জয়ের বক্তব্য: ষড়যন্ত্র না রাজনৈতিক আশাবাদ

শামসুজ্জামান খান
Published : 29 July 2013, 01:43 PM
Updated : 29 July 2013, 01:43 PM

সম্প্রতি যুবলীগের এক ইফতার পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজিব ওয়াজেদ জয়ের একটি বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ এবং অন্য কেউ কেউ তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতেও এটি একটি ব্যাপক আলাচিত বিষয় হয়ে উঠেছে।

২৩ জুলাই, ২০১৩ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে যুবলীগ আয়োজিত ইফতার-পূর্ব আলোচনাসভায় তিনি বলেন, "আমার কাছে তথ্য আছে আওয়ামী লীগ আগামীবার আবার ক্ষমতায় আসবে। বিএনপির মিথ্যা প্রচার মোকাবেলা করতেই হবে।"

আগামী ছয় মাস তরুণ ভোটারদের কাছে বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন, দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরারও আহ্বান জানান জয়।

এ বক্তব্য নিয়ে তোলপাড় তোলার মতো কোনো সারবত্তা আছে বলে আমাদের মনে হয় না। এটি একটি সাধারণ রাজনৈতিক বিবৃতি মাত্র। যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনের আগে নিশ্চিত জয়ের কথা খুব জোর দিয়েই বলে থকে। এটা বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে একটি অতিপরিচিত কৌশল মাত্র।

মাত্র মাস খানেকের মধ্যেই একযোগে দেশের চারটি সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন হয়ে গেল। আলোচিত এ্ নির্বাচনে সকল দলের প্রার্থীরাই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'নির্বাচনে আমিই জয়ী হব'। প্রতিটি কর্পোরেশনে জয়ী একজনই হয়েছেন। কিন্তু আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সবাই। এটা তো দোষের কিছুই নয়।

তাছাড়া এ ধরনের বক্তব্য তো বিএনপির নেতানেত্রীরা হরমহামেশাই দিয়ে আসছেন। আগামী সাধারণ নির্বাচনের এখনও মাস ছয়েক বাকি আছে। কিন্তু নির্বাচনি কৌশল হিসেবে বিএনপির নেতানেত্রীরা ইতোমধ্যেই নানা পর্যায়ে বলেছেন যে, আগামী নির্বাচনে তাদের দল বিপুল ভোটে জয়লাভ করবে। এমনকি তাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতারা এ কথাও বলেছেন যে, নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এমন অবস্থা হবে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালাতেও পথ পাবেন না!

এগুলো যদি ষড়যন্ত্রের অংশ না হয়ে থাকে, কারচুপির পরিকল্পনা না হয়, তাহলে জয়ের এ্ বক্তব্য নিয়ে এতটা হৈচৈ এবং এর মধ্যে কারচুপি বা ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজতে যাওয়ার কী কারণ থাকতে পারে? এটা আমাদের কাছে বোধগম্য নয় মোটেই। কোনো যুক্তিতেই আমরা জয়ের ওই বক্তব্য নিয়ে অতটা শোরগোলের কোনো কারণ দেখি না।

বিগত চারটি সিটি কর্পোরেশনে একযোগে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। এরপর গাজীপুরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এসব কারণে দেশে একটা গুঞ্জন আছে যে, আওয়ামী লীগ আগামী সাধারণ নির্বাচনে ভালো করতে পারবে না।

এই ধারণার কিছুটা প্রভাব আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মীদের ওপর কিছুটা পড়তে পারে। এটা খুব স্বাভাবিক। সে অবস্থায় আওয়ামী লীগে একজন নির্বাচন কৌশলবিদ হিসেবে পার্টির মরাল বুস্ট আপ করার জন্যও সজিব ওয়াজেদ জয় ওই বক্তব্যটি দিয়ে থাকতে পারেন। তাছাড়া তিনি নির্বাচনের কৌশল নির্ধারণের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত আছেন। সে জন্যই তার কাছে জরিপভিত্তিক তথ্য থাকতে পারে।

এই দুই বিবেচনার যে কোনো দিক থেকেই জয় এ কথা বলে থাকুন না কেন, একে রাজনৈতিক এবং নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে অভিজ্ঞ কোনো লোকই ষড়যন্ত্র বা কারচুপির বিষয় হিসেবে দেখবেন–এটা হতে পারে না। নিতান্তই যুক্তি ও বিচারবিবেচনাহীন ব্যক্তিরা এটা বলে থাকতে পারেন। অথবা এমনও হতে পারে নির্বাচনের পরিবেশ আরও জটিল করার জন্যই কিছু রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এসব কথা বলছেন বলে আমাদের মনে হয়।

এর সঙ্গে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার একটি লক্ষ্য থাকতে পারে। জনগণকে বিভ্রান্ত করার একটি কৌশলও হতে পারে এটা।

প্রসঙ্গক্রমে আমার একটি কথা মনে পড়ল। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় সেটা্। বিএনপির নির্বাচনি মুখপাত্র শামসুজ্জামান দুদু তারেকের দুর্নীতির সমালোচনা করা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের উদ্দেশে বলেন, ''সাবধান, তারেক রহমান ভবিষ্যতের প্রধানমন্ত্রী। তার সম্পর্কে এসব কথা বলবেন না।''

তাহলে এখন প্রশ্ন ওঠে, বিএনপি কি ধরেই নিযেছে যে, আগামী নির্বাচনে তারা ক্ষমতায় যাবে? তারা কি নিশ্চিত যে তখন তাদের প্রধানমন্ত্রী হবেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার জ্যেষ্ঠ সন্তান তারেক রহমান?

বিএনপি নেতারা যদি এতটাই নিশ্চিত হয়ে থাকেন, ভোটের আগেই যদি তারা জেনে গিয়ে থাকেন যে, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব তারেক রহমান দেশের 'ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী'— সেটা কি কোনো ষড়যন্ত্র বা চক্রান্তের অংশ নয়?

তা যদি না হয়— সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পুত্রকে ভবিষ্যত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণাতেও যদি কোনো ষড়যন্ত্র না থাকে— তাহলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের নির্বাচনি আশাবাদ নিয়ে রাজনীতির মাঠ গরম করে ফায়দা লোটার কৌশল খুব একটা কাজ দেবে বলে মনে হয় না।