ভারত না ভুটান: বিতর্কটির নিষ্পত্তি প্রয়োজন

অমি রহমান পিয়ালঅমি রহমান পিয়াল
Published : 6 Dec 2014, 03:52 PM
Updated : 6 Dec 2014, 03:52 PM

সপ্তাহ খানেক ধরে অনলাইনে একটা বিতর্ক চলছে, বাংলাদেশকে কোন দেশ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল? কেউ বলছে ভারত, কেউ বলছে ভুটান। যারা ভুটানের পক্ষে, তাদের কারও কারও সোর্স আকাশবাণী; কারও পাঠ্যবই। আবার কেউ কেউ এ বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে প্রাধান্য দিয়ে হুংকার দিচ্ছেন।

যারা আকাশবাণীর রেফারেন্স দিচ্ছেন তাদের দাবি– তারা নিজেরা ইভা নাগের সুললিত কণ্ঠে শুনেছেন যে, ৩ ডিসেম্বরেই নাকি ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাকিরা কেউ পড়েছেন পাঠ্যবইয়ে, কেউ-বা বিসিএস পরীক্ষা-প্রস্তুতির সাধারণ জ্ঞান বইয়ে। কেউ লিংক দিচ্ছেন কিছু ওয়েবসাইটের, যেখানে ভুটান ৬ ডিসেম্বর এবং ভারত ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।

সর্বশেষ, তারা লন্ডন থেকে আবদুল গাফফার চৌধুরীর অডিও বক্তব্য ধারণ করে সম্প্রচার করছে যেখানে তিনিও ভুটান ভারতের আগে স্বীকৃতি দিয়েছে বলে জানাচ্ছেন। আজ (৬ ডিসেম্বর) সকালে একাত্তর টিভির স্ক্রলে যখন একই কথা লেখা দেখলাম, তখন মনে হল এই বিতর্কের নিষ্পত্তি প্রয়োজন। শুধু তাই নয়, তৃণমূল থেকে প্রশাসনের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ ব্যাপারে সংশোধন হওয়া দরকার।

আমি এই বিতর্কে ভারতের পক্ষে আমার মতামত দিয়েছি। এ প্রসঙ্গে আমার যুক্তিগুলো পাঠকদের জন্য তুলে ধরছি।

১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর আকাশবাণীতে ইভা নাগের সেই খবর শোনার সৌভাগ্য আমার হয়নি। তবে, ৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের বেতার ভাষণের টেক্সট পড়ার ভাগ্য হয়েছে। মুজিবনগর সরকারের দলিলপত্রে, স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র এবং বাংলাদেশ ডকুমেন্টস, তিন জায়গাতেই এ বক্তৃতার বাংলা ও ইংরেজি টেক্সট রয়েছে। ৮ ডিসেম্বরের সেই বেতার ভাষণে তাজউদ্দিন আহমদ বলেছেন:

''ভারতের জনসাধারণ অনেক আগেই আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছেন তাদের অন্তরে। এখন তাদের সরকার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জানিয়েছেন। বাংলাদেশের সর্বশ্রেণির জনসাধারণের পক্ষে এ এক বিজয়। বিজয় তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের, আর বিজয় তাদের মুক্তিবাহিনীর। … ভারতের পর ভুটান স্বীকৃতি দিয়েছে বাংলাদেশকে। এর জন্য ভুটানের রাজা ও জনসাধারণের নিকট কৃতজ্ঞ।''

ইংরেজিতেও একই কথা লেখা:

Bhutan is the second country to accord recognition to the People's Republic of Bangladesh. We are grateful to the King and the people of Bhutan for this noble act.

[Mujibnagar Government Documents 1971, Page: 419]

সব দলিলই নির্দেশ করছে যে, ৬ ডিসেম্বর ভারতই প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।

কথা হচ্ছে, স্বীকৃতি তো মুখে বললেই হয় না, হাবেভাবে বোঝালেও চলে না। এর একটা আনুষ্ঠানিকতা আছে। ভারত কিংবা ভুটান যে দেশই হোক, অফিসিয়ালি সেই স্বীকৃতির চিঠি পাঠানো হয়েছে তাজউদ্দিন আহমদের বরাবরেই– ইভা নাগ কিংবা আকাশবাণীতে নয়। তাহলে আমরা কার বক্তব্য বিবেচনায় নেব? মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নয় কি? তাজউদ্দিন আহমদের মতো খুঁতখুতে এবং ডিটেল নিয়ে কাজ করা মানুষ এত বড় ভুল করবেন যে, ভুটানের আগে ভারতের নাম বলে দেবেন!

১৯৭২ সালের ৬ ডিসেম্বর দৈনিক বাংলা পত্রিকায় তাজউদ্দিন আহমদের একটি সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়। সেখানে তিনি বলেছেন:

''বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের অনুরোধ জানিয়ে ১৯৭১ সালের ১৫ অক্টোবর প্রথম শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে চিঠি লিখি। এরপর ২৩ নভেম্বর আর একখানা চিঠি দিই। ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের ঘোষিত যুদ্ধের আগের দিন ২ ডিসেম্বর এবং পরের দিন ৪ ডিসেম্বর ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছি। ৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় ভারতীয় পার্লামেন্ট বাংলাদেশকে স্বীকৃতিদানের কথা ঘোষণা করার পর শ্রীমতি ইন্দিরা আমাকে একখানা আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন। ৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার বিকেল সোয়া তিনটায় মুজিবনগরে সেই চিঠি আমার হাতে এসে পৌঁছেছে।''

দলিল আরও আছে। সে সময় মুজিবনগর সরকারের একটি আন্তর্জাতিক প্রকাশনা ছিল, নাম 'বাংলাদেশ'। মূলত এটি ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও কূটনীতিকদের জন্য। ১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর প্রকাশিত হয় বাংলাদেশের প্রথম বর্ষ ২৪তম সংখ্যাটি। বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছবিসহকারে তার লিড নিউজ ছিল, ''ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।''

একই নিউজে ছিল একটি বক্স আইটেম, যাতে লেখা:

''ভারতের পর ভুটান দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।''

বার্তা সংস্থা 'রয়টার্স' এবং 'অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস' এর (এপি) সৌজন্যে সেই সংবাদ বিশ্বব্যাপী প্রচারও হয়েছে।

এ লেখায় 'রয়টার্স' এর বরাতে 'লন্ডন টাইমস' এ প্রকাশিত খবরটি সংযুক্ত করা হল, যেখানে বলা হয়েছে: ভুটান ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

এবার আসা যাক ৬ ডিসেম্বরের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনায়। ভারত শুরু থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার উদার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। দেশান্তরী বাংলাদেশ সরকারকে আশ্রয় ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য সব ধরনের সুবিধা দিয়েছে। লাখ থেকে কোটিতে পৌছানো আমাদের উদ্বাস্তুদের আশ্রয় ও খাবারদাবারও পেয়েছি ভারতের কল্যাণে। মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র ও ট্রেনিংদানের কৃতিত্ব ওদের। কিন্তু আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতিপ্রদানে এত দেরি কেন!

১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে যখন বাংলাদেশ সরকার শপথ নিল, সেদিনই স্বীকৃতি দিতে পারত ওরা। তাজউদ্দিন আহমদ চারটা চিঠি দিয়েছেন একই দাবিতে। যে কোনোটির প্রত্যুত্তর হতে পারত এই স্বীকৃতি। তাহলে ৬ তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা কেন?

এর উত্তর খুঁজতে আমাদের যেতে হবে আরেকটি ফ্রন্টে। জাতিসংঘ।


''৩ ডিসেম্বর ছয় বছরের মধ্যে দ্বিতীয় বারের মতো সামরিক সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে ভারত ও পাকিস্তান। সেদিন বিকেলে ভারতের বিভিন্ন সামরিক ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়ে এর সূচনা করে ইয়াহিয়া খানের সরকার। হামলার কারণ হিসেবে তার যুক্তি ছিল, ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন বিষয়ে নাক গলাচ্ছে বহুদিন ধরে। তারা 'দুষ্কৃতিকারী'দের (পড়ুন মুক্তিযোদ্ধা) সামরিক প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানের ভেতর অন্তর্ঘাত চালাচ্ছে। বহুবার সতর্ক করার পরও তাদের এই বৈরিতা থামেনি। অতএব পাকিস্তান নাচার। আক্রমণ ছাড়া উপায় নেই তাদের।''

৫ ডিসেম্বর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের অধিবেশন বসে। পাকিস্তানের দুই মিত্র, দুই পরাশক্তি, যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এবং তাদের তাঁবেদার দেশগুলোর প্রস্তাবনা টিকে গেলে বাংলাদেশের সহসা স্বাধীনতা লাভ হত না। দু'পক্ষে যুদ্ধবিরতির আহবান জানিয়ে প্রস্তাবনাটির মূল বার্তা ছিল, দু'পক্ষ যার যার সীমান্তে থাকবে। কেউ কারও ব্যাপারে নাক গলাবে না। প্রয়োজনে শান্তিরক্ষী বাহিনী সীমান্ত প্রহরার দায়িত্ব নেবে। নিশ্চিত করবে যুদ্ধবিরতির কার্যকারিতা।

তার মানে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিতান্তই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন সমস্যা। ভারতকে এ থেকে হাত গুটিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি, সীমান্ত পাড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নিজের দেশে ঢোকার সুযোগেরও ইতি। রাশিয়া তার প্রথম ভেটোটি দিয়ে প্রস্তাবনাটি থামাল।

দৈনিক বাংলা এর সেই সাক্ষাতকারে তাজউদ্দিন আহমদ আরও বলেছিলেন:


''১৯৭১ সালের ৯ আগস্ট সম্পাদিত ঐতিহাসিক ভারত-সোভিয়েত মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তিই ছিল স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাকে স্বীকৃতিদানের প্রথম ভিত্তি। এটি ছিল বর্তমান বিশ্বের কূটনীতির ক্ষেত্রে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অসাধারণ সাফল্য।''

আসলেই তাই। ৫ তারিখে বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয় যে, পরদিন স্বীকৃতি আসছে। ভারতীয় পার্লামেন্টের এ ঘোষণার পরপরই সেখানে উপস্থিত বিশেষ প্রতিনিধি হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বাংলাদেশ সরকার এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষে ইন্দিরা গান্ধীকে ফুলের মালা পরিয়ে দিয়ে ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।

৬ ডিসেম্বরের এই ঘোষণার মাধ্যমেই বিশ্ব মোড়লদের জানান দেওয়া হয় যে, এটা এখন আর পাকিস্তানের অভ্যন্তরীন সমস্যা নেই, এটা বাংলাদেশ-পাকিস্তানের সমস্যা। ভারত মানবতা ও নৈতিক ঔচিত্যবোধ থেকেই তাদের প্রতিবেশির পাশে দাঁড়িয়েছে। আর তার প্রমাণও দেখা যায় পরদিন ৭ ডিসেম্বর। পূর্ব ফ্রন্টে সীমান্ত পাড়ি দেয় ভারতীয় ট্যাংক। একসঙ্গে মার্চ করে ভারত-বাংলাদেশের সশস্ত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গড়া মিত্র বাহিনী। যশোর মুক্ত হওয়ার মাধ্যমে শুরু হয় তাদের অভিযাত্রা, যা ১৬ ডিসেম্বর শেষ হয় ঢাকায় চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর আত্মসমর্পণে।

লিংক:

৬ ডিসেম্বর এবং ভারতের স্বীকৃতির তাৎপর্য বোঝাটা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের স্বার্থেই তাই জরুরি। এই স্বীকৃতি একই সঙ্গে ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো পরাশক্তিকে জানানো একটি চ্যালেঞ্জ। ভুটানের স্বীকৃতি সম্পূরক হিসেবে কাজে এসেছে। জাতিসংঘ ও পরাশক্তিগুলো তখন ভারতকে একগুঁয়েমির অভিযোগে অভিযুক্ত করতে পারেনি। ৫ তারিখ থেকে বিজয়ের আগ পর্যন্ত সর্বমোট তিনটি ভেটো দিয়ে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ থেকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের অন্তিমলগ্ন রক্ষা করেছে রাশিয়া। সেটির প্রেক্ষাপট হিসেবে, শক্ত ভিত হয়ে কাজ করেছে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্বীকৃতি, যেটি ছিল ভারত-প্রদত্ত।

প্রসঙ্গত বলতে হয় যে, ২৯ নভেম্বর ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং টবগে তাঁর ব্যক্তিগত টুইটার অ্যাকাউন্টে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রসঙ্গে একটি বক্তব্য দিয়েছেন; সেটি এ রকম:

December 6th coincides with the day on which Bhutan became the first country after India to recognize Bangladesh's independence.

যার অর্থ দাঁড়ায়:

১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ভারতের পর ভুটানই প্রথম দেশ যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন বলে স্বীকৃতি দিয়েছিল। ফার্স্ট কানট্রি আফটার ইন্ডিয়া, ভারতের পর প্রথম। তার মানে ভারতই বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতিদানকারী দেশ।

লিংক:

ভুটানের প্রধানমন্ত্রী তাঁর দেশের পররাষ্ট্রনীতির ইতিহাস জানবেন না এ তো হতে পারে না। যেখানে ভুটান নিজেদের দ্বিতীয় স্থানে রাখছে, সেখানে আমরা জোর করে তাদের প্রথম বানাতে চাইছি কেন? কাদের অপমান ঠেকাতে? কাদের অপমান করতে? যারা এ দেশের স্বাধীনতায় আন্তরিকতার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছিল, তাদের? সে সঙ্গে আমরা কাকে ছোট করছি?

মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারকে, মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রকে।

একাত্তরের আকাশবাণীর সেই নিবিষ্ট শ্রোতাদের কাছে জানতে ইচ্ছে করে, যুদ্ধের হালহকিকত জানতেই তো রেডিও শুনতেন, ইভা নাগের সুকণ্ঠ মনে রাখলেন, ভুলেই গেলেন প্রধানমন্ত্রীর কথা! তাঁর বক্তব্য! বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ!

একাত্তরে, গোটা মুক্তিযুদ্ধকালে তাজউদ্দিন আহমদের কান্নায় ভেঙে পড়া একটাই ছবি মেলে। সেটি ৬ ডিসেম্বর আকাশবাণীতে তাঁর প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করার সময়ে তোলা। ভারতের এই স্বীকৃতির মূল্য এত হালকা ভাবছেন কেন? কেন বুঝতে পারছেন না ওই একটা ঘোষণার পর বাঙালির গা থেকে 'রিফিউজি' শব্দটা মুছে গিয়েছিল? পাকাপাকিভাবে বসে গিয়েছিল মুক্তির জন্য লড়তে থাকা 'মুক্তিযোদ্ধা' শব্দটা?

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির ধাক্কায় আমাদের পরপর কয়েকটি প্রজন্ম ক্ষতিগ্রম্ত হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলো নিয়েও বিতর্ক তোলে। কারণ, তারা বইয়ে পড়েছে। ১৯৭৫ সালের পর পাঠ্যপুস্তকে যে অভিসন্ধিমূলক এডিটিং চলেছে, তা যে পুরোপুরি সংশোধন করা যায়নি, তার প্রমাণ এই ভারত-ভুটান বিতর্ক। মুক্তিযুদ্ধের সময়কার দলিল-দস্তাবেজ বিবেচনা করে এ ব্যাপারে সরকারের আশু বক্তব্য দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

ভুল হতেই পারে। সেটা স্বীকার করে শুধরে নিলে তাতে আমরা ছোট হব না। কিন্তু একটা ছোট ভুল যদি মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়-নির্ধারণী বিষয়গুলোকে বিতর্কিত ও তুচ্ছ করে দেয়, তাহলে নিজেদের বড় অকৃতজ্ঞ মনে হবে।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ একজন বাঙালি হিসেবে এটা আমার কাছে অপমানজনক।