ব্রিঙ্কম্যানশিপ বা লেজেগোবরে

মোজাম্মেল হোসেনমোজাম্মেল হোসেন
Published : 22 Sept 2013, 07:57 AM
Updated : 22 Sept 2013, 07:57 AM

নবম জাতীয় সংসদের যে ১৯তম অধিবেশন বৃহষ্পতিবার ১২ সেপ্টেম্বর শুরু হয়েছে তা শেষ অধিবেশন হতে পারে যদি সংবিধান মোতাবেক আগামী ২৫ জানুয়ারির (২০১৪) মধ্যে পরবর্তী নির্বাচন হয়। এই 'যদি'টি অনেক বড়। নির্বাচনকালে কী ধরনের সরকারব্যবস্থা থাকবে তা নিয়ে দুই বছর ধরে ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলের মধ্যে যে দ্বন্দ্বসংঘাত চলছে তা না মিটলে নির্বাচন কখন কীভাবে হবে তা অনিশ্চিত। এর সঙ্গেই আরও বড় অনিশ্চয়তায় জড়িয়ে আছে দেশের ভবিষ্যৎ শান্তি-স্থিতিশীলতা।

গত এক মাসে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন, মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন কেরি, ঢাকা সফরকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদল, ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত লী জুন প্রমুখ সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছে সকল দলের অংশগ্রহণমূলক অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়েছেন। মনে পড়ছে সেই ২০১১ সালেই ঢাকা সফরের সময় ব্রিটিশ উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান এমন কথা বলেছিলেন। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও আমাদের উন্নয়ন-সহযোগী বন্ধুদেশগুলো বরাবর এই তাগিদ দিয়ে আসছে।

আমাদের নিজেদের নির্বাচনের মতো নিয়মিত একটি বিষয় নিয়ে বিদেশিদের এমন কথাবার্তা আমাদের জন্য মর্যাদাকর নয় বরং লজ্জার। আমাদের রাজনৈতিক নেতারাই বিশ বছর ধরে জাতিকে এই লজ্জার মধ্যে রেখেছেন। বিদেশিদের বলতে হবে কেন? আমরা আপামর জনগণ কি চাইছি না দুই পক্ষ সংলাপে বসে সমঝোতায় এসে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করুক যাতে সব দল অংশ নেবে এবং ভোটাররা শান্তিপূর্ণভাবে অবাধে ভোট দেবে? নেতারা জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে সম্মান করছেন না।

আবার বর্তমান বিশ্বে একটি দেশের ভেতরের জটিলতা নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভাবিত হওয়া, সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া অস্বাভাবিক নয়। মহাসচিবের ভূমিকা এই ইঙ্গিত দেয় যে, বিশ্বসভায় বাংলাদেশের গুরুত্ব বেড়েছে। জাতিসংঘের দিক থেকে বাংলাদেশের গুরুত্বের বড় ক্ষেত্র যে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রম তা একটি জানা বিষয়। এদেশে সামরিক বাহিনীকে রাজনৈতিক ভূমিকায় তারা দেখতে চায় না।

তৈরি পোশাকের বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের অবস্থানের কারণে ইউরোপ-আমেরিকায় আমাদের ভিন্ন গুরুত্ব রয়েছে। বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় সামিল দেশ যা পশ্চিমাদের কাছে একটি প্রতিশ্রুতিশীল বাজার। এখানে অস্থিতিশীলতা তাদের স্বার্থের অনুকূল নয়। আমাদের রাজনৈতিক উপরিকাঠামো ও নেতৃত্ব যদি অর্থনেতিক সম্ভাবনা বিনষ্ট করে তবে এই রাজনৈতিক নেতৃত্বকেই সরে যেতে হবে। প্রয়োজনের তাগিদে একসময় দেশের ভেতরেই নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠবে, প্রয়োজনীয় মাত্রায় বিদেশি হস্তক্ষেপও হতে পারে।

আবার বিশ্বশক্তিগুলি যে সবসময় 'ভালো মানুষ' তা নয়। সাম্রাজ্যবাদী বৈশ্বিক স্বার্থে তারা আমাদের ওপর চাপ দেবে। বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক অবস্থানে গভীর সমুদ্রবন্দরের মতো কিছু বিষয় নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও আমাদের নীতি সমান্তরালে চলবে না। আমাদের জাতীয় স্বার্থ আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। প্রকৃত জাতীয়তাবাদী সরকারই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করে। আমরা স্মরণ করতে পারি যে, বর্তমান শতাব্দীর সূচনাকালে বিএনপি পাইপলাইনে গ্যাস রপ্তানির পক্ষে ছিল, আওয়ামী লীগ বিরুদ্ধে ছিল।

বিদেশিদের আহ্বানের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া কখনওই বলেননি যে তাঁরা সংলাপ চান না। কিন্তু বাস্তব এই যে, সময় দ্রুত বয়ে যাচ্ছে, সংলাপ হচ্ছে না। উভয়পক্ষ নানা কথা বলে পরিস্থিতিকে বিভ্রান্তিকর করে রাখছেন। সরকার সংলাপের উদ্যোগ নিচ্ছে না। সরকার সংসদে প্রস্তাব নিয়ে আসতে বললেও বিরোধী দল আসছে না।

ইতোমধ্যে উভয় পক্ষ যেভাবে সভা-সমাবেশের মাধ্যমে নিজ নিজ পক্ষে গণজমায়েত ও প্রচারযুদ্ধে নেমেছে তাতে সংলাপের পরিবেশ আরও ক্ষুণ্ন হওয়া ও রেষারেষি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সংসদের কার্যকর মেয়াদ অর্থাৎ নিয়মিত অধিবেশনে বসার যোগ্যতাসম্পন্ন সংসদ আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ আছে বলে ২৪ অক্টোবরের পরে এক ভিন্ন মনস্তাত্বিক পরিবেশ দেশে তৈরি হবে।

সরকারি প্রশাসনে সম্ভাব্য শৈথিল্য তার একটি প্রধান দিক। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মাথাচাড়া দিতে পারে। এমন হতে পারে যে, সমাধানের সম্ভাবনা ও সুযোগ দুই নেত্রীর হাতে থাকা সত্ত্বেও তা হল না, পরিস্থিতি দুই নেত্রীর তথা রাজনৈতিক নেতৃত্বের হাতছাড়া হয়ে গেল, অরাজনৈতিক বা অনির্বাচিত ব্যক্তিবর্গ ক্ষমতার রাশ ধরলেন। অর্থাৎ যা ঠেকানোর কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই বেশি বলছেন, সেটাই ঘটে গেল।

ইংরেজিতে 'ব্রিঙ্কম্যানশিপ' বলে একটি শব্দে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক ও বিশেষত কূটনৈতিক লড়াইয়ের একটি বিশেষ কৌশল ব্যক্ত করা হয়। 'ব্রিঙ্ক' মানে কিনারা বা তীর বা শেষ প্রান্ত। এ কৌশলে জেতার জন্য বা একে অন্যের ওপর বাজিমাত করার জন্য সময়ক্ষেপণ ও গরম গরম কথা বলে দ্বন্দ্বাত্মক পরিস্থিতিকে ঠেলে বিপর্যয়ের কিনারায় নিয়ে যাওয়া হয়।

সাধারণত পরিকল্পিতভাবেই আগ্রাসী পক্ষ শেষ মুহূর্তে বিপর্যয় এড়িয়ে ছাড় দিয়ে সরে এসে প্রতিপক্ষকে অপ্রস্তুত রেখে নিজের বিজয় সংহত করতে চায়। এই কৌশলে উভয়ের জন্যই বিপর্যয় ঘটতে পারে; এক পক্ষের জয়ের সম্ভাবনা খুব কম; ক্ষয়ক্ষতির পর উভয়পক্ষই রণে ভঙ্গ দিতে পারে।

মার্কিন ও সোভিয়েত শিবিরে বিভক্ত বিশ্বে 'স্নায়ুযুদ্ধ' বা 'ঠাণ্ডা লড়াইয়ের যুগে' শব্দটি ব্যবহার করেন মার্কিন প্রেসিডেণ্ট আইজেন হাওয়ারের পররাষ্ট্র সচিব জন ফস্টার ডালেস। এই কৌশলের বড় দৃষ্টান্ত তৈরি হয় সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী নিকিতা ক্রুশ্চেভ ও মার্কিন প্রেসিডেণ্ট জন এফ কেনেডির দ্বন্দ্বে। কিউবায় আত্মরক্ষামূলক সোভিয়েত মিসাইল বসানোর বিরুদ্ধে মার্কিন পারমানবিক রণতরী পাঠানোর হুমকি-ধমকিতে গোটা বিশ্বই পারমাণবিক যুদ্ধের বিপর্যয়ের কিনারে এসে পড়েছিল। বিস্তর উত্তাপ সঞ্চারের পর আমেরিকা কিউবা আক্রমণ করবে না কড়াল করলে মস্কো মিসাইল তুলে আনে।

স্নায়ুযুদ্ধের কালে পারমাণবিক ব্ল্যাকমেইল ও ব্রিঙ্কম্যানশিপ ছিল দুই পরাশক্তির অন্যতম কূটনৈতিক কৌশল যার প্রয়োগ বিশ্বকে একাধিকবার পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে নিয়ে গেছে। সে রকম যুদ্ধ হলে কোনো এক পক্ষের জয়লাভ ঘটত না, উভয়ের পরাজয় তথা দুই পরাশক্তিরই বিনাশ ও বিশ্বসভ্যতার ধ্বংস ছিল নিশ্চিত।

আমাদের নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান রাজনীতিতে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের পক্ষে দুই নেত্রী কৌশলগতভাবে যুদ্ধংদেহী হয়ে আছেন, কিন্তু বিরোধের যে মূল ইস্যু নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা সে-প্রশ্নে তারা একেবারে অনমনীয় নন এবং সমঝোতাপূর্ণ সমাধান অসম্ভবও নয়। বিভিন্ন ফর্মূলা যেমন আলোচনায় আছে তেমনি অবিরাম রণহুঙ্কারের আড়ালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতাদের মধ্যে কথাবার্তা হচ্ছে বলেও তাঁরা স্বীকার করেন।

সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পুনর্বহালের দাবি থেকে বিএনপি স্পষ্টত পিছিয়ে গেছে। তারা অন্তর্বর্তী একটি নির্দলীয় প্রশাসনে সম্মত হওয়ার ইঙ্গিত কিছুদিন আগেই দিয়েছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে আলোচনার ইচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন। সরকারপক্ষ সংবিধানের আওতায় থেকেই অন্তর্বর্তী সরকারে সম্মত।

অর্থাৎ উভয়ের ব্যবধান কমে গিয়ে এখানে এসে ঠেকেছে যে, অনির্বাচিত ব্যক্তিদের দ্বারা সরকার চালানো যাবে না, এটা সংবিধানের বিধান; এটা বিএনপিকে মানতে হবে। আর একান্ত আওয়ামী লীগের পরিবর্তে নির্বাচনকালে নির্দলীয় বা বহুদলীয় সরকার থাকবে, এর উপায় বের করে আওয়ামী লীগকে তা মানতে হবে।

তিন মাসের জন্য কয়েকজন 'নির্দলীয় নির্বাচিত' ব্যক্তির একটি সরকার গঠন অসম্ভব নয়। এমনকি গুরুত্বপূর্ণ গুটিকতক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তেমন ব্যক্তিদের হাতে দিয়ে তাদের বর্তমান সংসদের সরকারি ও বিরোধী দলীয় সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি ক্ষুদে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে সমাধান হতে পারে। ওই সদস্যরা অবশ্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে মহান দায়িত্বটি পালন করবেন। সরকারপ্রধানের পদটি নিয়ে একমত হওয়া কঠিন হতে পারে, তবে রাজনীতি মানেই হল উভয় পক্ষ থেকে ছাড় দিয়ে মীমাংসায় আসতে হবে।

মীমাংসায় আসতে না পারার আশু পরিণতি মোটা দাগে তিনটি বিকল্প।

এক. বিএনপি জোর আন্দোলন করে তত্ত্বাবধায়কের দাবি মানতে বাধ্য করবে বা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করবে। তাদের এতদিনের আন্দোলন দেখে বলা চলে, এটা সম্ভব নয়। ব্যাপক জনগণের অতি গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থের দাবি এটা নয় যে প্রকৃত গণআন্দোলন হবে।

দুই. বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলে ক্ষমতাসীনরা একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে। বিএনপি প্রতিহত করার কথা বললেও এমন নির্বাচন সম্ভব, যেমন হয়েছিল ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি। তবে ওই নির্বাচনের জাতীয়-আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না এবং লেজিটিমেসির অভাবে সরকার বেশিদিন টিকবে না।

তিন. আন্দোলন ও তা দমন করার তীব্র দ্বন্দ্ব-সংঘাতে অরাজকতার পটভূমিতে রাজনীতিবিদরা নিয়ন্ত্রণ হারাবেন ও অরাজনৈতিক শক্তি ক্ষমতায় আসবে। ভবিষ্যতে নির্বাচন হবে কত বছর পরে তা অনিশ্চিত। দীর্ঘদিনের জন্য শাসনব্যবস্থা অগণতান্ত্রিক রূপও নিতে পারে। ধর্মান্ধ মৌলবাদের শক্তিবৃদ্ধির আশঙ্কা আছে।

দুই দলের নেতাদের দুটো অভিজ্ঞতাই আছে। এক. ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচন করে খালেদা কয়েক সপ্তাহের বেশি টিকতে পারেননি। দুই. ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের পটভূমিতে সেনাসমর্থিত অরাজনৈতিক সরকার আসে। দুই নেত্রীকেই জেলে যেতে হয়।

বাংলা প্রবাদে আছে, ন্যাড়া বেলতলায় ক'বার যায়! তাই এবার হয় সমঝোতা, না-হয় পারস্পরিক ধ্বংস তথা গণতন্ত্র ধ্বংস।

সমঝোতায় দুই নেত্রী বিলম্ব করছেন কেন? এই ব্রিঙ্কম্যানশিপ নীতি তাদের কাকে কী সুবিধা দেবে?

খালেদা জিয়া সংলাপে বসার কথা বলেন, কিন্তু হঠাৎ হঠাৎ আলটিমেটাম দেন এবং কখনওই সংসদে আলোচনা তুলতে রাজি হন না। তিনি যখন গোঁ ধরেন যে সরকারি দলকেই সংসদে বিল এনে তাদের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সংবিধানের সংশোধনী পাশ করিয়ে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনর্বহাল করতে হবে, তখন মনে হয় তিনি একটি ঐতিহাসিক বদলা নিতে চান।

১৯৯৬ সালে তাঁর একতরফা নির্বাচনের ফসল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার পার্লামেণ্টে বিএনপি আওয়ামী লীগের দাবি মেনে তত্ত্বাবধায়ক সংবলিত ত্রয়োদশ সংশোধনী বিল এনে পাশ করতে বাধ্য হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সে সংসদে ছিল না। খালেদা শোধ তুলতে চান একই কাজ হাসিনাকে দিয়ে করিয়ে। কিন্তু এটা বাস্তবে সম্ভব নয় এবং রাজনীতিতে প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাব অত্যন্ত গর্হিত।

শেখ হাসিনার মনোভাবকে অনেকে 'জেদ' বলে অভিহিত করেন। রাজনীতিতে মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সংকল্প বা প্রতিজ্ঞা ও দৃঢ়তা বরণীয় বিষয়, কিন্তু জেদ অপাংক্তেয়, নিন্দিত ও বর্জনীয়। লক্ষ্যে অবিচল, কৌশলে নমনীয় থাকাই রাজনীতিতে সঠিক। আওয়ামী লীগের নেতারা আলাপচারিতায় বলেন, তারা একতরফা নির্বাচন করবেন না, বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে আসবে। শেখ হাসিনা শেষ মুহূর্তে একটি সমাধান ছুঁড়ে দেবেন যা গ্রহণ না করে বিএনপির উপায় থাকবে না।

১৯৯৪-৯৬ সালে খালেদা জিয়া তত্ত্বাবধায়কের দাবি মানতে চাননি। অনেক জেদাজেদি রক্তারক্তির পর মানতে হয়েছে। ২০০৬ সালেও রাজপথের অনেক সংঘর্ষ ও রক্তপাতের পর পরিস্থিতি লেজেগোবরে করে দুই বছর বিলম্বে নির্বাচন হয়েছে।

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত খেলানোর ব্রিঙ্কম্যানশিপ শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনাকে কোনো সুবিধা দিল না– তার জন্য এই বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। অন্যদিকে এখন কোনো প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে না এসে শুধু আন্দোলন-আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে শেষে অপ্রস্তুত অবস্থায় দৌড়ে নির্বাচনের ট্রেন ধরতে হতে পারে। তাই সমাধানটি আগে-ভাগেই হওয়া ভালো।

নির্বাচন তো শুধু লেজেগোবরে পরিস্থিতিতে যে কোনো এক দলের ক্ষমতায় যাওয়া নয়। নির্বাচনের রাজনৈতিক এজেন্ডাকে ভোটারদের কাছে নিতে হবে। কোন দলের প্রতিশ্রুতি কী, এবার কোন দলকে ভোট দিলে দেশের মঙ্গল তা ভাববার, বিচার করবার সময়-সুযোগ ভোটারদের দিতে হবে।

শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দ্বন্দ্ব-সংঘাত টেনে নেওয়ার ফলে নির্বাচনের এই গুণগত দিকটি ভীষণ ব্যাহত হবে।

মোজাম্মেল হোসেন : সাংবাদিক, কলামিস্ট।