যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্ক ও বাইডেনের সফর

Published : 24 July 2013, 08:04 AM
Updated : 24 July 2013, 08:04 AM

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ এমন কথা যেমন কেউই বলতে পারবেন না। তেমনি দুদেশের সম্পর্ক খুব উষ্ণ তাও নয়। ২০০৯ সালে ওবামা প্রশাসন ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে দুদেশের সম্পর্কে যে ধরনের উষ্ণতা ছিল তা যে এখন আর নেই সে কথা সবারই জানা।

জর্জ বুশের প্রশাসনের অধীনে ২০০৫ সালে বেসামরিক পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি যখন সম্পাদিত হয়েছিল তখনকার সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার মাত্রা মনে করলে এ কথা বলতেই হবে যে এখন আর সে অবস্থা নেই। শুধু তাই নয়, এ চুক্তি সত্বেও কার্যত পারমাণবিক সহযোগিতার বাণিজ্যিক দিকে যে অগ্রগতি হয় তার অন্যতম কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা না রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব সে নিয়েও বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।

এ ক্ষেত্রে বাস্তবায়নে বাধা হিসেবে যে প্রশ্নগুলো উঠেছে তা যুক্তরাষ্ট্রেই। ফলে ভারতীয় বিশ্লেষকদের মত হল, এটা ওবামা প্রশাসনের অনাগ্রহের ফল। গত মাসে ভারত সফরের সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেছেন যে সেপ্টেম্বরের ভেতরে এ বিষয়ে একটা ঐকমত্য হবে বলে তিনি আশা করেন।

গত কয়েক বছরে দুদেশই সম্পর্ক উন্নয়নের তাগিদ দিয়ে এলেও খুব বেশি অগ্রগতি হয়নি। এ প্রেক্ষাপটেই সবাই খুব গভীরভাবে লক্ষ্য রাখছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ভারত সফরের দিকে। সাধারণত কোনো ভাইস প্রেসিডেন্টের সফর গণমাধ্যম ও বিশ্লেষকদের মনোযোগ আকর্ষণ করে না, কেননা সেগুলো আনুষ্ঠানিকতার বাইরে খুব বেশি কিছু হয় না।

কিন্ত বাইডেনের সফর ব্যতিক্রম। প্রথমত, গত তিন দশকে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারত সফরে যাননি; দ্বিতীয়ত, গত মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির ভারত সফরে খুব বেশি সাফল্য আসেনি; তৃতীয়ত, মধ্যস্থতা করার ক্ষেত্রে বাইডেনের যে ধরনের সুনাম রয়েছে তার কূটনৈতিক ব্যবহার করে কিছু বিষয়ে তিনি ভারতের মন গলাতে পারবেন বলে অনেকের আশা; সবশেষ, ভারতে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে এটাই যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল ভারত সফর।

সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভায় যোগ দিতে এলে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রেসিডেন্ট ওবামার সঙ্গে বৈঠক করবেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সফর সে বৈঠকের একটা বড় ধরনের প্রস্ততি বলেও মনে করা যেতে পারে। তিনি দুদেশের সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারবেন এমন আশা কেউই করছেন না; কিন্ত যে সব বিষয়ে দুদেশের মতভিন্নতা রয়েছে সেগুলো কমিয়ে আনতে পারবেন এমন আশাবাদ রয়েছে অনেকের মনে।

যুক্ত্ররাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের মতভিন্নতা কী কী বিষয়ে? খুঁটিনাটি দিকগুলো বাদ দিলে, বড় আকারের পার্থক্যের ক্ষেত্রগুলোকে অর্থনীতি, বিশেষত বাণিজ্য; নিরাপত্তা, বিশেষত চীন ও আফগানিস্তান প্রশ্ন এবং যুক্তরাষ্ট্রে বিবেচনাধীন অভিবাসন আইন সংস্কারের কথা বলা যেতে পারে। এসব আলোচনার ওপর মেঘের মতো উপস্থিত হল পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি বাস্তবায়নের প্রশ্নটি।

বাণিজ্যের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন বিশেষত ব্যবসায়ীদের অভিযোগ হল ভারতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আইনি প্রতিবন্ধকতা অত্যন্ত বেশি। গত এক দশকে ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সম্পর্ক নাটকীয়ভাবেই বেড়েছে। গেল সাত বছরের তথ্যই তা বোঝার জন্য সহায়ক। ২০০৬ সালে যা ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলার, এখন তা ১০০ বিলিয়ন ডলারে এসে ঠেকেছে। ভারতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিযোগের পরিমাণই এখন ২৫ বিলিয়ন ডলার।

এ বৃদ্ধি সত্বেও যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে উন্মুক্ত বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতীয় আইনের বাধা অনেক বেশি। বীমা ও টেলিযোগাযোগ খাতে এ ধরনের বাধা বেশি বলেই তারা জোর দিয়ে বলে এসেছে। ভারতে অভ্যন্তরীণভাবে উৎপাদিত পণ্য কেনার ব্যাপারে যে সব আইন রয়েছে সেগুলো ভারতীয় ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের পছন্দ হলেও তাতে যুক্তরাষ্ট্রের যে আপত্তি রয়েছে সেটা যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলে এসেছে।

এর মধ্যে সম্প্রতি ভারত ঔষধ শিল্পের প্যাটেন্ট বিষয়ে যে সব পদক্ষেপ নিয়েছে সেগুলো নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হয়েছে, কেননা যুক্তরাষ্ট্র মনে করে এগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত রীতিনীতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এপ্রিল মাসে সুইজারল্যান্ডের ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নোভার্টিস তাদের ক্যান্সারের ওষুধের প্যাটেন্ট বিষয়ে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের এক মামলায় পরাজিত হওয়ার ফলে এ অভিযোগ জোরদার হয়েছে যে ভারতের সরকার ইনটেলেকচুয়াল প্রপার্টি রক্ষার ক্ষেত্রে তার করণীয় কাজটি করছে না।

এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা অনেক দিন ধরেই দেশের আইনপ্রণেতাদের কাছে লবি করে আসছিলেন; এখন তা আরও জোরদার হয়েছে। ভারত সরকার এ বিষয়ে সবসময়ই কঠোর অবস্থান নিয়েছে। তারপরও বিশ্বজুড়ে অর্থনীতির শ্লথগতির মুখে ভারতীয় বাজার যুক্তরাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত বলে তারা ভারতে আরও বেশি বিনিয়োগে এবং ভারতের সঙ্গে আরও বেশি অর্থনৈতিকভাবে যুক্ত হতে আগ্রহী।

আগে এ বিষয়ে ভারতের অবস্থান শক্ত ছিল এবং ভারতের চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহ বেশি ছিল। একপাক্ষিক অতিরিক্ত উৎসাহ এবং লাভের সম্ভাবনার কারণে দুপক্ষের মধ্যে সমঝোতা কঠিন ছিল। কিন্ত যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে এখন অবস্থার পরিবর্তন ঘটছে। এর প্রধান কারণ হল ভারতের অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির হার হ্রাস এবং বিনিয়োগে ভাটা। বিশ্ব ব্যাংকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে ভারতের মোট জিডিপি ছিল ১ দশমিক ২ ট্রিলিয়ন ডলার; ২০১২ সালে তা এসে দাঁড়ায় ১ দশমিক ৮ ট্রিলিয়ন ডলারে।

কিন্ত এখন তা এ হারে বাড়ছে না; ভারতের প্রবৃদ্ধির হার এখন ৫ শতাংশ এবং গত পাঁচ বছরে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ জিডিপির ৩৮ শতাংশ থেকে ৩১ শতাংশে নেমে এসেছে। ভারতীয় ব্যবসায়ীরাও দেশের বাইরে বিনিয়োগ বাড়াতে চাচ্ছেন; সে ক্ষেত্রে দুপক্ষের স্বার্থের অভিন্নতা তৈরি হতে শুরু করেছে বলেই অনুমান করা যায়।

এতে বাণিজ্য বিষয়ক টানাপোড়েন যতটা ছিল তার খানিকটা হলেও কমে এসেছে এবং এ ক্ষেত্রে খুব শিগগির কিছু অগ্রগতি আশা করে যুক্তরাষ্ট্র।

এ বাণিজ্যের একটা দিক হল প্রতিরক্ষা বাণিজ্য। এটিও গত এক দশকে বেড়েছে; ১শ মিলিয়ন ডলার থেকে ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। কিন্ত যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে আরও সমরাস্ত্র বিক্রি করতে চায়। বিশেষ করে ভারত নৌবাহিনী সম্প্রসারণে মনোযোগ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র চায় যে ভারত তার কাছ থেকে অস্ত্র কিনুক। কিন্ত ভারত যখন ফ্রান্সের কাছ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলারের জঙ্গী বিমান কিনল সেটা যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করেনি।

এ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অচিন ভানায়েক একটি গণমাধ্যমকে বলেছেন যে, পারমাণবিক চুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছিল ভারত তার কাছ থেকে অস্ত্র কিনবে; কিন্ত সেটা না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র নাখোশ হয়েছে।

নিরাপত্তা বা কৌশলগত সহযোগিতার প্রশ্নে আপাতদৃষ্টে বেশ কিছু প্রশ্নে দুদেশের ঐকমত্য রয়েছে। যেমন, আফগানিস্তান ও চীন। কিন্ত একটু গভীরভাবে তাকালেই এসব প্রশ্নে দুপক্ষের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান বোঝা যায়। আফগানিস্তান প্রশ্নে তালেবানের সঙ্গে আলোচনায় ভারত নিমরাজি হলেও ভারতের নীতিনির্ধারকদের একাংশের ধারণা যে, যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপ আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য সহায়ক নয়। তাদের ধারণা যে এতে পাকিস্তানের আধিপত্য আবারও প্রতিষ্ঠিত হবে।

কোনো কোনো ভারতীয় কূটনীতিক ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় মন্তব্য করেছেন যে, পাকিস্তান এবং আইএসআই যা চাচ্ছে তাই পেয়ে যাচ্ছে। কাতারে তালেবানের অফিস খোলা নিয়ে সৃষ্ট ঝামেলায় ভারতের আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হয়েছে বলেও অনেক ভারতীয় বিশ্লেষকের ধারণা।

যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করুক ভারত সেটা মোটেই পছন্দ করছে না। যুক্তরাষ্ট্র বারবার বলেছে যে তারা আফগানিস্তানে ভারতের ভূমিকায় অত্যন্ত খুশি। তবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে বিষয়টি তুলে ধরার চেষ্টা করেছে তা হল ভারতের অর্থনৈতিক সহযোগিতা। যদিও ভারত দাবি করে যে সে ২০০২ থেকে ২০০৯ সালে আফগানিস্তানে সাড়ে সাতশ মিলিয়ন ডলার উন্নয়ন সাহায্য দিয়েছে– অনেকেই বলে থাকেন যে প্রতিশ্রুত এ অর্থের অধিকাংশই দেওয়া হয়নি।

অস্থিতিশীল আফগানিস্তান ভারতের কাম্য নয়। কিন্ত তাদের সবচেয়ে বড় ভয় হল আফগানিস্তানে পাকিস্তানের নিরঙ্কুশ প্রভাব। যুক্তরাষ্ট্র তা না চাইলেও সেটা মোকাবেলায় কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে ভারত নিঃসন্দেহ নয়।

যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায় চীনের প্রভাব মোকাবেলা করার জন্য ভারতকে সাহায্য করতে চায় এটা কোনো গোপন বিষয় নয়। কিন্ত যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ায়, বিশেষত পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, ভারতের প্রভাব কতটা গ্রহণযোগ্য মনে করে সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। যে কারণে ভারত-চীন সম্পর্কে টানাপড়েন তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে।

ভারত এ যাবত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সামরিকভাবে খুব বেশি ঘনিষ্ঠ হতে চায় নি– সেটা তাদের পররাষ্ট্রনীতির কারণে যেমন তেমনি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কারণেও। কিন্ত এ বছর এপ্রিল-মে মাসে তিন সপ্তাহ ধরে চীনের সঙ্গে সীমান্তে উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতে কেউ কেউ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠতার পক্ষপাতী। কিন্ত আগামী বছরে নির্বাচন সামনে রেখে ক্ষমতাসীন কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার এ বিষয়ে খুব বেশি উৎসাহী হবে না।

যুক্তরাষ্ট্র যে ভারতের সঙ্গে আরও বেশি প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বাণিজ্য আশা করছে তার কারণও ভারত-চীন সম্পর্কের টানাপড়েন। ভাইস প্রেসিডেন্ট বাইডেন তার সফরের সময় বিষয়টি প্রকাশ্যে না তুললেও তা যে আলোচনার সূচিতে আছে তা আমরা অনুমান করতে পারি। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের পররাষ্ট্র বিষয়ক গবেষণা সংস্থাগুলোতে প্রায়শই বলা হয়ে থাকে যে পূর্ব এশিয়ায় প্রশ্নে অভিন্নতাই দুদেশকে কাছাকাছি রাখবে।

কিন্ত ভারতীয়দের মধ্যে এ ধারণাও রয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে ভাগাভাগির অঙ্কের আশ্রয় নেবে। তার অর্থ হল চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র গোটা এলাকাকে তাদের প্রভাব বলয় অনুযায়ী ভাগ করে নেবে। সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ায় চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং এবং ওবামার বৈঠকের পর এ ধরনের কথাবার্তা বলা হচ্ছে।

এর অর্থ হবে যে ভারত শেষ পর্যন্ত গোটা অঞ্চলে তাদের প্রভাব হারাবে। যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে ভারতকে কতটা আশ্বস্ত করতে পারবে তা ভাইস প্রেসিডেন্টের সফরেই বোঝা যাবে তা নয়; তবে মনমোহন-ওবামা বৈঠকে তার একটা ধারণা পাওয়ার আশা করা যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কে সর্বশেষ যে অস্বস্তিকর বিষয়টি যুক্ত হয়েছে তা হল যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটে পাশ হওয়া অভিবাসন আইন সংস্কার সংক্রান্ত একটি বিল। ভারত মনে করে যে এর আওতায় ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নিয়োজিত কর্মচারিদের যুক্তরাষ্ট্রে কাজের ভিসা পাওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধা হবে। ভারতের অনেক প্রতিষ্ঠান মার্কিন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাজের চুক্তি নেয় এবং সে চুক্তির আওতায় তাদের কর্মচারিদের এইচ-১বি ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়ে থাকে।

প্রতি বছর এ ধরনের ৬৫ হাজার ভিসা ইস্যু করা হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার বলছে যে এ ধরনের বিশেষ ভিসার ৬০ শতাংশ লোকই ভারতীয় এবং এখনকার সংস্কার কোনোভাবেই ভারতীয়দের চাকরি ও কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলবে না। কিন্ত ভারত এ বিষয়ে তাদের আপত্তির ব্যাপারটা জোর দিয়ে বলে আসছে।

ভারত যেমন যুক্তরাষ্ট্রের একটি অভ্যন্তরীণ আইন বিষয়ে উদ্বিগ্ন, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের একাংশের ভেতরে আগামী বছরের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে একটা অস্বস্তি আছে। কারণটি এ নয় যে, নির্বাচনে ক্ষমতার হাতবদল ঘটতে পারে; অতীতে যুক্তরাষ্ট্র বিজেপির সঙ্গে কাজ করতে মোটেই দ্বিধান্বিত ছিল না।

কিন্তু প্রশ্ন হল, নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্র কী করবে? অনেকেরই জানা আছে যে ২০০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র মোদীকে ভিসা দেয়নি এ যুক্তিতে যে তিনি ২০০২ সালের মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। মোদী নির্বাচিত হলে এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতোমধ্যেই এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে এ যুক্তিতে যে, ২০১২ সালে সুপ্রিম কোর্টের নিয়োগ করা এক তদন্ত কমিটি মোদীকে এ অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছে। এ বিবেচনায়ও সম্ভবত কিছু কিছু বিষয়ে এ সরকারের আমলেই নিষ্পত্তি করতে চাইবে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।

সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে সামান্য হলেও পরিবর্তনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কিন্ত সে সম্ভাবনা কতটা বাস্তবায়িত হবে তার কোনো ইঙ্গিত ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফরে পাওয়া যায় কিনা সেটাই বোঝার চেষ্টা করছেন সবাই।

ইলিনয়, ২৩ জুলাই ২০১৩

আলী রীয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।