ড্রোন, তালেবান এবং একজন নওয়াজ শরীফ

Published : 15 May 2013, 05:13 PM
Updated : 15 May 2013, 05:13 PM

সদ্যসমাপ্ত সংসদ নির্বাচন বিভিন্ন কারণেই পাকিস্তানের ইতিহাসের একটি ব্যতিক্রমী ঘটনা। কেবল যে সে দেশের ইতিহাসে এ প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচিত সরকার মেয়াদ পূর্ণ করল তা নয়, ভোটার সংখ্যাও ছিল সর্বোচ্চ। ভোটাররা ভোট দিয়েছেন সে দেশের তালেবানদের হুমকি উপেক্ষা করে। তাছাড়া প্রাথমিক হিসেবে দেখা যায় নারীদের অংশগ্রহণ এবার আগের তুলনায় বেশি।

নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধানের বিষয়ে দুই প্রধান দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও মুসলিম লীগ একমত হতে পারেনি। তবে শেষ পর্যন্ত সংবিধানে দেওয়া ক্ষমতাবলে নির্বাচন কমিশন ২৫ মার্চ সরকারপ্রধানকে নির্বাচিত করেছে। তা মেনে নিয়েই দুপক্ষ নির্বাচনে যোগ দিয়েছে। এ বিষয়ে কোনো দলই আর বাক্যব্যয় করার প্রয়োজনবোধ করেনি। সরকারপ্রধান বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ঐকমত্যে পৌঁছুতে পারেনি বলে তারা ভোটাভুটি করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

সে খবর জানা সত্ত্বেও আমরা গত দেড় মাসে এ নিয়ে বিতর্ক শুনতে পাইনি। বিদায়ী ক্ষমতাসীন দল পিপিপির মনোনীত ব্যক্তিই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হয়েছেন। কিন্ত নির্বাচনের ফল তাদের অনুকূলে যায়নি। বিজয়ী হয়েছে মিয়া নওয়াজ শরীফের নেতৃত্বাধীন মুসলিম লীগ।

নির্বাচনের ফলাফল থেকে বলা যায় যে পাকিস্তানের রাজনীতিতে দুই প্রধান দলের যে আধিপত্য তা ভেঙ্গে পড়েনি। কিন্ত এর বাইরে তৃতীয় দল হিসেবে ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের উপস্থিতি স্পষ্ট হয়েছে। যারা ইমরান খানের দল আরও ভালো করবেন বলে আশা করছিলেন তারা আশাহত হলেও এ কথা অস্বীকারের উপায় নেই যে দলটি বিকল্প হিসেবে জনগণের কল্পনায় জায়গা করে নিচ্ছে।

২৪৯ আসনের ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যাচ্ছে দেশের ইসলামপন্থী দলগুলো অন্যবারের চেয়ে ভালো তো করেইনি বরং খারাপ করেছে। ফজলুর রহমানের নেতৃত্বাধীন জমিয়াতে উলেমায়ে ইসলাম পেয়েছে দশটি আসন, জামায়াতে ইসলাম জিতেছে মাত্র দুটো আসনে। এ আসনগুলো সরকারের ওপর প্রভাব বিস্তারে তাদের মোটেই সাহায্য করবে না। নির্বাচনে অন্তত ২৫ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নির্দলীয় প্রার্থীরা, আরও কয়েকজন বিজয়ী হতে পারেন।

সব মিলিয়ে পাকিস্তানের জন্য এ নির্বাচন বড় ধরনের ইতিবাচক ঘটনা। পাকিস্তান বিষয়ে নিঃসংকোচে এ ধরনের কথা বলার সুযোগ আসে না। দেশটিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য এগুলো শুভসংবাদ। এ অঞ্চলের একটি দেশে গণতন্ত্রের পথে যৎসামান্য অগ্রগতি লক্ষ্য করলেও এর প্রতি ইতিবাচকভাবে প্রতিক্রিয়া জানানোই বাঞ্ছনীয়। কেননা বিশ্বায়নের এ যুগে আঞ্চলিক ঘটনাবলীর প্রভাব অন্য একটি দেশের অভ্যন্তরে পড়বে না তা মনে করার কারণ নেই। পাকিস্তানের সাধারণ মানুষ যে সমস্ত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে গণতন্ত্রের পক্ষে রায় দিলেন তা যে কোনো গণতন্ত্রকামী মানুষেরই চোখে পড়ার কথা।

কিন্ত নওয়াজকে অভিনন্দন না জানিয়ে বাংলাদেশের কেউ কেউ তার দলের বিজয়ে বিপদের সংকেত পাচ্ছেন দেখে বিস্মিত হয়েছি। খুব সংকীর্ণ বিবেচনা ছাড়া পাকিস্তানের জনগণের রায়ে নির্বাচিত সরকার সম্পর্কে আগ বাড়িয়ে যারা নেতিবাচক দিকটাকে মুখ্য করে তুলছেন তারা পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের সঙ্গে সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্কের পথে অপ্রয়োজনীয় বাধা তৈরি করছেন কিনা ভেবে দেখতে পারেন। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা দেশে-বিদেশে সমালোচিত। তাদের ভূমিকা বোধকরি পাকিস্তানের অধিকাংশ সাধারণ মানুষও সমর্থন করেন না। তা বলে এ সংস্থার সমালোচনা করতে গিয়ে নির্বাচনের রায়কে কোনো অবস্থাতেই খাটো করে দেখা সমীচীন নয়।

দুই

পাকিস্তানের নির্বাচিত সরকারের সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। দেশের অর্থনীতির অবস্থা মোটেই ভালো নয়। চার শতাংশের কম প্রবৃদ্ধি নিয়ে দেশটি যে বেশিদূর যেতে পারবে না তা সকলেই জানেন। দেশের মানুষ আশা করেন যে নতুন সরকার তা মোকাবেলা করবে। জ্বালানি সংকট, বিশেষ করে বিদ্যুত সরবরাহ পরিস্থিতি খুবই খারাপ। দেশের কোনো কোনো এলাকায় আঠারো ঘণ্টাই বিদ্যুত থাকে না। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।

দেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানি তালেবানের সঙ্গে চলছে লড়াই। প্রতিবেশি আফগানিস্তানের অশান্তির কারণ পাকিস্তান না তার শিকার পাকিস্তান সে প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করবে কাকে এ প্রশ্ন করা হচ্ছে তার ওপর। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছে টানাপড়েন। অব্যাহত ড্রোন হামলার ফলে যেমন জঙ্গীদের মৃত্যু ঘটছে তেমনি প্রাণ হারাচ্ছেন নিরপরাধ মানুষ। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্ন পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক রাজনীতি– দুইয়েরই অংশ। এসবের মোকাবেলা করতে হবে নওয়াজ শরীফ সরকারকে। নওয়াজ ক্ষমতায় নতুন নন, কিন্ত এখন সংকট অনেক বেশি।

নওয়াজ শরীফের 'মুশাররফ সমস্যা'

পাকিস্তানের সাবেক সেনাশাসক জেনারেল পারভেজ মুশাররফ ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর সেনাশাসন জারি করে তখনকার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মিয়া নওয়াজ শরীফকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। তখন নিশ্চয়ই কল্পনাও করেননি যে একদিন তার ভাগ্য, এমনকি তার জীবন নির্ভর করতে পারে মিয়া নওয়াজের ওপরই। ১১ মে ২০১৩-এর নির্বাচনে পাকিস্তান মুসলিম লীগের বিজয়ের পর অবস্থা তাই দাঁড়িয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট মুশাররফ এ বছরের মার্চ মাসে স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসার পর তার বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে মামলা দায়ের করার জন্য দেশের আইন বিভাগ ও সিনেটের সদস্যরা সরকারের কাছে প্রথমে দাবি তোলে এবং শেষে চাপপ্রয়োগ করে। ২০০৭ সালের ৩ নভেম্বর জরুরি অবস্থা জারি, সংবিধান স্থগিতকরণ এবং প্রধান বিচারপতিসহ বিচারকদের চাকুরিচ্যুতি ও গৃহবন্দী করে রাখার কারণে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন লাহোর কোর্ট বার এসোসিয়েশনের রাওয়ালপিণ্ডি শাখার সভাপতি এডভোকেট তৌফিক আসিফ।

এ আবেদনের প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের দু সদস্যের একটি বেঞ্চ সরকারকে এ মর্মে নির্দেশ দেয় যেন সরকার ১৯৭৩ সালের 'হাইট্রিজন অ্যাক্টের' আওতায় মুশাররফের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মৌলভি ইকবাল হায়দারের একই ধরনের আরেকটি আবেদন আদালতের ভিন্ন একটি বেঞ্চ বিবেচনায় নেয়। আদালতের এসব নির্দেশ আসে সে সময় যখন দেশের নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ শেষ হয়েছে এবং একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে।

এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশের ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান মীর হাজার খান খোসোর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন তার সরকারের কাজ হচ্ছে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা, এর বাইরে জরুরি কাজ ছাড়া তার সরকার কিছু করবে না। তিনি বলেছিলেন যে নির্বাচিত সরকারই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

এখন মুসলিম লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করতে চলেছে। সে কারণে অনেকেই ভাবছেন স্বৈরশাসক মুশাররফের ভাগ্যে কী আছে তা নিয়ে। মার্চে দেশে ফেরার আগে তার জন্য কী অপেক্ষা করছিল মুশাররফ মনে হয় তা অনুমান করতে পারেননি। নিজের দল মুসলিম লীগের একাংশকে গুছিয়ে নির্বাচনে অংশ নেবেন এবং সম্ভবত বিজয়ী হবেন এমন আশা করে ফিরেছিলেন তিনি।

কিন্তু কেবল নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ থেকেই তিনি বঞ্চিত হননি, সারাজীবন রাজনীতিতে অংশ নিতে পারবেন না বলেও আদালত রায় দিয়েছে। এ মামলার আশংকা ছাড়াও তার বিরুদ্ধে ঝুলছে আরও অনেক মামলা যার অন্যতম হল দুটো হত্যা মামলা– ২০০৬ সালে বালোচ প্রধান নওয়াব আকবর বুগতি এবং ২০০৭ সালে বেনজির ভুট্টোকে হত্যা।

নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় নওয়াজ শরীফ এ ইঙ্গিতই দিয়েছেন যে যদিও তিনি প্রতিহিংসায় বিশ্বাসী নন, কিন্ত মুশাররফের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার মামলা দায়েরের বিষয়টি তিনি বিবেচনা করবেন। এ ধরনের মামলা কেবলমাত্র সরকারই দায়ের করতে পারে; ফলে আদালতের নির্দেশ থাকলেও সরকার তা করবেন কিনা সেটা সামনের দিনগুলোতে দেখা যাবে।

তার বিরুদ্ধে আদৌ এ মামলা করা যায় কিনা এ বিষয়ে পাকিস্তানের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ভিন্নমত রয়েছে। কারও কারও মতে, মুশাররফ দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে সংবিধানসম্মতভাবে দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন। কিন্ত যদি কোনো আদালত জরুরি অবস্থা জারিকে অসাংবিধানিক বলে রায় দেয় তবেই কেবল পরিস্থিতি ভিন্নদিকে মোড় নেবে।

যারা মনে করেন যে মুশাররফের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতার অভিযোগ আনা উচিত তাদের বক্তব্য হল, তিনি দেশের সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদের বরখেলাপ করেছেন। সংবিধানের ৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে কেউ যদি অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় ও বলপ্রয়োগের মাধ্যমে সংবিধান বাতিল বা স্থগিত করে বা করার চক্রান্ত করে তবে তা বিশ্বাসঘাতকতা বলে বিবেচিত হবে। এসব আইনি বিতর্কের জন্য নিশ্চয়ই সামনে অনেক দিন পড়ে আছে, কিন্ত এখন পাকিস্তানে নির্বাচনের পর এটা স্পষ্ট যে পারভেজ মুশাররফকে সামনের দিনগুলোতে হয়তো আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতে পারে।

প্রশ্ন হল পারভেজ মুশাররফের বিরুদ্ধে এ ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সেনাবাহিনী তাতে আপত্তি করবে কিনা। দেশের আদালত মুশাররফের নির্বাচনে অংশগ্রহণের ওপর আজীবন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার পরদিন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আশরাফ কায়ানি এক বক্তৃতায় তার অসন্তোষের কথা ব্যক্ত করেছিলেন। সরাসরি পারভেজ মুশাররফের কথা উল্লেখ না করে জেনারেল কায়ানি বলেন 'আমার মতে, গণতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের মধ্যেকার এ লুকোচুরি খেলার অবসান ঘটাতে পারে জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ, শাস্তিপ্রদান নয়'।

অতীতে যে দুবার নওয়াজ শরীফ ক্ষমতায় ছিলেন সে সময় সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার ও তার দলের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল না। ফলে এখন পারভেজ মুশাররফকে কেন্দ্র করে তিনি আবারও সম্পর্কের টানাপড়েন তৈরি করবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়, বিশেষ করে যেখানে তার সামনে বড় ধরনের বেশকিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে এবং সে সব বিষয়ে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন হবে।

ড্রোন এবং তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা

বিজয়ী হলে পাকিস্তানের ভেতরে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা বন্ধ করবেন বলে নওয়াজ শরীফ যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ক্ষমতায় যাওয়ার পর সেটাই হবে তার প্রথম ও সম্ভবত সবচেয়ে বড় পরীক্ষা। এ জন্য সেনাবাহিনীর সহযোগিতা দরকার হবে সবার আগে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী জঙ্গীদের মোকাবেলা করার জন্য সীমিত আকারে হলেও ড্রোন হামলা অব্যাহত রাখার পক্ষে বলেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।

অন্যদিকে পেশোয়ার হাইকোর্টে ফাউন্ডেশন ফর ফান্ডামেন্টাল রাইটস নামের একটি সংগঠনের দায়ের করা মামলার রায়ে প্রধান বিচারপতি দোস্ত মোহাম্মদ খান বলেছেন, এ ধরনের হামলা দেশের সার্বভৌমত্ববিরোধী এবং তা বন্ধ করার জন্য দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যুক্তরাষ্ট্র সরকার তাদের ড্রোন হামলা বন্ধের আগে পাকিস্তানের কাছ থেকে আফগান তালেবানদের প্রতি সমর্থনবন্ধের নিশ্চয়তা চাইবে বলে অনুমান করা যায়।

নওয়াজ শরীফ তার নির্বাচনী প্রচারণার সময় বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় গেলে পাকিস্তানি তালেবানের সঙ্গে কোনোরকম পূর্বশর্ত ছাড়াই আলোচনা করতে রাজি আছেন। আফগান সীমান্ত বরাবর ট্রাইবাল এলাকায় এখন প্রায় দেড় লাখ পাকিস্তানি সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। গত কয়েক বছরে সেখানে তালেবানের সঙ্গে লড়াইয়ে প্রাণ দিয়েছে প্রায় চার হাজার সৈন্য।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কোনোরকম স্থায়ী শান্তির ব্যবস্থার নিশ্চয়তা না পেলে সৈন্যপ্রত্যাহারে রাজি হবে বলে মনে হয় না। অতীতে তালেবানের সঙ্গে সব চুক্তি তালেবানদের কারণেই ভেস্তে গেছে বলেই তাদের ধারণা। সেটা একেবার ভিত্তিহীন নয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে এ ধরনের কোনো চুক্তির আওতায় যদি সৈন্যপ্রত্যাহার করা হয় তবে এ এলাকায় আফগান তালেবান এবং হাক্কানি নেটওয়ার্কের প্রভাব কেবল বাড়বেই তা নয় এ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণও তাদের হাতে চলে যেতে পারে।

তবে যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সৈন্যপ্রত্যাহার করে নেবে সেহেতু তাদের জন্য এখন বিষয়টি স্পর্শকাতর। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চাইবে না যে পাকিস্তানের সঙ্গে তার সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটুক। তবে পাকিস্তানের নতুন সরকার জানে, আফগানিস্তানের কাছ থেকে যুদ্ধাস্ত্র থেকে শুরু করে অন্যান্য বিভিন্ন সরঞ্জাম সরিয়ে আনার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা ও ওই পথ তার দরকার হবে।

নওয়াজ শরীফের জন্য আরেকটা ইতিবাচক দিক হল ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নির্বাচনে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ভালো ফলাফল করেছে এবং সীমান্তবর্তী খাইবার পাখতুনওয়ালা প্রদেশে তার দল ক্ষমতাসীন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইমরান খান এ প্রশ্নে মুসলিম লীগের সঙ্গে একমত যে পাকিস্তানি তালেবানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান আসবে।

তিন

পাকিস্তানের সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ আছে আশা করি তা মোকাবেলায় নওয়াজ শরীফ সরকারের সাফল্য বিচারের জন্য আমাদের সামনে পাঁচ বছর থাকবে। কিন্ত আশু বিষয় হল যেসব কারণে পাকিস্তানিরা মুসলিম লীগকে আবার ক্ষমতায় এনেছে নওয়াজ শরীফ ও তার দল সেটা বুঝতে পারবেন কিনা।

আলী রীয়াজ : যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনভার্সিটির সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক।