মৃত্যুদণ্ড না দেওয়াটা ঠিক হয়নি

Published : 24 March 2011, 08:05 PM
Updated : 15 July 2013, 11:47 AM

গোলাম আযম একাত্তরে যে অপরাধ করেছে তা কোনো সাধারণ অপরাধ নয়। তার অপরাধ অনেক বড় এবং একাধিক। আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে সে। মুক্তিযোদ্ধা ও নিরপরাধ মানুষকে হত্যা, লুণ্ঠন আর বহু মা-বোনের ইজ্জত হরণ করে যে অপরাধ করেছে তার শাস্তি নব্বই বছরের কারাদণ্ড হতে পারে না। একটি জাতির স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী সে, তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হ্ওয়া উচিত ছিল।

তা না হ্ওয়ায় আমি খুব মর্মাহত। বিচার বিভাগের কাজ ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা। তথ্য-উপাত্ত ও সাক্ষী প্রমাণের ভিত্তিতে প্রাপ্য শাস্তি নিশ্চিত করা; সেখানে জাতি, ধর্ম, বয়স কোনো বিবেচ্য বিষয় হ্ওয়া ঠিক নয়। অখচ রায়ে বলা হয়েছে, অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি পাওনা হলেও বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় আসামিকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

একাত্তরে যুদ্ধাপরাধীরা যখন গণহত্যা চালিয়ে নির্বিচারে ছেলে-বুড়ো হত্যা করেছিলে, শিশু-নারী খুন করেছিল– তখন কি তারা বয়স বিচার করেছিল? আমি মনে করি বিচারের এ রায় সঠিক হয়নি। আমরা সবাই জানি গোলাম আযম কেবল একজন যুদ্ধাপরাধী নয়, সে সকল যুদ্ধাপরাধীরের নেতৃত্ব দিয়েছে।

সুতরাং নিজে তো অপরাধ করেছেই, পাশাপাশি অন্যদেরও একই ধরনের অপরাধে উদ্বুদ্ধ ও উৎসাহিত করেছে। তার ভূমিকা কোনো অনুমানভিত্তিক ব্যাপার নয়, এগুলো ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণিত সত্য।

পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যেসব যুদ্ধাপরাধের বিচার হয়েছে, ধরা যাক নাজিদের বিচার, ন্যুরেমবার্গ ট্রায়াল, কিংবা অন্য যেসব গণহত্যার বিচার হয়েছে তাতে কিন্তু কোনো বয়সের বিবেচনা করা হয়নি। সাধারণ অপরাধের ক্ষেত্রে বয়স বিবেচ্য কিনা জানি না, কিন্তু এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে যে বয়স কখনও এবং কোথায়্ও বিবেচনায় আনা হয়নি।

যার বিরুদ্ধে নরহত্যার সুস্পষ্ট অভিযোগ এবং প্রমাণ রয়েছে তাকে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়াটা ঠিক হয়নি ।

কর্নেল (অব.) শওকত আলী: জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার।