যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসি হয়েছে। এটা আমাদের জন্য একটা বিরাট অর্জন, বলাই বাহুল্য। এবারের বিজয় দিবস এবং সেই সঙ্গে নতুন বছরের আগমনটাই যেন ভিন্নমাত্রায় পৌঁছে গেছে এই অর্জনের ফলে। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদরদের বিচারের যে আকাঙ্ক্ষা একটা সময় আমাদের রক্তে শিহরণ তুলত, একটা অপ্রাপ্তির বেদনা গ্রাস করে ফেলত বছর খানেক আগেও, সেটা থেকে যেন আমরা মুক্তি পেয়েছি।
অন্তত একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছি নানা ধরনের বিতর্ক, প্রতিবন্ধকতা, বিশ্বমোড়লদের তরফ থেকে দেওয়া আন্তর্জাতিক চাপ সবকিছু অগ্রাহ্য করে। এটা যে কত বড় অর্জন তা বোধহয় আমরা কেউ বুঝতে পারছি না। এই দিনটা দেখার স্বপ্ন আমরা বুকের মধ্যে লালন করেছিলাম বহুদিন ধরে।
কিন্তু আমরা কী দেখলাম? কাদের মোল্লার ফাঁসির পর বাংলাদেশের আপামর জনগণ যখন আনন্দোচ্ছ্বাস করছে, ঠিক তখনই এক মুখচেনা মহল সারা দেশে শুরু করেছিল সহিংসতা আর নৈরাজ্যের বিস্তার। জ্বালাও-পোড়াও, সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর আক্রমণ, বিচারকদের বাসায় বোমাবাজি সবই শুরু হল পুরোদমে। পাশাপাশি আরেকটা কাজও জামাতিদের তরফ থেকে করার প্রচেষ্টা চালানো হল– যেটা তারা সবসময়ই করে থাকে– বিভ্রান্তি ছড়ানো।
সত্য যখন উন্মোচিত আর দিনের আলোর মতো উদ্ভাসিত, বিভ্রান্তি আর মিথ্যে প্রচারণা– এটাই বোধহয় একমাত্র অস্ত্র হয়ে দাঁড়ায় তখন। সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর চাঁদে সাঈদীর মুখচ্ছবি দেখা নিয়ে কী প্রচারণাটাই না চালানো হয়েছিল। অথচ পুরোটাই ছিল ফটোশপে এডিট করা খুব কাঁচা হাতের কাজ। যারা নিজেদের ধর্মের একনিষ্ঠ সেবক মনে করেন, তাদের সাচ্চা সৈনিকেরা এভাবে ফটোশপে ছবি এডিট করে যাচ্ছেতাই প্রচারণা চালায়-– ভাবতেও হয়তো অনেকের অবাক লাগবে।
কিন্তু যারা এই গোত্রটির কাজকর্মের নাড়ি-নক্ষত্রের হদিস জানেন, তারা অবাক হন না। শাহবাগ আন্দোলন শুরুর সময় একে কলঙ্কিত করতে নানা ধরনের রগরগে ছবি জোড়াতালি দিয়ে ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা করেছিল-– ‘প্রজন্ম চত্বর’ নাকি আসলে ‘প্রজনন চত্বর’। ওখানে নাকি রাত্রিবেলা গাঁজা খাওয়া হয়, ফ্রি সেক্স হয়, তরুণীরা সেখানে গেলেই ধর্ষিত হতে হয়, আরও কত কী।
কী না করেছিল তারা! মুম্বাই মেডিকেলের স্ক্যান্ডালের ছবির সঙ্গে ইমরান এইচ সরকারের চেহারা জোড়া দেওয়া, শাহবাগের জমায়েতে নাইট ক্লাবের নগ্নবক্ষা নারীর ছবি কাট অ্যান্ড পেস্ট করে লাগিয়ে দিয়ে ফেসবুকে ছড়ানো, নামাজরত এক পাকিস্তানি পুলিশকে শিবিরের কর্মী হিসেবে চালিয়ে দেওয়া থেকে শুরু করে প্রতীকী রশি নিয়ে কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবি সম্বলিত ছবির শিরোনাম বদলে ‘ফাঁসির অভিনয় করতে গিয়ে শাহবাগে যুবক প্রাণ হারাল’ টাইপ মিথ্যে নিউজ তৈরি করা-– কোনো কিছুই বাদ যায়নি।
মুক্তমনা ব্লগে আমাদের সতীর্থ দিগন্ত বাহার ‘কথিত ইসলামি দল জামায়াতে ইসলামীর মিথ্যাচার সমগ্র’ শিরোনামের পোস্টে খুলে দিয়েছিলেন তাদের মিথ্যের মুখোশ; লিঙ্কটি পাঠকদের উদ্দেশ্যে দেওয়া গেল:
http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=33825
কাদের মোল্লার ফাঁসির পরেও নানা ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো হবে তা আগেই বোঝা গিয়েছিল। ফাঁসির আগে থেকেই কাদেরের তথাকথিত ‘অ্যালিবাই’ উপজীব্য করে ছড়ানো হয়েছিল মিথ্যে। কাদের ট্রাইব্যুনালকে বলেছিল:
“আজ এই কোরআন শরীফ হাতে নিয়ে আমি আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, ১৯৭১ সালে মিরপুরে কসাই কাদের কর্তৃক যেইসব হত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল তার একটি অপরাধের সঙ্গেও আমার দূরতম কোনো সম্পর্ক নেই। কাদের মোল্লা বলেন, আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি আমি ১৯৭৩ সালের আগে কোনোদিন মিরপুরেই যাইনি।”
এই অ্যালিবাইকেই সত্য ধরে নিয়ে অনেকে জল ঘোলা করছেন। কিন্তু এটাই কি স্বাভাবিক নয় যে কাদের মোল্লার মতো এত বড় একটা পাষণ্ড এবং ঠাণ্ডা মাথার খুনি এ ধরনের অ্যালিবাই হাজির করেই নিজেকে আত্মরক্ষা করতে চাইবে? তার তো এটাই বলার কথা যে ঘটনার সময় সে ঘটনাস্থলে ছিল না।
এ নিয়ে সম্প্রতি ব্লগার নিঝুম মজুমদার কিছু গবেষণা করেছেন। মুক্তমনায় প্রকাশিত তার দি কিউরিয়াস কেইস অব কাদের মোল্লা এবং সাক্ষী মোমেনা শিরোনামের লেখাটি থেকে জানা যায়, এই কাদের মোল্লার একসময়ের সবচাইতে বড় ইয়ার দোস্ত ‘আক্তার গুণ্ডা’ ছিল কাদের মোল্লার মতোই এক ভয়াবহ খুনি। কাদের মোল্লা এই আক্তার গুণ্ডার সঙ্গে মিলেই মূলত ১৯৭১ সালে মিরপুরে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল।
১৯৭২ সালের দালাল আইনে এই আক্তার গুণ্ডার বিচার হয় এবং বিচারে তার ফাঁসিও হয়। মজার ব্যাপার হল, এই আক্তার গুণ্ডাও আজ থেকে ৪০ বছর আগে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করতে গিয়ে সেই একই ধরনের অ্যালিবাই হাজির করেছিল যে, সে ঘটনাস্থলে ছিল না, ছিল পাকিস্তানে। গণহত্যার সে কিছুই জানে না [‘আক্তার গুণ্ডা ভার্সেস বাংলাদেশ রায়’ দ্র:]।

কিন্তু কেউ এ ধরনের ‘ভেজা বিড়াল’ সাজতে চাইলেই যে সেটা ঠিক তা তো নয়। বহু চাক্ষুষ সাক্ষীই আক্তার গুণ্ডার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিল এবং সে দোষী প্রমাণিত হয়েছিল।
কাদের মোল্লাও বিয়াল্লিশ বছর পরে তার প্রিয় গুণ্ডা বন্ধুর মতোই অ্যালিবাই হাজির করতে গিয়ে বলেছে, সে কস্মিনকালেও মিরপুরে যায়নি, গণহত্যা তো কোন ছাড়! এমন একটা ভাব যে, কাদের মোল্লা ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে জানে না। সহজ সরল এক ভালো মানুষকে যেন ‘কসাই কাদের’ ভেবে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে।
একই কাজ তারা অন্য আসামির বেলায়ও করেছে। এই ‘সাকাচৌ’ সেই সাকা চৌধুরী নয়, সে ছিল পাকিস্তানে। এই দেলু রাজাকার সেই ‘দেইল্যা’ নয়। একই ধারাবাহিকতায় এখন বলছে, এই কাদের মোল্লা সেই কসাই কাদের নয়। কিন্তু তাদের এই কথা ঠিক কতটুকু যৌক্তিক– এই প্রবন্ধে আমরা সেটা পুংখানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেখব।
একাত্তরে কাদের মোল্লার মুক্তিযুদ্ধবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার ব্যাপারটা বহুভাবেই আসলে প্রমাণ করা যায়। শুরু করা যাক ইন্টারনেটে পাওয়া একটি বহুল প্রচারিত ছবি দিয়ে, যেখানে নিয়াজীর পেছনে আশরাফুজ্জামান এবং কাদের মোল্লাকে দেখা যাচ্ছে। আশরাফুজ্জামান বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডে মূল ভূমিকা পালন করেছিল, বর্তমানে ব্রিটেনে পলাতক আলবদর নেতা মুঈনুদ্দীনের সঙ্গে মিলে। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান খ্যাত ১৮ জন বুদ্ধিজীবীকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে হত্যা করে তারা। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মুঈনুদ্দীনের সঙ্গে আশরাফুজ্জামান খানেরও ফাঁসির আদেশ হয়েছে সম্প্রতি। সেখানেই বীরদর্পে কাদের মোল্লা দণ্ডায়মান। মুনতাসীর মামুন সম্পাদিত ‘মুক্তিযুদ্ধ কোষ’ বইয়ে ছবিটির হদিস পাওয়া যায়। ইউটিউবেও এর একটি ভিডিও আছে।

সেই বিয়াল্লিশ বছর আগের ছবিটির কথা যদি আমরা বাদও দিই, আজকের দিনের প্রসঙ্গ গোণায় ধরলেও, কাদের মোল্লার পরিচয় গোপন থাকে না। তার ফাঁসির পর পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চৌধুরী নিসার আলী খান বলেছেন–
“১৯৭১ সালের ঘটনার বিয়াল্লিশ বছর পর কাদের মোল্লার ফাঁসি একটি দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সংহতির জন্য কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তার মৃত্যুতে সকল পাকিস্তানি মর্মাহত এবং শোকাহত।’’
তিনি আরও বলেন, “এ ঘটনার মাধ্যমে পুরনো ক্ষত আবারও জাগিয়ে তোলা হয়েছে।”
জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের প্রধান মুনাওয়ার হাসান কাদের মোল্লাকে তাদের ‘বাংলাদেশি সহচর’ এবং ‘পাকিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যায়িত করে তার ফাঁসিকে ‘শোচনীয়’ বলে মন্তব্য করেন। শুধু তাই নয়, কাদেরের ফাঁসি দেওয়ায় বাংলাদেশ আক্রমণের জন্য নিজেদের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল জামায়াত-ই-ইসলামী। ‘কসাই কাদের’ আর ‘কাদের মোল্লা’ এক ব্যক্তি না হলে পাকিস্তানি জামাতের এত শখ হল কেন এই বিবৃতি দেবার?
বারবারই বাংলাদেশের জামাত দাবি করে এসেছে কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা এক ব্যক্তি নয়, তারা হাজির করে কাদেরের জবানবন্দি, যেখানে কাদেরের অ্যালিবাই ছিল:
“১৯৭১ সালের ১২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের আমিরাবাদ চলে যান এবং মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়ই তিনি গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করেন। গ্রামে অবস্থানকালে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও হাইস্কুলের প্রায় ৩০ জন ছাত্রের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ থেকে ১ মে পর্যন্ত (পাকিস্তান সেনাবাহিনী ফরিদপুরে পৌঁছার দিন পর্যন্ত) অন্যদের সঙ্গে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ চালিয়ে যান। সেনাবাহিনীর জুনিয়র কমিশনড অফিসার (জেসিও) মফিজুর রহমান ডামি রাইফেল দিয়ে তাদের প্রশিক্ষণ দেন।” (ইত্তেফাক)
কাদের এবং তার দলবলের দাবি অনুযায়ী সে একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধা ছিল; অথচ পাক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিন্তু স্পষ্ট করেই বলেছেন–
‘‘কাদের মোল্লা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন এবং তা তিনি নিজের মুখেই বলেছিলেন।’’
নিজের মুখে কাকে এ কথা বলেছেন কাদের? তিনি বিরাট মুক্তিযোদ্ধা হয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করলে তো নিজেকে ‘অখণ্ড পাকিস্তানের সমর্থক ছিলেন’ সেটা বলার কথা নয়। যেভাবে নিউজগুলো পত্রিকায় এসেছে তাতে মনে হয় নিসার সাহেবের সঙ্গে তার ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল এবং তিনি কাদেরের পরিচয় সম্বন্ধে যথেষ্টই ওয়াকিবহাল। না হলে নিসার সাহেব বলবেন কেন যে, পাকিস্তানের প্রতি বিশ্বস্ততা ও সংহতির জন্য কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই?
এগুলো থেকে কী প্রমাণিত হয়? কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা দুই ব্যক্তি? সেই হিন্দি সিনেমার মতো আসল কাদেরকে জীবিত রেখে তার ‘জরুয়া’ ভাইকে ঝোলানো হয়েছে? মোটেও তা নয়। বরং সম্প্রতি একটি পত্রিকায় ড. জিনিয়া জাহিদ যে কথাগুলো তার ‘কাদের মোল্লা মরিয়া প্রমাণ করিল’ শিরোনামের লেখায় উল্লেখ করেছেন সেটাই সত্য হিসেবে প্রকট হয়ে উঠেছে–
‘‘সেই যে রবীন্দ্রনাথের কাদম্বিনী গল্পে পড়েছিলাম, ‘কাদম্বিনী মরিয়া প্রমাণ করিল যে, সে মরে নাই’, ঠিক তেমনি কাদের মোল্লার ফাঁসিতে মৃত্যুর পর তাদের সমগোত্রীয় পাকি-জামায়াতের স্বীকারোক্তিতে এটাই প্রমাণ হল যে, এই কাদের মোল্লাই একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা এবং এই কাদের মোল্লাই আমৃত্যু পাকি-সমর্থক ছিলেন। এই কাদের মোল্লা একাত্তরেও যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন।’’
মিথ্যাচারী এবং মিথ্যার বেসাতি করা জামাত-শিবির কেবল কাদের মোল্লাকে কসাই কাদের থেকে পৃথক করার মিশন নিয়েই মাঠে নামেনি, তাকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পর্যন্ত প্রমাণ করতে চেয়েছে। সে নাকি একাত্তরের যুদ্ধে গ্রামে বসে কলেজ ও হাইস্কুলের প্রায় ৩০ জন ছাত্রের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছে। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ থেকে ১ মে পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ চালিয়ে গেছে। মিথ্যাচারের একটা সীমা থাকে! অথচ এই কাদের মোল্লাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে করেছিল চরম বিদ্রূপাত্মক উক্তি, যেটা ২০০৭ সালে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয়েছিল:
“কেউ সুন্দরী নারীর লোভে, কেউ হিন্দুর সম্পদ লুণ্ঠন, কেউ ভারতীয় স্বার্থরক্ষায় মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। কেউই আন্তরিকতা কিংবা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেননি।” (কাদের মোল্লা, সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৩১ অক্টোবর, ২০০৭)
এর বাইরেও বহুবারই কাদের মোল্লার বাংলাদেশ বিরোধিতা এবং বাংলাদেশের প্রতি অবজ্ঞার ব্যাপারটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। যেমন এ বছরের নভেম্বর মাসে বিডিনিউজ টোয়েন্টি ফোর ডটকমে প্রকাশিত এই নিউজটি দ্রষ্টব্য:

এই লোক ‘কসাই কাদের’না হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হবে, সেটা কি কোনো পাগলেও বিশ্বাস করবে?
এবার কিছু চাক্ষুষ সাক্ষীর বয়ান শোনা যাক।
এক: ফজর আলী
“মিরপুর ১১ নম্বর বি ব্লকের বাসিন্দা ফজর আলী গণতদন্ত কমিশনকে দেওয়া সাক্ষ্যে তার ছোট ভাই মিরপুর বাংলা কলেজের ছাত্র পল্লবকে নৃশংসভাবে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করেন কাদের মোল্লাকে। ২৯ মার্চ নবাবপুর থেকে পল্লবকে তুলে নিয়ে আসে কাদের মোল্লার সাঙ্গপাঙ্গরা। এরপর তার নির্দেশে ১২ নম্বর থেকে ১ নম্বর সেকশনের শাহ আলী মাজার পর্যন্ত হাতে দড়ি বেঁধে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল ছাত্রলীগ কর্মী পল্লবকে। এরপর আবার ১ নম্বর থেকে ১২ নম্বর সেকশনের ঈদগাহ মাঠে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে টানা দু’দিন একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয় পল্লবকে। ঘাতকরা এরপর তার দু’হাতের সবকটি আঙুল কেটে ফেলে।
৫ এপ্রিল একটি মজার খেলা খেলে কাদের মোল্লা। সঙ্গীদের নির্দেশ দেওয়া হয় গাছে ঝোলানো পল্লবকে গুলি করতে, যার গুলি লাগবে তাকে পুরষ্কার দেওয়া হবে। পরে কাদের মোল্লার সঙ্গী আক্তার পল্লবের বুকে পাঁচটি গুলি করে পরপর। পল্লবের লাশ আরও দু’দিন ওই গাছে ঝুলিয়ে রাখে কাদের মোল্লা, যাতে মানুষ বোঝে ভারতের দালালদের জন্য কী পরিণাম অপেক্ষা করছে। ১২ নম্বর সেকশনে কালাপানি ঝিলের পাশে আরও ৭ জন হতভাগার সঙ্গে মাটিচাপা দেওয়া হয় পল্লবকে।
অক্টোবরে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে একজন মহিলা কবি মেহরুন্নেসাকে প্রকাশ্যে নিজের হাতে নির্মমভাবে হত্যা করে কাদের মো্ল্লা। প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন সিরাজ এই নৃশংসতায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। মূলত বিহারিদের নিয়ে একটি খুনে দল তৈরি করেছিল কাদের মোল্লা। আর বুলেট বাঁচাতে জবাই করা ছিল তার কাছে বেশি প্রিয়।”
দুই: ফিরোজ আলী
“ফিরোজ আলী তখন মধ্যবয়স্ক এক ব্যক্তি, একাত্তর সালে সপরিবারে মিরপুরে থাকতেন। ২৫ মার্চের পর তার ভাই পল্লবকে শুধু ‘জয় বাংলা’র অনুসারী হওয়ার অপরাধে কাদের মোল্লার নির্দেশে অবাঙলি গুণ্ডারা অকথ্য নির্যাতন করে নির্মমভাবে হত্যা করে। তখন সমগ্র মিরপুরে হত্যা আর ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে কাদের মোল্লা ও তার অনুসারী অবাঙালিরা। জবাই করে বাঙালি হত্যা ছিল তাদের প্রতিদিনের রুটিনমাফিক কাজ। একেকটি জবাই’র আগে ঘোষণা দিত যারা বাংলাদেশ তথা ‘জয় বাংলা’র অনুসারী, তারা বিধর্মী-নাস্তিক-ভারতের দালাল, এদের হত্যা করা সওয়াবের কাজ!
এমন জবাই’র নেশা বেড়ে যাওয়ায় কাদের মোল্লার নাম তখন এ তল্লাটে আতঙ্কের সমার্থক শব্দ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। স্থানীয়রা আবদুল কাদের মোল্লাকে ‘কসাই কাদের’নামকরণ করে। গরু জবাই-এর মতো মানুষ জবাই-এ দক্ষতার নামডাকে (!) কসাই কাদের ‘মিরপুরের কসাই’ নামেও পরিচিতি লাভ করে ব্যাপক।
কসাই কাদের মোল্লার প্রতিহিংসার শিকার শহীদ পল্লবের ডাক নাম ছিল ‘টুনটুনি’। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে বেশ কিছু চলচ্চিত্রে পার্শ্ব অভিনেতা হিসেবে অভিনয় করে সুখ্যাতি অর্জন করে প্রতিপক্ষের চক্ষুশূল হন পল্লব। এ কথা জানান ফিরোজ আলীর স্ত্রী।
পল্লব ছাড়াও কবি মেহেরুন্নেছা নামের এলাকায় খুবই শান্ত-নিরীহ প্রকৃতির বাঙালি গৃহবধূ কসাই কাদের মোল্লার প্রতিহিংসার বলি হন। মিরপুর ৬ নং সেকশন, ডি ব্লক মুকুল ফৌজের মাঠের কাছাকাছি একটি বাড়িতে থাকতেন কবি মেহেরুন্নেছা। তিনি ছিলেন কবি কাজী রোজীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী।
কসাই কাদের মোল্লার নির্দেশে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে লেখালেখির অপরাধে মেহেরুন্নেছাসহ তার পুরো পরিবারকে বটি দিয়ে কেটে টুকরো টুকরো করা হয়েছিল! এরপর টুকরো করা মাংসখণ্ডগুলো নিয়ে ফুটবলও খেলা হয়েছিল ৬ নং মুকুল ফৌজের মাঠে! কসাই কাদেরের নির্দেশে ৩০/৩৫ জনের একটি অবাঙালি ঘাতকের দল, মাথায় লাল ফিতা বেঁধে, ধারালো তলোয়ারে সজ্জিত হয়ে অংশ নেয় কবি মেহেরুন্নেছা ও তার পরিবারের হত্যাযজ্ঞে!”
তিন: কাদের মোল্লার বন্ধু মোজাম্মেল এইচ খান
ড. মোজাম্মেল এইচ খান ছিলেন রাজেন্দ্র কলেজে কাদের মোল্লার সহপাঠী। তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন কাদের মোল্লার কাজকর্ম, একাত্তরে এবং তার পরবর্তী সময়। তিনি ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দৈনিক জনকণ্ঠে একটি চমৎকার লেখা লিখেছিলেন, ‘‘কাদের মোল্লাকে নিয়ে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার আষাঢ়ে কাহিনী’’ শিরোনামে:
“কাদের মোল্লা হলেন আমাদের রাজেন্দ্র কলেজের ১৯৬৪-১৯৬৬ এইচএসসি ব্যাচের সবচেয়ে পরিচিত মুখ এবং তিনি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সমধিক পরিচিত ব্যক্তি, তা সে যে কারণেই হোক না কেন। এমনকি তিনি আমাদের সে সময়ের আরেক সহপাঠী বেগম জিয়ার বিগত শাসনামলের মন্ত্রী আলী আহসান মুজাহিদকেও পরিচিতির দিক দিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন; যদিও মুজাহিদও একইভাবে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝোলার অপেক্ষায় রয়েছেন, যদি না সুপ্রীম কোর্ট তার দণ্ডকে উল্টে দেয়।’’
ড. মোজাম্মেল খান তাঁর প্রবন্ধে বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছেন যে, এমনকি কাদেরের পরিবারের দেওয়া বিবরণেও তিনি ১৯৭২ সালে যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ‘তার ডিপার্টমেন্টে তিনি প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন’ এ ধরনের কোনো দাবি নেই; বরং তিনি যে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন সে কথাই বলা হয়েছে। এমনকি তিনি যে কোনো ডিগ্রি পেয়েছেন সেটার কোনো উল্লেখ নেই।
তেমনিভাবে ‘যুদ্ধের পুরো সময় তিনি গ্রামেই অবস্থান করেন’ সে কথা বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি যে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন সেটার কোনো উল্লেখ নেই। ‘শেখ মুজিবুর রহমান তাকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনে চাকরিও দিয়েছিলেন’ সেটাও কাদেরের পরিবার উল্লেখ করেনি; অথচ ‘আমার দেশ’ এবং ‘বাঁশের কেল্লা’রা চাঁদে সাঈদীর মুখচ্ছবি দর্শনের মতো করে ঠিকই ‘সত্যের সন্ধান’ পেয়ে গেছে!
জামাতিদের পক্ষ থেকে আরও ছড়ানো হয়েছে যে, কাদের মোল্লা নাকি ‘ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট’ হওয়া ‘গোল্ড মেডেলিস্ট’ ছাত্র ছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা মোটেই সে রকমের নয়। মোল্লার ‘ভালো ছাত্রত্বের’ গুমোর ফাঁস করে দিয়েছেন মোজাম্মেল খান তাঁর কলামে:
‘‘এইচএসসির ফলাফলে কাদের গড়পড়তা ছাত্রের থেকে নিচে ছিল যার ফলে সরাসরি সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি। সে রাজেন্দ্র কলেজেই বিএসসি পড়ে (১৯৬৬-১৯৬৮) এবং ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস কোর্সে এমএসসিতে ভর্তি হয় যেটা তার পরিবারের দেওয়া সময়ের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলে যাচ্ছে; যদিও তার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী সে এসএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে। অথচ কাদের আমাদের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেছে ১৯৬৬ সালে।
তাহলে এর মাঝে দুই বছরের বেশি সময় সে কী করেছে? তার পরিবার বলেছে সে স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসে এবং ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সেখানে অধ্যয়ন করে। এ বক্তব্যের প্রথম অংশটুকু সত্য নয় এবং যে কোনো পাঠকই বুঝতে পারবেন দুই বছরের এমএসসি ডিগ্রির জন্য ৮ বছর (১৯৬৯-১৯৭১, ১৯৭২-১৯৭৭) বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করার হিসেব মেলানো যায় না।’’
বর্তমানে কানাডাপ্রবাসী অধ্যাপক মোজাম্মেল খান সেই একই প্রবন্ধে বর্ণনা করেছেন যখন তিনি ১৯৭৯ সালে দেশে বেড়াতে গিয়েছিলেন, কীভাবে কাদের মোল্লার সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়ে গিয়েছিল এবং কীভাবে সে উল্লসিত হয়ে মোজাম্মেল সাহেবকে বলেছিল ‘জয় বাংলা’কে সরিয়ে ‘জিন্দাবাদ’ রাজত্ব করে চলেছে:
“১৯৭৩ সালের প্রথমার্ধ্বে আমি যখন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাইরে আসি তখন জানতাম না কাদের কোথায় আছে। ১৯৭৯ সালে আমি দেশে বেড়াতে গেলে একদিন যখন ঢাকার মগবাজারের রাস্তা দিয়ে হাঁটছি তখন পেছন থেকে একজন আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল, ‘তুই কি মোজাম্মেল? আমি কাদের।’ আমার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘কাদের, তুই বেঁচে আছিস?’ কাদেরের উত্তর ছিল, ‘হ্যাঁ, আমি ভালোভাবে বেঁচে আছি এবং এখন আমি দৈনিক সংগ্রামের নির্বাহী সম্পাদক। তোর জয় বাংলা এখন এদেশ থেকে নির্বাসিত; ফিরে এসেছে আমাদের জিন্দাবাদ এবং এটা এখন প্রচণ্ডভাবে জাগ্রত।’ যেহেতু কাদের সত্য কথাই বলেছিল, সেহেতু আমি ওর কথার কোনো জবাব দিতে পারিনি।
কয়েক সপ্তাহ পরে আমি যখন যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যাই তখন সংবাদপত্রে পড়লাম প্রেসক্লাবে একটি বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিল কাদের মোল্লা; একেই বলে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস!”
মোজাম্মেল এইচ খান ইংরেজিতেও এ নিয়ে একটি লেখা লিখেছেন Quader Mollah: fact versus fiction শিরোনামে যেটা মুক্তমনা সাইটের ইংরেজি ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে।
ড. মোজাম্মেল এইচ খান কাদের মোল্লার ফাঁসির পর স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন, ‘‘বিদায় এককালের সহপাঠী কাদের মোল্লা। তোমার এ পরিণতিতে আমি শোক করতে পারছি না’’ বলে:

পাঠক নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন আমরা এ লেখায় এখন পর্যন্ত মোমেনা বেগমের কথা আনিনি। এই নারী কাদের মোল্লার দ্বারা ধর্ষিত হয়েছিলেন। তাঁর পরিবারের সব সদস্যকে চোখের সামনে মরতে দেখেছেন। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত তাঁর ভাষ্য থেকে জানা যায়, বেলা ডোবার আগে কাদের মোল্লার নেতৃত্বে মোমেনাদের বাড়িতে হামলা হয়। “আব্বা দৌড়াইয়া দৌড়াইয়া আসে এবং বলতে থাকে ‘কাদের মোল্লা, মেরে ফেলবে’। আক্তার গুণ্ডা, বিহারিরা তারা ও পাক বাহিনীরা দৌড়াইয়া আসছিল। আব্বা ঘরে এসে দরজার খিল লাগায়ে দেয়।”
হযরত দরজা এঁটে সন্তানদের খাটের নিচে লুকাতে বলেন। মোমেনার সঙ্গে তার বোন আমেনা বেগমও খাটের নিচে ঢোকে। তখন দরজায় শোনেন কাদের মোল্লাসহ বিহারিদের কণ্ঠস্বর, ‘এই হারামি বাচ্চা, দরজা খোল, বোম মার দেঙ্গা।’ শুরুতে দরজা না খোলায় বাড়ির দরজার সামনে একটি বোমা ফাটানো হয়। এক পর্যায়ে হযরতের স্ত্রী একটি দা হাতে নিয়ে দরজা খোলেন। দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে তাকে গুলি করা হয়।
“আব্বা তখন আম্মাকে ধরতে যায়। কাদের মোল্লা পেছন থেকে শার্টের কলার টেনে ধরে বলে, ‘এই শুয়ারের বাচ্চা, এখন আর আওয়ামী লীগ করবি না? বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যাবি না? মিছিল করবি না? জয় বাংলা বলবি না?’ আব্বা হাতজোড় করে বলে, ‘কাদের ভাই, আমাকে ছেড়ে দাও’। আক্তার গুন্ডাকে বলল, ‘আক্তার ভাই, আমাকে ছেড়ে দাও’।” তবু না ছেড়ে হযরত আলীকে টেনে-হিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যায় বিহারিরা।
সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এরপর কাঁদতে কাঁদতে চোখের সামনে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের বিবরণ দেন মোমেনা। “দাও দিয়ে আমার মাকে তারা জবাই করে। চাপাতি দিয়ে খোদেজাকে (বোন) জবাই করে। তাসলিমাকেও (বোন) জবাই করে। আমার একটি ভাই ছিল বাবু, বয়স ছিল দুই বছর, তাকে আছড়িয়ে মারে। বাবু মা মা করে চিৎকার করছিল,” বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদেন মোমেনা।
বাবুর চিৎকার শুনে খাটের তলায় লুকানো আমেনা চিৎকার দিলে তার অবস্থান জেনে যায় হামলাকারীরা। মোমেনা বলেন, “আমেনাকে তারা টেনে বের করে, সব কাপড়-চোপড় ছিঁড়ে ফেলে। এরপর তাকে নির্যাতন করতে থাকে। আমেনা অনেক চিৎকার করছিল, একসময় চিৎকার থেমে যায়।”
কাঁদতে কাঁদতে প্রায় অজ্ঞান মোমেনা এরপর শোনান নিজের ওপর নির্যাতনের বর্ণনা।
মোমেনার সাক্ষ্য নিয়ে কম জল ঘোলা করেনি জামাতিরা। বলা হচ্ছে মোমেনা নাকি তিনবার সাক্ষ্য দিয়েছেন। একেক জায়গায় নাকি তার একেক রকম বক্তব্য। তিনি নাকি মিরপুরের জল্লাদখানার জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে যে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তাতে কাদের মোল্লার নাম ছিল না। তিনি নাকি বোরকা ও নেকাবে মুখ আবৃত করে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়েছিলেন, ইত্যাদি ইত্যাদি।
এগুলো আসলে একেবারেই বানোয়াট প্রোপাগাণ্ডা। ব্লগার নিঝুম মজুমদার মুক্তমনায় প্রকাশিত দি কিউরিয়াস কেইস অব কাদের মোল্লা এবং সাক্ষী মোমেনা প্রবন্ধে প্রতিটি কুযুক্তিই খণ্ডন করেছেন। পাঠকেরা প্রবন্ধটি পড়ে দেখতে পারেন।
আসলে মোমেনা মূলত তার জীবনে একবারই সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁর পিতা-মাতা আর ভাই-বোন হত্যা মামলায়। আর সারাজীবন যদি অন্য কোনো বক্তব্য দিয়ে থাকেন তবে সেটি আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি, হবার কথাও নয়।
মোমেনার যে জবানবন্দির কথা বলে জল ঘোলা করার চেষ্টা করা হয়– যেটি তিনি মিরপুরের জল্লাদখানার জাদুঘর কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন বলে ‘বাঁশের কেল্লা’রা ক্রমাগতভাবে ছড়িয়ে যাচ্ছে, সেটি কিন্তু মাননীয় আদালতের চোখে সম্পূর্ণভাবে অসাড় হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যে অভিযোগ আদালতে ধোপে টেকেনি, সেটা যদি ‘কন্সপিরেসি থিওরি’ হিসেবে কেউ ছড়িয়ে বেড়ায় তখন তার ঘাড়েই দায় বর্তায় সেটা প্রমাণ করার, আমাদের ওপর নয়।
নিঝুম মজুমদারের অনুসন্ধানী পোস্ট থেকে জানা যায়, ‘‘কাদেরের আইনজীবী একটা কাগজ নিয়ে এসেছে ছবি ফরম্যাটে [ফটোস্ট্যাট] যাতে কোনো কর্তৃপক্ষের সাক্ষর নেই, সাক্ষ্যদাতার সাক্ষর নেই, এটি কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে সেটির ব্যাখ্যা নেই কিংবা বলতে পারেনি, এই বিচারের আইনের ধারা ৯, সাব সেকশন ৫-এর নিয়ম ফলো করা হয়নি, এটা কোনো সাক্ষ্য নয়।’’ [ট্রাইব্যুনাল-২ এর মামলার রায়, পৃষ্ঠা ১১৯, প্যারা ৩৯১-৩৯২ দ্র:]
আর কোনো জাদুঘরের সাক্ষাতকারে যদি মোমেনা কাদের মোল্লার নাম উল্লেখ না করে থাকেন কিংবা আদালতে যদি বোরকা পরে সাক্ষ্য দিতে এসে থাকেন তাতেই-বা কী সমস্যা ছিল? যে মানুষটি তাঁর পরিবারের প্রত্যেককে চোখের সামনে নৃশংসভাবে খুন হতে দেখেছেন, যে ব্যক্তি গত বিয়াল্লিশটি বছর শোক-দুঃখ-হাহাকার নিয়ে বড় হয়েছেন, কাতর হয়েছেন অমানুষিক যন্ত্রণায়, তিনি কি নিজের নিরাপত্তার কথা ভেবে প্রয়োজনমাফিক ব্যবস্থা নেবেন না? মোমেনা বেগম নিজ মুখেই তো বলেছেন যে, আদালতে সাক্ষ্যের আগে তিনি ভয় এবং নিরাপত্তার কারণে অনেক সময়ই নাম গোপন করে গেছেন:
“অনেক মানুষ আমার কাছে এসেছিল ও আমার ছবি নিয়েছিল; কিন্তু ভয়ের কারণে আমি কাউকে কাদের মোল্লা এবং আক্তার গুণ্ডার নাম বলি নাই।”
তাঁর ভয়ের ব্যাপারটা তো অমূলক নয়। জামাত-শিবিরের সন্ত্রাস সম্বন্ধে কেউ তো অজ্ঞ নয়। সাঈদীর মামলায় সাক্ষ্য দিতে গিয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী গোলাম মোস্তফা নিহত হননি? তারা বোধহয় একই পরিণতি মোমেনা বেগমের জন্যও চেয়েছিল। সেটা বাস্তবায়িত না হওয়াতেই কি এত ক্ষোভ আর মিথ্যাচার?
আর এই মামলায় তো কেবল মোমেনা বেগম নয়, অনেক সাক্ষীই ‘ক্যামেরা ট্রায়ালে’ সাক্ষ্য দিয়েছেন। পৃথিবীর প্রতিটি দেশে এই জাতীয় ট্রায়ালের ক্ষেত্রে যে নিয়মগুলো প্রচলিত রয়েছে, সে ধরনের নিয়ম মেনেই সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে। অথচ হঠাৎ করেই মোমেনা বেগমের সাক্ষ্য কেন্দ্র করে গোয়েবলসীয় প্রচারণায় মেতে উঠেছেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী মহল।
মজার ব্যাপার হচ্ছে, অনেকেরই হয়তো জানা নেই– সাক্ষী নিয়ে বরং ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছিলেন কাদের মোল্লার পক্ষের আইনজীবীরাই। মোল্লার এক ভিকটিম পল্লবের ভাইয়ের স্ত্রী মোসাম্মৎ সায়েরাকে তারা হাত করতে চেষ্টা করেন, তাকে দিয়ে মিথ্যে সাক্ষ্য দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু মিথ্যে কথা বলতে গিয়ে লেজেগোবরে করে ফেলেছেন তিনি। (ট্রাইব্যুনালের রায়ের প্যারা ১৮২-১৮৯ দ্রঃ)। মজা হচ্ছে এগুলো নিয়ে গোয়েবলস বাবাজি আর তার সাগরেদরা সব নিশ্চুপ।
পাঠকদের অবগতির জন্য জানাই, কেবল মোমেনা বেগম নয়, অনেকের সাক্ষ্য থেকেই জানা গেছে এই কাদের মোল্লাই– আক্তার গুণ্ডা, নেহাল, হাক্কা গুণ্ডা যারা মীরপুরে ত্রাস সৃষ্টি করেছিল একাত্তরে– তাদের সহচর ছিল। এদের অনেকেই সরাসরি কাদেরকে নিজ চোখে শনাক্ত করেছিল। সেই চাক্ষুষ সাক্ষীর মধ্য থেকেই দু’জনের বয়ান উপরে এই লেখাতেই উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া আছেন প্রধান সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল হক মামা, যিনি আদালতে দাঁড়িয়ে কাদের মোল্লাকে শনাক্ত করেছিলেন। কাদের মোল্লার আসল-নকল নিয়ে প্রধান সাক্ষী শহিদুল হক মামা ‘একাত্তর’ টিভিতে ১৩.১২.২০১৩, ইউটিউব ভিডিও:
http://www.youtube.com/watch?v=sGsTPnuHMPA
তারপরও বেশিরভাগ মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, জামাত-সমর্থক গোষ্ঠীর ধারণা কাদের নির্দোষ ভালো মানুষ। কিছু “বিকৃত তথ্য”এবং তার সঙ্গে একগাদা নির্জলা ‘মিথ্যাচার’ জড়িয়ে সারাদিন এরা করে যাচ্ছে ধর্মব্যবসা। গোয়েবলসীয় কায়দায় তারা বলেই চলেছে কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের নাকি এক নয়। যারা এখনও বলে, কসাই কাদের আর মোল্লা কাদের এক নয়, তাদের কাছে আমাদের একটাই প্রশ্ন–
‘কসাই কাদের’টা তাইলে গেল কোথায়? রাতারাতি হাওয়ায় মিলিয়ে গেল নাকি?
আমরা মনে করি, কাদের আর কসাই একই লোক সেটা আদালতেই প্রমাণিত হয়ে গেছে আর শাস্তিও দেওয়া হয়েছে, আমাদের নতুন করে আর কিছু প্রমাণের নেই। ‘বার্ডেন অব প্রুফ’টা তাদের কাঁধেই যারা মনে করেন দুই কাদের ভিন্ন ব্যক্তি। আমরা মনে করি, তারা সেটা প্রমাণ করতে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছেন। অন্যদিকে মোমেনার মতো চাক্ষুষ সাক্ষীরাই যথেষ্ট যাদের পরিবার কাদের মোল্লার হাতে নিগৃহীত হয়েছিলেন। তাকে চিনতেন তার বন্ধু এবং সহপাঠীরাও, যেমন ড. মোজাম্মেল এইচ খানের মতো ব্যক্তিরা।
বিপরীত পক্ষ বরাবরই সেগুলো অস্বীকার করে ‘বাঁশের কেল্লা’ আর গোলাম মওলা রনির মতো লোকজনের কথাকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। আসুন দেখি কতটা নির্ভরযোগ্য এই গোলাম মাওলা রনি, যে সরকারদলীয় সাংসদ অতীতে সাংবাদিক পেটানোসহ বহু কারণেই বিতর্কিত হয়ে সংবাদের শিরোনাম হয়েছিলেন।
কাদের মোল্লার ফাঁসির আগ মুহূর্তে তিনি একটি চিরকুট প্রকাশ করেন ফেসবুকে এবং দাবি করলেন রনির সঙ্গে মোল্লা সাহেবের কারাগারে সাক্ষাত হয়েছিল এবং সেই সুবাদে মোল্লা রনিকে একটা চিঠি দেন, সেখানে ইনিয়ে বিনিয়ে কাদের মোল্লার ‘একটু উস্তাভাজি খাওয়ার’ বাসনা ছিল আর মোল্লা নাকি রনিকে এও অনুরোধ করে বলেছিলেন, ‘আমার ফাঁসির পর একবার হলেও বল বা লিখ যে, কাদের মোল্লা আর কসাই কাদের এক ব্যক্তি নয়’। এই সেই চিঠি:

এই চিঠি পুঁজি করেই সহানুভূতির বাণিজ্য শুরু করেছিলেন গোলাম মওলা রনি ফেসবুকে। গোলাম শুরু করেছিলেন কাদেরের গোলামী।
কিন্তু আমরা যখন এ নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করলাম তখন বেরিয়ে এল অন্য তথ্য, বিশেষ করে যখন কাদের মোল্লার স্ত্রীকে লেখা একটি চিঠি অনলাইনে প্রকাশিত হয়ে যায়:

ব্যাপারটা কি লক্ষ্য করেছেন পাঠক???
পাঠকদের সুবিধার জন্য দুটো ছবি একসঙ্গে দেওয়া গেল। একটু ভালো করে খেয়াল করলেই বোঝা যাবে যে ‘ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’:

গোলাম মওলা রনি সাহেবের যে ফেসবুক স্ট্যাটাসটা নিয়ে এত চেঁচামেচি, এখন তো থলের বেড়াল বেরিয়ে এসেছে; সেই চিরকুটের সিগনেচার আর কাদের মোল্লার পরিবারের কাছে লেখা চিঠির সিগনেচার ভিন্ন!
লেখাটি শেষ করার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারও পাঠকদের মনে করিয়ে দিতে চাই। এই ট্রাইব্যুনাল যদি স্বচ্ছ না হয়, যদি কাদের সত্যই মনে করে যে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, তাহলে ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ের পর কসাই কাদের কেন দুই আঙুল দিয়ে জয়সূচক ‘ভিক্টরি চিহ্ন’ দেখিয়েছিল? যে ট্রাইব্যুনাল স্বচ্ছ নয়, নিরপেক্ষ নয়, আন্তর্জাতিক নয়– সেই ট্রাইব্যুনালে প্রথম রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়ার পরেও কেন কাদের নিজেকে জয়ী মনে করল?

যদি সে সত্যিই কসাই কাদের না হয়, কস্মিনকালেও যদি মিরপুরে না গিয়ে থাকে, একটি মানুষও হত্যা না করে থাকে, তবে কতবড় পাগল হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাবার পরেও হাত তুলে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করে? হিসেবটা কি মেলে?
আশা করি আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াসটি বিভ্রান্তি দূর করে হিসেবগুলো মেলাতে কিছুটা হলেও সাহায্য করবে।
আরিফ রহমান: বস্ত্রপ্রকৌশলে অধ্যয়নরত ব্লগার, অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট।
ড. অভিজিৎ রায়: মুক্তমনার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক, বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক।
Mahbub Islam
”আসলে মোমেনা মূলত তার জীবনে একবারই সাক্ষ্য দিয়েছেন তাঁর পিতা-মাতা আর ভাই-বোন হত্যা মামলায়। আর সারাজীবন যদি অন্য কোনো বক্তব্য দিয়ে থাকেন তবে সেটি আদালতে সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হয়নি, হবার কথাও নয়।” এই কথাটি লেখক কেনো লিখলেন তিনিই ভাল জানেন।
সত্য কথা বুঝাইতে এতো গল্পকাহিনী লাগেনা।
tareq joy
ধন্যবাদ লেখকদ্বয় ও বিডি নিউজকে ।
nurulislamchowdhury
পরাজিত শত্রু পাকিস্তান চিরদিন পরাজিতই থাকবে। মোনাফেক বিশ্বাসঘাতকদের জন্মস্থান পাকিস্তান। পাকিস্তানের দোসর জল্লাদদের ওই স্থান হোক অগ্নিগিরির জ্বলন্ত মুখ।
বীর বাঙালির দেশে এরা ঠা্ঁই পাবে না…
কাজী আহমদ পারভেজ
দুটো হস্তাক্ষরে প্রধান যে পার্থক্য তা শব্দ শুরুর তিনকোণা অক্ষরগুলোর বিন্যাস থেকে ব্যাখ্যা করা যাবে। লক্ষ করুন, আসল চিঠিতে শব্দের প্রথম অক্ষর হিসেবে যতগুলি ক, ব, র লেখা আছে তা শুরু হয়েছে বামের একটি শর্ট মাত্রা দিয়ে একইভাবে একটানে। আর তা না পড়লে তা তে ফেরার কোনো লক্ষণ নাই। লেখক কনভিন্সড যে মাত্রা দেওয়া আছে।
এবার কথিত লেখাটাতে একই রকমের ত্রিকোণ আদ্যক্ষরগুলি দেখুন। প্রতিটি মাত্রা অক্ষর থেকে পৃথক এটেম্পটে পরে লেখা আকারের অংশ হিসেবে।
একজন মাত্রা দিয়ে অক্ষর লিখবেন নাকি অক্ষর লিখে মাত্রা দেবেন, বিষয়টা স্টাইলের মৌলিক একটা পার্থক্য নির্দেশক। দুটো চিঠি নিঃসন্দেহে সম্পূর্ণ পৃথক স্টাইলে লেখা, দুই জনের।
hridoy
ছাগুদের নিয়ে আর পারা গেল না!!!
নিয়াজীর তুলনায় খাটো ‘কসাই কাদের’ উঁকি দিয়ে নিজের মুখটা কামেরার সামনে আনতে চেষ্টা করছে। তাই মুখটা প্রায় নিয়াজীর কাঁধের উপরে চলে এসেছে। আর ছাগুরা যে কী সব লিখছে …..
আরিফ রহমান
কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নেই
১)১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ রাইফেলস কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসাবে কিভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারলেন যখন রাইফেলসে কর্মরত ছিলেন একজন শহীদ বুদ্ধিজীবীর স্ত্রী ? কি করে উদয়ন স্কুলে চাকরি করলেন ?
কি করে ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে ২বার সাংবাদিকদের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হলেন? তখনকার সব রিপোর্টার কি জামাত শিবির ছিলেন যে তাকে নির্বাচিত করলেন ?
উত্তরঃ এক খোঁচায় এর উত্তর দেয়া যায়; ১৯৭৭ সালে এই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন একজন রাজাকার, কেবিনেটে ছিলো ১৮ জন রাজাকার এম্পি, ৫-৬ জন রাজাকার মন্ত্রী। সেখানে উদয়ন, রাইফেলসে কাজ করা এমনকি অসম্ভব কাজ… আরে প্রধানমন্ত্রী রাজাকার হলে সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি হওয়া কি খুব অবাস্তব ব্যাপার ?
২)কি করে তিনি ১৯৭২ সালের শেষের দিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদুল্লাহ হলের আবাসিক ছাত্র হিসাবে হলে অবস্থান করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যায়ন অব্যাহত রাখতে পারলেন?
উত্তরঃ ১৯৭২ সালের শেষের দিকে কাদের মোল্লা মোটেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলেন না।
কাদের রাজেন্দ্র কলেজেই বিএসসি পড়ে (১৯৬৬-১৯৬৮)। তার পরিবার বলেছে সে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাস কোর্সে এমএসসিতে ভর্তি হয়, স্বাধীনতার পর পরই ১৯৭২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসে এবং ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত সেখানে অধ্যয়ন করে।
এ বক্তব্যের প্রথম অংশটুকু সত্য নয় এবং যে কোন পাঠকই বুঝতে পারবেন দুই বছরের এমএসসি ডিগ্রীর জন্য ৮ বছর (১৯৬৯-১৯৭১, ১৯৭২-১৯৭৭) বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান করার হিসাব মেলানো যায় না। পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী সে এসএসসি পাস করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিল পড়তে, কিন্তু আসল কাহিনি হল কাদের মোল্লার এইচএসসি পরীক্ষার ফল গড়পড়তা ছাত্রের থেকে অনেক নিচে ছিল যার ফলে সরাসরি সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ার যোগ্যতা অর্জন করেনি। তার সহপাঠী মোজাম্মেল খানই তা ফাঁস করে দিয়েছেন। অথচ ছাগ-বান্ধব সাইটে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে তিনি নাকি ‘গোল্ড মেডেলিস্ট ছাত্র’ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের।
১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয়ের পর কাদের আত্মগোপন করে এবং ১৯৭৬ সালে সে আত্মগোপনতা থেকে বেরিয়ে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পুনরায় ভর্তি হয় এবং ১৯৭৭ অবধি সে ছাত্র ছিল।
(মুক্তমনা থেকে পড়ুন — মোজাম্মেল এইচ খানের Quader Mollah: fact versus fiction প্রবন্ধটি)
৩) ডেভিড বার্গম্যান ট্রাইবুনালের বিরুদ্ধে
উত্তরঃ ডেভিড বার্গম্যান ট্রাইব্যুনালের জন্য একটা হুমকি বই কি !!!(পুরান পাগল ভাত পায় না নতুন পাগলের আমদানি)। ভাই লোগ এই ডেভিড বার্গম্যান মোটেও তেমন হোমরা চোমরা সাংবাদিক না। বাংলাদেশী একটা ইংরেজি দৈনিক (নিউ এজ) চাকরি করেন, একাধিক বাংলা নিউজ পোর্টাল তাকে ঘাড় ধরে বের করে দিয়েছে বলেও শোনা যায়। ব্লগস্পটে সাবডোমেনে একটা সস্তা সাইট চালান। ট্রাইব্যুনাল বিতর্কিত করার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা পান। আমাদের মাঝে কেন যেন একটা প্রবণতা আছে সাদা চামড়া একটা কথা বললেই সেটা ঠিক…
মোটেও ওপর কথা হইল ডেভিড বার্গম্যান কোন বড় মাপের সাংবাদিক না, তার থেকেও অনেক বেশী টাকা দিয়ে জামাত লবিস্ট নিয়োগ করে। যুক্তরাষ্ট্রে মীর কাশেম আলীর ২৫ মিলিয়ন ডলারের (প্রায় ২০০ কোটি টাকা) লবিস্ট নিয়োগ করে, তার তুলনায় ডেভিড তো দুধের বাচ্চা !!!
আরেকটা কথা, সাদা চামড়া যদি এতই পছন্দ তাহলে সায়মন ড্রয়িং, লরেন, এন্থনি, ক্যাথরিন…… এরা সাংবাদিক না, এদের পছন্দ হয় না ? নাকি আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের চেয়ে ন্যাশনাল অখ্যাত ডেইলির সাংবাদিক বেশী বিশ্বাসযোগ্য??
৪) একটাও চাক্ষুষ সাক্ষী নাই !!
উত্তরঃ আদালতে ২৩ বছর বিচার করা বিচারক সাক্ষী দেখে রায় দিলো, আর আপনি এসেছেন….. সাক্ষী নাই……
ভালো করে মোল্লার বন্ধু মোজাম্মেল খানের লেখাটা পড়ে দেখেন ৬৬-৬৮ ব্যাচে রাজেন্দ্র কলেজের সব ছাত্র এই সাক্ষ্য বহন করে কসাই কাদের আর কাদের মোল্লা এক ব্যাক্তি। স্বাধীনতার পর অনেক রি-ইউনিয়ন হয়েছে সেই ব্যাচের ছাত্র-ছাত্রীদের, কিন্তু রাজেন্দ্র কলেজের সেই প্রাক্তন ছাত্ররা কখনোই এই কসাইকে প্রবেশ করতে দেয় নি সেই অনুষ্ঠানে।
কাদের মোল্লার সেই বিখ্যাত ছবি !!!!!!
ছাগু কুলের পাছায় আগুন দেয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল সেই ছবি, তাতে কী ?
ছাগুকূল আনলো নতুন ফুট ইঞ্চি থিওরি… নিয়াজি কয় ফুট গু আজম কয় ফুট……
ম্যা…… ম্যা…… ব্যা……… ব্যা…………
আসুন এবার আপনাদের কাদেরার সত্তুর দশকের একটা ছবি দেখাই…
ছবিতে ১৯৭১ সালে নিয়াজির পেছনে দাঁড়িয়ে কাদের মোল্লা। দ্বিতীয় ছবি কাদের মোল্লার ৭০ দশকের ফরমাল ছবি। এই ছবি উদ্ধার করে পাশা পাশি দুইটি ছবির ব্যাবচ্ছেদ করা হয়েছে । (নিঝুম’দা সালাম নেবেন)
এই ছবির ব্যাপারে কাদের মোল্লার বন্ধু “মোজাম্মেল খানে”র সাথে কথা বলে জানা যায়
“He was 1 and half year older than me. He was around 23/24 in 1971. The man behind Niazi does not look any older than the age I mentioned. Looking at his hair style he looks no doubt that he is Quader.”
“সে আমার চেয়ে দেড় বছরের বড় ছিলো। তার বয়স একাত্তরে ছিলো ২৩ কি ২৪। নিয়াজির পেছনের লোকটার বয়সও মোটামুটি এরকমই। তার চুলের স্টাইল আর তাকানোর ভঙ্গী দেখলেই পরিস্কার বোঝা যায় যে নিঃসন্দেহে এই লোকই কাদের”
এর পরে কি আর কোন সন্দেহ থাকে এই ছবির ব্যাপারে ?
আরও বিস্তারিত জানতে পড়ুন
http://mukto-mona.com/bangla_blog/?p=38384
Sayed, MF
১৯৭১ সালের ডিসেম্বর ও ’৭২-এর জানুয়ারি মাসে সামরিক বাহিনীর যৌথ অভিযান চলেছিল মিরপুর এলাকায়। ওই অভিযানে একজন সামরিক সদস্য হিসেবে যোগ দিতে পারার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। পাকবাহিনী আত্মসমর্পণ করা সত্ত্বেও বিহারি ও কাদের মোল্লার অনুসারীরা তাদের অস্ত্র সমর্পণ করেনি। তাই আমাদেরকে অনেক বাধার সন্মুখীন হতে হয়েছিল। কয়েকজন সহযোদ্ধাকে প্রাণও দিতে হয়েছিল।
সারা বাংলা ১৬ ডিসেম্বর শত্রুমুক্ত হলেও মিরপুর শত্রুমুক্ত হয়েছিল বেশ কয়েকদিন পর। কালাপানি এলাকায় প্রবেশ করাটাই ছিল বেশ দুঃসাধ্য। সেনানিবাসের বালুঘাট এলাকা দিয়ে নৌকাযোগে এসে ওই এলাকাকে অস্ত্রমুক্ত করতে যৌথ বাহিনীকে অনেক বেগ পেতে হয়েছিল।
ওই অপারেশনের সময় কাদের মোল্লার বাড়ি থেকে অনেক অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু মোল্লাকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। যদি পাওয়া যেত তবে হয়তো-বা এই ফাঁসিকাষ্ঠের জন্য আর তাকে অপেক্ষা করতে হত না। সে ছিল পলাতক।
সুতরাং ওই মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার হিতাকাঙ্ক্ষীদের আল্লাহর কাছে শুকরানা আদায় করা উচিত এই কারণে যে তাকে ওইদিন তার বাড়িতে পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেলে ওইদিনই তার এই রায় কার্যকর হয়ে যেত এবং তাকে আর তার
কলঙ্কময় জীবন নিয়ে বাংলার বুকে বিচরণ করতে হত না।
প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব, যেভাবে দেশ চলছে সেভাবেই চলুক, আমরা বাংলাল্র জনগণ আপনার সঙ্গে থাকবে। আমরা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম এখনও নিঃশেষ হয়ে যাইনি। আমরা আপনার তথা দেশের ডাকের অপেক্ষায় আছি। গেরিলা যুদ্ধ ফেরত দিইনি, সরকারের অনুরোধে কেবল অস্ত্র জমা দিয়েছিলাম।
ডাক দিন, আমরা আবার আসব, পাকিস্তানের দালালদেরকে এ দেশের মাটি থেকে উৎখাত করেই ছাড়ব ইনশাল্লাহ।
আজ যারা কাদের মোল্লার আসল-নকল খুঁজছেন তাদের উদ্দ্যেশ্য বুঝতে কারও বাকি নেই। যারা এ কাজ করছেন তাদেরকেও বিচারের কাঠগড়ায় আনতে হবে।
suvash/usa-ny
রনি সাহেবকে ধরা উচিত উনার কাজের জন্য…
মুমিনুর রহমান
লিখনী: কাদের মোল্লার চিরকুট প্রকাশ এবং আপনার ফেসবুক স্ট্যাটাস কেন্দ্র করে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। পাঠকদের উদ্দেশ্য যদি বিষয়টি পরিষ্কার করেন।
গোলাম মাওলা রনি: আসলে বিষয় হল, কাদের মোল্লা আমাদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের ফুলবেঞ্চে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, উনার মৃত্যুও হয়ে গেছে। ফলে এ বিষয় নিয়ে আমার কোনো বক্তব্য নেই। এ বিচার নিয়ে নাগরিক হিসেবে কোনো কিছু বলার অধিকার পর্যন্ত আমার নেই। এ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আদালত যেখানে রায় দিয়েছে আমার কিছু বলার নেই।
মূলত আমি জেলখানা থেকে যেদিন বের হব ওই দিন সকালবেলা উনি (কাদের মোল্লা) আমাকে একটি ছোট্ট চিরকুট পাঠিয়েছিলেন। একজন মৃত্যুপথযাত্রী, তার একটা অসিয়ত, একজন মুসলমান হিসেবে আমার কাছে মনে হয়েছে প্রকাশ করা উচিত। এখানে আমার কোনো অপরাধ নেই। যেদিন আমি ফেসবুকে স্ট্যাটাসটি লিখেছিলাম সেদিন টিভি স্ক্রিনে দেখলাম রাত ১২টা ১ মিনিটে তার ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
আমি সে অনুযায়ী স্ট্যাটাস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি। সকালবেলা জানলাম যে তার ফাঁসি হয়নি এবং তার পরের দিন হল। এখন যারা কট্টরপন্থী আছে তারা সমালোচনা করেছে। কাদের মোল্লার পক্ষের লোকজনও বিভিন্ন কথাবার্তা বলেছে। এটা মূলত একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, একান্ত ব্যক্তিগত অনুভূতি। আমি এর দ্বারা কিছুই বুঝাতে চাইনি। শুধুমাত্র একজন মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের অসিয়ত রক্ষা করেছি।
লিখনী: এ প্রসঙ্গে একজন পাঠকের প্রশ্ন ছিল আপনার প্রকাশিত চিরকুট এবং তার স্ত্রীর কাছে পাঠানো চিরকুটটির মধ্যে হেরফের আছে। তাহলে কি আপনার চিরকুটটি ভূয়া ছিল?
গোলাম মাওলা রনি: পাঠককে ধন্যবাদ। এ কথাটি বলার অপেক্ষায় ছিলাম। আমাকে কাদের মোল্লা সাহেব যে চিরকুটটি দেন তা দিয়ে আমি একটি স্ট্যাটাস দিই। আমি কিন্তু কোনো চিরকুট আপলোড করিনি। কে বা কারা আমার স্ট্যাটাসের ভাষাগুলো দিয়ে একটি চিরকুট লিখে আপলোড করেছে। ওই চিরকুটটা মূলত কাদের মোল্লার চিরকুট নয়। কারণ আমাকে দেওয়া চিরকুটটি আমি বের হওয়ার আগেই জেলাখানার ডেসট্রয় করে দিয়ে এসেছি। কথাগুলো আমার মনে ছিল।
ছোট্ট ব্যাপার, আমি এ কথাটা লিখে দিয়েছি।
বিপ্লব রহমান
কসাই কাদেরের পক্ষ নেওয়ায় আওয়ামী লীগের উচিত হবে সাংসদ রনির বিরুদ্ধে দলীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া। সামাজিকভাবে স্বাধীনতাবিরোধী এসব অপশক্তিকে বয়কট করার আহ্বান জানাই।
কাদের মোল্লা সংক্রান্ত বিভ্রান্তির অবসান ঘটানোর জন্য লেখকদ্বয়কে সাধুবাদ।
Abdullah Al Mamun
ডিসেম্বর মাসে একটি মৃত্যু ও দুটি মৃত্যুদণ্ড পুরো গোলকটিকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। মৃত্যুটি ঘটেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। আর দণ্ড দুটির একটি বাংলাদেশে। অপরটি উত্তর কোরিয়ায়। কাকতালীয়ভাবে দুটি মৃত্যুদণ্ডই আবার প্রায় একই সময় এবং একই দিনে সংঘটিত হয়েছে।
আবদুল কাদের মোল্লাকে ‘কসাই অব মিরপুর’ হিসেবে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। জনৈক মোমেনা বেগমের একক সাক্ষীর ওপর নির্ভর করে এই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই মোমেনা বেগমের মুখ থেকে বিয়াল্লিশ বছর আগে সংঘটিত একই ঘটনার তিন রকম বর্ণনা সংরক্ষিত রয়েছে তিনটি জায়গায়। একমাত্র এই সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করে দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে পাঁচ বিচারপতিও ঐকমত্য পোষণ করতে পারেননি। সব বিবেচনায় এই ‘বেনিফিট অব ডাউট’টি অভিযুক্তের পক্ষে যাওয়ার কথা ছিল; কিন্তু কে শোনে কার কথা! আর কে-ই বা বলবে কার কথা!
গণআদালতের স্পিরিট নিয়ে যারা সরকারে বসছেন তারাই গণজাগরণ মঞ্চ খুলে বসেছেন। এই তারাই আবার বিচারপতির চেয়ারে, তারাই প্রসিকিউশন টিমে। জনগণের মনের কথা যারা তুলে ধরবেন, আবার একটু ভিন্ন রূপে আবার তারাও একই। ফলে ‘ইনারা আর তিনারা’ মিলে পুরো দেশটিকেই আজব এক চিড়িয়াখানা বানিয়ে ফেলেছেন। এ ধরনের চিড়িয়াখানা কোরীয় উপদ্বীপে আরেকটি রয়েছে যার কথা একটু পরে আলোচনায় আসবে।
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও বাংলা নামের কোনো ব্যক্তি ও সংগঠনের জন্য এ ব্যাপারে কথা বলা নিরাপদ নয়। ওরা কথা বললেই তাদের পেছন দিয়ে আমরাও একটু বলার সাহস পাই। আওয়ামী লীগের মুখপোড়া ও ঘরছাড়া এমপি গোলাম মাওলা রনিসহ অনেকেই এ বিষয় নিয়ে যতটুকু সম্ভব নিরাপদ জায়গা থেকে বলেছেন। তারপরও গালিগালাজের সীমা ছিল না।
রনিদের সরকার কাদের মোল্লার শেষ ইচ্ছেটি না রাখলেও রনি নিজে তা রেখেছেন। বিবেকের তাড়না থেকে কাদের মোল্লার শেষ ইচ্ছে হিসেবে তার সেই চিরকুটটি প্রকাশ করে দিয়েছেন। মোল্লার সেই দুটি লাইন অনেককেই ধাক্কা দিয়েছে এবং সামনে এ ধাক্কাটি আরও বেশি অনুভূত হবে। মোল্লার বায়োডাটা ও কসাই কাদেরের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যালোচনা করলে মনে হয় ‘সামথিং রং সামহোয়ার’।
ইতিহাস আর ভূগোল ভিন্ন হলেও ঘৃণার মানচিত্রটি সব জায়গায় প্রায় একই রকম থেকে যায়। নেলসন ম্যান্ডেলাকেও ইউরোপের কনজারভেটিভ দলগুলো গত শতাব্দীর নব্বই দশক পর্যন্ত ‘বুচার’ বা কসাই হিসেবে জেনে এসেছে। ছিয়ানব্বই বছর বয়সে মৃত্যুর পরও যে ম্যান্ডেলার জন্য সারা পৃথিবী মাতম করেছে, সেই ম্যান্ডেলার মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে খোদ ব্রিটেনের একটি কনজারভেটিভ ছাত্র সংগঠন পোস্টার পর্যন্ত ছাপিয়েছিল। শার্টের কলারে ও টাইয়ে ম্যান্ডেলার মৃত্যুদণ্ডের দাবিসংবলিত ব্যাজ পরে থাকত তরুণ ছাত্রনেতারা।
সেই সময় এই ছাত্র সংগঠনের অন্যতম নেতা ছিলেন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও যুক্তরাজ্যে হাউজ অব কমন্সের বর্তমান স্পিকার জন বারকাউ। আজ সেই নেলসন ম্যান্ডেলাকে ডেভিড ক্যামেরন তার জীবনের অনুপ্রেরণা বলে জানিয়েছেন।
অন্যদিকে, এত দিন যাকে আদরের ও শ্রদ্ধার ফুপা বলে জেনেছেন তাকেই কুকুরের চেয়ে অধম মনে করে ফাঁসিতে ঝুলিয়েছেন কিম জং উন। মৃত্যুদণ্ডের চার দিন আগেও এই ফুপা মশায় ছিলেন দেশের দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি। দাদার আদরের জামাই সেই ফুপাকে ফাঁসিতে ঝুলানোর পরও নিজের ফুপুকে এখনো আগের পদেই বহাল রেখেছেন। ভয়ঙ্কর সার্কাসের দেশ উত্তর কোরিয়া। তাদের এসব গল্প শুনলে রক্ত শীতল হয়ে পড়ে। নিজের সাবেক মেয়েবন্ধুকেও (সম্ভবত প্রভা কেইস) এই লৌহবালক কিছু দিন আগে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করেছিলেন।
উত্তর কোরিয়ার নাম শুনে আমরা ভয় পাই; কিন্তু সেই উত্তর কোরিয়া হাওয়া থেকে আমরা খুব বেশি দূরে নই। হানিফ-টুকু-বিচারপতি খায়রুল-নাসিরুদ্দীন ইউসুফ-মুনতাসীর-শাহরিয়ার কবীর-ডা: ইমরান-মিডিয়া-চাপাতিলীগ সবাই মিলে এ দেশকে উত্তর কোরিয়ার কাছাকাছি পৌঁছে দিয়েছে। এরা সবাই মিলে আজব চেতনার এক ফ্যাক্টরি বসিয়েছে। কাউকে অপছন্দ বা সন্দেহ হলে তাকে ফাঁসিয়ে দেওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
এই চেতনা মেশিনের চক্ষুশূল যে কেউ এখানে যুদ্ধাপরাধী বা জঙ্গি হিসেবে অভিযুক্ত হতে পারেন। যে কেউ জামায়াত-শিবির হিসেবে চাপাতিলীগ অথবা গোপালি পুলিশের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়তে পারে। দৈনিক আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মাহমুদুর রহমানকে বিনা বিচারে মাসের পর মাস আটক করে রাখা হয়েছে। দৈনিক সংগ্রাম অফিসে হামলা করা হয়েছে। শফিক রেহমানের বাসায় বারবার আক্রমণ করছে। মাত্র কয়েকটি মুখ বন্ধ করতে পারলেই দেশটি উত্তর কোরিয়ার মতো চিড়িয়াদের দেশ হতে সময় লাগবে না।
মাত্র গুটিকয় লাশ পড়া দেখে ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান বিবেকের তাড়নায় গদি ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন প্রতিদিন পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ফেলছে আট-দশটি করে লাশ। তারপরও আমাদের মধ্যে কোনো বিকার দেখা যাচ্ছে না। শেখ হাসিনা আর বশংবদ মিডিয়ার হৃৎপিণ্ড কাঁপে শুধু আগুনে পোড়া মানুষ দেখলে।
এ ধরনের কিছু তুলনা টেনে আক্ষেপ করেছেন কলামিস্ট ও সমাজচিন্তক এফ আর চৌধুরী। বাংলাদেশ মেরিন অ্যাকাডেমির সাবেক কমান্ড্যান্ট ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় উঁচু পদে চাকরি করে লন্ডনে অবসর জীবনযাপন করছেন। দেশের পতাকা ও সম্মান অনেক জায়গায় বয়ে নিয়েছেন। অবসর জীবনে এসেও পুরো অবসর নিতে পারছেন না। নিরন্তর লিখে যাচ্ছেন দৈনিক নিউ এইজ ও বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায়। পরিবারের সবাই লন্ডনে, তবুও দেশের চিন্তায় কাতর হয়ে পড়েছেন। ফোন ও ই-মেইলে তার ভাবনাগুলো শেয়ার করেন। তার কথাগুলো মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনে যাই।
Decency, Courtesy, Humility and Humanity নামক একটি কলামে সাহেবজাদা ইয়াকুব খান সম্পর্কে একটি ঘটনা উল্লেখ করেছেন। ইয়াহিয়া খান তাকে অর্ডার করেছিলেন– Shoot, kill, terrorise and destroy the so called spirit of Joy Bangla, restore the full authority of the central government of Pakistan– কিন্তু সাহেবজাদা ইয়াকুব উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আমি আমার সেনাদের নিজের দেশের জনগণের ওপর গুলি ছোঁড়ার নির্দেশ দিতে পারব না।’ ফলে তাকে এই পদ থেকে সরিয়ে টিক্কা খানকে বসানো হয়।
সেই দিন সাহেবজাদা ইয়াকুব খান বিবেকের তাড়নায় যে কাজটি করতে পারেননি আজ বিজিবি-র্যাব-পুলিশের মধ্যে টিক্কা খানের প্রেতাত্মারা কোনোরূপ বিবেকের দংশন ব্যতিরেকে সেই কাজই করছে। জনগণের এই সর্বাত্মক প্রতিরোধ সংগ্রামকে জ্ঞানপাপী মিডিয়া তুলে ধরছে জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডব হিসেবে। মনে হচ্ছে জামায়াত-শিবির মানুষ নয়, এরা কুকুর-বেড়াল।
১৯৭২-৭৫ এ জাসদকে একইভাবে কুকুর-বেড়াল গণ্য করেছিল শাসকেরা। তখন ৩০ হাজার তরুণকে হত্যা করেছিল রক্ষীবাহিনী। সেই জাসদের নেতা এখন এই ভয়ঙ্কর জল্লাদি কাণ্ডের সহযোগী সেজেছে। আওয়ামী লীগের কাঁধে বন্দুক রেখে ভিন্ন মতাবলম্বী সব মিডিয়াকে নিঃশেষ করেছে। দেশের সাধারণ মানুষের মন জয় করা র্যাবকে এই সরকার রক্ষীবাহিনী বানিয়ে ফেলেছে। এ সরকারের হাতে জাতির সব অর্জন ধ্বংস হয়েছে।
আমাদের আবেগ, ক্ষোভ ও হতাশাকে যুক্তি ও বাস্তবতার নিরিখে পরখ করার প্রজ্ঞা বা সামর্থ্য আমরা হারিয়ে ফেলেছি। ফলে জাতির মোটা মাথা দিয়ে প্রতিবেশি মজা করে মুড়িঘণ্ট রান্না চলেছে। যে মমতা ব্যানার্জি পশ্চিম বাংলার মুখ্যমন্ত্রী হলে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিজের প্রটোকল ভুলে এক বান্ধবীকে দিয়ে ফুলের তোড়া পাঠিয়েছিলেন, সেই মমতা ব্যানার্জি তর্জনি উঁচিয়ে বলেন, এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়া হবে না।
ওদের তর্জনি উঠে দেশের প্রতি ইঞ্চি জায়গা রক্ষা করতে। আর আমাদের তর্জনি উঠে জাতির র্সর্বনাশ করতে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে সংবিধান থেকে এক চুল না নড়তে একই ভঙ্গিতে তর্জনি উঁচিয়ে দেখিয়েছিলেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী।
তিস্তার পানি কিংবা ছিটমহল দিতে না চাইলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে নিঃশর্ত সমর্থন দিতে অত্যন্ত আগ্রহভরে এরা এগিয়ে এসেছে। আমাদের একতরফা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সমঝদার এ প্রতিবেশি। আমাদের দেশের জামায়াতের জন্য তাদের ঘুম আসে না। অথচ দ্বিতীয়বারের মতো তাদের দেশে বিজেপির এককভাবে ক্ষমতায় আসা নিশ্চিত হয়ে গেছে।
চিন্তার ক্ষেত্রে আমরা এমন প্যারালাইজড হয়ে পড়েছি যে বলতে পারি না, ‘দিস ইজ মাই কান্ট্রি, জামায়াত অর নট।’ এটি আমার দেশ। জামায়াত আসবে না কে আসবে এটা আমি দেখব। সেখানে তোমার কী আসে-যায় বাঘের বাচ্চা, বাঘের বাচ্চা বলে পিঠ চাপড়িয়ে নেওল আর ইঁদুরের বাচ্চা দিয়ে আমরা দেশটি ভরে ফেলেছি।
প্রথম মুক্তিযুদ্ধের পর প্রতিবেশির আঙিনায় সরে গেছে আমাদের পাটের কলগুলো। এখন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের পর গার্মেন্ট কারখানাগুলো যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধের পর যাবে আরও কিছু। অর্থাৎ আমাদের এখানে যত মুক্তিযুদ্ধ হবে আমাদের মোটা মাথা দিয়ে প্রতিবেশির বাড়িতে তত মজার মুড়িঘণ্ট রান্না চলবে।
ছোটবেলায় দেখতাম আশ্বিন-কার্তিক মাস এলে রাস্তার কুকুরগুলো পাগল হয়ে যেত। আমরাও কাপড় দিয়ে এমন কষে গিট্টু দিতাম যাতে এরা আর জীবনেও ছুটতে না পারে। এখন মনে হচ্ছে বিভিন্ন চেতনায় যখন আমরা চেতন হারিয়ে ফেলি, তখন আমাদের প্রতিবেশিও এমন করে কষে গিট্টু লাগায়।
বেকায়দায় পড়া প্রাণিদ্বয় ঘণ্টা কয়েক পর এই গিট্টু থেকে বের হতে পারলেও স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পরও আমরা বের হতে পারছি না। বরং আরও নিত্যনতুন গিট্টুতে জড়িয়ে যাচ্ছি।
নিজের দেশকে যতই গিট্টু দিয়ে বাঁধি না কেন অপরকে গিট্টু ছাড়া দেখে প্রশংসা করি। নেলসন ম্যান্ডেলার স্মৃতির প্রতি সম্মান ও ভালোবাসা দেখাতে ওবামা আর ডেভিড ক্যামেরনের দেশকেও ছাড়িয়ে গেছি। আমরা তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক পালন করেছি। যে প্রেসিডেন্ট ঘন ঘন স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়া ছাড়া অন্য কোথাও যান না, তাকেও দক্ষিণ আফ্রিকায় পাঠিয়েছি।
নেলসন ম্যান্ডেলাকে নিয়ে এ কাজ করা মোটেই উচিত হয়নি। কারণ তিনি যে কাজ করে আজকের ম্যান্ডেলা হয়েছেন, তা পুরোপুরি ‘নব্য রাজাকার’দের কাজ। কারণ তিনি এমন ‘ভয়ঙ্কর রাজাকারদের’ ক্ষমা করেছেন যারা তার নিজের সম্প্রদায়ের ওপর শত শত মাসব্যাপী নির্মম রাজাকারি করেছে। দিনের পর দিন হত্যা করেছে, গুম করেছে, নির্বাসনে পাঠিয়েছে, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলিয়েছে। নিম্ন পর্যায়ের একজন পুলিশ অফিসারও ছয় মাসের জন্য যে কাউকে জেলে পাঠিয়ে দিতে পারত।
নেলসন ম্যান্ডেলা সেসব নিপীড়িতের একজন, যাকে দীর্ঘ ২৭ বছর জেলে কাটাতে হয়েছে। এমন ভয়ঙ্কর রাজাকার বা শত্রুদের ক্ষমা করা হয়েছে। উদ্দেশ্য বর্ণবাদের তিক্ত অভিজ্ঞতায় আহত ও বিভক্ত এমন একটি জাতিকে অতীতের সব তিক্ততা ভুলিয়ে সামনে নিয়ে যাওয়া।
ম্যান্ডেলা তাঁর জনগণকে বুঝিয়েছেন এক ঘৃণা অন্য ঘৃণার জন্ম দেয়। অতীতের এক প্রতিশোধ ভবিষ্যতের জন্য আরও এক প্রতিশোধস্পৃহা সৃষ্টি করে। মানবগোষ্ঠীর মধ্যে এটি হয়ে পড়ে একটা বেদনাদায়ক চক্র। এ চক্রে কোনো দেশ বা জাতি একবার ঢুকে পড়লে তা থেকে বের হতে পারে না।
ম্যান্ডেলা তার জাতিকে এই সর্বনাশা চক্র থেকেই বের করে এনেছেন। এ কথা যদি তিনি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতেন, তবে তাকে নির্ঘাত জামায়াতের মহিলা আমিরের অনুকরণে জামায়াতের দক্ষিণ আফ্রিকার আমির হিসেবে ঘোষণা দিতেন আমাদের মতিয়া আপা কিংবা হাসানুল হক ইনু।
সাউথ আফ্রিকার জনগণের জন্য সত্যিই আফসোস হচ্ছে। হতভাগা ওই দেশে আমাদের মতো বুদ্ধিজীবী ও চেতনাধারীদের জন্ম হয়নি। তাই যুগ যুগ ধরে অপমান-বঞ্চনার কাহিনী নিয়ে ওখানে কেউ কোনো উপন্যাস, নাটক, সিনেমাও বানাচ্ছে না। ‘কাঁদো সাউথ আফ্রিকান কাঁদো’ বলে কেউ বিলাপ করছে না। মানব ট্র্যাজেডির এত সব উপাদান ওদের ইতিহাসের পরতে পরতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও দক্ষিণ আফ্রিকায় গ্রুপ থিয়েটার, আর্ট ফিল্মওয়ালাদের দেখা মিলছে না। ফলে যুগ যুগ ধরে কৃষ্ণাঙ্গদের ওপর শ্বেতাঙ্গদের অনেক বঞ্চনার ইতিহাস মাটিচাপা পড়ে গেছে।
জাপানের লোকজনও সেই একই আবেগ ও চেতনা সঙ্কটে পড়েছে। যে আমেরিকা তাদের দেশে আণবিক বোমা মেরেছে, কিছুদিনের মধ্যেই বেহায়ার মতো সেই আমেরিকার সঙ্গেই বন্ধুত্ব করে তথাকথিত উন্নতির চরম শিখরে আরোহণ করেছে! এ ধরনের আবেগ ও বোধহীন জাতির জন্য সত্যিই করুণা লাগে। হিরোশিমা-নাগাসাকি দিবসে কিছুক্ষণ মাথা নত করে দাঁড়িয়ে থাকলেও মুখ দিয়ে কোনো কথা এরা উচ্চারণ করে না।
হিরোশিমা-নাগাসাকিতে লাখ লাখ মানুষ মারা গেলেও সেখানকার টিভি চ্যানেলগুলো এখন পর্যন্ত একজন শহীদের সন্তান বা নাতি-নাতনিরও সাক্ষাৎকার নিতে পারেনি। বুকের ভেতর বেদনাকে ভালোভাবে সংরক্ষণ করে রাখতে পারলে শত বছর পরও হাউমাউ করে কেঁদে ফেলা সম্ভব। এরা নোবেল প্রাইজ পাওয়ার মতো শত শত বিজ্ঞানী সৃষ্টি করতে পেরেছে; কিন্তু আমাদের মতো এমন আবেগসম্পন্ন একজন তারানা হালিমও সৃষ্টি করতে পারেনি।
প্রতিদিন সবার আগে সূর্য উঠলেও এত দিনেও সেখানে একজন জাহানারা ইমাম, ডক্টর জাফর ইকবাল, নাসিরুদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, শাহরিয়ার কবীর বা গণজাগরণ মঞ্চের ডা: ইমরানের উদয় হয়নি। মনের মধ্যে এত বেদনা জমলেও এখনও কেউ দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের ডাক দেয়নি।
স্ত্রীর সাবেক স্বামীটি যক্ষায় ভুগছে, ডায়াবেটিস, প্রেসারও রয়েছে। বর্তমান স্বামীর সন্দেহ এই সাবেক স্বামী তার স্ত্রীর ইজ্জতহানি ঘটাতে পারে। সকাল-বিকেল সেই স্বামীকে উদ্দেশ্য করে ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে। অন্যদিকে পাশের বাড়ির টগবগে নাগর বেডরুমে ইতোমধ্যেই ঢুকে পড়েছে। বেখেয়াল স্বামী আধামরা ও দশ গ্যারামের ওপারে থাকা সাবেক স্বামীর দিকেই এখনও সেই তীর-ধনুক-বল্লম তাক করে রেখেছে। এই তীর-ধনুক-বল্লমের অনেক পার্টস (টিভি চ্যানেল, দৈনিক পত্রিকা, নাটক, সিনেমা) তৈরি করে দিচ্ছে বেডরুমে অবস্থানরত সেই একই নাগর।
এই স্বামীর মতোই হয়ে পড়েছে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে আমাদের চেতনার বাস্তব রূপটি। এ নাগরের তৈরি করে দেওয়া তীর-ধনুক-বল্লমরূপী এসব মিডিয়ার দিকে একটু নজর দেওয়া উচিত। তা না হলে যে গুলিটি আমার বুক ঝাঁজরা করবে তা আমিই তৈরি করে দিচ্ছি।
আবদূর রাহমান
বাঁশের কেল্লার গাঞ্জাসেবী ‘লিখক’ এখানেও চলে এসেছে। তা কসাই কাদের নেলসন ম্যান্ডেলার মতো?
হে হে!! মেহেরজানের পোলা! উপরের লেখাটা ভালমতো পড়।
tareq joy
আপনার প্রতেকটা লাইনে রেফারেন্স দেওয়ার দরকার ছিল। রেফারেন্স ছাড়া কথা বলে ছাগুরা। হুদাই প্রপাগণ্ডা ছড়ানো ছাগুদের কাজ। সুতরাং আপনি কি…?
সাঈদী নাকি চান্দে…….. জেলে বইয়া কান্দে।
Sushil
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্যালুট জানাই। ইউএন ডেলিগেটদের দিক থেকে অনুরোধ সত্ত্বেও এক রাজাকারকে ফাঁসি দেওয়ার ব্যাপারে তাঁর দৃঢ়তার জন্য। আমরা জানি একাত্তরে ওদের ভূমিকা কী ছিল।
আল্লাহ নিশ্চয়ই তাঁর মঙ্গল করবেন।
মজুরুল ইসলাম
বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস, রাজনৈতিক ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সম্বলিত কিছু pdf লিংক দিলে খুব উপকৃত হব।
ধন্যবাদ।
মতিউর রহমান
ভালো লাগলো রাগীব, অনেক অজানা তথ্য জানা গেল । ঐতিহাসিক ।
তামিম
অনেক ধন্যবাদ লেখাটার জন্য।
এই অংশটুকু একটু দুর্বল লাগল–
“সেই চিরকুটের সিগনেচার আর কাদের মোল্লার পরিবারের কাছে লেখা চিঠির সিগনেচার ভিন্ন!”
আমি নিজেই অনেক সময় চিঠিতে সাইন করি, কিন্তু চিরকুটে নিকনেম লিখেই সারি। এ রকম বহু মানুষকেই করতে দেখেছি। আর দুটো চিঠি চিরকুটের হাতের লেখাই আমার কাছে মনে হল একই।
কাদের মোল্লা শেষ মুহূর্তে একটু ইমোশনাল খেলা খেলতে চেয়েছিল, গোলাম মাওলা রনি সেটাকে চোখের জলের লবণ মিশিয়ে তরকারি বানিয়ে জনগণকে পরিবেশন করেছিল রুটি দিয়ে মেখে খাওয়ার জন্য।
কী লজ্জা!!!
অভিজিৎ
আসলে দুর্বল নয় মোটেই। শুধু তো সিগনেচার ভিন্ন তা নয়, হাতের লেখা ভিন্ন (রণি সাহেব খুব চেষ্টা করেছেন একই ধরণের বাঁকানো স্টাইলে লেখা হাজির করতে, কিন্তু আপনি একটু খেয়াল করলেই দেখবেন অক্ষর গুলোর লেখার ধরণ চিঠিতে একেবারেই ভিন্ন), এমনকি এক চিঠিতে একই শব্দ সঠিক বানানে লিখেছেন, অন্য চিঠিতে ভুল বানানে। যে লোক ফাঁসি শব্দটির যেভাবে জেনে এসেছেন, সেভাবেই তিনি লিখবেন, হয় সঠিক বানানে নয়তো ভুল বানানে। অথচ দুই চিঠিতে দু রকম বানান। রনির চিঠিটি আসলে জাল চিঠি।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
Raja
বর্তমানের জন্য যুক্তি হয়তো সঠিক, কিন্তু আসল সঠিক কি…..? এ বাঙালি জাতির অতীত গুরুত্বপূর্ণ জোরালো সত্যি ইতিহাস কে পারবে বলতে?
মাঈন উদ্দীন
নির্মোহ অনুসন্ধান কাকে বলে সে কথাও লেখকেরা জানেন না। ভূমিকা দেখলেই যে কেউ বুঝতে পারবে, এটি একটি পক্ষপাতদুষ্ট লেখা। নিয়াজীর পাশে যে কসাই কাদেরের ফটো রয়েছে তা প্রায় নিয়াজীর মাথা সমান লম্বা। নিয়াজী ছিলেন ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি লম্বা; সে হিসেবে ফটোর কসাই কাদের ৫ ফুট ৯ ইঞ্চি লম্বা হবে। অথচ আবদুল কাদের মোল্লা মাত্র ৫ ফুট ২ ইঞ্চি লম্বা ছিলেন।
ফটোর কসাই কাদেরের বয়স ৪০-৪৫ এর কম নয়। ১৯৭১ সালে আবদুল কাদের মোল্লার বয়স ছিল মাত্র ২২-২৩ বছর। নির্মোহ অনুসন্ধান করতে গিয়ে এরা এতই বে্হুঁস হয়ে গেছেন যে, গোলাম মওলা রনির কাছে দেওয়া চিরকুট ও তার স্ত্রীর কাছে লেখা চিঠি যে একই হাতের লেখা তাও তারা বুঝতে পারছেন না।
পুরো নিবন্ধটা কোনোভাবেই প্রমাণ করতে পারেনি যে, কসাই কাদেরই আবদুল কাদের মোল্লা….
asif
একটা খুনের সাক্ষী তিনজন, মৃত ব্যক্তি, খুনি এবং দর্শক। যদি অন্য কোনো প্রমাণ না থাকে, তাহলে শুধু দর্শকের সাক্ষতে খুনিকে আইনত খুনি সাব্যস্ত করা যায় না। কিন্তু তাই বলে খুনি কি ধোয়া তুলসী পাতা হযে যাবে?
আবদূর রাহমান
আরে ছাগু! চোখের ডাক্তার দেখাও।
পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে নিয়াজীর পিছনে তার গেলমান কাদের মোল্লা উঁচা হয়ে উকি মেরে ক্যামেরাতে মুখে দেখানোর চেষ্টা করেছে। তারপরেও তার মাথা থেকে অনেক নিচে। হাতের লেখাওতও মিল নেই।
কুরআনুল কারিমের ভাষাতেই বলতে হয়– ‘‘এদের অন্তরে সিল মারা। এরা অন্ধ, বোবা ও বধির।’’
Parvez
খুবই গুরত্বপূর্ণ তথ্য। সব রজাকারকে একসঙ্গে একই সময়ে ফাঁসি দিলে আরও ভালো হত।
আকাশ
খুবই দুর্বল যুক্তি। বিশেষ করে ‘চন্দ্রবিন্দু’ দেওয়া না দেওয়ার মতো মাছির ডানার তুল্য যুক্তি দিয়ে পর্বত হেলানো যায় না।
Joy
আপনার পাশাপাশি লেখা দুটোর মধ্যে বাম দিকেরটা আপনি একটু এডিট করেছেন। একটু খেয়াল করলে দেখা যায় নিচে থেকে ৭ নম্বর লাইনটাতেই আপনি সার্কেল দিয়েছেন। ইন্ডিকেট করেছেন ‘ফাসি’ স্পেলিং নিয়ে। কিন্তু আসল চিঠির ৭ নম্বর লাইনে দেখুন কী লেখা আছে!!!
চাঁদে সাঈদীর মুখ দেখা যাওয়ার মতো এটাও একটা প্রতারণা!!!
Joy
কিন্তু বাকি লেখাতে লজিক আছে…
অভিজিৎ
ঠিক বলেছেন। খুব দুর্বল যুক্তি। আর আপনার মন্তব্য এতোই সবল যে গামা পালোয়ানও এসে আপনাকে সালাম দিয়ে যাবে।
Sazzad
জামাতিদের উদভ্রান্ত যুক্তির উচিত জবাব। কিন্তু জামাতি আর নব্য রাজাকারদের কীভাবে শাস্তি দেওয়া যাবে তা নতুন করে ভাবতে হবে।
জাহিদ হোসেন
মিথ্যা হল বাংলাদেশের রাজনীতির প্রতিষ্ঠিত উপজীব্য। প্রতিটি রাজনীতিবিদদের মূল লক্ষ্য হল ক্ষমতায় আরোহণ করা। এ জন্যে তারা যে কোনও অনৈতিক বা অশ্লীল কাজ করতে পারে। এটা এদেশের কালচার। তাই রাজনীতিবিদদের সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে না এবং যে কোনো রাজনৈতিক বক্তব্যকে তারা মনে করে ‘রাজনৈতিক’ কথা, এর উপর আস্থা অর্জন করা ঠিক নয়।
অতএব মিথ্যাকে সত্যের ন্যায় অভিমিশ্রিত মৌলিক তত্ব হিসেবে জনসমক্ষে হাজির করাই এখানের রাজনীতির নিরন্তর প্রয়াস। সত্য সুবচন এদেশে নির্বাসনে। আর ধর্মই একমাত্র হাতিয়ার যার অপব্যাখ্যার দ্বারা চরম মিথ্যাকেও সমাজে একমাত্র সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়।
তাই একদল চরম মিথ্যুক শ্রেণির অর্ধশিক্ষিত বা অশিক্ষিত পুরাপুরি অসংস্কৃতিবান ও পুরনো ধ্যান-ধারণায় বিশ্বাসী লোক ধর্মের অপব্যাখ্যা পুঁজি করে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। যাদের মূল লক্ষ্যই হল মানুষের মনের এই দুর্বলতম স্থানকে রাজনীতির কাজে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়া। ধর্ম এদের অপকর্মের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। যে কোনো কথাকে যদি ধর্মের লেবাস পরানো যায় তা অনেকেই বিশ্বাস করে নেয়। তাই তারা এমন সব মিথ্যা কথা প্রচার করে যা প্রতিটি যৌক্তিক মনকে বিদ্রোহী করে তুলে তাদের বিরুদ্ধে।
এরা অপপ্রচারে হিটলারকেও ছাড়িয়ে গেছে। তারা জানে যে ধর্মের লেবাস লাগানো কথা সাধারণ মানুষ অন্ধভাবে মেনে নেয়। তাই জয় তাদের নিশ্চিত। জামাতি রাজনীতি হল সেই রাজনীতির প্রকৃষ্ট উদাহরণ। এই রাজনীতি শুধুমাত্র আমাদের দেশেই হচ্ছে তা কিন্তু নয়। যুগে যুগে সারা বিশ্বের সব দেশেই এই রাজনীতি মানবিক পরিবেশকে কলুষিত করেছে।
কিছু কিছু দেশ অবশ্য সে অবস্থা থেকে মুক্তি লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের মতো দেশগুলো কেবলমাত্র এই পঙ্কিলতার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে আমাদের অনেক সময় লেগে যাবে, অন্ততপক্ষে আমরা তা দেখতে পাব না নিশ্চিতভাবে বলা যায়।
এই জামাতিরা একসময় পাকিস্তান কনসেপ্টেরও বিরোধিতা করেছিল ভারত বিভক্তির সময়। তারপর এদের নেতৃত্বেই হাজার হাজার কাদিয়ানিকে হত্যা করা হয়েছিল পাকিস্তানে এবং এদের প্রবক্তা মওদুদীকে এ জন্যে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছিল আইয়ুব খানের মার্শাল কোর্টে। অতঃপর সেই ওহাবী আরব রাষ্ট্রগুলোর বদৌলতে সে যাত্রা বেঁচে গিয়েছিল।
প্রগতির বিরুদ্ধে তার লেখা ছিল সদাতৎপর এবং সমস্ত লেখায়ই সে ইসলামি লেবাস পরাবার চেষ্টা করেছে। তাই দেখা যায় উপমহাদেশের সমস্ত বড়মাপের ইসলামি চিন্তাবিদগণ তার এই লেখাগুলিকে ‘কখনওই ইসলামসম্মত নয়’ বলে মতামত রেখে গেছেন। এই মওদুদী বিংশ শতাব্দীতে এসেও পরিবার পরিকল্পনার ঘোর বিরোধী লোক ছিল এবং তার বিরুদ্ধে বিশাল একটা বইও লিখেছে।
তারপর আসে ১৯৭১ সাল, মানে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ, যখন এই জামাতিরা মুক্তিযুদ্ধকে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছিল। আর তা শুনে অনেক ইসলামপন্থী লোকেরা তাদের গঠিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামের স্বাধীনতাবিরোধী বাহিনীতে যোগ দিয়েছিল। যারা যোগ দিয়েছিল তাদের অধিকাংশই প্রোপাগাণ্ডা বা অপপ্রচার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে এ সব কাজ করেছিল। তারা জানতই না তাদের নেতৃত্বের আসল উদ্দেশ্য।
আমি তখন একেবারে শিশু আর শৈশবের যে কোনো উদ্দেশ্যমূলক কথা মানুষের মনে থাকে। যেমন আমার মনে পড়ে এক জামাতি হুজুরের (নিজকে আওলাদে রাসূল বলে দাবি করত) বক্তব্য “যে ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিবে তার জন্যে জাহান্নাম ফরজ, তাদের নারী ও অন্যান্য বস্তু লুটে নেওয়া আমাদের ঈমানি দায়িত্ব। আর যে ব্যক্তি শক্তি থাকতে আমাদের সঙ্গে জেহাদে যোগ দিচ্ছে না তাকে হত্যা করা সমস্ত রাজাকার ও আলবদরের সদস্যদের জন্যে এখন নামাজের মতো ফরযে আইন”।
এইসব অপপ্রচারের বাস্তব রেজালটই হল লুটপাট, নারীধর্ষণ, মুক্তিযোদ্ধা হত্যা, হিন্দু সম্পত্তি লুণ্ঠন ইত্যাদি যা তারা ১৯৭১ এর স্বাধীনতা যুদ্ধে ঈমানি দায়িত্বে বলীয়ান হয়ে (তাদের মতে) এবং যারা তা করেছে সেই প্রোপাগাণ্ডাতে বিভ্রান্ত হয়েই করেছে।
সেই সব শয়তানি অপপ্রচারের নমুনা এখন আবার দেখলাম শাহবাগের তারুণ্যকে নিয়ে। আর আমাদের দেশের অনেক মানুষ তা বিশ্বাস করে নিয়েছে। যেমন উপরে লেখক কতগুলো উদাহরণ দিলেন। সেগুলি আমি ফেইসবুকে প্রায়ই দেখে থাকি। আমি সেগুলো দেখলেই প্রতিবাদ করি এবং বলি এগুলো সম্পূর্ণ ওই যুদ্ধাপরাধী অমানুষগুলোর কর্মকাণ্ড। তারা এখন কম্পিউটারের বিভিন্ন আধুনিক সফটওয়ারগুলোকে নিজেদের অপকর্মের অনুষঙ্গ বানিয়ে নিয়েছে। একসময় ওই কুকুরগুলো এইসব আধুনিক টেকনোলজিকে হারাম বলত এখন তাদের নিত্য শয়তানির হাতিয়ার তা।
একজন দাড়িওয়ালা হাসিমুখের মানুষের ছবিকে সুপার কম্পোজ করে তা ফেইসবুকে আপলোড করে এবং লিখে দিয়েছে ‘একজন শহীদ যিনি মিসরের এখওয়ানের সদস্য যাকে মিসরীয় আর্মিরা হত্যা করেছে, কিন্তু সে হাসছে কারণ সে জান্নাত দেখতে পারছে। এই ছবি দেখে এ মুহূর্তে এর মতো শহীদ হওয়া আমাদের প্রতিটি মুসলমানের জন্যে কর্তব্য। কারণ আমাদের দেশেও মিশরের মতো জেহাদি অবস্থা বিরাজ করছে। তাই আসুন সবাই মিলে শহীদি পথ বেছে নিয়ে প্রমাণ করি যে এই সরকার ইসলামের শত্রু। আর যদি বেঁচে যাই তাহলে তো গাজীর দরজা খোলা আছেই। ভয় পেও না এবং উদ্ভ্রান্ত হয়ে যেও না। জয় তোমাদের সুনিশ্চিত।’
এই হল ওদের প্রোপাগাণ্ডার আরও কিছু নমুনা। এতে কিছুটা হলেও মানুষ বিভ্রান্ত হয় এবং তাদের অপপ্রচারের অনুষঙ্গী হয়। যেমনটি দেখা যায় বিএনপির কিছু লোকের মধ্যে যারা পারলে এই মুহূর্তেই ওই যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে কাদের মোল্লা হত্যার প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে।
আর একটি উদাহরণ হল চাঁদের মধ্যে সাঈদীর মুখ দেখা। এ যুগে এর চেয়ে মিথ্যা আর কিছু হতে পারে বলে আমার কল্পনায় আসে না। কিন্তু কিছু লোক আছে যা বিশ্বাস করেছে। অনেক লোককে তার বিরুদ্ধে যুক্তি দিয়ে বুঝাতে হয়েছে আমার, বিশেষ করে নিরীহ অশিক্ষিত শ্রেণির লোকদেরকে।
এই জামাতিরা হল সেই মিথ্যুক শ্রেণি যারা বলেছিল যে, চাঁদে মানুষ কীভাবে গিয়েছে, সেখানের প্রবেশপথ অর্থাৎ ফুটা পেল কোথায়? এই খবরটি প্রচার করায় তারা ইত্তেফাক অফিস ঘেরাও করেছিল ১৯৬৯ সালে, এক জুমার নামাজের পরে বায়তুল মোকাররম মসজিদ থেকে এসে।
এরা সবসময়ই প্রগতির বিরোধিতা করে থাকে। কিন্তু একটা সময় তার সঙ্গে না পেরে উঠে সেটাই তাদের অপপ্রচারের কাজে লাগায়। তার উদাহরণ হল এরা পরে প্রচার করেছিল যে চাঁদে নেমেই নভোচারীরা ফাটল দেখতে পান এবং সঙ্গে সঙ্গেই মুসলমান হয়ে যান তাদের প্রথমজন। অনেকে ভয়েস অব আমেরিকাতে চিঠি পাঠিয়েছিল এর সত্যতা যাচাই করার জন্যে। কিন্তু সকলকেই হতাশ হতে হয়েছে যা আমি নিজের কানে শুনেছি।
কিন্তু সেই সাঈদী তার বিভিন্ন মাহফিলে এই রূপকথার গল্প ফলাও করে প্রচার করেছে। তাই বোঝাই যায় যে মিথ্যাই হল ওইসব স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদীদের প্রধান রাজনীতি। যার সাহায্যে তারা স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল।
এখনও তারা সেই সব মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে এবং কাদের মোল্লা সাঈদীর মতো খুনিকে নির্দোষ বানাবার পাঁয়তারা করছে। এজন্যে আওয়ামি লীগের জনৈক নেতার নামও পর্যন্ত ব্যবহার করছে তারা এখন। কিন্তু দুঃখ হল এদেরকে এদেশের বৃহৎ একটি দল সার্বিক সহায়তা করছে।
কবে যে এই দেশ ওইসব পঙ্কিলতা থেকে মুক্তি পাবে কে জানে।
mohona
লেখাটি হয়তো সঠিক, কিন্তু নির্মোহ নয়….
muslim
কসাই কাদেরকে শতবার ফাঁসি দেওয়া দরকার….
তারেক আজিজ
যারা মনে করে, বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার, তাদের জন্য এই যুক্তি গ্রহণযোগ্য মনে হবে না। তবে ধন্যবাদ সবকিছু যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করার জন্য….
শীলা
তথ্যবহুল লেখা। সবার জানা উচিত।
কাজী মাহবুব হাসান
অনেক ধন্যবাদ লেখকদ্বয়কে। গুরুত্বপূর্ণ একটি উপস্থাপন। যখন এই সব খুনিদের সপক্ষে লাগামহীন, স্বাধীনতাবিরোধীদের অর্থপুষ্ট প্রচারণা দেশে-বিদেশে সহানুভূতির বীজ বপন করতে শুরু করেছে, তখন এ ধরনের যুক্তিপূর্ণ লেখার গুরুত্ব
আসলে কোনোভাবে বাড়িয়ে বলা সম্ভব নয়।
স্বাধীনতা রক্ষার জন্য যে আমাদের নিরন্তর সংগ্রাম করতে হবে সেই সত্যটারও পুনরাবৃত্তি হল।
শীলা
একটানে পড়লাম পুরো লেখাটা, অনেক কিছু জানতাম না, অনেক কিছু আধাআধি জানতাম। লেখাটা পড়ে একটা স্বচ্ছ ধারণা পেলাম। ধন্যবাদ আরিফ রহমান এবং ড. অভিজিৎ রায়কে তথ্যবহুল এই লেখাটার জন্যে।
দুইটা চিঠির হাতের লেখা এক, তার মানে এই নয় যে চিঠি দুটি একই ব্যক্তির লেখা। একজন একনিষ্ঠ সুহৃদ হিসেবে গোলাম মাওলা রনির কাদের মোল্লার লেখা কপি করাটা কোনো ব্যাপার ছিল না, যেখানে তারা দিনকে রাত করতে পারে।
Palash
লেখাটি যারা ভালো ইংরেজি জানেন দয়া করে তাদের কেউ ইংরেজি করুন। দায়িত্ব নিয়ে দেশের বাইরের ইংরেজি পত্রিকায় পাঠিয়ে দিন। এমন একটি কাজ খুব দরকার।
বিডিনিউজকে অভিনন্দন। লেখকদ্বয়কে প্রাণের শুভেচ্ছা।
ভালো কথা, লেখাটি আরেকটু বড় হলে মলাটবন্দি হতে পারত। সেটিরও একটি ইংরেজি ভার্সন থাকা দরকার।
tuhin islam
এ ধরণের সব প্রামাণিক লেখাগুলো নূন্যতম ইংরেজি ভাষায়, সম্ভব হলে অন্যান্য প্রচলিত ভাষায়ও, যত শীঘ্র সম্ভব অনুবাদ করা উচিত। জামাত-শিবির শুধু দেশে নয়, বিপুল অর্থ ব্যয়ে (বোকা বাঙালিদের টাকা দিয়ে) বিদেশেও বাংলাদেশের শত্রু তৈরি করেছে; এদের কাছেও এসব অকাট্য যুক্তি পৌঁছে দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
tuhin islam
বিডিনিউজ এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশের ইতিহাসে তা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
tareq joy
@bdnews কি ব্যাপারটা ভেবে দেখবেন?
অচেনা
খুব ভালো। যুক্তি দিলাম, কিন্তু যুক্তির বিপরীতে যে যুক্তিগুলো সেগুলো আর দিলাম না। কারণ দিলে তো আসল সত্য বের হবে, তো সেটা গোপন থাক। ভালো তো ভালো নয়। আমরা ফেলানী হত্যার বিচার চাইতে পারি না। কিন্তু কেউ কথা বললে দূতাবাস ভাঙতে পারি।
কত দেশপ্রেম আমাদের। জীবনের চেয়ে কথার মূল্য অনেক বেশি।
tuhin islam
আবারও ধান ভানতে শিবের গান!
অচেনা ভাইয়া বা আপু, এখানে আলোচনাটা হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে। এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য থাকলে বলুন। আসল সত্যটা আপনার জানা আছে বলছেন; তা দয়া করে আমাদেরকেও বলুন– আমরাও জেনে ধন্য হই। তা না করে খামোখা দুনিয়ার তাবৎ বিষয় টেনে আনছেন কেন?
ফেলানী হত্যার বিচার নিয়ে একটা কিছু লিখুন; আমরা আপনার পাশেই থাকব।
atikur rahman
কাদের মোল্লা বনাম কসাই কাদের: দুই কাদের যে এক নয় এর কিছু প্রমাণ!
ভালো করে লক্ষ্য করুন– উপরের ছবিটি শাহবাগীদের পক্ষে উপস্থাপন করা কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে বহুল প্রচারিত মহাগুরুত্বপূর্ণ একটি দলিল। ছবিতে জেনারেল এ এ কে নিয়াজীর পিছনে দাঁড়ানো মিরপুরের বিহারি ‘কসাই কাদেরকে’ আবদুল কাদের মোল্লা বলে চালানো হয়েছে।
নিচের ছবিতে ৯২ সালের রোকন সম্মেলনে তৎকালীন আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম সাহেবের পাশে দাঁড়ানো আবদুল কাদের মোল্লা।
বিশ্লেষণ: ১৯৭১ সালে–
নিয়াজী– উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী নিয়াজীর বয়স ছিল ৫৭ বছর। উচ্চতা প্রায় ৫ ফুট ১১ ইঞ্চি।
কাদের মোল্লা– বিভিন্ন সূত্রের তথ্যানুযায়ী কাদের মোল্লার বয়স ছিল ২২/২৩ বছর। উচ্চতা ৫ ফুট ২ ইঞ্চি।
কসাই কাদের– অসমর্থিত সূত্র এবং বিশ্লেষণ অনুযায়ী কসাই কাদেরের বয়স ছিল ৪৮ বছর।
পাশে দাঁড়ানো নিয়াজীর সঙ্গে তুলনা করলে বিহারি কসাই কাদেরের উচ্চতা কমপক্ষে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি।
প্রশ্ন– ১: ৯২ সালে নিচের ছবিতে অধ্যাপক গোলাম আযমের পাশে দাঁড়ানো ৪৩/৪৪ বছর বয়স্ক কাদের মোল্লাকে যদি ২১ বছর আগে কল্পনা করা হয় তাহলে কি নিয়াজীর পাশে দাঁড়ানো ৪৮ বছর বয়স্ক ‘কসাই কাদেরের’ মতো মনে হবে?
প্রশ্ন– ২: হিসাব অনুযায়ী নিয়াজীর চেয়ে প্রায় পৌনে ১ ফুট কম উচ্চতার কাদের মোল্লাকে নিয়াজীর পাশে দাঁড় করালে তাকে কি (কসাই কাদেরের মতো) প্রায় নিয়াজী বরাবর মনে হওয়ার কথা?
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, শাহবাগ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তার এক কলামে বঙ্গবন্ধুকে উদ্দেশ্য করে স্যাটায়ার করে লিখেন–
“পিতা, কাদের মোল্লাকে নিয়ে দেশ এখন উত্তাল, পুরা দেশে এক নাম– কাদের মোল্লা! তার ফাঁসির দাবি চলছে। কিন্তু পিতা, তুমি হয়তো এই কাদের মোল্লাকে চিন না, কারণ আমাদের সময়ে যাদের যাদের বিচারের লিস্ট আমরা বানিয়েছিলাম তাতে এই কাদের মোল্লা ছিল না। তুমি কীভাবে চিনবে, আমরাই তো কেউ চিনতাম না।”
mufti hafizur rahman
ভাই, আপনাদের গবেষণায় অনেক ফাঁক-ফোকর আছে…
tuhin islam
মুফতি সাহেব, একটু বলবেন ফাঁক-ফোকরগুলো ঠিক কোথায়? জানার জন্য মনটা আকুলি-বিকুলি করছে। প্লিজ…প্লিজ….প্লিজ আপনার দোহাই লাগে এবার আর হতাশ করবেন না।
Md Mahabubul Alam
Mufti
চাঁদে যখন সাঈদীকে দেখা গেছিল তখন কোনো ফাঁক-ফোকর ছিল না!
Khaled Saifullah
কোনো বিচার চলাকালীন অবস্থায় আইন পরিবর্তন করে বিচারের রায় পরিবর্তন করা হয়, এটা কোন ধরনের বিচার?
tuhin islam
এটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এটি ১৯৭৩ আ্যক্টের একটি বড় দুর্বলতা ছিল (ভাবতে অবাক লাগে এভাবে এক পক্ষের আপিলের অধিকার হরণকারী এ ধারাটি আন্তর্জাতিক মানের এই আইনে এতদিন কীভাবে ছিল!) তবে এর মাধ্যমে কাদের মোল্লার কোনো অধিকার খর্ব করা হয়নি, প্রসিকিউশনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে মাত্র। কোনো অবিচার হয়নি।
সুতরাং ‘এটা কী ধরনের বিচার’ জাতীয় প্রশ্ন এখানে সম্পূর্ণ অবান্তর এবং বাতুলতা।
Pak
কসাই কাদেরের ও তার দোসর পাকিরা একটা কথা সত্য প্রকাশ করেছে; তা হল ওর পিতৃদত্ত নাম মোহাম্মদ আবদুল কাদের মোল্লা। ও তো কসাই কাদের নয়, ‘কসাই’ তার কর্মকাণ্ডের জন্য প্রাপ্ত উপাধি। মুক্তিযোদ্ধাদের দেওয়া নাম, তখনকার সাড়ে সাত কোটি মানুষের দেওয়া ধিকৃত উপাধি ….
Prof. Tohur Ahmad Hilali
অনেক দীর্ঘ লেখা। চেষ্টা করেছি পড়ার। কাদের মোল্লা ১৯৬৯ সালে ঢাকায় আসেন। মাস্টার্সে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মাঝরাতে পাক হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর ঝঁপিয়ে পড়ে। ঠিক তার পরের দিন ২৬ মার্চ কাদের মোল্লা পাক বাহিনীর সঙ্গে মিলে হযরত আলী ও তার পরিবারকে খুন ও ধর্ষণ করেছে এটা একেবারেই অসম্ভব।
সে সময় বাঙালিরা শুধুই পালিয়েছে। এ খুন ও ধর্ষণ বিহারিদের। অধিকাংশ ঘটনা মার্চ ও এপ্রিল মাসের শুরুতে। সে সময় রাজাকার বাহিনী গঠন হয়নি। ফলে এ জাতীয় ঘটনা বাঙালিদের দ্বারা ঘটেনি। এক বছর আগে ঢাকায় আসা ২২ বছরের একজন যুবকের পক্ষে তো নয়ই।
আর কোনো যুদ্ধাপরাধীর সাধারণের মাঝে চলাফেরা পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। অথচ কাদের মোল্লা ঢাবিতে লেখাপড়া করলেন, চাকরি করলেন, সাংবাদিকতা করলেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম করলেন। হঠাৎ করে বিয়াল্লিশ বছর পর যুদ্ধাপরাধী হয়ে গেলেন!
বিশ্বাস করার মতো নয় ব্যাপারটা। আল্লাহর আদালতে বিচার-ফয়সালা হবে। সীমা লঙ্ঘনকারীকে আল্লাহ এ দুনিয়াতেও শাস্তি দেন। আল্লাহর ফয়সালার অপেক্ষায় রইলাম।
Shovon
সত্য কখনও লুকিয়ে রাখা যায় না….
shofiqur rahman
পাকিস্তান সংসদ প্রমাণ করে দিয়েছে যে ইনি হলেন আসল কাদের মোল্লা, আর তাই তারা নিন্দা প্রস্তাব পাশ করে আরও বেশি করে প্রমাণ করে দিল।
এখানে আর তর্ক করার সুযোগ নেই….
কুটুম
জাতির সঙ্গে ভয়ঙ্কর মিথ্যাচারের দায়ে একদিন গোলাম মওলা রনি এবং ‘আমার দেশ’-এর প্রতিবেদকসহ সকল অপরাধীর বিচার হবে– এই আশায় রইলাম।
amin hasan
এসব তথ্য ভুয়া, তার প্রমাণ এক পয়েন্টেই উল্লেখ করলাম–
১. নিয়াজীর সঙ্গে যে ব্যক্তির ছবি লাল চিহ্নিত তাকে দেখলেই বোঝা যায় তার বয়স ৩৫-৪০ হবে। ছবিটা ৭১ সালের। সে হিসেবে তার বয়স হয়, ৪২+৩৫ হলে=৭৭। অথচ ফাঁসি দেওয়ার সময় তার বয়স ছিল ৬৪/৬৫।
মোজাম্মেল সাহেব যে কেমন বন্ধু তার প্রমাণ, তিনি বললেন মোল্লা তাদের সঙ্গে এইচএসসি পাশ করেছে ৬৬ সালে। সে হিসেবে তার বয়স হয় ১৬/১৭। আর ৭১ এ তা ২১/২২ হওয়ার কথা। নিয়াজীর পেছনের ব্যক্তির বয়স কি ২১/২২ মনে হয়? অথচ ৭১ সালের আসল বয়সের সঙ্গে বর্তমান মোল্লার বয়স ঠিকই মিলে যাচ্ছে।
২. হাতের লেখায় কোনো পার্থক্য নেই। চন্দ্রবিন্দু থাকা না থাকা লেখায় পার্থক্য প্রমাণ করে না।
অভিজিৎ
আপনার দুইটি আর্গুমেন্টেরই উত্তর আছে। কাদের মোল্লার সত্তর সালের আরও ছবি পাওয়া গেছে এবং সবগুলোই নিয়াজীর পাশে দাঁড়ানো কাদের মোল্লার সঙ্গে মিলে যায়। নিঝুম মজুমদারের ফেসবুক পেইজ দেখতে পারেন অথবা মুক্তমনায় আরিফ রহমানের মূল ‘“কসাই কাদের আর মোল্লা কাদের নাকি এক ব্যাক্তি ছিলেন না; বীরাঙ্গনা মোমেনা বেগম আমায় ক্ষমা করবেন…”’ শিরোনামের পোস্টে যান। বহু উদাহরণ পাবেন।
আর লেখায় বলা হয়েছে ড. মোজাম্মেল এইচ খান ছিলেন রাজেন্দ্র কলেজে কাদের মোল্লার সহপাঠী; বলা হয়নি কাদের মোল্লা ড. মোজাম্মেল এইচ খানের সমবয়সী ছিলেন। ইনফ্যাকট, কাদের মোল্লা মোজাম্মেল খানের দেড় বছরের মতো বেশি বয়সী ছিলেন। সে হিসেবে তার বয়স একাত্তরে ২৩-২৪ বছরের মতোই হবার কথা। ছবিতে তাই মনে হচ্ছে, সে আপনি যতই ‘ত্যানা’ প্যাচান। এর সাক্ষ্য পাওয়া যায় ড. মোজাম্মেল খানের কথাতেও–
He was 1 and half year older than me. He was around 23/24 in 1971. The man behind Niazi does not look any older than the age I mentioned. Looking at his hair style he looks no doubt that he is Quader.
Mozammel Khan
— এত কিছুর পরেও আপনাদের মতো লোকজনের বোধোদয় হবে না, সেটাই পরিতাপের বিষয়।
R. Masud
ফাঁসি হবার পর এই ধরনের লেখা অর্থহীন; উপরন্ত অন্য ভুল ধারণার জন্ম দিতে সাহায্য করে।
যেমন, আমেরিকাতে চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে Equal Rights opportunity শব্দগুচ্ছটা প্রমাণ করে যে এখনও কোথাও কোথাও Non Equal Rights opportunity আছে। আমেরিকাতে এই ম্যাসেজটা অবচেতনভাবে মনে করিয়ে দিত।
শয়তান তার উপযুক্ত শাস্তি পেয়ে বাঙালি জাতিকে এক কদম এগুতে সাহায্য করেছে, কলঙ্কমুক্ত করেছে। এখন লেখা উচিত পরের শয়তানের ফাঁসি কত তাড়াতাড়ি সামনে আনা যায় তার জন্য লেখা….
Ruhena B Laskar
আমি মনে করি এসব লেখা উচিত। কারণ যারা এই কাদেরকে নিয়ে অনেক কথা বলছে, তারা পরে আসামির পক্ষ নিয়ে কথা বলতে একটু হলেও সতর্ক হবে।
tuhin islam
“ফাঁসি হবার পর এই ধরনের লেখা অর্থহীন”– কথাটা হয়তো সম্পূর্ণ ঠিক নয়। ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য এ ধরনের প্রামাণিক লেখার প্রয়োজন আছে।
তবে এটাও ঠিক যে, আমাদেরকে এখন সামনের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে আমরা জাহান্নামি কাদের মোল্লাকে নিয়ে ব্যস্ত থাকি আর জামাতী শয়তানরা এই সুযোগে আমাদের চোখের আড়ালে কোনো একটা অপকর্ম করে বসে।
বিষাক্ত সাপকেও বিশ্বাস করা যায়, মোনাফেক জামাত-শিবিরকে কখনওই নয়।
অভিজিৎ
‘‘ফাঁসি হবার পর এই ধরনের লেখা অর্থহীন; উপরন্ত অন্য ভুল ধারণার জন্ম দিতে সাহায্য করে।’’
ব্যাপারটা অর্থহীন হত না, যদি না কেল্লাওয়ালারা এটা নিয়ে মায়াকান্নার পাশাপাশি নানা ধরনের মিথ্যার বাণিজ্য শুরু করত। মিথ্যাচারে ফেসবুক আর অনলাইন মিডিয়া সয়লাব। আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, সংশয় এমনকি ঢুকে পড়েছিল নিরপেক্ষ মানুষদের মধ্যেও। এমতাবস্থায় মিথ্যাচারের জবাব দেওয়ার ভারটা তো কাউকে না কাউকে নিতেই হবে, তাই না?
সবাই আপনার মতো স্বচ্ছ চিন্তাধারার হলে এই লেখার প্রয়োজন পড়ত না নিঃসন্দেহে।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
R. Masud
প্রিয় অভিজিৎ বাবু
তোমার প্রবন্ধটার দাম হাজার গুণ বেড়ে যেত যদি তুমি এই লেখাটা ফাঁসি হবার আগে প্রকাশ করতে। অবশ্যই এই ধরনের তথ্যবহুল লেখা আমাদের পরবর্তী বংশধরকে সাহায্য করবে সঠিকভাবে সামনে টানতে। তোমার লেখার মানকে খাটো করার জন্য নয় কোনোভাবেই। আমি তোমার দাঁড় করানো মুক্তচিন্তা ব্লগের একজন ফ্যান।
সবশেষে যতটুকু জানি, তুমি বুয়েটের গ্রাজুয়েট, আমিও তাই। সম্ভবত আমি বয়সে একটু বড়। তাই তুমি করেই বললাম, ভুল হলে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখো।
nikhil nausad
একদম সঠিক কথা।
হুমায়ূন সাধু
ভালোবাসিলাম মন্তব্যটা….
লেখাটা তথ্যমূলক, কিন্তু আমাকেই বিভ্রান্তিতে ফেলে দিছিল। কোনো মানে নেই, সন্দেহবাদীরা নিজেরাই নিজেদের উত্তর দিতাছে। এটা তো প্রমাণিত কসাই কাদেররা আছিল, নির্যাতন করছিল। তাইলে কে কসাই কাদের তা লিখব তারা, প্রমাণ করব, হাজির করব তারা।
Ejaj khan
যারা যুক্তি মানে না, প্রমাণ মানে না তাদেরকে বুঝিয়ে দেখিয়ে লাভ কী বলেন? এদেশের একটি গোষ্ঠী যে বিক্রি হয়ে গেছে ওদের কাছে, যারা ৭১’এ দেশকে এ দেশের মাটিকে করেছিল কলঙ্কিত, অপবিত্র। আমি মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি, তবু উপলব্ধিতে তীব্র ঘৃণায় ভরে উঠে বুক।
প্রশ্ন জাগে মনে– কোথায় হে মুক্তিযোদ্ধা, আজ নিশ্চুপ কেন মুখ??? তবে কি আমরা ভুলতে বসেছি আমাদের বাঙালি জাতির অতীত ইতিহাস?
tuhin islam
হৃদয় ছুঁয়ে যায় যখন দেখি নতুন প্রজন্ম এত ভালোবাসা নিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে মূল্যায়ন করে। এর বিপরীতে কত মুক্তিযোদ্ধাকে আজ দেখা যায় নানান লোভ-লালসার ফাঁদে পড়ে রাজাকারের দলে ভিড়ে গেছেন। লজ্জা আর ঘৃণাই শুধু প্রাপ্য সেসব নব্য রাজাকারদের।
দুঃখজনক হলেও সত্য, জনাব এজাজ, যারা যুক্তি মানে না, প্রমাণ মানে না তাদেরকে বুঝিয়ে দেখিয়ে কোনো লাভ নেই। জাতি হিসেবে আমাদের জন্য এর থেকে বড় লজ্জার আর হয়তো কিছু নেই।
shopon
সন্দেহ থাকলে আলুব্দি গ্রামে যান।
shopon
এত কথা বলার দরকার নেই। সন্দেহ থাকলে আলুব্দি, মিরপুর গিয়ে খোঁজ নিলেই হয়….
nurul absar
সন্ত্রাসী রনি কী জবাব দেবে? যিনি নিজ সরকারের আমলে সন্ত্রাসের জন্য জেলে গিয়ে মিথ্যা শিখে আসছেন?
niloy
ভারত বা পাকিস্তানের দালালি না করে এই দেশকে ভালোবাসুন। কাদের মোল্লার ফাঁসি নিয়ে এত হইচই না করে এই সময়্টুকু দেশের উন্নয়নের কাজে লাগান। শুধু চেতনার কথা না বলে এই দেশের গার্মেন্টস, পাট যাদের কারণে ধ্বংস হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে লিখুন।
এই দেশে আদমজীর মতো পাটকল বন্ধ হয়েছে, আর ভারতে নতুন কারখানা গজিয়েছে। গার্মেন্টসের বিজনেস আমরা ভারতের বিশ বছর পরে শুরু করেও দুনিয়ার সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক আমরাই, ভারত নয়। এই শিল্প শেষ করার অভিপ্রায়ে যারা ভারতের দালালি করছে তাদের বিরুদ্ধে লিখুন।
আমি ভারত বা পাকিস্তান বুঝি না, আমি বাংলাদেশ বুঝি …..
পালাও_ছাগু
ত্যানা প্যাঁচানো শুরু!
Patriot
ধন্যবাদ Mr. Niloy, সত্য প্রকাশ করার সাহস খুব কম লোকেরই থাকে।
tuhin islam
আমি ভারত বা পাকিস্তান বুঝি না, আমি বাংলাদেশ বুঝি। আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তবে কাদের মোল্লাকে নিয়ে কেউ ‘হইচই’ করছে না; এ বিষয়টিতে আমাদের স্বচ্ছ ধারণা থাকা উচিত। কারণ এটি আমাদের বাঙালি সত্তার সঙ্গে জড়িত।
এখানে ভারত-পাকিস্তান প্রসঙ্গ অবান্তর।
mohona
শতভাগ সত্যি…
biplob
স্যালুট ….
অভিজিৎ
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাওয়া আর দেশকে ভালবাসা কবে থেকে মিচুইয়ালি এক্সক্লুসিভ হল? এজ ইফ, কাদের মোল্লার বিচার নিয়ে লিখলে গার্মেন্টস, পাটের কারখানার বিরুদ্ধে যায়! আপনে লেখেন না গার্মেন্টস আর পাট নিয়া, কে মানা করেছে?
আপনাদের মতো দেশপ্রেমিক লোকেরা চোখ বড় বড় করে পর্দায় সানি লিওনকে গিলতে থাকেন, সারা বছর ধরে বিপাশা বসু, সোনাক্ষী, বিদ্যা, কারিনাদের কোমড় ধরে ঝোলাঝুলি করেন, আর যুদ্ধপরাধীদের বিচার নিয়ে কোন লেখা আসলেই শুরু হয় গার্মেন্টস, পাট, আদমজী আর ভারতের বর্ডার আর কারখানা। যাবতীয় ত্যানা প্যাচানী।
আপনার জন্য বিখ্যাত ‘কেপি টেস্ট’ প্রযোজ্য।
abdus salam
সবে তো শুরু হল! সব যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত এ আলোচনা স্বাভাবিক গতিতেই চলবে, চলতে দিতে হবে। কারণ রাজাকাররা এখনও উদ্ধত, আমেরিকা মিসরে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাতে সব ধরনের সাহায্য দিল। পুরো দক্ষিণ আমেরিকার সব নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার অপপ্রচার আর ষড়যন্ত্র করে চলেছে। বাংলাদেশে একতরফাভাবে ওকালতি করছে, ওকালতি করছে খুনী-ধর্ষকদের ছেড়ে দিতে।
এ রকম একটা অবস্থায় যারা চুপচাপ থাকার পক্ষে বলেন তারা কারা চিনতে অসুবিধা হবার কথা নয়। তাদের কাছে দেশের মাটি, নিরীহ জনগণ বা অসহায় মা-বোনের কোনো দাম নেই….
R. Masud
বাজে একটা কমেন্ট….
Raihan
কাদের মোল্লার ফাঁসি না হলে কি পাটকল খুলে যাবে নাকি?
Raihan
খুবই ভালো একটি লেখা।
আনিস হক
পড়লাম। অনেক ধন্যবাদ, পুরো বিষয়টি খোলাসা করে তুলে ধরার জন্যে। কিন্তু যাদের বিশ্বাস কাদের মোল্লার প্রতি, তাদেরকে কতটুকু টলানো যাবে জানি না। কারণ সত্যের প্রতি তাদের এই অবিশ্বাস নিতান্তই ইচ্ছাকৃত।
tuhin islam
“সত্যের প্রতি তাদের এই অবিশ্বাস নিতান্তই ইচ্ছাকৃত”…
লাখ কথার এক কথা বলেছেন ভাইয়া ….
Sharif
দুই চিঠি একই হাতের লেখা বলে মনে হচ্ছে।
tuhin islam
দয়া করে আপনার চোখের চিকিৎসা করিয়ে নিন, যতশীঘ্র সম্ভব।
Istiaque Mahmud
যারা শাহবাগ কে প্রজনন চত্ত্বর বলে, কসাই কাদের আর কাদের মোল্লাকে আলাদা ব্যক্তি মনে করে, তাদেরকে আপনি যতই বোঝানোর চেষ্টা করুন কোনো লাভ নেই। সব থেকে খারাপ লাগে তখনই, যখন বাংলাদেশে বসে বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে “পাকিস্তান ভালো ছিল, না খারাপ ছিল” এই নিয়ে ঝগড়া করা লাগে।
এখন মনে হচ্ছে এই ১০/১২ জন কে ঝুলায়ে আসলে কোনোই লাভ হবে না, এরা গত ৪০ বছরে যে পরিমাণে রাজাকার পয়দা করে ফেলেছে সেটা দিয়েই তারা আরেকটা তালিবান রাষ্ট্র বানায়ে ফেলতে পারবে!
তবে দিনের শেষে আমার মনে হল, আমাদের একে নিয়েই বসবাস করতে হবে….
tuhin islam
এ ধরনের বিতর্ক আজও আমাদের শুনতে হয়– মীরজাফর আমাদের পূর্বপূরুষ ছিল।
abdus salam
জনাব ইশতিয়াক মাহমুদ, আপনি হতাশা ছড়ানো মন্তব্য করছেন কেন?
examplrey punishment বা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ধারণাটা তা হলে কেন এসেছে? শীর্ষ রাজাকারদের “দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি” প্রদান করলে অবস্থার পরিবর্তন হতে বাধ্য।
আমরা যারা ৭১ এর আগের দিনগুলো দেখেছি তাঁরা নিশ্চয় বাঙালীর অর্জনকে খাটো করে দেখতে পারিনা। একদিকে আমরা মাতৃভাষার মর্যাদা দেখছি, দেখছি অবাঙ্গালীদের অন্যায় প্রভূত্ব থেকে মুক্তি। মাথাপিছু আয়, উচ্চশিক্ষার হার, নারী অধিকার, জীবনযাত্রার মানোন্নয়নসহ প্রায় সব ইন্ডিকেটরে বাংলাদেশ পাকিস্তান ভারতসহ অনেক দেশের চেয়ে এগিয়ে। তবে রাজনৈতিক বিশৃংখলা, দূর্নীতি, জনহয়রানীর প্রসারের জন্য অনেক হতাশাবাদীকে বাংলাদেশকে গালি দিতে শুনি, আসলে এরা মূলত রাজাকার অথবা রাজাকারদের লাফালাফি দ্বারা প্রভাবিত।
রাজনৈতিক বিশৃংখলা, দূর্নীতি, জনহয়রানী দূর করতে অবশ্যই আমাদের সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে। তবে পাশাপাশি খুব বড় খুনী-ধর্ষক রাজাকারদের শাস্তি দেয়া হয়ে গেলে রাজাকারদের প্রভাবিত হতাশা ছড়ানো বন্ধ হবে । আর এই দুই কাজ একইসাথে সম্পন্ন হলেই সত্যিকার বিজয় অর্জিত হবে।
পারভেজ
অনেক সুন্দর এবং জোরালো কিছু প্রমান। কিন্তু এগুলো কি আন্তর্জাতিক মহল প্রর্যন্ত পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা যায় না…?
partha
সহজ ভাষার শক্ত যুক্তি। সবকিছু মিলিয়ে কসাই কাদেরের প্রতিটি মিথ্যার সঠিক জবাব।
Mitu
অসাধারণ ।
Prantor
খুব ভালো লেখা। এইটা বাঁশের কেল্লাতে শেয়ার করা হোক।
ধন্যবাদ।
saiful
আমরা সবাই চাই যুদ্ধাপরাধীদের সাজা হোক, তবে শুধু এক দলের কেন, সব দলেই তো যুদ্ধাপরাধী আছে…. তাদের কেন ধরা হচ্ছে না???
গীতা দাস
লেখাটি ঐতিহাসিক সাক্ষ্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
Ruhena B Laskar
এত সুন্দর একটি লেখা যিনি লিখেছেন তাকে যে কী বলে ধন্যবাদ আর দোয়া দিব! যারা কাদেরকে নিয়ে বড় বড় কথা বলেছিল এখন তারা নিরব কেন?
ওই যে আমরা বলি না, ‘‘আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন’’– পাকিস্তানে কাদেরের জন্য শোক করায় একদিকে ভালোই হল– তাতে এই কাদের আর কসাই এক নয় বলার সুযোগ আর থাকল না।
যারা তাজা খবরে মন্তব্য করেছিল এই কাদেরকে নিয়ে তারা এখন নিরব কেন??????
Waheed Nabi
অনেক তথ্যই প্রমাণসহ দেওযা হয়েছে। কিন্তু আমি বলব যে রনির রহস্যটা আমার কাছে অজানাই রয়ে গেছে। এ নিয়ে ডিটেইল লেখা উচিত।
anwarhossain
আরেকবার ওকে ফাঁসি দেওয়া দরকার….