মমতার জন্য আমাদের একটি উপহার

ডা. মো. খায়রুল ইসলাম
Published : 29 April 2015, 07:10 AM
Updated : 29 April 2015, 07:10 AM

মমতা প্রাণের টানে বাংলাদেশে এসেছিলেন কথাটা শুনে মনে হল, এর মধ্যে রাজনৈতিক সততা আছে। উনি মান বাঁচাতে এসেছেন যা রাজনীতিতে প্রাণের সমান। সাম্প্রতিক অতীতে রাজনৈতিক অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, উনি বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি না করলেও যা যা ঘটে যাবার তা ঘটে যাবে। কেন্দ্রে এখন আর দুর্বল নেতৃত্ব নেই। সেখান থেকে নানাভাবে তাঁকে ইশারা ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছিল যে, ভারতের জাতীয় স্বার্থ সবার আগে দেখা হবে। মমতা তাঁর মান বাঁচাতে চাইলে এখনও সময় আছে।

বাংলাদেশের মানুষ তাঁকে সরাসরি ভোট দেয় না; কিন্তু ভোটে প্রভাব ফেলে। সে কারণেই আমরা দেখি যুক্তরাজ্যের নির্বাচনের আগে লেবার বা কনজারভেটিভ দলের নেতারা বাংলাদেশে আসেন, সিলেটে ছুটে যান। মমতারও বাংলাদেশের মানুষের সমর্থন দরকার আছে। কথায় বলে, একবারে নেতিবাচক থাকার চাইতে দেরিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করাও ভালো। মমতা দেরিতে হলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আবারও প্রমাণ করলেন, রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই!

তবে বাংলাদেশের সবার হাবভাব এমন যেন মমতার কাছে আমাদের কিছু চাইবার আছে, আমাদের কাছে মমতার চাইবার কিছু নেই। আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেও পারে যে, আমাদের কাছে মমতার চাইবার কিছু নেই। একজন রাজনীতিবিদ আর একজন স্টেট পারসনের পার্থক্য এখানেই। তিনি যদি দেশনায়ক হন, তবে তিনি বাংলাদেশের কাছ থেকে চাইতে পারেন এমন কিছু কলাকৌশল যা দিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানব উন্নয়নের অনেক সূচকের উন্নতি ঘটাতে পারবেন। ধরা যাক স্যানিটেশনের কথা। কেউ বিশ্বাস করবে যে, ডাকসাইটে নেত্রী মমতার রাজ্যে অর্ধেক নারী তাঁদের সম্ভ্রম প্রতিনিয়ত কম্প্রোমাইজ করে খোলা মাঠে প্রস্রাব-পায়খানা করে যাচ্ছে। এত স্পর্ধা যাঁর, এত সাহস যাঁর, তাঁর রাজ্যে নারীর এই হাল?

প্রধানমন্ত্রী মোদি চেয়েছেন ২০১৯ সালের ২ অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবার্ষিকীতে তিনি ভারতকে খোলা পায়াখানামুক্ত দেশ হিসেবে ঘোষণা করবেন– এটা হবে মহাত্মা গান্ধীর জন্য ভারতবাসীর শ্রেষ্ঠ উপহার। গান্ধী তাঁর পায়খানা নিজে পরিষ্কার করতেন। বলেছিলেন, স্যানিটেশন স্বাধীনতার চেয়ে গুরত্বপূর্ণ। মমতা কি পারবেন এই সময়ের মধ্যে তাঁর রাজ্যে এই লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে? বাংলাদেশে খোলা মাঠে পায়খানার হার মাত্র ৩ শতাংশ। ২০১৯ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশ শূন্য শতাংশ যেতে চাই; পারবও আমরা। মহাত্মা গান্ধীর সার্ধশতবার্ষিকীতে মমতা কি পারবেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যকে এই সূচকে বাংলাদেশকে ছুঁয়ে বা অতিক্রম করে যেতে?

তার চাইতেও গুরত্বপূর্ণ হল যে, বাংলাদেশে সবচেয়ে নিম্ন আয়ের মানুষও স্যানিটেশনের আওতায় কিছুটা হলেও এসেছে। সামাজিক ন্যায্যতা মাপার এটা একটা খুব সংবেদনশীল সূচক। এই সূচকেও বাংলাদেশ বেশ এগোনো।

এবার ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে অমর্ত্য সেনের কোলকাতা গ্রুপ জানতে চেয়েছিল বাংলাদেশের এই অর্জনের পেছনের কলাকৌশল সম্পর্কে। ভিসা জটিলতায় আমরা কেউ যেতে পারিনি। তবে জানিয়েছি আমাদের কলাকৌশল, আমাদের অভিজ্ঞতা। বিস্ময়ের ব্যাপার যে, অমর্ত্য সেন জানতে চাইলেও, এমনকি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানতে চাইলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার কখনও তা জানতে চায়নি। ভাবটা এমন যে, বাংলাদেশ থেকেও শিখতে হবে!

প্রিয় মমতা দিদি, বাংলাদেশ রাজনৈতিক হানাহানি আছে। তারপরও দুটি রাজনৈতিক দল যে যখন ক্ষমতায় এসেছে, নারীশিক্ষার উন্নয়নে কখনও পিছপা হয়নি। মানুষের স্বাস্থ্য ও সম্ভ্রমরক্ষায় বিশেষত নারীর সম্ভ্রমরক্ষায় স্যানিটেশনের উন্নয়নে কাজ করে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের জনগণ আমাদেরই আত্মীয়স্বজন। তাঁদের আর কতকাল খোলা ময়দানে, ঝোপঝাড়ে, রাতে বা নিরুপায় হলে দিনের আলোয় শাড়ি-লুঙ্গি তুলতে হবে?

দয়া করে আপনার রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তাদের বিশেষত পঞ্চায়েত বিষয়ক কর্মকর্তাদের পাঠিয়ে দেবেন বাংলাদেশে সপ্তাহখানেকের জন্য। তাঁরা জেনে যাবেন কীভাবে বাংলাদেশ আপনাদের মাথাপিছু জাতীয় আয়ের অর্ধেক নিয়েও এ রকম অর্জন করেছে। ফেরত গিয়ে তাঁরা যদি কিছুটাও কাজে লাগায় তাতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ উপকৃত হবে। মানুষের কল্যাণে অহম একটু কম্প্রোমাইজ করে বাংলাদেশের কাছে একটু জানতে চেয়েই দেখুন না।

মানুষের কল্যাণ হলে আপনার ভোট তাতে বাড়বে বই কমবে না।

ডা. মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম: জনস্বাস্থ্য পেশাজীবী।