তড়কায় ভড়কাবার কিছু নেই

এ বি এম মাকসুদুল আলম
Published : 20 Sept 2010, 01:15 PM
Updated : 20 Sept 2010, 01:15 PM

তড়কা (Anthrax) একটি পুরোনো ব্যাধি। এশিয়া, ইউরোপ ও আফ্রিকার চারণভূমিতে গবাদিপশু ও কখনো কখনো মানুষের মাঝে এর বিস্তৃতি দেখা যায়। বাংলাদেশে যুগ যুগ ধরে তড়কা রোগ হয়ে আসছে তবে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর আক্রান্তের সংখ্যা অধিক হওয়ায় তা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।

বিষেশজ্ঞদের মতে, তড়কা এক ধরনের Acute রোগ যা Bacillus Anthracis ব্যাকটেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার জন্য হয়ে থাকে  এবং পশু থেকে পশু ও পশু থেকে মানুষের শরীরেও সংক্রমিত হতে পারে। এ রোগ কখনোই মানুষ হতে মানুষে সংক্রমিত হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সংক্রমন হয় সরাসরি Contact এর মাধ্যমে  এবং অতি সামান্য সংক্রমিত হয় বায়ু ও খাদ্যের মাধ্যমে। Bacillus Anthracis ব্যাকটেরিয়ার বৈশিষ্ট হল, এরা প্রতিকুল পরিবেশেও Spore হিসেবে অনেকদিন থাকতে পারে এবং অনূকুল পরিবেশে পরবর্তীকালে তারা রোগের বিস্তার ঘটাতে সক্ষম হয়। পশু অথবা মানুষের শরীরে জীবাণু প্রবেশের পর রোগের বহিঃপ্রকাশ ঘটতে ৬০ দিনের মত সময় লাগে। তবে, বায়ুবাহিত ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ফুসফুস সংক্রমিত হলে অতি অল্প সময়ে তার লক্ষন পরিলক্ষিত  হতে পারে। তড়কা রোগ মূলত শরীরে তিন ধরনের অংশকে আক্রান্ত করে – ত্বক, ফুসফুস ও অন্ত্র। শতকরা ৯৫% ক্ষেত্রে ত্বকেই সরাসরি সংক্রামিত হয়। ত্বকে ফোড়া/ক্ষত সৃস্টি হয় এবং Toxin এর কারণে রোগী অস্বস্তিতে ভোগে। ৪-৫% ক্ষেত্রে ফুসফুসে সংক্রমন হয়। এ সময় সাধারণ সর্দি কাশির মত লক্ষন দেখা যায়। ১%  এর কম ক্ষেত্রে অন্ত্রে সংক্রমন হয়। এ অবস্থায় অরুচি, বমি, ডায়রিয়া ইত্যাদি লক্ষনসমূহ প্রকাশ পায়। পারিপার্শিক অবস্থা এবং রোগের লক্ষন সমূহ দেখে তড়কা রোগ নির্ণয় করা সম্ভব। আক্রান্ত মানুষদের সাধারণ Antibiotic প্রয়োগে সম্পূর্নভাবে সুস্থ করে তোলা যায়। এ রোগের প্রতিষেধকও পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে তড়কা (Anthrax) রোগের জন্য আতংকিত হওয়ার কিছু নেই। এটা সহজেই প্রতিরোধযোগ্য একটি ব্যাধি। কুকুর বিড়াল পাখিতে এ রোগ সংক্রমিত হওয়ার কোন তথ্য নেই। ধামরাইতে গরুর রক্ত পান করে হাঁস ও পাখির মুত্যুর জন্য কোনভাবেই তড়কা হতে পারে না বরং অন্য কোন বিষক্রিয়ায় হওয়ার সম্ভাবনাই অত্যধিক। পত্রপত্রিকা  এবং অন্যান্য মিডিয়া এ সকল সংবাদ পরিবেশনের ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্যতা এবং সতর্কতা অবলম্বন বাঞ্চনীয়। কারণ Anthrax নয়, Anthrax নামক আতংক জনমনে সংক্রামিত হলে গবাদিপশু পালনে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, যা অর্থনীতিতে খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

রোগতত্ত্ব রোগনিয়ন্ত্রন বিষেশজ্ঞের মতে আক্রান্ত পশুকে সঠিকভাবে Dispossal এবং পশুকে জবাই চামড়া ছাড়ানো এবং মাংস বিতরনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিরোধের জন্য গ্লোভস ও পলিথিন ব্যবহার করলে এ রোগ সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ রোগ কখনোই মানুষ হতে মানুষে সংক্রমিত হয় না।

তড়কা (Anthrax) রোগের উৎসস্থল নির্মূল এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তর সঠিক সময়ে সতর্কতা অবলম্বন করলে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বিগত বছর গুলোর মতই কম হত। শতকরা ৯৫% সংক্রমন ত্বকে হয়, যেখানে মৃত্যুর কোন সম্ভবনাই নাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের মতে Anthrax রোগের মোকাবিলায় আমাদের প্রচুর ভ্যাকসিন এবং আক্রান্ত হলে চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ঔষুধ মজুদ আছে।

তড়কা (Anthrax) একটি সহজ প্রতিরোধযোগ্য রোগ এবং প্রতিরোধের পরও যদি সামান্যতম সংক্রমন হয় তবে তা সহজ চিকিৎসায় সম্পূর্ন নিরাময়যোগ্য। শুধুমাত্র জনগনের সচেতনতাই এ রোগ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারের জন্য যথেষ্ঠ।