জয় বাংলা

নুজহাত চৌধুরী
Published : 13 Dec 2013, 04:13 PM
Updated : 13 Dec 2013, 04:13 PM

সবিনয় অনুরোধ করি, প্রথমেই ধরে নেবেন না আমি দলীয় শ্লোগান দিচ্ছি। না, তা নয়। এ আমার হৃদয়-নিঃসৃত বর্ণমালা। জাতির এ মাহেন্দ্রক্ষণে 'জয় বাংলা'-ই আমার গর্বিত উচ্চারণ। কেন তাই বলছি।

কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হবার পর থেকে রাতভর আমার মোবাইলে একের এক ম্যাসেজ আসতে থাকল। ফেইস বুকের ইনবক্সে ম্যাসেজের পর ম্যাসেজ। অবাক হয়ে দেখলাম সব ম্যাসেজে একই কথা লেখা, খুবই সংক্ষিপ্ত একটি ম্যাসেজ 'জয় বাংলা'। অথচ আমার পরিচিতজনের বেশিরভাগই স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তি হলেও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নন। আমি ডাক্তার, তাই বন্ধু-বান্ধব বেশিরভাগই ডাক্তার, রোগী বা এমন মানুষজন যারা সাধারণ জনগণের অংশ, যাদের বেশিরভাগই প্রচলিত রাজনীতির প্রতি বীতশ্রদ্ধ।

কিন্তু কাল রাতে যেন এক '৭১ ফিরে এসেছিল। সবার মুখে মুখে শুনলাম একই শ্লোগান 'জয় বাংলা'। কেউ উল্লাস নিয়ে বলছে, কেউ যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে ক্রোধ ও ঘৃণা নিয়ে বলছে, কেউ কেউ প্রত্যয় নিয়ে বলছে, কেউ কেউ আশা নিয়ে বলছে। তাই আমিও তখন চোখের জলে বুক ভিজিয়ে উচ্চারণ করলাম– 'জয় বাংলা'।

পাকিস্তান আমলে নিপীড়িত ও শোষণের যাঁতাকলে পড়ে বাঙালি বুঝতে পারল তার আত্মপরিচয় কী, তার জাতিগত পরিচয় কী। বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ সুস্পষ্ট দাবি হয়ে উদ্ভাসিত হল 'জয় বাংলা' শ্লোগানে। এরপর বহু নির্যাতন, বহু আত্মত্যাগ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দলমত নির্বিশেষে সবাই এ শ্লোগান নিয়েই স্বাধীন দেশের স্বপ্ন দেখেছিল। তরুণ, নবীন প্রাণ সামনে পড়ে থাকা একটি দীর্ঘ জীবনের মায়া তুচ্ছ করে ট্যাংকের নিচে আত্মবলি দিয়েছে এই শ্লোগান বুকে ধারণ করে। একথা বহুবার বলা হয়েছে। তাও আবার বলতে হবে, কারণ এই বিশাল আত্মত্যাগের যোগ্য মর্যাদা তাদের উত্তরসূরী হিসেবে আমাদের দিতেই হবে। এ আমাদের জন্মগত দায়বদ্ধতা, দেশের প্রতি, দেশের সূর্যসন্তানদের প্রতি।

আজ 'জয় বাংলা' শ্লোগান একটি দলীয় শ্লোগান বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু শহীদ সন্তান হিসেবে আমি আজ তীব্র চিৎকারে বলতে চাই যে এ আমাদের পুরো জাতির শ্লোগান। আওয়ামী লীগ এটি ধরে রেখেছে। সেটা তাদের সাফল্য। আমরা সাধারণ মানুষ কেন ধরে রাখতে পারলাম না এ আমাদের ব্যর্থতা। এমনকি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলে পরিচয় দেন এমন মানুষগুলোর তথাকথিত 'নিরপেক্ষতা' ভ্রান্তির কারণে ও দলীয় সিল পড়ার ভীতির কারণে এ 'শ্লোগান' প্রাণে ধারণ করলেও মুখে উচ্চারণ করেননি। এ আমাদের ব্যর্থতা, এ আমাদের ক্ষুদ্রতা, এ আমাদের ভীরুতার পরিচায়ক।

যারা 'বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ'-এর প্রবক্তা তারা আমার জাতিসত্তার চেতনাকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ জাতির বিরুদ্ধে এক নিগূঢ় ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে 'বাঙালি জাতীয়তাবাদের' বিপরীতে 'বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ' তৈরি করেন। কিন্তু জাতিসত্তার পরিচয় তৈরি করার কোনো বিষয় নয়। এটা রক্তের উত্তরাধিকারের বিষয়, হাজার বছরের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির মাধ্যমে গড়ে ওঠা রক্তের পরিচয়।

কিন্তু 'ন্যাশনালিটি' আর 'সিটিজেনশিপ' অর্থাৎ জাতীয়তাবাদ ও নাগরিকত্ব এ দুটোর পার্থক্য বোঝা এমন কোনো কঠিন কাজ নয়। আমার বাবা-মা একবার ছিলেন ব্রিটিশ, একবার পাকিস্তানি। বাবা বাংলাদেশি হবার সুযোগ পাননি, স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি শহীদ হয়েছেন। মা এখন বাংলাদেশি। তবে কি জাতীয় পরিচয় একটি পোশাকি বিষয় যা রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পাল্টে যাবে? এই শিশুসুলভ যুক্তি বিশ্বাস করার পিছনে নির্বুদ্ধিতা কাজ করে, নাকি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা?

সুতরাং স্পষ্ট করে বলছি, বাংলাদেশের নাগরিক হবার সুযোগ না পেলেও আমার বাবা ছিলেন একজন বাঙালি। মা তখন ছিলেন বাঙালি, আজও বাঙালি। আমি বাঙালি। আমার প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তর যে দেশেই থাকুক সে হবে বাঙালি। যদি পরবর্তী প্রজন্ম বিদেশে থাকে তবে তার নাগরিকত্ব হবে দেশের কিন্তু জাতিপরিচয় হবে চিরকালই বাঙালি।

তবে সে বির্তক আজ নয়, দুটো রাজনৈতিক ধারার তুলনামূলক বিষয়ে কথা বলার দিনও আজ নয়। আজ দিন জয়গানের, আজ দিন সন্তুষ্টি আর কৃতজ্ঞতার বাঁধভাঙ্গা অশ্রুর। তাই আজ অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখি চারিদিকে সবাই বলছে 'জয় বাংলা'। আমাদের যে কোনো জয়গানের উচ্চারণ যে 'জয় বাংলা', কাদের মোল্লার ফাঁসির পর আজ আবার আমি স্পষ্ট করে বুঝতে পারলাম।

কাল রাতে একজন সাধারণ নাগরিক আমাকে ম্যাসেজে লিখেছেন, ''বিয়াল্লিশ বছর বঞ্চনার পর একজন যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি দেখলাম। এত আনন্দ, এত বেদনা, এত প্রশান্তি, এত অনুভূতি হচ্ছে যা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। মনে হচ্ছে শুধু দুটি শব্দই আমার অনুভূতির ধারণ করতে পেরেছে। তা হল 'জয় বাংলা', তাই শুধু সেটাই বারবার উচ্চারণ করছি।"

সেই ক্ষণে আমারও তাই মনে হল। এই তীব্র কষ্ট, আনন্দপ্রাপ্তির বিশালতা ধারণ করতে পারে তাহলে আজ বুঝি শুধু ওই দুটি শব্দেই সেই বিশালতা আছে। শহীদ সন্তান হওয়ার সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক সবাই জানতে চাচ্ছেন স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে এই প্রথম একজন যুদ্ধাপরাধীর মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য শাস্তি কার্যকর হল। শহীদ সন্তান হিসেবে আমার কেমন লাগছে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবির এ দীর্ঘ সংগ্রামের ক্লান্ত অবসন্ন, অভিমানী বুক থেকে যে তীব্র দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে, সে কি অনুভূতির সমন্বিত ফসল তা আমি কীভাবে বুঝাই?

আমার মনে পড়ে যায় এই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উচ্চারণও একসময় ছিল দুঃসাহসের পরিচয়। এদেশে আমার মতো হাজার হাজার অভাগা পিতৃহীন সন্তান আছে যারা পিতৃহন্তারককে শাসনক্ষমতার শীর্ষে অবস্থান করতে দেখেছে– যখন তারা ও তাদের মায়েরা রাস্তায় সংগ্রাম করছে টিকে থাকার। আমরা যারা আপনাদের সামনে কথা বলি তারা তাও হয়তো কিছুটা শক্ত মাটি পায়ের নিচে তৈরি করতে পেরেছি এতদিনে। কিন্তু জীবনসংগ্রামে পর্যুদস্ত লক্ষ লক্ষ শহীদ পরিবার আজও রাস্তায়– নিগৃহীত, অবহেলিত এবং প্রতিটি মুহূর্তে অপমানিত।

এ অপমান শুধু তাদের নয়, আমার নয়, আমার আপনার সকলের। সে অপমানের, সে অবহেলার, সে গঞ্জনার ক্রোধ আজও বুকে দাউ দাউ করে জ্বলছে। অন্তত একজন যুদ্ধাপরাধীর বিচারের রায় কার্যকর হতে দেখে তারুণ্য উল্লসিত, সমগ্র দেশ উল্লসিত। অনেক অপেক্ষার পরে এর বিচার যা একসময় মনে হত স্বপ্নাতীত। হাতে দুর্লভ হীরকখণ্ড পাওয়ার মতো অবস্থা সবার।

দুর্লভ হীরকখণ্ডই বটে। কিন্তু কেন? এ বিচার তো অনেক আগেই প্রাপ্য ছিল। স্বাভাবিক মানবাধিকারের কারণে সহজাতভাবে এ বিচার হবার কথা ছিল। যে অপরাধ ছিল সমগ্র জাতির বিরুদ্ধে তার বিচার করার কথা ছিল রাষ্ট্রের। এ তো কারও ব্যক্তিগত চাওয়া-পাওয়ার হিসেব-নিকেশ নয়। আমার বাবা মারা গেছেন দেশের জন্য, তবে আমার কেন বিয়াল্লিশটি বছর চাইতে হল এ বিচার?

শুধু তাই নয় বিচার কেন করা উচিত তা নিয়ে আমাদেরকে অর্থাৎ শহীদ স্বজনদেরকে বারবার সকলের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে। আমরা যারা অন্যায়ের শিকার আমাদেরকেই বারবার উত্তর দিতে হয়েছে কেন এত বড় একটি অন্যায়ের বিচার প্রয়োজন, কেন বিচার চাচ্ছি। শুধু তাই নয় এর উপরি পাওনা হিসেবে জুটেছিল টিটকারী, লঞ্চনা, গঞ্জনা। এগুলো সব অতীত ঘটনা। কেন অতীত নিয়ে টানাটানি করছি তার জন্য ব্যঙ্গ শুনতে হয়েছে। তারা ভুলে যেতে চেয়েছে যে, অন্যায় কখনও তামাদি হয় না। এটা আমার কথা নয়, এটা আইনের কথা।

যা ছিল আমাদের মৌলিক অধিকার তার জন্য এত কষ্ট কেন করতে হল, কেন দীর্ঘ সংগ্রাম, কেন এত অপেক্ষা, কেন এত অশ্রু? বিয়াল্লিশ বছর দীর্ঘ সময়। শহীদজায়া, মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনা কয়জন জীবিত আছেন? কয়জন দেখে যেতে পারলেন? এতবড় হত্যাকাণ্ড, এত ধর্ষণ যা বিশ্ববাসীর সামনে সংগঠিত হল তাকে ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। তাকে অস্বীকার পর্যন্ত করার আস্পর্ধা দেখিয়েছে স্বাধীনতাবিরোধীরা। শুধু তাই নয়, শহীদদের হত্যাকারীদের গাড়িতে শহীদের রক্তমাখা পতাকা তুলে দিয়েছে এদেশের শাসকগোষ্ঠী। তাই বুকের ভিতরে আছে অনেক ক্ষোভ, অনেক অভিমান, অনেক বেদনা।

এ বিচার নিয়েও কত বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে, কত 'কিন্তু' 'তবে' জাতীয় পানি ঘোলা করার প্রচেষ্টা। শুধু রাজনৈতিক স্বার্থে কত বিরোধিতা। শুধু বিরোধীদের কাছ থেকে নয়, সরকারকে এমনকি আমাদের থেকেও কত প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আজ সরকার ও সরকারপ্রধান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা কথায় নয় কাজে প্রমাণ করে দিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়ে তাদের আন্তরিকতা। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই তাঁর কাছে।

কৃতজ্ঞতা জানাই বাঙালি জাতির কাছে। এদেশের প্রতিটি মানুষের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তারা আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, আমাদের দুঃখের সমব্যথী হয়েছেন। এক সময় দেশটি এমন ছিল, মনে হত আমরা শহীদস্বজনরা বোধহয় একা। কেউ স্বাধীনতা নিয়ে ভাবে না, যুদ্ধাপরাধের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয় না, আমাদের অবহেলা করে। আজ বুঝতে পারছি বাঙালি আসলেই বীর জাতি। সহজ-সরল বাঙালি সময়ের প্রয়োজনে সর্বদা মাথা উঁচু করেই দাঁড়িয়েছে। তারা তাদের ইতিহাস স্বীকার করে, শহীদদের সম্মান জানাতে পারে, বীরাঙ্গনাদের সম্ভ্রমহানির প্রতিশোধ নিতে জানে।

আজ কাদের মোল্লার ফাঁসির পরে তাই বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে সেই ধর্ষিত নারীর কথা যাকে কসাই কাদের নিজে ধর্ষণ করেছিল। তার সামনে তার মা ও বাবাকে হত্যার পরে বোনকে ধর্ষণ ও হত্যার পরে তাকেও সে হত্যা করে। আমাদের সেই বীরাঙ্গনা মা এত বছর পরেও সাহসের সঙ্গে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে সেই অমানুষিক নির্যাতানের বর্ণনা দিয়েছেন ক্যামেরা ট্রায়ালে।

আজ বুকের রক্ত চোখের পানি হয়ে ঝরছে অঝোর ধারায় সেই বীরাঙ্গনা মায়ের জন্য। বার বার মনে হচ্ছে, আর কিছু না হোক এ স্বাধীন বাংলাদেশে অন্তত একজন বীরাঙ্গনা বেঁচে থেকে এই জীবনে দেখে যেতে পারলেন যে, তার প্রতি যে অত্যাচার করা হয়েছে, অন্যায় করা হয়েছে সেজন্য তার ধর্ষককে তার দেশ সর্বোচ্চ শাস্তি দিয়েছে।

মনে হচ্ছে দেশ নয়, জাতি নয়, শহীদস্বজন নয়, মুক্তিযোদ্ধা নয়– আমাদের এই বিজয় বীরাঙ্গনাদের জন্য। বীরাঙ্গনা মা, তোমরা দেখ, তোমাদের দেশ, তোমাদের সন্তানরা, তোমাদের আত্মত্যাগ ভুলে যায়নি। তোমাদের প্রতি কৃত অন্যায়ের বিচার তারা শুরু করেছে। এ বিজয় তোমাদের। আমাদের এ সংগ্রাম তোমাদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা নিবেদন। মা তোমরা বেঁচে আছ, নাকি নেই জানি না। প্রকাশ্যে আছ, নাকি লুকিয়ে রেখেছ এ দুঃখগাথা। মা, তোমরা যে যেখানেই আছ, তাকিয়ে দেখ আজ তোমাদের সম্ভ্রমহানির প্রতিশোধ নিয়েছি আমরা।

মা, এবার শান্তিতে ঘুমাও, আমি কাঁদি। কাঁদি তোমার জন্য, কাঁদি আমার জন্য, এ অভাগা দেশের জন্য, এ বীর জাতির জন্য, এই দায়মুক্তির সুযোগের জন্য।

তারুণ্য আজ উল্লাস করছে, এটা তাদের বিজয়। এ বিজয়ের উল্লাসে আমিও উল্লসিত। আমিও হাসছি, অথচ দুচোখ দিয়ে দরদর করে অশ্রু ঝরে পড়ছে। অনন্য এক অনুভূতি। '৭১-এর বিজয়ের অনুভূতি এমনই ছিল, যখন ১৬ ডিসেম্বর জাতি বিজয় লাভ করল ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে, ৪ লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে। আনন্দ-বেদনার এ কী অপূর্ব মিলন।

আজ কি বাতাসে অক্সিজেন একটু বেশি? বুকের ভিতর এত হালকা লাগছে কেন? কাঁধের উপর থেকে দায়বদ্ধতার বোঝো নেমে গেল কিছুটা। আহ, কী শান্তি। এত আবেগ আমি প্রকাশ করি কীভাবে? শব্দরাশির রাজ্যে শব্দ খুঁজে পাই না আজ আমার অশ্রুকে ব্যাখ্যা করার। কোনো শব্দই যেন যথেষ্ট বিশাল নয় আমার দীর্ঘশ্বাসের কথা বুঝিয়ে বলার জন্য। দীর্ঘ সংগ্রামের পরে এ বিজয়ের উল্লাসের যে তীব্রতা তাকে প্রকাশ করি কীভাবে? কী দিয়ে এ জাতির জয়গান করি? কী দিলে আমার কৃতজ্ঞচিত্তের আকুল নিবেদন আমি প্রতিটি মানুষকে বোঝাতে পারি যে, তোমাদের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ। কোন শব্দে আছে সেই বিশালতা আর ব্যাপকতা?

যেন শুধু একটি শ্লোগানই এই বিচিত্র, বিশাল অনুভূতিকে ধারণ করতে পারে। তা আমার পিতার শ্লোগান, তা আমার দেশের শ্লোগান। উচ্চকণ্ঠে বার বার বলে উঠি– 'জয় বাংলা'।