জাতিকে ধ্বংস করার সহজ উপায় আর কী হতে পারে

শাহমিকা আগুন
Published : 5 June 2014, 04:53 AM
Updated : 5 June 2014, 04:53 AM

তেরশ চল্লিশ খ্রিস্টাব্দের কথা। প্লেগের আক্রমণে ইউরোপে প্রাণ হারিয়েছেন প্রায় ২৫ কোটি মানুষ। আর সারা পৃথিবীতে কত মানুষ মারা গেছেন তার সঠিক হিসাব পাওয়া দুস্কর। এই মৃত্যু 'কালো মৃত্যু' বলে খ্যাত। নির্মম মৃত্যুর এই মহামারীর কারণ ছিল ইঁদুর।

প্রাচীনকালে এমনিভাবে নানা সভ্যতা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার মতো বুঝি আধুনিক যুগেও আমাদের সভ্যতার বিলুপ্তি হবে! সেদিন কি আর দেরিও নেই! আমাদের খাদ্য-ব্যবসায়ীরা যেভাবে কোমর বেঁধে লেগেছেন জাতিকে ধ্বংসের 'সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা' হাতে নিয়ে, তাতে নিরাশাবাদী হবারই কথা। মনে হওয়াই স্বাভাবিক যে, বাঙালি জাতিও ডাইনোসরের মতো বিলুপ্ত প্রজাতিতে পরিণত হবার জন্য প্রহর গুণছে মাত্র।

নিজে পুষ্টিবিদ হলেও কখনও এ বিষয়ে লিখি না। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আমার উচিত কিছু বিষয় নিয়ে কথা বলা। আমার বন্ধুরা এ নিয়ে অনেক পীড়াপিড়ি, অনুযোগ ইত্যাদি করেন। আমার কাজ হচ্ছে ক্রনিক ডিজিজ (দীর্ঘমেয়াদী রোগ) নিয়ে। গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশে আয়োডিনজনিত রোগের ঘটনা মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে। আমার খুব সন্দেহ হল (এটা আসলে বহু বছর সাংবাদিকতা করার ফল)।

তাই বাংলাদেশ থেকে সব রকমের লবণ কেনালাম। এর কিছু ইংল্যান্ডে আনালাম আর কিছু বাংলাদেশে রেখেই পরীক্ষা করানোর উদ্যোগ নিলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। কোনো একটি ব্র্যান্ডের লবণেও আয়োডিন নেই, যদিও প্যাকেটের গায়ে লেখা আছে 'আয়োডিনযুক্ত' শব্দবন্ধ।

প্রতিটি ব্র্যান্ডের শুধু একটি করে প্যাকেট পরীক্ষা করে আসলে এ সিদ্ধান্তে কখনও-ই ‍উপনীত হওয়া যায় না যে, বাংলাদেশের কোনো লবণেই আয়োডিন নেই, তাই এ নিবন্ধে ব্র্যান্ডগুলোর নাম উহ্য রাখলাম। কিন্তু এটি অবশ্যই উদ্বেগজনক একটি বিষয়। আরও ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ বিষয়ে নিশ্চিত হবার উদ্যোগ নিতে পারেন বাংলাদেশের পুষ্টিবিদ ও গবেষকরা।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হল, এক প্যাকেট লবণে আয়োডিন যুক্ত করতে খরচ হয় মাত্র ২৫ পয়সা। এই ২৫ পয়সা বাঁচানোর লোভে একটি জাতিকে কীভাবে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন কিছু ব্যবসায়ী, তা বলছি এখন।

আয়োডিনকে বলা হয় 'ট্রেস মিনারেল'। একজন পরিণত বয়সের মানুষের দিনে ১৫০ মাইক্রোগ্রাম আয়োডিনের প্রয়োজন। তার মানে হল, এটি আমাদের শরীরে খুব সামান্য পরিমাণে দরকার হয় (আমার দ্বিমত আছে; কেন তা পরে বলছি)। সারা পৃথিবীতে দুই বিলিয়ন মানুষ, অর্থাৎ পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশই আয়োডিনের অভাবে ভুগছেন। খোদ আমেরিকাতেই শতকরা ৭২ শতাংশ মানুষ আয়োডিন ঘাটতিতে আছেন। ইংল্যান্ডে এ হার ৫০ শতাংশ। বাংলাদেশে কত কোটি মানুষ আয়োডিনের অভাবে ভুগছেন তার কোনো পরিসংখ্যান রয়েছে কিনা আমার জানা নেই।

প্রশ্ন হল, পৃথিবীজুড়ে এত বিশাল সংখ্যক মানুষ কেন আয়োডিনের অভাবে জর্জরিত। উত্তরটি হল, আয়োডিন নামক খনিজ লবণটি বিলুপ্ত এক সভ্যতার মতো নিজেই এখন জাদুঘরে ঠাঁই নিয়েছে। আয়োডিনের একমাত্র উৎস হল মাটি ও সমুদ্র। প্রাকৃতিক বিপর্যয়, মাটিতে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক পদার্থ ইত্যাদি কারণে মাটি থেকে আয়োডিন বিতাড়িত। আর সমুদ্রে আয়োডিন থাকলেও এর পানিতে রয়েছে পারদ ও আর্সেনিকের মতো ভয়াবহ সব উপাদান।

আয়োডিন পাওয়ার সহজ উপায় হল সামুদ্রিক শৈবাল, সী কেল্প, সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি জাতীয় মাছ, দুধ, ডিম, আলু। কিন্তু যেহেতু মাটিতে আয়োডিন নেই, তাই প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ খাবার থেকে আয়োডিন পাবার সম্ভাবনা খুব কম।

এই কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আদেশে সারা পৃথিবীতে ১২০ টি দেশে খাবারের সঙ্গে লবণ যোগ করা হয়, বাংলাদেশ যার অন্যতম। বাংলাদেশে ১৯৮৯ সাল থেকে খাবারের লবণের সঙ্গে আয়োডিন যোগ করার কাজটি শুরু হয়। খাবারে কৃত্রিমভাবে আয়োডিন যুক্ত করা না হলে আয়োডিন পাবার আর কোনো উপায় বাংলাদেশে নেই।

এবার আসা যাক এই বিলুপ্তপ্রায় আয়োডিন আমাদের শরীরের জন্য কতটা প্রয়োজনীয় সে প্রসঙ্গে। আমেরিকার এক বিজ্ঞানী কয়েকজন গর্ভবতী মহিলাকে অতিরিক্ত পরিমাণে আয়োডিন খেতে দিয়েছিলেন। তাদের গর্ভের শিশুদের জন্মের এক বছরের মাথায় দেখা গেল, তাদের আই কিউ সাধারণ শিশুদের তুলনায় পাঁচগুণ বেশি। এর কারণ হল গর্ভস্থ শিশুর বুদ্ধি বিকাশে আয়োডিনের ভূমিকা অনন্য। আয়োডিনের অভাবে শিশু হাবাগোবা বা বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হতে পারে। তাছাড়া আয়োডিনের অভাবে শিশুর শারীরিক বিকাশ সুসম্পন্ন হয় না এবং শিশু শারীরিকভাবে খর্বাকৃতিও হতে পারে।

এজন্যই গর্ভবতী হবার পরিকল্পনা করা নারীদের উচিত হবে শরীরে আয়োডিন ঘাটতি থাকলে তা দূর করা। গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস বেশি করে আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হয়। কারণ গর্ভাবস্থায় হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ৭০ শতাংশ আয়োডিন শরীর থেকে নিঃসৃত হয়ে যায়। মায়ের শরীরে আয়োডিনের অভাব হলে গর্ভপাত ও স্টিল বার্থের (গর্ভাবস্থায় শিশুর মৃত্যু) আশঙ্কা বাড়ে। বর্তমানে শিশুদের অটিজম এবং অ্যাটেনসন ডেফিসিট, হাইপার অ্যাকটিভ বিহেভিয়ার এবং লার্নিং ডিসঅ্যাবিলিটির কারণ হিসেবে আয়োডিনের ঘাটতিকে দায়ী করা হচ্ছে।

ইদানিং খুব শোনা যায় থাইরয়েডের সমস্যার কথা। থাইরয়েড হল এমন একটি রোগ, ডায়াবেটিসের মতো যেটি একবার হলে সারাজীবন এর হাত থেকে মুক্তি নেই। আমাদের মেটাবলিজম এবং শরীরের কাজ করার ক্ষমতা নির্ভর করে থাইরয়েড হরমোনের ওপর। আর আয়োডিন ছাড়া থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয় না।

যদি হাইপো-থাইরয়েড একবার হয়, তাহলে হরমোন সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে ঔষধের মাধ্যমে। এ সময় মেটাবলিজমের পরিমাণ খুব কম হয় বলে দ্রুত ওজন বেড়ে যায়। বাংলাদেশে কিছু ডাক্তারের মাঝে প্রবণতা দেখেছি যে, হাইপো-থাইরয়েডের রোগীকে প্রথমেই ১০০ মিলিগ্রাম ঔষধ খেতে দেন। এটি রোগীর জন্য খুব ক্ষতিকর।

প্রথমত, রোগীর শরীর এক ধাক্কায় এত বিশাল পরিমাণ হরমোনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে না। দ্বিতীয় কারণটি আরও ভয়াবহ। গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাত্রাতিরিক্ত ডোজের কারণে হাইপো-থাইরয়েড রূপান্তরিত হয় হাইপার-থাইরয়েডে। অর্থাৎ প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরি করতে শুরু করে।

বাংলাদেশে কয়েকজন গাইনি ডাক্তারকে দেখেছি যারা থাইরয়েডের রোগী গর্ভবতী মাকে গর্ভধারণের পরপরই থাইরয়েডের ঔষধ বন্ধ করতে পরামর্শ দিয়েছেন। অথচ এই সময় মা ও গর্ভস্থ শিশু দুজনেরই বেশি পরিমাণে হরমোন গ্রহণ প্রয়োজন। নয়তো শিশুটি জন্ম নেবে থাইরয়েডের রোগী হিসেবে।

এবার আসা যাক ক্যান্সারের কথায়। আয়োডিনের কাজ হল শরীরে ক্যান্সার সেল কন্ট্রোল করা। ব্রেস্ট ক্যন্সার, ওভারিয়ান ক্যান্সার, পেটের ক্যান্সার এবং পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সারের জন্য আয়োডিন ঘাটতিকে দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া মহিলাদের ব্রেস্ট এবং ওভারিতে সিস্ট ও ফাইব্রয়েডের কারণও হল আয়োডিন ঘাটতি।

শরীরে থাইরয়েড হরমোনের অভাব হলে কোষ্ঠকাঠিন্য হয়। এর ফলে শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমতে থাকে এবং লিভারের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। লিভারের কাজ হল ইস্ট্রোজেন প্রসেস করা। লিভার সে ক্ষমতা হারায় বলে শরীরে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যায় এবং ক্যান্সার ও সিস্ট তৈরি করে। ড. জেফরি অতিরিক্ত আয়োডিন যোগ করে ব্রেস্ট এবং পেটের ফাইব্রয়েড ভালো করেছেন।

শরীরে থাইরয়েড এবং আয়োডিনের অভাব হলে হাতে-পায়ে প্রচুর ব্যথা হয়। কেননা আয়োডিনের অভাবে ভিটামিন ডি এবং ক্যালসিয়াম রক্ত থেকে চামড়ায় যেতে বিঘ্ন ঘটে। ফলে হাড়ের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। এছাড়া যাদের গলব্লাডারের সমস্যা আছে তাদের শরীরেও আয়োডিনের ঘাটতি দেখা দেয়। যাদের পায়ে ব্যথা, অলস লাগে, ঘন ঘন সর্দি বা ইনফেকশন হচ্ছে, চিন্তা করতে সময় লাগে অনেক, প্রচুর পরিমাণে চুল পড়ছে, গলগণ্ড দেখা দিয়েছে, তারা দয়া করে থাইরয়েড চেক করিয়ে নেন।

এছাড়া টুথপেস্ট থেকে যে ফ্লোরাইড এবং এয়ার কুলারের পানি থেকে যে ক্লোরিন পাওয়া যায় তা আয়োডিন ব্লক করে দেয়। ফলে আয়োডিন শরীরে শোষিত হয় না। আয়োডিন এমন একটি মিনারেল যার অভাবে সারা শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে প্রভাব পড়ে। শরীরে আয়োডিন ও থাইরয়েডের ঘাটতি আছে কিনা তা জানার জন্য TSH, T3 ,T4 এর মাত্রা পরীক্ষা করা হয়। আবার প্রস্রাবেও আয়োডিনের মাত্রা পরীক্ষা করা যায়।

এত প্রয়োজনীয় যে আয়োডিন তা যদি পাওয়া না যায় তাহলে একজন ব্যক্তি, তার পরিবার এবং গোটা জাতির ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা ভাবলেও শিউরে উঠতে হয়। আরও অনেক পুষ্টিবিদের মতো আমার কথা হল, এত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান ট্রেস উপাদান হতেই পারে না। প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে তিন মিলিগ্রাম আয়োডিন প্রয়োজন শরীরের সবগুলো কাজ ঠিকমতো করার জন্য।

শুধুমাত্র আয়োডিনের অভাব হলেই লিভার ও কিডনির ওপর অনেক বেশি চাপ পড়ে। লিভার ও কিডনি হল শরীরের ছাকনি, এ দুটো সমস্ত বিষাক্ত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দেয়। আর লিভার সমস্ত উপাদানগুলোকে প্রক্রিয়াজত করে এবং ভবিষ্যতের জন্য সঞ্চয় করে রাখে।

শরীরে বিষাক্ত পদার্থের পরিমাণ যত বাড়বে লিভারের কাজ তত বেড়ে যাবে, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়বে, কিডনি ও লিভার ড্যামেজের শঙ্কা বাড়বে। অতিরিক্ত চাপ পড়ে গেলে লিভার তার ফাংশন বন্ধ করে দেয় বা কাজ করতে অস্বীকৃতি জানায়। আর তখনই ঘটে দুর্ঘটনা।

তাহলে আয়োডিন পাবার সহজ উপায় কী হতে পারে? সহজ উত্তর হল, সাপ্লিমেন্ট নিতে হবে। কেননা যে পরিমাণ আয়োডিন শরীরে প্রয়োজন তা পূরণ করতে হলে দিনে কমপক্ষে ছয়টি ডিম খেতে হবে। বাংলাদেশে ডিমে আয়োডিন না থাকারই কথা। তিন চামচ সী কেল্পও খাওয়া যেতে পরে। সামুদ্রিক এই শৈবালটি বাংলাদেশে পাওয়া যায় না।

তাই বাংলাদেশ সরকার, সায়েন্স ল্যাবরেটরি এবং ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর কাছে আবেদন করছি, তিন মিলিগ্রাম আয়োডিন বা আয়োডাইড-সম্পন্ন সাপ্লিমেন্ট অতি দ্রুত বাজারে ছাড়ার জন্য। আর লবণ কোম্পানিগুলোর কাছে আবেদন হল, দয়া করে লবণে আয়োডিন যোগ করুন। একটি জাতিকে বুদ্ধিহীন নির্জীব করে মেরে ফেলার অধিকার আপনাদের নেই।

যদিও খাবারের লবণে আয়োডিন যুক্ত করার ধারণাটির সঙ্গে আমি একমত নই। তার প্রধান কারণ হল লবনের সোডিয়াম ৬ মিলিগ্রামের বেশি হলে তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর যা এক চামচ লবণ থেকেই পাওয়া যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণ আয়োডিন পেতে হলে কয়েক চা চামচ আয়োডিনযুক্ত লবণ খেতে হবে।

একজন পুষ্টিবিদ হিসেবে আমার জন্য খুব কঠিন হয়ে পড়ে মানুষকে লবণ খেতে বলা। আর তাছাড়া রান্না করার সময়ও লবণের আয়োডিন উড়ে চলে যায়। লবণ যদি খোলা জায়গায় রেখে দেওয়া হয় তাহলেও আয়োডিন হারিয়ে যেতে পারে। কিন্তু সরকার বা খাদ্য কোম্পানিগুলো যদি পাউরুটি, দই বা চালে আয়োডিন যোগ করে, তাহলে মানুষ খুব সহজেই আয়োডিন পেতে পারে।

সবার আগে সরকারকে মনিটরিং সেল গঠন করে খাবারে আয়োডিন যোগ করা নিশ্চিত করতে হবে। নয়তো মহামারীর খড়গ নিয়ে বাঙালি জাতির ধ্বংস রোখার ক্ষমতা আর কারও থাকবে না। তাই স্বাস্থ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করছি যেন বিশেষ একটি কমিটি গঠন করে খাবারের লবণে আয়োডিন যোগ নিশ্চিত করা হয়। আপনারা চিংড়ি, গলদা চিংড়ি, লইট্টা মাছ খাওয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দেন। হোমিওপ্যাথি দোকানে গিয়ে খোঁজ করে দেখতে পারেন।

তবে খোলা আয়োডিন খাওয়ার পরামর্শ দানও যুক্তিযুক্ত নয়, এটা শরীরের জন্য অনুপযোগী। খাবার ছাড়াও চামড়ার মাধ্যমে আয়োডিন গ্রহণ করা সম্ভব। কিন্তু বাংলাদেশে আয়োডিনযুক্ত ক্রিম বা লোশন পাওয়া যায় কিনা আমার জানা নেই। যদি পাওয়া না যায় তাহলে আয়োডিন ঘাটতি পূরণ করতে বাণিজ্যিকভাবে এর উৎপাদনও শুরু করা যেতে পারে।

গত বছর আমার সাংবাদিক বন্ধু নাজনীনের পাঁচ বছরের মেয়ে চন্দ্রমুখী লিভারের রোগে মারা গেছে। নাজনীন আমাকে চন্দ্রর রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন। তার রিপোর্টটি পড়ে আমি আঁতকে উঠেছিলাম। আমি জানতাম আর একটি অ্যাটাকও ওই পাঁচ বছরের শিশুটি নিতে পারবে না। হয়েছেও তাই। নাজনীনকে সাবধান করেছিলাম। কিন্তু তিনিই-বা কী করতে পারতেন!

এ দেশে খাবারের মাধ্যমে প্রতিমুহূর্তে বিষ খাওয়ানো হচ্ছে শিশুকে, গর্ভবতী মহিলাকে। খাবার না খেয়ে আমরা ফরমালিন, আর্সেনিক, ক্রোমিয়ামের মতো বিষ খাচ্ছি প্রতিদিন, প্রতি মুহূর্তে। চন্দ্রমুখীর বাবা-মায়েদের তাই এ ব্যবস্থার কাছে জিম্মি হয়ে সন্তান হারানোর ভয়াবহ যন্ত্রণা নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।

ইদানিং দেখছি রোগী ভালো না হলে মানুষ ডাক্তারদের উপর চড়াও হচ্ছেন। কিন্তু একটু ভাবুন তো আসলে কার উপর প্রতিরোধ গড়ে তোলা প্রয়োজন? ক্যান্সার, স্ট্রোক বা ব্রেইন টিউমার হবার কারণগুলো আগে রুখুন। আর কতদিন বিষ খাবেন বা আপনাদের সন্তানের মুখে তুলে দেবেন? খাবার থেকে ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ দূর করার জন্য আন্দোলন করতে হবে। তাহলেই যদি কিছু রক্ষা হয়।

আমাদের অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু শিক্ষামূলক কোর্স চালু করা প্রয়োজন, যেন তারা এসব বিষাক্ত উপাদানের ক্ষতিকারক দিকগুলো সম্পর্কে জানতে পারেন। প্রত্যেক মানুষ যেন খাবার সম্পর্কে সচেতন হোন। খাবারে আয়োডিন যোগ করুন। এত তাড়াতাড়ি প্রত্নতাত্ত্বিক সভ্যতায় পরিণত হবার হাত থেকে নিজেকে ও পরিবারকে বাঁচান। সুস্থ থাকুন, সুস্থ জাতি গড়ে তুলুন।