রামপাল অভিযোগনামা: শেষ পর্ব

আঞ্জুমান ইসলাম
Published : 28 Oct 2013, 04:32 PM
Updated : 28 Oct 2013, 04:32 PM

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে আমরা চারটি পর্বে প্রকল্পটির বিরোধিতাকারীদের অভিযোগগুলো খণ্ডনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তারই ধারাবাহিকতা্য় ইতোমধ্যে তিনটি পর্ব প্রকাশিত হয়েছে। আজকের পর্বটি সর্বশেষ। এ পর্ব প্রকাশের পর আশা করি রামপাল নিযে যাবতীয় বিভ্রান্তির অবসান ঘটার একটি সুযোগ তৈরি হবে।

এ পর্বে চারটি অংশ থাকছে:

১) রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন বিষয়ে একটি তথাকথিত ইনডিপেনডেন্ট EIA খতিয়ে দেখা;

২) রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে লেখা বা বক্তব্যের ব্যাপারে আলোকপাত করা;

৩) bdnews24.com এ প্রকাশিত দুটি প্রতিক্রিয়ামূলক লেখার সামারাইজড ব্যাখ্যা উপস্থাপন করা;

৪) সার্বিক মূল্যায়ন ও সমাপ্তি কথা।

১. ইনডিপেনডেন্ট EIA এর নামে প্রহসন

রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হলে পরিবেশ, বিশেষ করে সুন্দরবনের উপর এর কী বিরূপ প্রভাব পড়বে তা নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় বিরোধিতাকারীদের নানা লেখা প্রকাশিত হযেছে। এ রকম কিছু কিছু লেখায় একটি 'Independent Environmental Impact Assessment' (EIA) এর উল্লেখ দেখা যায়।

যেমন, Dhaka Tribune এ প্রকাশিত "Rampal plant to doom Sundarbans" শিরোনামের লেখাটি শুরুই হয়েছে এভাবে–

"The proposed Rampal power plant project will do the country more harm than good, destroying the Sundarbans World Heritage site, according to an independent Environmental Impact Assessment (EIA). Dr Abdullah Harun Chowdhury, a professor of Environmental Science Discipline at Khulna University, conducted the EIA titled "Environmental Impact of Coal-based Power Plant of Rampal on the Sundarbans (World's Largest Mangrove Forest) and Surrounding Areas."

দেখুন এখানে:

এ রকম আরেকটি বহুলপঠিত bdnews24.com এ প্রকাশিত অপ-এড "Rampal power plant: A project of deception and mass destruction" শিরোনামের লেখাটিতে বলা হয়েছে–

"Dr Abdullah Harun's study conclusion, "EIA of physical, biological, social and economic environment indicate that most of the impacts of coal fired power plant are negative and irreversible which can't be mitigated in any way"

লিঙ্ক:

আরও অসংখ্য বাংলা ও ইংরেজি পত্রিকাতে এই 'Independent' EIA এর যে বরাত দেওয়া হয়েছে আসুন দেখি সেই EIA টি আসলে কী।

জেনে স্তম্ভিত হবেন যে, যে ফাইলকে EIA বলে চালানো হচ্ছে তা আসলে "Environmental Impact of Coal based Power Plant of Rampal on the Sundarbans and Surrounding areas" নামের সর্বসাকুল্যে চৌদ্দপৃষ্ঠার একটি পিডিএফ যার মধ্যে সাড়ে চারপৃষ্ঠা জুড়ে আছে রামপালের গাছ-গাছালি-পশু-পাখির লিস্ট। অথচ সুন্দরবনে প্রভাব পড়বে বলা হলেও সেখানকার গাছ-পশু-পাখির কোনো নাম-গন্ধও নেই।

তার উপর আছে ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট নামের এক উদ্ভট উপায়ে যোগ-বিয়োগের খেলা যার মাথামুণ্ডু বোঝা অসাধ্য। পিডিএফটি এতই অমূলক যে একে 'পেপার'ও বলতে পারছি না। কারণ এতে কোনো রেফারেন্স নেই, নেই কোনো পদ্ধতির উল্লেখ। এটি কোনো জার্নালে পাবলিস হয়নি, কেউ এটি রিভিউ করেনি। কোনো বিশেষজ্ঞ প্যানেলের উল্লেখ নেই এতে, কে এই ফাইলটি কেনই-বা EIA হিসেবে অনুমোদন দিল, নেই সে তথ্যও। তাছাড়া ফাইলটির তথ্যের সত্যতা যাচাই করেনি কেউ।

সর্বোপরি 'Background and Justification' সেকশনের বেশিরভাগ অংশই 'Plagiarism' বা 'লেখা চুরি'র দায়ে দুষ্ট। দেখতে চান 'Independent EIA' নামের বহুলপ্রচারিত পিডিএফটি? এখানে ক্লিক করুন এবং চোখ বুলিয়ে নিন পুরো ফাইলে–

তেল-গ্যাস জাতীয় কমিটির ওয়েবসাইটে এই পিডিএফ-এর বঙ্গানুবাদ দেওয়া আছে–

নিচে ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া এই ফাইলের স্ক্রিন শট দেওয়া হল—

এখন আসুন দেখি ফাইলটিতে যা বলা হয়েছে সে বিষয়ে। আগেই বলেছি যে, ফাইলটির প্রথম অংশের অধিকাংশই অন্য জায়গা থেকে চুরি করে আনা; প্রথম প্যারাগ্রাফটি এই দুটি লিঙ্ক থেকে কপি করা হয়েছে–

আর দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফটি কপি করা হয়েছে এই লিঙ্ক থেকে–

পাঠকের সুবিধার্থে তথাকথিত এই 'Independent EIA' এর দ্বিতীয় প্যারাগ্রাফটির স্ন্যাপশট দিলাম এখানে–

আর এই লিঙ্কে

এখানে থাকা বক্তব্যটির স্ক্রিন শট দেখুন এখানে–

Lea Rekow এর ওয়েবসাইটের এই পয়েন্টগুলোকে জাস্ট ১,২,৩,৪ … নাম্বার দিয়ে বর্ণ-শব্দ-বাক্য ধরে হুবহু কপি-পেস্ট করে নিজের নামে চালিয়ে দিয়েছেন ওই তথাকথিত Independent EIA এর লেখক। কোনো উদ্ধৃতি হিসেবে দেখানোর মতো সৌজন্যতার ধারও ধারেননি। রেফারেন্স সোর্সের উল্লেখ করারও তোয়াক্কা করেননি। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এ ধরনের লেখা চুরির ব্যাপারটি আন্তর্জাতিক serious ethical offense এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে কপিরাইট লঙ্ঘন বলে বিবেচ্য।

লেখা চুরির অভিযোগ পাশে হঠিয়েও যদি শুধু এই Independent EIA বলে চালানো ফাইলটির কনটেন্ট বিচার করি তাহলেও একই রকম আতঙ্কিত হতে হয় এই ভেবে যে একটি প্রপাগাণ্ডা গ্রুপের কথাবার্তা পুঁজি করে তৈরি করা একটি লেখাকে কীভাবে EIA এর মতো টেকনিক্যাল রিপোর্টের ব্যাকগ্রাউন্ড বলে কেউ চালিয়ে দিতে পারে!!!

Lea Rekow নামের এক আর্টিস্ট/মিডিয়াকর্মী/ফিল্মমেকারের ওয়েবসাইটের কিছু পয়েন্ট কতটুকু বিশ্বাসযোগ্য তা চিন্তাও করেননি লেখক। কী পরিমাণ ভ্রান্ত ও অতিরঞ্জিত হতে পারে এসব কথাবার্তা তার দুটো উদাহরণ দিচ্ছি যা উপরের কাট-পেস্ট করা অংশে দাবি করা হয়েছে:

i) বলা হয়েছে: চা চামচের ৭০ ভাগের ১ ভাগ মার্কারি যদি ২৫ একরের একটি পুকুরে ফেলা হয় তবে সেখানকার মাছ বিষাক্ত হয়ে যায়।

আসল ঘটনা: এক চা চামচের ধারণক্ষমতা ৪.৯২৮৯২ মিলিলিটার। এর ৭০ ভাগের ১ ভাগ হল ০.০৭০৪১ মিলিলিটার। একটি ক্লিনিক্যাল থার্মোমিটারে থাকে ০.৫ মিলিলিটারের কাছাকাছি পারদ। উপরের দাবিটি অতিরঞ্জিত না হয়ে থাকলে একটি থার্মোমিটার ভেঙে তার পারদ ঢেলে দিলে ১৭৭.৫ একর আয়তনের একটি লেকের সব মাছ বিষাক্ত হয়ে যাবে।

আসুন দেখি তথ্য কী বলে?

ভেটেরিনারি প্রফেশনালস এসোসিয়েশনের "SafetyVet" এর ওয়েবসাইট http://www.safetyvet.com/osha/merctherm.htm বলছে–

"The good news is that the amount of mercury in a clinical glass thermometer is usually less than 0.5 ml and not likely to create a serious health hazard in most veterinary practices."

অর্থাৎ একটি থার্মোমিটারের পুরো পারদ যেখানে একটি পশু বা পাখির জন্যে হেলথ হ্যাজার্ড নয়, সেখানে Lea Rekow এর লিঙ্কে করা দাবিটি– এক দীঘি মাছকে বিষাক্ত করা– সঠিক নাকি অতিরঞ্জিত, তা আর ভেঙে বলার কি কোনো প্রয়োজন আছে?

ii) বলা হযেছে: বিলিয়নে ৫০ টি আর্সেনিক কণাযুক্ত পানি পান করলে প্রতি ১০০ জন ব্যক্তির মধ্যে একজনের ক্যান্সার তৈরি হয়।

আসল ঘটনা: দাবিটি সম্পর্কে অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থিত নিউক্যাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতারত আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আর্সেনিক বিশেষজ্ঞ ড. আবুল হাসনাৎ লিখেছেন,

"I am rejecting the … issue with confidence. Had that been true, we (in Bangladesh) would have millions of cancer patients attributable to arsenic by now."

এবার বলুন অতিরঞ্জন কত প্রকার ও কী কী?

দেখুন অদ্ভূত তথ্যসূত্রের দুষ্টচক্রটি– কখনও নামোল্লেখ করে, কখনও না করে– কিন্তু একজন আরেকজনকে রেফার করে যাচ্ছেন. তথ্য যতই অতিরঞ্জিত হোক না কেন।

ইত্যাদি ইত্যাদি।

এবার তাহলে এই কথিত Independent EIA টিকে আরেকটু খুঁটিয়ে দেখা যাক কী বলছে এটি–

i) প্রথমত Independent EIA এর প্রস্তুতকারী দাবি করেছেন যে তিনি FPCO EIA Guidelines অনুসরণ করে তা তৈরি করেছেন। প্রশ্ন হল এই FPCO কী?

না, এর কোনো ব্যাখ্যা ওই Independent EIA তে নেই। যাহোক, ঘাঁটাঘাটি করে জানা গেল যে, FPCO মানে হল 'Flood Plan Co-ordination Organisation', আর FPCO EIA Guidelines হল এই সমস্ত organizations এর জন্যে 'Guidelines for environmental assessments of flood control, drainage and irrigation (FCD/I) projects'

ঠিক ধরেছেন। এই প্রশ্ন ঠিক একইভাবে আমাদের মাথায় এসেছে যে, Thermal Power Plant এর জন্যে EIA তৈরির করতে 'flood control, drainage and irrigation' প্রজেক্টের গাইডলাইন ফলো করার কী মানে?

কিন্তু কিছু করার নেই। করা হয়ে গেছে, হয়তো ভুল করেই। তারপরও সেই ভুল মার্জনা করে চলুন দেখি FPCO EIA Guideline এর কী কী ফলো করেছেন তারা?

ii) Ministry of Water Resources- থেকে প্রাপ্ত FPCO গাইডলাইনের পৃষ্ঠা ৭৫ (ফাইলে ৮৬) এ–

দেখা যায়, এ রকম EIA-তে ১৪টি অংশ থাকা বাধ্যতামূলক–

List of Contents; List of Tables; List of Figures
Executive Summary

Part A – The Project Setting and Study Methodology

1 Introduction

2 Policy, Legal and Organisational Framework

3 Project Description

4 Environmental Assessment Approach and Methodology

5 People's Participation

Part B – The Environmental Baseline

6 Natural Physical Environment

7 Natural Biological Environment

8 Socio-Economic Environment

Part C – Environmental Impact Assessment

9 Impact Assessment

10 Environmental Management

11 Conclusions

List of Acronyms and Abbreviations; Glossary of Technical Terms; List of References; Appendices.

আসুন দেখি কথিত এই Independent EIA তে কী কী অংশ আছে? এর অংশ হল চারটি–

Background and Justification

Materials and Methods

Results and Discussion

Environmental impact assessment (EIA)

হুমম, কীভাবে এই Independent EIA, FPCO EIA Guidelines অনুসরণ করল সেটি তো বোঝার বাইরেই রয়ে গেল।

iii) কথিত Independent EIA তে একটি Environmental Impact Assessment Matrix করার প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। EIA তে ম্যাট্রিক্সের ব্যবহার জরুরি নয় যদিও, তবু কয়েক ধরনের ম্যাট্রিক্সের ব্যবহার দেখা যায়। যা আগেও বলেছি, আবারও বলছি, এখানে লেখক যে ম্যাট্রিক্স ব্যবহার করতে চেয়েছেন, সেটা আসলে যে কী তা একাডেমিক বা প্রফেশনাল ভিত্তিতে বোঝা অসম্ভব। আসুন আগে দেখে নিই এই অদ্ভূত ম্যাট্রিক্সটির একটি অংশ, তাতে এ লেখার পরবর্তী অংশ বুঝতে সুবিধা হবে–

যদিও সিওর নয় (কারণ উপরের ছবির পদ্ধতির সঙ্গে মিলে যায়, তেমন কিছু পাওয়া যায়নি), তবে সম্ভবত এটি 'লিওপোল্ড ম্যাট্রিক্স'। সম্ভবত বললাম, কারণ পদ্ধতির একটা অংশ সে রকম মনে হলেও কার্যত এটা কিছুই হয়নি। ব্যাখ্যা করছি।

লিওপোল্ড ম্যাট্রিক্সে সাধারণত হরিজোনটাল একসিসে সম্ভাব্য অ্যাকশন (১০০ ধরনের) ও ভার্টিকাল একসিসে ফ্যাক্টর (৮৮ ধরনের) দেওয়া থাকে। প্রতিটি অ্যাকশন-ফ্যাক্টর ইন্টারসেকশনে ইফেক্টের ম্যাগনিচিউড ও ইম্পর্টেন্স উভয়ই নিউমেরিক্যাল ভ্যালুতে দেওয়ার সুযোগ থাকে। ইফেক্ট না থাকলে খালি রাখাটাই কনভেনশন, জিরো দেওয়ার দরকার নেই। ইফেক্টের এই ম্যাগনিচিউড ও ইম্পর্টেন্স ১ থেকে ১০ পর্যন্ত দেওয়া হয়। ইফেক্ট যেহেতু পজিটিভ বা নেগেটিভ হতে পারে, সেটা ম্যাগনিচিউডে পজিটিভ বা নেগেটিভ সাইন দিয়ে দেখানো যায়। ইমপর্টেন্স সবসময়ই পজিটিভ।

Independent EIA- এর লেখক রো হিসেবে কিছু ফ্যাক্টর দিয়েছেন (মোট ৩৬ টি), কিন্তু রেটিং-এন্ট্রি দেওয়ার জন্য কেবল একটিমাত্র কলাম রেখেছেন (একটিমাত্র কোয়ানটিটিভ কলামের জন্য ম্যাট্রিক্সের কী দরকার)। যাহোক, এ পর্যন্ত দেখে ঠাহর করা কঠিন, উনি লিওপোল্ড ম্যাট্রিক্স তৈরির চেষ্টা করেছেন, নাকি অন্যকিছু?

কিন্তু Independent EIA লেখকের রেটিং স্কিম দেখে আবার মনে হল হয়তো লিওপোল্ড ম্যাট্রিক্সই করতে চাইছেন। আবার ইমপর্টেন্স দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে ইফেক্টের ধরন দিয়েছেন (যেমন টেকসই, প্রশমনযোগ্য, অপরিবর্তনীয় ইত্যাদি) যা এক ধরনের ইমপর্টেন্স নির্দেশক।

ম্যাট্রিক্স করার মূল উদ্দেশ্য, ইমপ্যাক্টের সামারাইজেশন। কোনো অ্যাকশনের কারণে কোন ফ্যাক্টরে কতটুকু ইফেক্ট আসে সেটার সহজ উপস্থাপনা। এটা যোগ-বিয়োগ করার কিছু নেই। একদিকে ক্ষতি করে (মাইনাস দশ রেটিং পেয়ে), অন্যদিকে উপকার করে (প্লাস দশ রেটিং পেয়ে)। দাবি করার সুযোগ নেই যে সব ঠিক আছে। থাপ্পড় মেরে আদর করে দিলে সব যে ঠিক হয়ে যায় না, সে রকম। সে ক্ষেত্রে এই ম্যাট্রিক্সটা করা হল কেন Independent EIA তে?

ওই যে বললাম, ইমপ্যাক্টের সামারাইজেশন। এই ম্যাট্রিক্সটা করার পরে দেখা যাবে এর কিছু কিছু ক্ষেত্রে অন্য ক্ষেত্র থেকে বেশি প্রায়োরিটি দিতে হবে মিটিগেশন প্ল্যানের জন্য। কিন্তু সেটার বর্ণনা আসবে ইমপ্যাক্ট ইভালুয়েশনের বর্ণনায় এবং মিটিগেশন প্ল্যানে।

এই কথিত Independent EIA লেখক ম্যাট্রিক্স নাম দিয়ে ম্যাগনিচিউডের নিউমেরিক্যাল ভ্যালু দিয়েছেন, কিন্তু ইমপর্টেন্স-এর কোনো নাম্বারে দেননি। এতে ম্যাট্রিক্স করাটা অর্থহীন হয়ে গিয়েছে। তার ইফেক্টের ধরন দেওয়াটাকে যদি কোয়ালিটেটিভ ইমপর্টেন্স দেওয়া হিসেবে ধরেও নিই, তাহলেও এক এক ক্যাটাগরির মধ্যে যোগ করার মাধ্যমে কোনো কিছু বের হয়ে আসে না। আবার তিনি তার কোয়ালিটেটিভ ইমপর্টেন্সের কোনো নিউমেরিক্যাল ইকুভ্যালেন্স সাজেস্ট করেননি। সে ক্ষেত্রে যোগ (বা বিয়োগ করা) আরও অর্থহীন হয়ে যায়।

যোগ-বিয়োগের মাধ্যমে মোট ৩৬ টি ফ্যাক্টরের মধ্যে বেস্ট ও ওয়ার্স্ট মিলে শুধু ১৭ টি ফ্যাক্টরে স্কোরের ওপর ভিত্তি করে গোঁজামিল দিয়ে তিনি ১০০ মিলিয়ে দিয়েছেন। আর তার অনুসারীরা সেটাকেই ৮১% খারাপ ও ১৯% ভালো (মোট ১০০%) বলে প্রচার করে যাচ্ছেন।

আবার এই মেলানোর সময় তিনি রেটিং-এ কী ধরনের গোঁজামিল দিয়ে ম্যানিপুলেশন করেছেন তার নমুনা দেখুন:

ক) পর্যটনের বর্তমান অবস্থা 'সামান্য' থেকে 'কমে যাবে'। এজন্য তিনি নম্বর দিয়েছেন মাইনাস দশের মধ্যে মাইনাস আট। যে জিনিস আছেই সামান্য, তা কি এমন কমতে পারে যে তাকে ৮০% কম নম্বর দেওয়া হল? তাছাড়া পর্যটন কমে গেলেও তা কি এমন অপরিবর্তনীয় জিনিস যে তা আর বাড়ানো যাবে না এবং তাকে 'অপরিবর্তনীয়' জ্ঞান করতেই হবে? এটা একদমই গ্রহণযোগ্য হল না।

খ) সরকারি চাকরি সামান্য বাড়ার আশাবাদ ব্যক্ত করে যেখানে ১০ এ ২ দেওয়া হয়েছে সেখানে শিল্পক্ষেত্রের চাকরি মডারেট পরিমাণে বাড়তে পারে বলে নম্বর দেওয়া হয়েছে ১০ এ ৩। সামান্য আর মডারেটের মধ্যে পার্থক্য মাত্র ১ এর? মডারেট শব্দটা ব্যবহৃত হয় মাঝামাঝি বোঝাতে। সে ক্ষেত্রে ৫ ছিল যুক্তিযুক্ত। মডারেটে যদি ৩ দেওয়া হয়, বাকি ৭টি (৪-১০) দেওয়ার জন্য কী কী সাতটা বর্ণনা ব্যবহার করা হবে? এটা কেমন মনগড়া রেটিং?

ইমপ্যাক্ট ম্যাট্রিক্সের থেকে একান্তই যদি কিছু রেজালট্যান্ট বের করার থাকত তবে তা নিম্নলিখিতভাবে সামারাইজ করা টেবিল থেকে করা উচিত ছিল:

কিন্তু আগেই বলেছি, এই রেটিং ডেটা মূলত অর্ডিনাল স্কেলের ক্যাটাগরি ডেটা। এটা যোগ-বিয়োগের জন্য যথার্থ নয়। তা বিশেষ কিছু অর্থও দেয় না।

ইন্টারভেল ডেটার ক্ষেত্রে এ ধরনের একটি সামারি টেবিল থেকে বিভিন্ন ধরনের ইন্টারপ্রিটেশন দেওয়া যায়। কিন্তু এতসব ডেটা চেপে রেখে সুবিধামতো মাত্র দুটো ম্যানিপুলেটেড ডেটা-পয়েন্ট নিয়ে একটা মনগড়া ব্যাখ্যা দেওয়া কোনো যুক্তিতেই সদুদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়।

লিওপোল্ড ম্যাট্রিক্স সম্পর্কে জানুন এখান থেকে:
http://ponce.sdsu.edu/the_leopold_matrix.html

iii) এসব ছাড়াও প্রাইমারি ডেটা বলে কথিত ইনডিপেনডেন্ট EIA-তে যে সব ডেটা দেওয়া আছে তা স্পষ্টতই অসম্পূর্ণ, অসঙ্গতিপূর্ণ ও মনগড়া।

এ রকম একটা চৌর্য্যবৃত্তে ভরা, গোঁজামিল দেওয়া নিম্নমানের রিপোর্টকে ইনডিপেনডেন্ট EIA নাম দিয়ে তার রেজাল্ট বড় গলা করে প্রকাশ করাকে বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়া আর কী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়?

অথচ এই গবেষকই আবার CEGIS –এর EIA র গুণগত মান নিয়ে এ অভিযোগ তুলেছেন যে "ওটাতে নিয়ম মেনে প্রাইমারি ডেটা ব্যবহার করা হয়নি।"

দেখুন:

Rtv তে দেওয়া তার সাক্ষাতকারের অংশ এই ভিডিওচিত্রটির–

–এর ১.০৫ মিনিটে। অথচ EIA-র মেথডোলজি থেকে দেখা যায় যে পর্যাপ্ত প্রাইমারি ডেটা ব্যবহৃত হয়েছে। সয়েলের ও এয়ারের কোয়ালিটি বিষয়ক প্রাইমারি ডেটা তো অবশ্যই নেওয়া হয়েছে। EIA তে এসবের স্পষ্ট উল্লেখ আছে স্যামপ্লিং লোকেশন, ডেটা টেবিল ও প্রসিডিউর ডেসক্রিপশনে।

তাছাড়া যে সব ক্ষেত্রে রিলায়েবল সেকেন্ডারি ডেটা পাওয়া গেছে (যেমন নৌবাহিনীর কাছ থেকে নেভিগেশনের ডেটা) তা ব্যবহৃত হয়েছে, সেটাই সবসময় করা হয়। এই Independent EIA এর লেখক কোথায় পেলেন যে সবই প্রাইমারি ডেটা হতেই হবে? পৃথিবীর কোথাও কোনো দেশে এ রকম কোনো নিয়ম নেই, একজন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ হিসেবে উনি কি এটাও জানেন না?

আর উনি নিজেও তো উনার করা Independent EIA তে সেকেন্ডারি ডেটা ব্যবহার করেছেন উনার ৮ টি ডেটা টেবিলের ৩ টিতেই ( (Khulna Meteorological Office ও Bangladesh Metrological Department থেকে সংগ্রহ করে)

২. রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরোধিতা করে লেখা বা বক্তব্যের ব্যাপারে আলোকপাত

এবার একটু তাকাতে চাই রামপালের বিরোধিতা করে লেখা নানান আর্টিকেলের মধ্যে থেকে সম্প্রতি চোখে পড়া "বিদ্যুৎ প্রকল্প: রামপাল ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি" শিরোনামে 'প্রথম আলো' নামের পত্রিকাকে আলোকিত করা একটি 'ভয়ংকর' লেখার ব্যাপারে। এ লেখায় এমন কী আছে যে রামপাল অভিযোগনামা নিয়ে আমার এই লেখাতে বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে?

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে আসলেই দাবি রাখে; কারণ লেখাটা আর কিছুই নয়, এ বছরের এপ্রিলে প্রকাশিত হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট অ্যালায়েন্স (HEAL) নামক একটি প্রোপাগান্ডানির্ভর NGO-র বস্তাপচা ডেটা সম্বলিত একটি রিপোর্টের সারমর্ম। HEAL-এর মূল রিপোর্টটি পাওয়া যাবে এখানে:

আর "বিদ্যুৎ প্রকল্প: রামপাল ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি" শিরোনামের লেখাটা পাওয়া যাবে 'প্রথম আলো' পত্রিকার এই লিঙ্কে:

প্রথমেই একটু আগে উল্লেখ করা 'প্রোপাগান্ডানির্ভর NGO-র বস্তাপচা ডেটা সম্বলিত' শব্দগুলোর ব্যাখ্যা দিয়ে নিই–

১) রিপোর্টটি প্রোপাগান্ডানির্ভর কেন? এসব গ্রিন মুভমেন্ট জাতীয় NGO-গুলোর সঙ্গে যারাই জড়িত, তাদের ওই মুভমেন্ট চালাতে প্রচুর ফান্ড লাগে। আর নির্বিঘ্নে ফান্ড পেতে লাগে জনসমর্থন। সহজে জনসমর্থন পাবার উপায় হল আতঙ্ক ছড়ানো। ভয় দেখিয়ে টাকা বের করতে বাধ্য করাটা কত সহজ, সে ব্যাখ্যায় আর গেলাম না। লক্ষ্য করে দেখবেন এসব গ্রিন মুভমেন্টের ওয়েবসাইটে ডোনেশন বক্স থাকবেই। যেমন, গ্রিন মুভমেন্টের শিরোমনি "Union of Concerned Scientists USA (UCSUSA)" এর ওয়েবসাইট

২) রিপোর্টটির ডেটা বস্তাপচা কেন? কারণ তারা WHO-এর ২০০৬-সালের ডেটা ব্যবহার করেছেন ২০১৩-তে। তা তারা করতেই পারেন যদি অন্য কোনো উপায় না থাকে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে তারা অসততা দেখিয়েছেন ওই ডেটার গ্রোথ ফ্যাক্টর (যা WHO-সাজেস্টেড, একই সোর্সে) এর প্রয়োগ বা তার ব্যবহার না করে। কেন করেননি? কারণ গ্রোথ নেগেটিভ হওয়ায় আতঙ্ক ছড়ানোর যে অভিপ্রায় নিয়ে তারা রিপোর্টটি তৈরি করেছেন তা তারা সেভাবে বাস্তবায়ন করতে পারতেন না।

এবার দুটি লেখা মিলিয়ে পড়ুন, খুব সহজেই আবিষ্কার করতে পারবেন, কেন এই লেখাটিকে 'ভয়ঙ্কর' বলে অভিহিত করেছি। HEAL-এর লেখা থেকে জনমনে আতঙ্ক উৎপাদনকারী কতিপয় অনুমান ও মন্তব্যকে কাট-পেস্ট বা ভাবানুবাদ করে লেখক লোখাটা সাজিয়েছেন।

অনুমান ও মন্তব্য বলেছি এ কারণে যে তিনি যেসব কথাবার্তাকে তথ্য হিসেবে দাবি করেছেন তার কোনোটিই–

১) নিরপেক্ষ কোনো সূত্র দ্বারা সমর্থিত নয়, ২) সাধারণভাবে সুনির্দিষ্টও নয়।

উদাহরণস্বরূপ, "কয়লা পোড়ানোর ফলে বাতাসে উঁচুমাত্রার পার্টিকুলেট ম্যাটারিয়াল ও নাইট্রোজেন অক্সাইডের কারণে শিশুদের ফুসফুসের বিকাশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়" দাবিটি পর্যালোচনা করে বলা যায়, এখানে কতটুকু কয়লা কীভাবে পোড়ানো হচ্ছে তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। তাছাড়া ব্যবহৃত 'মারাত্মকভাবে' কথাটা ভীতি ছড়ানো ছাড়া কোনো অবজেকটিভ অর্থ বহন করে না।

HEAL-এর ওই রিপোর্ট বের হবার পর European Association of Coal and Lignite (EURACOAL) কঠোর ভাষায় তা প্রত্যাখ্যান করে Position Paper প্রকাশ করে। সেখানে তারা যাচ্ছেতাইভাবে HEAL-এর দাবি ও অপব্যাখ্যামূলক অবস্থানের ব্যাপারটি তুলে ধরে নিন্দা জানায় এবং কোনো রকম পাবলিক রেসপনসে অসম্মতি জ্ঞাপন করে।

রেসপনসে অসম্মতির কারণ হিসেবে EURACOAL উল্লেখ করে যে, এসব ফালতু রিপোর্টে রেসপনস দিলে তা HEAL এর মতো সংগঠনকে অকারণে গুরুত্ব দেওয়া হবে ও ভবিষ্যতে এ ধরনের (HEAL বা এর মতো) সংস্থা আরও একপেশে ও অতিরঞ্জিত রিপোর্ট প্রকাশ করবে গুরুত্ব পাওয়ার আশায়।

EURACOAL-র ভাষায়–

"EURACOAL has not given the alliance the satisfaction of a public response, because to do so would simply give more publicity to a biased and inflammatory report funded by two anti-coal NGOs…" দেখুন: http://www.euracoal.be/pages/medien.php?idpage=1280

আরেকটা হাস্যকর তথ্য হল, EURACOAL–এর পজিশন পেপার পেয়ে এবং কাঙ্খিত প্রচার না পেয়ে HEAL-এর মায়াকান্না। এই সম্পর্কিত তথ্য পাওয়া যাবে এখানে–

৩. bdnews24.com এ প্রকাশিত দুটি প্রতিক্রিয়ামূলক লেখার সামারাইজড ব্যাখ্যা

"রামপালঃ কিছু অভিযোগ, কিছু উত্তর" এই শিরোনামে ৬ অক্টোবর একটি লেখা প্রকাশিত হবার প্রেক্ষিতে দুটি প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়। একটি হল "রামপাল: বিভ্রান্তিকর 'কিছু অভিযোগ, কিছু উত্তর' শিরোনামে অক্টোবর ৭ এ এবং অপরটি "রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রজেক্ট বিষয়ক নিবন্ধ প্রসঙ্গে" শিরোনামে অক্টোবর ৯ এ।

এ দুটি লেখায় তোলা অভিযোগের বিশদ ব্যাখ্যা দেবার জন্যে চার পর্বের "রামপাল অভিযোগনামা" শিরোনামে একটি সিরিজ লেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অভিযোগ খণ্ডনের পাশাপাশি কিছু প্রাসঙ্গিক টেকনোলোজি ও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণার বিষয়েও আলোকপাত করা হয়েছে এ যাবত প্রকাশিত তিনটি পর্বে। শেষ পর্বের এ পর্যায়ে অভিযোগগুলোর একটা সামারি দেওয়া হল নিচে–

"রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রজেক্ট বিষয়ক নিবন্ধ প্রসঙ্গে" এই লেখাটিতে তোলা অভিযোগের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এ সিরিজের প্রথম ও দ্বিতীয় পর্বে।

"রামপাল: বিভ্রান্তিকর 'কিছু অভিযোগ, কিছু উত্তর' শিরোনামে তোলা বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাখ্যা দেওয়া হল নিচে–

(১) লোকদেখানো ইআইএ প্রসঙ্গে:

উত্তর: রামপাল অভিযোগনামার প্রথম ও দ্বিতীয় পর্ব দ্রষ্টব্য।

(২) সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে কত দূরে হওয়া উচিত কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র:

উত্তর: রামপাল অভিযোগনামার দ্বিতীয় পর্ব দ্রষ্টব্য।

(৩) সুন্দরবনকে 'আবাসিক ও গ্রাম্য' এলাকা দেখানো প্রসঙ্গে:

উত্তর: রামপাল অভিযোগনামার দ্বিতীয় পর্ব দ্রষ্টব্য।

(৪) ছাই দিয়ে ১৪১৪ একর জমি ভরাট প্রসঙ্গে:

উত্তর: আগে পিছে না পড়ে শুধু একটি স্পেসিফিক শব্দকে কোট করার ব্যাপারটি অভ্যাসে পরিণত হওয়াতেই বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। অবশ্য যাদের কাছে "Environmental Impact of Coal based Power Plant of Rampal on the Sundarbans and Surrounding areas" নামের একটি অদ্ভূত ডকুমেন্ট EIA এর উদাহরণ, তাদের কাছ থেকে এর বেশি আশা করাও ঠিক নয়।

তার উপর "Land develop with ash" এর অর্থ যে মানুষের কাছে "ছাই দিয়ে ভরাট" তার সঙ্গে টেকনিক্যাল আলোচনা করা শুধুই সময় নষ্ট। তারপরও যেহেতু এসব শব্দার্থ দিয়ে বেশকিছু মানুষকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে তাই সে বিভ্রান্তি দূর করার জন্যেই বলা–

ক) CEGIS এর করা EIA এর ১০৬ নম্বর পাতায় "Landfill" বা "Impounded" নয়, বলা হচ্ছে "Land development" করা হবে। Fly ash দিয়ে land development এর অর্থ হল নিচু জায়গা উঁচু করা হবে মাটি দিয়েই, কিন্তু তারপর সে জায়গাকে কাজের উপযোগী বা develop করার জন্যে Fly Ash ব্যবহৃত হবে। এভাবে মাটিকে উপযোগী করে তুলতে সারা বিশ্বে ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার হয়।

খ) যদিও 'রামপাল অভিযোগনামা: পর্ব ৩"-এ ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহার নিয়ে বিস্তারিত বলেছি, তারপরও আবার বলছি ফ্লাই অ্যাশকে US EPA পর্যন্ত "Non Hazardous Waste" এর তালিকাভূক্ত করেছে। "Clean Coal" Technology তে উৎপন্ন Fly ash এর মাটিতে ব্যবহার ক্ষতিকারক তো নয়ই, বরং বেশকিছু সমীক্ষায় দেখা গেছে কৃষিজমিতে ফ্লাই অ্যাশের ব্যবহারে ফসল উৎপাদন বেড়েছে।

সূত্র:

শুধু তাই নয়, ২০০৯ সালে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে The U.S. Environmental Protection Agency (US EPA) বলেছে, সাধারণত বর্তমানে উৎপাদিত Coal Ash এ ক্ষতিকারক কোনো ধাতু থাকে না। কিন্তু যদি কোনো কোনো ফ্লাই অ্যাশে আর্সেনিক ও মার্কারি পাওয়াও যায় তবে সেই ফ্লাই অ্যাশ নিয়েও কৃষকদের মাথা না ঘামিয়ে বরং তা ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করেছে US EPA: The U.S. Environmental Protection Agency says "those toxic metals occur in only tiny amounts that pose no threat to crops, surface water or humans"

(৫) শব্দদূষণ ও (৬) সুন্দরবনের মধ্যে দিয়ে কয়লা পরিবহণের বিপদ প্রসঙ্গে

উত্তর: নিচে দেওয়া লিঙ্কগুলো আগে দেখে নিন যে কীভাবে মংলা বন্দরকে আরও ব্যবহারযোগ্য ও কার্যকর করা যায় সে বিষয়ে শত শত মিলিয়ন ডলারের কী কী প্ল্যান হাতে নেওয়া হয়েছে এবং পত্রিকাতে কোনো সমালোচনা ছাড়াই সেসব বিষয়ে রিপোর্টিং হচ্ছে। এ এক্সপানশন নিয়ে বাংলাদেশের কোনো জাতীয় কিংবা নাগরিক কমিটির মাথাব্যথা নেই। এসব উন্নয়নকাজের সরঞ্জাম কি সব বাতাসে ভর করে আসবে, নাকি মংলা বন্দরের উন্নতি হয়ে গেলে বন্দরকে বসিয়ে রাখা হবে? সে ক্ষেত্রে কত শত বাড়তি জাহাজ চলাচল করবে তার কি কোনো ইয়ত্তা আছে?

কিন্তু সেই সব বাড়তি জাহাজ চলাচল বা এর থেকে দূষণ/শব্দ/আলো নিয়ে তো কোনো কমিটির মাথাব্যথা দেখছি না আমরা। তাহলে রামপালের জন্যে চলাচল করবে যে বাড়তি কয়েকটি জাহাজ/কার্গো তা নিয়ে কেন এত হইচই? যদি রামপালের জন্যে আসা জাহাজ বন্ধ করতে চান তাহলে ভবিষ্যতে যেন মংলা বন্দরের এক্সপানশন না হয় ও এখনকার চেয়ে একটিও বেশি বড় জাহাজ চলাচল করতে না পারে তারও ব্যবস্থা করুন।

মংলা বন্দর উন্নতিকরণ প্রকল্প সংক্রান্ত ইনফরমেশন:

আর কয়লা ট্রান্সফার করার সময়ে হওয়া শব্দ নিয়ে যারা চিন্তিত তাদের বলব, কয়লা কোনো মেটাল নয় যে ভেসেল থেকে কার্গোতে ট্রান্সফারে ঝমঝম শব্দ হবে। এ ট্রান্সফার মেকানিজমটি সংক্রিয় ও প্রায় শব্দহীন। রামপাল অভিযোগনামার তৃতীয় পর্বে এ ট্রান্সফার প্রক্রিয়া ও বন্ধ কার্গোর ছবি দেখে নিন।

আসুন এখন মংলা বন্দরের কার্যক্রম বোঝার জন্যে নিচের ছবিগুলো দেখি–

ছবিগুলো দেখতে নিচের লিঙ্কগুলো দেখুন–

ইত্তেফাক পত্রিকার লিঙ্ক–

ডেইলি স্টার পত্রিকার লিঙ্ক–

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের–

এসব ছবি সব মংলা বন্দরের। প্রতি বছর যে শত শত জাহাজ মংলা বন্দরে ভিড়ে সেগুলো এ রকমই হাজার হাজার মেটাল কনটেইনারে করে মালামাল আসে এগুলো প্রতিদিন উঠানামা করানো হয়। ডানদিকের নিচের কোনায় যে গাড়িগুলোর ছবি তাও মংলা বন্দরের।

প্রতি বছর এমন হাজার হাজার গাড়ি নামানো হয় জাহাজ থেকে। এগুলো কে লোড, আনলোড আর পরিবহণ থেকে কী বিপুল পরিমাণ শব্দ হতে পারে বলে আপনাদের ধারণা? রীতিমতো ঝঙ্কারসম, তাই তো? তার উপর মংলা বন্দর প্রসারণ ও আধুনিকায়নের পরে এই শব্দদূষণ কতগুণ বাড়বে বলে ভাবছেন? আর অন্যদিকে কয়লার মতো অধাতু বস্তুকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে জাহাজ থেকে জাহাজে গত পর্বে দেওয়া ছবি অনুযায়ী ট্রান্সফারে কতটুকু শব্দদূষণ যোগ করবে বলে মনে হয়? চিন্তা করুন।

তাই মংলা বন্দরের কার্যক্রম বহাল রেখে ও এর উন্নতি ও সম্প্রসারণের ব্যাপক কাজ হাতে নেওয়াতে কোনো প্রতিবাদ না করে শুধু কয়লা পরিবহণের কয়েকটি জাহাজ নিয়ে চিন্তা একটু বেশি বেমানান নয় কি? আর যদি বন্দরের কার্যক্রম বন্ধের চিন্তা করেন সুন্দরবনের ধ্বংস (??) ঠেকাতে (??) তাহলে অবশ্য ভিন্ন কথা।

(৭)পানি উত্তোলন ও নদীদূষণ প্রসঙ্গ:

উত্তর: এ পয়েন্টের নিচে লেখক যা লিখেছেন তা পড়ে এটা না জিজ্ঞেস করে পারছি না যে আসলেই কি লেখক জানেন না, নাকি অজ্ঞানতার ভান করছেন? যাহোক, উনি জানেন না ধরে নিয়েই Sincerely উত্তর দিচ্ছি। লেখক বলেছেন–

"ভারতের ছত্তিশগড়ের রায়গড়ের কাছে ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে: Zero Discharge concepts will be followed

সূত্র: রায়গড় ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ, এক্সিকিউটিভ সামারি, পৃষ্ঠা ই-১২।

অথচ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ই্আইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে:

To meet the water demand for plant operation, domestic water, environmental management 9,150 m3/hr (equivalent to 2.54 m3/s) surface water will be withdrawn from the Passur river and after treatment water shall be discharged back to the Passur river at the rate of 5,150m3/hr

প্রথমেই লেখককে অর্ধেক লেখা পাঠ করে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর ব্যাপারে সতর্ক করছি। ছত্তিশগড়ের যে উদাহরণটি তিনি দিয়েছেন সেখানে Zero Discharge শব্দ দুটির পরে আরেকটি শব্দ আছে যা লেখকের চোখ এড়িয়ে গেছে বোধকরি। সেই শব্দটি হল 'Concept' অর্থাৎ Zero Discharge কথাটির পর Concept শব্দটা বসালে তবেই এ ব্যাপারে ক্লিয়ার Concept পাওয়া যাবে। লেখক শুধু 'Zero Discharge' এর শাব্দিক অর্থ নিয়ে মাথা ঘামানোতেই ব্যাপারটি তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন।

তো আসুন দেখি Zero Discharge Concept সম্পর্কে USEPA কী বলে–

"A facility may comply with zero discharge by demonstrating that all pesticide active ingredients and priority pollutants are below their method detection limits in the facility's final effluent, and only if all pollutants have approved analytical methods. A detection of any of these pollutants means the facility is out of compliance with the rule."

USEPA আরও বলছে–

"Section 301 of the Clean Water Act prohibits the discharge of "any pollutant" except if the discharge of such pollutant is in compliance with a permit. Because it is impossible to achieve an analytical detection of "zero" for a pollutant, facilities are allowed to show compliance with zero discharge if each process wastewater pollutant (e.g., the specific pesticide active ingredient) is not analytically detected in the effluent. Another way to show zero discharge is to show no flow of process wastewater from the facility"

লিঙ্ক:

কঠিন লাগছে? আচ্ছা, সহজ করে দিচ্ছি। Zero Discharge Concept এর পুরোটাই 'Pollutant' এর ব্যাপারে। যে পানি বা বর্জ্য ছাড়া হবে তাতে যেন Pollutant একেবারেই না থাকে। আরও সহজ করে বলি–

Zero Discharge হল (1) Complete recycling of water. (2) Discharge of essentially pure water. (3) Discharge of a treated effluent containing no substance at a concentration higher than that found normally in the local environment.

সূত্র: ক্যালিফোর্নিয়া এসোসিয়েশন অব স্যানিটেশন এজেন্সিস

লিঙ্ক:

অর্থাৎ Zero Discharge কনসেপ্ট অনুযায়ী কোনো পলিউট্যান্ট যেন এফ্লুয়েন্টে না থাকে তা নিশ্চিত করাই এই কনসেপ্ট অনুসরণের লক্ষ্য। এ কনসেপ্ট ফলো করেই যতটা সম্ভব পানি বয়লারে রিসাইকেল করে ব্যবহার হবে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। আর অন্যান্য যে সকল এফ্লুয়েন্ট ওয়াটার ডিসচার্জের দরকার হবে তার ট্রিটমেন্টের জন্যে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাশাপাশি একটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হচ্ছে। সে প্ল্যান্টে পরিশোধনের পরই বিশুদ্ধ পানি ডিসচার্জ করা হবে। এ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের অবস্থানও বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রজেক্টের লে-আউট প্ল্যানে দেখানো আছে বিস্তারিতভাবে।

পানি উত্তোলন ও নদীর উপর এর প্রভাব সম্পর্কে অপর যে কথাগুলো বলেছেন লেখক তাতে মনে হচ্ছে 'নদী যে একটি প্রবহমান জলধারা', উজান থেকে আসা বিভিন্ন নদীর স্রোতধারা যে একটি নদী বহন করে এই বিষয়টি তারা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন। রামপালের বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পশুর নদীর পাড়ে। পশুর দক্ষিণাঞ্চলের এমন একটি নদী যা দিয়ে 'নদীমাতৃক' এ বাংলাদেশের অনেক ছোট-বড় নদীর পানি প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে পরে।

তাই লেখক যেমন করে বলছেন, সে অনুসারে পানির প্রবাহ কমে গিয়ে যদি পশুর নদী শুকিয়ে যায় তার অর্থ হল পশুর নদীতে এসে পড়া সকল নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া। আর সত্যি সত্যিই যদি সেটা ঘটে তাহলে বাংলাদেশের জন্যে আরও অনেক অনেক অনেক বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

যাহোক, লেখক বলেছেন যে CEGIS এর EIA তে উল্লেখ আছে যে সুন্দরবন এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর নেমে গেছে, তাই পশুর নদী থেকে Dry Season এর প্রবাহের ১% বা তার কম পানি সরিয়ে নেওয়ায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর আরও নেমে যাবে। ঠিক EIA রিপোর্টে এ কথা আছে। কিন্তু আছে, এটা ইন্ডিকেট করতে যে যেহেতু ভূগর্ভস্থ পানির স্তর আরও নেমে না যায় সেজন্যে যেন ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন না করা হয়। আর রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করাও হবে না। সারফেস ওয়াটার দিয়েই কাজ করা হবে।

পশুর নদী থেকে যে পরিমাণ পানি টানার কথা উল্লেখ আছে, তা এতই কম পরিমাণ যে হয়ত পশুর নদী থেকে নেওয়ারও প্রয়োজন হবে না। মাত্র ১০০ একর জমি নিয়ে একটি জলাধার করে তাতে বৃষ্টির সিজনে পানি ধরে রাখলেই সারা বছরের সকল পানির চাহিদা চাহিদা মিটে যায়।

(৮) বড়পুকুরিয়ার পরিবেশদূষণ:

উত্তর: বড়পুকুরিয়ার সঙ্গে রামপালের তুলনা অপ্রাসঙ্গিক এবং এর সঙ্গে রামপালের আলোচনা করা না মিলিয়ে ফেলতে লেখক বলেছেন। তাই আলোচনা করা হচ্ছে না। শুধু জানিয়ে রাখতে চাই যে বড়পুকুরিয়াতে Coal Ash এখন অন্য কাজে লাগানো শুরু হয়েছে। আর 'বড়পুকুরিয়া' নামটি বাদ দিয়ে, in general, সকল Coal Based Power Plant এর দূষণ-সংক্রান্ত বিভ্রান্তি দূর করতে রামপাল অভিযোগনামার অন্য পর্বগুলো পড়ুন। SOx, NOx, Coal Ash ইত্যাদি নিয়ে যেসব বলা হয়েছে তার অসাড়তা নিজেরাই পরিষ্কারভাবে বুঝতে পারবেন আপনারা।

(৯) ছাইয়ের ব্যবহার:

উত্তর: বর্তমান সময়ের একটি কোল বিদ্যুৎ প্রকল্পের ছাই যে কতটা উপকারী তা রামপাল অভিযোগনামা তৃতীয় পর্বে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। অনুগ্রহ করে পড়ে নিন। বিভিন্ন দেশে ফ্লাই-অ্যাশ এবং বটম অ্যাশের ব্যবহার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ওই পর্বে।

(১০) সুন্দরবনের দিকে তিন মাসের বায়ুপ্রবাহ:

উত্তর: যাক, রামপালের বিরোধিতা করতে গিয়ে সুন্দরবনের তিন মাসের বায়ুপ্রবাহের দিক নিয়ে বিরোধিতা করেননি দেখে ভালো লাগল। উনারা যে অভিযোগ তোলেননি এই বলে যে "আগামী ২৫ বছরে যে বায়ুপ্রবাহের দিক এটাই থাকবে সেটার প্রমাণ কী? EIA তে কেন ২৫ বছরের বায়ুপ্রবাহের দিক নিয়ে কোনো স্টাডি হয়নি" … এতে উনাদের সম্পর্কে কিছুটা হলেও শ্রদ্ধা বাড়ল। কারণ পশুর নদীর পানিপ্রবাহের আগামী ২৫ বছরের প্রেডিকশন না করে লেখক পশুর নদী থেকে পানি নিতে দিতে নারাজ ছিলেন।

যাহোক, বায়ুপ্রবাহ ও এর সঙ্গে SOx, NOx ইত্যাদির কোরিলেশন আর এসব গ্যাসের Dispersion নিয়ে রামপাল অভিযোগনামার দ্বিতীয় পর্বে বিস্তারিত বলেছি। তারপরও এখানে অল্পকথায় আরেকটু বলতে চাই।

EIA তে উল্লেখ আছে যে বছরের তিন (বা চার) মাস বায়ুপ্রবাহের দিকের কারণে SOx, NOx ইত্যাদি সুন্দরবনে একটু বেশি যাবে যার পরিমাণ প্রেডিক্ট করা হয়েছে ৫৩ মাইক্রো গ্রাম/লিটার। যেহেতু এই পরিমাণ SOx স্বাভাবিক মাত্রার (৮০ মাইক্রো গ্রাম/লিটার) মধ্যেই পড়ে, সে কারণে CEGIS (EIA প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান) একে মেনে নিয়েছে।

কিন্তু অন্য জায়গায় উল্লেখ করেছেন যে যেহেতু পুরো ক্যালকুলেশন করা হয়েছে আমদানিকৃত Coal এ ০.৬% সালফার থাকবে, তাই সালফার কনটেন্টের এদিক ওদিক হলে SOx নিঃসরণ বেড়ে যেতে পারে এবং সে ক্ষেত্রে সুন্দরবনে যেন স্বাভাবিক মাত্রার চেয়ে বেশি SOx না পৌঁছায়। তাই Flue Gas De-Sulphurization (FGD) টেকনিক ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সুতরাং এমনিতেই SOx রিমুভাল টেকনিক ইনক্লুড করা হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে। সেখানে বছরের ওই তিন বা চার মাসে Flue gas থেকে SOx সরিয়ে ফেলে আরও কম মাত্রায় নিঃসরণ করা যাবে না তা নয়। ওই তিন বা চার মাসে যেন সুন্দরবনে ২০ বা ৩০ মাইক্রোগ্রাম/লিটার SOx পৌঁছে এবং সেখানে থেকে ব্যাক ক্যালকুলেশন করে Scrubber থেকে নিঃসৃত গ্যাসে SOx এর মাত্রা কত হওয়া উচিত সেটা বের করা তো কোনো ব্যাপার নয়।

শুধু সেই Stoichiometric ratio অনুযায়ী লাইম সাপ্লাই করা প্রয়োজন হবে Scrubber Chamber এ। আর এ রেসিওটি হল: এক গ্রামমোল SO2 এর জন্যে প্রয়োজন ১.১ গ্রাম মোল লাইম। যেহেতু Scrubber বাই প্রোডাক্ট FGD জিপসামের ব্যাপক ব্যবহার ও চাহিদা বিশ্বজুড়ে। তাই পুরো টেকনিকটাই ইকোনমিক্যারি ভায়াবেল। তার মানে দাঁড়াচ্ছে, অল্প খরচেই Flue gas এই SOx এর মাত্রা, সুন্দরবন এলাকায় ২০ বা ৩০ মাইক্রোগ্রাম/লিটারে নামিয়ে আনা সম্ভব।

সুতরাং এই Technological know how না জেনে শুধু ধ্বংস হয়ে গেল, বিপন্ন হয়ে গেল বলার কোনো মানে নেই। তার উপর EIA রিপোর্টটি ঠিকমতো না বুঝে অযথা ভ্রান্তি ছড়ানো খুবই গর্হিত একটি কাজ হচ্ছে। EIA রিপোর্ট একটি হাইলি টেকনিক্যাল জিনিস। তবে এটাও ঠিক যে উপরে উল্লিখিত একটি হাস্যকর Independent EIA বলে যে জিনিসটি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে সেটি যাদের EIA সম্পর্কে ধারণার বহিঃপ্রকাশ তারা প্রকৃত EIA রিপোর্ট পড়ে তথ্যসাগরে হাবুডুবু খাবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তারা যেটা বুঝে না সেটা নিয়ে অন্যদের মধ্যে বিভ্রান্তি বা প্যানিক ছড়ানো একটি অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে করছি।

৪. সার্বিক মূল্যায়ন ও সমাপ্তি কথা

গত তিনটি পর্ব ও বিশেষ করে এ পর্বের আলোচনা থেকে একটা জিনিসই স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে রামপালে নির্মিতব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ঘিরে অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে কিছু বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে। যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে তার অধিকাংশই হয় কথার মারপ্যাঁচে তৈরি অথবা পুরোপুরি মিথ্যা। এর সঙ্গে মেশানো হয়েছে সারা বিশ্বের গ্রিন মুভমেন্ট' বলে পরিচালিত একটি গোষ্ঠীর ভয়াবহ আবহ তৈরি করতে ব্যবহৃত কিছু মনগড়া তত্ত্ব ও তথ্য।

এই গ্রিন মুভমেন্টের নামে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে "গেল গেল সব গেল" বলে যারা আদালতে রিট দায়ের, অবস্থান ধর্মঘটসহ নানা কর্মসূচি পালন করে তাদের দেওয়া তথ্যকেই আবার তথ্যসূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে রামপালবিরোধী অ্যাকটিভিস্টরা। এ কারণে রামপালে বিদ্যুৎ উৎপাদনকে কেন্দ্র করে আন্দোলন আর গ্রিন মুভমেন্ট-ওয়ালাদের ওয়েবসাইট থেকে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য অতিরঞ্জিত তথ্যের ব্যবহার একসূত্রে গাথা কিনা সে বিষয়ে ভাবার সুযোগ আছে।

শুরু থেকেই যেভাবে বিভিন্ন বিষয় টেনে বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে ধ্বংস-বিপর্যস্ত-বিষাক্ত ইত্যাদি শব্দচয়ন করে যেতে থাকলেন, তাতে তদের পদ্ধতির সঙ্গে গেরিলা ওয়ারফেয়ারে ব্যবহৃত রণকৌশলেরও (ট্যাকটিকস)-এর মিল পাওয়া যায়। বিগত শতাব্দীর বড় একটা সময়ে বিভিন্ন দেশ হয় কমিউনিস্ট নয়তো কোনো না কোনো জাতীয়তাবাদী গেরিলা তৎপরতা সামাল দিয়েছে। এসব গেরিলা গ্রুপগুলি সংঘবদ্ধ হবার সময়টার পর থেকেই যেভাবে তৎপরতা শুরু করত তা হল এ রকম: একইসঙ্গে অনেকগুলি ন্যারো ফ্রন্টে প্রবিং অ্যাটাক করে দুর্বলতা চিহ্নিত করার চেষ্টা করা। এর কোনোটাতে সাফল্য এলেই তা এক্সপ্লয়েট করা, আর না এলে সেটা ভুলে যাওয়া।

রামপালবিরোধী প্রচারণায়ও একই পদ্ধতির প্রয়োগ দেখা গিয়েছে এবং এখনও যাচ্ছে। কখনও দূরত্ব, কখনও দূষণমাত্রা, কখনও মালিকানা-কাঠামো, কখনও চুক্তির শর্ত, কখনও দুর্নীতির আশংকা, কখনও আইনের অপর্যাপ্ততা, কখনও সুন্দরবন, কখনও পশুর নদী, কখনও মাটি-ভরাট, কখনও জমি-অধিগ্রহণ ইত্যাদি বিষয়গুলি আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

এর মধ্যে যেটি যেটিতে সুবিধা করা যায়নি, সেগুলোর ব্যাপারে আর কোনো ফলো-আপে না গিয়ে নতুন করে আরেকটা বিষয়ের উপর সওয়ার হয়েছেন বিরোধিতাকারীরা। লক্ষ্য অর্জনের দিকে নিরলস ধেয়ে যাওয়ার পরিবর্তে টিপিকাল মাইনরিটি গেরিলাদের মতো প্রতিপক্ষকে ব্যতিব্যস্ত রাখাটাই যেন এসব প্রচারণাকারীর মূল উদ্দেশ্য।

যারা এই সিরিজটিতে যুক্তি, পাল্টা-যুক্তি শুনতে চেয়েছেন, তাদের বলছি। কী এমন যুক্তি, পাল্টা-যুক্তির সুযোগ থাকে যখন কেউ গ্রিন মুভমেন্টের আবেগজাগানিয়া অতিরঞ্জিত দাবি ধার করে তার জবাব চান? দাবিটি যে মিথ্যা সেটা প্রমাণ করতে বলেন?

এখানে একটা কথা স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, যে কোনো দাবি প্রমাণ-অপ্রমাণের ক্ষেত্রে শর্ত কিন্তু খুবই সরল, ১) দাবি প্রমাণের দায় দাবিকারীর বা প্রশ্নকারীর, অন্যের নয়। ২) প্রমাণ করতে না পারা পর্যন্ত দাবির বিষয়টি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য, বিশেষ করে যেখানে এ দাবিগুলোকে 'ভিত্তিহীন' বলে বিভিন্ন সময়ে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এখানে প্রধান সমস্যা হিসেবে দেখতে পাচ্ছি বাংলাদেশে সাধারণভাবে কর্তৃপক্ষের প্রতি অনাস্থা আর জাতীয় গর্বের সেনসিটিভ একটি আবেগকে কাজে লাগিয়ে ভিত্তিহীন আশংকাবাণী দিয়ে মানুষের মনে প্রশ্ন তুলে ফেলার সুপরিকল্পিত একটি প্রচেষ্টা। 'চিলে কান নিয়ে গেছে' এ দাবি যে কেউই তুলতে পারে। কিন্তু আশেপাশে আদৌ কোনো চিল আছে কিনা সেটি বিবেচনার দায়িত্ব কিন্তু আমাদের।

কান কানের জায়গাতেই আছে, আর আপনি যে অঞ্চলে আছেন সেটির ত্রিসীমানায় কোনো চিল নেই, এটি প্রমাণ করা কিন্তু কঠিন না হলেও সময় এবং শ্রমসাধ্য। যে সময়টি আপনি হয়তো ব্যয় করতেন প্রডাকটিভ ও উন্নয়নমূলক আরও কোনো কাজে। আর তাই রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধীরা যুক্তিহীন, ভিত্তিহীন আর কথার মারপ্যাঁচে যার যা খুশি দাবি করে বসবে আর আমাদের বসতে হবে সেটা যে মিথ্যা তা প্রমাণ করতে, এটা কেমন কথা?

রামপালকাণ্ডের আরেকটি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হল: বেশকিছু অদ্ভূত জেনারালাইজেশন ও মিথ তৈরি করা হয়েছে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইস্যু ঘিরে। এর কয়েকটি এখানে দেখুন:

• রামপাল বিরোধিতাকারী= দেশপ্রেমিক, সুন্দরবনরক্ষক, পরিবেশপ্রেমী, সমঝদার ও ( যদিও এখন পর্যন্ত রামপালের অধিকাংশ অ্যাকটিভিস্ট, বিশেষভাবে যারা বিভিন্ন ভিত্তিহীন অভিযোগ উত্থাপন করছেন তারা সবাই বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত বলে দেখা যাচ্ছে)

• রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পক্ষাবলম্বনকারী= দেশের শত্রু, সরকারের দালাল, দলকানা, ভারতপ্রেমী, সুন্দরবনবিদ্বেষী, সুন্দরবন ধ্বংসকারী, পরিবেশনাশিনী।

• রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে সমস্যা নেই বলে যারা লিখেন= তারা পেইড এজেন্ট, টাকা খেয়ে, উচ্ছিষ্টভোগের লালসায় লিখছেন, নিজেদের ব্যবসায়িক স্বার্থে লিখছেন, আত্মা বেঁচে দেওয়া শাসকের গোলাম। আবারও একটু প্রমাণ দাবি করুন। একটু খোঁজ নিয়ে জানুন এদের কে কী করেন আর সরকারের উন্নতিতে তাদের কী লাভ বা ক্ষতি হচ্ছে।

• রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের বিরোধিতা করে যারা লিখছেন= জনস্বার্থে, জীব ও বৃক্ষপ্রেমে, বিনা পারিশ্রমিকে স্বতঃস্ফুর্তভাবে লিখছেন।

এই পাবলিক পারসেপশন যখন সাফল্যের সঙ্গে একবার তৈরি করা যায় (সে যেভাবেই হোক), তখন লড়াইটা আর লেভেল-প্লেইং ফিল্ডে থাকে না। চার পর্বের এই "রামপাল অভিযোগনামা" একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা এই ভ্রান্ত পাবলিক পারসেপশন সৃষ্টিতে বাধা দিতেই।

চারটি পর্বে বিভিন্ন সময়ে বহুলপ্রচারিত বিভিন্ন কুতর্ক-কুযুক্তি খণ্ডনের মাধ্যমে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনকে প্রশ্নাতীত করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল অতিরঞ্জন, কুযুক্তির বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ওগুলোর কারণে সৃষ্ট দ্বিধা দূর করার। আমরা মনে করি যা সত্য তার উপর ভিত্তি করে দায়িত্ব নিয়ে সঠিক মানুষ সঠিক সিদ্ধান্তটা নিক। অকারণে কেউ এসব নিয়ে জল ঘোলা করে তারপর সেই ঘোলা জলে মাছ শিকারের সুযোগ যেন না পায়।

ঘোলা জলে মাছ শিকারের প্রসঙ্গ যখন এলই, এটার একটু ব্যাখ্যা দিই। ব্যক্তিগতভাবে কথায় কথায় ষড়যন্ত্র-ত্বত্বের ব্যবহারে আমাদের ভীষণ আপত্তি। এর প্রধান কারণ হল, ষড়যন্ত্র জিনিসটা শুনতে যত কমন কার্যত তত নয়। আর সফলভাবে এটা ঘটানোও খুব সোজা নয়।

তাছাড়া এই জিনিসটায় অনেকগুলো পক্ষ থাকা জরুরি যাদের মধ্যে সিনার্জি সৃষ্টিটা সচরাচর দৈবক্রমেই ঘটে। এই পক্ষগুলির মধ্যে এমন একটি পক্ষ থাকতেই হয় যারা মূল অর্জনের একটি বড় রকমের বেনিফিশিয়ারি, কিন্তু কোনো ফিজিক্যাল ইনভলভমেন্ট ছাড়াই শুধু অর্থায়ন করে।

তাছাড়া বড় রকমের অর্থায়ন ছাড়া কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হয় না। অবশ্য আরও বিভিন্ন পক্ষ থাকে যাদের বিভিন্ন মাত্রার ইনভলভমেন্ট থাকে এবং বিভিন্ন মাত্রায় অর্জনের সুবাতাস লাভের সুযোগ থাকে।

বৈশ্বিক বিচারে রামপালের নির্মিতব্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো ক্ষুদ্র একটি প্রজেক্টের বিরোধিতা করতে এ রকম ধরাছোঁয়ার বাইরে অর্থায়নকারী কোনো পক্ষ আসবে কোথা থেকে? এমন কোনো আশংকা আছে কি?

আসবে কিনা জানি না। কোনো তথ্য নেই সে দাবি করার। তবে আশংকা উড়িয়ে দিতে পারছি না। পারছি না এ কারণেই যে পরিবেশরক্ষার অজুহাতে বিশাল বিশাল ফান্ড নিয়ে কিছু কিছু ক্ষমতাবান গ্রিন মুভমেন্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট NGO যে পরিবেশরক্ষার নামে পরিবেশ-মাফিয়ার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে আছেন, তা অনেকেই আমরা কম-বেশি জানি।

এদের অর্থায়নে পরিবেশ-সচেতনতার দোহাই দিয়ে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের বিদ্যুতের জন্য নাভিশ্বাস ওঠা একটি দেশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে পিছিয়ে আনানোটা উন্নত বিশ্বের জন্য বিরাট একটা চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের সুযোগ আছে। আর কে না জানে যে এসব মাফিয়াদের ফান্ড কালেকশনের প্রধান অস্ত্রই হল চাপ সৃষ্টি এবং তা প্রয়োগ। "যত চাপ তত টাকা বলে গেছে NGO কাকা"।

আমরা বলছি না এ রকমই হয়েছে বা হচ্ছে। তা বলার মতো কোনো তথ্যপ্রমাণও হাতে নেই। তবে এ রকম হতে যে পারে সেটা কিন্তু ঠিক। আর তা যদি হয়, সেটার জন্য ক্ষতির সম্মুখীন হবে এদেশের মানুষ। আমরা চাই, অন্যের লালসার স্বার্থের শিকার যেন আমরা না হই।

শেষে এসে আবার বলতে চাই, নানান দিক বিচারে এখন পর্যন্ত এমন কোনো অনিয়ম বা আশঙ্কা চোখে পড়েনি যার ভিত্তিতে বলতে পারি রামপালে একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে তা পরিবেশের উপর মিটিগেশন নেই এমন প্রভাব ফেলবে এবং বিশেষ করে সুন্দরবনকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবে। যে মিথটা তৈরি করা হয়েছে যে হয় রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র অথবা সুন্দরবন, দুটোর একটাকে বেছে নিতে হবে– ব্যাপারটি মোটেই এ রকম মিউচুয়ালি এক্সক্লুসিভ কোনো ব্যাপার নয়।

রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরেও সুন্দরবন শঙ্কামুক্ত থাকবে বলেই এখনও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই চার পর্বে দেওয়া যুক্তি, উপাত্ত ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা সে বিশ্বাস আর প্রফেশনাল নলেজের উপরই ভিত্তি করে লেখা।

তবে হ্যাঁ, যেহেতু এত বড় প্রজেক্ট ও পুরো ব্যাপারটিতে জনমনে ভীষণভাবে শঙ্কা ছড়িয়েছে, তাই মানুষের মনের আশঙ্কা দূর করার জন্যে হলেও Design, Construction আর Start-up, এ তিন স্তরে তিনটি আলাদা আলাদা মনিটরিং টিম নিয়োগের জোর দাবি জানাচ্ছি আবারও– যেমনটা দাবি করেছিলাম অক্টোবরের ৮ তারিখে প্রকাশিত অপ-এড "রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ব্যাপারে আমার মতামত ও সাজেশন" এ।

আরেকটা কথা বলে বিদায় নিব। অনেক আগে রোম সাম্রাজ্য ধ্বংস হয়েছিল লেড পয়জনিং-এর কারণে। আজকে এই ইন্টারনেটের যুগে বিভিন্ন ধরনের তথ্যের যে সরবরাহ ও তাকে বিভিন্নভাবে উপস্থাপনের যে টেকনোলজিক্যাল সুবিধা, তাতে করে তথ্যের উৎস সম্পর্কে বুঝেশুনে তা গ্রহণ না করলে বাংলাদেশের একটি বিরাট আশংকা আছে 'তথ্যপ্রযুক্তি' পয়জনিং-এর কবলে পড়ার।

সজাগ থাকুন। সচেতন থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।

ড. আঞ্জুমান ইসলাম: পানি পরিশোধন ও পরিবেশ প্রকৌশলী।

কাজী আহমেদ পারভেজ: শিক্ষক, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি।