান উন্নয়নের ব্যবস্থা করবে– এই ধরনের অবস্থা থাকতে হবে।

এর মানে হচ্ছে একটি মাননিশ্চিতকরণ পদ্ধতি বা সিষ্টেম থাকতে হবে যাকে আমরা বলি গুনগতমান নিশ্চিতকরণ পদ্ধতি।
মান নিশ্চিতকরণ এবং মাননিয়ন্ত্রণ এক জিনিস নয়। আবার অনেকে মনে করেন যে, মাননিশ্চিতকরণ মাননিয়ন্ত্রণের বদলে ব্যবহার হয়। কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে দুটোই ব্যবহার হয়, এরা একে অপরের পরিপূরক ।

মাননিয়ন্ত্রণকরণ মানব্যবস্থাপনার একটি অংশ যা কোয়ালিটির প্রয়োজনৗয়তা মিটানো নিশ্চিয়তার কেন্দ্রবিন্দু। কার্যকরী ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে দুটোই ব্যবহার হয় ।

কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা

প্রথমেই দেখা যাক ব্যবস্থাপনা কী? নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে সংস্থাকে সংগঠন করা, নিয়ন্ত্রণ করা এবং নির্দেশনা দেওয়াকে ব্যবস্থাপনা বলে। আরও ভালভাবে বলতে গেলে বলা যায় যে, ব্যবস্থাপনার নীতি (লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য) নির্দিষ্ট করা এবং ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে এর যথাযথ প্রয়োগ করা। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে সংস্থার এই নীতি (লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য) অবশ্যই তার প্রতিটি লোকবলকে বুঝাতে হবে যাতে তারা অভিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়। কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা কোন বিচ্ছিন্ন কাজ নয়, মানবসম্পদ, অবকাঠামো কাঁচামাল ইত্যাদি যথাযথভাবে যোগান দেওয়া ব্যবস্থাপনার অন্যতম দায়িত্ব। সুতরাং কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা তার নীতি অর্জনের উদ্দেশ্যে সমগ্র সম্পদের সংগঠন ও নিয়ন্ত্রণ করে এবং নির্দেশনা দেয়।
কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠানকে কোয়ালিটি সম্পর্কে সমস্ত কাজগুলিকে নির্দেশনা দেয় ও নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংজ্ঞা থেকে পরিষ্কারভাবে বুঝা যাচ্ছে যে, কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা সমগ্র ব্যবস্থাপনা কাজ থেকে আলাদা নয়। সমগ্র ব্যবস্থাপনায় কোয়ালিটি পদ্ধতি ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকে।

বাণিজ্যে এবং শিল্পে ব্যবহারের জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বহু ধরনের মান বহু ধরনের মানদণ্ড থাকায় অনেক সময় অনেকের মধ্যে বিভ্রান্তি এবং গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি করে। যদিও কোন কোন ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক মিল পাওয়া যায় এইসব আন্তর্জাতিক মানদণ্ডগুলি ব্যবসার ক্ষেত্রে পর্যাপ্তভাবে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না। পরিভাষাও অসঙ্গতিপূর্ণ এবং অসমাপ্ত ছিল।

১৯৭৯ সালে British Standard Institution (BSI) প্রথম কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণ মান BS 5750 তিন খণ্ডে প্রকাশ করে। এর উপর ভিত্তি করে জেনেভায় অবস্থিত International Organization for Standarization ১৯৮৭ সালে 'ISO 9000 Series'' হিসেবে অনেকগুলি আন্তর্জাতিক কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির মান প্রকাশ করে। স্বাভাবিকভাবে BSI এগুলি অন্তর্ভুক্তি করে নেয়। ১৯৯৪ সালে International Organization for Standarization (ISO) এই মানগুলির দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে। BSI এবং European Community এগুলিও অন্তর্ভুক্তি করে নেয়। যুক্তরাজ্যে এটি BSEN ISO 9000: 1994 নামে পরিচিত হয়। ২০০০ সালে ডিসেম্বর মাসে ISO এটির পূনঃপরিবর্তন করে তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে (ISO 9000 Series: 2000)। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ১১ নভেম্বর এর চতুর্থ সংস্করণ বের হয়। বর্তমানে এটি ISO 9000: 2008 নামেই পরিচিতি। এটাই এখন বলবৎ রয়েছে।

এই মানগুলির প্রকাশের ফলে আন্তর্জাতিক পরিধিতে ঐক্য বয়ে আনে। আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বাণিজ্যে কোয়ালিটির ক্রমবর্ধমান প্রভাবে এগুলি বিশেষ সহায়ক হয়। কোয়ালিটির ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটাতে ISO 9000 Series  সময় সময় প্রকাশিত হয় এবং তৃতীয় সংস্থা কর্তৃক কোয়ালিটি পদ্ধতির সনদ বা Certification ব্যবহারে উন্মুক্ত প্রয়োগ হয়।

দুনিয়াতে অনেক ধরনের Quality Assurance System আছে। এর মধ্যে  ISO 9000  মান থেকে যে সিস্টেম পাওয়া যায় সেটা আন্তর্জাতিকভাবে সবচেয়ে বিখ্যাত ও বহুল পরিচিত এবং সকলেই এটাকে স্বীকৃতি দিয়ে থাকেন।

বাংলাদেশ অনেক সংস্থা Quality Assurance Systemকেই বেছে নিয়েছেন।

এই ষ্ট্যান্ডার্ড অর্থাৎ ISO 9000: 2004কে সংজ্ঞায়িত করে তা দেখে ISO 9001 ষ্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী সিস্টেম করা গেলে একটি প্রতিষ্ঠান কীভাবে লাভবান হবে সে আলোচনায় আসা যাক।

কোয়ালিটি সংজ্ঞা (ISO 9000: 2004)অনুসারে কোয়ালিটি একটি মাত্রা যা প্রয়োজন মেটানোর ক্ষমতাসম্পন্ন একটি জিনিসের সুনির্দিষ্ট স্বাভাবিক চারিত্রিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী পণ্যমান নিশ্চিতকরণ পদ্ধতি কোন প্রতিষ্ঠানের নেয়া প্রয়োজন:
১. এই ষ্ট্যান্ডার্ডগুলো সামগ্রিক পণ্য/সেবার বৈশিষ্ট্য এবং সমষ্টিগত শ্রেণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য
২. এটা পণ্যের প্রযক্তিগত সুনির্দিষ্টকরণকে পরিপূরকতার জন্য ব্যবহৃত হয়।
৩. এ সিস্টেমে পণ্যের বা সেবার গুণগতমান নিশ্চিত করতে ও সবসময় তা বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪. এবং সর্বোপরি প্রতিনিয়ত উন্নতিতে প্রতিষ্ঠানকে উদ্বুব্ধ করে।
৫. প্রাতিষ্ঠানিক কাজকর্মের মান উন্নয়ন এমনভাবে পরিচালিত করে যাতে করে ক্রেতা এবং সমস্ত বিনিয়োগকারীদের প্রয়োজনীয়তা অনবরত পূর্ণ করে।
৬. অভ্যন্তরীণভাবে কর্মচারী এবং কর্মকর্তাদেরকে বিশ্বাসযোগ্যতা প্রদান করবে। এভাবে যে পণ্যের প্রয়োজনীয়তা শর্ত পূরণ করা হয় মান সবসময়ই ঠিক থাকে এবং প্রতিষ্ঠানের মান উন্নয়ন ঘটে।
৭. ক্রেতা এবং বিনিয়োগকারী ধরেই নেয়, যেহেতু তৃতীয় পক্ষ, প্রত্যয়ন করছে, এখানে পণ্য বা সেবা নিশ্চয়ই উন্নত মানের।
৮. এটা পরিচালনাকারী কর্মকর্তা এবং কর্মসম্পাদনাকারী কর্মচারীদের সমঝোতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি করে।

ISO 9000 বলতে আমরা কী বুঝি?

এটি ISO কর্তৃক তৈরি কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সংক্রান্ত একটি মান।
১৯৪৬ সালে লন্ডনে ২৫টি জাতির প্রতিনিধিরা এক সম্মেলনে নতুন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। নতুন সংস্থা (Iternational Organization for Standarization) ১৯৪৭ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারী থেকে সরকারীভাবে এর কাজ শুরু হয়। এর প্রথম মান Standard Reference Temperature for Industrial Length Measurement 1957 সালে প্রকাশিত হয়।

International Organization for Standarization সংস্থা নামের বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করতে যেয়ে আতিশষ্য দূর করতে ISO শব্দ ব্যবহার শুরু হয়। ISO হচ্ছে Iternational Organization for Standarization সংস্থা কর্তৃক প্রকশিত বিভিন্ন ষ্ট্যান্ডার্ডের আদ্য কোড। বর্তমানে সংস্থাটি ISO নামেই বেশি পরিচিত। যে দেশেই হোকনা এই সংস্থার নাম সকল ক্ষেত্রেই ISO হবে। ১৩০টির অধিক দেশের জাতীয় ষ্ট্যান্ডার্ড ইনস্টিটিউট এর সদস্যদের (প্রতিটি দেশ থেকে একটি মাত্র সদস্য) নিয়ে তৈরি ISO একটি আন্তর্জাতিক সমিতি । এটি একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। এর সদর দপ্তর জেনেভায় অবস্থিত। BSTI এই প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ প্রতিনিধিত্ব করে। ISO তিন স্তরে Standard গুলি তৈরি করে: প্রয়োজনীয়তা, ঐক্যমত এবং অবলম্বন করা। ISO এ পর্যন্ত ১৩০০০ এর অধিক ষ্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছে যা বেশির ভাগই পণ্য সংক্রান্ত।

কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি

ISO 9001 এর আওতায় Certification পাওয়া যায় 9000 এবং 9004-এ কোন Certification হয় না।

সার্টিফিকেশনের উপকারিতা

ISO 9001ধারাগুলি মেনে যাদি কোন প্রতিষ্ঠান কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি স্থাপন করে তা হলে আরও সুশৃঙ্খল পরিচালনা পরিবেশ অধিক ক্রেতা এবং ঐসব ক্রেতাদের মধ্যে উঁচু স্তরের পরিতৃপ্তি লাভ ইত্যাদিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা পেতে পারেন। বাজারের প্রয়োজনে অথবা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন বাড়াতে কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি স্থাপন করে নিম্নে লিখিত উপকার পাওয়া যেতে পারে।
প্রক্রিয়াগুলির উন্নতি
কোয়ালিটি সচেতনতার উন্নতি
সঙ্গতিপূর্ণ ক্রিয়াসমূহ
বাজার সুবিধা
কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি স্থাপনের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান পণ্য বা সেবার মানগুলি মেটাতে সক্ষম হয়। সুতরাং কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি একটি প্রতিষ্ঠানকে তার ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণে সাহায্য করে।
ISO 9001: 2008 অনুযায়ী কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি স্থাপন এবং সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের ক্রেতাদেরকে প্রতিশ্রুত কোয়ালিটি নিশ্চিতকরণে নিশ্চয়তা প্রদান করে।

এখানে উল্লেখ্য যে ISO/IEC Guide 62 (1996 and EN45012 (January 1998) অনুযায়ী সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান পণ্যে বা পণ্যের প্যাকেটের গায়ে কোনরূপ লগো বা কথা ব্যবহার করতে পারবেনা এবং সার্টিফিকেট ও লগো এমনভাবে ব্যবহার করা যাবে না যাতে পণ্যের মান সংগতি সম্পর্কে কোন ইঙ্গিত দেয়। দুঃখের বিষয় এই যে কোন সার্টিফিকেশন সংস্থা এ ব্যাপারে তাদের কর্তব্য বা নৈতিক দ্বায়িত্ব মানছেন না।

সনদপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি থেকে প্রকৃত উপকারিতা আরোহনের কথা চিন্তা না করে মাত্র কাগজের সনদপত্রটি সংগ্রহ করাকে প্রধান লক্ষ্য মনে করেন। ফলে সময় ও সম্পদের অপচয় হয়। কোন কোন সার্টিফিকেশন সংস্থা কোয়ালিটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির জন্য পরামর্শক ও অডিটর দুই দায়িত্বই পালন করেন যা কিনা নৈতিকতার পরিপন্থী।

পণ্য বা সেবার মানদণ্ড ও নির্দিষ্টকরণ অনেক ষ্টান্ডারাইজডকরণ সংস্থা নিয়োজত আছেন, যথা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ISO/IEC ইত্যাদি ও দেশের ভিতর BSTI । নির্দিষ্ট পণ্য ও সেবার জন্য সনদগ্রহণ ক্রেতা বা ভোক্তার আস্থা অর্জন সহায়ক হয়। প্রকৃত ও নির্ভরযোগ্য সনদপ্রাপ্ততা তখন প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়।

বর্তমানে বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা প্রকট হওয়ায় ক্রেতা বা ভোক্তার আস্থা অর্জন মূখ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। Technical Barriers to Trade (TBT) বা ব্যবসায়ে কারিগরী বাধা আন্তর্জাতিক বাজারে আরেকটি অন্তরায়। এ সমস্ত ক্রটি /অন্তরায় দূর করতে নিয়ন্ত্রকের প্রয়োজন। এ্যক্রেডিটেশন বোর্ড এই নিয়ন্ত্রকের মূখ্য ভূমিকা পালন করে।

এ্যাক্রেডিটেশন পদ্ধতিতে যোগ্যতা, কর্তৃত্ব এবং বিশ্বাসযোগ্যতার সনদ দেওয়া হয়। এই সনদ বিশ্বজুড়ে গ্রহণযোগ্যতা পায়। এ্যাক্রেডিটেশন বিভিন্ন সঙ্গতি নিরূপণ যথা-পরীক্ষাগার ও ক্রমাঙ্কনগার, সনদ প্রদানকারী ও পরিক্ষণ সংস্থা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এবং সঙ্গতি নিরুপনকরণে ব্যক্তিবর্গের সনদ প্রদানকারী সংস্থার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান পদ্ধতিতে তৃতীয় সনদ প্রদানকারী সংস্থার পরীক্ষা ও সনদের নিশ্চয়তা প্রদান করে যেখানে ঐ সংস্থা নীতি মেনে চলে ও প্রয়োজনীয় কোয়ালিটি প্রয়োগের বাধ্যবাধতা মানে। সাধারণত প্রতিষ্ঠিত মানদণ্ড এই সনদ বিবেচনায় আসে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে একটি সংস্থার যোগ্যতার সনদপ্রাপ্তি অনেক ধরনের সুবিধা এনে দেয়।

বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন বোর্ড (ব্যাব) ২০০৬ সালের সরকারী প্রজ্ঞা দ্বারা কর্তৃত্ব অনুযায়ী এ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রদান কর্তৃত্ব লাভ করে ।

ব্যাব ২০০৭ সালে Asia Pacific Laboratory Accreditation Cooperation (APLAC)-এর সহযোগী সদস্য পদ লাভ করেছে। ২০১০ সালে LAC (International Laboratory Accreditation Cooperation এর সদস্য পদ লাভ করেছে। সদস্য পদ লাভের ফলে ঐ সমস্ত সংস্থাগুলি ব্যাব কর্তৃক সনদপ্রাপ্ত সংস্থার সনদ ও রিপোর্টের গ্রহণযোগ্যতা ও স্বীকৃতি উত্তরণে অগ্রণী ভূমিকা নেবে।

ব্যাব'র কর্মসূচি অনুযায়ী ISO  17011,17025 I, 15189-এর সনদ প্রদান করা হবে।

সুতরাং দেখা যাচ্ছে এ্যাক্রেডিটেশন সনদ যোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা দেয়। এ্যাক্রেডিটেশন সনদপ্রাপ্তি পদ্ধতি একটি সংস্থার ক্রেতা ও নিয়ন্ত্রকের আস্থা এনে দেয়। এইরূপ পদ্ধতি বিভিন্ন বাণিজ্যিক কর্তৃপক্ষ ও সংস্থাকে আন্তর্জাতিক সীমা অতিক্রম করে ব্যবসায় প্রসার লাভে সহায়ক হয়। বাংলাদেশে ইতিমধ্যে অনেক পরীক্ষাগার যথা BSTI/ BCSIR/ Fisheries Department/ DU/ BUET/ Atomic Energy Commission, Patology Labs SQUARE Hospital and ICDDR ইত্যাদি সংস্থাগুলি NABL (National Accreditation Board for Testing laboratories, India), NA (Norwegian Accreditation) and Singapore Accreditation Board এর মাধ্যমে এ্যাক্রেডিটেশন সনদ সংগ্রহে ব্যস্ত আছে। কিন্তু এইরূপ আন্তর্জাতিক সীমা অতিক্রম করে সনদ সংগ্রহ করা সময় ও অর্থের অপচয়। সুতরাং সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাগুলি ব্যাব কর্তৃক এ্যাক্রেডিটেশন সনদ প্রাপ্তিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ব্যাব এ ব্যাপারে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছে। ২০১১ সনের ৯ জুন আন্তর্জাতিক এ্যক্রেডিটেশন দিবস।

আশা করা যাচ্ছে ব্যাব এই দিনে তার প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ ব্যাপারে সত্বর ব্যবস্থা নিবে এবং দেশ ও দশের কল্যাণে মনযোগী হবে।