অভিজিৎ হত্যা: সংকটে মানবিকতার বিজ্ঞান

সঞ্জয় দে
Published : 21 March 2015, 03:18 PM
Updated : 21 March 2015, 03:18 PM

লেখক অভিজিৎ রায় হত্যার প্রায় তিন সপ্তাহ পার হতে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত খুনীদের চিহ্নিত করতে দৃশ্যত ব্যর্থ পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই তদন্তে সহায়তা দিলেও দৃশ্যমান অগ্রগতির তথ্য আপাতত নেই।

এই হত্যাকাণ্ড কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন খবর বেরিয়েছে, এখনও বের হচ্ছে। এগুলোর কিছু অনুমাননির্ভর, কিছু অনুসন্ধাননির্ভর। পৃথিবীর সব দেশেই চাঞ্চল্যকর ঘটনা কেন্দ্র করে সংবাদ মাধ্যম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা চালিয়ে থাকে। মনে রাখতে হবে, সংবাদ মাধ্যম কোনো পুলিশি সংস্থা বা আদালত নয়। ঘটনাক্রমে কোনো অসঙ্গতি খুঁজে পেলে তা প্রকাশ করার মানে এই নয় যে, এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে অপরাধী হিসেবে রায় দিয়ে ফেলা হচ্ছে। বরং কোনো অপরাধ সংগঠিত হলে পূর্বাপর প্রেক্ষিতের চুলচেরা বিশ্লেষণ হওয়া এবং প্রতিটি বিষয়ের দিকে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।

অভিজিৎ হত্যার ঠিক কিছু সময় আগে অমর একুশে গ্রন্থ মেলায় বিজ্ঞান লেখকদের একটি আড্ডা নিয়ে সম্প্রতি চারদিকে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। সেটির প্রধান আয়োজক ছিলেন বুয়েটের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী। আড্ডা শেষ হওয়ার মাত্র আধ ঘণ্টার মধ্যে হত্যাকাণ্ডটি ঘটলেও বিষয়টি নিয়ে আয়োজকের একটানা নিরবতা এবং কাকতালীয় একাধিক ঘটনাক্রমের সমন্বিত ক্রিয়াশীলতা স্বাভাবিক কিছু প্রশ্নের জন্ম দেয়। আর সেই ঘটনাক্রম প্রকাশ করা স্বাভাবিক সাংবাদিকতারই অংশ মাত্র। তবে বিষয়টি কারও কারও কাছে স্বাভাবিক ঠেকছে না। কেউ কেউ খুঁজে পাচ্ছেন 'হলুদ' গন্ধও।

অভিজিৎ রায় খুন হওয়ার আগের কয়েকটি ঘণ্টা বইমেলায় কী করেছেন, কারা তাঁর সঙ্গে ছিলেন, কাদের অনুষ্ঠানে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আমন্ত্রণকারীরা পরে ঘটনাটি কেন বেমালুম চেপে যেতে চাইলেন তা না খোঁজার চেষ্টাই কি তবে 'হলুদ' গন্ধ এড়ানোর একমাত্র উপায়?

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে অভিজিৎ রায়ের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়ের সাক্ষাৎকারভিত্তিক ধারাবাহিক কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশের পরপরই মূলত বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনার সূত্রপাত। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন সাংবাদিক শামীমা বিনতে রহমান। এর কয়েক দিন আগে ৬ মার্চ ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনে প্রচারিত শাহরিয়ার অনির্বাণের একটি প্রতিবেদন দেখানো হয়েছে শুধু ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী নন, বই মেলার সেদিনের আড্ডায় অংশ নেওয়া তরুণদের প্রায় সবাই এ ব্যাপারে ন্যূনতম প্রতিক্রিয়া তো জানানইনি বরং কেউ কেউ ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতের বেলায় 'দিনটি বেশ ভালো কেটেছে' জাতীয় স্ট্যাটাস ফেসবুকে দিয়েছেন। আর বিজ্ঞান লেখক হিসেবে পরিচিত সেই তরুণদের ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ সন্তুষ্টির বন্যা বইয়ে দিয়েছেন অভিজিৎ খুন হওয়ায়।

নিঃসন্দেহে এই হত্যাকাণ্ডে সবাই শিউরে উঠেছেন, অনেকের মনে আতঙ্ক জাগাও স্বাভাবিক। সঙ্গত কারণেই কেউ কেউ নিশ্চুপ হয়ে যাবেন। কিন্তু যাদের আয়োজিত অনুষ্ঠান থেকে বের হওয়া মাত্র একজন খুন হলেন তাদের প্রায় সবাই একযোগে প্রতিক্রিয়াহীন হলে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে উচ্ছ্বাস জানালে, কোনো প্রশ্ন না-তোলা কি সংবাদ মাধ্যমের দায়িত্বহীনতার মধ্যে পড়ে না?

এতদিন ধরে ফেসবুকে ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর সর্বশেষ পোস্টটি ছিল প্রায় তিন সপ্তাহ আগের। অভিজিৎ রাতের যে সময়ে খুন হন তার প্রায় ২১ ঘণ্টা আগে বই মেলার একটি ছবি পোস্ট দেন তিনি। এরপর যেন হারিয়ে যান। এমনকি ওই পোস্টে দুজন অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু নিয়ে বার্তা লিখেছিলেন। ২৮ ফেব্রুয়ারির দিকে পোস্ট করা ওই দুটি বার্তার একটিতে প্রশ্ন ছিল, সহ-লেখক মারা যাওয়ার পরেও তিনি কেন নিশ্চুপ! ফারসীম মান্নান কোনো সাড়া দেননি, বরং প্রশ্নসূচক সেই বার্তাটি মুছে দিয়েছেন!

ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, আতঙ্কের কারণে তিনি হয়তো ফেসবুকে নিশ্চুপ ছিলেন। কিন্তু তাই বলে কি একবার হাসপাতালেও যাওয়া যেত না? তাতেও না হয় বিপদের গন্ধ; তিনি অধ্যাপক অজয় রায়কে তো সঙ্গোপনে ফোন করে সান্তনা জানাতে পারতেন, কিংবা যেতে পারতেন তাঁর বাসায়। এর কোনোটিই তিনি করেননি।

সবশেষ গত ১৬ মার্চ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির একটি সভায় অধ্যাপক অজয় রায়ের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়েছে ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর। সম্ভবত এতদিনে তৈরি হওয়া প্রবল চাপের কারণে তিনি নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে অজয় রায়ের সঙ্গে পরিচিত হন এবং বুয়েট ক্লাবে নিয়ে গিয়ে আলোচনা করেন। ফারসীম মান্নানের ভাষায়:

''অনেক কিছু খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করলেন (অজয় রায়)। আমিও যতটুকু জানতাম, বললাম। অনেক ধোয়াশা দূর হল; দেখা গেল, অনেক কিছু স্যারকে যেভাবে জানানো হয়েছে সেভাবে আসলে হয়নি; অথবা আমরা যেটা জেনেছি সেটাও স্যার বলেননি। গুজবের পাখি কোথায় যে যায়। যেমন কাওসার নামের ছেলেটি নাকি মিটিংয়ে এসেছিল এবং তারপর বই হারিয়ে যাওয়ার নাম করে মিটিং থেকে উঠে গিয়েছিল বলে একটা রহস্য সৃষ্টি হয়েছিল। সে ঐ মিটিংয়ে ছিলই না সেটা পরিষ্কার হল; ছবিও দেখানো হল যেখানে সব মুখই স্পষ্ট দেখাচ্ছে। বিজ্ঞান বক্তা আসিফ নাকি আমন্ত্রিতই ছিলেন না বলে শোনা গিয়েছিল। কিন্তু তিনি প্রকৃতই ইনভাইটেড ছিলেন, এটা স্যারকে দেখালাম। আর কারা ইনভাইটেড ছিলেন, কারা কারা মিটিংয়ে ছিলেন ছবিতে দেখানো হল। স্যার একটা মূল্যবান কথা বললেন, আসলে যারা কালপ্রিট তারা তো সভায় বসে নিজেদের চেহারা দেখাবে না।''

ওই সন্ধ্যার একাধিক প্রতক্ষ্যদর্শীর বিবরণ অবশ্য ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীর এই বক্তব্য খুব একটি সমর্থন করছে না। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আড্ডাটি সন্ধ্যা ৬টার দিকে শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ফারসীম মান্নান দেরি করে মেলায় আসায় এবং এরপর শুদ্ধস্বরের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে সেটি শুরু হতে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার বেশি বেজে যায়। এর আগেই অবশ্য একদল তরুণ আড্ডাটি শুরু করে দেন, যাদের একজন ছিলেন কাওসার ফরহাদ। আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু হওয়ার আগে তিনি কয়েক জন সঙ্গীকে নিয়ে উঠে চলে যান হারানো বই খোঁজার কথা বলে। আড্ডায় কাওসারের থাকার সময়কার ছবিও আছে সংবাদ মাধ্যমের কাছে।

ফারসীম মান্নানও জানতেন আড্ডায় কাওসারের উপস্থিতির কথা। প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণই বলছে, আনুষ্ঠানিক বৈঠকীর শুরুতে তিনি কাওসারের চলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। অথচ তিনি এখন শুধু তুলে ধরছেন আনুষ্ঠানিক পর্বের ২০-২৫ মিনিটের আলোচনার কথা, দেখাচ্ছেন কেবল সেই সময়কার ছবি। এটি কেন, সেই প্রশ্নের জবাব নিশ্চয়ই তিনিই ভালো জানেন।

অভিজিৎ হত্যার তিন দিন পর ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের রাত ১২টার 'বাংলাদেশ এখন' অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ফারসীমকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। আলোচনার বিষয় জানার পর তিনি আর আসতে রাজি হননি। কারণ হিসেবে অবশ্য তিনি নিরাপত্তাহীনতার কথা বলেননি, বরং তুলেছিলেন ব্যস্ততার প্রসঙ্গ। এর কিছু সময় পরেই বন্ধ হয়ে যায় তার ফোন।

সাংবাদিক সুলতানা রহমানের সঞ্চালনায় সেদিনের অনুষ্ঠানে পরে এসেছিলেন ফারসীম মান্নানের পরিচিত এবং বই মেলার আড্ডাটির আয়োজকদের আরেক জন, 'পাই জিরো টু ইনফিনিটি' নামের ম্যাগাজিনের সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। কথায় কথায় তিনি জানান, ঘটনার পরদিন তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন, 'নাথিং টু সে'। তবে এই 'বলার কিছু নেই' শব্দত্রয়ও মুছে ফেলতে বাধ্য করেন তার মা। অবশ্য 'ভয়ার্ত' এই তরুণ দু'দিন বাদেই টেলিভিশন টক শোতে হাজির হন এবং তার মা-ও এসেছিলেন টেলিভিশন কার্যালয়ে। ওই অনুষ্ঠানেই আবদুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, তাদের সাময়িকীতে অভিজিৎ রায়ের বিজ্ঞানবিষয়ক একাধিক লেখা ছাপা হয়েছে এবং অভিজিৎ বেছে বেছে সেখানে শুধু 'অ-বিতর্কিত' লেখাগুলোই পাঠাতেন।

'জিরো টু ইনফিনিটি' সাময়িকী যে বিতর্কের ব্যাপারে খুবই 'স্পর্শকাতর' তার অনেক নজির রয়েছে। এমনকি তারা বিবর্তনবাদ সংক্রান্ত লেখা প্রকাশেও কুণ্ঠিত, এমন প্রমাণ দেওয়া যেতে পারে। এই সাময়িকীর ফেসবুক পেইজের এডমিনের তালিকায় মাত্র ক'দিন আগেও ফারসীম মান্নাম মোহাম্মদী, ত্রিভুজ আলম, মুহাইমিনুল ইসলাম অনিক, আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ ছিলেন মোট ছ'জন। তবে এখন আর প্রথমোক্ত তিনজনের নাম দেখা যাচ্ছে না।

'পাই জিরো টু ইনফিনিটির' পরিচালক বা লেখক গোষ্ঠীকে নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন পর্যায় থেকে। তাদের কারও কারও সঙ্গে ধর্মীয় মৌলবাদী গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠতা নিয়েও আলোচনা আছে। এমনকি বই মেলা শেষ হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ বাদে দেওয়া ফারসীম মান্নানের নিজের বিবৃতিতেও আছে সন্দেহের আভাস। তিনি বলছেন:

''প্রথম বছর দেড়েক উপদেষ্টা হিসেবে সে (আবদুল্লাহ আল মাহমুদ) আমার কথা শুনেছে, কথা রেখেছে। কিন্তু পত্রিকাটির পরিসর যত বৃদ্ধি পেয়েছে, যত তার নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে, তত সে আমার উপদেশ থেকে দূরে সরে গেছে।… তার পত্রিকা, সে কীভাবে চালাবে, এটা তাকেই ঠিক করতে হবে। এ কথাও ঠিক, বেশ কিছু বেঠিক মানুষের সাথে সখ্য দেখা গেছে, তবে আমি জানামাত্রই সম্পাদককে সতর্ক করেছি। তারপরও ঠিক পদক্ষেপ নেওয়া বা না নেওয়া তার দায়িত্ব। আমি তার কোনোই দায় গ্রহণ করব না।''

আবদুল্লাহ আল মাহমুদের কী সেই দায়, সেটি পরিষ্কার করার দায় কিন্তু ফারসীম মান্নান মোহাম্মদীরও। আবদুল্লাহ আল মাহমুদ স্বীকার করেছেন, অভিজিৎ হত্যার পরপরই 'জিরো টু ইনফিনিটি' সাময়িকী পরিচালনার দায়িত্ব থেকে ত্রিভুজ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে। তাই মাহমুদের ওপর ফারসীম মান্নানের আস্থা ও বিশ্বাস 'হারানো'র কারণ বোঝা সম্ভবত খুব কঠিন নয়।

প্রশ্ন হল, আস্থা হারানোর কারণগুলো আগে থেকে বিদ্যমান থাকার পরেও ২৬ ফেব্রুয়ারি স্পর্শকাতর ব্যক্তিদের উপস্থিতির আড্ডায় নিরাপত্তা ঝুঁকিতে থাকা অভিজিতকে ডেকে নেওয়ার দায়িত্ব এখন কে নেবে? আর যদি দাবি করা হয় উপলব্ধিটি 'সাম্প্রতিক'– তাহলে তার কারণও নিশ্চয়ই ফারসীম মান্নান খোলাখুলি জানাবেন। সেদিন আড্ডা শুরু হতে দেরি হওয়ার কারণও খতিয়ে দেখা দরকার।

মামলার তদন্তের প্রয়োজনে জানা দরকার, আড্ডা দেরিতে শুরু হচ্ছে অভিযোগ করে যে কয়েক তরুণ সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন তারা কারা? সেই তরুণেরা আড্ডায় এসেছিলেন জানতে পেরে ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী নিজেও তো সেদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। আরও জানা দরকার, আড্ডার জন্য মেলার মধ্যে ঠিক এমন জায়গাটি কেন বেছে নেওয়া হল যেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা খুব একটা কার্যকর নয়!

একটি খুনের ঘটনার পর সম্ভাব্য সবদিকে নজর দেওয়ার দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। আর সংবাদ মাধ্যমও চাইবে প্রসঙ্গ ও প্রশ্ন উত্থাপন করে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের কাছ থেকে সেগুলোর জবাব খোঁজার। এর মানে নিশ্চয়ই এই নয় যে, সেদিনের আড্ডার আয়োজকদের ওপর খুনের দায়িত্ব নিশ্চিত করে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যম শুধু বলছে অনেকগুলো কাকতালীয় ঘটনা ঘটার বিষয়টিও কাকতাল কিনা সেটি নিশ্চিত হতে বিস্তারিত তদন্ত প্রয়োজন। খুনীরা নিশ্চয়ই হাওয়া খেতে বেরিয়ে আকস্মিকভাবে অভিজিতের মুখোমুখি হয়ে তাকে খুন করেনি। অপরাধ বিজ্ঞানের সাধারণ সূত্রই বলে দেয়, সেদিন নিশ্চয়ই অভিজিতকে মেলার ভেতরে ও বাইরে বহু সময় ধরে অনুসরণ করা হয়েছে; আর এতে বই মেলার আড্ডা বা তার আশপাশের কেউ ভূমিকা রেখেছে কিনা, তা অবশ্যই যাচাই করা দরকার।

সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ায় যাদের গোস্বা, চূড়ান্ত তদন্ত শেষে তারা সবাই স্বস্তি ও উল্লাসে থাকবেন, এমন শুভকামনাই করি। তবে সেটি ঘটলেও যে আক্ষেপ থাকবেই তা হল, এই সমাজে আত্মরতিতে ভরপুর একদল 'বিজ্ঞানমনস্ক'র প্রাদুর্ভাব সম্ভবত ঘটেছে, মানবিকতার বিজ্ঞান যাদের আয়ত্তে এখনও আসেনি।