সাধু সঙ্ঘে অসাধু হামলা

আনুশেহ আনাদিল
Published : 24 March 2010, 04:12 AM
Updated : 23 April 2011, 03:02 PM

একটা দৈনিক পত্রিকার মাধ্যমে যখন বাউলদের অপমানের এই দুঃখজনক ঘটনা শুনলাম তখন আমার নিজের চোখে পুরো বিষয়টা দেখার ইচ্ছে হয়। বন্ধুদেরকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনার পরের দিন বা তার পরের দিন ওখানে যাই।

বাউলদের নির্যাতন করা হয়েছিলো যে মসজিদটিতে সেখানে গেলাম। আমরা যখন গিয়ে পৌঁছাই তখন মাগরিবের আজানের সময়। কিন্তু ইমাম তখন মসজিদে ছিলেন বা আমাদেরকে দেখে জবাব দেওয়ার বিড়ম্বনা এড়ানোর জন্য অন্য কোথাও চলে গেছেন।

এই মসজিদেই বাউলদের চুল, দাড়ি, বাবড়ি দা-কাচি দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছিলো। এভাবে কাটতে গিয়ে তাদের উপর শারীরিকভাবে নির্যাতনও করা হয়েছে। এদের একজনকে হাসপাতালে পর্যন্ত যেতে হয়েছিলো। কারণ দা দিয়ে কাটার ফলে ঘাড়ের কাছে কেটে গিয়েছিলো। এক এক জনের চুলের বয়স ছিলো ৪০ বছরের মতো, গুরুর নির্দেশে চুল রাখতে গিয়ে চুল ছিলো জট পাকানো । ফলে জোর করে কাটতে গিয়ে শরীরের ওপর নির্যাতন চালিয়েছে।

ওখানকার প্রশাসনের লোকজন এবং এমপি জিল্লুর হাকিমের সাথে কথা বলে মনে হয়েছে এটা একটা তুচ্ছ ঘটনা, সারা দেশের মানুষ এটা নিয়ে আন্দোলন করতে পারে বা আমরা ওখানে চলে যাবো–তাঁদের কাছে এটা তেমন বড় কিছু মনে হয় নি। মনে হয়েছে এটা ছোট্ট পরিসরেই সমাধান করার মতো একটা বিষয়।

এই ঘটনায় অপমানিত বাউল-ফকিররা প্রতিবাদ করার কথা চিন্তা করেন। বিশেষ করে মোহাম্মদ ফকিরের সঙ্গে আলাপ করে আমার তাই মনে হয়েছে। আমি কথাগুলো এভাবে বলছি এই কারণে যে আমি এই সাধুদের সাথে যারা জড়িত। আমি তাদের কাছে যাই, তারাও আসেন। তো ঘটনাটা যেদিন ঘটে সেদিন মোহাম্মদ ফকিরের বাড়িতে অতিথি হিসেবে অন্য জায়গা থেকে আমন্ত্রিত হয়ে অন্য সাধুরা এসেছিলেন। পুরো ঘটনাটা তাঁর জন্য খুবই দুঃখজনক এবং অপমানজনক ছিলো।

আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের কথা বলি, কিন্তু আমাদের সমাজ ধর্মনিরপেক্ষ জায়গায় যেতে পারেনি এখনও। এধরনের হামলা যদি চলতে থাকে তাহলে আমরা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের অঙ্গিকার কীভাবে রক্ষা করবো?

আমরা যারা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রে বিশ্বাস করি তাদের উচিত এ ধরনের ঘটনার বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। যতদিন রাষ্ট্র ধর্ম দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে ততদিন আমরা কেবল বেহেশতের লোভ এবং লাভক্ষতির কথা ভাববো। কিন্তু কর্মের মাধ্যমেই যে আমরা নিজের দেশকে স্বর্গ বানাতে পারি সেটা ভুলে যাই।

আমরা চাই প্রত্যেকে প্রত্যেকের ধর্ম পালন করুক। এখন আপনার ইসলাম আমার ইসলাম থেকে ভিন্ন হতে পারে। তাই বলে আমি আপনাকে হত্যা করতে পারি না বা নির্যাতন করতে পারি না। আপনি কোরান শরিফ পড়ে এক ধরনের ম্যাসেজ পেতে পারেন, আমি অন্য ধরনের ম্যাসেজ পেতে পারি। কারণ মানুষ মাত্রই ভিন্ন। আমরা ভিন্ন হয়েই তো একসঙ্গে থাকতে পারি। জোর করে আমরা কাউকে আমাদের মতো বানাতে পারি না। অন্যের অনন্যতাকে সুন্দর হিসেবে দেখা উচিত। তাহলেই আমরা একসাথে একটা সুন্দর পৃথিবী, সুন্দর দেশ গড়ে তুলতে পারি।

আনুশেহ আনাদিল: ডিজাইনার, সংগীত শিল্পী।