ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ‘দর্শনের দারিদ্র’

মো. আনোয়ার হোসেনমো. আনোয়ার হোসেন
Published : 7 May 2014, 04:22 AM
Updated : 7 May 2014, 04:22 AM

গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেল। বাইরে ঝড়ো হাওয়া। বৈশাখী ঝড়। বহুপ্রত্যাশিত বৃষ্টিও এল। ঠাণ্ডা হাওয়া ঘরে ঢুকছে। একটু পর সূর্য উঠবার আগের আলো ফুটতে শুরু করল। কল্পনার গাঢ় ঘুম ভাঙাতে কষ্টই হল। টাওয়ার ভবনের বাগান বৃষ্টির পানিতে ভেজা। তাই আজ জগন্নাথ হলের মাঠে হাঁটতে না গিয়ে মল এলাকায় হাঁটতে এসেছি আমরা দু'জন।

মলের রাস্তাজুড়ে কৃষ্ণচূড়া, জারুল, রাধাচূড়া। বৃষ্টিতে গাছের পাতা ধোয়া-মোছা হয়ে এখন ঘন সবুজ। বাতাসে কোনো ধুলো-বালি নেই। মলের উত্তর পূর্ব কোণায় বাণিজ্য অনুষদের সামনের বাগানে নতুন এক ফলক দেখে এগিয়ে যাই। 'আন্দ্রে মালরো বাগান'।

মনে পড়ল, দিন কয় আগে অলিয়ঁস ফ্রাঁসেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে মলের বাগানের এই নামকরণ। ১৯৭১ সালে লেখক মালরোর বয়স সত্তর বছর। তিনি তখন দ্য গল মন্ত্রিসভার সংস্কৃতি মন্ত্রী। বাংলাদেশে পাকিস্তানি গণহত্যার কথা শুনে টিভিতে প্রামাণ্য সংবাদচিত্র দেখে আজীবন বিপ্লবী মালরো ঘোষণা করেছিলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনি অস্ত্র হাতে যোগ দেবেন।

মালরো বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে '৭১-এর সেসব কথা মনে পড়ল। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত সংবাদে মালরোর ঘোষণা শুনে আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের মনে কী শিহরণই না বয়ে গিয়েছিল তখন। আর কত তরুণ-তরুণী যুদ্ধে যোগ দিতে এগিয়ে গিয়েছিল।

'অপরাজেয় বাংলার' সামনের ফুটপাত দিয়ে হাঁটছি। '৭২-এ এডওয়ার্ড কেনেডি যে বটবৃক্ষের চারাটি এখানে রোপণ করেছিলেন তা বিপুল ডালপালা ছড়িয়ে বড় জায়গা বিস্তার করে আছে। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চে গণহত্যা শুরুর পর হানাদার পাকিস্তানি সৈন্যরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে সদাসোচ্চার বটতলা চত্বরের বটগাছটি শেকড়শুদ্ধ উপড়ে ফেলেছিল। বটতলার পাশের এই ফুটপাতটি আমার খুব প্রিয়, বিশেষ করে বৈশাখের এ সময়ে। ফুটপাত ঘেঁষে ঘন সবুজের সমারোহে কৃষ্ণচূড়া ও জারুলের উজ্জ্বল লাল-নীল ফুল এক স্বর্গীয় দৃশ্যপট সৃষ্টি করেছে।

ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকি। ডানপাশের ছোট মলে মুক্তিযুদ্ধকালে প্রধানত ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীদের স্মৃতিফলক দাঁড়িয়ে আছে। সবচেয়ে লম্বা শহীদ ছাত্রদের তালিকা। তারপরের দীর্ঘ তালিকাটি কর্মচারীদের। শহীদ শিক্ষকদের তালিকায় আছে উনিশ জনের নাম। কল্পনা ও আমি নিরবে দাঁড়িয়ে নামগুলো পড়ে যাই। বিভিন্ন হলে নিহত ছাত্রদের তালিকা দেখি। জগন্নাথ হলের তালিকাটি সবচেয়ে দীর্ঘ। সর্বমোট ৪৮ জন।

ইসলাম ধর্মাবলম্বী পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে এক পরিকল্পিত গণহত্যায় নেমেছিল এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর উপর, তার এক অকাট্য প্রমাণ স্পষ্ট হয়ে ধরা পড়ে শহীদের স্মৃতিফলকে। গণহত্যার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের উপর আক্রমণ ও হত্যাকাণ্ড। তা হানাদার বাহিনী করেছে সারা বাংলাদেশ জুড়ে। স্বগোত্রীয় বাঙালি মুসলমানদের উপর গণহত্যার অন্যতম কারণ হল পাকিস্তানিদের মনোজগতে গভীরভাবে গেড়ে বসা বৈকল্য— বাংলা ভাষাভাষী স্বধর্মের মানুষেরা সাচ্চা মুসলমান নয়, হিন্দুদের থেকে ধর্মান্তরিত নিকৃষ্ট মুসলমান!

এমন ধারণায় ছোট আকারে গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে খোদ পশ্চিম পাকিস্তানেও। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদীর নেতৃত্বে কাদিয়ানি মুসলমানদের উপর গণহত্যা চালানো হয়েছে একই দৃষ্টিভঙ্গিতে। আর মওদুদীর অনুসারী গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিজামী, মুজাহিদ, সাঈদীরা হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হয়ে গণহত্যায় অংশ নিয়েছে। শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নয়, পাকিস্তানিদের চোখে নিকৃষ্ট বাঙালি মুসলমানদের উপরও। ১৪ ডিসেম্বরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সারা বাংলাদেশে বেছে বেছে বুদ্ধিজীবী হত্যা তারা ঘটিয়েছে।

কল্পনার জিজ্ঞাসার উত্তরে বলি প্রায় ছয়শত একর জায়গা নিয়ে ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান আয়তন প্রায় দুইশত একর। নতুন বিভাগ, অনুষদ, গবেষণা কেন্দ্র খোলার সুযোগ এখন আর তেমন নেই। তবে ইতিহাস সচেতন মানুষ একটু ভাবলে বা চোখ মেলে তাকালে দেখবেন, কালের সাক্ষী হয়ে পুরো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এক জীবন্ত মিউজিয়াম হয়ে রাজধানী ঢাকা শহরের কেন্দ্রে দাঁড়িয়ে আছে।

কার্জন হল, পুরনো হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা গেইট, বাংলা একাডেমি ভবন, পুরনো মেডিকেল কলেজ, নিমতলিতে মিউজিয়াম, জগন্নাথ হলের পুরনো ভবন, শহীদ মিনার, বটতলা, ফজলুল হক হল ও সংলগ্ন পুকুর ঘাট, শহীদুল্লাহ হল এবং সলিমুল্লাহ হল এবং পরবর্তী সময়ে নির্মিত ভবনসমূহ নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মিউজিয়াম।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, আইয়ুববিরোধী ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান, '৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ, এরশাদ সামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে '৯০ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ২০০৭ সালে সামরিক-বেসামরিক স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সূচিত গণতন্ত্রের সংগ্রাম এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই সূচিত হয়েছে। তাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যথার্থ অর্থেই জাতির বিবেক হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল।

সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এখন কেমন আছে? গত ক'বছরে ক্যাম্পাসে নতুন সুদৃশ্য ভবন হয়েছে বেশ ক'টি। স্থানের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও নতুন বিভাগ ও অনুষদও খোলা হয়েছে, বেড়েছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। সেশন জট কমেছে। বেশ ক'বছর বড় ধরনের কোনো গোলযোগে পড়েনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এ সবই ইতিবাচক। কিন্তু ভেতর থেকে শুকিয়ে যাচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

আন্দ্রে মালরোর নামফলক লাগানো হয়েছে, কিন্তু বাগান শ্রীহীন। মলের প্রবেশপথে ময়লার স্তূপ। জঞ্জাল জমেছে সর্বত্র। তবে সবচেয়ে বেশি ময়লা জমেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোজগতে। দর্শনের দারিদ্র্য চলছে। সেই '৯০ এর গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারীগণ সূচনা করেছিল বিজয়ী গণঅভ্যুত্থানের। সামরিক স্বৈরশাসক জেনারেল এরশাদের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফেরত এলেও, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের চারটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীরা কী অবলিলায় তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার 'ছাত্র সংসদ নির্বাচনের' অধিকার হরণ হতে দিল।

ক্যাম্পাসে গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে এই গণতন্ত্রহীনতা কী বিষময় অবস্থার সৃষ্টি করেছে– দেশ শাসনে, সংসদে, গণতন্ত্রের ভিত্তিমূল প্রতিষ্ঠায়– তা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তখন তার লেজুড় ছাত্র সংগঠনের দাসত্বে নিপতিত হবে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। এমনটাই যেন ভবিতব্য। সবাই তা মেনেও নিয়েছে। আবার ক্ষমতার বলয়ে থাকা এসব ছাত্র সংগঠনে অনুপ্রবেশ করছে শিবির ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তি।

শিক্ষায়তন মুক্তবুদ্ধির জায়গা। এখানে যখন বিভিন্ন মত ও পথের মধ্যে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকে না, একটি ছাত্র সংগঠনের নিরঙ্কুশ আধিপত্য থাকে, তখন প্রতিপক্ষের অনুপস্থিতিতে ক্ষমতার বলয়ে থাকা ছাত্র সংগঠনের অভ্যন্তরেই দেখা দেয় স্বার্থের সংঘাত, কলহ ও হত্যাকাণ্ড।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রায় সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অবস্থা আমরা প্রত্যক্ষ করছি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সরকার, রাষ্ট্র, রাজনৈতিক দল, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী জামায়াত এবং এমনকি সুশীল হিসেবে পরিচিত এনজিও এক অশুভ আঁতাতে বিরাজমান অবস্থা জিইয়ে রাখছে। সরকার, রাষ্ট্র এবং উপাচার্যদের প্রধান ও পবিত্র কর্তব্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে উপরে বর্ণিত সকল শক্তির সমঝোতার মাধ্যমে আপাত নিরুপদ্রব শিক্ষার পরিবশ (!) বজায় রাখা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে চিন্তার, দর্শনের, তত্ত্বের দারিদ্রে শুকিয়ে যাচ্ছে, তার অন্যতম নিদর্শন গণজাগরণে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গৌণ উপস্থিতি। এই প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তারুণ্যের গৌরবময় অভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবর্ণ অবস্থান। পরিতাপের কথা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম ফসল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের রক্ষাকবজ ১৯৭৩ আইন আজ কার্যত পর্যুদস্ত। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং আমলাতন্ত্রের কাছে নতজানু বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ ও তাদের প্রশাসন।

এমনকি উচ্চশিক্ষা বা গবেষণায় অংশগ্রহণের জন্য শিক্ষকদের দেশের বাইরে যাবার ক্ষেত্রে অনুমতি নিতে হয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আমলাতন্ত্রের কাছ থেকে। সামরিক স্বৈরতন্ত্রের সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধিকার কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হলেও তা ফলবতী হয়নি প্রতিবাদের কারণে। কিন্তু গত অর্ধযুগ ধরে বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের আমলে আমলাতন্ত্রের এই হস্তক্ষেপ নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ বা শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ কেউ তেমন সরব হননি। আমরা দেখছি বিভিন্নভাবে আমলাতন্ত্রের হস্তক্ষেপ ঘটে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায়।

অপরদিকে, শিক্ষকগণও ১৯৭৩ আইনের শক্তিশালী মর্মবাণী বিস্মৃত হয়ে শিক্ষক হিসেবে তার দায়িত্ব, কর্তব্য ও নিষ্ঠা অবলীলায় পরিত্যাগ করে পূর্বে বর্ণিত অশুভ আঁতাতের অংশীদার হয়ে যাচ্ছেন। তার বিষময় ফল দাঁড়ায়, শিক্ষকসৃষ্ট তথাকথিত আন্দোলন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, আইনের লঙ্ঘন এবং শিক্ষাদান ও গবেষণায় ক্ষমার অযোগ্য অবহেলা। মাছের পচন শুরু হয় তার মস্তিস্ক থেকে। সমাজে মূল্যবোধের পচন শুরু হয় যখন জাতির বিবেক হিসেবে পরিচিত শিক্ষকেরা পদ-পদবী এবং স্বার্থের লোভে নীতিহীন কাজে নিমজ্জিত হতে লজ্জাহীন থাকেন।

শিক্ষকদের এমন করুণ পরিণতির জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকগণ অবশ্য দায়ী নন। তাঁদের নেতৃবৃন্দের দলাদলি এবং আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে আপাত পরস্পরবিরোধী মতের নীতিহীনদের মধ্যে সমঝোতা বিশ্ববিদ্যালয়কে তার বিবেকের জায়গাটি থেকে ক্রমাগত হটিয়ে দিচ্ছে। এর দায়ভার সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকগণ, যারা এর সঙ্গে যুক্ত নন, কিন্তু নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছেন তাঁদেরও কিঞ্চিত নিতে হবে।

আজ ই-মেইল খুলে 'সচলায়তন' নামের একটি ব্লগে প্রকাশিত লেখার লিংক পেলাম। হিমু লিখিত 'ফাঁস' নামের এই স্যাটায়ারে সবিস্তার বর্ণনা আছে আমাদের শিক্ষামন্ত্রী জনাব নুরুল ইসলাম নাহিদের দুর্নীতির ইতিবৃত্ত। ছদ্মনাম ব্যবহার হলেও স্যাটায়ারের ব্যক্তিটি যে বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী তাতে কোনো সন্দেহ থাকে না। বর্তমান মহাজোট সরকারের প্রথম ৫ বছর শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে তাঁর এবং তাঁর এপিএস-এর কথিত দুর্নীতি বিষয়ে আমি লিখেছি। তাতে কোনো ফলোদয় হয়নি।

এ বছরের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর মহাজোট সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে তাঁকেই পুনর্বার শিক্ষামন্ত্রী করা হয়েছে।

'ফাঁস' লেখাটি পড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভাবছিলাম। এমন একজন শিক্ষামন্ত্রীর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের গোঁজামিলের শিক্ষানীতিসমূহ ক্ষতি করছে গোটা শিক্ষাব্যবস্থার। গ্রহণযোগ্য করার নামে কওমি মাদ্রাসার সিলেবাসে আনা হয়েছে নীতিহীন পরিবর্তন। তার আলোকে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন নামের মাদ্রাসায় লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীকে কী শিখানো হচ্ছে, কোন সর্বনাশা পথে দীক্ষিত করা হচ্ছে, তার পরিচয় আমরা পেয়েছি।

২০১৩ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজতের জঙ্গী কর্মকাণ্ডে। গত উপজেলা নির্বাচনে বহু আসনে জামায়াত প্রার্থীদের জয়লাভে নাহিদ সাহেবের শিক্ষানীতির প্রভাব কীভাবে উপেক্ষা করা যাবে? এককালে প্রগতিশীল রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়ের উচিত হবে ওই স্যাটায়ারে বর্ণিত অভিযোগসমূহের ব্যাপারে আপন অবস্থান তুলে ধরা এবং দায়মুক্ত হওয়া। সে কাজে অপারগ হলে অবিলম্বে শিক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করাই হবে তাঁর কর্তব্য।

একজন নীতিভ্রষ্ট মানুষের নেতৃত্বে জাতির ক্ষতিগ্রস্ত বিবেক যে আরও অধঃপতিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের সামনে কোন মুখে কথা বলবেন, জনাব নাহিদ? প্রগতিশীল রাজনীতির অনুসারীর এমন নিদারুণ অবক্ষয় দেখে যদি তরুণেরা হতাশায় নিমজ্জিত হয়, তার দায়ভার কার হবে? সোনার বাংলার সিংহদ্বারে পৌঁছুতে যে জ্ঞাননির্ভর সমাজ ব্যবস্থা প্রয়োজন তাই-বা গড়ে উঠবে কীভাবে?

নানা সংকটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ঘুরে দাঁড়িয়েছে, পথ নির্দেশ করেছে। দর্শনের, নীতির বর্তমান সংকট থেকে পরিত্রাণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেই এগিয়ে আসতে হবে নিজের প্রয়োজনে, দেশের প্রয়োজনে।

ড. মো. আনোয়ার হোসেন: অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।