ইউনিলিভার ও মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছেই বাংলাদেশের গণমাধ্যমের দায়বদ্ধতা

মহিউদ্দিন আহমদ
Published : 28 Sept 2014, 06:50 PM
Updated : 28 Sept 2014, 06:50 PM

বাংলাদেশের মূলধারার পত্রপত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলো প্রায়ই তাদের স্বাধীনতার কথা বলতে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে সরকারের নেওয়া ন্যায্য-অন্যায্য যথার্থ-অযথার্থ পদক্ষেপগুলোর কঠোর সমালোচনা করে থাকে। সম্প্রতি জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা গৃহীত হওয়ার পর থেকে এই সমালোচনার তীব্রতা বেড়েছে। সাংবাদিকতা করে রুজি-রোজগারের সংস্থান করে থাকেন আমাদের সম্পাদক-সাংবাদিকরা; সুতরাং এই পেশায় কোনো হুমকি-হামলা এলে তাঁরা যথার্থ কারণেই প্রতিবাদ করবেন, তা প্রত্যাশিত এবং স্বাভাবিকও। কিন্তু একই সম্পাদক সাংবাদিকরা যখন দৈনিক 'আমার দেশ' পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান এবং 'ইনকিলাব' সম্পাদক বাহাউদ্দিনদের পক্ষে অবস্থান নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতি দেন গোষ্ঠীগত স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে, তখন যে তাঁরা তাঁদের ইজ্জত, মর্যাদা এবং গুরুত্ব হালকা করে ফেলেন, তা তাঁরা 'সমাজের বিবেক' হয়েও লক্ষ্য করেন না।

উস্কানিমূলক লেখালেখির জন্য দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষে জার্মান সাপ্তাহিক DER STORMER নামের এক পত্রিকা সম্পাদক জুলিয়াস স্ট্রেচার (Julius Streicher)-কে ১৯৪৬ সালের ১৬ অক্টোবর ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, তা আমাদের বাংলাদেশের কোনো সম্পাদক জানেন বলে মনে হয় না। আশংকা হয় জুলিয়াস স্ট্রেচার বাংলাদেশের কোনো সম্পাদক হলে তার মুক্তির দাবিতেও আমাদের 'সম্পাদক পরিষদ'-এর সভাপতি এবং 'দৈনিক সমকাল' পত্রিকার সম্পাদক গোলাম সরোয়ারের নেতৃত্বে আমাদের সম্পাদকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করতেন।

জুলিয়াস স্ট্রেচারের বিরুদ্ধে ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালে ইহুদিদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক লেখালেখির অভিযোগ প্রমাণিত হয় ১৯৪৬ এর ১ অক্টোবর। বাংলাদেশের মাহমুদুর রহমান এবং বাহাউদ্দিনরা যতই উস্কানিমূলক অপ-সাংবাদিকতা করুন না কেন তাদের টাচ করা যাবে না, তাদের অফিসে কাগজপত্র জব্দ করার জন্য অভিযান চালানো যাবে না, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা যাবে না! আমাদের সম্পাদক-সাংবাদিকদের একটি অংশ 'ঈমানি জোশ' নিয়েই বিশ্বাস করেন যে, তারা যদি তাদের পত্রিকায় চরম উস্কানিমূলক কিছু প্রকাশও করেন, 'সংবাদপত্রের স্বাধীনতা'র অধিকার প্রয়োগ করেই তা করেছেন।

কিন্তু সংবাদপত্রের স্বাধীনতার এমন অপব্যবহার করেছিলেন বলেই তো পশ্চিমা দেশগুলোর বিচারকদের নিয়ে গঠিত ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনাল জুুলিয়াস স্ট্রেচারকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছিল।

এই উদাহরণ অনুসরণ করে ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে 'হেট মিডিয়া'র লোকদের জন্য আলাদা বিচারব্যবস্থা ছিল। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয় 'কাংগুরা' (Kangura) নামের পত্রিকার সম্পাদক 'হাসান এনগেজে'কে (Hassan Ngeze)। আর 'আরটিএলএম'এর (Radio Television Libre Des Mille) দুই প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক 'ফার্ডিন্যান্ড নাহিমানা' (Ferdinand Nahimana) এবং 'জ্যঁ বস্কো বারাইয়াগবিজা'কে (Jean Bosco Barayigwiza) দেওয়া হয় পঁয়ত্রিশ বছরের কারাদণ্ড।

রুয়ান্ডার গণহত্যায় ১৯৯৪ সালে মাত্র ৯০ দিনে মোট ১০ লাখ 'মাইনোরিটি টুট্সি'কে হত্যা করেছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ 'হুতু' সম্প্রদায়ের লোক। এই গণহত্যায় অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের জন্য জাতিসংঘ 'ইন্টান্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডা' গঠন করে। এই ট্রাইব্যুনালই এই তিন সম্পাদককে এই দণ্ডগুলো দেন।

হাল জামানায় আন্তর্জাতিক কোনো আদালতে এবং পৃথিবীর অনেকগুলো দেশেই মৃত্যুদণ্ডের বিধান নেই। তাই হয়তো এই অভিযুক্ত সম্পাদকদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়নি। বিধান থাকলে, যেমন ছিল ১৯৪৬ সালের ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালগুলোতে, হয়তো এই তিনজনকে ২০০৩ সালের এই রায়ে মৃত্যুদণ্ডই দেওয়া হত।

এই রায়ে 'ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনাল ফর রুয়ান্ডা'র প্রেসিডেন্ট নাভি পিল্লেই (Navi Pillay) [ভারতীয় বংশোদ্ভূত দক্ষিণ আফ্রিকার এই নাগরিক সদ্য-অবসরপ্রাপ্ত জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার] কী বলেছিলেন, তা উস্কানিতে আসক্ত বাংলাদেশের কিছু সম্পাদক-সাংবাদিকের বিশেষ মনোযোগ দিয়ে মনে রাখা দরকার। নিচের অনুচ্ছেদ দুটি ২০০৫ সালের ২৭ মার্চের 'নিউইয়র্ক সান' পত্রিকা থেকে নেওয়া হয়েছে:

''(রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত) ট্রাইব্যুনালের সামনে প্রশ্ন ছিল, জাতিগত বিদ্বেষ, উত্তেজনামূলক নিকৃষ্ট ধরনের ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়ানোর বক্তৃতা-বিবৃতি গণহত্যার পর্যায়ে পড়ে কি না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালকে কোথায় সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার শেষ এবং উস্কানির শুরু, তার সিদ্ধান্ত দিতে বলা হল।

বিচারপতি পিল্লাই পরে বলেছিলেন, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং দায়িত্বশীলতা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। বিচারে দাঁড় করানো এনগেজে, বারাইয়াগবিজা এবং নাহিমানা– এঁরা সবাই আন্তর্জাতিকভাবে ও গণতন্ত্রে স্বীকৃত উদার সংবাদমাধ্যমের সব রকমের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করেছিলেন। মানুষের আস্থা-বিশ্বাস নিয়েই সংবাদমাধ্যমের দায়িত্ব পালন করার কথা। এ মাধ্যমকে অবশ্যই স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীলতা মেনে চলতে হবে; তাঁরা তা করেননি।''

২.

আমাদের মূলধারার পত্রপত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলো অবশ্যই সরকারের জবাবদিহিতা ও কাজকর্মের স্বচ্ছতা আদায়ে আইনকানুন মোতাবেক সবকিছুই করবে, দেশের মানুষের তাই প্রত্যাশা। আমাদের গণমাধ্যমের উপর এই দায়িত্বটি এখন অনেক বেশি; কারণ আমাদের জাতীয় সংসদটি একেবারেই অকার্যকর। আমাদের গণমাধ্যম, আমাদের সিভিল সোসাইটি, বিশেষ করে টিআইবি- ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ; সিপিডি- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ; সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন; বিবিসি বাংলার 'বাংলাদেশ সংলাপ'– এগুলোর সরব ও সক্রিয় কর্মকাণ্ডের কারণেই বাংলাদেশের সরকার এবং রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গ– বিচার ব্যবস্থা ও জাতীয় সংসদ– তবুও কিছুটা জবাবদিহিতা করছে।

কিন্তু প্রশ্ন গুরুতর– রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ গণমাধ্যম কার কাছে জবাবদিহিতা করছে, কার কাছে দায়বদ্ধ?

মোবাইল কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে সার্ভিস চালু করার পর থেকেই লক্ষ্য করছি তারা বিপুল বিশাল পরিমাণে আমাদের পত্রপত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলোকে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, কিন্তু এই মোবাইল কোম্পানিগুলো সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক খবর থাকছে না। তার অর্থ কি এই, তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে আমাদের পত্রপত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলগুলোর মুূখ বন্ধ করে রেখেছে?

তিন বছর আগে, ২০১১ সালের ২৫ অক্টোবর, মঙ্গলবার, আমাদের দেশের শীর্ষ দুটি দৈনিক পত্রিকার দুই সম্পাদককে কম্পিউটারে কম্পোজ করা এ-৪ সাইজের অফসেট কাগজে তিন পৃষ্ঠার প্রায় একই রকমের দুটি চিঠি লিখেছিলাম বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানি থেকে আগের আর্থিক বছরে তাদের পাওয়া বিজ্ঞাপনের টাকার পরিমাণ জানতে চেয়ে। সেই চিঠির স্বব্যাখ্যায়িত কয়েকটি প্যারাগ্রাফ নিচে তুলে দিচ্ছি। তবে পত্রিকা দুটির নাম বাদ দিয়েছি নিচের উদ্ধৃত অংশে; পত্রিকা দুটির একটি বাংলা এবং অন্যটি ইংরাজি ভাষায়। প্রচার সংখ্যায় দুটি পত্রিকাই শীর্ষে– এবং প্রভাবশালী, প্রেস্টিজিয়াস।

''সাম্প্রতিক দিনগুলোতে মোবাইল কোম্পানি গ্রামীণ ফোনের কাছে ৩,০৩৪ কোটি টাকা আমাদের বিটিআরসি বকেয়া পাওনা হিসেবে দাবি করার পর লক্ষ্য করছি আমাদের কিছু পত্রপত্রিকা ঘোরতরভাবে গ্রামীণ ফোনের পক্ষে প্রত্যক্ষ বা প্রচ্ছন্ন সমর্থন জানিয়ে খবর রচনা করে আসছে। এই ৩,০৩৪ কোটি টাকা দাবি করার পর গ্রামীণ ফোন ঔদ্ধত্যও দেখিয়ে আসছে, এই চিঠি বিটিআরসি প্রত্যাহার না করলে গ্রামীণ ফোন বিটিআরসির সঙ্গে কথাই বলবে না। এমন ঔদ্ধত্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি আড়াইশ বছর আগে নবাব সিরাজদ্দৌলাকে দেখিয়েছিল বলে বইপত্রে পড়েছি। গ্রামীণ ফোন কয়েক বছর আগে বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস্টিন ওয়ালিকের কাছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নালিশও করেছিল বলে মনে পড়ে। বিশ্ব ব্যাংক যেন বাংলাদেশের মুরুব্বি; আর বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের প্রজা!

কয়েক মাস আগে ২ জি লাইসেন্সের জন্য বিটিআরসি যখন মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছে 'ফি' দাবি করল, তখন দেখলাম এই মোবাইল কোম্পানিগুলোর পক্ষ নিয়ে দুনিয়ার অন্যতম প্রভাবশালী ইংরাজি সাপ্তাহিক 'লন্ডন ইকোনোমিস্ট' পত্রিকায় চিঠি প্রকাশিত হয়েছে। তখনও আমি 'লন্ডন ইকোনোমিস্ট'-এ প্রতিবাদপত্র পাঠিয়েছিলাম।

গ্রামীণ ফোনের এমন সব ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের প্রতিবাদ কিন্তু আমরা আমাদের কোনো গণমাধ্যমে দেখছি না। বরং আগেই যেমন উল্লেখ করেছি, গ্রামীণ ফোনের পক্ষে প্রত্যক্ষ এবং প্রচ্ছন্ন সমর্থন দেখতে পাচ্ছি।

চরম উদ্বেগের বিষয়, এই প্রত্যক্ষ এবং প্রচ্ছন্ন সমর্থন দৈনিক … এবং ইংরাজি দৈনিক … এর মধ্যেও দেখতে পাচ্ছি। কারণটি কি এই যে, দৈনিক … 'র কতগুলো মানব কল্যাণমুখী প্রোগ্রামে গ্রামীণ ফোন অর্থায়ন করছে, আর প্রতি মাসে বিশাল পরিমাণে বিজ্ঞাপনও দিচ্ছে?

বিটিআরসি'র বিরুদ্ধে গ্রামীণ ফোন যখন ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছে, তখনি আবার দৈনিক … উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত ইন্টারনেট উৎসবে গ্রামীণ ফোনের পার্টনারশিপের কথাও বলা হচ্ছে। তাহলে কি দৈনিক … 'পেইড নিউজ' ছাপাচ্ছে?

এই প্রসঙ্গে এখানে দু'টি উদাহরণের উল্লেখ করতে চাই। গত ১৭ অক্টোবর তারিখের দৈনিক …..'র প্রথম পৃষ্ঠার "বিটিআরসির দাবি করা অর্থ দিবে না জিপি" শিরোনামে প্রকাশিত দুই কলামের সচিত্র খবরে এই তথ্যগুলো ছিল: "এই পর্যন্ত বাংলাদেশে জিপি'র বিনিয়োগের পরিমাণ ২৫০ কোটি ডলার (প্রায় ১৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা) এবং সরকারের কোষাগারে কর হিসেবে ২৭০ কোটি ডলার (প্রায় ২০ হাজার ২৫০ কোটি টাকা) দেওয়া হয়েছে……"।

কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হল, এই তথ্যগুলোর সঙ্গে বিবেচনাধীন সময়ে (ক) গ্রামীণ ফোনের মোট 'টার্নওভার' (ব্যবসায়) কত লাখ কোটি টাকা ছিল, (খ) মোট প্রি-ট্যাক্স অ্যান্ড পোস্ট-ট্যাক্স মুনাফা কত হাজার কোটি টাকা ছিল এবং (গ) মোট কত হাজার কোটি টাকা মুনাফা হিসাবে বিদেশে ট্রান্সফার করা হয়েছে, তার কোনো উল্লেখ নেই।

এই তিনটি 'ফিগার' ছাড়া দৈনিক …. এই 'স্টোরিটি'তে 'স্বচ্ছতা এবং ভারসাম্যের প্রকট অভাবও অনুপস্থিত দেখা যায়। এই অভাব ও অনুপস্থিতির কারণে 'স্টোরি'টি পুরোপুরি গ্রামীণ ফোনের পক্ষেই চলে গিয়েছে; 'স্টোরি'টি ভারসাম্যপূর্ণ, সৎ এবং বস্তুনিষ্ঠ থাকেনি।

গ্রামীণ ফোন বাংলাদেশ সরকারকে কী পরিমাণ ট্যাক্স দেয়, গ্রামীণ ফোন কর্তৃপক্ষ তার উল্লেখ প্রায়ই করে থাকে। কিন্তু সরকারকে ট্যাক্স দিয়ে কি তারা কোনো অনুগ্রহ করছে? আমাদের দেশের অতিদরিদ্র মানুষগুলো, আমাদের দেশের ভিক্ষুকটিও তো প্রতিদিন 'ভ্যাট' দিচ্ছে। 'ভ্যাট' দিচ্ছে নিত্যব্যবহার্য কয়েকটি খাদ্যসামগ্রী জাতীয় পণ্য ছাড়া আর সব কিছুর উপর। এখানে গ্রামীণ ফোনের বাহাদুরিটা কী? তারপর আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন: গ্রামীণ ফোন কি নরওয়ে থেকে বা প্যারেন্ট কোম্পানি 'টেলিনর' থেকে টাকা এনে বাংলাদেশ সরকারকে ট্যাক্স দিচ্ছে?

এই প্রশ্নগুলো আপনার 'স্টোরি'তে থাকা উচিত ছিল। 'স্টোরি'তে না দিতে পারলে একটি সম্পাদকীয়তে এই ইস্যুতে আপনাদের অবস্থান আপনারা পরিস্কার করতে পারতেন। আমাদের ধারণা, গ্রামীণ ফোনের বিজ্ঞাপন এবং নানান কিসিমের পৃষ্ঠপোষকতা থেকে দৈনিকটি বাদ পড়ে যেতে পারে, এই আশংকায় উপরে উল্লিখিত তিনটি প্রশ্ন পত্রিকার প্রতিবেদনে করেনি; করেননি পরে কোনো সম্পাদকীয় বা উপসম্পাদকীয়তেও।

এই প্রসঙ্গে গ্রামীণ ফোনের প্রবল পক্ষপাতিত্বের দ্বিতীয় উদাহরণটি হচ্ছে, একই দিন ১৭ অক্টোবর দৈনিক …. ভিতরের অন্য এক পৃষ্ঠায় প্রকাশিত আর একটি খবর। দুই কলামের এই খবরটির শিরোনাম হচ্ছে, "গ্রামীণ ফোনের নিরীক্ষা প্রক্রিয়ায় বিটিআরসির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে সংসদীয় কমিটি"। এই খবরটির শিরোনামেই স্পষ্ট যে, গ্রামীণ ফোনের পক্ষে এই খবরটিকে 'টুইস্ট' করেছেন পত্রিকাটির সংশ্লিষ্ট সম্পাদকরা।

উপরের প্রশ্নগুলোর একটি স্বচ্ছ চিত্র পাওয়া যাবে যদি আপনি গ্রামীণ ফোন থেকে বিভিন্ন সূত্রে, যেমন সরাসরি বিজ্ঞাপন, ইন্টারনেট উৎসব ইত্যাদি খাতে প্রাপ্ত টাকার পরিমাণটা জনসমক্ষে প্রকাশ করেন। সরকারের কর্মকাণ্ড জানার অধিকার যেমন দেশের মানুষের আছে, আপনি আশা করি স্বীকার করবেন, … মতো একটি পত্রিকার ভিতরের-বাইরের খবর জানার অধিকারও দেশের মানুষের আছে। কারণ দু'টোই তো জনমানুষের, মানে, 'পাবলিক' প্রতিষ্ঠান; মানুষজনের কল্যাণেই সরকার এবং গণমাধ্যমের কাজ করার কথা।

আমরা পুরোপুরি অবহিত যে, বিজ্ঞাপন ছাড়া কোনো পত্রিকা, টিভি চ্যানেল, রেডিও চলতে পারে না। বিজ্ঞাপন ছাড়া যে কোনো পত্রিকার শুধুমাত্র একটি কপির উৎপাদন খরচ এত বেশি পড়বে যে, তা কারও পক্ষেই কিনে পড়া সম্ভব হবে না। টিভি চ্যানেল এবং রেডিও'র ক্ষেত্রেও একই কথা। পত্র-পত্রিকা, টিভি, রেডিও চালাতে অবশ্যই বিজ্ঞাপন লাগবে। কিন্তু এইসব গণমাধ্যম তো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও বটে। পত্রিকার ব্যবসায়ে মালিকপক্ষ মুনাফা অর্জন করে।

তাতে সমাজে তাদের দাপট, প্রতাপ, মান-ইজ্জতও বাড়ে। কিন্তু বিজ্ঞাপনদাতার স্বার্থ রক্ষা করতে গিয়ে বস্তুনিষ্ঠ, ভারসাম্যপূর্ণ সংবাদ প্রকাশের দায়িত্বের সঙ্গে যেন কোনো 'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট' দেখা না দেয় তাও তো নিশ্চিত করতে হবে। সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দেশের মোবাইল কোম্পানিগুলোর কাছে বিক্রি হয়ে গিয়েছে কি না, তাও তো দেখতে হবে।

আমরা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করে আসছি যে, আমাদের কোনো গণমাধ্যমে মোবাইল কোম্পানিগুলো সম্পর্কে কোনো নেতিবাচক, সমালোচনামূলক, ক্রিটিক্যাল খবর, সম্পাদকীয়, উপসম্পাদকীয় বা ফিচার বা কার্টুন নেই বললেই চলে। এই ব্যাকগ্রাউন্ডে আপনাকে এই অনুরোধটি এখন করছি; দৈনিক ….. গ্রামীণ ফোনের প্রতিষ্ঠার পর থেকে যে পরিমাণ টাকা পেয়েছে তার বছরওয়ারী একটি বিবরণী দয়া করে পাঠালে খুবই উপকৃত হব।

আমার একটি লেখার জন্য এই তথ্যগুলো দরকার। এই তথ্যগুলো জোগাড়ে এবং পাঠাতে আপনাকে যদি বিশেষ কোনো খরচ মেটাতে হয় এবং তা যদি 'রিজনেবল' হয়, তা বহন করতে আমি প্রস্তুত আছি।

আমরা আশা করি, এই ক্ষেত্রে আমরা আপনাদের পূর্ণ সাহায্য-সহযোগিতা ও সমর্থন পাব। দেশের সাংবাদিকতায় বেশ কিছু অনুসরণীয় উদাহরণও আপনারা স্থাপন করেছেন। আপনারাই নিয়মিত প্রচার সংখ্যা প্রকাশ করে যাচ্ছেন। বিজ্ঞাপন এবং বস্তুনিষ্ঠ, সৎ সাংবাদিকতার মধ্যে 'কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট'এর বিষয়েও আপনারা উদাহরণ সৃষ্টি করতে পারেন।''

এখানে উল্লেখ করা জরুরি যে, গত তিন বছরে আমি আমার চিঠি দুটোর প্রাপ্তিস্বীকারও পাইনি।

উপরে শুধুমাত্র 'গ্রামীণ ফোন'-এর কথা বলা হয়েছে; কারণ 'গ্রামীণ ফোন' বাংলাদেশের বৃহত্তম কোম্পানি; বিজ্ঞাপনদাতা হিসেবে 'গ্রামীণ ফোন'-এর দাপট এবং প্রতাপও বেশি। 'বাংলালিংক', 'রবি', 'এয়ারটেল'– এই মোবাইল কোম্পানিগুলোর জন্যও উপরের কথাগুলো মোটামুটিভাবে প্রয়োজ্য।

উপরে উদ্ধৃত আমার চিঠিতে যদিও মাত্র দুটি পত্রিকার কথা বলা হয়েছে, আমাদের মূলধারার প্রায় সবগুলো পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলও মোবাইল কোম্পানি এবং 'ইউলিভার'কে ডরায়। এখানেই পরের অনিবার্য প্রশ্নটি এসে যায়: বিজ্ঞাপন তো আমাদের সরকারগুলোও দিয়ে আসছে প্রিন্ট মিডিয়াকে, তাহলে সরকারকে প্রিন্ট মিডিয়া ডরাবে না কেন, এমন প্রশ্ন তো বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু করতেই পারেন।

৩.

আমার আজকের এই কলামটির কথাগুলোর সত্যতা ও যথাযর্থতা আজ শুক্রবার সকালের ইংরাজি দৈনিক 'ডেইলি স্টার'-এর প্রথম পৃষ্ঠাতেই পেয়ে গেলাম। শিরোনাম এবং বিষয়বস্তু মোটামুটিভাবে একদিন আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম; তারপরও যখন সমর্থন ও সত্যতা অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়েই গেলাম, এখন তার একটু বর্ণনা দিই।

শুক্রবারের 'ডেইলি স্টার'-এর প্রথম পৃষ্ঠার পাঁচ ভাগের তিন ভাগ জুড়েই বিজ্ঞাপন। আমাদের পাঠকরা পত্রিকার কতভাগ স্পেসে খবর পাবেন, আর মালিক-সম্পাদকরা তাদের খরচ ওঠাতে এবং লাভ আদায়ে পত্রিকার কতভাগে বিজ্ঞাপন ছাপাবেন তার কোনো নীতিমালা এই বাংলাদেশে নেই। আমাদের টিভি চ্যানেলগুলোতে 'বিজ্ঞাপন-সন্ত্রাস' চলছে। টিভিতে ঘণ্টায় কত মিনিট প্রোগ্রাম আর কত মিনিট বিজ্ঞাপন থাকবে, তাও নির্দিষ্ট নয়। এসব 'সন্ত্রাস' নিয়ন্ত্রণে সরকার যদি কোনো নীতিমালা করে তাও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উপর হামলা হিসেবে দেখবেন আমাদের কিছু সম্পাদক।

'ডেইলি স্টার'-এর প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বিজ্ঞাপনটি মোবাইল কোম্পানি 'এয়ারটেল'-এর। তার উপরের দিকে, প্রায় একই সাইজের বিজ্ঞাপন হচ্ছে 'ইউনিলিভার'-এর। মানে, এই লেখার শিরোনামে যা বলতে চেয়েছি, 'ডেইলি স্টার'-এর প্রথম পৃষ্ঠাতেই তার সত্যতা পেয়ে গেলাম। কথা আরও আছে। 'ডেইলি স্টার'-এর তৃতীয় পৃষ্ঠায় আছে পৃষ্ঠার পাঁচ ভাগের এক ভাগ জুুড়ে 'গ্রামীণ ফোন'-এর বিজ্ঞাপন ও পঞ্চম পৃষ্ঠায় 'গ্রামীণ ফোন'-এর ছোট আরও একটি। পুরো ১২ এবং ১৩ পৃষ্ঠা এবং আরও কতগুলো পৃষ্ঠায় সরকারি বিজ্ঞাপন।

আগের দিন, বৃহস্পতিবার 'ডেইলি স্টার'-এর পুরো ৯ম পৃষ্ঠায় 'গ্রামীণ ফোন'-এর অন্তত কয়েক লাখ টাকার বিশাল বিজ্ঞাপন। একই দিন একই বিশাল বিজ্ঞাপন দৈনিক 'প্রথম আলো'র ১৪ নম্বর পৃষ্ঠায়। বৃহস্পতিবার 'প্রথম আলো'র দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় 'এয়ারটেল'-এর আধা পৃষ্ঠার বিজ্ঞাপন!! মানে, বিজ্ঞাপনে সয়লাব করে দিচ্ছে আমাদের দৈনিকগুলোকে মোবাইল কোম্পানিগুলো। সয়লাব করে দিচ্ছে আমাদের কতগুলো টিভি চ্যানেলও।

আজ শুক্রবার সকাল ৭টা এবং ৯টার 'চ্যানেল আই'-এর খবরে 'নতুন লাক্স' এবং এক সুন্দরী মডেলের বিজ্ঞাপন বার বার। বিজ্ঞাপন মানে টাকা। যত বেশি প্রচার সংখ্যা এবং দর্শক সংখ্যা তত বেশি টাকা। সামনের উৎসবের যে কোনো একটি দিন আমাদের শীর্ষ দৈনিক পত্রিকার যে কোনো একটি এবং রাত আটটা থেকে নয়টা, যে কোনো টিভি চ্যানেল লক্ষ্য করে দেখুন, মোবাইল কোম্পানিগুলো এবং 'ইউনিলিভার'-এর বিজ্ঞাপনগুলো আমাদের মিডিয়াগুলোতে কেমন গুরুত্ব ও দাপটের সঙ্গে প্রচার পাচ্ছে। পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেলগুলো দেখলে মনে হয়, 'এয়ারটেল' মোবাইল কোম্পানি একটি নূতন প্রচার অভিযান শুরু করেছে।

'চ্যানেল আই'-এর শাইখ সিরাজ এবং ফরিদুর রেজা সাগররা ৪৫ বছর আগে তখনকার 'জিন্নাহ এভিনিউ' (এখনকার 'বঙ্গবন্ধু এভিনিউ')-তে 'পিঠাঘর' দিয়ে শুরু করে গত ১৫ বছরে ৩০ টি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের মালিক তো আর এমনি এমনি হননি। তাদের এখন হেলিকপ্টার কোম্পানিও আছে; আছে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ঔষধ কোম্পানি, 'ইনসেপটা'ও। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির প্রমাণের সমর্থনে আমি 'চ্যানেল আই'-এর এই দুই তারকা মিডিয়া ব্যক্তিত্বের নাম উল্লেখ করে থাকি।

'ইউনিলিভার'-এর লাক্স এবং অন্যসব পণ্যসামগ্রীর বিজ্ঞাপন দেশের শীর্ষস্থানীয় টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করে কোটি কোটি টাকা আয় করছে। এই বিজ্ঞাপনগুলো থেকে আয় তো দৃশ্যমান। এই বিজ্ঞাপনগুলোর রেট আমরা না জানলেও বিজ্ঞাপন কোম্পানিগুলো ঠিকই জানে।

কিন্তু আমাদের টিভি চ্যানেলগুলো মোবাইল কোম্পানিগুলোর কোনো কোনোটিকে এবং কখনও কখনও 'ইউনিলিভার'কে পার্টনার বানিয়ে যে সব অনুষ্ঠান করে, যেমন, 'লাক্স সুন্দরী প্রতিযোগিতা', 'মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার'– এ সবের জন্য কী পরিমাণ, কত কোটি টাকা স্পন্সরিং কোম্পানিগুলো থেকে পায়– তা কি আমরা জানতে পারি না?

আমাদের দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রাইম মিনিস্টারের মাসিক বেতন কত তা আজ ভোরে ইটারনেটে দেখলাম। ২০১০ সালের ৮ মার্চ মন্ত্রিসভার এক সিদ্ধান্তে মহামান্য প্রেসিডেন্টের মাসিক বেতন ৩৩,৪০০ টাকা থেকে বাাড়িয়ে করা হয়েছে ৬১,২০০ টাকা; প্রধানমন্ত্রীর বেতন ৩২,০০০ টাকা থেকে ৫৮,৬০০ টাকা; মন্ত্রীদের বেতন ২৯,০০০ টাকা থেকে ৫৩,১০০ টাকা; প্রধান বিচারপতির বেতন ৩০,৫০০ টাকা থেকে ৫৬,০০০ টাকা; স্পিকারের বেতন ৩১,০০০ থেকে ৫৭০০০ টাকা।

প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, সংসসদ সদস্যদের বেতনও উল্লেখ আছে ইন্টারনেটের এই খবরে। একজন এমপি এখন পেয়ে থাকেন. ২৭,৫০০ টাকা; আর সচিব হিসেবে মূল বেতন মাসে ৪০,০০০ টাকা। উপরের এই মাসিক বেতন ছাড়াও তারা পেয়ে থাকেন আরও কিছু অ্যালাউন্স, সুযোগ-সুবিধা।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার বার্ষিক বেতন হচ্ছে ৪ লাখ ডলার। বেতনের বাইরে তিনি হোয়াইট হাউজে থাকতে পারেন, তাঁর ব্যবহারের জন্য বিশাল বিমান বহর আছে। আছে আরও অনেক সুযোগ-সুবিধা। লন্ডনের প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক 'গার্ডিয়ান'-এর সম্পাদক অ্যালান রাসব্রিজার (Alan Rusbridger) এর বার্ষিক বেতন ৩,৯৫,০০০.০০ ব্রিটিশ পাউন্ড। এই সম্পাদকের নেতৃত্বে পত্রিকাটি সিআইএ-এর এক সাবেক কর্মকর্তা এডওয়ার্ড স্লোডেনের দেওয়া লাখ লাখ গোপন নথি দেড় বছর আগে ফাঁস করে সারা দুনিয়াতে কাঁপুনি সৃষ্টি করেছিল।

উপরের এই তথ্যগুলো ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। এদের সকলেই পাবলিক ফিগার। সুতরাং তাদের বেতন ভাতাও 'পাবলিক'। মানে, পাবলিকেরও জানার অধিকার আছে।

কিন্তু আমাদের গণমাধ্যমের বিশাল বিশাল পাবলিক ফিগার, যেমন, শাইখ সিরাজ, ফরিদুর রেজা সাগর, মোজাম্মেল বাবু, মোসাদ্দেক আলী ফালু, 'সম্পাদক পরিষদ'-এর সভাপতি এবং 'দৈনিক সমকাল'-এর সম্পাদক গোলাম সরোয়ার, ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেনের মাসিক বেতন এবং অন্যান্য ভাতা, সুযোগ-সুবিধা জানার উপায়টা কী? তাঁদের কে কেমন কাজের দায়িত্বের জন্য কী পরিমাণ টাকা বেতন হিসেবে এবং মালিক হিসেবে বার্ষিক কী পরিমাণ টাকা লভ্যাংশ পাচ্ছেন, তা বছরে কত কোটি বা লাখ, তা জানার অধিকার তো এদেশের মানুষের আছে। কারণ তাঁরাও তো পাবলিক ফিগার, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের মালিক-মোখতার। তাঁরা আমাদের প্রেসিডেন্ট, প্রাইম মিনিস্টার, মিনিস্টার, এমপিদের স্বচ্ছতা চাইবেন, অথচ নিজেরা তার উর্ধ্বে থাকবেন– তা কী করে হয়?

আমাদের প্রত্যেকটি পত্রিকা এবং টিভি চ্যানেলের বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাব দাবি করি। দাবি করি তারা কোন সেক্টর থেকে কী পরিমাণ বিজ্ঞাপন পাচ্ছেন, তার হিসাবও। তাতেই পরিস্কার হবে আমাদের গণমাধ্যমে কে কার কাছে কী পরিমাণ দায়বদ্ধ; তারা কে কতটুকু স্বচ্ছ।

শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৪