আর কত সময় কাটবে আক্ষেপ করে

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 16 June 2015, 07:50 PM
Updated : 16 June 2015, 07:50 PM

উনিশশ একাত্তর সালের পঁচিশে মার্চ রাতে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী আকস্মিকভাবে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হামলা চালালে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। নির্বাচিত গণপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানের সামরিক একনায়ক ইয়াহিয়া খান টালবাহানা শুরু করলে একাত্তরের মার্চের প্রথম দিনই বাংলাদেশের বিক্ষুব্ধ মানুষের কণ্ঠে উচ্চারিত হয়েছিল 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর' স্লোগান। বাঙালি সত্যি অস্ত্র হাতে তুলে নেবে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন করবে– সেটা তখনও অনেকের কাছে অকল্পনীয়। কিন্তু কল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তব রূপ পেয়েছে।

পঁচিশে মার্চ থেকে ষোলই ডিসেম্বর। নয় মাসের অসম যুদ্ধে বিজয়ী বাংলাদেশের মানুষ। ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্ত, কোটি মানুষের দুঃসহ দুঃখবরণ, লাখ লাখ নারীর সম্ভ্রম হারানোসহ অনেক উচ্চমূল্য দিয়েই কেনা হয়েছে স্বাধীনতা। শিল্পীর কণ্ঠে যখন ধ্বনিত হয়, 'দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারও দানে পাওয়া নয়', তখন তাতে অতিরঞ্জন আছে বলে মনে হয় না।

অনেক দামে কেনা স্বাধীনতার চুয়াল্লিশ বছর পর যদি দেশের দিকে, মানুষের দিকে তাকাই, তাহলে এ কথা কি উল্লাস ও উচ্ছ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি যে, হ্যাঁ, এই স্বাধীনতাই আমরা চেয়েছিলাম? সংঘাত-সংঘর্ষের যে রাজনীতি চলছে, তা দেখে কি মনে হয় যে, এমন রাজনীতি আমাদের কাম্য ছিল কিনা? রাজনীতিবিদদের মধ্যে শ্রদ্ধাবোধ, আস্থা-বিশ্বাস ইত্যাদি থাকবে না, এটা কেউ আশা করিনি। আশা ছিল, দল থাকলে দলাদলি কিছু থাকবে; তাই বলে সেটা হানাহানিতে পরিণত হবে না। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, কিন্তু প্রতিহিংসা নয়– তেমনটাই ছিল প্রত্যাশিত।

দেশের অসংখ্য মানুষ নিরক্ষর থাকবে, গৃহহীন ও বেকার হবে, থাকবে অনাহারী ও চিকিৎসার সুযোগবঞ্চিত– এমন অবস্থার জন্য নিশ্চয়ই কেউ অস্ত্র হাতে তুলে নেয়নি, বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দেয়নি? পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বৈষম্য ও জুলুমের শাসন কায়েম করে মানুষকে অধিকারহীন, মর্যাদাহীন করে দাবিয়ে রেখে মুষ্টিমেয় সুবিধাভোগী অনুগতদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল বলেই আমরা পাকিস্তানি জিঞ্জির ভাঙার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়েছিলাম। স্বাধীনতার এত বছর অতিক্রম করে আমরা কি এটা দাবি করতে পারি যে, আমরা স্বপ্নপূরণের কাছাকাছি যেতে সক্ষম হয়েছি? আমরা কি অপশাসনের জিঞ্জির ভাঙতে পেরেছি, নাকি নতুন খাঁচায় আবদ্ধ হয়েছি? অল্পসংখ্যক মানুষ কর্তৃক বেশিসংখ্যক মানুষকে দাবিয়ে রাখার উৎকট ব্যবস্থা আমাদের ওপর চেপে বসায় এখন আমরা অস্বস্তিতে ছটফট করছি আর বলছি, রক্ত দিয়ে আমরা এমন স্বাধীনতা চাইনি।

আমরা গর্ব করে বলে থাকি যে, অনেক লড়াই-সংগ্রাম করে দেশে গণতন্ত্র কায়েম করেছি। সন্দেহ নেই যে, বাংলাদেশের মানুষ গণতন্ত্রপ্রিয়; অবৈধভাবে বা চোরা পথে বন্দুকের জোরে যারা ক্ষমতা দখল করে, এ দেশের মানুষ তাদের মেনে নেয় না, নির্বিবাদে তাদের শাসন চালাতে দেয় না। তারপরও সত্য এটাই যে, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে দুবার আমাদের ওপর অগণতান্ত্রিক সামরিক শাসন চেপে বসেছিল। বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে, বছরের পর বছর আন্দোলন করে ভোট দিয়ে সরকারবদলের একটি ধারা আমরা চালু করেছি।

প্রশ্ন হল, এটাই কি প্রকৃত গণতন্ত্র? দেশের মানুষ কি সত্যিকার অর্থে মর্যাদা ও অধিকার ফিরে পেয়েছে? দেশে কি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে? বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে কি বেরিয়ে আসতে পেরেছি? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কি সন্তুষ্ট থাকতে পারছি?

বেশি মানুষ যাদের ভোট দেয়, তারা দেশশাসনের অধিকার পায়– এই ব্যবস্থা আমাদের দেশে চালু হয়েছে। বেশি মানুষের ভোট পেয়ে যারা ক্ষমতায় যাচ্ছে তারা কিন্তু বেশি মানুষের কল্যাণ করছে না, করছে অল্পসংখ্যক মানুষের। এটা স্বাধীনতার মূল্যবোধ তথা ন্যায় বা ইনসাফের কথা নয়। ভোট দেওয়ার অধিকার সবার আছে ঠিকই, কিন্তু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার অধিকার সীমাবদ্ধ থাকছে অল্পসংখ্যক মানুষের মধ্যে। ফলে একদিকে কিছু মানুষের ধন-সম্পদ বাড়ছে, অঢেল বিত্তের অধিকারী হয়ে তারা বিলাসী জীবন যাপন করছে; অন্যদিকে বেশিসংখ্যক মানুষের জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন কষ্ট-দুর্ভোগ। দিন যত যাচ্ছে, ততই ধনবৈষম্য ও দারিদ্র্য বাড়ছে। কোটিপতির সংখ্যা বাড়ছে, কমছে না হতদরিদ্র মানুষের সংখ্যাও।

বলা হচ্ছে, আমাদের দেশের মানুষের গড় আয় ১৩২৪ ডলারে দাঁড়িয়েছে। সর্বোচ্চ কত ও সর্বনিম্ন কত আয়ের গড় থেকে এই ১৩২৪ ডলার বের হয়েছে, সেটা জানার সুযোগ আছে কি?

আমরা দাবি করে থাকি যে, আমাদের দেশের মানুষ রাজনীতি-সচেতন, তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল করে না। সত্যি কি তাই? ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা কি সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছি? একবার এ দলকে আরেকবার ও দলকে ভোট দেওয়ার নাম কি সঠিক গণরায়? কাকে ভোট দিই, কেন দিই, যাকে ভোট দিই তিনি আমাদের ভোটের মর্যাদা রক্ষা করেন কিনা, এগুলো কি সত্যি আমরা বিবেচনা করি?

ভোটদানে আমাদের বিচক্ষণতার পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা যেতে পারে যে, আমাদের ভোটে যারা ক্ষমতায় যায়, ক্ষমতায় গিয়ে তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করলে পরবর্তী নির্বাচনে আমরা তাদের ভোট দিই না। শুধু এটুকুতেই কি ভোটারদের সচেতনতার পরিচয় বহন করে? এ রকম বৃত্তবন্দি হয়ে থাকার নাম কি সচেতনতা? আমাদের এই বৃত্তের মধ্যে চলার কি শেষ হবে না? যারা ওয়াদা ভঙ্গ করছে বার বার, তাদের একেবারে খারিজ করে দেওয়ার কথা কখনও ভাবব না?

সন্দেহ নেই যে, একানব্বইয়ের গণআন্দোলনে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর থেকে নির্বাচনের মাধ্যমেই আমাদের দেশে ক্ষমতার পালাবদল ঘটছে। একবার বিএনপি, একবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বে জোট অথবা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট– এই হল আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতির উত্তরণ ও বিকাশ। ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা বদল হওয়া ছাড়া দেশে আর কোথাও গণতন্ত্রের চর্চা নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্রচর্চার বালাই নেই। দলের প্রধান নেত্রী বা নেতার ইচ্ছার বাইরে দল চলে না, সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। কোনো কোনো সময় কোনো কোনো দলের আনুষ্ঠানিক বৈঠকে কেউ কেউ কথা বলার সুযোগ পেয়ে থাকেন; তবে আলোচনা শেষে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব দেওয়া হয় দলীয় প্রধানের ওপর। আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির চর্চা ওই পর্যন্তই!

আমরা জানি যে, একটি দেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতা থাকে রাজনীতিবিদদের হাতে। তারাই দেশ চালান। কখনও সরকারে, কখনও বিরোধী দলে থেকে। আমাদের দেশে রাজনীতিবিদদের অক্ষমতা-ব্যর্থতা কি কারও নজর এড়ায়? রাজনীতিতে তাদের কমিটমেন্ট কী? তারা কতটুকু সৎ, বলিষ্ঠ ও দূরদর্শী? তারা কি নিজেদের জন্য রাজনীতি করেন, নাকি মানুষের জন্য?

যাদের পেশিশক্তির জোর বেশি, যারা রাতারাতি টাকাওয়ালায় পরিণত হয়েছেন– রাজনীতিতে আজকাল তাদেরই দাপট বেশি। রাজনীতিতে ভালো মানুষের প্রান্তিক অবস্থান নিয়ে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করি না তা নয়, তবে ভালো মানুষরা রাজনীতিতে জায়গা পাকা করুক তার জন্য আমাদের উদ্যোগ-প্রচেষ্টা নেই।

আগে ব্যবসায়ীরা নিজেদের ব্যবসার প্রসার ও সুরক্ষার জন্য রাজনীতিবিদদের চাঁদা দিতেন, অর্থাৎ রাজনীতিবিদদের চলতে হত ব্যবসায়ীদের চাঁদার টাকায়। এখন ব্যবসায়ীরা টাকা দিয়ে রাজনীতিবিদ না পুষে নিজেরা সরাসরি রাজনীতিতে নামছেন। পেশাদার রাজনীতিকের সংখ্যা কমছে, বাড়ছে ব্যবসায়ী রাজনীতিকের সংখ্যা। কিছুসংখ্যক রাজনীতিবিদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের ফলে রাজনীতি সম্পর্কেই মানুষের মধ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি হচ্ছে।

মানুষের মধ্যে আস্থার মনোভাব তৈরির জন্য কোনো উদ্যোগ রাজনীতিবিদদের নেই। ভালো হওয়ার প্রতিযোগিতা নেই তাদের মাঝে, খারাপ হওয়ার প্রতিযোগিতা আছে প্রবলভাবে। মানুষের শ্রদ্ধা-সম্মান পাওয়ার জন্য তাদের আগ্রহ দেখা যায় না। ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত থাকতেই তারা আজকাল বেশি পছন্দ করেন। বিতর্কে ও প্রচারে থাকতে চান তারা; কারণ প্রচারেই যে প্রসার!

রাজনীতিবিদদের পরস্পরের প্রতি চরম সন্দেহ ও অবিশ্বাস দেশের রাজনীতিকে ক্রমাগত অসুস্থতার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। কেবল প্রতিপক্ষের প্রতি বিদ্বেষ বা বিরূপতা নয়, একদলে থেকেও সদ্ভাব-সদাচার রক্ষা করতে পারেন না অনেকেই। ফলে দলের মধ্যে দলাদলি-কোন্দল, রেষারেষি এখন চরমে। ঐক্য নয় বিভেদ, মিত্রতা নয় তিক্ততা– এটাই যেন রাজনীতির মূলমন্ত্র।

অস্থিতিশীলতা তৈরি করাই যেন এখনকার রাজনীতির প্রধান বৈশিষ্ট্য। একদল ক্ষমতায় থাকার জন্য মরিয়া, অন্য দল ক্ষমতায় যেতে উদগ্রীব। ক্ষমতায় থাকা ও যাওয়ার জন্য নীতিহীনতার প্রতিযোগিতা বন্ধ হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ক্ষমতায় থাকার জন্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের মোকাবেলায় রাষ্ট্রযন্ত্রের যাবতীয় শক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার যেমন স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে, তেমনি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আন্দোলনের নামে হরতাল-জ্বালাও-পোড়াও-ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে জানমালের ক্ষতিসাধন করাও নিয়মিত ঘটনা।

ক্ষমতার রাজনীতির এই যাঁতায় পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ মানুষ। ক্ষমতায় থাকা বা যাওয়ার জন্য ভোটের বিকল্প কিছু নেই জানা সত্ত্বেও ভোটারদের স্বার্থ না দেখার দুঃসাহস রাজনীতিবিদরা কোথা থেকে পান? পাঁচ বছর পর মানুষের কাছে ভোটপ্রার্থী হতে হবে, তাদের কাছে জবাবদিহি করতে হবে– এটা জেনেও কেন ভোটে জেতা বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা সংসদে যান না? তারা বেতন-ভাতা নেন, সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, অথচ দায়িত্ব পালন করেন না। এমন 'উদার' গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পৃথিবীর আর কোথাও আছে কি?

চলতি রাজনীতির ধারায় দুটি দল একে অপরের প্রতিপক্ষ ও প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়ায় এটা প্রায় নিশ্চিতভাবে ধরে নেওয়া হচ্ছে যে, 'এ' না হলে 'বি' অবশ্যই ভোটে জিতবে। মানুষের সামনে ভালো বিকল্প না থাকায় এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতার রাজনীতি প্রবল হয়ে উঠছে। দৈনন্দিন জীবনের দুঃখকষ্ট লাঘব কিংবা সুশাসন নিশ্চিত করা এখন বড় কথা নয়। সন্ত্রাস, দুর্নীতি, শক্তিপ্রদর্শনই রাজনীতির চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে।

দেশের প্রকৃত উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্য মূলধারার প্রধান দুদলের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করেন। প্রশ্ন হচ্ছে, দুটি বিপরীত ধারার দুদলের মধ্যে কোনো ধরনের সমঝোতা কি আদৌ সম্ভব? কেউ হয়তো বলবেন, দুদলের মধ্যে আদর্শগত পার্থক্য এখন এতই কমে এসেছে যে, স্থায়ী না হলেও ইস্যুভিত্তিক সমঝোতা না হওয়ার যুক্তি নেই। অথচ যুক্তিহীনতাই যে এখন রাজনীতিকে বেশি প্রভাবিত করছে, তার কী হবে!

একদল বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, অন্যদল বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী বলে এতদিন যে পার্থক্যরেখা টানা হত, এখন আর তা খুব সহজ নয়। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদীরা যদি বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ইসলামি ভাবধারার মিশেলে বিশ্বাসী হয়, তাহলে বাঙালি জাতীয়তাবাদীরাও ইসলামি ভাবধারা থেকে খুব দূরে অবস্থান করতে চাইছে না। তাদের পার্থক্যটা তাহলে কোথায়? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের অবস্থান, সম্মান ও মর্যাদাই কি এখন তাদের বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু?

যদি তাই হয় তাহলে প্রয়াত দুনেতাকে এক কাতারে না নামিয়ে, দুজনের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান স্বীকার করে বঙ্গবন্ধুকে জাতির জনক হিসেবে এবং মুক্তিযুদ্ধে জিয়ার অবদান বিনা বিতর্কে মেনে নিলেই তো দুদলের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য হলেও রাজনৈতিক সমঝোতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব। তাত্ত্বিক বিচার-বিশেষণে এই সমঝোতা অসম্ভব বলে মনে না হলেও বাস্তবতা যে ভিন্ন সেটাও অস্বীকার করার উপায় নেই। তাহলে হবে কী?

আমরা মুখে বলি, আমরা দেশের ভেতর রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সংঘাতের রাজনীতি চাই না। বাস্তবে এই অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদেরই আমরা উৎসাহ দিই; মদদ দিই জ্ঞাতসারে বা অজ্ঞাতে। যারা এই অপরাজনীতি আঁকড়ে ধরে আছে তাদের ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করার সৎসাহস না দেখিয়ে পালাক্রমে তাদের কাছেই আত্মসমর্পণ করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। এই সমর্পণবাদী মানসিকতা দূর না হলে রাজনীতিতে স্থিতিশীলতা আসবে না।

সাড়ে চার দশক হতে চলল আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। আত্মজিজ্ঞাসার মুখোমুখি না হয়ে আর কত বছর কাটিয়ে দেব? আমরা কি বছরের পর বছর শুধু আক্ষেপ করে সময় কাটাব. নাকি ভালোর দিকে পরিবর্তন নিশ্চিত করতে সাহসী ভূমিকা গ্রহণ করব, সে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমাদেরই।


বিভুরঞ্জন সরকার:
সাংবাদিক ও কলাম লেখক।