বিশ্বাসের ভাইরাস: রাজীব হায়দারের রক্তবীজ

অভিজিৎ রায়
Published : 20 Feb 2014, 02:29 PM
Updated : 20 Feb 2014, 02:29 PM

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর সঠিক বিচারের প্রত্যাশায় শাহবাগ তখন উত্তাল। শুরুটা হয়েছিল কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার রায় কেন্দ্র করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণা করেছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। শতাধিক হত্যা ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী ছয়টি অভিযোগে কাদের মোল্লার জড়িত থাকার বিষয়গুলো 'সন্দেহাতীত'ভাবে প্রমাণিত হওয়া সত্ত্বেও মাননীয় আদালত ফাঁসি না দিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন।

সাধারণ জনগণ, বিশেষত তারুণ্যোদীপ্ত ছাত্র এবং অ্যাকটিভিস্টরা মেনে নেয়নি সেই রায়। কাদের মোল্লার এ রায়ের খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক ও ব্লগসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। মোল্লার ফাঁসির দাবি নিয়ে 'ব্লগার এন্ড অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট নেটওয়ার্ক'-এর ব্যানারে ওইদিন বিকেলেই শাহবাগে জড়ো হয় একদল তরুণ।

আর এ খবর ছড়িয়ে পড়লে তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ জড়ো হতে শুরু করে শাহবাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছাত্ররা দলে দলে যোগ দিতে থাকেন শাহবাগে। আশেপাশের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শিক্ষার্থীরা ছুটে যান শাহবাগে। ছুটে যান নারীরা। ধীরে ধীরে এই আন্দোলনের জোয়ার ঢাকা শহর অতিক্রম করে যায়। কাদের মোল্লাসহ সকল যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ছাত্রজনতাসহ সর্বস্তরের মানুষের টানা গণঅবস্থান শুরু হয় সেখানে।

সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে সে খবর ছড়িয়ে পড়ে সব জায়গায়। দ্রুতই শাহবাগের জনসমাবেশ পরিণত হয় এক বিশাল জনসমুদ্রে। সকল শ্রেণির মানুষের পাশাপাশি এ আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেন দেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবী মহলসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং দেশের স্বাধীনতাকামী প্রত্যেক মানুষ।

একাত্তরের জীবিত মুক্তিযোদ্ধারা ও বুদ্ধিজীবী মহল শাহবাগের এ আন্দোলনকে আজ আখ্যায়িত করেন 'দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ' হিসেবে এবং তরুণদের আখ্যায়িত করেন 'দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা' হিসেবে। শাহবাগ নামাঙ্কিত হয় 'প্রজন্ম চত্বর' হিসেবে। ৮ ফেব্রুয়ারি তরুণদের এ অবস্থানের নাম দেওয়া হয় 'গণজাগরণ মঞ্চ'। দেশীয় মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক সকল মিডিয়াও ফলাও করে প্রচার করে শাহবাগের এই 'গণজোয়ার'-এর খবর।

এদিকে কয়েক লাখ লোকের এ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সমস্যা তৈরি হয় ট্রাইব্যুনালের আইন নিয়ে। আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে আদালতের দণ্ডাদেশের পর আসামিপক্ষের আপিলের সুযোগ থাকলেও বাদিপক্ষ বা সরকারের আপিলের সুযোগ ছিল না। আইনের এই ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো পরিবর্তন করার দাবি জানায় গণজাগরণ মঞ্চ।

দুর্নিবার আন্দোলন থেকেই তৈরি হয় সুগঠিত নেতৃত্ব। ইমরান এইচ সরকার, মারুফ রসুলেরা সে সময় দেখিয়েছিলেন কীভাবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে প্রাণের দাবির বাস্তবে রূপ দেওয়া যায়। রাজপথে আন্দোলনের পাশাপাশি তারা রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন। সরকারও এ আইন সংশোধনে উদ্যোগী হয়।

দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে সরকারের আপিলের সুযোগ রেখে, ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস সংশোধন বিল ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। এ আইন পাস হওয়ায় কাদের মোল্লার রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ পায় রাষ্ট্রপক্ষ। আপিলের ধারাবাহিকতায় ১৭ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে (৪:১) আবদুল কাদের মোল্লাকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেন।

তবে ফাঁসির দণ্ডাদেশ হলেও এর বাস্তবায়ন নিয়ে কম নাটক হয়নি। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর। এই রায়ের অনুলিপি সুপ্রিম কোর্ট থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়। ৮ ডিসেম্বর বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ থেকে কাদের মোল্লার মৃত্যু পরোয়ানা ঢাকা কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়।

কিন্তু ঘোষিত সময়ের দেড় ঘণ্টা আগে হঠাৎ করেই কাদের মোল্লার ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিত করেন চেম্বার বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। তিনি ১১ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ফাঁসির কার্যক্রম স্থগিত করে বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। এভাবে ফাঁসি শেষ মুহূর্তে স্থগিত করে শুনানির জন্য পাঠানোর ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে একেবারেই 'তুলনারহিত' বলা চলে। অনেকের হৃদয়ে বাজছিল দুরাশার অশনি সংকেত।

কিন্তু সেই সংকেত মিথ্যে প্রমাণ করে শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করে দেন। এর ফলে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে আইনগত আর কোনো বাধা থাকল না।

বৃহস্পতিবার রাত ১০টা এক মিনিটে কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। শাহবাগ আন্দোলনের সূচনা না হলে কাদের মোল্লার ফাঁসি আমরা দেখতে পেতাম না, এ কথা আজ নির্দ্বিধায় বলা যায়। সেই শাহবাগ আন্দোলনেরই এক উদ্দীপিত তরুণ ছিলেন রাজীব হায়দার, অনলাইনে যার পরিচয় ছিল 'থাবা বাবা' নামে। থাবা বাবাদের মতো তরুণদের কারণেই শাহবাগ আন্দোলন সফল হতে পেরেছে এটা বোধহয় অতিশয়োক্তি নয়।

আজকের এই দিনে থাবা তোমায় মনে পড়ে

কাদের মোল্লার ফাঁসির মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, তা থাবা বাবা দেখে যেতে পারেননি। তাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল এক বছর আগে। আগেই বলেছি, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে শাহবাগের গণজাগরণ চত্বরের গণআন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন ব্লগার রাজীব হায়দার শোভন। তিনি শুধু একজন ব্লগারই ছিলেন না, পেশাগত জীবনে ছিলেন স্থপতি। তার অপরিসীম মেধার স্বাক্ষর হয়ে থাকবে 'মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিসৌধের নকশা' যা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়েছে। রাজীবকে গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি পল্লবী থানার পলাশনগরে তার বাড়ির অদূরে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

কারা খুন করেছিল রাজীবকে? কেন? অনেকেরই বোধহয় সে সময়কার কথা মনে আছে। রাজীবকে হত্যার চার দিন আগে জামাতি ব্লগ বলে পরিচিত (অধুনা-বিলুপ্ত) 'সোনার বাংলা' ব্লগে 'থাবা বাবা' তথা রাজীবের নামে উস্কানিমূলক পোস্ট দেওয়া হয়েছিল। এমনকি রাজীব মারা যাবার পরেও শাফিউর রহমান ফারাবী নামে এক হিযবুত তাহরীরের প্রাক্তন সদস্য ফেসবুকে তার স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন এই বলে, ''যেই ইমাম থাবা বাবার (রাজীব) জানাজা পড়াবে, সেই ইমামকেও হত্যা করা হবে।''

পুলিশ তাকে গ্রেফতারও করেছিল সে সময় (নিউজ এখানে)। তবে থাবা বাবা হত্যার পেছনে কারা ছিল এর পরিষ্কার উত্তর পাওয়া গেল মার্চ মাসের ২ তারিখে যখন নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন ছাত্র -– ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দ্বীপ, মাকসুদুল হাসান অনিক, এহসান রেজা রুম্মন, নাঈম সিকদার ইরাদ ও নাফিজ ইমতিয়াজকে আটক করা হল। তারা পাঁচজনই এই হত্যাকাণ্ডে সরাসরি অংশ নেওয়ার কথা স্বীকার করেছিলেন।

নর্থ সাউথের আরেক ছাত্র সাদমান ইয়াছির মাহমুদকে গ্রেফতার করা হয় ১৪ আগস্ট রাজধানীর ধানমণ্ডি থেকে। তিনিও রাজীব হত্যায় জড়িত ছিলেন বলে পুলিশ দাবি করেছে। আসামীরা পরস্পর যোগসাজশে ব্লগার রাজীবকে হত্যা করেছে বলে পত্রিকায় এসেছে। এদের নির্দেশদাতা ছিলেন শিবেরের 'বড় ভাই' রেজওয়ানুল আজাদ রানা। তিনি অবশ্য এখনও পলাতক।

সম্প্রতি (এ বছরের জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে) ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিমের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। (নিউজ এখানে কিংবা এখানে)। অভিযোগপত্রে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রধান জসীমউদ্দিন ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাত শিক্ষার্থীসহ মোট আটজনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশের অভিযোগে বলা হয়েছে-–

"আটক থাকা সাতজনসহ মোট আটজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে চার্জশিটে । এর মধ্যে অভিযুক্ত মুফতি মো. জসিমউদ্দিন রহমানী জঙ্গী এবং উগ্র তৎপরতার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই জসিমউদ্দিন রহমানী ঢাকার মোহাম্মদপুরে দুটি মসজিদে জুম্মার নামাজের আগে খুতবা দিতেন এবং তিনি ধর্মের বিরুদ্ধে লিখে এমন ব্লগারদের হত্যার ফতোয়াও দিতেন। অন্য আসামীরা সবাই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র এবং তারা ওই খুতবা শুনতে যেত। এভাবে তাদের মধ্যে একটা যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল।"

রাজীব মারা যাবার পর পরই আমি একটি পত্রিকায় লেখা লিখেছিলাম 'কেন কেবল তারাই আক্রান্ত হচ্ছেন' শিরোনামে। সে লেখায় আমি অনুমান করেছিলাম যে মুক্তবুদ্ধির চর্চা এবং মুক্তমত প্রকাশের কারণেই রাজীব ধর্মান্ধ শক্তির উষ্মার কারণ হয়েছেন, তিনি আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে, ঠিক যেমনিভাবে ঘাতকাহত হয়ে প্রলম্বিত মৃত্যুর দিকে চলে যেতে হয়েছিল প্রথাবিরোধী লেখক হুমায়ুন আজাদকে।

আমার অনুমান যে মিথ্যা ছিল না তা ধরা পড়ার পর অভিযুক্তদের স্বীকারোক্তিতে প্রমাণ পাওয়া যায়। অভিযুক্ত আততায়ীদের বিভিন্ন ব্লগের ঠিকানা এবং ব্লগ থেকে ডাউনলোড করে তথ্য দিয়ে প্ররোচিত করেন জসিমউদ্দিন রহমানীর জঙ্গী তৎপরতা দিয়ে আক্রান্ত শিবিরের সেই বড় ভাই রানা। রাজীবের লেখা তাদের 'ধর্মানুভূতি' আহত করেছিল, তাই 'ঈমানি দায়িত্ব পালনের জন্য এই হত্যাকাণ্ড' তারা ঘটিয়েছে বলে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে।

রাজীব হত্যার কিছুদিন আগে আরেকটি খবর পত্রিকার শিরোনাম হয়েছিল, অনেকেরই হয়তো মনে আছে, নিউইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ভবন বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনার অভিযোগে নর্থ সাউথের কামেল প্রাক্তন ছাত্র কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান গ্রেফতার হয়েছিলেন আমেরিকায়। কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান কিংবা রাজীব হত্যায় জড়িত নর্থ সাউথের ছাত্রদের মুখগুলোর দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি 'বিশ্বাসের ভাইরাস' কত প্রকটভাবে মস্তিষ্ক অধিকার করে ফেলতে পারে, যার ফলে একজনকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে খুন করতেও তাদের বাঁধে না, বরং এটাকে তারা 'ঈমানি দায়িত্ব' বলে মনে করে।

বিশ্বাসের ভাইরাস

'বিশ্বাসের ভাইরাস' ব্যাপারটা এই সুযোগে একটু পরিষ্কার করে নেওয়া যাক। এ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে একটা মজার উদাহরণ আমি প্রায়ই দিই ড্যানিয়েল ডেনেটের 'ব্রেকিং দ্য স্পেল' বইটি থেকে। খুব মজার উদাহরণ এটি। আপনি নিশ্চয়ই ঘাসের ঝোপে কিংবা পাথরের উপরে কোনো কোনো পিঁপড়াকে দেখেছেন– সারাদিন ধরে ঘাসের নিচ থেকে ঘাসের গা বেয়ে কিংবা পাথরের গা বেয়ে উপরে উঠে যায়, তারপর আবার ঝুপ করে পড়ে যায় নিচে, তারপর আবারও গা বেয়ে উপরে উঠতে থাকে।

স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে– এই বেআক্কেলে কলুর বলদের মতো পণ্ডশ্রম করে পিঁপড়াটি কি এমন বাড়তি উপযোগিতা পাচ্ছে, যে এই অভ্যাসটা টিকে আছে? কোনো বাড়তি উপযোগিতা না পেলে সারাদিন ধরে সে এই অর্থহীন কাজ করে সময় ও শক্তি ব্যয় করার তো কোনো মানে হয় না। আসলে সত্যি বলতে কী, এই কাজের মাধ্যমে পিঁপড়াটি বাড়তি কোনো উপযোগিতা তো পাচ্ছেই না, বরং ব্যাপারটি সম্পূর্ণ উল্টো।

গবেষণায় দেখা গেছে, পিঁপড়ার মগজে থাকা ল্যাংসেট ফ্লুক নামে এক ধরনের প্যারাসাইট এর জন্য দায়ী। এই প্যারাসাইট বংশবৃদ্ধি করতে পারে শুধুমাত্র তখনই যখন কোনো গরু বা ছাগল একে ঘাসের সঙ্গে চিবিয়ে খেয়ে ফেলে। ফলে প্যারাসাইটটা নিরাপদে সেই গরুর পেটে গিয়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে। পুরো ব্যাপারটাই এখন জলের মতো পরিষ্কার– যাতে পিঁপড়াটা কোনোভাবে গরুর পেটে ঢুকতে পারে সেই দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য ঘাস বেয়ে তার উঠানামা। আসলে ঘাস বেয়ে উঠানামা করা পিঁপড়ের জন্য কোনো উপকার করছে না, বরং ল্যাংসেট ফ্লুক কাজ করছে এক ধরনের ভাইরাস হিসেবে– যার ফলশ্রুতিতে পিঁপড়ে বুঝে হোক, না বুঝে তার দ্বারা অজান্তেই চালিত হচ্ছে।

এ ধরনের আরও কিছু উদাহরণ জীববিজ্ঞান থেকে হাজির করা যায়। নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম (বৈজ্ঞানিক নাম Spinochordodestellinii) নামে এক ফিতাকৃমিসদৃশ প্যারাসাইট আছে যা ঘাস ফড়িং-এর মস্তিষ্ক সংক্রমিত করে ফেললে ঘাসফড়িং পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। এর ফলশ্রুতিতে নেমাটোমর্ফ হেয়ার-ওয়ার্মের প্রজননে সুবিধা হয়। অর্থাৎ নিজের প্রজননগত সুবিধা পেতে নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম বেচারা ঘাসফড়িংকে আত্মহত্যায় পরিচালিত করে।

এছাড়া জলাতঙ্ক রোগের সঙ্গেও আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। পাগলা কুকুর কামড়ালে আর উপযুক্ত চিকিৎসা না পেলে জলাতঙ্ক রোগের জীবাণু মস্তিষ্ক অধিকার করে ফেলে। ফলে আক্রান্ত মস্তিষ্কের আচরণও পাগলা কুকুরের মতোই হয়ে উঠে। আক্রান্ত ব্যক্তি অপরকেও কামড়াতে যায়। অর্থাৎ ভাইরাসের সংক্রমণে মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে।

আমাদের দীর্ঘদিনের জমে থাকা প্রথাগত বিশ্বাসের 'ভাইরাসগুলোও' কি আমাদের সময় সময় এভাবে আমাদের অজান্তেই বিপথে চালিত করে? আমরা আমাদের বিশ্বাসরক্ষার জন্য প্রাণ দিই, বিধর্মীদের হত্যা করি, টুইন টাওয়ারের উপর হামলে পড়ি, সতী নারীদের পুড়িয়ে আত্মতৃপ্তি পাই, বেগানা মেয়েদের গায়ে পাথর ছঁুড়ের মারি…। মনোবিজ্ঞানী ডেরেল রে তার The God Virus: How religion infects our lives and culture বইয়ে বলেন, জলাতঙ্কের জীবাণু দেহের ভিতরে ঢুকলে যেমন মানুষের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র বিকল হয়ে যায়, ঠিক তেমনি ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোও মানুষের চিন্তা-চেতনা আচ্ছন্ন করে ফেলে, তৈরি হয় ভাইরাস-আক্রান্ত মনন।

নেমাটোমর্ফ হেয়ারওয়ার্ম যেমনিভাবে ঘাসফড়িংকে আত্মহত্যায় পরিচালিত করে, ঠিক তেমনি ধর্মের বিভিন্ন বাণী এবং জিহাদি শিক্ষা মানব সমাজে অনেক সময় ভাইরাস কিংবা প্যারাসাইটের মতো সংক্রমণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী করে তুলে। ফলে আক্রান্ত সন্ত্রাসী মনন বিমান নিয়ে আছড়ে পড়ে টুইন টাওয়ারের উপর। নাইন-ইলেভেনের বিমান হামলায় উনিশটি ভাইরাস-আক্রান্ত মনন 'ঈশ্বরের কাজ করছি' এই প্যারাসাইটিক ধারণা মাথায় নিয়ে হত্যা করেছিল প্রায় তিন হাজার সাধারণ মানুষকে।

ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর অধ্যাপক ব্রুস লিংকন তার বই 'হলি টেররস: থিংকিং অ্যাবাউট রিলিজিয়ন আফটার সেপ্টেম্বর ইলেভেন' বইয়ে বিষয়টির উপর আলোকপাত করে বলেন–

''ধর্মই মুহাম্মদ আত্তাসহ আঠারজনকে প্ররোচিত করেছিল এই বলে যে, সংগঠিত বিশাল হত্যাযজ্ঞ শুধুমাত্র তাদের কর্তব্য নয়, বরং স্বর্গ থেকে আগত পবিত্র দায়িত্ব।''

হিন্দু মৌলবাবাদীরাও একসময় ভারতে রাম-জন্মভূমি অতিকথনের ভাইরাস বুকে লালন করে ধ্বংস করেছে শতাব্দীপ্রাচীন বাবরি মসজিদ। বিগত শতকের আশির দশকে মাইকেল ব্রে নামের কুখ্যাত এক খ্রিস্টান সন্ত্রাসী ওয়াশিংটন ডিসি, মেরিল্যান্ড এবং ভার্জিনিয়ার গর্ভপাত ক্লিনিকগুলোv উপর বোমা হামলার পর বাইবেলের বাণীকে রক্ষাকবচ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন আদালতে। এ ধরনের অসংখ্য দৃষ্টান্ত ইতিহাস থেকে হাজির করা যাবে, ভাইরাস-আক্রান্ত মনন কীভাবে কারণ হয়েছিল সভ্যতা ধ্বংসের।

রাজীব হত্যার বিবরণ পড়লে হতবাক হতে হয়, কীভাবে তাদের মস্তিষ্ক 'ব্রেন ওয়াশড' হয়েছে প্যারাসাইটিক জিহাদী ধারণা দিয়ে তা দেখে। তারা রাজীবকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে 'ইনটেল গ্রুপ' গঠন করেছিল। এই দলের কাজ ছিল ব্লগ ও ফেসবুক থেকে তার সম্পর্কে নানা তথ্য সংগ্রহ করা ও তার পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। আর রাজীবকে হত্যার জন্য তারা তৈরি করেছিল 'এক্সিকিউশন গ্রুপ'। প্রায় এক মাস তারা রাজীবকে অনুসরণ করেছে।

দৈনিক প্রথম আলোতে প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, ইনটেল গ্রুপের সদস্যরা ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ শাহবাগে যায় এবং ব্লগার রাজীবকে খোঁজা শুরু করে। এর এক থেকে দুই দিনের মধ্যে রাজীবের বন্ধুদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে তারা রাজীবকে চিনতে পারে। এরপর এই দলের সদস্য এহসান রেজা রুম্মন শাহবাগ থেকে সাইকেলে করে রাজীবকে অনুসরণ করে মিরপুর দশ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত গিয়ে বাসা চিহ্নিত করে আসে।

১৫ ফেব্রুয়ারি দলের সদস্যরা সাইকেল ও বাসে চড়ে বিকেল চারটার দিকে পলাশনগরে রাজীবদের বাসার গলিতে অবস্থান নেয়। সন্ধ্যার দিকে রাজীব বাসার গেটের কাছাকাছি পৌঁছার পর এক্সিকিউশন গ্রুপের সদস্য মো. ফয়সাল বিন নাঈম দীপ, মো. মাকসুদুল হাসান অনিক চাপাতি ও ছোরা দিয়ে হত্যাকাণ্ডে অংশ নয় এবং রাজীবকে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করে। হত্যার পর তার রক্তাক্ত লাশ মাটিতে পড়ে ছিল বহু সময় ধরে। পলাশনগর এলাকায় রক্তমাখা লাশ দেখে স্থানীয় লোকজন রাত ১০টার কিছু পরে থানা পুলিশকে খবর দেয়। এরপরেই ব্যাপারটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।


ভাইরাসটি সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি

রাজীবের হত্যাকারীরা স্বীকারোক্তিতেই বলেছিল যে, 'ঈমানি দায়িত্ব পালনের জন্য' তাকে হত্যা করা হয়েছে। ঠিক যেমন নাইন-ইলেভেনের বিমান হামলার পেছনের অভিযুক্তরা 'ঈশ্বরের কাজ করছি' এই প্যারাসাইটিক ধারণা মাথায় নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল টুইন টাওয়ারের ওপর, ঠিক একইভাবে। এই হত্যাকারীরা কেউ অশিক্ষিত ছিল না। শিক্ষা-দীক্ষায় চৌকস আধুনিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিল তারা। সবাই এসেছিল ভালো পরিবেশ থেকে, ভালো পরিবার থেকে। কেবল একটি জায়গাতেই ছিল সমস্যা। এরা মুফতি মো. জসিমউদ্দিন রহমানীর জঙ্গী সংক্রমণের শিকার হয়েছিল। সেটা বুঝেই হোক কিংবা না বুঝেই হোক।

রাজীবের এই ঘটনা নতুন করে আমাদের কিছু প্রশ্নের সম্মুখীন করে দিয়েছে। পরিষ্কার করে দিয়েছে এই জিহাদী ভাইরাসের প্রকটতা। কেবল বাইরের পৃথিবীতে নয়, এই সুজলা সুফলা বাংলাদেশে। একটা সময় মনে করা হত জিহাদ, ধর্মীয় হত্যা, সন্ত্রাস কেবল আরব দেশে উষর মরুভূমির ফসল, লালনের দেশ, রবি ঠাকুরের দেশ, নজরুল, জীবনানন্দের দেশে এই সংস্কৃতির লালনপালন হয় না।

ভুল কথা। উষর মরুর জিহাদী ভাইরাসে বাংলাদেশ আজ আচ্ছন্ন। আজ যখন লেখাটি লিখছি তখন আয়মান আল-জাওয়াহিরির নাম ও ছবিসহ এক অডিও বার্তায় বাংলাদেশ সৃষ্টির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে 'ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্রের' বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানিয়েছে আল কায়দা। বার্তায় বলা হয়েছে,

"বাংলাদেশের মুসলিম ভাইয়েরা, ইসলামের বিরুদ্ধে যারা ক্রুসেড ঘোষণা করেছে, তাদের প্রতিরোধ করার জন্য আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি। উপমহাদেশ ও পশ্চিমের শীর্ষ অপরাধীরা ইসলামের বিরুদ্ধে, ইসলামের নবীর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করছে, মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, যাতে আপনাদেরকে তারা অবিশ্বাসীদের দাসে পরিণত করতে পারে।"

আল কায়েদা এমন একটি সংগঠন যা ইসলাম বাঁচানোর নামে নারীদের যৌন জিহাদ, পায়ুধর্ষণ সবই জায়েজ এবং হালাল করে দিয়েছে। বিডিনিউজে 'প্রসঙ্গ: আল-কায়েদার হুমকি ও তৎপরতা' শিরোনামে এ নিয়ে মিলটন বিশ্বাসের একটি চমৎকার বিশ্লেষণমূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে, পাঠকেরা সেটা পড়ে নিতে পারেন।

রাজীব হত্যার সঙ্গে আল কায়েদার সম্পর্কের কথাও বেশকিছু পত্রিকায় এসেছে। সম্প্রতি আলকায়দার ভিডিও ফেসবুকে ছড়ানো এবং জঙ্গি তৎপরতা দায়ে কুখ্যাত বাঁশের কেল্লা পেইজের এডমিন হিসেবে কথিত মোহাম্মদ রাসেল বিন সাত্তার খানকে গ্রফতারও করা হয়েছে। কাজেই লালনের দেশ, রবি ঠাকুরের দেশ, নজরুলের দেশে আল কায়েদা খুব প্রবলভাবেই একটি বাস্তবতা।

অনেকরই হয়তো মনে আছে, রাজীব হত্যার পর পরই আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের পক্ষ থেকে একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। সে ভিডিওতে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছিল, নবী মুহম্মদ যেভাবে কাব ইবনে আশরাফ, আসমা বিন্তে মারওয়ানের মতো কবিদের হত্যা করেছিলেন ইসলামের আর নবীর বিষেদগার করার শাস্তি হিসেবে, ঠিক একইভাবে 'কুলাঙ্গার ব্লোগার' (ঠিক এভাবেই উচ্চারিত হয়েছে ভিডিওতে) থাবা বাবাকে মেরে ফেলাও জায়েজ হয়েছে। ভিডিওটি শেষ করা হয়েছিল এই বলে যে রাজীব হত্যায় অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলামের সৈনিকেরা অন্য সকল 'নাস্তিক' ব্লগারদেরও হত্যা করুক, এটাই প্রত্যাশিত।

বহু মানুষই সেই ভিডিওর লিংক তখন দেখেছিল। সচেতন ব্যবহারকারীরা ফেসবুকে রিপোর্টিং-এর মাধ্যমে এ ধরনের উগ্রবাদী ভিডিও সরানোতে এগিয়ে এলেও এখনও অনেক জায়গাতেই বহাল তবিয়তেই আছে। মুফতি জসিমের প্রচারণার মতোই এগুলো সংক্রমিত করছে মানুষের মনন। জন্ম নিচ্ছে ভাইরাসাক্রান্ত জিহাদী প্রেরণার। জলাতঙ্ক রোগীর মতো মস্তিষ্ক অধিকার করে ফেলছে ক্রমশ। জিন বা বংশাণুর মতোই কপি করে করে সংক্রমিত করে ফেলছে শতাধিক, সহস্রাধিক মনন। এ ভাইরাস প্রতিরোধ না করতে পারলে এ 'সভ্যতার ক্যান্সারে' রূপ নিয়ে আমাদের সমস্ত অর্জন ধ্বংস করবে বলাই বাহুল্য। তাই এই ভাইরাস সম্বন্ধে সতর্ক থাকাটা জরুরি।

এ বিষয়গুলো নিয়ে আমি আমার সাম্প্রতিক একটি বইয়ে বিস্তৃতভাবে আলোচনার প্রয়াস পেয়েছি। বইটি এ বছর প্রকাশিত হয়েছে জাগৃতি প্রকাশনী থেকে, 'বিশ্বাসের ভাইরাস'নামে। বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়ে আমি আলোচনা করেছি রাজীব হায়দার শোভনের নৃশংস হত্যাকাণ্ড এবং এর পেছনের মোটিভ নিয়ে। গত বছর শাহবাগ আন্দোলনের সময় ঘটে যাওয়া এই ঘটনা আমাকে এতটাই পীড়িত করেছিল যে আমার বইটি উৎসর্গ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই অসমসাহসী তরুণের প্রতি; কারণ এই রাজীব হায়দারই ছিলেন শাহবাগ আন্দোলনে 'বিশ্বাসের ভাইরাসের' প্রথম শিকার।

দেখতে দেখতে রাজীব হত্যার একটি বছর অতিক্রম করে গেল। এখনও কিন্তু রাজীবের মূল হত্যাকারী রেজওয়ানুল আজাদ রানা ধরা পড়েনি। ধরা পড়েনি আল কায়েদার কলকাঠি নাড়া নাটের গুরুরা। আমরা এখনও অপেক্ষা করে আছি রাজীব হত্যার বিচারের জন্য; প্রতীক্ষা করে আছি রাজীব ঠিক যেমনটি চেয়েছিলেন সেই 'বিশ্বাসের ভাইরাসমুক্ত' একটি প্রগতিশীল বাংলাদেশ দেখার আশায়।

সে রকমের বাংলাদেশ অদূর ভবিষ্যতে আমরা পাই না-পাই, অন্তত এমন দিনে আমরা চাই, সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলতে শিখবেন সবাই। রাজীব হত্যার পেছনে উৎস ঠিক কোথায় সেটা অনুধাবন করবেন তারা। কারণ কোন রোগ সারাতে হলে রোগের উৎস শনাক্ত করাই প্রথমে জরুরি।

ড. অভিজিৎ রায়: মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।