৭ জুন ছয় দফা দিবস স্মরণে

শারমিন আহমদ
Published : 7 June 2013, 06:45 AM
Updated : 7 June 2013, 06:45 AM

১৯৬৬ সাল। বাতাসের আলোড়নে বসন্তের আগমনী বার্তা। কৃষ্ণচূড়া, বকুল ও নারকেল গাছের নিবিড় আলিঙ্গনে ঘেরা সেকালের ধানমণ্ডির ৭৫১ সাতমসজিদ রোডের বাড়ির সামনের অফিস ঘরে বসে এক ব্যক্তি নিবিষ্টমনে লিখে চলেছেন। তাঁর মুক্তোর মতো হাতের লেখনিতে নির্মিত হচ্ছে একটি জাতির পথনির্দেশনা। একটি পরাধীন জাতির স্বাধিকারের সনদ।

তিনি লিখছেন "একটি রাষ্ট্রের উন্নতি, অগ্রগতি, সংহতি ও নিরাপত্তা নির্ভর করে উহার আভ্যন্তরীণ শক্তির উপর। সেই শক্তির উৎস সন্তুষ্ট জনচিত্ত। আঠারো বছর পূর্বে পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র রূপে প্রতিষ্ঠিত হইয়াছিল। আজও ইহার রাষ্ট্রীয় কাঠামো গণসমর্থনের মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়াইতে পারে নাই। পাকিস্তানের মূল ভিত্তি ১৯৪০ সালের যে ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব পাকিস্তান অর্জনের জন্য মানুষকে অনুপ্রাণিত ও উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল পরবর্তীকালে ঐ মূল ভিত্তি হইতে বিচ্যুতিই এই অবস্থার আসল কারণ।"

দুইপৃষ্ঠাব্যাপী ছয় দফা দাবিনামার মুখবন্ধ লিখছেন ছয় দফার অন্যতম রূপকার পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমদ। পরবর্তী পাতায় ছয় দফা কর্মসূচি পেশ করেন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবুর রহমান। ওই একই বছর তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক ও শেখ মুজিবুর রহমান সভাপতি নির্বাচিত হন। এ দুই তরুণ নেতৃত্বর চিন্তা ও চেতনার মিলনের ফলেই আওয়ামী লীগ সেদিন হতে পেরেছিল জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী একটি সার্থক রাজনৈতিক সংগঠন।

ছয় দফা কেন্দ্র করে পাকিস্তানের সামরিকজান্তা আইয়ূব সরকার ৮ মে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাজউদ্দীন আহমদ, জহুর আহমেদ চৌধুরী, রাজশাহীর মুজিবুর রহমান, খন্দকার মোশতাক আহমেদ, নূরউল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ও পরবর্তীতে আরও নেতা ও কর্মীকে কারাবন্দী করলেও ছয় দফার আন্দোলন কিন্তু থেমে থাকেনি। বন্দী তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে স্ত্রী জোহরা তাজউদ্দীন জিজ্ঞেস করেছিলেন যে উনারা এখন জেলপ্রকোষ্ঠে, তাহলে আন্দোলনের ভবিষ্যৎ কী হবে?

তাজউদ্দীন তাঁর স্বভাবজাত স্মিত হাসি দিয়ে বলেছিলেন উনারা ভেতরে থাকলেও বাইরে রেখে গেছেন এমন এক শক্তিশালী সংগঠন যা আন্দোলন অব্যাহত রাখবে। হলও তাই। সামরিকজান্তার ১৪৪ ধারা, নির্যাতন, নিষ্পেষণ ও গুলিবর্ষণ উপেক্ষা করে দেশব্যাপী ছয় দফা দাবিতে ছাত্র, শ্রমিক, কৃষ্‌ক, মজুরসহ আপামর জনগণের স্বতঃস্ফুর্ত আন্দোলনে ও শ্রমিকনেতা মনু মিয়াসহ এগারো শহীদের রক্তে রঞ্জিত ৭ জুন অমরত্ব লাভ করল। ৭ জুন স্বীকৃতি অর্জন করল বাঙালির মুক্তির সনদ ছয় দফার দিবস রূপে।

দীর্ঘ ছয় বছর পর স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের মূল সংগঠক ও পরিচালক তাজউদ্দীন আহমদ এ প্রসঙ্গে বলেন "জাতীয় মুক্তিসংগ্রাম এগোয় সর্পিল গতিতে। আঁকাবাঁকা পথ ধরে। রক্তপিচ্ছিল এই পথ। বাধা এখানে অসংখ্য। পার হতে হয় অনেক চড়াই উৎরাই। সংগ্রামের এক একটা মোড় পরিবর্তনে ইতিহাসে সংযোজিত হয় নতুন অধ্যায়। ৭ জুন আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এমনি একটি যুগান্তকারী মোড় পরিবর্তন। ৭ জুনকে এক অর্থে বলা যায় ৬ দফার দিবস। এই দিনে ৬ দফার দাবিতে বাঙ্গালী রক্ত দিতে শুরু করে। স্বাধিকারের এই আন্দোলনই ধাপে ধাপে রক্তনদী পেরিয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধে গিয়ে শেষ হয়েছে। কাজেই বাঙ্গালী জাতির স্বাধীনতা সংগ্রামে ৭ জুন অমর। অবিস্মরণীয় এক ঐতিহাসিক দিন ৭ জুন।" (দৈনিক বাংলা, ৭ জুন, ১৯৭২। ইতিহাসের পাতা থেকে, সম্পাদনা সিমিন হোসেন রিমি।)

পড়ন্ত বিকেলে অফিসছুটির পর, জনশূন্য সচিবালয় কক্ষে তখনও কর্মরত অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ৭ জুন উপলক্ষে সাংবাদিকের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ৬ দফার নেপথ্য যে ঘটনাবলী ব্যক্ত করেছিলেন তার ঐতিহাসিক মূল্য ব্যাপক।

তাজউদ্দীন আহমদ বলেন "১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর আইয়ুব খান আসলেন ঢাকা। জনাব নুরুল আমিন (মুসলিম লীগ নেতা, পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী ১৯৪৮-১৯৫৪) উদ্যোগ নিলেন তার সাথে আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য বিরোধী দলের নেতাদের সাক্ষাৎ ঘটানোর। আমাদের সাথে আইয়ুব খানের সে সাক্ষাৎ হয়েও ছিল। কিন্তু এর আগে আমরা তৎকালীন স্থানীয় সমস্যাসহ পাকিস্তানের রাজনৈতিক পটভূমিকায় তৈরি করি একটি দাবীনামা। তাতে ছিল তেরটি দফা। নুরুল আমিন সাহেবকেও তার একটি কপি আমরা দিয়েছি। কিন্তু তিনি সেই কপির দফা দেখেই চমকে উঠলেন। তাহলে তো আর আলোচনা হতেই পারে না আইয়ুব খানের সাথে। আমরা অনড় রইলাম। তবুও সাক্ষাৎকার হোল। সম্ভবত নুরুল আমিন সাহেব তার কপিটা আইয়ুব খানকে দিয়েছিলেন। তারপর আসলো ১৯৬৬ সাল। লাহোরে বসলো সর্বদলীয় কনফারেন্স। এই উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্য ছিল সব বিরোধী দলকে জড় করিয়ে তাসখন্দ ঘোষণার (১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের পর ১৯৬৬ সালের ১০ জানুয়ারি তাসখন্দে গৃহীত ভারত-পাকিস্তান শান্তি চুক্তি) বিরুদ্ধে কিছু আদায় করে নেয়া। আমরাও সে সম্মেলনে আমন্ত্রণ পেলাম। যাবার আগে শেখ সাহেব বললেন, লাহোর কনফারেন্সের জন্য বাঙ্গালীদের পক্ষ থেকে কিছু তৈরি করে নিতে। আমরা তখন সেই তের দফার স্থানীয় কিছু বাদ দিয়ে তৈরি করলাম এক দাবীনামা। তাতে অনেক উপ-দফা বাদ দিয়ে মোট দাবী হোল ছয়টি। তাই নিয়ে আমরা গেলাম লাহোরে, তা পেশ করা হোল সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে। কিন্তু সাবজেকট কমিটি আমাদের দাবীনামা দিলেন নাকচ করে। পরদিন প্রতিবাদে আমরা বর্জন করলাম সর্বদলীয় সম্মেলন। দাবীনামায় যে ছয়টি দফা ছিল তার ওপর আমরা তেমন গুরুত্ব দেইনি। কিন্তু সম্মেলন বর্জনের পরদিন পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদপত্রে ব্যানার হেডিঙে বের হোল শেখ সাহেবের ছয় দফা। অথচ সে সময় পাকিস্তান প্রতিরক্ষা আইনে কোন সম্মেলনের খবর প্রকাশ করা ছিল নিষিদ্ধ। তবুও ছয় দফার খবর বের হোল খবরের কাগজে। সঙ্গে সঙ্গে বিছিন্নতাবাদের অপবাদ দিয়ে লেখা হোল সম্পাদকীয়। ছয় দফা দাবী ছড়িয়ে পড়লো সর্বত্র। সে বছর মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহে বসলো আওয়ামী লীগের বার্ষিক কাউন্সিল সভা। আমরা ছয় দফাকে অন্তর্ভুক্ত করলাম আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোতে। মার্চের কাউন্সিল অধিবেশনের তৃতীয় ও শেষ দিনে ২০ মার্চ পল্টনে হোল আমাদের বিরাট জনসভা। শেখ সাহেব ব্যাখ্যা দিলেন ছয় দফা কর্মসূচির। শুরু হোল ছয় দফার আন্দোলন। শেখ সাহেব সফর করলেন সারা বাঙলা। সভা করে আমরা প্রচার শুরু করলাম ছয় দফার।"

ছয় দফার প্রথম দাবিটিই ছিল ১৯৪০ সালের লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ফেডারেশনভিত্তিক রাষ্ট্রসংঘ ও পার্লামেন্টারি সরকার। এ দাবির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রাষ্ট্রীয় কাঠামো ও ইউরোপীয় পার্লামেন্টারি সরকার পদ্ধতির মিল লক্ষ্য করা যায়।

দ্বিতীয় দাবিতে ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি সীমাবদ্ধ থাকবে এবং বাকি সব নীতি অঙ্গ রাষ্ট্রগুলো প্রণয়ন ও পরিচালনা করবে। (এ দাবিতে কেন্দ্র হতে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ সুস্পষ্ট। স্বাধীন বাংলাদেশে, সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ক্ষমতার সুষ্ঠু বণ্টন, সরকার ও প্রশাসনযন্ত্রের বিকেন্দ্রীকরণ মুখে বললেও বাস্তবে কতটুকু তার প্রয়োগ হয়েছে?)

বাকি দাবিগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ হল পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য অবাধে বিনিময়যোগ্য পৃথক দুটি মুদ্রা চালু অথবা এমন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যাতে পূর্ব পাকিস্তান হতে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচার না হতে পারে। অঙ্গ রাষ্ট্রগুলোর কর ধার্য করার ব্যাপারে সম্পূর্ণ ক্ষমতা, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অঙ্গ রাষ্ট্রগুলোর ক্ষমতা; বাণিজ্যিক চুক্তি প্রণয়ন, আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষার জন্য অঙ্গ রাষ্ট্রগুলোর নিজ কর্তৃত্বাধীন আধাসামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা।

ছয় দফার রাষ্ট্রীয় ও অর্থনৈতিক চিন্তার সুগভীর ও সুস্পষ্ট প্রতিফলন এবং জটিল বিষয়কে সহজতর করে ব্যাখ্যা ও উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে মুজিব-তাজউদ্দীন, এ তারুণ্য ভরপুর নেতৃত্ব আওয়ামী লীগকে উন্নীত করেন নতুন সোপানে। ছয় দফার বাণী পরিণত হয় বাঙালির হৃদয়ের কথায়। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের সামরিক শাসকচক্র বিচলিত হয়ে ওঠে। নেতৃবৃন্দকে জেলে পুরে ছয় দফার আন্দোলন নিঃশেষ করার আগে, তারা সিদ্ধান্ত নেয় জনসমক্ষে ছয় দফাকে অযৌক্তিক ও অবাস্তব প্রমাণ করার।

সে অনুসারে স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খানের বৈদেশিক মন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ছয় দফাকে অসার ও অযৌক্তিক প্রমাণ করার জন্য শেখ সাহেবকে ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভায় তর্কযুদ্ধের আহ্বান জানান। তাজউদ্দীন আহমদ ও শেখ সাহেব একত্রে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন যে শেখ সাহেব ভুট্টোর চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করবেন। বারক্লেই ও অক্সফোর্ডের তুখোড় ছাত্র ভুট্টো ঢাকায় এলেন এক বিরাট উপদেষ্টার দল নিয়ে।

সে সময় অনেক সাংবাদিকই সংবাদের আশায় ছুটে গেলেন ১৫ নম্বর পুরানা পল্টনে, আওয়ামী লীগ অফিসে যেখানে তাজউদ্দীন আহমদ ভুট্টোর চ্যালেঞ্জের জবাবে ছয় দফার পক্ষে যুক্তি-প্রমাণ জড়ো করায় ব্যস্ত। ('আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১শে ফেব্রুয়ারি' এ অমর গানের রচয়িতা সাংবাদিক আবদুল গাফফার চৌধুরী তাজউদ্দীন আহমদকে কেন্দ্র করে লেখা তার 'একজন বিস্মৃত নেতার স্মৃতিকথায়' তৎকালীন রাজনৈতিক ইতিহাসের এ ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনাটি চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন।)

কর্মে মগ্ন তাজউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বললেন যে সময় হলে শেখ সাহেবের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ সম্পর্কে জানানো হবে। বিশদ প্রমাণপত্রের মাধ্যমে ছয় দফার যৌক্তিকতা অভেদ্য নিশ্চিত করে শেখ সাহেবের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে ভুট্টোর সঙ্গে দেখা করলেন তাজউদ্দীন। ভুট্টো তারই প্রায় সমবয়সী তাজউদ্দীনের সঙ্গে ছয় দফার বিষয়ে আলাপ করে বুঝতে পারলেন যে তর্কযুদ্ধে শেখ সাহেবকে হারানো মুশকিল হবে। তিনি তাজউদ্দীন সম্পর্কে মুসলিম লীগের নেতাদের কাছে মন্তব্য করেছিলেন, "হি ইজ ভেরি থরো। শেখের যোগ্য লেফটেন্যান্ট আছে দেখছি।"(আবদুল গাফফার চৌধুরী, 'একজন বিস্মৃত নেতার স্মৃতিকথা'। ঢাকা। যায় যায় দিন, ১১ জুন ১৯৮৫)

তর্কযুদ্ধের দিন পল্টনের জনসভায় যোগদানের জন্য যখন বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষের সমাগম হতে শুরু করেছে ঠিক সেদিন সকালবেলাতেই ভুট্টো তার বিজ্ঞ উপদেষ্টার দলসহ চুপিসারে ঢাকা ত্যাগ করলেন। ঢাকার একটি কাগজ শিরোনাম দিল "ভুট্টোর পলায়ন"। (তথ্যসুত্র : প্রাগুক্ত)

উল্লিখিত ঐতিহাসিক বিবরণ আবারও প্রমাণ করে যে নেতৃত্বের মধ্যে যখন মেধা, জ্ঞান, দক্ষতা, দেশপ্রেম ও আন্তরিকতার সংমিশ্রণ ঘটে তখনই সম্ভব সব অসম্ভব জয় করা। বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর সমর্থনপুষ্ট সামরিকজান্তা পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ছয় দফার মেনিফেস্টোতে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় সম্ভব হয়েছিল ওই ধরনের ধীশক্তিসম্পন্ন, আত্মমর্যাদাশীল সবল নেতৃত্বর কারণে।

সুদীর্ঘ স্বাধিকার আন্দোলন থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত আজকের বাংলাদেশে সে ধরনের নেতৃত্ব কোথায়? আমরা ভৌগোলিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করেছি বটে কিন্তু আজও রাষ্ট্রীয় পর্যায় এবং সামাজিক কাঠামোতে নিশ্চিত করতে পারিনি সুশাসন ও সুনীতি। আদর্শিক না হোক, স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার মতো একটা বেসিক কাঠামোতেই আমরা উত্তীর্ণ হতে পারিনি এখনও। ছয় দফার মুখবন্ধে তাজউদ্দীন আহমদ লিখেছিলেন যে একটি রাষ্ট্রের উন্নতি, অগ্রগতি, নিরাপত্তা প্রভৃতি নির্ভর করে সে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শক্তির ওপর। সে শক্তির উৎস সন্তুষ্ট জনচিত্ত। তিনি জনগোষ্ঠী বা জনসাধারণ না বলে উল্লেখ করেছিলেন জনচিত্ত।

ওই শব্দ নির্বাচন তাঁর চিন্তার গভীরতা প্রমাণ করে। একজন মানুষ যখন তার হৃদয়ের গভীরে অনুভব করেন স্বস্তির ছোঁয়া তখুনি সে স্বস্তি রূপান্তরিত হয় শক্তিতে-শান্তিতে। একজন মানুষ তার জীবনসংগ্রামের একাকী মুহূর্তে যখন মনে করেন যে তার জান, মাল, সম্মান রক্ষায় সে রাষ্ট্র সচেতন এবং তার মেধা, দক্ষতা, সততা ও উদ্যম সে রাষ্ট্রে পরিগণিত হয় অগ্রগতির দিকনির্ধারক সম্পদ রূপে তখুনি ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রর চিন্তার মধ্যে এক বৈপ্লবিক মিলন ঘটে। জাতির হৃদয় উন্মেলিত হয় নতুন স্বপ্ন ও সম্ভাবনায়।

কোস্টারিকা, ৫ জুন, ২০১৩

শারমিন আহমদ : শিক্ষাবিদ ও বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের জ্যেষ্ঠ কন্যা।