নয়া সম্প্রচার নীতিমালা ও কিছু প্রশ্ন

জায়েদুল আহসান পিন্টু
Published : 8 August 2014, 02:30 PM
Updated : 8 August 2014, 02:30 PM

অবশেষে শেখ হাসিনার সরকার একটি সম্প্রচার নীতিমালার অনুমোদন দিয়েছে। এর পক্ষে বিপক্ষে নানা কথাবার্তা শুরুর মধ্য দিয়েই সরকার গেজেটও করে ফেলেছে। যার মানে নীতিমালাটি কার্যকর হয়ে গেছে। স্বাধীন জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত এই নীতিমালা বাস্তবায়নের কর্তৃত্ব থাকবে তথ্য মন্ত্রণালয়ের।

সরকারি দলের দু'চারজন নেতা আর সরকার সমর্থক সাংবাদিক নেতা ছাড়া এই নীতিমালার পক্ষে কথা বলতে কাউকে দেখছি না। বিরোধী দল বিএনপি খসড়ার অনুলিপি না দেখেই সরাসরি তা প্রত্যাখ্যান করেছে। সাংবাদিকরাও নীতিমালাটি মেনে নিতে পারছেন না।

যে কোনো প্রতিষ্ঠান চালাতে নীতিমালার দরকার। প্রতিষ্ঠান মাত্রকেই আইন-কানুনের আওতার মধ্যে থাকতে হয়। গণমাধ্যমও এসব কিছু মেনেই চলবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। সাংবাদিকরাও অনেকদিন ধরে সম্প্রচার নীতিমালা চেয়ে আসছে। কারণ বর্তমানে টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নীতিমালা তো দূরে থাক, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা বা দায়িত্বশীলতার কথাও ভুলে যায়। এক কথায় বলা যায়, এক ধরনের নৈরাজ্যই চলছে টিভি চ্যানেলগুলোতে।

শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি নীতিমালা তাই জরুরি। কিন্তু তাই বলে নীতিমালার নামে সরকার তার ইচ্ছা-অনিচ্ছার প্রতিফলন ঘটনোর যে মানসিকতা দেখিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। সরকার এক রকম কাউকে তোয়াক্কা না করে নীতিমালা করেছে, এরপর আইন হবে। গণমাধ্যম সেটা মানতে বাধ্য হবে।

তবে পুরো নীতিমালা পড়ে আমার কাছে মনে হয়েছে তা কোনোভাবেই কার্যকর করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে অনেক আইন-কানুন আছে যা কোনোদিন প্রয়োগই হয়নি। এমন অনেক আইনের ধারা আছে যা বাস্তবতার কারণেই কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। এই নীতিমালাও শেষ পর্যন্ত অকার্যকরই থেকে যেতে পারে।

কারণ সম্প্রচার নীতিমালায় যেসব কথামালা রয়েছে তার অনেকটাই অবাস্তবায়নযোগ্য। এমনকি চাইলেও সরকার পারবে না। আর জোর করে বাস্তবায়ন করতে গেলে এর ফলাফল কী হতে পারে সেটা নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের মতো পুরনো ঐতিহ্যবাহী দলের না জানার কথা নয়। নীতিমালায় কিছু কিছু বিষয় আছে যা আপেক্ষিক, যার সংজ্ঞায়ন খুব কঠিন। আবার কিছু কিছু ধারা এর উদ্দেশ্যের সঙ্গে সরাসরি বিরোধপূর্ণ।

কয়েকটি উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন নীতিমালায় সংবাদ ও অনুষ্ঠান সম্প্রচারের অনুসরণীয় মানদণ্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা, পেশাগত নৈতিকতা ও নিরপেক্ষতা এবং সম্প্রচারের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা। এই তিনটি পয়েন্টের সঙ্গে যে কোনো মানুষই একমত হবেন, কিন্তু বস্তুনিষ্ঠতার সংজ্ঞা কে নির্ধারণ করে দেবেন?

পেশাগত নৈতিকতা অবশ্যই থাকতে হবে, কিন্তু ইতোমধ্যে নৈতিকতার যে পতন ঘটেছে তার উন্নয়ন করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়, এটা সাংবাদিকদেরই করতে হবে। আর দায়িত্বশীলতার কথা সরকারকেই-বা মনে করিয়ে দিতে হবে কেন? আমাদের সাংবাদিকদের অনৈক্য আর দায়িত্বহীনতার কারণেই অবশ্য এই সুযোগ তৈরি হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, নীতিমালায় বলা আছে, আলোচনামূলক অনুষ্ঠানে বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য পরিহার করতে হবে। এ ধরনের অনুষ্ঠানে সব পক্ষের যুক্তি যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকতে হবে। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, সব অনুষ্ঠানেই বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য পরিহার করা উচিত। যদিও সরকার টকশো'র কথা মাথায় রেখে এই ধারা সংযোজন করেছে।

এটা সত্যি যে টকশোতে বিভ্রান্তিমুলক অনেক তথ্য পরিবেশিত হয়। অসত্য তথ্য হরহামেশাই দেওয়া হচ্ছে। কেউ কোনো কাউন্টারও দেয় না। কাউন্টার দেওয়ার মতো তথ্য নিয়ে কোনো উপস্থাপককে টকশোতে হাজির হতেও দেখা যায় না। আবার টকশোর কোনো কোনো অতিথিকে দেখা যায় এমন সব ভাষায় কথা বলছেন যা প্রচারযোগ্য নয়। অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ ভাষাও ব্যবহার করেন অনেকে।

রাজনীতিবিদরা জনসভায় যে ভাষায় কথা বলেন, তথাকথিত সুশীল সমাজের কোনো কোনো কথিত প্রতিনিধি ওই রকম ভাষাতেই কথা বলেন। তখন কোনো কোনো উপস্থাপক মুচকি হাসেন বা গালে হাত দিয়ে বসে থাকেন অথবা উস্কিয়ে দেন। অনর্গল মিথ্যা তথ্য দিয়ে কোনো কোনো অতিথি তার উদ্দেশ্য সফল করে যাচ্ছেন। এসব কিছুই চলছে অনভিজ্ঞতা, অদক্ষতা আর পেশাদারিত্বের অভাবে।

তাই বলে সরকার নির্দেশ দিয়ে টেলিভিশনগুলোকে বিভ্রান্তিমূলক ও অসত্য তথ্য পরিহারে বাধ্য করতে পারবে না। সামগ্রিকভাবেই যখন টেলিভিশনগুলোর মানের উন্নয়ন হবে তখন এইসব অনুষ্ঠানেরও মান বাড়বে। এজন্য সাংবাদিকদেরও যেমন যথাযথ প্রশিক্ষণ দরকার তেমনি মালিকদেরও দিতে হবে প্রশিক্ষণ।

এ ধরনের অনুষ্ঠানে সব পক্ষের যুক্তি যথাযথভাবে উপস্থাপনের সুযোগ থাকার কথা বলার মাধ্যমে সরকারের হীনমন্যতার প্রকাশ ঘটেছে। সরকার হয়তো টকশোতে সরকারি আর বিরোধী দলের সমর্থকদের অংশগ্রহণের কথা বিবেচনা করেই একথা বলেছেন। যদি তাই হয়, সবগুলো টেলিভিশনই কম-বেশি দু'দলকে সমান সুযোগ দেয়। সমস্যা হয়ে যায় যখন এক পক্ষের নেতার হাতে তেমন কোনো যুক্তি-প্রমাণ না থাকে, তখন অপর পক্ষ সহজেই প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করে ফেলে। এর দায় তো গণমাধ্যম নিতে পারে না।

টকশোতে বিভ্রান্তি কারা ছড়ায়? নিশ্চয়ই রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা এই প্রতিযোগিতায় নাম্বার ওয়ান? আর তাদের সঙ্গে যুক্ত হন সাংবাদিক নামধারী কিছু ব্যক্তি, যারা নানা রাজনৈতিক সুবিধা ভোগ করেন।

তৃতীয়ত, নীতিমালায় বলা হয়েছে, জনস্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে এমন কোনো 'বিদ্রোহ', 'নৈরাজ্য' ও 'হিংসাত্মক' ঘটনা প্রদর্শন করা যাবে না। এই নীতি বাস্তবায়নের আগে বিদ্রোহ, নৈরাজ্য আর হিংসাত্মক, এই তিনটি শব্দের গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দিতে হবে। কারণ সরকার যেটাকে নৈরাজ্য বলবে, বিরোধী দল সেটাকে শান্তিপূর্ণও বলতে পারে। যেমন হরতাল শেষে হরতাল আহ্বানকারীরা জনগণকে অভিনন্দন জানায় আর সরকার হরতাল প্রত্যাখ্যান করায় জনগণকে অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দেয়।

নীতিমালার এই ধারা মানতে হলে পল্টনে প্রকাশ্যে লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা, বায়তুল মোকাররমের ভিতর থেকে পুলিশের প্রতি গুলি ছোঁড়া কিংবা হেফাজতের ৫ মের ঘটনার মতো ধ্বংসাত্বক কর্মকাণ্ডের সচিত্র প্রতিবেদন প্রচার করা যাবে না। কারণ প্রতিটি ঘটনাই নৈরাজ্য-সৃষ্টিকারী ও হিংসাত্মক।

চতুর্থত, নীতিমালা অনুযায়ী, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ বা অবমাননাকর দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। অপরাধীদের দণ্ড দিতে পারেন, এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মতো দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। এই ধারাটি সংযোজনের কোনো যুক্তিই খুঁজে পাই না। বিশেষ কয়েকটি বাহিনী কেন? এমন কোনো বাহিনী বা এমন কেউ কি আছে যার প্রতি অবমাননা করা যাবে?

যেহেতু গণমাধ্যম কারও অবমাননা করার অধিকার রাখে না, সেহেতু আলাদা করে কয়েকটি বাহিনীর কথা উল্লেখ করার পেছনে নিশ্চয়ই বিশেষ কারণ আছে। সম্প্রতি র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান বা র‌্যাব বিলুপ্তির দাবি উঠেছে। দিনের পর দিন র‌্যাবের কতিপয় সদস্যের অপকর্মের কারণে এই দাবি যে কেউ তুলতেই পারে। গণমাধ্যমও এই দাবির প্রতি জনমত গড়ে তুলতে পারে।

এখন যদি বলা হয় যে, র‌্যাবের কতিপয় সদস্যের সাত খুন কিংবা সোনা ডাকাতির ঘটনা প্রচার করা র‌্যাবের জন্য অবমাননাকর হয়েছে, এটা মিথ্যা নয়। কথা হল, আপনি খুন করবেন, বিচারে আপনার ফাঁসি হবে, আর আপনাকে খুনি বলা যাবে না! এই বাহিনীর কারও অপকর্ম প্রচার করলে যদি তাকে বাহিনীর অপকর্ম হিসেবে ধরে নেওয়া হয় তাহলে গণমাধ্যমে সরকারের প্রেসনোট ছাড়া আর কিছু প্রচারের সুযোগ থাকবে না।

তবে তথ্যমন্ত্রী কোনো এক আলোচনায় বলেছেন, কোনো ইনডিভিজুয়াল বা ব্যক্তি মানেই বাহিনী নয়। পাল্টা বলা যায়, ব্যক্তিগুলোর সমষ্টি বাহিনী। নয়তো বাহিনীর আলাদা কোনো অস্তিত্ব নেই। এখন যদি সরকার এমন একটি বাহিনী তৈরি করে যার কাজই হবে বিরোধী মতের লোকজনকে গুম করা।, তার বিরুদ্ধেও কি কোনো কিছু বলা বা প্রচার করা যাবে না?

নীতিমালায় বলা হয়েছে অপরাধীদের দণ্ড দিতে পারেন এমন সরকারি কর্মকর্তাদের ভাবমূর্তি বিনষ্ট করার মতো দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। আমার ধারণা, সরকারের কোনো আমলা সুকৌশলে এই বাক্যটি সংযোজন করেছেন। এই বাক্যে ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে বিচারকদের ভাবমূর্তি নষ্ট করা যাবে না। আসলে সরকারের উপসচিব মর্যাদার কর্মকর্তা যারা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন তারাও অপরাধীদের দণ্ড দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।

এখন, কোনো জেলা প্রশাসক যদি ঘুষ নিয়ে অপরাধীকে ছেড়ে দেন কিংবা ভ্রাম্যমান আদালতের কোনো বিচারককে যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হতে দেখা যায়, সেটাও কি প্রচার করা যাবে না? ভাবমূর্তির সর্বজনিন সংজ্ঞাই-বা কী?

পঞ্চমত, নীতিমালায় বলা আছে, সরকার কর্তৃক অনুমোদিত বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠানে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানের ভাষণ জনস্বার্থে যথাযথভাবে প্রচার করতে হবে। এখানে স্পষ্টতই সরকার তার সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হলে সম্প্রচার মাধ্যমগুলো তার নিজ গরজেই ওই ভাষণ প্রচার করবে, সরকারেরর বলে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে নীতিমালা করে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোকে সরকার সেটা বাধ্য করতে পারে না।

টেলিভিশনগুলোতে সরকার কোনো ইনসেনটিভ দেয় না। সংবাদপত্রে যদিও মালিকরা নিউজপ্রিন্ট আমদানিতে শুল্কের ক্ষেত্রে সুবিধা পায়, সরকারি বিজ্ঞাপনও পায়, টিভিগুলোকে আয় করতে হয় সম্পূর্ণ বেসরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে। সেখানে সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের সব ভাষণ প্রচারের বাধ্যবাধকতা রাখার যুক্তি নেই। কোন ভাষণ কতটুকু প্রচার করা হবে সে বিচারের ভার সাংবাদিকদের ওপরই ছেড়ে দেওয়া উচিত।

এছাড়াও এই নীতিমালায় টিভিগুলোকে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান কী রকম হতে পারে তার একটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যা অযাচিত। এত কিছু উল্লেখ করে একটি নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজন আছে কিনা সে বিতর্ক উঠাই স্বাভাবিক।

যখন বলা হয় একটি স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে, যেটি সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য একটি অনুসরণীয় নিয়মাবলী তৈরি করবে এবং সময়ে সময়ে অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শক্রমে তা পর্যালোচনা করে এর প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন, পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করবে– এরূপ যদি হয়েই থাকে তাহলে তথ্য মন্ত্রণালয় এত বিস্তারিত নীতিমালার প্রস্তাব করলই-বা কেন, আর সরকার তা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দিল কেন? এরই মধ্যে গেজেট প্রকাশ করে তা কার্যকর করার কথাই-বা বলা হল কেন? ওই কমিশন তৈরি করে তার হাতেই নীতিমালা বা আইন করার দায়িত্ব দিলে সমস্যা ছিল কোথায়?

আমার মনে হয় সরকার এ ক্ষেত্রে বড় ভুলই করছে। কারণ মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া নীতিমালা বাস্তবায়ন মানে সবগুলো বেসরকারি টেলিভিশনকে বাংলাদেশ টেলিভিশনে রূপান্তরিত হতে হবে, যার সুযোগ নেই। এই নীতিমালার খোলনলচে পাল্টাতে হবে। অথবা অকার্যকর করে রাখতে হবে। তবে নীতিমালা অবশ্যই দরকার এবং সেটা যত দ্রুত করা যায় বেসরকারি টেলিভিশনগুলোর জন্য ততই মঙ্গল। সেই নীতিমালা নিশ্চয়ই আমলা দ্বারা লিখিত হলে চলবে না। কারা ভালো নীতিমালার খসড়া তৈরি করতে পারেন সেটা নিশ্চয়ই সরকারের লোকজন ভালো জানেন।

ঘোষিত নীতিমালার অন্যতম উদ্দেশ্য ও লক্ষ হচ্ছে তথ্যের অবাধ প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। যা নীতিমালার প্রথম ভাগেই বলা আছে। সরকার যদি সত্যি সত্যি তথ্যের অবাধ প্রবাহে বিশ্বাস করে থাকে, তাহলে কোনো বিধিনিষেধ দিয়ে তা আটকানোর চেষ্টা করা উচিত নয়। আর সেই চেষ্টা করে কোনো সরকারই সফল হয়ন। এই সরকারও পারবে না।

সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে এই লেখা শেষ হতে না হতেই তথ্য মন্ত্রণালয় একটি প্রেস অ্যাডভাইস পাঠিয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৫ তম সংশোধনী অনুযায়ী দেশে কোনো আদিবাসী নেই, সংবিধান অনুযায়ী তারা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি। তাই ৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে আলোচনা অনুষ্ঠান, টকশোতে অংশগ্রহণকারী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, বিশেষজ্ঞ, সম্পাদক ও সুশীল সমাজের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গকে আদিবাসী শব্দটির ব্যবহার পরিহার করতে হবে।

সম্প্রচার নীতিমালায় বলা আছে, সম্প্রচার কমিশন গঠনের আগ পর্যন্ত তথ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রনেই টেলিভিশন চ্যানেলগুলো চলবে। যদিও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ তারা আগেও ছিল। কিন্তু এ রকম উপদেশ বা পরামর্শ কখনও পাঠাতে দেখিনি। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চম সংশোধনী সংসদে পাশ হয়েছে। এরপর তিনটি আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালিত হয়েছে। তখন এ জাতীয় প্রেস অ্যাডভাইস দেওয়া হয়েছে বলে শুনিনি।

কেউ যদি নিজেকে আদিবাসী দাবি করেন– হোক সেটা নৃতাত্ত্বিকভাবে বিতর্কিত– তাই বলে তিনি নিজের মত প্রকাশ করতে পারবেন না? সম্প্রচার নীতিমালার প্রয়োগ কি সরকার আদিবাসী শব্দ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েই শুরু করে দিল?

আলামত সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না।


জায়েদুল আহসান পিন্টু:
সাংবাদিক ও গবেষক।