চুমু কাহিনী এবং ওবামার প্রেম

শফিক রেহমান
Published : 12 Feb 2011, 05:53 PM
Updated : 12 Feb 2011, 05:53 PM

ভালোবাসা দিন যতোই ঘনিয়ে আসে ততোই একটি প্রশ্ন ভালোবাসতে উদগ্রীব মানুষের মনে উঁকি-ঝুকি দিতে থাকে। সেই দিনটিতে আমার প্রিয়জনকে কী গিফট দেবো? এই প্রশ্নটি তাড়া করে বেড়ায় প্রেমিক-প্রেমিকা, স্বামী-স্ত্রী, পিতা-মাতা-সন্তান, ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধবের মনে। যাদের সঙ্গতি আছে এবং চড়া দামে যারা ভীত নন তারা অনেক কিছুই দিতে পারেন। কিন্তু যাদের সঙ্গতি কম তাদের যন্ত্রণা হয় বেশি। তাদের হৃদয়ের আবেগ রুদ্ধ হয়ে যায় টাকার প্রাচীরের সামনে।

আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা বিত্তনির্ভর নয়। খুব কম টাকায় অথবা বিনা টাকাতেও ভালোবাসা প্রকাশ করা যায়।
এক টাকায় ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে। পাঁচ টাকায় একটা লাল গোলাপের মাধ্যমে। দশ টাকায় একটা ফুলের মালার মাধ্যমে। পনেরো টাকায় একটা গৃটিংস কার্ডের মাধ্যমে।

আর একেবারেই বিনা দামে ভালোবাসা প্রকাশ করা যায় চুমুর মাধ্যমে। প্রেমিক-প্রেমিকা ও স্বামী-স্ত্রী সেদিন আবেগভরা চুমু খেতে পারেন। তারা সেদিন দীর্ঘস্থায়ী চুমু ট্রাই করতে পারেন। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডের মতে, ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ একটানা চুমু খাওয়ার রেকর্ড প্রতিষ্ঠা করেন জার্মানির হ্যামবার্গ শহরে দুই জার্মান নর-নারী। নিকোলা মাটোভিচ ও কৃস্টিনা রাইনহার্ট মোট ৩২ ঘণ্টা ৭ মিনিট ১৪ সেকেন্ড পারস্পরিক ঠোঁটে চুমুবদ্ধ ছিলেন। বিশ্ব রেকর্ড প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ম-কানুন মেনে তারা সাক্ষীদের সামনে প্রকাশ্যে লক্ষ্য পূরণে এই অ্যাডভেঞ্চারে নেমেছিলেন।
বাংলাদেশে কোনো যুগলের প্রকাশ্যে চুমু বিনিময় অনুচিত হবে। তবে বাংলাদেশে মাঝে মধ্যে সন্তানকে প্রকাশ্যে চুমু দিতে দেখা যায় পিতা-মাতাকে।
চুমু হতে পারে ওই পিতা-মাতাদের চুমুর মতো স্নেহের প্রতীক। চুমু হতে পারে প্রেমিক-প্রেমিকা ও স্বামী-স্ত্রীর ঠোঁটে চুমু খাওয়ার রোমান্স ও আবেগের প্রতীক। আবার বিশিষ্ট ব্যক্তির হাত বা পায়ে চুমু খাওয়া হতে পারে তার প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক।
সাধারণত কামজ চুমু বলতে বোঝায় পারস্পরিক ঠোঁটে চুমু। এটা স্বল্পস্থায়ী হতে পারে, দীর্ঘস্থায়ীও হতে পারে। স্থায়িত্ব যাই হোক না কেন, চুমুর স্বাদ নর-নারীর ক্ষেত্রে অনেক রকমের হতে পারে।

আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামা যখন তরুণ ছিলেন এবং প্রেমে পড়েছিলেন তখন প্রেমিকা মিশেলকে চুমু খাওয়ার স্বাদ বিষয়ে অকপটে লিখেছেন তার আত্মজীবনীমূলক The Audacity of Hope (দি অডাসিটি অফ হোপ, আশার দুঃসাহস) বইটিতে। ওবামা লিখেছেন কীভাবে প্রথম দেখা হয়েছিল মিশেলের সঙ্গে। কীভাবে তাদের প্রেম হয়েছিল এবং মিশেলকে প্রথম চুমু দেয়ার পর তার স্বাদ কেমন মনে হয়েছিল।
এখন পড়ুন তার বইয়ের কিছু অংশ।

আমার স্ত্রীর সঙ্গে যাদের দেখা হয়েছে তাদের বেশির ভাগই মনে করেন, সে অসাধারণ। তাদের এই সিদ্ধান্ত সঠিক। সে স্মার্ট, পরিহাসপ্রিয় এবং আকর্ষণীয়। তাছাড়া তিনি সুন্দরীও বটে। তবে তার এই সৌন্দর্যটা এমন নয় যে, সেটা পুরুষের প্রতি আগ্রাসী অথবা নারীর প্রতি বিতৃষ্ণাদায়ক। রংচংয়ে ম্যাগাজিনের কভারে কিছুটা কৃত্রিমভাবে নারীর যে ভাবমূর্তি দেখা যায় সে রকম সৌন্দর্য তার নয়। তার সৌন্দর্য হচ্ছে একটি প্রাণবন্ত মায়ের সৌন্দর্য এবং পেশাগত কাজে ব্যস্ত একটি ব্যক্তির সৌন্দর্য। কোনো ফাংশনে তার ভাষণ দেয়া বা কথা বলার পর অথবা কোনো প্রজেক্টে তার সঙ্গে কাজ করার পর প্রায়ই কেউ না কেউ আমার কাছে এসে বলেন, বারাক, আপনি তো জানেন আপনাকে কতো বড় মাপের মানুষ মনে করি। কিন্তু … আপনার স্ত্রী … ওয়াও!
আমি তাদের কথায় মাথা নেড়ে সায় দিই। আমি জানি, যদি কোনো পদের জন্য নির্বাচনে তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয় তাহলে সে অতি সহজেই আমাকে হারিয়ে দেবে।

আমার সৌভাগ্য যে, মিশেল কোনোদিনই রাজনীতিতে যাবে না। এ বিষয়ে কেউ তাকে প্রশ্ন করলে সে উত্তর দেয়, আমার সেই ধৈর্য্যটা নেই।
মিশেল সব সময় সত্য বলে। তার এ কথাটাও সত্য।
মিশেলের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল ১৯৮৮-র গ্রীষ্মকালে। শিকাগোতে অবস্থিত সিডলি অ্যান্ড অস্টিন নামে একটি বড় কর্পরেট ল' (আইন) ফার্মে তখন আমরা দুজন কাজ করছিলাম। মিশেল বয়সে আমার চেয়ে তিন বছর ছোট হলেও আইনজীবী হিসেবে সিনিয়র ছিল। কলেজ থেকে বেরিয়েই সে হাভার্ড ইউনিভার্সিটিতে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করে। সেখান থেকে সরাসরি এই ল' ফার্মে। আর আমি ল' স্কুলে ফার্স্ট ইয়ার শেষ করে এই ফার্মে কাজ করছিলাম গ্রীষ্মকালীন অ্যাসোসিয়েট রূপে।

আমার জীবনে এই সময়টা ছিল এক ধাপ থেকে আরেক ধাপে উত্তরণের এবং বেশ কঠিন। কমিউনিটি অর্গানাইজার রূপে তিন বছর কাজ করার পর আমি ল' স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম। যদিও সেখানে আমার পড়াশোনা আমি এনজয় করতাম তবুও আমি ঠিক পথে যাচ্ছি কি না সে বিষয়ে আমার সন্দেহ ছিল। আমি চিন্তিত ছিলাম যে, ল' স্কুলে ভর্তি হওয়ার এই সিদ্ধান্তটি ছিল আমার যৌবনদীপ্ত আদর্শগুলোকে পরিত্যাগ করা এবং টাকা ও শক্তির রূঢ় বাস্তবতার সঙ্গে একটা আপস করা। পৃথিবীটা যেমন হওয়া উচিত সেদিকে কাজ না করে পৃথিবীটা যেমন সেটা মেনে নিয়ে কাজ করা।

একটা কর্পরেট ল' ফার্মে কাজ করার চিন্তা আমার সেই আশংকাকে আরো গভীর করেছিল। আমি একটি গরিব এলাকায় থাকতাম। আমার বন্ধুরা সেখানে কঠিন পরিশ্রম করছিল। ল' ফার্মটির সামাজিক অবস্থান ছিল সেখান থেকে অনেক দূরে। কিন্তু ছাত্র হিসেবে আমি যে ব্যাংক লোন পেয়েছিলাম সেটা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছিল। তাই সিডলি অ্যান্ড অস্টিন যখন ভালো বেতনে তিন মাসের একটি চাকরি অফার করলো তখন সেটা নাকচ করার মতো অবস্থা আমার ছিল না। আমি তখন সবচেয়ে শস্তা ভাড়ার একটা ফ্ল্যাটের সাব-টেনান্ট রূপে থাকতাম। ওই চাকরির অফার পেয়ে তিনটা সুট কিনলাম। জীবনে এই প্রথম এক সঙ্গে তিনটা সুট কিনেছিলাম। এক জোড়া নতুন জুতাও কিনেছিলাম। কিন্তু সেই জুতা জোড়ার সাইজ ছিল হাফ-সাইজ কম। তাই পরের নয় সপ্তাহ খুব কষ্ট করে হাটতে হয়েছিল।

জুন মাসের এক সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টির মধ্যে আমি হাজির হলাম সেই ল' ফার্মে। আমাকে জানানো হলো, গ্রীষ্মকালীন এই তিন মাসের চাকরিতে আমার এডভাইজর বা উপদেষ্টা রূপে নিয়োগ করা হয়েছে ওই ফার্মের এক তরুণ অ্যাটর্নি-কে। আমাকে তার অফিস কোথায় সেটা দেখিয়ে দেয়া হলো। গিয়ে দেখলাম, সে তরুণী!

মিশেল-এর সঙ্গে প্রথম দেখায় আমার যেসব কথা হয়েছিল আজ তা মনে নেই। শুধু মনে পড়ে, সে ছিল লম্বা। হাই হিল জুতা পরে প্রায় আমার সমান। আর সে ছিল লাভলি। তার ফ্রেন্ডলি কিন্তু প্রফেশনাল আচার-ব্যবহার মানানসই ছিল তার পোশাকের সঙ্গে। সে পরেছিল সুট আর ব্লাউজ।

আমাকে সে বুঝিয়ে বললো, ফার্মে বিভিন্ন ব্যক্তিকে কীভাবে বিভিন্ন কাজ বিলি করা হয়। যারা গ্রুপ হয়ে প্র্যাকটিস করেন তাদের ধরন কী রকম এবং কাজ করার পর ঘণ্টা মেপে কীভাবে ক্লায়েন্টদের বিল করতে হয়। আমি কোথায় বসবো সেটা সে দেখিয়ে দেয়। তারপর আমাকে সে ফার্মের লাইব্রেরি দেখাতে নিয়ে যায়। এরপর সে ফার্মের একজন পার্টনারের কাছে আমাকে রেখে যায়। যাওয়ার আগে সে বলে যায়, লাঞ্চে আমার সঙ্গে দেখা করবে।

বহু দিন পরে আমাকে মিশেল বলেছিল, যখন আমি তার অফিসে ঢুকেছিলাম তখন সে বেশ অবাক হয়েছিল। চাকরিতে জয়েন করার জন্য অ্যাপ্লিকেশন লেটারের সঙ্গে যে পাসপোর্ট সাইজ ছবি সংযুক্ত করেছিলাম তাতে আমার নাকটা একটু বড় দেখাচ্ছিল। ইন্টারভিউতে যেসব সেক্রেটারি আমাকে দেখেছিল তারা মিশেলকে বলেছিল, আমি সুদর্শন – কিউট! কিন্তু ওই পাসপোর্ট ছবি দেখায় মিশেল তাদের কথা বিশ্বাস করতে চায় নি। মিশেল পরে বলেছিল, একটা কালো লোক যে সুট-টাই পরে চাকরির জন্যে এই ফার্মে এসেছে তাতেই তারা ইমপ্রেসড হয়েছিল। মিশেল হয়তো এখন বলবে, আমার নাকটা সাধারণের তুলনায় বেশ বড়।
আমাকে সামনাসামনি দেখার পরে মিশেল ইমপ্রেসড হয়েছিল কি না সেটা লাঞ্চে আমাকে বুঝতে দেয় নি। খাবার সময়ে আমাকে সে বললো, সে বড় হয়েছে নিউ ইয়র্কের দক্ষিণ অঞ্চলে একটি ছোট বাংলোতে। ওই এলাকার খুব কাছেই আমি অর্গানাইজার হিসেবে কাজ করেছিলাম। তাই এলাকাটি যে বর্ধিষ্ণু সেটা আমি জানতাম। নিউ ইয়র্ক সিটি-র পাম্প অপারেটর পদে কাজ করছেন তার বাবা। ছেলেমেয়েরা বড় না হওয়া পর্যন্ত হাউসওয়াইফ ছিলেন তার মা। এখন তিনি একটি ব্যাংকে ক্লার্ক পদে আছেন।

মিশেল প্রথমে পড়াশোনা করেছিল বৃন মর পাবলিক এলিমেন্টারি স্কুলে এবং তারপর হুইটনি ইয়াং ম্যাগনেট স্কুলে। তার বড়ভাই পৃন্সটন ইউনির্ভাসিটিতে পড়াশোনা করেছিল। স্কুল জীবন শেষের পরে ভাইয়ের পদাংক অনুসরণ করে মিশেলও পৃন্সটনে যায়। সে ওই ইউনিভার্সিটির বাস্কেটবল টিমের একজন স্টার প্লেয়ার হয়। সিডলি অ্যান্ড অস্টিন ফার্মে সে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি গ্রুপে কাজ করছিল। বই, সিডি, ডিভিডি, গান ইত্যাদিকে ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি বা সম্পত্তি বলা হয় এবং এসব বিষয়ে মামলা দেখাশোনার কাজ সে করতো। বিশেষত সে এন্টারটেইনমেন্ট ল' বা বিনোদন বিষয়ক আইনে স্পেশালাইজ করেছিল। যেহেতু লস অ্যাঞ্জেলেস ও নিউ ইয়র্ক – এই দুটি শহর হচ্ছে বিনোদনের দুটি বড় কেন্দ্র সেহেতু ওই দুই শহরের কোনো একটিতে গিয়ে এবং স্থায়ীভাবে থেকে তার ক্যারিয়ার সামনের দিকে নেয়ার কথা ভাবছিল মিশেল।

ওহ! মিশেল সেদিন তার গাদা গাদা প্ল্যানের কথা বলেই চলেছিল। সে বলেছিল, সে এমন একটা ফাস্ট ট্র্যাকে আছে যেখানে মনোযোগ নষ্টকারী কোনো কিছুর জন্য, বিশেষত পুরুষ মানুষের জন্য, দাড়ানোর কোনো সময় তার নেই। তবে সে জানতো কতো উজ্জ্বলভাবে এবং সহজে হাসতে হয়। এক পর্যায়ে আমি লক্ষ্য করলাম, তার অফিসে ফিরে যাওয়ার তেমন কোনো তাড়া নেই।

তাছাড়া আরো একটা কিছু ছিল। যখনি আমি তার দিকে তাকাচ্ছিলাম তখনি তার গভীর দুটি কালো চোখে একটা ঝিলিক দেখা যাচ্ছিল। তাতে মনে হচ্ছিল, সে তার হৃদয়ের গভীরে একটা অনিশ্চয়তা বোধ করছে। সে হয়তো বুঝতে পারছিল, সব কিছুই কতো ভঙ্গুর। এক মুহূর্ত অসাবধান হলেই তার সব প্ল্যান ভেস্তে যাবে।
সে যে দুর্বলতায় ভুগতে পারে সেটা আমাকে স্পর্শ করলো। তার জীবনের সেই অংশটা আমি বুঝতে চাইলাম।

এর পরের কয়েক সপ্তাহে প্রতিদিনই আমরা দেখা করতাম। কখনো ল' লাইব্রেরিতে, কখনো কাফেটেরিয়াতে, কখনো বা অফিসের বাইরের সব অনুষ্ঠানে। এসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করতো ল' ফার্মগুলোই। আমার মতো যারা গ্রীষ্মকালে কাজ করতে আসতো, যাদের বলা হতো সামার অ্যাসোসিয়েটস, এসব অনুষ্ঠানে তাদের বোঝানো হতো আইন পেশায় ঢুকলে সারাটা সময় শুধু দলিলপত্রই দেখতে হবে না, তার বাইরেও অন্য জীবন আছে।

মিশেল এই ধরনের দুই-একটি পার্টিতে আমার সঙ্গে গিয়েছিল। এসব পার্টিতে যাওয়ার জন্য আমার যে ভালো পোশাক নেই সেটা সে বুঝতে চায় নি। সে তার কিছু বন্ধুর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু প্রপার ডেট (Proper Date) সে কখনো করতে চায় নি। সে বলতো, যেহেতু ফার্মে সে আমার এডভাইজার সেহেতু ডেট করা অনুচিত হবে।

একদিন তাকে বললাম, এটা একটা খোঁড়া অজুহাত। কাম অন, তুমি আমাকে কী উপদেশ দিচ্ছ? তুমি দেখাচ্ছ কীভাবে ফটোকপিইং মেশিন কাজ করছে। তুমি বলছ, কোন সব রেস্টুরেন্টে যেতে হবে। আমার তো মনে হয় না, তুমি যদি আমার সঙ্গে একটা ডেট করো, সেটাকে ফার্মের কোনো পার্টনার কাজের নিয়ম-কানুন ভঙ্গকারী রূপে সিরিয়াসলি ভাববে।
মিশেল মাথা ঝাঁকিয়ে বললো, সরি।
ওকে। তাহলে আমি সরে দাঁড়াবো। তুমি তো আমার এডভাইজর। এখন এডভাইস দাও, কার কাছে আমি যাবো?
আমি হাল ছেড়ে দিলাম না। শেষ পর্যন্ত তাকে কাবু করলাম।
সেদিন ছিল ফার্মের পিকনিক। পিকনিকের পর সে তার গাড়ি চালিয়ে আমার ফ্ল্যাটে আমাকে পৌঁছে দিল। তাকে বললাম, রাস্তার ওপারে বাসকিন-রবিনস আইসক্রিম শপ আছে। আইসক্রিম কোন খাবে?
সে রাজি হলো।
আমরা বিকেলের চিটচিটে গরমে ফুটপাথে বসে আইসক্রিম কোন খেলাম। তাকে জানালাম যখন আমি টিনএজার ছিলাম তখন বাসকিন-রবিনসে কাজ করেছিলাম। বাসকিন-রবিনসের ব্রাউন এপ্রন আর ক্যাপ পরে আইসক্রিম বিক্রেতার পোশাকে মেয়েদের কাছে আকর্ষণীয় হওয়াটা ছিল কঠিন কাজ।
মিশেল বললো, আমি যখন ছোট ছিলাম তখন পিনাট বাটার (Peanut butter – চিনাবাদাম মাখন) ও জেলি ছাড়া বছর দুই তিনেক কিছুই খেতে চাইতাম না।
তোমার ফ্যামিলির সঙ্গে একদিন দেখা করতে চাই। বললাম।
হ্যাঁ। এটা ভালো কথা। মিশেল বললো।
এরপর আমি তাকে চুমু খাওয়ার অনুমতি চাইলাম।
সেই চুমুর স্বাদ ছিল চকোলেটের মতো।

সেই গ্রীষ্মের বাদবাকি সময়টা আমরা এক সঙ্গে কাটাই। তাকে বলি আমার অর্গানাইজ করার কথা, ইন্দোনেশিয়াতে থাকার কথা। সমুদ্রে সার্ফ করলে কেমন লাগে সে কথা।
সে তার ছোটবেলার বন্ধুদের কথা বললো। হাই স্কুলে থাকার সময়ে একবার প্যারিসে যাওয়ার কথা বললো। আর বললো, তার ফেভারিট গায়ক স্টিভি ওয়ান্ডার-এর গানের কথা।
মিশেলকে আমি পূর্ণভাবে বুঝতে শুরু করি তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর। লিভ ইট টু বিভার (Leave It to Beaver) ) পারিবারিক টিভি সিরিজের বিভিন্ন চরিত্রের মতো রবিনসন পরিবারেও সমন্বয় ঘটেছিল অনেকের। সেখানে ছিলেন নরম মনের রসিক বাবা ফ্রেজিয়ার যিনি প্রতিদিনই কাজে যেতেন এবং তার ছেলের বাস্কেটবল খেলা মিস করতেন না। সেখানে ছিলেন সুদর্শনা ও সুবুদ্ধিমতী মা মেরিয়ান যিনি বার্থডে কেক বানাতেন, বাড়িতে শৃঙ্খলা রাখতেন এবং স্কুলে মিয়মিত গিয়ে জানতে চাইতেন তার ছেলেমেয়েরা কেমন করছে এবং তাদের সাহায্যের জন্য টিচাররা কী করছেন। সেখানে ছিল লম্বা, ফ্রেন্ডলি, ভদ্র ও পরিহাসমুখর বাস্কেকটবল স্টার ভাই ক্রেইগ। সে কাজ করছিল ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার রূপে। কিন্তু স্বপ্ন দেখছিল বাস্কেটবল টিমের কোচ হওয়ার। সেখানে ছিল অনেক আংকল আর আন্টি, মামাতো-খালাতো-চাচাতো-ফুপাতো ভাইবোনের দঙ্গল।। তারা এসে কিচেন টেবিলের চারপাশে বসে যেতো, মজার সব গল্প বলতো। দাদুর জ্যাজ রেকর্ড বাজিয়ে শুনতো। গভীর রাত পর্যন্ত হাসি আর আড্ডায় মাতোয়ারা থাকতো।

রবিনসন পরিবারে শুধু একটি চরিত্রই মিসিং ছিল। তাদের কোনো কুকুর ছিল না। তার বাড়ির জিনিসপত্র ওলোট-পালট হয়ে যাবে এই ভয়ে কোনো কুকুর কখনোই চান নি মেরিয়ান।

তার পরিবারে এই যে শান্তি ও সুখ বিরাজ করছিল সেটা আরো বিস্ময়কর ছিল এই জন্য যে, তাদের অনেক ধরণের সামাজিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়েছিল। তারা ছিল কালো। তাই তাদের মুখোমুখি হতে হয়েছিল বর্ণবাদীদের বিরুদ্ধে। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে শিকাগোতে মিশেলের পিতা-মাতা যখন জীবন সংগ্রাম শুরু করেছিলেন তখন সেখানে কর্মসংস্থান ছিল কম। কালোদের বিরুদ্ধে তখন এমন প্রচারণা চালানো হয়েছিল যে, এলাকা থেকে ভয়ে অনেক শাদা পরিবার অন্যত্র চলে গিয়েছিল। কালো পরিবারকে বেশি কাজ করতে হতো। পথে ছিনতাইকারী ও মাস্তানদের ভয় ছিল। স্কুলে খেলাধুলার ব্যবস্থা ছিল কম। রবিনসন পরিবারের একটা ট্র্যাজেডি ছিল, মিশেলের বাবা ত্রিশ বছর বয়স থেকে মালটিপল স্ক্লেরোসিস (Multiple Sclerosis) রোগে ভুগছিলেন। পরবর্তী পঁচিশ বছরে তার অবস্থা আরো খারাপ হয়েছিল। কিন্তু তিনি দমে যান নি। পরিবারের প্রতি সব দায়িত্ব তিনি হাসিমুখে পালন করে যান। ঠিক সময়ে নিজের কাজে যাওয়ার জন্য সকালে ঘুম থেকে এক ঘণ্টা আগে উঠতেন। কষ্ট করে হলেও গাড়ি চালাতেন। নিজের শার্টের বোতাম নিজেই লাগাতেন। এসব করতে কষ্ট হলেও তিনি তা নিয়ে হাসিঠাট্টা করতেন। প্রথমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে এসব করতেন। পরে দুটো লাঠি নিয়ে চলতেন। তার মাথায় টাক পড়েছিল। একটু পরিশ্রমে তার টেকো মাথা ঘেমে উঠতো। তবু তিনি এঘর থেকে ওঘরে যেতেন ছেলের খেলা দেখতে অথবা মেয়েকে চুমু দিতে।

বিয়ের পরে মিশেল আমাকে বুঝিয়েছিল, তার বাবার সুদীর্ঘ অসুস্থতা তাদের পরিবারের ওপর কতো চাপ সৃষ্টি করেছিল। মিশেলের মা সেটা কীভাবে সামলে ছিলেন। সব কিছু ঠিকঠাক রেখে পরিবার চালাতে গিয়ে মা-কে কতো হিসাব-নিকাশ করতে হতো। বাইরে তাদের সবার মুখে হাসি থাকলেও ভেতরে ছিল এই কষ্ট আর সমস্যা।

কিন্তু রবিনসনদের বাড়িতে আমি প্রথম যেদিন গিয়েছিলাম তখন শুধুই আনন্দ দেখেছিলাম। মিশেলের বাবাকে চিনতাম না। জানতাম না, জীবিকার তাগিদে তাকে এক সময়ে শহর থেকে শহরে ঘুরে বেড়াতে হয়েছিল। ফ্রেজিয়ার আর মেরিয়ান তাদের নিজেদের এবং ছেলেমেয়েদের জন্য যে বাড়ি গড়ে তুলেছিলেন তার পেছনে ছিল অনেক শ্রম ও ত্যাগ। ওই পরিবারের সবাই কাঙাল ছিল স্থিতিশীলতার প্রতি, একটা স্থায়ী ঠিকানার প্রতি।

সেই পরিবারে আমার হঠাৎ উদয়কে মিশেল দেখেছিল অ্যাডভেঞ্চার, ঝুঁকি এবং দূর-দূরান্তে দেশ ভ্রমণের একটা সম্ভাবনা রূপে। এর আগে মিশেল তার দিগন্ত প্রসারের কথা ভাবে নি।
মিশেলের সঙ্গে দেখা হওয়ার ছয় মাস পরে তার বাবা হঠাৎ মারা যান। কিডনি অপারেশনের পর সৃষ্ট বিভিন্ন জটিলতা ছিল তার মৃত্যুর কারণ। আমি প্লেনে শিকাগো থেকে তার কবরস্থানে যাই। কবরের পাশে যখন দাঁড়াই তখন মিশেল তার মাথা আমার কাধে হেলিয়ে দেয়। কফিনটা যখন কবরে নামানো হচ্ছিল তখন আমি ফ্রেজিয়ার রবিনসনের প্রতি অঙ্গীকার করি যে তার মেয়েকে আমি দেখাশোনা করবো। আমি বুঝতে পারি, অনুচ্চারিত হলেও মিশেল আর আমি একটি পরিবার গঠন করতে চলেছি।

বারাক ওবামা লিখেছেন, মিশেলকে চুমু দেয়ার স্বাদ মনে হয়েছিল চকোলেটের মতো। বাংলাদেশে অনেকে লজেন্সকে বলেন চকোলেট। লজেন্সের প্রধান উপাদান চিনি, রঙ ও বিভিন্ন ফলের (কমলা, লেবু, স্ট্রবেরি, কলা) রস। লজেন্স হতে পারে বিভিন্ন রঙের। কিন্তু চকোলেটের প্রধান উপাদান কোকো, দুধ ও চিনি। গরমে চকোলেট তাড়াতাড়ি গলে যায়। তাই বাংলাদেশে চকোলেট কেনা-বেচা হয় কম। লজেন্সকেই চকোলেট ভেবে তৃপ্তি পান অনেকে।
বিশ্বের সেরা চকোলেট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে নেসলে, ক্যাডবেরি, হার্শি, লিন্ডট, গডাইভা, থর্নটন, ফেরেরো রশার প্রভৃতি।
আমেরিকান কম্পানি হার্শি-র একটি পপুলার ব্র্যান্ড চকোলেটের নাম Kisses (কিসেস বা চুমু)। পশ্চিমে ভ্যালেনটাইনস ডে-তে প্রেমিক-প্রেমিকা ও স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অবশ্যই চকোলেট দেয়া-নেয়া ও খাওয়া হয়।

ইওরোপে চকোলেট ম্যানিয়া শুরু হয়েছিল সপ্তদশ শতাব্দীতে প্যারিসে। ফরাশিরা মনে করেছিল, চকোলেট কামভাব উদ্দীপক বা এক ধরনের অ্যাফ্রোডিজিয়াক (Aphrodisiac)। তাদের আর্ট ও সাহিত্যে প্রেমের পাশাপাশি চকোলেটের উপস্থিতি গোটা ইওরোপকে অনুপ্রাণিত করে। বিখ্যাত প্রেমিক ক্যাসানোভা শ্যামপেইনের সঙ্গে চকোলেট মিশিয়ে নারীদের শয্যাসঙ্গিনী করতেন।
এবার বাংলাদেশে ১৪ ফেব্রুয়ারি ভালোবাসা দিবসে যুগলরা চকোলেট বিনিময় করতে পারেন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ফেরেরো রশার চকোলেট পাওয়া যায়। কিন্তু এর দাম খুব বেশি। আশা করা যায়, ইমপোর্টাররা শিগগিরই বাংলাদেশে অল্প দামের চকোলেট আমদানিতে আগ্রহী হবেন। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে যুগলরা ইগলু অথবা পোলার কোম্পানির চক আইস খেয়ে ভালোবাসা দিবস উদযাপন করতে পারেন।
বলা বাহুল্য, চকোলেট খাওয়ার পর যদি চুমু খাওয়া হয় তাহলে তার স্বাদ চকোলেটের মতোই লাগবে। ওবামা লেখেন নি বাসকিন-রবিনসের ওই দোকান থেকে তারা চক আইস কোন খেয়েছিলেন কি না।

ভালোবাসা দিনে চকোলেট বা চক আইস না পেলেও যুগলরা চুমু খেতে পারেন। ২০০৯-এ আমেরিকান বিজ্ঞানীরা জানান, চুমু খেলে মানুষের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় সতেজ হয়ে ওঠে। বিশেষত স্পর্শ। স্বাদ ও গন্ধ যুগলের মধ্যে এনে দেয়া উত্তেজনা। চুমুর মাধ্যমে নর-নারী চায় পরস্পরকে ভদ্রভাবে স্পর্শ ও আদর করতে। পরস্পরের মুখের সুস্বাদ গ্রহণ করতে এবং পরস্পরের সুঘ্রাণ নিতে।

যারা পান, সিগারেট ও মদ খেয়ে দেবদাস হয়ে চুমু খেতে যান তারা তাদের পার্বতীদের কাছে গ্রহণযোগ্য না-ও হতে পারেন। পশ্চিমে কিছু যুগল ডেট করার আগে Listerine (লিস্টেরিন) অথবা Oral-B (ওরাল-বি) মাউথ রিনস পানিতে মিশিয়ে মুখ ওয়াশ করে যান। লিস্টেরিন দুই ধরণের হতে পারে। এক. অরিজিনাল ব্র্যান্ড এবং দুই. ভ্যানিলা-মিন্ট ব্র্যান্ড। লিস্টেরিন এবং ওরাল-বি ঢাকা ও চট্টগ্রামের ভালো ফার্মাসিতে পাওয়া যায়। যাদের এই মাউথ ওয়াশ কেনার সামর্থ নেই তারা ভালো এবং সম্ভব হলে মিন্ট ফ্লেভারযুক্ত টুথপেস্টের শরণাপন্ন হতে পারেন এবং ভালোভাবে দাত ব্রাশ করে ডেট করতে পারেন। লিস্টেরিন এবং ওরাল-বি মাউথ ওয়াশের দাম পাঁচশ মিলিগ্রামের বোতল অনূর্ধ্ব পাঁচশ টাকা। সাধারণ দাঁত ও মাড়ির সুস্বাস্থ্য রক্ষার জন্য মাউথ ওয়াশ ব্যবহৃত হয়।

মৌরি, এলাচি, লং অথবা দারুচিনি খেয়েও ডেট করতে পারেন। তবে সাবধান থাকতে হবে, এসব মশলার কোনো গুড়া অংশ যেন মুখে না থেকে যায়।
২০০৯-এর ভ্যালেনটাইনস ডে-তে একদল আমেরিকান সায়েন্টিস্ট একটি রিপোর্টে জানান, চুমুতে পারস্পরিক যোগ্যতা বোঝা যায়। সুতরাং চুমুকে সিরিয়াসলি নেয়া উচিত। শিকাগোতে একটি প্রেস কনফারেন্সে তারা বলেন, পুরুষ মানুষের স্যালাইভা বা লালা-তে বোঝা যায় তার জন্মদান ক্ষমতা এবং বংশবৃদ্ধির যোগ্যতা।
নিউ জার্সি-র রাটগার্স ইউনিভার্সিটির এনথ্রোপলজিস্ট ড. হেলেন ফিশার বলেন, চুমু দেয়াটা হচ্ছে মানব জাতির একটি শক্তিশালী মেকানিজম। সে জন্যই সারা বিশ্বে চুমু প্রচলিত আছে যুগ যুগ ধরে। মানব সমাজের নব্বই পার্সেন্টের বেশি চুমু খায়।

শিকাগোতে অনুষ্ঠিত আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অফ সায়েন্স (AAAS)-এর বার্ষিক সম্মেলনে বিজ্ঞানীরা বলেন, শিম্পাঞ্জি আর বোনোবো-রাও চুমু খায়। শিয়ালরা পরস্পরের মুখ লেহন করে। পাখিরা তাদের ঠোটে চুমু খায়। হাতিরা তাদের শুঁড় পরস্পরের মুখে গুজে দেয়। মানুষ চুমু খাওয়ার সময়ে পরস্পরকে ছোঁয়, দেখে, অনুভব করে। অপরজনের স্বাদ পায়। ব্রেইনের একটা বড় অংশ উদ্দীপিত হয়ে ওঠে।

সম্মেলনে ওই বিজ্ঞানীরা বলেন, সন্তানের প্রতি মায়ের ভালোবাসা থেকে শুরু হয়েছে চুমু। এখন পশ্চিমে সুপারমার্কেটে হাইনজ (Heinz)সহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বেবিফুড ছোট কৌটায় বা ছোট বোয়মে পাওয়া যায়। শিশুরা এসব বেবিফুড খেয়ে বড় হয়। অতীতে শিশুদের উপযোগী করার জন্য মা খাবার চিবিয়ে সেটি চুমুর মাধ্যমে সরাসরি শিশুর মুখে পুরে দিতেন। বলা যায়, তখন থেকে প্রিয়জনের মুখে মুখ লাগিয়ে মানুষ চুমু খাওয়া শুরু করে।
চুমুর এই ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা কিছু বিজ্ঞানী নাকচ করে দেন। ড. হেলেন ফিশার বলেন, পারস্পরিক সম্পর্কের সূচনায় চুমু হয় একটা নতুন অভিজ্ঞতা। আর এই নতুনত্বটা মানবদেহে সৃষ্টি করে ডোপামিন (Dopamine) যেটা রোমান্টিক প্রেমের সঙ্গে জড়িত। চুমুর ফলে মানুষের মধ্যে জুটিবদ্ধ হওয়ার এবং কাছাকাছি থাকার প্রবণতা সৃষ্টি হয়। আর জুটিবদ্ধ বা পেয়ার বনডিং (Pair bonding) হওয়ার ফলে সন্তান হয়।

চুমু এবং জুটিবদ্ধ হওয়ার ফলে মানবদেহে যেসব প্রতিক্রিয়া হয় তা বোঝার জন্য লাফায়েত কলেজের নিউরোসায়েন্টিস্ট ড. ওয়েনডি হিল পনেরো জোড়া তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকার সহযোগিতা নেন। তিনি তাদের দুটি গ্রুপে ভাগ করে দেন। একটি গ্রুপের জন্য তিনি সুরেলা মিউজিক সিডি প্লেয়ারে অন করে দিয়ে তাদের পনেরো মিনিট চুমু খেতে বলেন। অন্য আরেকটি রুমে অন্য গ্রুপকে শুধু হাত ধরাধরি করে গল্প চালিয়ে যেতে বলেন।

এরপর ড. হিল মেপে দেখেন তাদের লালা-তে স্ট্রেস হরমোন কর্টিজল (Cortisol)-এর কী পরিবর্তন ঘটেছে। দেখা যায়, চুমু গ্রুপের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমে গেছে। যতো বেশি তারা চুমু খেয়েছে ততো বেশি তাদের কর্টিজল-এর পরিমাণ কমে গেছে। একই সময়ে ড. হিল তাদের ব্লাড টেস্ট করে রক্তে অক্সিটোসিন (Oxytocin)-এর পরিমাপ করেন। অক্সিটোসিন হচ্ছে এক ধরণের হরমোন যা মানুষকে যৌনমিলনে আগ্রহী করে তোলে। তাই এই হরমোনকে লাভ হরমোন (Love Hormone) বা ভালোবাসার হরমোনও বলা হয়।

শিকাগোর সম্মেলনে সায়েন্টিস্টদের এসব জ্ঞানগর্ভ তথ্যে কেউ কেউ কৌতুক বোধ করেন। তারা বলেন, একটি যুবক আর একটি যুবতীকে কোনো ঘরে রেখে তাদের জড়াজড়ি করার সুযোগ দিলে যা ঘটার তাই ঘটবে। বলিউড মুভি ববি-র গানটা হয়তো মনে পড়বে, হাম তুম, এক কামরে-মে বন্ধ হ্যায়, অউর চাবি খো গ্যায়ে! অথবা হয়তো মনে পড়বে আরেক হিন্দি মুভিতে নায়ক বলরাজ সাহনি-র উক্তি, আগুনের পাশে মোম রাখলে সে তো গলে যাবেই!

আমেরিকায় যখন এসব কিসিং সায়েন্টিস্টদের সম্মেলন হচ্ছিল, প্রায় সেই একই সময়ে প্রতিবেশী দেশ মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটিতে আরেক ধরণের সম্মেলন ঘটছিল। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ মেক্সিকো সিটির ছোকালো (Zocalo) স্কোয়ারে মিলিত হওয়া ৩৯,৮৯৭ নর-নারী গণচুমুর নতুন রেকর্ড স্থাপন করেন। এর আগে ইংল্যান্ডে ওয়েস্টন সুপারমেয়ার শহরে গণচুমুতে অংশ নিয়েছিলেন ৩২,৬৪৮ নর-নারী।

গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বুকে যেসব দেশের অধিবাসী নাম লেখাতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী তাদের মধ্যে মেক্সিকো ফার্স্ট। মেক্সিকানদের অনুরোধে ছোকালো স্কোয়ারে গিনেস রেকর্ডস কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছিলেন প্রতিনিধি পর্যবেক্ষক কার্লোস মার্তিনেসকে। তিনি রিপোর্ট করেন, ছোকালো স্কোয়ারে ৪২,২২৫ জন জড়ো হলেও সবাই শেষ পর্যন্ত চুমুতে অংশ নেন নি। অর্থাৎ ২,৩২৮ নর-নারী বা ফাইভ পার্সেন্টের কিছু বেশি যে কোনো কারণেই হোক না কেন প্রকাশ্যে চুমু খেতে রাজি হন নি।
বাংলাদেশে টিএসসি চত্বরে, জিয়া উদ্যানে, ফয়ে'স লেকে অথবা চিড়িয়াখানাতে কিছু সাহসী প্রেমিক-প্রেমিকাকে বাদ দিলে বলা যায় প্রায় হান্ড্রেড পার্সেন্ট নরনারী প্রকাশ্যে চুমু খেতে গররাজি হবেন।

পশ্চিমে গণচুমু দেখা যায় প্রতিদিনই রেল স্টেশন, এয়ারপোর্ট ও সিপোর্ট-এর টারমিনালে। এসব জায়গায় প্রিয়জনকে বিদায় জানাতে নর-নারী দীর্ঘ সময় জুড়ে চুমু খান। এ রকম গণচুমুকে নিরুৎসাহিত করার জন্য কিছুকাল আগে বৃটিশ রেল কর্তৃপক্ষ রেল স্টেশনে একটি বিলবোর্ড ঝুলিয়ে দিয়েছিল। ধুমপান নিষিদ্ধ স্টাইলে আঁকা এই বিলবোর্ডে চুমুরত নর-নারীর চারপাশে একটি লাল বৃত্ত এঁকে তার মধ্যে আড়াআড়ি দাগ দেয়া হয়েছিল। এর কারণ স্বরূপ রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, ট্রেন ছাড়ার আগ মুহূর্তে সবাই স্টেশনের গেইটে গাড়ি পার্ক করে চুমু খেয়ে বিদায় জানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে কার পার্কিং এলাকায় বিশৃংখলা ও জ্যাম হয়।
চুমু খাওয়ার সময়ে সাধারণত মেয়েরা চোখ বন্ধ করে ফেলে কেন? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে কোনো বিজ্ঞানী এখনো এগিয়ে আসেন নি। তবে নারীবাদীরা বলেন, ছেলেরাও চুমু খাওয়ার সময়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে, হয়তো বা মেয়েটির কিছু পরে। গভীর আবেশে ডুবে যাওয়ার ফলে এমনটা ঘটে। আমেরিকান হিউমারিস্ট এভান এসার বলেন, মেয়েদের প্রেম গভীরতর। তাই চুমু খাওয়ার সময়ে মেয়েরা ভুলে যায় স্থান-কাল-পাত্র। সে চোখ বন্ধ করে পাত্র বা প্রেমিকের নামটি মনে করার চেষ্টা করে!

চিলির প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সালভাডর আলেন্দে-র পলিটিশিয়ান কন্যা ইসাবেল আইয়েন্দের উক্তিতে এই তত্ত্বের সমর্থন পাওয়া যায়। ইসাবেল আইয়েন্দে বলেন, আমি প্রথম চুমুর সময়ে যে চুইয়িং গাম, সিগারেট আর মদের গন্ধ পেয়েছিলাম সেটা আজও মনে আছে। কিন্তু যে আমেরিকান নাবিকটি সেই চুমু আমাকে দিয়েছিল তার চেহারা একেবারেই ভুলে গিয়েছি!

জীবনের বিভিন্ন প্রথম অভিজ্ঞতার বিভিন্ন দিকটি মানুষ মনে রাখে। ইটালির প্রখ্যাত মিউজিক কন্ডাক্টর আর্টারো টসকানিনি বলেন, আমার জীবনে প্রথম চুমু খাওয়া এবং প্রথম সিগারেট খাওয়ার অভিজ্ঞতা দুটিই হয়েছিল একই দিনে। কিন্তু সেদিনের পর থেকে সিগারেট খাওয়ার সময় আর হয় নি।
বলা বাহুল্য, অসংখ্য নারীভক্তের আকর্ষণে টসকানিনির সেই সময়টা আর হয় নি।
চুমু খেতে গিয়ে নর-নারী প্রধানত তিনটি সমস্যায় পড়তে পারে।
প্রথমত. নাক সমস্যা। নোবেল বিজয়ী আমেরিকান লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে বলেন, নাক দুটো কোথায় যায়? বিষয়টা নিয়ে আমি সব সময়ই ভেবেছি। নাক দুটো কোথায় যায়?
সুতরাং ওবামা-র মতো যাদের নাক লম্বা তাদের একটু অসুবিধা হতেই পারে।

দ্বিতীয়ত. পুরুষের দাড়ি ও গোঁফ সমস্যা। ইংরেজ সাহিত্যিক রাডিয়ার্ড কিপলিং বলেন, যদি কোনো পুরুষ তার গোঁফে মোম লাগিয়ে সেটা মসৃণ না রাখেন তাহলে তার চুমুকে নারীর মনে হতে পারে নুন ছাড়া ডিম খাওয়া।
বস্তুত চুম্বনাকাংখী নারীর কাছে পুরুষের দাড়ি ও গোঁফ অতিরিক্ত আকর্ষণ, নাকি বিকর্ষণ, তা নিয়ে যুগ যুগ ধরে বিতর্ক চলে আসছে। অনেক পুরুষ মনে করেন, গোঁফ বা মোচ রাখাটা পুরুষত্বের পরিচায়ক। তাই বয়স হয়ে গেলেও তারা পাকা গোঁফে কলপ লাগান। আবার অনেক পুরুষ মনে করেন, সুন্দরভাবে রাখা দাড়ি যেমন, ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি, নারীদের সহজে আকৃষ্ট করতে পারে। বোধহয় সে জন্য অতীতে ফ্রান্সে অনেক পুরুষ ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ি রাখতেন। ফরাশি সরকার তখন ফ্রেঞ্চ কাট দাড়ির ওপরে ট্যাক্স বসিয়ে ভালো আয় করেছিল।

তৃতীয়ত. দুজনার চশমা পরার সমস্যা। সেক্ষেত্রে দুজনাই চশমা খুলে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। পুরুষের উচিত হবে নারীর কাছে অনুমতি চাওয়া। তিনি নরম স্বরে বলতে পারেন, আমি তোমাকে চুমু খেতে চাই। তোমার চশমাটা খুলে রাখি।
এটা বলে, খুব যত্নের সঙ্গে চশমাটা খুলে সাবধানে রাখতে হবে যেন আবেগী মুহূর্তগুলো কেটে গেলে সহজেই সেটা খুঁজে পান। তবে সেই নারী যদি চশমা খোলার অনুমতি না দেন তাহলে চুমু দিতে আর এগোনো উচিত হবে না।

এছাড়া দুটি শারীরিক কারণে চুমু খাওয়ায় সমস্যা হতে পারে।
এক. কারো মুখে যদি দুর্গন্ধ থাকে। ইংরেজিতে একে বলে Halitosis(হ্যালিটোসিস) বা Bad Breath (ব্যাড ব্রেথ)। সেক্ষেত্রে চুমু খাওয়ার আগেই ডাক্তারের কাছে গিয়ে নিজেকে পরীক্ষা করান এবং জানতে চান কেন আপনার মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টি হচ্ছে। ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট বা অ্যাডভাইস পাওয়ার আগেই যদি চুমু খাওয়ার বাসনা দুর্দমনীয় হয়ে ওঠে তাহলে মিন্ট লজেন্স মুখে রাখুন। ঢাকায় Fox's mint (ফক্সেস মিন্ট) পাওয়া যায়, ২০০ গ্রাম অনূর্ধ্ব দেড় শ' টাকায়।
দুই. দুজনের উচ্চতার মধ্যে তফাত যদি হয় খুব বেশি তাহলে কী করবেন? যিনি ছোট তিনি নিশ্চয়ই মোড়ায় উঠে অথবা চেয়ারে দাড়িয়ে চুমু খেতে চেষ্টা করবেন না। বরং যিনি লম্বা তার উচিত হবে নুয়ে পড়ে ছোটজনকে চুমু খাওয়া।

চুমু খাওয়ার বেলায় সবচেয়ে বেশি সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে যদি নারী চুমু খেতে রাজি না হন। সেক্ষেত্রে পুরুষের উচিত হবে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার চুমু-র প্রস্তাব দেয়া। এই সেকেন্ড ট্রাইয়ের পরও যদি নারী রাজি না হন তাহলে আর এ বিষয়ে জোরাজুরি করবেন না। তখন শুধু তাকে আদর করতে পারেন।

শুধু ব্যক্তিগভাবে নয়, বাণিজ্যিক এবং শৈল্পিকভাবেও চুমুর প্রকাশ ঘটতে পারে।
বাণিজ্যিকভাবে ঘটেছিল Kiss-o-gram (কিসোগ্রাম)-এর মাধ্যমে। বিদেশে কিছু কোম্পানি চুমুকে বাজারজাত করার প্রচেষ্টায় কিসোগ্রাম চালু করেছিল। ওই কোম্পানিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি দিলে সে তার পুরুষ ক্লায়েন্টের পক্ষ থেকে কোনো তরুণকে পাঠিয়ে দিতো প্রেমিকার ঠিকানায়। সেই তরুণ এক তোড়া গোলাপ ফুল প্রেমিকার হাতে তুলে দিয়ে প্রেমিকার গালে চুমু খেয়ে আসতো।
কিসোগ্রাম বর্জন করেছিল নারীরা। কোনো নারী ক্লায়েন্ট হয় নি। কোনো নারীর পক্ষ থেকে কোনো তরুণী যায় নি কোনো পুরুষের ঠিকানায়। ফলে কিসোগ্রাম সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়।

শৈল্পিকভাবে চুমুর বিশ্বখ্যাত প্রকাশ ঘটে ফরাশি ভাস্কর আগস্টে রদাঁ (Auguste Rodin)-র বিশ্বখ্যাত The Kiss (দি কিস)-এ। ১৮৮৯-এর এই মার্বলে খোদাই ভাস্কর্যে দুজন নরনারীকে আলিঙ্গনাবদ্ধ দেখা যায়।
দি কিস-এর অরিজিনাল টাইটেল ছিল ফ্রান্সেসকা ডা রামিনি যিনি ছিলেন একটি সম্ভ্রান্ত ইটালিয়ান পরিবারের সদস্য। দান্তে তার ইনফার্নো-তে ফ্রান্সেসকাকে অমর করেন। তার স্বামী ছিলেন জিওভানি মালাটেস্টা। দেবর পাওলা-র প্রেমে পড়েন ফ্রান্সেসকা। লান্সলট ও গুইনেভিয়ারের প্রেম কাহিনী পড়ার সময়ে পাওলা-ফ্রান্সেসকা যুগল ধরা পড়ে যান। স্বামী জিওভানি তখন দুজনকে খুন করেন।
ওই ভাস্কর্যে পাওলার হাতে ওই বইটি দেখা যায়। তবে ভাস্কর্যে প্রেমিক প্রেমিকার ঠোঁট জোড়া স্পর্শ করে নি। এতে মনে হয় ফুল স্কেল চুমু খাওয়ার আগেই তারা ধরে পড়ে মৃত্যু বরণ করেন।

সুতরাং পরকীয়া প্রেমিক-প্রেমিকারা সাবধান থাকুন।
রদাঁর এই ভাস্কর্যটি এখন ফ্রান্সে রদাঁ মিউজিয়ামে রাখা আছে।
চুমু বিষয়ে ফটোগ্রাফির সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত ছবিটি তুলেছিলেন ফরাশি ফটোগ্রাফার রবার্ট ডইসনু (Robert Doisneau)। ১৯৫০-এ প্যারিসে তোলা এই ছবিটির নাম কিস অ্যাট হোটেল ডা ভিল। এই ছবির প্রধান বৈশিষ্ট চুমুরত যুগলটি নয় – বরং তাদের চুমু খাওয়া দেখে অদূরে দাড়ানো বিস্ময়ে অভিভূত জনৈক প্রবীণ ব্যক্তি।

ইওরোপ আর আমেরিকায় চুমু নিয়ে, লেখালেখি থেকে শুরু করে গবেষণা, ভাস্কর্য থেকে শুরু করে কিসোগ্রাম, চালু হলেও আমাদের এই ভূখণ্ডে চুমুর বর্ণনা অথবা ব্যবসা কোনোটাই দেখা যায় না।
বাংলা সাহিত্যেও চুমুর অনুপস্থিতি বিস্ময়কর। বাঙালি প্রেমিক-প্রেমিকা হাত ধরাধরি, লেক-নদীর পাড়ে বা কোনো চত্বরে বসাবসি অথবা সম্ভব হলে এক গাছ থেকে আরেক গাছে ছোটাছুটির মধ্যে তাদের প্রেমের প্রকাশ সীমাবদ্ধ রেখেছে। তাই প্রেমের উপন্যাসে প্রেম উপস্থিত, কিন্তু চুমু অনুপস্থিত।

এর একটি ব্যতিক্রম শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কালজয়ী প্রেমের উপন্যাস পরিণীতা। সেই প্রায় ৭৫ বছর আগে প্রকাশিত পরিণীতা-তে নায়ক-নায়িকার প্রথম চুমুর সূত্রপাত হয়েছিল এভাবে :

ললিতা চোখ মুদে মনে মনে বললো, এই কলকাতার সমাজে তার মামার অবস্থাও শেখরদের কতো নিচে, সে আবার সেই মামার আশ্রিত গলগ্রহ। এদিকে সমান ঘরে শেখরের বিয়ের কথাবার্তা চলছে। দুদিন আগেই হোক, পরেই হোক, সে ঘরেই একদিন হবে। এই বিয়ে উপলক্ষে নবীন রায় কতো টাকা আদায় করবেন সেসব আলোচনাও সে শেখরের জননীর কাছে শুনেছে।
তবে কেন, তাকে হঠাৎ আজ এমন করে শেখরদা অপমান করে বসলো। এই সব কথা ললিতা সামনের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে চেয়ে নিজের মনে মগ্ন হয়ে আলোচনা করছিল। সহসা চমকে মুখ ফিরিয়ে দেখলো, শেখর নিঃশব্দে হাসছে। এর আগে যে উপায়ে মালাটা সে শেখরের গলায় পরিয়ে দিয়েছিল ঠিক সে উপায়ে সেই গাদা ফুলের মালাটা তার নিজের গলায় ফিরে আসছে। কান্নায় তার কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে আসতে লাগলো। তবু সে জোর করে বিকৃত স্বরে বললো, কেন এমন করলে?
তুমি করেছিলে কেন?
আমি কিছু করিনি। বলেই সে মালাটা টান মেরে ছিঁড়ে ফেলার জন্য হাত দিয়েই হঠাৎ শেখরের চোখের দিকে চেয়ে থেমে গেল। আর ছিঁড়ে ফেলতে সাহস করলো না। কিন্তু কেঁদে বললো, আমার কেউ নেই বলেই তো তুমি এমন করে আমাকে অপমান করছ!
শেখর এতোক্ষণ মৃদু মৃদু হাসছিল। ললিতার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল! এ তো ছেলেমানুষের কথা নয়। বললো, আমি অপমান করছি, না তুমি আমাকে অপমান করছ?
ললিতা চোখ মুছে ভয়ে ভয়ে বললো, আমি কই অপমান করলাম?
শেখর ক্ষণকাল স্থির থেকে সহজভাবে বললো, এখন একটু ভেবে দেখলেই টের পাবে। আজকাল বড় বাড়াবাড়ি করছিলে ললিতা। আমি বিদেশ যাওয়ার আগে সেটাই তোমার বন্ধ করে দিলাম। বলে চুপ করলো।
ললিতা আর প্রত্যুত্তর করলো না, মাথা হেট করে দাঁড়িয়ে রইলো। পরিপূর্ণ জ্যোৎস্নাতলে দুজনে স্তব্ধ হয়ে রইলো। শুধু নিচ থেকে কালীর মেয়ের বিয়ের শাখের শব্দ ঘন ঘন শোনা যেতে লাগলো।
কিছুক্ষণ মৌন থেকে শেখর বললো, আর হিমে দাড়িয়ে থেকো না, নিচে যাও।
যাচ্ছি। বলে ললিতা এতোক্ষণ পর তার পায়ের নিচে গড় হয়ে প্রণাম করে উঠে দাড়িয়ে আস্তে আস্তে জিজ্ঞাসা করলো, আমি কী করবো বলে দিয়ে যাও।
শেখর হাসলো। একবার একটু দ্বিধা করলো। তারপর দুই হাত বাড়িয়ে তাকে বুকের ওপরে টেনে এনে নত হয়ে তার অধরে ওষ্ঠাধর স্পর্শ করে বললো, কিছুই বলে দিতে হবে না ললিতা, আজ থেকে আপনিই বুঝতে পারবে।
ললিতার সর্বশরীর রোমাঞ্চিত হয়ে কেঁপে উঠলো।
সে সরে দাড়িয়ে বললো, আমি হঠাৎ তোমার গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে ফেলেছি বলেই কি তুমি এ রকম করলে?
শেখর হেসে মাথা নেড়ে বললো, না। আমি অনেক দিন থেকেই ভাবছি। কিন্তু স্থির করে উঠতে পারি নি। আজ স্থির করেছি। কেননা আজই ঠিক বুঝতে পেরেছি, তোমাকে ছেড়ে থাকতে পারবো না।
ললিতা বললো, কিন্তু তোমার বাবা শুনলে ভয়ানক রাগ করবেন, মা শুনলে দুঃখ করবেন। এ হবে না শে . .
বাবা শুনলে রাগ করবেন সত্যি। কিন্তু মা খুব খুশি হবেন। সে যাই হোক। যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন তুমিও ফেরাতে পারো না, আমিও পারি না। যাও, নিচে গিয়ে মাকে প্রণাম করো গিয়ে।

লক্ষণীয় যে, ললিতা কতো সিরিয়াসলি নিয়েছিল শেখরের চুমুকে।
বাংলাদেশে একজন নারীকে আমি জানি, প্রথম চুমুর পর সারা রাত যিনি নামাজ পড়েন এবং চুমুদাতা পুরুষটিকে পতি রূপে বরণ করেন।
সুতরাং, অবিবাহিত বাঙালি নর ও নারীদের চুমু খাওয়ার বিষয়টিকে অবশ্যই সিরিয়াসলি নেয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, দায়িত্বশীল ভালোবাসার সঙ্গে চুমুর সম্পর্ক ওতপ্রোত।

এসএমএসের যুগে ভালোবাসা ও চুমুকে নিয়ে অনেক শর্ট ছড়া বেরিয়েছে। যেমন :

Love is the name
Kiss is the game
Forget the name
Let's play the game

Love is heat
You are sweet
When two lips meet
Love is complete

Love is blind
Be very kind
When I kiss you
Please don't mind

কিন্তু এসবই তো ইংরেজিতে। তাই আমি বাংলায় একটা এসএমএস ছড়া প্রেমিক-প্রেমিকাদের গিফট দিলাম এবারের ভ্যালেনটাইনস ডে-তে :

গোলাপের রঙ লাল
চকোলেট মিষ্টি
ফেব্রুয়ারিতে মনে রেখ
চুমু খাবার দিনটি।

১১ ফেব্রুয়ারি ২০১১