মিথ্যা বলার অধিকার

মুহম্মদ জাফর ইকবালমুহম্মদ জাফর ইকবাল
Published : 15 August 2013, 05:39 PM
Updated : 15 August 2013, 05:39 PM

গত কিছুদিনে আমি একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। একটি দেশের মানুষের যেরকম খাদ্য, বাসস্থান এবং শিক্ষার অধিকার থাকে, আমাদের দেশে তার সাথে একটা নতুন বিষয় যোগ হতে যাচ্ছে, সেটা হচ্ছে মিথ্যা কথা বলার অধিকার। এই দেশের মানুষ যেন চাইলেই মিথ্যা কথা বলতে পারে এবং সেই মিথ্যা কথা বলার জন্যে দেশে অন্য কারো যত বড় সর্বনাশই হোক না কেন যিনি মিথ্যা কথা বলছেন তিনি যেন নিরাপদে মিথ্যা বলতে পারেন সে জন্যে এই দেশের পত্রপত্রিকা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান জ্ঞানী গুণী মানুষজন সবাই একত্র হয়ে গেছেন। কেউ যেন মনে না করে আমি বাড়িয়ে বাড়িয়ে বলছি সে জন্যে আমি জলজ্যান্ত কয়েকটি উদাহরণ দিই।

ব্যাপারটা শুরু হয়েছে আমার নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা ঘটনা থেকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা নিয়োগ নিয়ে এই দেশের একটা গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় একদিন একটা খবর ছাপা হল। সংবাদটি মিথ্যা– এটাকে মিথ্যা বলা হবে না কি অসত্য বলতে হবে নাকি অর্ধসত্য বলা হবে সেসব নিয়ে তর্ক করা যেতে পারে। আমি সেই তর্কে যাচ্ছি না। যেখানে সঠিক তথ্য রয়েছে সেখানে সেই তথ্যটাকে আড়ালে রেখে অন্য কিছু ইচ্ছে করে বলা হলে আমি সেটাকে মিথ্যা বলে বিবেচনা করি। যাই হোক সেই মিথ্যা সংবাদটির কারণে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কিছু অধ্যাপকের চরিত্রে মিথ্যা গ্লানি স্পর্শ করল; তারা খুব আহত হলেন। ঘটনাক্রমে সেই সাংবাদিক আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে কোনো ছাত্র শৃঙ্খলাভঙ্গ করলে তাকে তাৎক্ষণিকভাবে শাস্তি দেয়ার নিয়ম আছে, পরে পুরো তদন্ত করে অপরাধ বিষয়ে নিশ্চিত হতে হয়। কাজেই সেই ছাত্রটির মিথ্যা সংবাদ পরিবেশনের প্রাথমিক তদন্ত করে তাকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে একটা তদন্ত কমিটি করে দেয়া হল এবং আমি সেই তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক। আমি বিষয়টি জোর দিয়ে লিখতে পারছি কারণ তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমি খুঁটিনাটি সবকিছু জানি। ছাত্রদের শাস্তি দেয়ার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিজস্ব কিছু অলিখিত নিয়ম আছে, কমবয়সী ছেলেমেয়েরা দোষ স্বীকার করে ক্ষমা চাইলে সবসময়েই তাদের শাস্তি কমিয়ে দেয়া হয়, সব সময়েই চেষ্টা করা হয় তাদের লেখাপড়ার যেন ক্ষতি না হয়। (একেবারে খুন ধর্ষণ করে পলাতক হয়ে গেলে অন্য কথা- তখন অপরাধটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়, দেশের আইনের) আমি তদন্ত করতে গিয়ে অত্যন্ত বিচিত্র একটি বিষয় আবিষ্কার করলাম, ছাত্র সাংবাদিকটিকে সেই সংবাদপত্র পুরোপুরিভাবে নিরাপত্তা দিয়ে গেল, সে কারণে তার ঔদ্ধত্য হল সীমাহীন, শুধু তাই নয় একদিন আবিষ্কার করলাম হাইকোর্টে রিট করে তিন মাসের একটি স্থগিতাদেশ পর্যন্ত বের করে ফেলল। পুরো ঘটনার ফলাফল হল ভয়ানক, বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র জানতে পারল কিছু মানুষের চরিত্র হনন করার জন্যে সে ইচ্ছা করলেই একটা পত্রিকায় মিথ্যা সংবাদ ছাপাতে পারে এবং সেই পত্রিকা তাকে রক্ষা করবে। আমাদের দেশে একটা পত্রিকা অনেক সময় রাজনৈতিক দল, পুলিশ, র‌্যাব এমনকি, সরকার থেকেও বেশী ক্ষমতাশালী। এই ঘটনাটি আমার চোখ খুলে দিয়েছে, দেশের একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকায় (আমার ব্যক্তিগত যোগাযোগের পরও) যদি এরকম একটা ঘটনা ঘটতে পারে তাহলে নিশ্চয়ই অন্যান্য পত্রিকায় অসংখ্যবার এই ঘটনা ঘটেছে। আমার একটা বড় ক্ষতি হয়েছে, খবরের কাগজে কিছু লেখা হলে আমি আজকাল ভুরু কুঁচকে সেটার দিকে তাকিয়ে থেকে নিজেকে জিজ্ঞেস করি, আসলেই কী এটা ঘটেছে? পত্রিকাটি কি সত্যি কথা বলছে?

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় নিয়ে কিছু ব্লগার তরুণ শাহবাগে একত্র হয়ে এই দেশে একটা অভাবিত আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল। সেই তরুণদেরকে হেয় করার জন্যে ঢালাওভাবে তাদের সবাইকে নাস্তিক ঘোষণা করে একটা প্রচারণা শুরু করা হল, সেই প্রচারণাটি শুরু করল "আমার দেশ" নামের পত্রিকা। আমি লিখে দিতে পারি তারা নিজেরাও বিশ্বাস করে না যারাই ব্লগার কিংবা যারাই যুদ্ধাপরাধীর শাস্তি চেয়ে শাহবাগে গিয়েছে তারা সবাই নাস্তিক। কিন্তু বিষয়টা সেভাবেই উপস্থাপন করা হল: ব্লগার মানেই নাস্তিক, শাহবাগে যুদ্ধাপরাধের বিচার চাওয়া তরুণ মানেই নাস্তিক। "আমার দেশ" পত্রিকায় ব্লগারদের সাথে আমার ছবি ছাপা হল, যেভাবে সেই ছবিটি উপস্থাপন করা হল তাতে কি আমার নিজের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর পাঠকেরা মে মাসের পাঁচ তারিখ ভোরে আমার কাছে লেখা একটা এস. এম. এস থেকে পেয়ে যাবেন:
"এই নাস্তিক জাফর ইকবাল, তোদের মৃত্যুর ঘন্টা বাজছে। হতে পারে আজ রাতই তোদের শেষ রাত। কাল হয়তো তোরা আর পৃথিবীতে থাকতে পারবি না কারণ এই জমানার শ্রেষ্ঠ শায়খুল হাদিস আল্লামা আহম্মদ শফির ডাকে সারা বাংলাদেশের তৌহিদি জনতা মাঠে নেমে এসেছে। সেইসব তৌহিদি জনতা প্রধান-মন্ত্রীসহ তোদের সব ধরে ধরে জবাই করে ছাড়বে। আমার আল্লাহকে নিয়ে, বিশ্বনবীকে নিয়ে কটুক্তি করার ভয়ংকর পরিণাম কী তা আগামী কালকেই হাড়ে হাড়ে টের পাবি তোরা।"

"আমার দেশ" স্বাধীন নিরপেক্ষ মত প্রকাশের একটা পত্রিকা না, এটা স্বাধীনতা বিরোধীদের একটা নির্দিষ্ট বিশ্বাসকে প্ররোচিত করার পত্রিকা। তাদের প্ররোচনার কারণে এই দেশে অনেক মানুষের জীবন বিপন্ন হয়েছে। কাজেই এই পত্রিকাটির সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে তার দায়দায়িত্ব নিতে হবে। তাকে যদি ভয়ংকর মিথ্যা প্ররোচনার জন্যে আইনের আওতায় আনা হয় আমাদের মত মানুষেরা তখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। আমি আমার নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারিনি যখন দেখেছি এই দেশের পনেরোটি পত্রিকার সম্পাদক তাকে রক্ষা করার জন্যে এগিয়ে গিয়েছেন। এর অর্থটি কী দাঁড়াল? এই পত্রিকাটি যা খুশী লিখতে পারবে, দেশের মানুষের প্রাণ বিপন্ন করে এরকম মিথ্যা প্ররোচনা করতে পারবে, কিন্তু কেউ তাকে স্পর্শ করতে পারবে না।

আমার মনে আছে সামরিক আর বেসামরিক মিলিয়ে ২০০৭-৮ সালের হাইব্রিড তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল। আমরা, বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা, তখন অস্থির হয়ে নানাভাবে পত্রপত্রিকায় লেখালেখি করার চেষ্টা করেছিলাম, কোনো পত্রপত্রিকা তখন সেই লেখালেখি ছাপানোর সাহস করেনি। রিমান্ডে নেয়া সেই শিক্ষকেরা কোনোদিন জানতেও পারেননি এই দেশের কতো মানুষ তাদের জন্যে আকুল হয়েছিলেন। অনেক কষ্টে আমার দুই একটি লেখা শুধু কোনো পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছিল; সে জন্যে সেই শিক্ষকদের পরিবারের সদস্যদের আমার প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না। দুঃসময়ে টিকে থাকাটাই হচ্ছে বিজয়, টিকে থাকতে হলে মনের বল থাকতে হয়, আর সেই মনের বলটি আসে যখন সবাই জানতে পারে তারা একা নয়, তাদের পাশে অনেকে আছে। আমাদের দুর্ভাগ্য, সামরিক বেসামরিক হাইব্রিড সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এই দেশের অনেক পত্রপত্রিকা সেই সাহসটুকু দেখাতে পারেনি। তাই যখন দেখি সেই পত্রিকার সম্পাদকদের অনেকেই এখন 'আমার দেশ' নামক একটি ধর্মান্ধতা প্রচার যন্ত্রের সম্পাদকের পাশে এসে দাঁড়িয়ে গেছেন তখন আমি মনে কষ্ট পাই, শুভবুদ্ধির ওপর বিশ্বাস হারানোর আশংকা হয়। সত্য এবং মিথ্যার মাঝখানে নিরপেক্ষ থাকা যায় না। এই অত্যন্ত সহজ কথাটি কি বোঝার জন্যে খুব কঠিন?

বিগত বি.এন.পি জামায়াত আমলে যখন সারাদেশে একটা রুদ্ধশ্বাস অবস্থা, তখন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিবেশ ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। দলীয় শিক্ষকেরা নানা ধরনের তাণ্ডব করে বেড়াচ্ছেন, প্রায় ডি.এন.এ টেস্ট করে দেখা হচ্ছে রক্তের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রয়েছে কি না, যদি বিন্দুমাত্র চেতনা খুঁজে পাওয়া যায় তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। আমরা তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা সূতা পর্যন্ত নাড়াতে পারি না, কিছু করতে দেয়া হয় না, কোথাও যেতে দেয় হয় না। পাঁচ মহাদেশ থেকে পাঁচ শিক্ষাবিদকে জার্মানীর একটা অনুষ্ঠানে ডাকা হয়েছে, আমি তাদের একজন, আমাকে যাওয়ার অনুমতি দেয়া হলো না। আমি আবিষ্কার করলাম শিক্ষকেরা যখনই একত্র হচ্ছে তখনই কথাবার্তা আলোচনায় শুধু মাত্র ক্ষোভ আর হতাশা। ক্রোধ এবং যন্ত্রণা। একাত্তরে আমি একটা জিনিস শিখেছিলাম, সেটা হচ্ছে যুদ্ধের আসল অস্ত্র রাইফেল নয়, যুদ্ধের আসল অস্ত্র হচ্ছে মনোবল, তাই কখনো মনোবল হারাতে হয় না। সহকর্মীদের মনোবল ধরে রাখার জন্যে আমরা তখন অনেক কিছু করেছি। তার মাঝে সবচেয়ে মজার বিষয় ছিল আমাদের সান্ধ্যকালীন আড্ডা। বেশ কয়েকজন শিক্ষককে নিয়ে আমরা শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতি বিজ্ঞান প্রযুক্তি দর্শন–এরকম বিষয় নিয়ে আলোচনা করতাম। শ্বাসরুদ্ধকর একটা পরিস্থিতিতে যখন স্বাধীনতা বিরোধীদের এরকম রমরমা অবস্থা, তখন আমাদের এই পুরোপুরি বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনাগুলো ছিল খুব আনন্দের, মনোবল ধরে রাখার জন্যে অসাধারণ।

সন্ধেবেলা বসে তরুণ শিক্ষকদের সাথে বুদ্ধিভিত্তিক আলোচনার বিষয়টি আমি পরেও চালু রেখেছি, তাই নিয়মিতভাবে আমি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিশেষ করে তরুণ শিক্ষকদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করি। বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির বাইরে যে বিশাল একটা জগৎ আছে তারা আমাকে অনেক সময়েই তার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। কোনো একটা ছুটির পর শিক্ষকদের সাথে কথা বলছি, তখন হঠাৎ করে তাদের কাছ থেকে একটা বিচিত্র বিষয় জানতে পারলাম, তারা সবাই তাদের নিজেদের এলাকা থেকে ঘুরে এসেছে এবং সবাই বলছে যে তাদের এলাকার সাধারণ মানুষেরা জানে এবং বিশ্বাস করে মে মাসের পাঁচ তারিখ মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। অনেক বড় একটা মিথ্যা কথাকে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টা এমনি এমনি ঘটেনি, এর জন্যে কাজ করতে হয়েছে, পরিশ্রম করতে হয়েছে, অর্থব্যয় করতে হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে সেই তথ্য প্রচার করা হলেও সেদিন যে অসংখ্য কোরান শরীফ পোড়ানো হয়েছিল সেই তথ্যটি কিন্তু প্রচার করা হয়নি। রাতের আকাশে ইউ.এফ.ও দেখা গেছে কিংবা একটা ছাগল মানুষের গলায় কথা বলে– এরকম মিথ্যা প্রচারিত হলে ক্ষতি হয় না, কিন্তু রাতের অন্ধকারে গোপনে কয়েক হাজার মুসল্লীকে হত্যা করা হয়েছে, এরকম একটি ভয়ংকর মিথ্যা প্রচার করা হলে সবদিক দিয়ে ক্ষতি হয়।

কয়েক হাজার মুসল্লীকে হত্যা করা হয়েছে সেটি প্রচারিত হয়েছে গোপনে। প্রকাশ্যে সর্বশেষ যে প্রচারণাটি ছিল সেটি হচ্ছে ৬১ জনের, "অধিকার" নামে একটি সংগঠন সেটি দেশ-বিদেশে প্রচার করেছে। কয়েক হাজার থেকে সংখ্যাটি ৬১ তে নেমে এসেছে, তাই সরকারের খুশী হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সরকার খুশী হয়নি, তারা ৬১ জনের নাম জানতে চেয়েছে, আমিও জানতে চাইতাম। পৃথিবীর যে কোনো জায়গায় অভিযোগ করলে তার প্রমাণ থাকতে হয়। 'অধিকার' নামক সংগঠনটি নাম প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, কারণটি আমরা বুঝতে পারি, কারণ পুরো ঘটনাটি টেলিভিশনে দেখিয়েছে, সাংবাদিকেরা রিপোর্ট করেছে এবং কোথাও এত বড় একটি সংখ্যা কেউ দেখিনি। সরকার তখন মিথ্যা একটি তথ্য প্রচারের জন্যে 'অধিকার' নামক সংগঠনের সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে গ্রেপ্তার করেছে।

"আমার দেশ"-এর সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের পক্ষে যেরকম পনের জন সম্পাদক দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন, আদিলুর রহমান খানের পক্ষে এখন আরো বেশী মানুষ দাঁড়িয়ে গিয়েছেন। শুধু পত্রপত্রিকা নয়, বড় বড় মানবাধিকার সংগঠন, রাজনৈতিক দল, দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান, এমনকি, আমাদের দেশের বড় বড় জ্ঞানী গুণী মানুষ। 'অধিকার' সংগঠনটি যদি বলতো অনেক মানুষ মারা গেছে এবং তখন তাকে যদি গ্রেপ্তার করা হতো, সেটাকে বাকস্বাধীনতার বিরুদ্ধে বলা যেতো। কিন্তু যখন সংখ্যাটি অত্যন্ত নিখুঁত ৬১, তখন তাদেরকে এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া হবে সেটি মোটেও বিশ্বাসযোগ্য কিছু নয়, ২১ আগস্ট ঘটনার পর বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটির রিপোর্টের কথা কেউ কি ভুলে গেছে?

এই দেশের যে সকল সুধীজন মে মাসের ৫ তারিখে মতিঝিলের "গণহত্যার" একজন প্রবক্তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তাদের কাছে আমার শুধু ছোট একটি প্রশ্ন, তথ্যটি যদি মিথ্যা হয় তাহলেও কি আপনি তার পাশে এসে দাঁড়াবেন? বাকস্বাধীনতা চমৎকার বিষয়, আমি কয়েকজন সম্পাদকের বিরুদ্ধে কথা বলেছি, তারপরেও যদি এই লেখাটি সেই পত্রিকায় ছাপা হয় সেটি বাকস্বাধীনতা। কিন্তু একটা মিথ্যা তথ্য যদি একটা বিশেষ উদ্দেশ্যে প্রচার করা হয়, তখন সেই তথ্য প্রচার করার অধিকার বাকস্বাধীনতা নয়, তখন সেই অধিকার হচ্ছে মিথ্যা কথা বলার অধিকার।

এই দেশে এমনিতেই অনেক মিথ্যা কথা বলা হয়েছে, এখন কি আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাকে অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে দিতে হবে?

মুহম্মদ জাফর ইকবাল: অধ্যাপক, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।