জেলহত্যাকাণ্ড: আবদুস সামাদ আজাদের সাক্ষাৎকার (তৃতীয় পর্ব)

শারমিন আহমদ
Published : 24 March 2014, 06:27 PM
Updated : 24 March 2014, 06:27 PM

আবদুস সামাদ আজাদের রেকর্ডকৃত সাক্ষাৎকার

তৃতীয় অংশ

এই সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয় উনার কলাবাগানের বাসায়, ১৯৮৭ সালের ৫ জুলাই। সে সময় আমার সঙ্গে ছিলেন আমার মা প্রয়াত সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দিন। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব দুটি প্রকাশিত হয়েছে মতামত-বিশ্লেষণের এই পাতায়। এটি তৃতীয় পর্ব।

[প্রথম অংশটির লিংক দেখুন–

[দ্বিতীয় অংশটির লিংক দেখুন–

আবদুস সামাদ আজাদ: বাইরের গেট থেকে যখন ভেতরে ঢুকছি তখন দেখি জেলরের মন-টন খুব খারাপ। বলে, "স্যার, শুনছি কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট থেকে আগ বাড়িয়ে (আর্মি) আসছে– বগুড়া থেকে খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে আরেকটা দল আসছে– কেমন যেন মনে হচ্ছে।''

সরকারি খবর তাদের কাছে বেশি আসে। জেলখানায় সঙ্গে সঙ্গে নানা রকম খবর পাওয়া যায়। এই গেল ৫ তারিখ আরেকটা থমথমে ভাবের খবর পেলাম। ৫ তারিখ দিবাগত রাতে আবার ও রকম সময় ফায়ারিং, ফায়ারিং, খালি গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায়। আকাশ লাল হয়ে গিয়েছে, এসব খবর পাওয়া যায়।

শারমিন আহমেদ: আসলে ৬ তারিখ দিবাগত রাত। ৭ নভেম্বর।

আ সা আ: ৬ তারিখ দিবাগত রাত। ৭ নভেম্বর। ৪ তারিখে প্রসেশন। ৫ তারিখে জানাজা (চার নেতার)। ৫ তারিখ সকালে শুনলাম শাহ মোয়াজ্জম ও তাহেরউদ্দীন ঠাকুরকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। চার তারিখ সন্ধ্যায় তারা (কেবিনেট মেম্বাররা) জানতে পেরেছে। চার তারিখ সন্ধ্যায় কেবিনেট মিটিং-এ এই ঘটনাগুলি ঘটে। কিন্তু আগে মিলিটারির মধ্যে ইন্টারনালি কিছু হয়ে গিয়েছে। খালেদ মোশাররফ শাফায়াতকে (কর্নেল শাফায়াত জামিল) নিয়ে গিয়েছে। তারপর তারা কেবিনেট ডাকিয়েছে। খলিল সাহেবও ছিলেন তখন– ৪ তারিখ সন্ধ্যায়– এটা পরে শুনেছি। আমার মনে কিন্তু সবসময় 'কন্সপিরেসি ইজ কন্সপিরেসি' (ভাবনা চলছে)।

৬ তারিখে আওয়াজ শুনি– ওই গুলির আওয়াজ শোনা যায়– ঠাস ঠাস ঠাস। আওয়াজ বন্ধ হয় না। সকাল হল। আমরা চিন্তায় যে কী আরও একটা হল। সকাল হল। রোদ উঠল। আস্তে আস্তে জেলখানার চারদিকে আওয়াজ হচ্ছে। শ্লোগান, প্রসেশন। তো সিপাইরা বলল, "এটা সিপাই-জনতার উল্লাস।''

সিপাইরা তো আর খবর পায় নাই যে এদের হাত থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছে। তখনও তারা ঘটনা জানে না। রবদের জেলখানা (জাসদ নেতা আসম আবদুর রব ও মেজর জলিল ৮ নভেম্বর রাজশাহী জেল থেকে মুক্তিলাভ করেন) থেকে ছুটিয়ে আনল ৭ তারিখ সকালে। জাসদের ওয়ার্কাররা আর সিপাইরা একসঙ্গে নেমেছে। নেমে ট্রাক দিয়ে ঘুরে ঘুরে ফায়ারিং করছে। জেলখানার চারদিকে আওয়াজ শোনা যায়। পরে রাতে শুনলাম কামানের আওয়াজ।

সকালে উঠে মনে হয়েছে জেলখানা ঘেরাও হয়ে গিয়েছে। আমরা নিজেদের জীবন নিয়ে চিন্তা করছি যে আমাদের বোধহয় শেষ করে দেবে, এইসব। এই হল ৭ নভেম্বর সকাল। খালি আওয়াজই শুনি। শুনতে শুনতে শেষ পর্যন্ত ১১ টার দিকে খবর পেলাম যে এরা জেলখানার চারদিকে যে ফুর্তি করে যায়। এরা আমাদের অ্যাগেইনস্টে– শুনলাম খালেদ মোশাররফকে মেরে ফেলেছে। খালেদ মোশাররফের ভায়রা বোধহয় (অস্পষ্ট) এয়ারফোর্সে ছিল। পাইলট ছিল। ওদেরকে ফাঁসি দিল (পরবর্তীতে)।

শা আ: আপনি কতদিন জেলে ছিলেন?

আ সা আ: চার বছর। '৭৯ পর্যন্ত। তারপর আমাকে আবার নিয়ে গেল রাজশাহী জেলে। হেলিকপ্টারে।

সৈ জো তা: ওনার ওপর টর্চার করেছিল। ইলেকট্রিক শক দিয়েছিল।

আ সা আ: সুলতান মাহমুদ যে চিফ অব (এয়ার) স্টাফ ছিল সেই আমাকে নিয়ে গিয়েছিল। আমাকে তো রাজশাহী জেলে নিয়ে গেল। সেলে রাখল বহুদিন। সেখানেও তারা অস্ত্র নিয়ে ঢুকেছিল। ভাবলাম হয়তো মেরে ফেলবে।

সৈ জো তা: সেলে, যেখানে খুনী আসামিরা থাকে?

শা আ: তখন জিয়ার আমল—

আ সা আ: সব করল তো জিয়াউর রহমান। ওখান থেকে '৭৭ বা '৭৮ এর শেষে ঢাকায় আনল। তারপর দুইমাস পর পিজিতে। প্রফেসর নুরুল ইসলাম সাহেব ও ব্রিগেডিয়ার মালেক, তারা রেকমেনড করলেন ভর্তিতে।

ভাবি, আপনি কনভিনর (আওয়ামী লীগের) হলেন কোন ইয়ারে?

সৈ জো তা: '৭৭ এ। তখন খুব আন্দোলন। আপনাকে তখন পিজিতে আনল।

আ সা আ: তাহলে '৭৭ এর বোধহয় নভেম্বরের শেষের দিকে আমাকে পিজিতে নিয়ে এল। পুরা '৭৮ থাকলাম পিজিতে। ট্রিটমেন্ট হল। বোর্ড বসল। ব্রিগেডিয়ার সিরাজ জিন্নাত, ব্রিগেডিয়ার মালেক চিকিৎসা করলেন। নুরুল ইসলাম ছিলেন চেয়ারম্যান। প্রফেসর ইউসুফ আলীও ছিলেন। ওই সময় ভাবি যেতেন, অন্যান্যরা যেতেন, দেখা হত। তখন ভাবি পার্টিতে– লিডারশিপে।

সৈ জো তা: তখন তো পার্টিতে একটা আন্দোলন ছিল, গতি ছিল–

আ সা আ: তখন তো ওয়ার্কাররা চাঙ্গা হয়ে ছিল।

শা আ: আমি যখন আম্মার সঙ্গে যশোরে তখন ওয়ার্কারদের মধ্যে সে কী আলোড়ন! তারা ফুল-ফ্লেজেড কাজ করছে।

আ সা আ: জিয়াউর রহমানের সময় বহু আর্মি অফিসার–

শা আ: মেরেছে, তো বলে যে পাঁচ-ছয় হাজার লোককে তারা খুন করেছে–

আ সা আ: খুন করেছে। জেলের ভেতর নিয়ে তারা ফাঁসি দিয়েছে। বগুড়ার আর্মির লোকদের রাজশাহীতে আনল। ওরা ক্যু করেছিল। তাদেরকে হাতে-পায়ে চেন দিয়ে আনল। ক্যু উনি নিজেই করালেন। ১৭-১৮ টা ক্যু করালেন ইন কোল্ড ব্লাড।

শা আ: আচ্ছা কাকু, আপনার সঙ্গে জেলে আব্বুর কী কী ধরনের কথাবার্তা হত?

আ সা আ: আমাদের দুজনের মধ্যে এত আন্তরিকতা ছিল কল্পনা করতে পারবে না। কোনো কথা আমাদের দুইজনের মধ্যে গোপন ছিল না। ভবিষ্যৎ, বর্তমান, অতীত। অতীতের ভুল-টুল সমন্ধে আলোচনা হত। আমরা যেভাবে স্বাধীনতা আনলাম, সেভাবে যদি থাকতে পারতাম, তাহলে স্বাধীনতা অন্যরকম হয়ে যেত। এর মধ্যে অনেক কথাই হয়েছে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাতেও কনট্রাডিকশনগুলি মোটামুটি সেটেল করে এনেছিলাম।

মনসুর আলী সাহেব তো বাকশালের সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। ভবিষ্যতে তাজউদ্দীন সাহেব পার্টি বিলড আপ করবেন (মনসুর আলী সাহেবের সঙ্গে) এই আলাপ হত। মনসুর আলী সাহেব তো আমার সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, "আপনি তাজউদ্দীনকে বোঝান সে ছাড়া পার্টি হবে না।''

তাজউদ্দীন সাহেব তো খুব straight মানুষ ছিলেন। ওই যে যারা অয়েলিং করত তারা তো-–

সৈ জো তা: উনি এগুলো পছন্দ করতেন না…

আ সা আ: তাজউদ্দীন সাহেব যে সব কথা বলতেন সেগুলি তো ফ্যাক্টলেস ছিল না। লিবারেশনের সময় আমরা কী আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতাম। এই সময় ছিল তাজউদ্দীন সাহেব সৈয়দ সাহেবকে বুঝিয়ে দিতেন। আমি কমন ম্যান ছিলাম। তারপর ইন্ডিয়ান গভরমেন্টের সঙ্গে এগ্রিমেন্টটা করলাম দুজনের সিগনেচারসহ। তাজউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে পরামর্শ করে এটা করালাম। লাস্ট যেটা হল– আমি তাজউদ্দীন সাহেব আর সৈয়দ সাহেব– শেষ যেটা হল…

শা আ: কোন বিষয়ের সিগনেচার এটা?

আ সা আ: ইন্ডিয়ানরা যে এখানে আসবে, জয়েন্ট।

[বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে মর্যাদাশীল চুক্তি যাকে বলা যেতে পারে, যাতে বলা হয়েছে যে ভারত বাংলাদেশকে স্বীকৃত দেওয়ার পরই মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে ভারতীয় মিত্রবাহিনী বাংলাদেশে প্রবেশ করবে। বাংলাদেশ সরকার যখনই মিত্রবাহিনীকে সৈন্য প্রত্যাহার করতে বলবে, তখুনি তারা বিদায় নেবে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন।]

শা আ: মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনী?

আ সা আ: হ্যাঁ, অ্যালাইড যেটা হল। আমরা জয়েন্ট অ্যালাইড ফোর্স করলাম। দেখলাম, না, আসলে পারা যাবে না। এই শাহ মোয়াজ্জম ওনারা যা করেছেন। বলে যে, "আমরা কি দালাইলামা হবার জন্য এসেছি?''

তাজউদ্দীন সাহেবের বিরুদ্ধে কত কিছু ষড়যন্ত্র– সেই সময়ই এগুলো হয়েছে।

সৈ জো তা: (দীর্ঘশ্বাস) কী সব!

আ সা আ: সেভেনটি ওয়ানের স্বাধীনতার সময় আমরা যখন আগরতলায় গেলাম, তাজউদ্দীন সাহেবের ওখান থেকে মেসেজ আমি পেয়ে গেলাম। আমি তো সাধারণ একটা ড্রেসে গিয়েছি, কেউ বোঝেনি। এপ্রিলের ৯ তারিখ বোধহয় আগরতলায়। দুপুরবেলা তাহেরউদ্দিন ঠাকুর আর চাষী আলম (মাহবুব আলম চাষী, এই দুই ব্যক্তি মোশতাকের আস্থাভাজন), ওরা তো খুব অ্যাকটিভ ছিল, আমাকে বলে, "সামাদ ভাই, আপনি একটু এগিয়ে আসেন।''

অন্যান্য এমপিরাও আছে। মিজানুর রহমান চৌধুরীরা ক্যালকাটায়। মনে করেছে ওখানে কেবিনেট হবে। আমরা সিলেট, কুমিল্লার, ওই সাইডে যারা ছিল সব রয়ে গেল। কিন্তু মেইন লিডাররা, তারা চলে গেছে ক্যালকাটায় তাড়াতাড়ি। তারা মনে করেছে ওখানে কেবিনেট হয়ে যাবে।

তো আমি গিয়েই বললাম, "একটা গভরমেন্ট ফর্ম করতে হবে, না হলে হবে না।''

তখন এটা শুনেই তাহেরউদ্দিন ঠাকুর বলে যে, "একটা অফিস আমরা খুলেছি। সিঁড়ির নিচে একটা অফিস।''

রাত আড়াইটার সময় চাষী আলম এসে বলে, "স্যার, একটু ঘুরে আসি। উনি এসে গেছেন।''

"কে এসে গেছেন?''

যেয়ে দেখি মোশতাক সাহেব টুপি-আচকান পরে শুয়ে আছে উপরতলায়।

শা আ: কোথায় শুয়ে আছে?

আ সা আ: আগরতলার একটা বাড়িতে– যে বাড়িতে আমরা থাকি আর কী। এর আগেই কিন্তু একটা অফিস করেছে আমাদেরসহ। বলে, ''অফিস করে আপনাকে নিয়ে অগ্রসর হব। কাজের জন্য সেন্টারালাইজ করব।''

সন্ধ্যার দিকে আমি, জেনারেল ওসমানী (তখন অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল, ১০ এপ্রিল প্রথম বাংলাদেশ সরকার গঠনের পর জেনারেল পদে উন্নীত) ও মোশতাক রেস্টহাউসে গেলাম। লক্ষ্য করলাম মোশতাকের হাবভাব। যেন নিজেই গভরমেন্ট ডিক্লেয়ার করবে।

সৈ জো তা: ওদিকে কিন্তু ফার্স্ট এপ্রিল ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে কথা হয়। ১ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ দিল্লিতে পৌঁছেন এবং ৩ এপ্রিল নয়াদিল্লিতে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ওনার ঐতিহাসিক সাক্ষাৎকার হয়। সেদিন তিনি ইন্দিরা গান্ধীকে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠনের কথা বলে বলেছিলেন যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ একান্ত বাংলাদেশেরই। এই যুদ্ধ করবে বাংলাদেশের মুক্তিকামী যোদ্ধা-জনতা। এই যুদ্ধর আন্তর্জাতিকীকরণ তারা চান না। তিনি একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিঃশর্তভাবে সহযোগিতা লাভের জন্য অপর এক স্বাধীন রাষ্ট্রের কাছে এসেছেন।

আ সা আ: ওটা আরেক চ্যাপ্টার। আমার চ্যাপ্টার আমি বলছি। ওখানে যেয়ে বসলাম। অন্যান্য এমপিরা এল। তাজউদ্দীন সাহেব সৈয়দ সাহেবকে আনলেন তুরা থেকে।

[১১ এপ্রিল তাজউদ্দীন আহমদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্ধান পান। তিনি তাকে ১০ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গঠনের কথা এবং তাঁকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি করে কেবিনেট গঠনের কথা জানান। তারপর তাঁকে নিয়ে বিএসএফের ডাকোটা প্লেনে আগরতলায় ফেরেন।]

মনসুর আলী সাহেবকেও আনল একটা মিলিটারি প্লেনে।

শা আ: তুরা?

সৈ জো তা: হ্যাঁ, তুরা–

আ সা আ: তুরা পাহাড়। ময়মনসিংহর বর্ডারে–

সৈ জো তা: ওখান থেকে আনল নজরুল ইসলামকে–

আ সা আ: ওখান থেকে নিয়ে এল আগরতলায়। আমরা মোটামুটি চাইছিলাম তেলিয়াপাড়া সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া– সিলেটের বর্ডারে তেলিয়াপাড়ায় একটা বাগান আছে, সেখানে আমরা হেডকোয়ার্টার করব। ওখানে যারা ছিলাম আর কী। পাকিস্তান আর্মি ঢুকতে পারে নাই। চারদিকে বাগান-টাগান আছে। তেলিয়াপাড়া লাস্ট স্টেশন সিলেটের। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বর্ডারে। কুমিল্লার বর্ডারে। তেলিয়াপাড়া লিবারেটেড তো। জেনারেল রব সাহেব বললেন, "তেলিয়াপাড়াটা ভালো।''

তখন তাজউদ্দীন সাহেব ওনারা এসেছেন। তখন তাজউদ্দীন সাহেব রিপোর্ট করলেন যে ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছে। মোশতাক তখন বুঝল যে ঘটনা তো হয়ে গিয়েছে। উনি চট করে উঠে সালাম দিয়ে বললেন, "আসি।''

শা আ: ১০ তারিখ এ কথা তাজউদ্দীন সাহেব জানালেন?

আ সা আ: ৯ তারিখ রাতে। ১০ তারিখ পরে আসবে।

সৈ জো তা: ১০ তারিখে তো রেডিওতে অ্যানাউন্স হল।

[বাংলাদেশ সরকার গঠনের ঘোষণা, সরকারের নীতিমালা, মুক্তিযুদ্ধর মাধ্যমে দেশ স্বাধীন, পাকিস্তান সরকারের গণহত্যা সম্পর্কে বহির্বিশ্বকে অবহিত করা এবং বাংলাদেশের মুক্তির সংগ্রামে বিশ্ববাসীর সমর্থন লাভ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ভাষণ দান করেন।]

আ সা আ: ৯ তারিখ সন্ধ্যায় খবর পেয়ে আমি মোশতাককে বললাম, "মোশতাক সাহেব, আপনি উঠেন।''

আমি তো ঠিক সময়ে শক্ত হই।

শা আ: উনি কী বললেন?

আ সা আ: উনি উঠে গেলেন। আমাদের আলাপের মধ্যে তাজউদ্দীন সাহেব রিপোর্ট করলেন যে এই হয়েছে। উনি রিপোর্ট করলেন মিসেস গান্ধীর সঙ্গে দেখা করার কথা। বললেন, ''এখন কী করার দরকার?''

আমি বললাম, "বঙ্গবন্ধু যখন অনুপস্থিত, তাকে প্রেসিডেন্ট করা ছাড়া উপায় নাই। কারণ উনি তো উপস্থিত হয়ে পার্টিসিপেট করতে পারবেন না। আর ডেপুটি লিডার উনি (সৈয়দ নজরুল ইসলাম), ওনাকে অ্যাকটিং প্রেসিডেন্ট আর তাজউদ্দীন সাহেব– বাকি সেক্রেটারি।''

এটা একটা কথা আলাপ করছি, এর মধ্যে উনি উঠে গেলেন 'স্লামালাইকুম' বলে। আমি বললাম, "মোশতাক সাহেব, বসেন। সমস্ত দেশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে– কী করব না করব– একটা জায়গায় তো আসতে হবে।''

বগুড়াও ফল করে যাচ্ছে। কুষ্টিয়ার মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা তখনও ফ্রি ছিল। কর্নেল ওসমান ডিক্লেয়ার করল আমাদের চুয়াডাঙ্গায় হেডকোয়ার্টার করার কথা।

সৈ জো তা: চুয়াডাঙ্গার ওসমান– মেজর ওসমান (মেজর ওসমান কুষ্টিয়ায় পাকিস্তান সেনাদের বিরুদ্ধে অসম সাহস ও বীরত্বের সঙ্গে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন)।

আ সা আ: হ্যাঁ, হ্যাঁ। ডাক্তার আসহাবুল হক তারাও সেখানে একটা ডিক্লেয়ারশন দিয়ে দিল যে ওখানে হেডকোয়ার্টার হবে।

[বাংলাদেশ সরকারের রাজধানী চুয়াডাঙ্গায় হবে, এই ঘোষণাটি উচ্ছাসের বসে ফাঁশ করে দেওয়ার ফলে পাকিস্তান সেনারা চুয়াডাঙ্গায় বোমাবর্ষণ করে। এর ফলে ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে প্রথম বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানের কথা গোপন রাখা হয়। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাজধানী ওই স্থানের নামকরণ করেন 'মুজিবনগর'।]

ঠিক হল আমরা বসব আবার। ভোর হয়ে গিয়েছে তো– সকাল হয়ে গিয়েছে। একটা বাংলো গেস্ট হাউস ছিল– সেখানে আমাকে নিয়ে গেল। সেখানে তাজউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে আলাপ করলাম। ঠিক হল সৈয়দ সাহেব, মনসুর আলী সাহেব আর আমি– আমরা তিনজন মিলে ডিসাইড করব কী করা যায়, আমাদের মধ্যে মিনিস্টার কে হবে, কী করা না-করা যায়…

সৈ জো তা: আর কামরুজ্জামান সাহেব?

[উনি তখন কোলকাতায়।]

আ সা আ: তাজউদ্দীন সাহেব বললেন, "আপনারা বসেন, বসে ডিসাইড করেন।''

শা আ: ডিসাইড করবেন কি?

আ সা আ: সরকার গঠন করা। কারণ একটা সিদ্ধান্তে যেতে হবে তো।

সৈ জো তা: মানে লবি কনটিনিউ?

আ সা আ: মানে, একটা লাইনে আনতে হবে তো। ভোরবেলায় মান্নান (আবদুল মান্নান এমপি) সাহেবকে বললাম "মান্নান সাহেব, একটা গভরমেন্ট না করলে হবে না।''

তখন সৈয়দ সাহেব, মনসুর আলী আর আমি বসলাম। এইভাবে সারাদিন গেল। এই ৩ টা ৪ টার সময় সৈয়দ সাহেব বললেন, "কীভাবে গভরমেন্ট হবে?''

আমি বললাম, "একটা তো হাইকমান্ড আছে আমাদের। বঙ্গবন্ধু– যারা অফিস বেয়ারার ছিলেন তাদেরকে নিয়ে ডিল করেছেন। তাজউদ্দীন সাহেব সেক্রেটারি– সবসময় ওনার সঙ্গে ছিলেন। আপনি আছেন। মনসুর আলী সাহেব এখনও ভাইস প্রেসিডেনট, মোশতাক ভাইস প্রেসিডেন্ট, কামরুজ্জামান সাহেব অল পাকিস্তানের (আওয়ামী লীগ) সেক্রেটারি। এর বাইরে গেলে কিন্তু সবাই মিনিস্টার হতে চাইবে। এত মিনিস্টারের তো দরকার নাই। এনাদের তো কোনো ডিউটি নাই, ফাংশন নাই।''

সৈ জো তা: এটা তো ওয়ার টাইম।

আ সা আ: হ্যাঁ, এটা ওয়ার টাইম। সৈয়দ সাহেবকে আমি বললাম, "আপনার একটা কন্সটিটিউশনাল ভূমিকা আছে, সেটা হল পার্টিগতভাবে আপনি অ্যাকটিং ভাইস প্রেসিডেন্ট। দলীয়ভাবে আপনি ডেপুটি লিডার, ইলেকটেড। ইলেকটেড মেম্বাররা আপনাকে ডেপুটি লিডার করে রেখেছে। সুতরাং আমরা দুইমাস পরে সংসদের মেম্বারদের ডাকব এবং এই গভরমেন্টকে আমরা কনফিডেন্স দেব।''

এই বলে আমরা বাইরে গেলাম। তাজউদ্দীন সাহেব তো ওপরে রয়েছেন। তারপর আমরা তিন-চারজন আবার বসলাম। কিন্তু মোশতাক আসে না। তখন তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এসে আমাকে একটা কথা বলল, "সামাদ ভাই, একটা কাজ করেন, আমরা বিদেশে আছি– এখন তো সারভাইব করার ব্যাপার– ওকে (মোশতাককে) একটা পজিশন দিয়ে দেন– ফরেন মিনিস্টারের।''

শা আ: আহহা!

আ সা আ: তাজউদ্দীন সাহেব, আমি, সৈয়দ সাহেব, কামরুজ্জামান আসেননি– উনি ক্যালকাটায় ছিলেন। আমরা চারজন (মনসুর আলীসহ) মান্নান সাহেবকে ডাকলাম। ডেকে বললাম, "ঠিক আছে দিয়ে দেন।''

তাকে বাদ দিলে আবার মনে করবে আমরা যেন–

সৈ জো তা: তাকে আয়ত্তের মধ্যে আনা।

আ সা আ: রাতে, সন্ধ্যার পর সমস্ত এমপিদের– যারা ছিল ওখানে– ডেকে কেবিনেট ঘোষণা করা হল। ওখানে ইন্ডিয়ান চ্যানেল যারা ছিল তারা বলল, "ক্যাপিটাল ওদিকে হবে, ক্যালকাটার সাইডে– ওয়ার্ল্ডটা ওদিকে– এই আগরতলার দিকে পড়লে যোগাযোগের অসুবিধা।''

[প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম রাজধানী মুজিবনগর, যার নামকরণ তাজউদ্দীন আহমদ করেছিলেন, তা ছিল মেহেরপুরে, বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে। তাজউদ্দীন আহমদ বলেছিলেন যে যুদ্ধাবস্থায় সরকার যেখানে যাবে তার নাম হবে 'মুজিবনগর'।]

পরদিন গভরমেন্ট ঘোষণা করা হল। গেলাম ক্যালকাটা। জায়গা পাওয়া যায় না। বিএসএফের– কী নাম ছিল? গোলোক রায়?

শা আ: গোলোক মজুমদার (বিএসএফের পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের আইজি)–

আ সা আ: গোলোক মজুমদারের হেড অফিসে আমরা থাকতাম। সেখানেই আমরা গভরমেন্ট ফর্ম করলাম। গভরমেন্ট তো আর বাইরে যেতে পারে না– ইন্ডিয়ার ভেতরে কাজ। তখন আমরা স্ট্যান্ড নিলাম যে আমরা সেন্ট্রাল গভরমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করব। ওই মিসেস গান্ধীর সঙ্গে দেখা হল আবার। তারা বাইরের জগতে (বাংলাদেশের পক্ষে) প্রোপাগাণ্ডা করবে। থিয়েটার (৮ নম্বর) রোডে হেড অফিস করা হল। থাকবার জায়গা যেটা, আমি সেটা আরও পরে পেয়েছি।

ভাবি, আপনি তখনও আসেননি।

সৈ জো তা: আমি গেলাম মে মাসের একদম লাস্টে।

[২৫ মে, ১৯৭১, মৃত্যু তালিকাভুক্ত বেগম তাজউদ্দীন, চার নাবালক ছেলেমেয়ে নিয়ে, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চক্ষু এড়িয়ে সীমান্ত পার হন।]

আ সা আ: ওই মে মাসেই এটা হল। অফিস হল ওই থিয়েটার রোডে। তাজউদ্দীন সাহেব ওই থিয়েটার রোড ছাড়েননি।

[তাজউদ্দীন আহমদ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তিনি পারিবারিক জীবন যাপন করবেন না। রণাঙ্গনে যোদ্ধারা যদি পরিবার ছেড়ে থাকতে পারেন, তাহলে তিনি যুদ্ধকালীন সময়ে তাদের প্রধানমন্ত্রী হয়ে কেন পারবেন না? ৮ নম্বর থিয়েটার রোড ছিল প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের রাজধানী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও বাসস্থান। অফিস কক্ষের পাশেই একটি রুমে তিনি থাকতেন। নিজের কাপড় নিজেই ধুতেন এবং আহার-নিদ্রা প্রায় ত্যাগ করে তিনি স্বাধীনতার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছিলেন।]

সৈ জো তা: ২৭ মে যেয়ে উঠলাম (আগরতলা হতে কোলকাতায়)–

আ সা আ: (আমাকে উদ্দেশ্য করে) তোমরা যে বাড়িতে উঠলে– সে বাড়িতে তাজউদ্দীন সাহেব দিনের বেলা খালি দেখা করে আসত–

শা আ: দিনের বেলায়ও যেত কিনা– দুবার বোধহয় গিয়েছিল।

[একমাত্র পুত্র দেড় বছরের শিশু সোহেল মারাত্মক রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে। তাজউদ্দীন আহমদকে সে খবর জানালে তিনি দেখতে যেতে অপারগতা জানিয়ে বলেন যে তার পুত্রকে তিনি অন্য সবার পুত্র থেকে আলাদা করে দেখেন না। যুদ্ধাবস্থায় তার কাছে সব শিশুই সমান। পরে গোলোক মজুমদার এবং বিএসএফের নিরাপত্তা অফিসার শরদিন্দু চট্টোপাধ্যায়ের পীড়াপীড়িতে তিনি অসুস্থ পুত্রের শিয়রে অল্প কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে দোয়া করে চলে আসেন। দ্বিতীয়বার ৬ ডিসেম্বর, ভারতের বাংলাদেশকে স্বীকৃতির দিন, তার পরিবারের উল্টা দিকের ফ্ল্যাটে, সৈয়দ নজরুল ইসলামের সঙ্গে মিটিং সেরে যাবার পথে তিনি কয়েক মিনিটের জন্য পরিবারের সঙ্গে দেখা করে অফিসে চলে যান।]

আ সা আ: উনি কিন্তু অফিস ছাড়লেন না। বললেন, "লিবারেশন না হলে যাব না।''

সৈয়দ সাহেব– ওনারা গেলেন ওখানে।

[মন্ত্রিপরিষদের পরিবারদের জন্য ভারত সরকার, পার্ক সার্কাসে ড. সুন্দরী মোহন এভিনিউতে বসবাসের ব্যবস্থা করে। ওখানেই বাকি মন্ত্রীরা পরিবারসহ থাকতেন।]

ওখানে বসেও– ওই বাড়িতে বসেও কন্সপিরেসি হয়েছে। তারপর শিলিগুড়ি গেলাম– সমস্ত এমপিদের ডাকা হল।

[জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত শিলিগুড়ির এই সম্মেলনে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সরকারকে পূর্ণ সমর্থন জানায়। বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অনুসারী ছাত্র নেতাদের প্রচণ্ড বিরোধিতা এবং মোশতাকের ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও এই সম্মেলন সফল হয়। মোশতাক ও মনি বাংলাদেশ সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাজ করে।]

সৈ জো তা: কন্সপিরেসি কারা করল?

আ সা আ: মোশতাকরা। সে তো পার্লামেন্টারি অ্যাফেয়ার নিজ হাতে রেখেছে। মোশতাক নো কনফিডেন্সের চক্রান্ত করেছিল। তারপর বিভিন্ন জেলার সঙ্গে আলাপ করে সৈয়দ সাহেবকে বললাম। সৈয়দ সাহেবের তো কী পজিশন। সৈয়দ সাহেব করলেন কী, ওখানে (শিলিগুড়ি) যাবার পরে বক্তব্যটা খুব কড়াভাবে দিলেন যে, "আমরা এখন সংগ্রামে যাচ্ছি……"

সৈ জো তা: তখন এই গভরমেন্টের অ্যাগেইনস্টে একটা ইয়াং বাহিনীকে মোশতাক তার দলে রেখেছিল।

আ সা আ: সেটা তো পরে– তারপরে সেখানে পারল না– দেখল সব গোলমাল হয়ে গিয়েছে। সৈয়দ সাহেবের বক্তব্য–

সৈ জো তা: সৈয়দ সাহেব তখন খুব strong ছিলেন–

আ সা আ: খুব strong, তাঁর সঙ্গে বহু আলাপ হয়েছে। সৈয়দ সাহেবকে বোঝালে উনি কিন্তু খুব strong থাকতেন।

শা আ: সৈয়দ সাহেব কোথায় বক্তৃতা দিলেন?

আ সা আ: শিলিগুড়িতে। পার্লামেন্টারি পার্টির মিটিং ডাকলেন। একটা নিয়ম আছে। একটা কন্সটিটিউশনাল পজিশন দিতে হবে তো। ইলেক্টেড গভরমেন্টের যারা মেম্বার আছে তারা একটা কনসলিডেটেড প্রস্তাব পাশ করল যে এই সরকার প্রভিশনাল সরকার। এর আগে ১৭ এপ্রিল আমরা মুজিবনগরে গভরমেন্ট ঘোষণা করলাম।

সৈ জো তা: শপথ নিলাম মুজিবনগরে।

[গণপ্রজাতন্ত্রী প্রথম বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিসভার আনুষ্ঠানিক শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান।]

আ সা আ: ইউসুফ আলী তো আগে জানতেনই না। তাঁকে আগে পাঠিয়ে দিয়েছি। পড়বার (স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র) সময় তাঁর হাতে দিয়েছি। কেউ একজন ঘোষক, কেউ একজন পাঠক। এগুলো তো কয়েকজন মিলে– দুই-তিন জন মানুষ মিলে আমরা করেছি। স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস তো আছেই, একের পর এক।

শা আ: আমরা যাতে একতাবদ্ধ থাকি, এখন এই সরকারে যোগদান করি, এটার পক্ষে সৈয়দ সাহেব বক্তব্য রাখলেন–

আ সা আ: সৈয়দ সাহেব বক্তব্য রাখলেন যে "আমরা struggle এ আছ– আমরা (সম্মিলিতভাবে) যা যা সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই হবে– (এমপিদের উদ্দেশ্যে) আপনারা যার যার এরিয়ায় যান, জোনাল কমিটি করেন।'' যা যা প্রোগ্রাম ছিল তার পক্ষে কড়া বক্তব্য দেন। তারপর মনসুর আলী সাহেবকে বলেন, "আপনি প্রিজাইড করেন।'' মনসুর আলী সাহেব প্রিজাইড করলেন। মনসুর আলী সাহেবও শক্ত ছিলেন। মোশতাকের কন্সপিরেসি ওইভাবে ভেঙে যায়– নো কনফিডেন্স আনার তার ক্ষমতাই নাই– ওই লাইনেই এল না–

সৈ জো তা: পারল না। চেষ্টা করেছিল– পারল না।

শা আ: এ রকম হীন তো মোশতাক ছাড়া কেউ ছিল না?

আ সা আ: নাহ! হি ইজ দ্য 'হীন'।

সৈ জো তা: সব খেলোয়াড়ের একটা মাস্টার লিডার থাকে না! তোমার আব্বুর দৃঢ়বিশ্বাস ছিল যে, মুজিব হত্যার পর সামাদ সাহেব যদি ছাড়া থাকতেন, তাহলে উনি কারেক্ট ডিসিশন নিতে পারতেন। পার্টিটাকে ঠিক রাখতে পারতেন।

শারমিন আহমেদ: শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা।