বিশ্বকাপ ক্রিকেট: অনেক সুযোগ ছিল

বিবি রাসেল
Published : 25 May 2009, 07:26 AM
Updated : 2 March 2011, 06:10 PM

এই বিশ্বকাপে অন্য দলগুলোর তুলনায় আমাদের দলটি অনেক বেশি তরুণ। সে কারণে প্লানিংয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা ছিলো যেটা ভারতের সাথে খেলার ফলাফলের মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছে। ভারত একটা বড় দল, অভিজ্ঞতাও বেশি। তবে আমাদের জন্য অসম্ভব নয় তাদের সাথে জেতা। আমাদের টীম ভালো করেছে, যে রান করেছে সেটা খারাপ নয়। যেমন আয়ারল্যান্ডের সাথে ভালো খেলেছে। মূল কথা হলো সাসটেইনেবলিটি, তবে কারো সাথে হারবে, কারো সাথে জিতবে- এটাই স্বাভাবিক। এটাইতো বিশ্বকাপের বৈশিষ্ট। আমাদের এই তরুণ টীম ষোল কোটি মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে। সুতরাং আমাদের আশা আকাঙ্খার সাথে এই টীমটি জড়িত। কিন্তু এটাও বুঝতে হবে বিশ্বকাপের খেলার এতগুলো টীমের সঙ্গে একটি তরুণ দল খেলছে ; তাকে নানান ধরণের কৌশলের মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে আমি মনে করি পেশাগত মনোভাবের আরেকটু প্রকাশ দেখাতে পারলে ভালো হতো।

খেলা উপলক্ষ্যে ঢাকা শহরকে চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। বিশ্বকাপ অনুষ্ঠানের এমন একটি সুযোগ বাংলাদেশের জন্য একটা বড় সৌভাগ্য। এই সুযোগটাকে আমরা আরও কাজে লাগাতে পারতাম দেশীয় বিষয়গুলো প্রদর্শনের মাধ্যমে। যেমন রিকসা ব্যবহার করা হয়েছে। এটা বেশ ভালো কিন্তু রিকসায় যে পেইন্টিং বা আর্ট সেটা কিন্তু আমরা ব্যবহার করতে পারতাম। রিকসা পেইন্টিং কিন্তু খুবই গুরত্বপূর্ণ। এ নিয়ে কিন্তু বাইরের গবেষকরা অনেক কাজও করেছেন, বই লিখেছেন। এই রিকসা আর্টের মধ্য আমাদের নিজস্ব একটা পরিচয় আছে। এই পরিচয়টাকে আমরা তুলে ধরতে পারতাম রিকসার সাথে। আমি নিজে এই আর্ট ব্যবহার করেছি। আামদের দেশীয় কাপড়, দেশীয় ঐতিহ্য ব্যবহারের একটা বিশাল সুযোগ ছিলো এই বিশ্বকাপে। আমরা সবাই গর্ব বোধ করি যে ৭১-এ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমাদের এই নিজস্বতার বা অহংকারের দিকটিকে তুলে ধরতে পারিনি।

শ্রীলংকা দীর্ঘ দিন ধরে যুদ্ধ সংঘাতের মধ্য দিয়ে গেছে। কিন্তু ওদের নাচের অনুষ্ঠানে ওরা একটা ইতিবাচক শ্রীলংকাকে উপস্থাপন করছে। অন্যদিকে, আমরা কী করলাম ? যেমন আমাদের গানের অনুষ্ঠানটির কথাই ধরা যাক। আমাদের দেশের কি কোন কাপড় নেই ? আমাদের নিজস্ব কোন গান নেই? পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি মন্টু ঘটকের প্যারোডি গান নিয়ে আমাদের বরেণ্য শিল্পীরা হাজির হলেন কীভাবে ? আমি বাংলাদেশী গান নিয়ে বাইরে যাই। বিদেশীরা পাগল হয়ে যায় এইসব গানে। আব্বাসউদ্দীন, আবদুল আলীমের গান কী গাওয়া যেতো না ? এই অনুষ্ঠানে যাঁরা গান গাইলেন তারা অনেক বড় শিল্পী, অনেক উচ্চ মাপের। তাঁদের সমালোচনা করার ইচ্ছে আমার নেই। কিন্তু সত্যিই আমি অবাক হয়েছি তাঁদের গান শুনে। যে-কাপড় এবং সজ্জা দেখলাম-তাও আমাকে বেশ হতাশ করেছে। কেবল ছায়ানট-এর অংশটুকু ছাড়া আমার কাছে বাকি সব অস্বাভাবিক লেগেছে। শ্রীলংকার কি কম সমস্যা ছিলো ? কত বছর যাবত তারা যুদ্ধ করেছে। মাত্র দু'বছর হলো তারা এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু তারপরও ওরা এক ইতিবাচক শ্রীলংকাকে হাজির করতে পেরেছে।

সাজসজ্জার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বাইরের জিনিস। আলোকসজ্জা কি আমাদের দেশীয় জিনিস দিয়ে করা সম্ভব ছিলো না ? বাইরের জিনিস ব্যবহার করে আমাদের টাকাটা কিন্তু বাইরেই চলে গেল।

টিকিট নিয়েও যে অব্যবস্থাপনা তাও খুব বেদনাদায়ক। অনেকেই টিকিট কিনতে পারেনি। তারপরে টিকিট কেনার জন্য দীর্ঘ লাইন দিয়ে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করেও অনেকের পক্ষে টিকিট পাওয়া সম্ভব হয়নি। আমার পক্ষে তো আর রোজ গিয়ে লাইন দেওয়া সম্ভব নয়। আবার যাদের 'লাইন' আছে তারা পেয়েছে। আমার কোন লাইন নেই বলে পাত্তাই পেলাম না। কিন্তু অন্যরা ঠিকই টিকিট পেয়েছে; আলতু-ফালতু মানুষও টিকিট পেয়েছে । এই একটা সুযোগ ছিলো দেশে বসে ওয়ার্ল্ড কাপ ক্রিকেট খেলা দেখার। কিন্তু টিকেট পাইনি। কিছু মানুষের কিন্তু টিকিট পাওয়া উচিৎ  বিশেষ করে যারা বাইরে নিজের দেশকে ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করছে কিংবা নিজের দেশে ভালো ভালো কাজ করছে। সেক্ষেত্রে আমার কিন্তু একটা টিকেট পাওয়া উচিৎ ছিলো। আমিতো পয়সা দিয়েই কিনে নিতাম। কিন্তু আমার যেহেতু পলিটিক্যাল লাইন নেই, তাই পাইনি। যদিও আমি বিশ্বাস করি, প্রত্যেক মর্যাদাবান মানুষই একদিন না একদিন তার প্রাপ্য মর্যাদা পাবেন।

বিবি রাসেল: প্রথম সারির ডিজাইনার ও মডেল তারকা।