প্রসঙ্গ: বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম ও টিআইবির রিপোর্ট

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ
Published : 22 July 2014, 03:34 PM
Updated : 22 July 2014, 03:34 PM

১.

১০ জুলাই, ২০১৪ কয়েকটি সংবাদপত্রে ও অনলাইন পোর্টালে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী উল্লিখিত শিরোনামের এক নিবন্ধে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির গৃহীত বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ সম্পর্কে পাঠকদের সম্যক ধারণা দিয়েছেন। শুরুতেই তিনি টিআইবির সমালোচনা এবং ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া, কোনো বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ায় স্বাগত জানিয়েছেন যা অত্যন্ত ইতিবাচক ও প্রশংসার দাবি রাখে।

তবে তিনি গত ৩০ জুন টিআইবি প্রকাশিত 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়' শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন বাস্তবসম্মত নয় বলেছেন। মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে এখানে আমরা সবিনয়ে দ্বিমত করছি।

টিআইবি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর যে গবেষণা পরিচালনা করেছে তার উদ্দেশ্যই হল এই খাতের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করা। এ ক্ষেত্রে সরকারের ভূমিকাই মুখ্য; গবেষণালব্ধ তথ্যসমূহ প্রত্যাখ্যান না করে বাস্তবতার নিরিখে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবার মাধ্যমেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই খাতটিতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ অভিভাবক, শিক্ষার্থী তথা উচ্চশিক্ষা খাতে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা সম্ভব।

সমাজবিজ্ঞান গবেষণার স্বীকৃত পদ্ধতি অনুসরণ করে টিআইবির গবেষণাটি পরিচালিত হয়। এর বস্তনিষ্ঠতা সম্পর্কে সন্দেহ করার কোনো অবকাশ নেই।


২.

সমাজবিজ্ঞানের গবেষণায় বহুল ব্যবহৃত ট্রায়াঙ্গুলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করে ২২ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে বিশ্লেষণ ও যাচাইকরণের মাধ্যমে এই গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। তদুপরি গবেষণার শেষ পর্যায়ে একটি পরামর্শ কর্মশালা আয়োজন করা হয়। এ কর্মশালায় মন্ত্রণালয় এবং ইউজিসির কর্মকর্তাদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও তারা যোগদান করেননি, যদিও ২৭ মার্চ, ২০১৪ তারিখে মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে টিআইবিকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে লিখিতভাবে তথ্য প্রদান করা হয়।

৩.

পত্রপত্রিকায় গবেষণা ফলাফলের কেবলমাত্র নেতিবাচক দিকটি প্রকাশিত হওয়ায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়ে থাকতে পারে।

প্রতিবেদনে উপস্থাপনার প্রথমেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অংশীজনের ২০ টি ইতিবাচক অর্জন/উদ্যোগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ-ও বলা হয়ছে যে, প্রাপ্ত ফলাফল সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি এবং অন্যান্য অংশীজনের জন্যে সমানভাবে প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ টিআইবি এ ক্ষেত্রে কোনো সাধারণীকরণের প্রয়াস নেয়নি।

৪.

৩ জুলাই একটি টেলিভিশন আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে মাননীয় মন্ত্রী টিআইবির গবেষকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন–

"তারা (টিআইবি) রিপোর্ট প্রকাশের দিন মন্ত্রণালয়ে কপি পাঠিয়েছে, যা সম্পূর্ণই মিথ্যা।"

এ প্রসঙ্গে জানাতে চাই যে, প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবেদনের সারমর্ম টিআইবির ওয়েবসাইটসহ গণমাধ্যমের সহায়তায় প্রচার করা হয়; এরপর পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটির সফট কপি ২ জুলাই সন্ধ্যায় ই-মেইলের মাধ্যমে মাননীয় মন্ত্রী, তাঁর পিএস, এপিএস, শিক্ষা সচিব, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এসোসিয়েশনের সভাপতির বরাবরে প্রেরণ করা হয়।

প্রতিবেদনের হার্ড কপি ৩ জুলাই টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালকের স্বাক্ষরে এক পত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব এবং এসোসিয়েশন অব নন-গভর্নমেন্ট ইউনিভার্সিটিজ অব বাংলাদেশ-এর সভাপতির কাছে বাহক মারফত প্রেরণ করা হয়। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী এবং শিক্ষা সচিবের কাছে প্রেরিত পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনটি ৩ জুলাই অনুমানিক ২:৪৫ মিনিটে সচিবালয়ের পত্র গ্রহণ শাখায় গ্রহণ করা হয়।

সুতরাং "গত ৭ জুলাই, সোমবার আনুমানিক পৌনে একটায় কেউ একজন একটি রিপোর্টের কপি জমা দিয়ে গেছেন" মর্মে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর প্রবন্ধে উল্লিখিত বক্তব্য তথ্যনিষ্ঠ নয়।


৪.

উল্লেখ্য, আমাদের প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর ৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সম্মানিত চেয়ারম্যানের সঙ্গে সে সময় ঢাকার বাইরে অবস্থানরত টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে কথা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিনকে উদ্ধৃত করে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের প্রেক্ষিতে টিআইবি জানাতে চায় যে, প্রতিবেদন প্রকাশের পর অধ্যাপক এমাজউদ্দিন মূল গবেষককে ফোনে গবেষণাটির জন্য ধন্যবাদ জানান এবং 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সুশাসনের সমস্যা গ্রহণযোগ্য নয়' মর্মে অভিমত ব্যক্ত করেন। নির্বাহী পরিচালককেও তিনি একই অভিমত ব্যক্ত করেন।

৫.

ভিত্তিহীন, প্রমাণহীন ও উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট সমর্থন না করে তা 'পুনঃবিবেচনার' মাধ্যমে মন্ত্রী মহোদয় টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের প্রতি 'সঠিক অবস্থান' গ্রহণের যে আহবান জানিয়েছেন, তাকে স্বাগত জানিয়ে এ ব্যাপারে টিআইবির বক্তব্য হচ্ছে–

পুনঃবিবেচনার পর এটি সুস্পষ্ট যে, আলোচ্য গবেষণা প্রতিবেদনটি আন্তর্জাতিক গবেষণা পদ্ধতির মানদণ্ড অনুসরণ-পূর্বক প্রণীত এবং এর ফলাফলে বাস্তবতাই প্রতিফলিত হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করাই এই গবেষণার উদ্দেশ্য। আংশিক বা অমনোযোগী পাঠ, বিশেষ দৃষ্টিভঙ্গীতে বিচার ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে গবেষণাটি বিভিন্নরূপে প্রতিভাত হতে পারে। সুতরাং টিআইবির প্রতিবেদনটি 'ভিত্তিহীন, প্রমাণহীন ও উদ্দেশ্যমূলক' মর্মে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য যথার্থ নয়।

৬.

শিক্ষামন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি কমিয়ে আনতে যে নিরলস পরিশ্রম করছেন, টিআইবির গবেষণায় প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন ঘটেছে। টিআইবি পরিচালিত জাতীয় খানা জরিপ ২০১২এ শিক্ষা খাতে দুর্নীতি হ্রাসের চিত্র এবং ২০১৩ সালে শিক্ষার উপর বৈশ্বিক দুর্নীতি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে শিক্ষা খাতে দুর্নীতির ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় ইতিবাচক অবস্থানের চিত্র প্রকাশিত হওয়ায়, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী একাধিকবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টিআইবিকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন যা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

৭.

বিশেষ নিবন্ধে শিক্ষামন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন যে কিছু প্রতিষ্ঠানে 'অনিয়ম, ব্যর্থতা, স্বার্থ ও মুনাফালোভী মনোভাবসহ অনেক চ্যালেঞ্জ' বিদ্যমান রয়েছে। যদিও রাজনৈতিক নেতৃত্বের একাংশ কর্তৃক প্রায়শই গণমাধ্যমের তথ্যের ঢালাওভাবে অবমূল্যায়ন করা হয়, তারপরও বলতে চাই মাননীয় মন্ত্রীর উল্লিখিত বক্তব্যের সমর্থনে অনেক প্রামাণ্য চিত্র পাওয়া যাবে এই বিষয়ে সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের দ্বৈবচয়নের মাধ্যমে নির্বাচিত বিশ্ববিদ্যালয়-ভিত্তিক প্রতিবেদনের প্রতি দৃষ্টি ক্ষেপণ করলে।

নিঃসন্দেহে ঢালাওভাবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে হেয় করবার উদ্দেশ্যে নয় বরং দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতে বিরাজমান সুশাসনের সমস্যাসমূহ দূরীকরণে এই প্রতিবেদন প্রণয়ন করা হয়। এ কথা সকলেরই জানা যে, ৭৯ টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই সুশাসন ও মানসম্মত শিক্ষা বিদ্যমান রয়েছে; অন্যদিকে অনেক ক্ষেত্রে এর উদ্বেগজনক ঘাটতি বিদ্যমান।

উল্লেখ্য, সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২৬ জুন, ২০১৪ তারিখে সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান অনিয়ম ও দুর্নীতির ওপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় যে প্রতিবেদন দিয়েছেন যেখানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান ২৮ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি চিহ্নিত করা হয়েছে যার অধিকাংশই টিআইবির গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের অনুরূপ।

৮.

শিক্ষামন্ত্রী অভিযোগ করেছেন বিভিন্ন স্তরে অর্থ প্রদানের পরিমাণের কথা বলা হলেও কাকে, কোন কাজে, কোন সময় ঘুষ দেওয়া হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যই দেওয়া হয়নি। উল্লেখ করা প্রয়োজন, গবেষণার তথ্যানুসন্ধানের সঙ্গে পুলিশি বা আইনি তদন্তের মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করা হয় স্বীকৃত পদ্ধতিতে তথ্য যাচাইকরণের মাধ্যমে। একটি তথ্যের অভ্যন্তরীন সঙ্গতি এবং প্রাপ্ত অপরাপর তথ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা পরীক্ষা করা হয় এবং একটি সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ভিন্ন ভিন্ন একাধিক সূত্র হতে নিশ্চিতকরণের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তথ্য গ্রহণ করা হয়। অনিয়ম ও দুর্নীতির গবেষণায় তথ্যদাতাকে পূর্ণ গোপনীয়তার প্রতিশ্রুতি প্রদান ছাড়াও তথ্য যথাসম্ভব নৈর্ব্যক্তিক আকারে গ্রহণ করা হয়।

বর্তমান গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে কর্তৃপক্ষ যদি অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, তাহলেই হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরা প্রতারণা ও বঞ্চনার ঝুঁকিমুক্ত হবেন এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় খাতটিরও সার্বিক উন্নতি ও বিকাশ নিশ্চিত করা যাবে।

ঘুষ প্রদান ও গ্রহণ উভয়ই বেআইনি, তাই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদেরকে সরকারিভাবে ডেকে শতবার প্রশ্ন করা হলেও ঘুষ লেনদেন বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যাবে না। কেবলমাত্র বস্তুনিষ্ঠ গবেষণার মাধ্যমেই প্রকৃত চিত্র অনুধাবন সম্ভব, যা টিআইবির গবেষণায় তুলে ধরা হয়েছে।

অন্যদিকে অনিয়ম ও অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশনের স্বীকৃত মাধ্যম রয়েছে, যার এখতিয়ার টিআইবির নেই, রয়েছে সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে।

৯.

নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা বা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার যে নিয়মাবলী মন্ত্রী মহোদয় বিবৃত করেছেন সেটা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। কিন্তু তথ্যদাতারা যা বলেছেন তা এই যে, এই প্রক্রিয়াগুলি সম্পন্ন করতে বিভিন্ন অংকের অর্থ ব্যয় করতে হয়। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয় ব্যক্তিগত সততা ও নিষ্ঠার জন্যে সকল মহলে সুপরিচিত। তবে টিআইবির গবেষণায় প্রাপ্ত অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য তিনি যেভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন, তাতে তিনি বাস্তবে যারা অনিয়মে জড়িত তাদেরই সমর্থন ও সুরক্ষা দেওয়ার সমতুল্য অবস্থান নিয়েছেন।

১৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় যে সনদ-বাণিজ্য করে সে সম্পর্কে মাননীয় মন্ত্রীর বক্তব্যও ইতোমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশে গিয়ে উচ্চশিক্ষার পরিবর্তে দেশে কম খরচে লেখাপড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সত্য, তার স্বীকৃতি টিআইবির প্রতিবেদনে রয়েছে, রয়েছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদান ও সম্ভাবনার বিশ্লেষণ। তবে অন্যদিকে এ খাতের কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানের হাতে নিরপরাধ তরুণদের উচ্চশিক্ষার আকাঙ্ক্ষা যে বাণিজ্যিক পণ্যে রূপান্তরিত হয়েছে তা অস্বীকার করা কতটুকু যৌক্তিক তা মাননীয় মন্ত্রী দয়া করে ভেবে দেখতে পারেন।

একই ভাবে বিদেশি শিক্ষার্থীরা যে এদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ গ্রহণ করছে সে কারণেও অনিয়ম, দুর্নীতি দূর করে শিক্ষার মান বজায় রাখতে আশু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

১০.

আমরা মর্মাহত যে কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে বারবার টিআইবির প্রতিবেদনে প্রাপ্ত নেতিবাচক দিকগুলিই উল্লেখ করা হচ্ছে। অথচ টিআইবি তার প্রতিবেদনে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ সম্পর্কে যে বিশ দফা ইতিবাচক পর্যবেক্ষণের কথা বলেছে তার প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছেন না। এই খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধে যে সুপারিশমালা উপস্থাপন করেছে টিআইবি, তাতেও গুরুত্ব দিচ্ছেন না।

১১.

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য "শিক্ষা মন্ত্রণালয় (পুরো শিক্ষা পরিবার) তো কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়, সমাজের যে সকল ব্যাধি আছে তা দ্বারা এটিও আক্রান্ত হওয়া স্বাভাবিক"– এই চিত্রটিই টিআইবি তার গবেষণার মাধ্যমে তুলে ধরেছে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নের যে লড়াইয়ে অবতীর্ণ, আমাদের কাছে তার মূল্য অপরিসীম। তাঁর নেতৃত্বে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিচালিত সকল দুর্নীতিবিরোধী কর্মকাণ্ডে সহায়ক ভূমিকা পালনের জন্যেই টিআইবির এ গবেষণা ও সুপারিশমালা।

১২.

বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে গবেষণা প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিশনের এই পদক্ষেপে আমরা স্বাগত জানাই। আশা করি সংশ্লিষ্ট কমিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সুশাসনের অভাবের প্রতিকারে টিআইবির উত্থাপিত সুপারিশগুলো অবশ্যই আমলে নেবেন।

টিআইবি আরও আশা করে যে, আলোচ্য প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান না করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মঞ্জুরি কমিশন উচ্চশিক্ষা নিয়ে চলমান সুশাসনের ঘাটতি থেকে উত্তরণে কালক্ষেপণ না করে কঠোর ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে দক্ষ জনশক্তি ও পর্যাপ্ত জনবল প্রদান করবে। সর্বোপরি দেশের বাস্তবতার বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি ও ভর্তি ফি কমিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মানের তারতম্য দূর করে সর্বস্তরে গুণগত মানসম্মত শিক্ষা প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

প্রতিবেদনে উপস্থাপিত ১৬ দফা সুপারিশ আমলে নিয়ে এ খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকরভাবে এগিয়ে যাবার অবকাশ রয়েছে বলে আমরা মনে করি।

টিআইবির পক্ষে:

মোহাম্মদ রফিক হাসান: পরিচালক, গবেষণা বিভাগ।

রিজওয়ান-উল- আলম: পরিচালক, আউটরিচ ও যোগাযোগ বিভাগ।