আসুন, এদের বাঁচাই

অপূর্ব সাহা
Published : 23 June 2014, 05:03 AM
Updated : 23 June 2014, 05:03 AM

রাজধানীর গুলিস্তান এলাকায় ১৮ জুন, ২০১৪ তারিখে সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গণসচেতনতামূলক প্রচারণা কার্যক্রমে অংশ নিয়ে, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের যানজটকে জাতীয় সমস্যা ও সড়ক দুর্ঘটনাকে জাতীয় দুর্ভাবনা বলে উল্লেখ করেছেন। আমার খুব ভালো লেগেছে; এই কারণে যে, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টাকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে স্বীকার করে নেওয়া হল।

যে কোনো সমস্যা সমাধানের পূর্বশর্ত হচ্ছে, সেটিকে সমস্যা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া। সেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে মনে হয়। গত দু' দশকের চিৎকার-চেঁচামেচির ফলে এটুকু অর্জন অন্তত ঘরে এসেছে। বাকিটা সরকারের ইচ্ছা! মন্ত্রী মহোদয় অবশ্য বলেছেন, কাঠামোগত পরিবর্তন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা ও জনসচেতনতা– এ তিন উপায়ে রাজধানীসহ সারা দেশের সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট কমানো সম্ভব হবে। সম্ভব যে হবে, সেটা শতকরা একশ' ভাগ সঠিক।

সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস করার উপায় হিসেবে সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞগণ তিনটি 'ই'-এর কথা বলে থাকেন– ইঞ্জিনিয়ারিং (Engineering), ইনফোর্সমেন্ট (Enforcement) এবং এজুকেশন (Education)। এই তিন মহাস্ত্র প্রয়োগ করেই সম্ভব রোড ক্রাশ বা সড়ক দুর্ঘটনা নামক দৈত্যকে ঘায়েল করা। কিন্তু এই তিন অস্ত্রের বাড়ি কোথায়? কতটা সমুদ্র আর কতটা নদী পেরুলে মিলবে তাদের ঠিকানা? আর গভর্নমেন্টের ইচ্ছেটাই-বা কি? সেই দুস্তর সাগর-নদী পার হয়ে মহাস্ত্রগুলো তুলে এনে দানব ঘায়েল করা, নাকি শুধু রূপকথার গল্পে গল্পে সাধারণ মানুষকে ভুলিয়ে রাখা?

ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইনফোর্সমেন্ট– এ দুটি বিষয় সত্যিই খুব দুরুহ। ইঞ্জিনিয়ারিং-এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বিস্তর ইন্টেলেকচ্যুয়াল টাস্ক, যেমন গবেষণা, পরিকল্পনা ইত্যাদি; বিস্তর সম্পদ আর বাস্তবায়নের জন্য চূড়ান্ত পর্যায়ের সুশাসন। মেনে নিচ্ছি যে, ইন্টেলেকচ্যুয়াল টাস্কে আমরা অনেক এগিয়ে। আমাদের বিস্তর থিংক ট্যাঙ্ক রয়েছেন এ সকল কার্য সমাধা করার জন্য। কিন্তু সম্পদ কোথায়? গৌরী সেন দেবে?

আচ্ছা ধরে নিচ্ছি যে, গৌরী সেনরা আমাদের বিস্তর সম্পদ প্রোভাইড করবে। কিন্তু সুশাসন? সুশাসন আমাদের ছেড়ে এত দূরে নির্বাসনে গেছে যে অনেক দশকের সাধ্য-সাধনার পরও তাকে আর স্বভূমিতে ফিরিয়ে আনতে পারা যাবে কিনা, তা কে জানে। আর সুশাসনহীনতায় সম্পদের ব্যবহার অপচয় ছাড়া কী?

ইনফোর্সমেন্ট বা আইন প্রয়োগের কথা আর কী বলব! বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক 'গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট ২০১৩'-তে বাংলাদেশে সড়ক নিরাপত্তা সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগ সম্পর্কে যা বলা হয়েছে তার উল্লেখ করছি। তারা শূন্য থেকে নয় পর্যন্ত একটি স্কেল নির্ধারণ করেছে, যেখানে শূন্য হচ্ছে মানের দিক দিয়ে সর্বনিম্ন এবং নয় সবার উপরে।

ওই স্কেলে দেখা যাচ্ছে যে, সংশ্লিষ্ট প্রায় সব আইনই আমাদের দেশে রয়েছে, কিন্তু প্রয়োগমাত্রা ৩ অথবা সর্বোচ্চ ৪। ইনফোর্সমেন্টের সার্বিক অবস্থা এই অংক থেকে সহজেই অনুমেয়। কারণটাও সবার জানা। তবু বলি, ওই যে নির্বাসিত সুশাসন, তীক্ষ্ণ নখদন্ত বের করা দুর্নীতি, ফিকে হয়ে যাওয়া স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, চরম ব্যক্তিতান্ত্রিকতায় ক্ষতবিক্ষত দায়িত্বশীলতা আর নিষ্ক্রিয়তা।

গল্প সবখানে এক। বিআরটিএ-তে একটা কাজ নিয়ে যান, টের পাবেন 'ট্রিটমেন্ট' কাহাকে বলে! সড়ক নিরাপত্তার অ্যাপেক্স বডি যাকে বলে– সেই জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিলে গতিশীলতা দেখা যায় না। তার আওতায় জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে যথাক্রমে ডিস্ট্রিক্ট রোড সেফটি কমিটি এবং উপজেলা রোড সেফটি কমিটি রয়েছে। অনেক জায়গায় আমি দেখেছি, কমিটির অনেক সদস্যই জানেন না যে, তিনি ওই কমিটিতে আছেন। অনেক অফিসিয়াল আছেন যারা টার্মস অব রেফারেন্স জিন্দেগিতে পড়ে দেখেননি। অচলায়তন আর কাকে বলে!

পুলিশ সম্পর্কে আমি কিছু বলব না। তবে হাইওয়ে পুলিশের একটি পরিসংখ্যান আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি। বাংলাদেশে জাতীয় এবং আঞ্চলিক মিলিয়ে মোট মহাসড়ক রয়েছে ৭৮৬৬ কিলোমিটারের মতো। আর হাইওয়ে পুলিশের রয়েছে ২৮ টি থানা এবং ৪৪ টি আউটপোস্ট। সব মিলিয়ে ৭২ টি স্টেশন। এর অর্থ হচ্ছে, প্রতি ১০৯.২৫ কিলোমিটার সড়কের আইনশৃঙ্খলাসহ সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজে নিয়োজিত হাইওয়ে পুলিশের একটি স্টেশন। কোথায় রয়েছি আমরা? এত সব এডভারসিটি কাটিয়ে কবে ইনফোর্সমেন্ট নিশ্চিত হবে, কে বলতে পারে!

সেই তুলনায় 'এডজুকেশন' অনেকটাই সহজসাধ্য। আমি বলছি, কারণ আমি পেশাগতভাবে এই কাজের সঙ্গে জড়িত। আমার আজকের নিবন্ধে আলো ফেলব এজুকেশন বা সচেতনতা বৃদ্ধির উপর যা অনেকাংশে নিশ্চিত করতে পারে সড়ক নিরাপত্তা। আমি বিশ্বাস করি, মানুষ যদি সচেতন হয়, রাস্তা যত খারাপই হোক, যানবাহন যত বেশিই হোক কিংবা ভঙ্গুর হোক, পুলিশ যতই ঘুষ খাক, রোড ক্রাশের হার অনেকটাই কমবে। অন্তত ৪১ শতাংশ তো কমবেই। কীভাবে আমি এমন কথা বলছি? উত্তর দিচ্ছি।

আমি আবারও উল্লেখ করতে চাই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক 'গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট ২০১৩' এর একটি পরিসংখ্যান। আমি ইতোপূর্বে একটি লেখায় এটা উল্লেখ করেছিলাম, আবারও করছি। কারণ সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে এটার একটা যোগসূত্র রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বাংলাদেশ সরকারের বরাত দিয়ে বলছে, ২০০৯ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন মোট ২৯৫৮ জন; যাদের ৪১ শতাংশ পথচারী।

কীভাবে নিহত হন পথচারীরা? রাস্তায় হেঁটে যাচ্ছেন, পেছন থেকে গাড়ি এসে ধাক্কা দিল; অথবা রাস্তা পার হতে গিয়ে চাপা পড়লেন। কখনও দেখা যায় গাড়ি থেকে মাঝরাস্তায় নেমে রাস্তার পাশে আসছেন, অন্য গাড়ি এসে তাকে চাপা দিয়ে দিল। খুব বিরল ঘটনায় দেখা যায়, গাড়ি ফুটপাতে উঠে গিয়ে পথচারীকে চাপা দিয়েছে।

শেষটা বাদ দিলে বাকি কারণগুলোর জন্য দায়ী পথচারীদের অসচেতনতা। অর্থাৎ কীভাবে পথ চলতে হয় তা জানা নেই অধিকাংশ মানুষেরই। আমি এই সকল অসচেতন পথচারীদের সচেতন করে রোড ক্রাশে মৃত্যুর হার ৪১ শতাংশ কমিয়ে আনার কথা বলছি। একবার ভাবুন তো, পথচারীরা সচেতন থাকলে ২০০৯ সালে প্রায় ১২১৩ জন মানুষ কম মারা যেত এবং সরকারি হিসেবে রোড ক্রাশে মৃত্যুর সংখ্যা কমে দাঁড়াত ১৭৪৫।

তাহলে কেন আমি এজুকেশনের মতো সহজসাধ্য এবং কস্ট-ইফেকটিভ কাজে গুরুত্ব দেব না, যখন তার প্রভাব এতটাই ব্যাপক?

পথচারী কারা? আমি, আপনি এবং আমাদের শিশুরা– আমরা সবাই পথচারী। তো এদের সচেতন করতে হবে। প্রথমে আসি বার্তা বা ম্যাসেজ প্রসঙ্গে, কী বার্তা আমি তাদেরকে দেব। খুব সহজ। ফুটপাত দিয়ে হাঁটতে হবে, কারণ হাঁটার জন্য ফুটপাত বানানো হয়েছে। যেখানে ফুটপাত নেই সেখানে রাস্তার ডানদিকের কিনার ধরে হাঁটতে হবে। কেননা আমাদের দেশে গাড়িগুলো রাস্তার বামপাশ দিয়ে চলে। তাই ডানপাশ দিয়ে হাঁটলে পিছন দিক দিয়ে আসা গাড়ির ধাক্কা খাওয়ার যেমন ভয় থাকে না, তেমন সামনে থেকে আসা গাড়িগুলোকে অনেক আগে থাকতে দেখা যায়। এগুলো ধাক্কা দেওয়ার উপক্রম করলে প্রয়োজনে রাস্তার পাশে সরে গিয়ে নিজেকে সময়মতো রক্ষা করা যায়।

এই হল একটি বার্তা। অন্যটি হচ্ছে, রাস্তা পার হওয়া সংক্রান্ত। এ জন্য প্রথমে একটি নিরাপদ জায়গা খুঁজে বের করতে হবে। শহরে সাধারণত এই নিরাপদ জায়গাগুলো হচ্ছে জেব্রা ক্রসিং, পথচারী পার হওয়ার সেতু, পাতাল পথ, ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়াবার স্থান, ট্রাফিক বাতি আছে এমন স্থান ইত্যাদি। যেখানে এ সুবিধাগুলো থাকবে সেখানে অবশ্যই রাস্তা পারাপারের জন্য এগুলো ব্যবহার করতে হবে।

যেখানে এগুলো নেই সেখানে নিরাপদ জায়গা হল রাস্তার মোড় বা বাঁক থেকে দূরে কোনো জায়গা, রাস্তার দু'পাশে অনেকদূর পর্যন্ত দেখা যায় এমন জায়গা এবং যেখানে গাড়ির গতি কমে যায় এমন জায়গা ইত্যাদি। এ রকম একটি জায়গায় দাঁড়ানোর পর কোনো গাড়ি সহসা এসে আঘাত করবে না তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডানে-বামে এবং আবার ডানে ভালো করে দেখে নিতে হবে। নিকটে চলে আসা গাড়িগুলিকে আগে যেতে দিতে হবে এবং পরে কাছাকাছি কোনো গাড়ি না থাকলে রাস্তা পার হতে হবে।

সব সময় সোজাসুজি রাস্তা পার হতে হবে, কোনো অবস্থাতেই কোনাকুনিভাবে এবং ডানে-বামে-ডানে না দেখে হঠাৎ দৌড়ে রাস্তা পার হওয়া যাবে না। এছাড়া রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কোনো গাড়ির সামনে বা পিছন দিয়ে হঠাৎ করে দৌড়ে রাস্তা পার হওয়াও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ এতে আড়াল থেকে আগত গাড়িকে যেমন দেখা যায় না, তেমন আগত গাড়ির চালকও পথচারীকে দেখতে পায় না।

আরেকটি বার্তা হচ্ছে, রাতের বেলায় পথচলার সময় অবশ্যই হাতে একটা বাতি রাখতে হবে অথবা হালকা রঙের কাপড় পরতে হবে নিজেকে দৃশ্যমান করতে। অন্য একটি বার্তা হচ্ছে, শিশুদের বেলায় রাস্তা ব্যবহারের ক্ষেত্রে অবশ্যই হাত ধরে রাখতে হবে।

এই বার্তাগুলো পৌঁছে দিতে হবে সাধারণ মানুষের কাছে। কীভাবে? খুব দুরুহ কিছু নয়।
প্রথমত, গণমাধ্যমগুলোকে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে বার্তাগুলো খুব সহজেই মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সঙ্গে গণমাধ্যম ইতোমধ্যেই এ কাজ শুরু করে দিয়েছে। সরকারি পদক্ষেপে সেটা কয়েকগুণ বাড়ানো প্রয়োজন।

এছাড়া সরকারের তথ্য বিভাগ গ্রামে গ্রামে বিভিন্ন বিষয়ে সমাজ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়ে থাকে। সেখানে সড়ক নিরাপত্তার বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করে দেওয়া যায়। এ ব্যাপারে এনজিওগুলোকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে পারে সরকার। ব্র্যাক এক দশক ধরে এ কাজ করে যাচ্ছে। আরও দুএকটি এনজিও এ ধরনের কাজে জড়িত রয়েছে। কিন্তু তাদের কাভারেজ অনেক সীমিত। সরকার কিছু এনজিও নির্ধারণ করে তাদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে ব্যাপক ভিত্তিতে প্রচারণার কাজে নামাতে পারে।

এ সংক্রান্ত আমার সর্বশেষ প্রসঙ্গ 'শিশু'। আমি বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বার্তা গ্রহণের দক্ষতা সবচেয়ে বেশি তাদের। এই সামান্য কিছু বার্তাকে তাদের কারিকুলামে অর্ন্তভূক্ত করে দেওয়া যায়। এটা করা গেলে সামান্য সময়ের ব্যবধানে ব্যাপক পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করা সম্ভব।

শিশুদের মধ্যে প্রচারণার প্রভাব কতখানি সেই সম্পর্কিত একটি বাস্তব ঘটনা বলে শেষ করব।
কিছুদিন আগে হবিগঞ্জে ব্র্যাকের আয়োজনে 'সড়ক নিরাপত্তা: স্থানীয় পর্যায়ে করণীয়' শীর্ষক এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমি ব্র্যাকের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলাম। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মহোদয়। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আন্দিউড়া ঊম্মেতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আমিনুল ইসলাম। মুক্ত আলোচনা পর্বে তিনি তাঁর স্কুলে প্রচারণার গল্প তুলে ধরেন।

বিদ্যালয়টির অবস্থান ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক সংলগ্ন এবং বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। স্কুলের সামনেই সড়কে রয়েছে একটি বিপজ্জনক বাঁক। বেশ কয়েকবার দুর্ঘটনাকবলিত বাস এবং ট্রাক স্কুলের দেয়াল ভেঙে ভেতরে ঢুকে পড়ে। এছাড়া গত ফেব্রুয়ারিতে একটি বাস একটি সিএনজি অটোরিক্সাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিলে অটোরিক্সা দেয়াল ভেঙে স্কুলপ্রাঙ্গনে ঢুকে পড়ে এবং অটোরিক্সার দুজন যাত্রী ঘটনাস্থলে নিহত হন। এছাড়াও এ স্পটে বিভিন্ন সময়ে সড়ক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ আহত-নিহত হয়েছেন।

এ সকল ঘটনা স্কুলের শিক্ষার্থীদের মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। তারা আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ফলশ্রুতিতে, স্কুলে উপস্থিতির হার আশংকাজনকভাবে হ্রাস পায়। ঠিক এ রকম একটি সময়ে ব্র্যাক সেখানে আয়োজন করে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক এক স্কুল-কুইজ অনুষ্ঠানের। অনুষ্ঠানে কুইজের পাশাপাশি রাস্তা পারাপারের কৌশল প্রদর্শন এবং সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক নাটিকা প্রদর্শিত হয়, যা শিক্ষার্থীদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বলেন, "এর ফলে আমার স্কুলের শিক্ষার্থীরা এখন অনেক সচেতন। বিদ্যালয়ের প্রায় শতভাগ ছাত্রছাত্রীকে পূর্ব পাশ থেকে মহাসড়ক পার হয়ে পশ্চিম পাশে বিদ্যালয়ে আসতে হয়, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। আতংকগ্রস্ত থাকার ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থী আগে স্কুলে অনুপস্থিত থাকত। কিন্তু ওই অনুষ্ঠানের পর এখন আমার স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার অনেক বেড়ে গেছে। গ্রামে গ্রামে গণনাটকের ফলে অভিভাবকদেরও সচেতনতা বেড়েছে। তাদের আতংকও কমেছে এবং তারা তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে আসতে উৎসাহিত করছেন। অনেকেই তাদের বাচ্চাদের হাত ধরে রাস্তার ডান দিক দিয়ে হেঁটে এসে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন।"

তথ্য জানা থাকা দরকার মানুষের। তথ্যই যে শক্তি। শক্তি মানুষকে অভয় দান করে, তার নিজের উপর আস্থা বাড়ায়।

অপূর্ব সাহা: ব্যবস্থাপক, ব্র্যাক সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচি।