তেতাল্লিশ বছর পর আবার কেঁদেছি

ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী
Published : 15 July 2013, 06:03 PM
Updated : 15 July 2013, 06:03 PM

কী বলব বুঝে উঠতে পারছি না। ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। আমার আবেগ আবার বাঁধ ভেঙেছে দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় পর। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। এ কী হল! এ জন্য তো তেতাল্লিশ বছর ধরে অপেক্ষা করে আছি!

বারবার মনে হচ্ছে এ কথা। মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বিরোধিতাকারী গোলাম আযমের ফাঁসির রায় হল না এও কি সম্ভব!

এ সত্যও মেনে নিতে হচ্ছে। তাই দীর্ঘ তেতাল্লিশ বছর পর দুচোখ দিয়ে পানি ঝরে পড়েছে আমার। গোলাম আযমের মামলার রায় ঘোষণার পর অঝোর ধারায় কেঁদেছি অনেকক্ষণ। এ বেদনার ভার আর বইতে পারছি না।

একসময় কান্না সামলে নিতে হয়েছে। মনে হয়েছে কেন কাঁদব আমি। যে জন্য দেশ স্বাধীন করেছি সেটি অর্জিত হয়নি বলে হতে গুটিয়ে বসে থাকলে হবে না। কিছু একটা করতে হবে, এ চিন্তা থেকেই আমি উঠে দাঁড়ালাম।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের মধ্যে গোলাম আযম ছিলেন প্রধান পরিকল্পনাকারী ও সংগঠক। তারই নেতৃত্বে গড়ে উঠেছিল বিভিন্ন বাহিনী। দেশের সাধারণ মানুষও সে সব তথ্য এখন জানেন। তাই আমি নতুন করে আর এসব বলতে চাচ্ছি না। আমি আজ বলতে এসেছি গোলাম আযমের রায়ের প্রেক্ষিতে আমার বাঁধভাঙা আবেগের কথা।

বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জনগণের দাবি মেনে নিয়ে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করেছিলেন। এতে আমরা ভারমুক্ত হয়েছিলাম এই ভেবে যে জাতি আজ এত বছর পর হলেও যুদ্ধাপরাধীদের কলঙ্কের দায়মুক্ত হতে যাচ্ছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমরা এই পেলাম?

দুপুরে রায় ঘোষণার আগে থেকেই কয়েকটি টিভি চ্যানেল থেকে যোগাযোগ করছিল প্রতিক্রিয়া প্রকাশের জন্য যেতে। ভারাক্রান্ত মনে বারবার ভাবছিলাম, কী হবে গিয়ে? এই কষ্টের কথাই তো বলতে হবে সব জায়গায়। তেতাল্লিশ বছর আগে যে ভয়ানক যুদ্ধাপরাধীর জন্য এ দেশের লাখ লাখ মানুষ ঘরহারা, স্বজনহারা, দেশছাড়া হয়েছেন– দিনের পর দিন নির্যাতিত হয়েছেন লাখ লাখ নারী– এ রায় তাদের সঙ্গে কি প্রতারণা নয়?

আলাপ করেছি অনেকের সঙ্গেই। হতাশ-বিক্ষুব্ধ সবাই। গোলাম আযমকে এত বছর বেঁচে থাকার সুযোগ আমরাই করে দিয়েছি। আবার বাকি যে কদিন বেঁচে থাকবেন সে কদিন তাকে সবরকম সেবা ও চিকিৎসা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখা হবে এটা মেনে নেওয়া খুব কি সহজ?

প্রশ্নটি আমি রাখতে চাই দেশের সব বিবেকবান মানুষের কাছে।