এবারের ঈদ উৎসব স্বস্থি ও আনন্দে

বেবী মওদুদ
Published : 14 Sept 2010, 03:25 PM
Updated : 14 Sept 2010, 03:25 PM

এবার বিপুল আনন্দ উৎসব উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়ে গেল। রাজধানী ঢাকা শহর গ্রাম-গঞ্জ সর্বত্র মানুষের মুখে হাসি খুশি ভাবটি দেখা গেছে। ধনী মধ্যবিত্ত দরিদ্র সবার কাছেই এবার ঈদ উৎসব পালিত হয়েছে যার যার সাধ্যমত। সরকারিভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর দিবারাত্রি কঠোর দৃষ্টি রাখায় কোন দূর্ঘটনার কথা শোনা যায়নি। যারা ঘর বাড়ি ফ্ল্যাট অফিস দোকান-পাট তালা বন্ধ করে রেখে যান তারাও নিশ্চিন্ত মনে ঈদ উদযাপন করে ফিরে আসতে পেরেছেন। টিকিট পাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়েছিল, গাড়ি সময়মত রওনা হয়নি সত্য, কিন্তু পরে সবই পাওয়া গেছে এবং বাড়ি যাওয়ার আনন্দ সবার মিটেছে। লঞ্চ দুর্ঘটনার খবর আসেনি। বাস সময়মত ফেরী পেয়েছে। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে যানজট হয়েছে তবে সেটা মারাত্মক আকার ধারণ করেনি। ঈদের দিন ও পরের দিনগুলোয় পথে পথে গাড়ি ও মানুষ চলেছে নিরাপদে। কোন ছিনতাই শোনা যায়নি।

রমজান মাস জুড়েও আমরা দেখেছি মানুষ স্বস্থিতে ছিল। শুধুমাত্র লোডশেডিং যন্ত্রনা গিয়েছে কোথাও কোথাও। তেমন কোন বড় বিপত্তি ঘটেনি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সব মহলের প্রচেষ্টা ছিল। কিছু কিছু বাড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে যায়নি। যানজট অস্বাভাবিক না হবার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুটি ঘোষণা করা একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত ছিল। শপিং এলাকাগুলোয় সহজেই মানুষ কেনাকাটা করেছে। সর্বত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল। মানুষ প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত নিশ্চিন্ত মনে কেনাকাটা করেছে। ঢাকার বাইরে থেকে এসেও কেনাকাটা করে দিনে দিনে ফিরে যেতে পেরেছে। চাঁদাবাজি সন্ত্রাসী তৎপরতা এবার বলা চলে দৃষ্টি গোচর হয়নি। আমরা দেখেছি সেই শবেবরাতের সময় থেকেই মানুষ ঈদের কেনাকাটা শুরু করেছে। নিজের পরিবার ছাড়াও, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদেরও কিছু একটা উপহার কিনেছে। একটু অবস্থাপন্নরাও দু:স্থদের অর্থ বা কাপড় চোপর দিয়েছেন। এটা সম্ভব হয়েছে সময়মত বেতন – বোনাস – বকেয়া পাওয়ার কারণে যেখানে প্রতিবছর আমরা দেখি গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকদের বেতন, বোনাস ও ওভারটাইম না দেবার জন্য ভাঙচুরের আন্দোলন করতে এবং শূণ্য হাতে ঘরে ফিরে যেতো। সেখানে এবার কোন মারাত্মক ঘটনা ঘটেনি। শ্রমিকদের সব পাওনা মেটাতে হয়েছে মালিকদের। জরুরী ভিত্তিতে ছুটির দিনেও সরকারি নির্দেশে ব্যাংক রাত পর্যন্ত খোলা রাখা হয়েছে। সরকারি – বেসরকারি চাকুরিজীবীরাও যথাসময়ে বেতন – বোনাস পেয়ে সন্তুষ্টমনে কেনাকাটা করে বাড়ি যেতে সক্ষম হয়েছেন।

ঈদের কেনাকাটায় কোথাও বা পুরো পরিবার, কোথাও বা স্বামী-স্ত্রী যে যখন সুযোগ পেয়েছেন করতে পেরেছেন। সাধারণ সময়ের চেয়ে উৎসব এলে হৈ হৈ করে মূল্যবৃদ্ধির সাড়া পড়ে যায়। ব্যবসায়ী – মধ্যস্বত্ত্বভোগী – প্ইাকারি খুচরা দোকানদার সকলের মধ্যে যেন সাড়া পড়ে যায় কে কত মূল্য বৃদ্ধি করে চমক সৃষ্টি করবে। কাচা মরিচের কেজি দু'শো টাকা, চিনি ষাট টাকা, বেগুনের কেজি একশ– এভাবে বৃদ্ধির খবর পত্রিকায় ছাপা হতে দেখে মানুষ আতঙ্কিত হয়ে উঠতো। খাবে কী? এবারও বেড়েছে কিন্তু আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারে নি। মানুষের আয় বেড়েছে এটাও যেমন সত্য, তেমনি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে নি। আর এসব কিছুর পেছনে অদৃশ্য শক্তি হিসেবে কাজ করেছে সরকারি কঠোর নিয়ন্ত্রণ। কোথাও কোথাও নিয়ন্ত্রন ভাঙ্গার কারণে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছে, জরিমানাও করেছে। ভেজাল খাবার তৈরির বিরুদ্ধেও এবার চকবাজারের ইফতারি ও লাচ্ছা সেমাই তৈরির কারখানাও ছাড় পায়নি।

আমরা মনে করি, ইচ্ছে করলেই সরকার, প্রশাসন ও পুলিশ জনস্বার্থে ও কল্যাণে জরুরীভাবে কঠোর পদক্ষেপ নিতে পারে। এবার সেটাই দেখা গেলো।

উৎসবের আয়োজন সবাই করতে চায়। উৎসবের আনন্দে সবাই মেতে উঠতে চায়। সেই সুযোগটা কেন তাদের দেয়া হবে না ? ব্যবসায়ীরা তো এসময়টায় বেশি বিক্রি করে থাকে। মানুষও বেশি কেনাকটা করে থাকে। সুতরাং সবার আনন্দকে ম্লান করার জন্য কেন দ্রব্যমূল্য আকাশচুম্বি হয়ে উঠবে? সাধারণ মানুষের ধরাছোঁয়ার বইরে চলে যাবে ? আমরা কি এই সভ্যতার শ্রেষ্ঠ সময়েও সবাই আনন্দকে ভাগাভাগি করে নিতে শিখবো না ? আমাদের নীতি ও চরিত্র কেন শুদ্ধ ও দৃঢ় হবে না ? এবারের ঈদ আনন্দ আমাদের উজ্জীবীত করে তুলুক, আগামীকালের সব দীনতা – জীর্নতা মুছে দিতে।