বাংলাদেশ-ভারত সমুদ্রসীমা নির্ধারণ: আইনি জয়ের রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত

মোহাম্মদ সেলিম
Published : 11 July 2014, 11:53 AM
Updated : 11 July 2014, 11:53 AM

দিন কয়েক আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকা ঘুরে গেলেন। বিজেপি সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এটা ছিল তাঁর প্রথম বিদেশ সফর। এই সফরের মূল্যায়ন হিসেবে পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশনে যথেষ্ট আলোচনা, প্রবন্ধ লক্ষ্য করা গেছে। আমি এর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না।

একটি কথা বলে আলোচনার মূলে যাচ্ছি, তা হল, দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র, এটা অস্বীকারের জো নেই। বর্তমানে ভারতে এবং বাংলাদেশে আদর্শগতভাবে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোনো মিল নেই। বরং বিপরীত মূল্যবোধের দল বললে অত্যুক্তি হয় না। তারপরও বিজেপি ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ যথার্থ উপলব্ধি করেছেন যে, দু'দেশের জাতীয় স্বার্থে সৎ প্রতিবেশিসুলভ, সৌহার্দ্য, সম্প্রীতির সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে হবে। বিজেপি সরকারের মেয়াদে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি নয় বরং নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবার সদিচ্ছা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করেছেন সুষমা স্বরাজ।

বাংলাদেশ ভারতের অমীমাংসিত ইস্যুর তালিকা বেশ দীর্ঘ তা আমরা জানি। এর মধ্যে বাংলাদেশের দিক থেকে রয়েছে তিস্তা চুক্তি, সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রতা, বিশেষভাবে ছিটমহল বিনিময়ে অনাগ্রহ, দু'দেশের সমুদ্রসীমা চিহ্নিত না করা, প্রতিকূল বাণিজ্য ঘাটতি, সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা ইত্যাদি। অন্যদিকে ভারতের দিক থেকে ইস্যুগুলো হল অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সহায়তাদান, ট্রানজিট ইত্যাদি।

নানা কারণে দুই দেশের অমীমাংসিত ইস্যুগুলো বেশ জটিল হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশ-ভারতের স্থল সীমান্তের দৈর্ঘ্য ৪,০৫৩ কিলোমিটার যা বিশ্বের চতুর্থ দীর্ঘতম সীমান্ত। এই বিশাল সীমান্তের দুটি দেশে কিছু সমস্যা তো প্রাকৃতিকভাবেও সৃষ্টি হয়। এর সঙ্গে রাজনীতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক প্রভাব, দুই দেশের ইতিহাস, রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও আমলাদের মাইন্ডসেট প্রভৃতি নিয়ামক ভূমিকা পালন করে।

অতিসম্প্রতি দুই দেশের সমুদ্রসীমা বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। আমরা জানি, দুই দেশের সরকারের মধ্যে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। নেদারল্যান্ডের স্থায়ী সালিশি আদালতের রায়ের মাধ্যমে তা অর্জিত হয়েছে। তাতে উভয় দেশের সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জানিয়েছেন, ভারত এ রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। রায়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত বিষয়ের সুরাহা হওয়ায় দুই দেশের পারস্পরিক বোঝাপড়া ও সদিচ্ছা আরও জোরদার হবে।

বাংলাদেশের গণমাধ্যমেও রায় প্রশংসিত হয়েছে বলা যায়। কিন্তু বাংলাদেশের একটি প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি জানিয়েছে, সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশ অধিকারবঞ্চিত হয়েছে। বিএনপি নেতা সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন বলেছেন, "প্রেসিডেণ্ট জিয়াউর রহমানের আমল থেকে এ দ্বীপটি আমাদের ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে দাবি করা হয়ে আসছে। অথচ রায়ে এ দ্বীপটি আমাদের সমুদ্রসীমার মধ্যে পড়েনি।"

রায়ের পূর্ণাঙ্গ আলোচনায় স্পষ্ট ধরা পড়ে বিএনপি নেতার বক্তব্যে ফাঁক এবং ফাঁকি দুটোই বিদ্যমান। যে কোনো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এ ধরনের অসত্য, বিভ্রান্তিকর বক্তব্য একেবারে অনাকাঙ্ক্ষিত। মনে রাখা প্রয়োজন, সামরিক-বেসামরিক আবরণে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় প্রায় আঠার বছর দেশ শাসন করেছে বিএনপি। আওয়ামী লীগের শাসনকাল প্রায় চৌদ্দ বছর। এর মাঝে জাতীয় পার্টি দশ বছর সামরিক শাসন চালিয়েছে।

তাই আজকে যখন বিএনপি নেতা বলেন, বাংলাদেশ অধিকারবঞ্চিত হয়েছে, তখন একটি প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই এসে যায়– আঠার বছর ক্ষমতায় থাকাকালে সমুদ্রসীমা নির্ধারণে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কী কী পদক্ষেপ তারা নিয়েছেন? সমুদ্রসীমা-সংক্রান্ত রায়ের পর্যালোচনার পাশাপাশি বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর সরকারের ভূমিকারও বিশ্লেষণ প্রয়োজন।

গত আড়াই বছরে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের দুটি মাইলফলক যুক্ত হয়েছে। প্রথমটি, ২০১২ সালের ১৪ মার্চ জার্মানির সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে মিয়ানমারের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়। দ্বিতীয়টি, ৭ জুলাই, ২০১৪ নেদারল্যান্ডের স্থায়ী সালিশি আদালতে ভারতের বিপরীতে বাংলাদেশের বিজয়। দুটি রায়ের মধ্য দিয়ে প্রতিবেশি রাষ্ট্র দুটির সঙ্গে দীর্ঘদিনের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ সমস্যার সুরাহা সম্ভব হয়।

বঙ্গোপসাগরে ভারতের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ২৫,৬০২ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে আদালতের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশ পেয়েছে ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার এবং ভারত পেয়েছে ৬,১৩৫ বর্গ কিলোমিটার। এর আগে মিয়ানমারের সঙ্গে বিরোধপূর্ণ ৮০,০০০ বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে ৭০,০০০ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ লাভ করে। সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশ ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের রাষ্ট্রীয় সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল একচেটিয়া অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল মহীসোপান এলাকায় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে।

এই রায়ের ফলে ২০০ নটিক্যাল মাইলের বাইরে মহীসোপানে বাংলাদেশের অবাধ প্রবেশাধিকার সুরক্ষিত হয়েছে। নতুবা ভারত ও মিয়ানমার যেভাবে সমদূরত্বের ভিত্তিতে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের দাবি তুলেছিল, তাতে বাংলাদেশের উন্মুক্ত সমুদ্রে যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ত। বাংলাদেশ sea locked country তে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা ছিল। কারণ বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা তখন হত মাত্র ১৩০ নটিক্যাল মাইল।

আরও গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ এবং সমুদ্রের তলদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মৎস্য আহরণে এক অপার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে প্রতি বছর ৬ মিলিয়ন টন মাছ ধরা হয়, সেখানে আমাদের অংশ ছিল মাত্র ০.২৯ মিলিয়ন টন। তেল অনুসন্ধানের ২৮টি ব্লকের অধিকাংশের মালিকানাই বাংলাদেশ লাভ করেছে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার ১৭টি এবং ভারত ১০টি তেল ক্ষেত্রের সীমানা নিয়ে আপত্তি জানায়। দুটি রায়ের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারের আপত্তিকৃত ১৭টির মধ্যে বাংলাদেশ পায় ১২টি এবং ভারতের ১০টিই বাংলাদেশ লাভ করে। এর মধ্যে ৫, ৯, ১৪, ১৯ এবং ২৪ নম্বর ব্লকের সামান্য অংশ ভারত পায়। আদালতের রায়ের মাধ্যমে বিশাল তেলক্ষেত্রের উপর বাংলাদেশের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

সমুদ্রসীমা নির্ধারণে উদ্যোগ: বঙ্গবন্ধু থেকে শেখ হাসিনা

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৪ সালের গোড়ার দিকে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়ে সক্রিয় হয়ে ওঠে। এর তাৎক্ষণিক প্রেক্ষাপট তৈরি করেছিল আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি। ১৯৭২ সালের অক্টোবর থেকে তেলের দাম তিন ডলার দশ সেন্ট থেকে লাফিয়ে ১৯৭৩ এর গোড়ায় প্রায় সাত ডলার এবং মাঝামাঝিতে প্রায় দশ ডলারে পৌঁছাল। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের তলদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস, তেল এবং অন্যান্য খনিজ সম্পদ পাবার অফুরান সম্ভাবনা।

এ প্রেক্ষিতে It was a challenging task for Bangladesh to delineate the maritime boundary, it expected the exploration of the sea-bed to lead to new oil finds in the off-shore region. এই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য ভারতকে আলোচনার আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ভারতের কাছ থেকে ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। "There was no response from India. "

কার্যত ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝি থেকেই বাংলাদেশ সরকারের প্রাকৃতিক সম্পদ বিভাগের তত্ত্বাবধানে মূল ভূখণ্ডের পাশাপাশি মহীসোপানে তেল অনুসন্ধান ও উত্তোলন করার জন্য বিভিন্ন তেল উত্তোলনকারী দেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলাপ আলোচনা শুর হয়। উপপ্রধানমন্ত্রী সৈয়দ নজরল ইসলামকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট কেবিনেট কমিটি গঠন করা হয়, তেল সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াবলী বিবেচনার জন্য। এই কমিটি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

ক. আনুমানিক ৫ হাজার বর্গমাইল এলাকা বিশিষ্ট সাতটি ব্লকে বঙ্গোপসাগরকে ভাগ করা হবে।

খ. প্রস্তাবদানকারী ৪০টি তেল-সন্ধানী সংস্থার মধ্য থেকে ছয়টি কোম্পানি বাছাই করে ছয়টি ব্লক ইজারা দেওয়া হবে (সপ্তম ব্লকটি একটি সম্ভাব্য বাঙালি প্রতিষ্ঠানের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়)।

গ. ইজারাপত্রের খসড়া শর্তাদি নিরূপণ ইত্যাদি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তুত হবে, কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন তেল উত্তোলনকারী দেশের সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের আগে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয় বাংলাদেশের দিক থেকে ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সংবিধানের ১৪৩ নং অনুচ্ছেদের (২) নং ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত Territorial Waters and Maritime Zones Act. 1974 জারি করে। যা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয় ১৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৪। এই আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ সরকার আঞ্চলিক বা উপকূলীয় সমুদ্র অঞ্চল, সন্নিহিত বা সংলগ্ন সমুদ্র অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল, সংরক্ষিত এলাকা, মহীসোপান বিষয়ে বাংলাদেশের আইনগত কর্তৃত্বের ঘোষণা দেয়।

সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত এই আইনের ঘোষণা নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। তখনও পর্যন্ত সমুদ্রসীমা বিষয়ে কোনো সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়নি, তবে সমুদ্র আইন নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলাপ-আলোচনা চলছিল। বাংলাদেশ সরকার Territorial Waters and Maritime Zones Act. 1974 জারির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের আলোচনায় কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৩ এপ্রিল, ১৯৭৪ ঘোষণা করে যে সমুদ্র তটরেখা থেকে ১২ নটিক্যাল মাইল হবে বাংলাদেশের আঞ্চলিক বা উপকূলীয় সমুদ্র অঞ্চল এবং অর্থনৈতিক অঞ্চলের সীমা হবে সমুদ্র তটরেখা থেকে উন্মুক্ত সমুদ্রের ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশ সরকার একপাক্ষিকভাবে ঘোষণা দেয়– it would fix its baselines on the basis of the depth method.

বিশেষ ধরনের তটরেখার কারণে বাংলাদেশ উপকূল সমুদ্রের ১০ ফ্যাদম (৬০ ফুট) গভীরতা পর্যন্ত জলসীমা তটরেখার অভ্যন্তরীন হিসেবে গ্রহণ করে। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ উপকূল রেখা থেকে ২৫.৬ কিমি হতে ৪৮ কিমি দূরত্বে ১০ ফ্যাদম গভীরতায় বাংলাদেশের তটরেখা নির্দিষ্ট করা হয়।

সমুদ্রসীমার বিষয়টি কেবল দ্বিপাক্ষিক বিষয় ছিল না, আঞ্চলিক সমুদ্রসীমা, একক অর্থনৈতিক এলাকা, মহীসোপান, সমুদ্রগর্ভে নিহিত নানা মূল্যবান খনিজ সম্পদ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্র-সমস্যার উদ্ভব হয়। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের লক্ষে ১৪৮ দেশের দেড় হাজার প্রতিনিধি ২৯ জুন, ১৯৭৪ থেকে আড়াই মাসব্যাপী এক সম্মেলনে মিলিত হয়। ভেনিজুয়েলার কারাকাসে জাতিসংঘ আয়োজিত এই তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বাংলাদেশ সমুদ্র বিষয়ক তার দাবি জোরালোভাবে তুলে ধরতে সমর্থ হয়।

সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী। সম্মেলনে তিনি ঘোষণা করেন–

Bangladesh claimed exclusive jurisdiction over the 200 mile economic zone for the exploration and exploitation of natural resources.

এছাড়া তিনি সন্নিহিত অঞ্চল, সংরক্ষিত এলাকায় বাংলাদেশের অধিকার ও বাংলাদেশের উপকূলভাগের বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে তটরেখা নির্ধারণের বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করেন। কারণ গঙ্গা নদীর মোহনা ব-দ্বীপ এমন যে, এখানে স্থিতিশীল অগভীর জলরেখা অথবা স্থলভাগমুখী ও সমুদ্রাভিমুখী সীমারেখা নেই। অনবরত পলি জমার ফলে চড়ার সৃষ্টি হয় এবং সমগ্র এলাকা এত অগভীর যে ছোট ছোট নৌকা ছাড়া এখানে অন্য কোনো জলযান চলাচল করতে পারে না।

এমন প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তটরেখা নির্ণয়ের নতুন ফর্মূলার দাবি তোলা হয়। তা হল, the baseline may be drawn from a depth not exceeding ten fathoms.

বাংলাদেশ সরকার সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝি বিদেশি তেল কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির উদ্যোগ নেয়। তেল সংক্রান্ত কেবিনেট কমিটি সমগ্র বঙ্গোপসাগর ৬টি ভাগে বিভক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান ও যুগোশ্লাভিয়ার কোম্পানিগুলোর সঙ্গে লেটার অব ইনডেন্ট স্বাক্ষর করে।

বাংলাদেশ সরকারের এককভাবে সমুদ্রসীমা আইন ঘোষণা এবং তেল অনুসন্ধানের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বিদেশি কোম্পারির সঙ্গে চুক্তি সম্পাদনের প্রেক্ষিতে ভারত সরকার ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে এক প্রতিবাদলিপিতে বাংলাদেশ সরকারকে জানায় যে, বাংলাদেশের দাবিকৃত উপকূলীয় সমুদ্র অঞ্চলের মধ্যে ২১ মাইল ভারতীয় এলাকা রয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনৈক কর্মকর্তা বলেছেন যে, এটা ছিল বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রেরিত ভারতের প্রথম প্রতিবাদলিপি।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াই বি চ্যবন ৭-১০ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময়ে দ্বিপাক্ষিক নানা বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো ইস্যুতে নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়নি। তবে বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক ইস্যুতে বাংলাদেশের কঠোর মনোভাবের সমালোচনা করেন তিনি।

বঙ্গোপসাগর এলাকায় তেল অনুসন্ধানের কাজ বন্ধ রাখার প্রস্তাব ভারত বাংলাদেশকে দিয়েছিল। এ প্রসঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব কেওয়াল সিং বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার সাধারণ সমুদ্রসীমা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে জ্বালানি তেল অনুসন্ধানের কাজ শুরু করা যেতে পারে না। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার ভারতের প্রস্তাব গ্রহণ করেনি।

সমুদ্রসীমা নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠক দিল্লিতে শুরু হয় ২৯ মার্চ, ১৯৭৫। তিন দিনব্যাপী আলোচনায় 'ব্যাপক মতপার্থক্যের' কারণে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ সম্ভব হয়নি। অচলাবস্থা অবসানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধী হস্তক্ষেপ করেন। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের কয়েকজন সদস্য ইতোমধ্যেই দেশে ফেরার জন্য বিমান বন্দর অভিমুখে যাত্রা করেছেন। তখন মিসেস গান্ধীর কাছ থেকে আরেক দফা বৈঠকের সুপারিশ জানিয়ে এক বাণী আসে। এতে আলোচনা আরও এক দিনের জন্য বিলম্বিত হয়।

এ সময়ে সমুদ্রসীমা নিয়ে আলোচনায় রাজনৈতিক পর্যায়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়। ড. কামাল হোসেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সচিব পি এন ধরের সঙ্গে ১ ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে মিলিত হন। সমুদ্রসীমা বিষয়ে মিসেস গান্ধী ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে দু'দফা আলোচনা করেন। এটা অচলাবস্থা নিরসনে তাঁর ব্যক্তিগত আগ্রহের পবিচায়ক। এটি ছিল দু'দেশের মধ্যে ৬ষ্ঠ দফা বৈঠক। এই বৈঠকে সমুদ্রসীমা বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার ভার বাংলাদেশের রাষ্টপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস গান্ধীর ওপর ন্যস্ত করা হয়।

উল্লেখ্য, ভারত ইতোমধ্যে সমদূরত্ব নীতি অনুসারে শ্রীলঙ্কা, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড এবং মালদ্বীপের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিরূপণ করেছে। ফলে বাংলাদেশের সঙ্গেও একই নীতির আলোকে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের জন্য ভারত জোরালো অবস্থান নেয়। বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের কাছে ভারতীয় প্রস্তাব ছিল অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত। ভারতীয় প্রস্তাব গ্রহণ করলে বাংলাদেশ যে এলাকায় তেল উত্তোলনের জন্য বিদেশি তেল কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে তা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে।

উপরন্তু, প্রস্তাবিত ভারতীয় সমুদ্রসীমা বাংলাদেশের নিকট গ্রহণযোগ্য ছিল না; কারণ এতে বাংলাদেশের sea-locked countryতে পরিণত হবার আশংকা ছিল।

দু'দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক পর্যায়ে সমুদ্রসীমা ইস্যু আলোচিত না হলেও, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে ইস্যুটির সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়। দু'দেশের মধ্যে মতবিরোধ কমিয়ে আনতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সহযোগিতা করেন।

কর্মকর্তা পর্যায়ে ঢাকা বৈঠকের সময়ও মিসেস গান্ধী বাংলাদেশের বক্তব্য শোনার আগ্রহ প্রকাশ করলে, বাংলাদেশের একজন কূটনীতিকের বক্তব্য বাণীবদ্ধ করা হয়। কারণ She (Mrs. Gandhi) did not want to hear the "Indian version" of Bangladesh's case.

বঙ্গবন্ধুর সময়কালে শেষ পর্যন্ত সমুদ্রসীমা সংক্রান্ত কোনো চুক্তি সম্পাদন সম্ভব হয়নি। সমুদ্রসীমা নিয়ে ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহের সম্ভাব্য সভা আর অনুষ্ঠিত হয়নি বাংলাদেশের রক্তাক্ত সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে।

জিয়াউর রহমানের আমলে দ্বি-পাক্ষিক আলোচনার ক্ষেত্রে সমুদ্রসীমার আলোচনা তেমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেনি। এ প্রসঙ্গে তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অমীমাংসিত দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলোর মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি যথার্থ গুরত্ব পায়নি। সমুদ্রসীমা নির্ধারণের প্রশ্নে বাংলাদেশ জোরালো অবস্থান নিতে পারেনি। জিয়ার আমলে সমুদ্রসীমা নিয়ে মন্ত্রী পর্যায়ে কোনো আলোচনাই অনুষ্ঠিত হয়নি। মাত্র দু'টি সভা অনুষ্ঠিত হয় এবং দুটোই কর্মকর্তা পর্যায়ে। উল্লেখযোগ্য ফলাফলও পাওয়া যায়নি সভাগুলো থেকে। তবে গণমাধ্যমে, দু'দেশের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে এবং সমকালীন আন্তর্জাতিক সমুদ্র সম্মেলনে এ সংক্রান্ত আলোচনা অব্যাহত ছিল।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে দক্ষিণ তালপট্টি ইস্যু

বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার দক্ষিণ তালপট্টি কার্ড ব্যবহারের চেষ্টা হচ্ছে। খুলনার হাড়িয়াভাঙা নদীর মোহনায় জেগে ওঠা দ্বীপটি, বাংলাদেশে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপ এবং ভারতে নিউমুর আইল্যান্ড বা পূর্বাশা দ্বীপ নামে পরিচিত। দ্বীপের আয়তন, মালিকানা, অবস্থান এমনকি অস্তিত্ব সব কিছু নিয়েই বির্তক রয়েছে।

আকৃতি সম্পর্কে বলা হয়, এটি ইংরেজি বর্ণমালার 'ইউ' অক্ষরের মতো এবং এর পূর্বপ্রান্ত উত্তর দিকে বিস্তৃত। ভাটার সময় ১৯৭৮ সালে এর আনুমানিক আয়তন ছিল প্রায় দু' বর্গমাইল। দ্বীপের আয়তনগত দিকটি হয়তো মূখ্য না হলেও, দু'দেশের মধ্যে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের সময় দ্বীপের মালিকানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে ।

১৯৪৭ সালের র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী খুলনার সীমান্ত নদী হাড়িয়াভাঙ্গার মূল খাদের মধ্যকার স্রোত হচ্ছে এ এলাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের সীমানা। সীমান্ত নদী হাড়িয়াভাঙা ও অভ্যন্তরীন নদী রাইমঙ্গলের মোহনায় ১৯৭০ সালের দিকে এক নতুন ভূখণ্ড ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। ১৯৭১ সালের কোনো এক সময় দ্বীপটির অবস্থান সম্পর্কে যুক্তরাজ্যের নৌ-কর্তৃপক্ষকে ভারত অবহিত করে। ১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী দ্বীপের অস্তিত্ব সম্পর্কে সরকারকে অবহিত করে। কিন্তু জিয়া সরকার দ্বীপের মালিকানা নিয়ে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়নি। ১৯৮০-১৯৮১ সালের দিকে দ্বীপের মালিকানা নিয়ে দু'দেশের মতবিরোধ তুঙ্গে উঠে।

তখন এই দ্বীপের মালিকানা দাবি করে ভারতের বিরুদ্ধে বিএনপি যে পদক্ষেপ নিয়েছিল তা কতটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল, আর কতটা আইনানুগ ছিল তা নিয়ে আর অযথা বিতর্কের চেষ্টা করা অর্থহীন। মূল কথা হল, হেগের স্থায়ী আদালতে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের মালিকানা বিবেচনার বিষয় ছিল না। উপরন্তু, ভারত বা বাংলাদেশ কোনো পক্ষই এই দ্বীপের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারেনি।

২০১৩ সালের অক্টোবরে বঙ্গোপসাগর সরেজমিন পরিদর্শনকালে স্থায়ী সালিশি আদালতের বিচারকগণ তালপট্টির অস্তিত্ব দেখতে পাননি। এমনকি ভারত বিশেষ ক্যামেরার সাহায্যে দ্বীপটি দেখানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের কোনো মানচিত্রে তালপট্টি দ্বীপের অস্তিত্ব নেই। ২০১০ সালে শেখ হাসিনার সরকার তালপট্টি অন্তর্ভুক্ত করে মানচিত্র সংশোধনপূর্বক আদালতে প্রেরণ করে। কিন্তু আদালত তা গ্রহণ করেনি।

উপরন্তু বাস্তবতা হল, এটা ছিল মূলত বালির দ্বীপ। ১৯৮৫ সালে উড়িরচরের ঝড়ের পর এটি সমুদ্রে তলিয়ে যায়। ১৯৮৯ সালে স্যাটেলাইটের ধারণ করা ছবিতে এর অস্তিত্ব আর পাওয়া যায়নি। সুতরাং যে দ্বীপের অস্তিত্ব নেই তা হারানোর কথা বলছে বিএনপি! তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে যুক্তি-প্রমাণ ছাড়া কেবল মিথ্যার বেসাতি করে পার পাওয়া যাবে না।

দু'টি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন, তা হল, দক্ষিণ তালপট্টির অস্তিত্ব প্রমাণে ভারত সমর্থ হলে, আদালতে তাদের দাবি অনুযায়ী সমদূরত্বের পক্ষে জোরালো অবস্থান নিতে পারত। তাহলে বিএনপি কাদের স্বার্থে কথা বলছে?

দ্বিতীয়ত বাংলাদেশ-ভারতের সমুদ্রসীমা রায়টি হয়েছে ১৯৪৭ সালের র‌্যাডক্লিফের মানচিত্রের ভিত্তিতে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রায়ের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হাড়িয়াভাঙ্গা নদী পেয়েছে বাংলাদেশ, যা এতদিন ভারতের অংশ ছিল। তারপরও দেশের এই বিশাল সাফল্যে বিএনপির খুশি হতে পারেনি।

সবশেষে বলা যায়, সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়টি বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ছিল। আর এই বিরোধের জন্ম হয়েছে সম্ভবত দুটো কারণে। প্রথমত, সমুদ্র তলদেশে সম্ভাব্য সম্পদরাজি; দ্বিতীয়ত, পলি জমে জমে সমুদ্রের উপরিভাগে সৃষ্ট নতুন ভূখণ্ড। একটি উপকূলবর্তী রাষ্ট্র হিসেবে পশ্চিম প্রান্তে ভারত আর পূর্ব প্রান্তে বার্মার সঙ্গে রয়েছে এর সংলগ্নতা। কিন্তু কোনো রাষ্ট্রের সঙ্গেই দীর্ঘকাল সমুদ্রসীমা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি।

লক্ষণীয় বিষয় হল, বঙ্গবন্ধু সমুদ্রসীমা নির্ধারণে যে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিলেন তা পরবর্তীতে অব্যাহত থাকেনি। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ সরকার সমুদ্রসীমা বিষয়ে যে আইন জারি করে তা আন্তর্জাতিক আইনের ক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। ৮ বছর পরে ১৯৮২ সালে সমুদ্র আইন বিষয়ক কনভেনশনে এর প্রতিফলন দেখা গেছে।

কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুকে 'ভারতপন্থী' হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক কোনো ইস্যুতে বঙ্গবন্ধু ভারতকে ছাড় দিয়েছেন এমন কোনো নজির নেই। বঙ্গবন্ধুর হাতেই সমুদ্রসীমা নির্ধারণের আইনি লড়াইয়ের ভিত্তি রচিত হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনক হল, জেনারেল এরশাদ ও খালেদা জিয়ার সরকার সমুদ্রসীমা নির্ধারণে সম্পূর্ণ উদাসীনতার পরিচয় দিয়েছেন।

২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা জাতিসংঘ কনভেনশন অনুযায়ী আন্তর্জাতিক সালিশি ট্রাইব্যুনালে মিয়ানমার ও ভারতের বিপক্ষে সালিশি নোটিশ প্রেরণের সাহসী, দূরদর্শী একই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। ভারত এবং মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলায় পরাজিত হলে সমস্ত দায় এককভাবে শেখ হাসিনার ওপর চাপানো হত। বিশেষভাবে ভারতের সঙ্গে পরাজিত হলে 'দেশ বিক্রি'র অভিযোগে অভিযুক্ত করা হত তাঁকে।

বাংলাদেশের ভূখণ্ডের প্রায় সমপরিমাণ সমুদ্রসীমা অর্জিত হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে– এটা আজ ঐতিহাসিক সত্য। স্বাধীনতার পর শেখ হাসিনা ছাড়া আর কোনো সরকারপ্রধান দেশের জন্য এমন অনন্যসাধারণ, মহান অবদান রাখতে পেরেছেন বলে মনে হয় না। এর ফলে স্বাধীনতার চার দশক পর বাংলাদেশের মানচিত্র সম্পূর্ণতা পেল।

মোহাম্মদ সেলিম: অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।