ভর্তিপরীক্ষা: ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে

রাহমান নাসির উদ্দিন
Published : 7 Feb 2019, 05:41 PM
Updated : 18 Oct 2014, 07:27 AM

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা এবং এ পরীক্ষার ফলাফল কেন্দ্র করে নানান বিতর্ক আমাদের সামনে বাংলাদেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন এনে হাজির করেছে। হাজার হাজার জিপিএ-৫ প্রাপ্তির ক্রমবর্ধমান প্রবণতার সঙ্গে শিক্ষার বিপুল বিস্তারের আনন্দে ঢেঁকুর তুলনেওয়ালারা নতুন করে ঢেঁকুর গিলতে শুরু করে দিয়েছে।

এই যে ফি-বছর হাজার হাজার জিপিএ-৫-এর খবরে আমরা যে তুমুলভাবে আমোদিত হই, এ জিপিএ-৫ এর গুণগত মান কী? দেশের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থার অবস্থা কোথায় অবস্থান করছে? ফলাফলের সংখ্যাতাত্ত্বিক রাজনীতি দেশের এন্তার শিক্ষাব্যবস্থার জন্য কতটা স্বাস্থ্যসম্মত? কিংবা উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তিপরীক্ষা পদ্ধতি আদৌ যুগোপযোগী নাকি ক্রটিপূর্ণ? অথবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষার ফিল্টারিং দেশের শিক্ষার মান উপলব্ধির জন্য একটা ল্যাবরেটরি টেস্ট কিনা? ইত্যাকার নানান প্রশ্ন বাজারে জারি আছে।

একটু দেরিতে হলেও এ বির্তকগুলো অত্যন্ত জরুরি ছিল। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে, এ বিতর্কের সূত্র ধরে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত, সুদূরপ্রসারী এবং মৌলিক পরিবর্তন আনা যায় কিনা তা নিয়ে কোনো পর্যায়ে কোনো ধরনের গঠনমূলক কোনো ডায়লগ হয়নি। সংবাদপত্রে কিঞ্চিত লেখালেখি এবং প্রাইভেট টিভি চ্যানেলের টকশো'র গড়পড়তার কিছু আলোচনা— এর চেয়ে খুব বেশি একটা এ বিতর্ক আগায়নি। শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কিনা তা নিয়ে সরকারি পর্যায় থেকে কোনো ইতিবাচক পদক্ষেপ তো দূরের কথা, খোদ শিক্ষামন্ত্রীই বলে বসলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষা ত্রুটিপূর্ণ! সম্ভবত, একেই বলে শাক দিয়ে মাছ ঢাকা!

অন্যদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য বা দিকনির্দেশনা না দিয়ে ডিনস কমিটি বা ভর্তিপরীক্ষা কমিটির সভা করে 'এখন থেকে কেবল একবারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা যাবে'– এ মর্মে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ফলে বাংলাদেশে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে যে মৌলিক প্রশ্নগুলো উত্থাপিত হয়েছিল, তা পর্দার আড়ালে চলে যেতে বসেছে। আর আলোচনার টেবিল দখল করেছে চলতি বছর বনাম আগের বছরের পরিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা দিতে পারা কিংবা না পারার বিষয়টি। এ নিবন্ধটিও সেই টেবিল-এজেন্ডায় শরিক হবার তাৎক্ষণিক বাসনা।

ইতোমধ্যে এ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিপরীক্ষায় অকৃতকার্য শিক্ষার্থীদের আগামী বছরও ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ প্রদানের দাবিতে অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা, যারা নিজেরাই নিজেদের নাম দিয়েছে 'সেকেন্ড-টাইমার', রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করেছে এবং আগামী কয়েক দিনের জন্যও আবার নতুন কর্মসূচি দিয়েছে। 'কেবল একবারই ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নেওয়া যাবে'– এ রকম সিদ্ধান্ত অনেকে স্বাগত জানালেও অনেকেই এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। বাংলাদেশের দু'টি প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের– ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গ্রাজুয়েট হিসেবে এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে– সঙ্গে সম্পৃক্ততার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে আমার কাছে মনে হয়, 'ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একবারই ভর্তিপরীক্ষায় সুযোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তটি' বহুলাংশে সঠিক হলেও, পুরোপুরি বিবেচনাপ্রসূত হয়নি।

এ সিন্ধান্ত কেন বহুলাংশে সঠিক বলে আমার মনে হয়েছে তার প্রধান কারণ তিনটি যার কিছুটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাখ্যার সঙ্গে কো-ইনসাইড করতে পারে।

১.

এ বছর যেসব পরীক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে, তাদের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আগের বছরের পরীক্ষার্থীরা সকল ভর্তিকৃত শিক্ষার্থী সংখ্যার ৬০ শতাংশ। অর্থাৎ ভর্তির সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেবল ৪০ শতাংশ চলতি বছরের শিক্ষার্থী। এটার অন্যতম একটা কারণ হচ্ছে যারা গত বছর ভর্তির সুযোগ পায়নি তারা সারা বছর প্রস্তুতি নেওয়ার সময় ও সুযোগ পেয়েছে। অথচ সেখানে ফ্রেসাররা বা চলতি বছরের শিক্ষার্থীরা প্রস্তুতির সময় পেয়েছে মাত্র দু'-তিন মাস।

চলতি বছরের পরীক্ষার্থীরা যখন এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করার জন্য এইচএসসি পরীক্ষা নিয়ে ব্যস্ত থাকে তখন আগের বছরের পরীক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নেয়। ফলে সময়, প্রস্তুতি এবং অভিজ্ঞতার মানদণ্ড বিবেচনায় নিলে, চলতি বছরের পরীক্ষার্থীদের এখানে সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠী। ভর্তিপরীক্ষা যেহেতু একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিযোগিতা, সেহেতু এটা হয়ে উঠেছে একটা চরম অসম প্রতিযোগিতা।

২.

আগের বছরের শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দের বিষয়ে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে অন্য যে কোনো একটা বিষয়ে ভর্তি হয় এবং পরের বছর আবার পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হওয়া বিষয়টি ছেড়ে কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে নতুন করে ভর্তি হয়। এ বছরের কৃতকার্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগ থেকে বিভাগ ছেড়ে আসার শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার শতেরও বেশি।

ফলে যে বিভাগ ছেড়ে আসে, সে বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষ থেকে একটি সিট খালি থাকে (যেখানে হয়তো অন্য একজন পড়াশুনার সুযোগ পেত) যা উচ্চশিক্ষার সীমিত সুযোগের এদেশে রীতিমতো অন্যায়। জীবনের একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য সামনে রেখে একজন শিক্ষার্থী নিজের এক বছর বিসর্জন দিয়ে নিজের পছন্দের একটি বিষয়ে পড়তে পারে, তাতে আপত্তির কিছু নেই। কিন্তু সে বিসর্জন যে আরেকজন শিক্ষার্থীকে (সব মিলিয়ে এ বছরেই কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই চারশ'রও বেশি) বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে, তার কী হবে? এ জন্য গোটা সিস্টেমের একটা আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।

৩.

এ ঘটনা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ক্ষেত্রেই সত্য নয়, পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ নিয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও (যেমন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়, এমনকি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেও এ ঘটনা ঘটে) অনেক শিক্ষার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসে। যেমন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতকার্যদের মধ্যে আগের বছরের ৬০ শতাংশ পরীক্ষার্থী মাত্র ৪০০ জন বা ৭-১০ শতাংশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে, আর বাকি ৯০ শতাংশেরও বেশি পরীক্ষার্থী এসেছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে।

ফলে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এ রকম অসংখ্য বিভাগে অসংখ্য সিট খালি থাকে; কেননা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে নতুন করে ভর্তি করানোর কোনো সুযোগ নেই। ফলে ভর্তি-সংক্রান্ত এ হিজরত অবিলম্বে বন্ধ হওয়া উচিত। এ রকম একটি প্রায়োগিক বিবেচনা থেকে আমি মনে করি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্তটি বহুলাংশে সঠিক হয়েছে। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এ বিষয়ে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা করতে পারে।

কিন্তু এ সিদ্ধান্তের কিছু নেতিবাচক দিকও আছে যা বিবেচনায় নেওয়াটাও সমানভাবে জরুরি বলে আমি মনে করি। যেমন:

ক.

ঘোষণাটি যদি এ বছর ভর্তিপরীক্ষার আগে নেওয়া হত, তাহলে পরীক্ষার্থীরা আগে থেকেই অধিকতর সচেতন হত, যাতে একজন শিক্ষার্থী আগেই জানত যে, ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য তার একবারই সুযোগ আছে, দ্বিতীয়বার কোনো সুুযোগ নেই। ফলে সে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে ভর্তিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হত। কিন্তু ভর্তির সমস্ত প্রক্রিয়া শেষ করে, ভর্তিপরীক্ষা শেষ করে, এমনকি ফলাফল ঘোষণা করার পর যখন সিদ্ধান্ত জানানো হয় যে, অকৃতকার্য শিক্ষার্থীরা আর দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে পারবে না, তখন এটা তাদের প্রতি এক ধরনের অবিচার।

খ.

এক ঘণ্টার একটা ভর্তিপরীক্ষা আদৌ একজন শিক্ষার্থীর মেধা যাচাইয়ের জন্য যথযাথ কিনা তা নিয়ে আমার গুরুতর সন্দেহ আছে। ফলে কোনো কারণে একজন শিক্ষার্থী যথেষ্ট মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও একবার পরীক্ষা দিয়ে কৃতকার্য না-ও হতে পারে। তাই বলে, তার জীবনের সব স্বপ্ন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করবার সমস্ত আশা-আকাঙ্ক্ষা শেষ হয়ে যাবে? সে কি আরেকবার নিজেকে পরীক্ষা করার সুযোগ পাবে না? তাকে আরেকবার তার মেধা যাচাইয়ের সুযোগ দেওয়া উচিত নয়?

গ.

আমরা এমন একটা সমাজে বাস করি যেখানে যে কোনো সময় যে কোনো দুর্ঘটনা হতে পারে। সড়ক দুর্ঘটনা তো আমাদের নিত্যদিনের জীবনের অংশ যা সংবাদপত্রের কমন নিউজ আইটেম। তাছাড়া রোগ-শোকের বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

উদাহরণ হিসেবে মনে করি, পরীক্ষার দিন সকালে কোনো পরীক্ষার্থীর মা বা বাবা মারা গেল (খোদা কারও ক্ষেত্রে এটা না করুক), সে কি তখন মা বা বাবার লাশ ফেলে পরীক্ষা দিতে যাবে? এই যে আকস্মিক ঘটনা বা দুর্ঘটনা, তার জন্য কি সে দায়ী? কিন্তু দ্বিতীয়বার সুযোগ না থাকার ফলে, সে শিক্ষার্থী যথেষ্ট মেধাবী হওয়ার পরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ তার জীবনে আর কোনো দিন আসবে না। এটা কি তার প্রতি অন্যায় ও অবিচার নয়? জীবন তো একটাই, তার কি আরেকবার সুযোগ পাওয়া উচিত নয়?

এসব বিবেচনায় আমি মনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তটি যথাযথ চিন্তাপ্রসূত হয়নি।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, এখানে উপস্থিত যুক্তি তো সমান সমান– পক্ষের তিনটা, বিপক্ষের তিনটা– তাহলে কেন আমি বলছি এ সিদ্ধান্ত বহুলাংশে সঠিক বলে আমার মনে হয়েছে। এরও তিনটা কারণ হতে পারে।

১.

চলতি বছর এবং আগের বছরের পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতাটা আমার কাছে সত্যিই অসম মনে হয়। যেমন, মনে করি, একজন শিক্ষার্থী 'ক' বিভাগে ভর্তির সুযোগ না পেয়ে, যা তার জীবনে লক্ষ্য ছিল, 'খ' বিভাগে ভর্তি হল এবং পরের বছর সে আবার ভর্তিপরীক্ষায় অংশ নিয়ে 'ক' বিভাগে চলে গেল। এখানে এ শিক্ষার্থী গোটা এক বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কালচারের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।

সুতরাং সে নিঃসন্দেহে চলতি বছরের একজন শিক্ষার্থীর চেয়ে অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে থাকে। এটা অনেকটা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে সদ্য এইচএসসি পাস একজন পরীক্ষার্থীর প্রতিযোগিতা। তাই এ প্রতিযোগিতা কোনোভাবেই সমতার মানদণ্ডে পার করা যাবে না। অতএব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এ অসম প্রতিযোগিতা বন্ধ হবে।

২.

দুর্ঘটনা যে কারও জীবনেই ঘটতে পারে। কিন্তু ব্যক্তি-মানুষের দুর্ঘটনার (ব্যক্তিটির প্রতি যথাযথ সম্মান রেখেই বলছি) জন্য একটি দেশের উচ্চশিক্ষার ভর্তিপ্রক্রিয়ার গোটা ব্যবস্থাতেই একটা গলদ রাখা সমীচীন বলে আমি মনে করি না। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও এ ব্যাপারে একটি যৌক্তিক এবং গ্রহণযোগ্য সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

৩.

এভাবে কেবল একবারই ভর্তিপরীক্ষার ব্যবস্থা করে এ সমস্যার মৌলিক কোনো সমাধান হবে না। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সকলের ধ্যান-জ্ঞান না বানিয়ে বা সকল শিক্ষার্থীর স্বপ্নের কেন্দ্রবিন্দু না বানিয়ে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান ও সমকক্ষ করে তোলা যায় কিনা সেটার দিকে মনোযোগ দেওয়া যেতে পারে। ফলে শিক্ষার্থীরা একবার ভর্তি হতে না পারলেই বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলেই যেন না ভাবে যে তাদের জীবনের সকল স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও অনেক সুন্দর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

তাছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যেই যে শিক্ষার কোয়ালিটির অসমতা, যা শিক্ষার্থীকে এক বছর লস দিয়ে হলেও অন্য বিভাগে চলে যেতে বাধ্য করে, সেটাও দূরীকরণের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। তাই কেবল ঘোষণা দিয়েই নয়, ব্যবস্থার পরিবর্তনটাও সমানভাবে জরুরি।

আমি মনে করি যেহেতু পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের অফিসিয়ালি বিষয়টি জানানো হয়নি, সেহেতু এবারের অকৃতকার্য পরীক্ষার্থীদের আরও একটা বছর দ্বিতীয়বার ভর্তিপরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে, তারপর এটা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে সেটা অধিকতর যৌক্তিক হতে পারে।

ড. রাহমান নাসির উদ্দিন: অধ্যাপক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।