বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এগিয়ে নেওয়ার সংগ্রাম ও টিআইবির রিপোর্ট

নুরুল ইসলাম নাহিদ
Published : 9 July 2014, 07:33 AM
Updated : 9 July 2014, 07:33 AM

আমাদের বিরুদ্ধে সমালোচনা ও ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়াকে আমরা সবসময় স্বাগত জানিয়েছি এবং আজও জানাচ্ছি। টিআইবির সমালোচনা ও ভুলত্রুটি ধরিয়ে দেওয়া, কোনো বিষয়ে পরামর্শ দেওয়াকেও স্বাগত জানাই। কিন্তু এসব বিষয় সত্য, বস্তুনিষ্ঠ, তথ্যপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত হতে হবে। তা না হলে ভালো কোনো কাজের সহায়ক না হয়ে তা ক্ষতিকর এবং সাধারণ জনগণ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে বিভ্রান্ত করবে।

সৎ উদ্দেশ্যে যদি কোনো ভুল সমালোচনাও করা হয় বা ভুল আক্রমণ করা হয় তাহলে আমি কখনও তার প্রতিবাদ না করে এ সকল বিষয় বারবার বোঝার চেষ্টা করি। আমার কোনো ভালো কাজও অন্যের দৃষ্টিতে ভুল মনে হচ্ছে কিনা তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করি, নিজেকে সতর্ক করি।

৩০ জুন আকস্মিকভাবে টিআইবি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর একটি 'গবেষণা রিপোর্ট' প্রকাশ করে। রিপোর্টটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে এবং গণমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে যে, তাতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ঢালাও সমালোচনা, আক্রমণ ও হেয় করা হয়েছে।

এতে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়েছে যে, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনে, উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ নিয়োগে এবং মঞ্জুরী কমিশনে বিভিন্ন বিষয়ে যে কোনো কাজে ঘুষ দিতে হচ্ছে, যা সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত। এসব বিষয়ে বিভিন্ন স্তরে অর্থ প্রদানের পরিমাণের কথা বলা হলেও কাকে, কোন কাজে, কোন সময় ঘুষ দেওয়া হয়েছে তার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্যই দেওয়া হয়নি। টিআইবির প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল, আমার কোনো বিদ্বেষ নেই, বরং এর অনেক কর্মকর্তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ও সম্মান বিভিন্ন সময় প্রকাশ্যেই বলেছি।

বলা হচ্ছে এই রিপোর্ট তারা দু'বছর ধরে 'গবেষণা' করে তৈরি করেছেন। তারা দু'বছর ধরে গবেষণা করলেন, কিন্তু তাদের মূল আক্রমণের লক্ষ্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও মঞ্জুরি কমিশনের সঙ্গে একটি বারও যোগাযোগ করা বা তাদের কারও মতামত নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কোনো আলোচনা করেছেন বলে তথ্য দেননি তারা।

৩ জুলাই একটি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনায় উপস্থাপক টেলিফোনে এ গবেষকদের মধ্যে একজনসহ আমাকে ৩ মিনিট কথা বলার সুযোগ দেন। আমি প্রথমেই বলি, ''আমাদের সম্পর্কে বা আমাদের কাজের সমালোচনা সম্পর্কে টিআইবির যে কোনো বক্তব্য আমরা স্বাগত জানাই। তবে আমরা আশা করব তা সত্য, বস্তুনিষ্ঠ ও তথ্যবহুল হবে। টিআইবির প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল।''

আলোচনায় অংশগ্রহণকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক গোলাম রহমানের প্রশ্নের জবাবে আলোচনায় উপস্থিত টিআইবির ওই 'গবেষক' জানালেন, তারা রিপোর্ট প্রকাশের দিন মন্ত্রণালয়ে কপি পাঠিয়েছেন। গবেষকের বক্তব্য পুরোপুরি মিথ্যা। ৭ জুলাই, সোমবার আনুমানিক পৌনে একটায় সচিবালয়ের গেটে কেউ একজন একটি রিপোর্টের কপি জমা দিয়ে গেছেন। সেখান থেকে মন্ত্রণালয়ের রিসিভ শাখার মাধ্যমে আমরা তা পেয়েছি।

যিনি প্রকাশ্যে এ রকম একটা মিথ্যা কথা বলতে পারেন– তার রিপোর্ট সত্য বলে আমরা কীভাবে গ্রহণ করতে পারি? ওই টকশোতেই বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বার বার বিভিন্ন প্রশ্ন করে প্রমাণ করেছেন– এই রিপোর্ট কোনো গবেষণা রিপোর্ট হিসেবে গ্রহণযোগ্য হয়নি।

৬ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতিদের সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন স্যার বলেছেন, ''এটা 'অনভিজ্ঞ, কাঁচা হাতের রিপোর্ট'– কোনো গবেষণা রিপোর্ট নয়।''

সে সভায় ড. ফরাসউদ্দিনসহ সকল বক্তাই টিআইবির রিপোর্টের সমালোচনা ও নিন্দা করে বলেছেন, এটা কোনো বিশেষ উদ্দেশ্যে তৈরি একটি রিপোর্ট। মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও সকল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে ঢালাওভাবে হেয় করার লক্ষ্যে অনুমানভিত্তিক পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্যেেএটি তৈরি করা হয়েছে।

নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কোনো উদ্যোক্তা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ অনুসারে সকল শর্ত পূরণ করে আবেদন করলে, ইউজিসি তদন্ত করে সে আবেদন সম্পর্কে রিপোর্ট দিলে যদি তা বিবেচনাযোগ্য হয়, তাহলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চূড়ান্ত অনুমোদন পায়।

ভিসি, প্রোভিসি, কোষাধ্যক্ষ পদে মনোনয়নের জন্যে ট্রাস্টি বোর্ড ৩ টি করে নাম প্রস্তাব করেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মহামান্য চ্যান্সেলরের দপ্তর হিসেবে হুবহু ওই প্রস্তাবের একটি সারমর্ম তৈরি করে সঙ্গে দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়ে দেয়। তিনি চুড়ান্ত অনুমোদন দিয়ে যে সিদ্ধান্ত দেন তা আমরা একটি চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছে দিই।

লক্ষ্যণীয় যে, টিআইবি'র 'গবেষণা' দলটি মূলত সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই গবেষণার নামে না জেনে না বুঝে একটি ভিত্তিহীন প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এতে অনেক সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে।

একটি সময় ছিল যখন আমাদের দেশের আসন-স্বল্পতার কারণে প্রায় আড়াই লক্ষের উপর ছাত্রছাত্রী উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য পার্শ্ববর্তী দেশসমূহে লেখাপড়া করতে যেত। বর্তমানে দেশের অভ্যন্তরে আরও কম খরচে অনুরূপ উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় ওই ছাত্রছাত্রীদের বিদেশ গিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন দেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ প্রসারিত হচ্ছে, অন্যদিকে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হচ্ছে।

অধিকন্তু বর্তমান সময়ে নিকটবর্তী দেশসমূহ, যেমন, ভুটান, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ভারত, তুরস্ক ইত্যাদি দেশের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছে। ২০১২ সালের তথ্য অনুসারে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ১৪ হাজার ৬৪০ জন এবং এর মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১ হাজার ৬৪২ জন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২০১১, ২০১২, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে যথাক্রমে ১২২ জন, ৬৩ জন, ৭২ জন ও ১৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে এ সংখ্যা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।

অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, টিআইবির ঢালাও মন্তব্যসম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশের ফলে দেশের বাইরে এই ধারণা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক যে, বাংলাদেশে মানসম্পন্ন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় এখনও পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। ফলে বিদেশি শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অন্যদিকে বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাও পুনরায় বিদেশে গিয়ে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় করে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের জন্য আগ্রহী হবেন।

যেসব দেশের শিক্ষার্থী আমাদের দেশে লেখাপড়া করে সে রকম একটি দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গত সোমবার আমাকে টেলিফোন করেছেন। তাঁর কাছে ওই দেশের ২১ জন ছাত্রের অভিভাবক জানিয়েছেন, টিআইবির রিপোর্ট দেখে তারা শঙ্কিত, তাদের সন্তানদের বাংলাদেশে পড়াতে পারবেন কি না। এই হল এই দেশবিরোধী টিআইবির রিপোর্টের ফলাফল! এর দায় কে নেবে?

দুঃখের বিষয়, তথাকথিত 'গবেষণা'র নামে যারা নিজ দেশের সাফল্য, অগ্রগতি, সমস্যা কাটিয়ে ভালো পথে অগ্রসর হওয়ার বিষয়টি চাপা দিয়ে ঢালাওভাবে নেতিবাচক ও বিরূপ প্রচার করে ভয়াবহ চিত্র বানিয়ে নিজ দেশকে সর্বনাশের পথে ঠেলে দিতে চায়, তারা দয়া করে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবেন, দেশ ও জাতির সর্বনাশ করা থেকে বিরত থাকবেন, এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।

৭৯ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবক'টির কর্তৃপক্ষ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ৬ জুলাইয়ের সভায় প্রকাশ্যে ও লিখিতভাবে এসব পর্যায়ে তাদের কোনো অর্থ দিতে হয়নি বলে ঘোষণা দিয়ে গেছেন। এত কিছুর পরও টিআইবির নির্বাহী পরিচালক জনাব ইফতেখারুজ্জামান কোনো বিবেচনা না করে ওই 'গবেষকের' ভিত্তিহীন, প্রমাণহীন ও উদ্দেশ্যমূলক রিপোর্ট সমর্থন করছেন, তা বোধগম্য নয়। আমি এবং আমরা তাঁর কাছে প্রত্যাশা করি, বিষয়টি তিনি নিজে পুনঃবিবেচনা করবেন এবং সঠিক অবস্থান নিবেন। ইউজিসি বিধিবিধান অনুসারে নিয়ম মেনে স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করে। যে কেউ যাচাই করে দেখতে পারেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আমি যেদিন প্রথম যোগদান করি সেদিনই ঘোষণা করেছি, স্বচ্ছ, দক্ষ, গতিশীল ও দুর্নীতিমুক্ত শিক্ষা প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সংগ্রাম করে শিক্ষায় সুশাসন গড়ে তুলতে হবে। এই সংগ্রাম চলছে এবং চলবে।

যদিও শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্নীতি শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য সাড়ে পাঁচ বছর ধরে লড়াই করছে, এজন্য পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও আমরা মোটেও সন্তুষ্ট নই। দুর্নীতি কমলেও এখনও কিছু ক্ষেত্রে বিদ্যমান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় (পুরো শিক্ষা পরিবার) তো কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সমাজের যেসব ব্যাধি আছে তা দ্বারা আক্রান্ত হবে, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। কিন্তু আমরা যে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি তার কি কোনো মূল্য নাই?

অনিয়ম, দুর্নীতি, বেআইনি কাজের জন্য বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তা, কর্মচারি, শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট সকলের উপর চাপ বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং এজন্য বহু মানুষের শাস্তি হয়েছে। নিয়মিত প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বৃদ্ধি, দায়িত্বশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির নানা ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহতভাবে চালানো হচ্ছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ইতিহাস ও আমাদের বিরামহীন সংগ্রামের বিবরণ এখানে সীমিত পরিসরে দেওয়া সম্ভবও নয় বা লিখলেও পাঠকদের ক্লান্তি হতে পারে।

১৯৯২ সালে একটি আইনের ভিত্তিতে বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু। ১৯৯৮ সালে সংশোধন করা হয় এই আইন। ২০০৯ সালের পূর্ব পর্যন্ত ছাপ্পানটি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়। ৫ বছরের মধ্যে নিজস্ব ক্যাম্পাস তৈরিসহ কয়েকটি শর্ত পূরণ করার কথা থাকলেও মাত্র তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রায় ১৫ বছরে কিছু শর্ত পূরণ করে। বাকিগুলোর একটিও নিজস্ব ক্যাম্পাসের শর্ত পূরণ তো দূরের কথা, তারা বাসাবাড়ির ফ্ল্যাট, শপিং সেন্টার, গার্মেন্টসের উপরে বা নিচে ঘর ভাড়া করে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবসা চালাতে থাকে। মুনাফার জন্য এসব বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা মহানগরে সার্টিফিকেট বিক্রিসহ ব্যবসা চালায়। বিভিন্ন স্থানে আউটার ক্যাম্পাসও চালায়।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর, এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে শর্ত পূরণ করে যথানিয়মে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য চাপ দিই। তাদের সঙ্গে অন্তত ২০টি বৈঠক করে তাদের বুঝিয়ে রাজি করিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০১০ তৈরি ও সংসদে পাশ করিয়ে তা কার্যকরী বা বাস্তবায়নের জন্য নিরলস চেষ্টা ও সংগ্রাম চালাই। অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয় আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন এবং অনেকে বাধা দিলেও সকলের সহযোগিতায় তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরা সফল হই।

তবে ১৫ টি বিশ্ববিদ্যালয় শর্ত পূরণ না করে অনিয়ম, বেআইনি শাখা খোলা, মুনাফা, দুর্নীতি, অভ্যন্তরীন দ্বন্দ্ব ইত্যাদি চালাতে থাকেন। কোনোভাবেই শর্ত পূরণ করে আইন মেনে চলতে না চাইলে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন ধরনের বেআইনি কাজ ও অনিয়মের জন্য মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। কিন্তু এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্ন ইস্যুতে উচ্চ আদালতে আবেদন করে স্টে অর্ডার নিয়ে টিকে আছে। মামলার আওতায় থাকায় এগুলোর বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছি না। তবে আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করে মামলাগুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

আমাদের সকল কাজেই যেমন সাফল্য আছে, তেমনি ভুল-ত্রুটিও আছে। আমাদের সীমিত সম্পদ, নানা ধরনের বাধা, দক্ষ জনবলের সমস্যা ইত্যাদি প্রতিকূলতার মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। আমরা সকলের সাহায্য চাই, পরামর্শ চাই, ভুলত্রুটি ধরিয়ে সংশোধন করে দেন।

আমাদের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা, শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করাসহ ক্রমান্বয়ে মান উন্নয়নের জন্য পেছনে লেগে থাকায়, শর্ত পূরণ করে বর্তমানে ৭৯ বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আটাশটি নিজস্ব জমি কিনে অবকাঠামো নির্মাণ করে নতুন ক্যাম্পাসে কার্যক্রম চালু করেছে। চারটি বিশ্ববিদ্যালয় জমি কিনে আংশিক নির্মাণ সমাপ্ত করে নতুন ক্যাম্পাসে কার্যক্রম আংশিক চালু করেছে। বারটি বিশ্ববিদ্যালয় জমি কিনে নির্মাণকাজ শুরু করেছে। এগারটি জমি কিনে ক্যাম্পাস নির্মাণের প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। যারা শর্ত পূরণ করেছে, তাদের অভিনন্দন জানাচ্ছি। অন্য যারা আংশিক ও প্রাথমিক কাজ সমাপ্ত করেছে, তাদেরও ধন্যবাদ।

২০০৯ সালের পূর্বের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করলে বর্তমানের অবস্থায় রাত-দিন পার্থক্য। এটা আমাদের নিরলস প্রচেষ্টা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষগুলোর সহযোগিতার ফল। এই খাতকে আমরা সফল করে তুলেছি। বর্তমানে এই সম্ভাবনাময় খাতকে উন্নত করা ও মানসম্মত, গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে। আবার সতর্ক থাকতে হবে যেন অনিয়ম বা আইন লঙ্ঘন না হয়।

সাড়ে ৫ বছর ধরে অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে চরম বিশৃঙ্খলা ও নাজুক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ একটি সম্ভাবনাময় উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে গড়ে উঠছে। যদিও কিছু প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম, ব্যর্থতা, স্বার্থ ও মুনাফালোভী মনোভাবসহ অনেক চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে। শিক্ষার গুণগত মান ও বিশ্বমান অর্জন এবং শিক্ষার সকল ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমরা সচেতনভাবে এ সংগ্রামে এগিয়ে যাচ্ছি।

ইউজিসিকে আরও শক্তিশালী ও উন্নত করার জন্য আমরা আইনের খসড়া তৈরি করে মন্ত্রিসভায় বিবেচনার জন্য জমা দিয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তত্ত্বাবধান, রেটিং নির্ধারণ, উন্নয়ন ইত্যাদি নিশ্চিত করার জন্য অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল করার জন্য খসড়া বিধি চূড়ান্ত করেছি। আমরা পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনো পার্থক্য করি না। সকল ধরনের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই আমাদের সন্তান, আমাদের ভবিষ্যৎ।

আমরা সকলের সাহায্য প্রার্থনা করছি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ৬১ শতাংশ। সকল মহলের কাছে বিনীতভাবে সাহায্য প্রার্থনা করছি। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষকে আইন মেনে চলতে হবে এবং আশা করব তারা দেশের বাস্তবতার বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের জন্য টিউশন ফি ও ভর্তি ফি কীভাবে আরও কমিয়ে সাধারণ পরিবারের সন্তানদের সুযোগ বাড়ানো যায় সে কথা বিবেচনা করবেন।

আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ নতুন প্রজন্মকে বর্তমানের বিশ্বমানের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষ করে গড়ে তোলার কাজে সকল মহল সহযোগিতা করবেন, আমাদের ভুল ধরিয়ে শুধরে দেবেন, দেশবাসীর কাছে এই বিনীত নিবেদন।


নুরুল ইসলাম নাহিদ:
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষামন্ত্রী।