মুক্তমতের প্রকাশ ও মুক্তবিশ্বের ভাবনা

অভিজিৎ রায়
Published : 21 April 2013, 06:49 PM
Updated : 21 April 2013, 06:49 PM

ধর্মদ্রোহিতার অজুহাতে আটক চারজন ব্লগারের মুক্তির দাবিতে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে। হেফাজতে ইসলামসহ অন্যান্য মৌলবাদী দলের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ ও আসিফ মহিউদ্দীনকে যেভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাকে মতপ্রকাশের উপর আঘাত হিসেবেই দেখছেন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার সংস্থা এবং মুক্তবুদ্ধির চর্চাকারী বিভিন্ন সংগঠন।

'ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যানিস্ট অ্যান্ড এথিকাল ইউনিয়ন' (আইএইচইইউ) আন্তর্জাতিকভাবে মুক্তচিন্তক এবং মানবতাবাদীদের সবচেয়ে বড় সংগঠন হিসেবে পরিচিত। ১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন যুক্তিবাদী, সংশয়বাদী, অজ্ঞেয়বাদী, নাস্তিক, মানবতাবাদী এবং মুক্তমনাদের জন্য একধরনের 'আম্ব্রেলা অর্গানাইজেশন' হিসেবে কাজ করে। পৃথিবীজুড়ে ধর্মের প্রভাবমুক্ত শতাধিক সংগঠনের প্রতিনিধি হিসেবে পরিচিত আইএইচইইউ পরপর দুটি স্টেটমেন্ট দিয়েছে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করে।

এপ্রিলের চার তারিখে দেওয়া প্রথম বিবরণে তারা খুব কঠোরভাবে বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করেছে। দীর্ঘ বিবৃতিতে তারা সুস্পষ্টভাবে বলেছে, ''বর্তমান সরকার 'নাস্তিক' ব্লগারদের গ্রেপ্তার করে মৌলবাদীদের পাতা ফাঁদে হেঁটে যাচ্ছে।'' মৌলবাদীদের বানানো ৮৪ ব্লগারের তালিকা সরকারিভাবে গ্রহণ এবং পত্রিকায় প্রকাশেরও সমালোচনা করেছে তারা। আইএইচইইউ-র প্রেসিডেন্ট তাঁর বার্তায় উল্লেখ করেছেন, ''নাস্তিক ব্লগারদের বিরুদ্ধে সরকারি ধরপাকড় রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত''।

দ্বিতীয় স্টেটমেন্টটি তারা দিয়েছে এপ্রিল মাসের নয় তারিখে। 'কল টু অ্যাকশন : ডিফেন্ড দ্য ব্লগারস অব বাংলাদেশ' শিরোনামের এ বিবৃতিতে সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের মুক্তচিন্তকদের উপর আগ্রাসনের প্রতিরোধ করার আহবান জানিয়েছে সংগঠনের সদস্যদের। নির্দেশ দিয়েছে প্রতিবাদ করার। প্রতিবাদের ধরন হতে পারে র‍্যালি, অনলাইন ক্যাম্পেইনিং অথবা বাংলাদেশের অ্যাম্বাসেডর ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি লিখা। তারা ইতোমধ্যেই এসব কর্মসূচি শুরু করেছে।

'এথিস্ট অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনাল' (এএআই) মুক্তচিন্তকদের আরেকটি খুব বড় সংগঠন। ১৯৯১ সালে প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠন আটককৃত ব্লগারদের তাৎক্ষণিক মুক্তি দাবি করে বিবৃতি দিয়েছে এপ্রিল মাসের ৪ তারিখে। এথিস্ট অ্যালায়েন্স-এর প্রেসিডেন্ট কার্লোস ডিয়াজ স্বাক্ষরিত বক্তব্যে তারা ব্লগারদের মুক্তির ব্যাপারে যে কোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। এছাড়া নিজেরা উদ্যোগী হয়ে আমেরিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের কাছে চিঠি লিখেছে। চিঠিতে তারা লিখেছে-

''প্রিয় অ্যাম্বাসেডর কাদের,
আমি এ চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব, রাসেল পারভেজ ও আসিফ মহিউদ্দীন নামের চারজন ব্লগারকে গ্রেফতারের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করছি। ফেব্রুয়ারি মাসে আহমেদ রাজীব হায়দার নামে আরেকজন ব্লগারকে হত্যা ও তারপর এ চার ব্লগারের গ্রেপ্তারের বিষয়ে আশা করছি আপনি অবগত।

বাংলাদেশের নাগরিকদের স্বাধীনতা এবং নিরাপত্তা রক্ষা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ ছেলেগুলোকে ধরা হয়েছে কেবল ধর্মে অবিশ্বাসের অজুহাতে–এছাড়া আর কোনো কারণ ছিল না। আপনি তাদের সঙ্গে একমত হোন আর না হোন, তারা আপনার দেশের নাগরিক, এবং মানবসন্তান। কেউ তাদের সঙ্গে একমত হোক আর না হোক, তারা নিজস্ব মত প্রকাশের ব্যাপারে নূন্যতম মানবাধিকার আশা করে এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রত্যাশা করে। আমি অনুরোধ করছি, ব্লগারদের তাৎক্ষণিক মুক্তির ব্যাপারে আপনি উদ্যোগী হবেন, এবং নিশ্চয়তা দেবেন যে আপনার দেশের নাগরিক– তা তিনি ধার্মিক হোন আর না হোন, যেন নির্ভয়ে নিরাপদ জীবন যাপন করতে পারেন।''

'এথিস্ট অ্যালায়েন্স ইন্টারন্যাশনালস'-এর এ চিঠি এবং স্টেটমেট একাধিক ভাষায় অনূদিত হয়েছে; সেগুলো তাদের ওয়েবসাইটে রাখা আছে। তাদের সদস্যদেরও এ ধরনের চিঠি অ্যাম্বাসেডরের কাছে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়েছে।

একই ধরনের চিঠি লেখা হয়েছে আরেকটি বৃহৎ মুক্তচিন্তা-কেন্দ্রিক সংগঠন 'সেন্টার ফর এনকোয়েরি' থেকেও। প্রয়াত দার্শনিক এবং লেখক পল কার্জের পরিচালনায় সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯১ সালে। তারপর থেকেই এটি সমাজে অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার দূর করে বৈজ্ঞানিক ধ্যানধারণা প্রসারের জন্য নিরলস কাজ করে যাচ্ছে।

তাদের সঙ্গে কাজ করা অন্য দুটো সহ-সংগঠন হল 'কমিটি ফর স্কেপটিকাল এনকোয়েরি' যারা পৃথিবীর যাবতীয় অলৌকিক এবং পারলৌকিক দাবির সত্যতা অনুসন্ধান করে, এবং অন্যটি হল 'কাউন্সিল ফর সেক্যুলার হিউম্যানিজম' যারা পৃথিবীতে মানবতাবাদ প্রসারের লক্ষ্যে কাজ করে। তারা সম্প্রতি আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিকে বাংলাদেশের ব্যাপারে উদ্বেগ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন। এপ্রিল মাসের এগারো তারিখে তাদের পক্ষ থেকে আমেরিকার সেক্রেটারি অব স্টেট জন কেরিকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে –

''প্রিয় সেক্রেটারি কেরি এবং পররাষ্ট্র অধিদপ্তর,

আমরা ধর্ম এবং বিশ্বাস থেকে মুক্তির অধিকার এবং মতপ্রকাশের অধিকারের জন্য, বিশেষত ধর্মনিরপেক্ষ এবং ভিন্নমত জ্ঞাপনকারী ব্যক্তিবর্গের জন্য কাজ করে যাওয়া অলাভজনক প্রতিষ্ঠান 'সেন্টার ফর এনকোয়ারি'র (সিএফআই)-এর পক্ষ থেকে আপনাকে লিখছি।

সিএফআই ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তার উপর আগ্রাসন-সংক্রান্ত বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে উদ্বেগ প্রকাশ করছে। আপনি সম্ভবত অবগত আছেন যে, বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যেই দেশের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নাস্তিক ব্লগারকে গ্রেপ্তার করেছে বাংলাদেশ পেনাল কোডের ২৯৫এ ধারা অনুযায়ী 'ধর্মানুভূতিতে আঘাতের' অজুহাতে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এম কে আলমগীর পুনরায় সতর্ক করে দিয়েছেন যে, তাদের তালিকায় আরও সাত ব্লগার আছেন যাদের অচিরেই ধরা হবে। কদিন আগেও একজন পত্রিকার সাংবাদিককে ধরা হয়েছে তালিকাভুক্ত ব্লগারদের লেখা বক্তব্য উদ্ধৃত করার অপরাধে।

ইতোমধ্যে দেশের রাজধানীর রাস্তায় হাজার হাজার উগ্রপন্থী ইসলামী আন্দোলনের নেতা মিছিল করেছে ব্লাসফেমি আইন বাস্তবায়ন এবং আরও ব্লগার গ্রেপ্তারের দাবিতে। তারা বলেছে, ২৫ এপ্রিলের মধ্যে তাদের দাবি মেনে নেওয়া না হলে তারা আরও বড় ধরনের সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি করবে।

বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক নাগরিক এবং রাজনৈতিক অধিকার সম্বলিত আর্টিকেল ১৮ এবং আর্টিকেল ১৯ অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করা একটি দেশ। এই অঙ্গীকারনামা দেশের প্রতিটি ব্যক্তিকে ধর্ম, বিশ্বাস এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় নিশ্চয়তা প্রদান করে। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের কেবল নতুন ব্লাসফেমি আইন প্রত্যাখ্যান করাই উচিত নয়, সে সঙ্গে ধর্মানুভূতিতে আঘাত-সংক্রান্ত বিদ্যমান আইনগুলোও বাতিল করা প্রয়োজন। সে সঙ্গে প্রয়োজন ধর্মীয় ধারণার সমালোচনা করার জন্য ব্লগারদের উপর নিগ্রহের সমাপ্তি।

আমরা পররাষ্ট্র অধিদপ্তরকে সসম্মানে অনুরোধ করছি তারা যেন ব্যাপারটির গুরুত্ব অনুধাবন করে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দায়বদ্ধতা প্রকাশে বাধ্য হবে।''

'ফ্রি সোসাইটি ইন্সটিটিউট অব সাউথ আফ্রিকা'র পক্ষ থেকে দক্ষিণ আমেরিকার বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে একই ধরনের চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা ধর্মীয় সমালোচনা করার অধিকার সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছে, এবং ব্লগারদের তালিকা ও হেনস্থা করার ব্যাপারে শঙ্কা প্রকাশ করেছে।

একই ধরনের শঙ্কা এবং উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে 'রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার', 'কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট' এবং 'গ্লোবাল ভয়েস এডভোকেসি' গ্রুপ থেকেও। এর মধ্যে রিপোর্টার্স উইদআউট বর্ডার আলাদা করে আসিফ মহিউদ্দীনের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতিতে শিরোনাম দিয়েছে- ''ব্লগার আসিফ মহিউদ্দীন অ্যারেস্টেড ওভার 'ব্লাসফেমিয়াস ব্লগ পোস্টস'।'' সেখানে তার উপর আগে মৌলবাদীরা যেভাবে আঘাত করেছে এবং পরে সরকারি চাপে যেভাবে তার ব্লগ ব্যান করা হয়েছে তার সমালোচনাসহ রাজীব হায়দার হত্যার উল্লেখ আছে। একই বিবৃতিতে সুব্রত অধিকারী শুভ, মশিউর রহমান বিপ্লব ও রাসেল পারভেজসহ সকল ব্লগারের মুক্তি দাবি করা হয়েছে।

'কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট' এর শিরোনাম ছিল– 'ফোর ব্লগারস অ্যারেস্টেড এমিড ক্র্যাকডাউন ইন বাংলাদেশ'। 'গ্লোবাল ভয়েস এডভোকেসি' গ্রুপের শিরোনাম ছিল– 'বাংলাদেশ ; গ্লোবাল ভয়েসেস কনডেমস অ্যাসল্ট অন ব্লগারস'। ৬ এপ্রিল প্রকাশিত এ বিবৃতিতে সংস্থাটি ব্লগারদের হেনস্থা করার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। তাদের বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে, বাংলাদেশের সংবিধানেই 'চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দান' এবং 'বাক ও ভাবপ্রকাশের স্বাধীনতা' [আর্টিকেল ৩৯ (১,২)]–এর উল্লেখ রয়েছে। বিবৃতিতে এটাও উল্লেখ আছে যে, বাংলাদেশ ২০০০ সালে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আন্তর্জাতিক অঙ্গীকারনামায় (আর্টিকেল ১৮) সাক্ষর করেছিল।

বিভিন্ন সংগঠনের বাইরে বহু মুক্তচিন্তক স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশের ব্লগারদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন তার 'সলিডারিটি উইদ অ্যাথিস্টস অব বাংলাদেশ' শিরোনামের ব্লগের [http://freethoughtblogs.com/pharyngula/] মাধ্যমে। ইউনিভার্সিটি অব মিনিসোটা মরিসের এই অধ্যাপক আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন একজন জীববিজ্ঞানী। রিচার্ড ডকিন্স, জেরি কোয়েন প্রমুখ বিশ্ববিখ্যাত জীববিজ্ঞানীদের সঙ্গে একই কাতারে তাঁর নাম উচ্চারিত হয়। তিনি বাংলাদেশের আটককৃত ব্লগারদের জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের সঙ্গে সলিডারিটি প্রকাশ করেছেন, অর্ধ-গোলার্ধ দূরে অবস্থিত ছোট্ট দেশটিকে স্মরণ করে 'বি' [বি ফর বাংলাদেশ] আদ্যাক্ষরযুক্ত লোগো ব্যবহার করেছেন তাঁর ব্লগে। এই 'বি' আদ্যাক্ষরযুক্ত লোগো ব্যবহার করে ব্লগ লেখায় অনুপ্রাণিত করার ব্যাপারটি প্রথমে প্রকাশ করেছিলেন 'ইয়ং এথিস্টস সার্ভাইভাল গাইড' গ্রন্থের লেখক এবং 'ফ্রেন্ডলি এথিস্ট' ব্লগসাইটের পরিচালক হেমন্ত মেহতা।

বাংলাদেশের বহুল আলোচিত ও নারীবাদী সাহিত্যিক তসলিমা নাসরিন তার ব্লগে (http://freethoughtblogs.com/taslima/) বেশ কয়েকটি পোস্ট দিয়েছেন বাংলাদেশে ব্লগারদের উপর সাম্প্রতিক নিগ্রহ শুরু হওয়ার পর থেকেই। বাংলাদেশে নাস্তিকেরা কীভাবে নিপীড়িত হচ্ছেন তার উপর বেশ কিছু ব্লগপোস্ট দিয়েছেন তিনি।

মরিয়ম নামাজী আরেকজন বিখ্যাত অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট। ইরানী বংশোদ্ভূত এই সাহসী নারী ২০০৫ সালে 'সেকুলারিস্ট অব দ্য ইয়ার' নির্বাচিত হয়েছিলেন তার অ্যাক্টিভিজমের কারণে। তিনি বাংলাদেশের ব্লগারদের আটকের পর থেকেই ব্লগ লিখে চলেছেন তার উদ্বেগ জানিয়ে। এপ্রিলের দুই তারিখে লেখা একটি ব্লগের শিরোনাম– 'স্টপ থ্রেটস অ্যান্ড মার্ডার অব এথিস্ট ব্লগারস ইন বাংলোদেশ'। তিনি আরেকটি ব্লগ পোস্টে সবাইকে আগামী ২৫ এপ্রিল বাংলাদেশের ব্লগারদের স্মরণে আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ব্লগার-সমর্থন দিবস (ইন্টারন্যাশনাল ডে টু ডিফেন্ড বাংলাদেশ ব্লগারস) হিসেবে গ্রহণ করার আহবান জানিয়েছেন।

বহির্বিশ্বের মিডিয়া এবং সংবাদপত্রগুলোতেও বাংলাদেশের ব্যাপারে নেতিবাচক সংবাদ এসেছে ব্লগারদের উপর ধরপাকড় চালানোর পর। সিএনএন, বিবিসি, হাফিংটন পোস্ট, স্লেটসহ বহু মিডিয়ায় মুক্তচিন্তকদের গ্রেফতারের ব্যাপারে সরকারের সমালোচনামূলক প্রবন্ধ এবং পোস্ট এসেছে। ব্লগারদের মুক্তির দাবিতে পিটিশনও হয়েছে বেশ কিছু ব্যক্তি এবং সংঘের পক্ষ থেকে। এর মধ্যে আমেরিকান হিউম্যানিস্ট আমেরিকার অ্যাম্বেসেডরকে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছে তাদের পিটিশনে। বোঝাই যাচ্ছে আন্তর্জাতিক চাপ ক্রমশ বাড়ছে।

অনেকেই ধারণা করছেন সরকার যদি এ ব্যাপারে তাদের অবস্থান পরিবর্তন না করেন,যদি ব্লগারদের বাকস্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা পোষণ করে তাদের মুক্তি না দেন, তবে তা বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তির জন্য শুভ ফলাফল বয়ে আনবে না।

বহির্বিশ্বের পাশাপাশি দেশের ব্লগাররাও নানা ধরনের কর্মসূচি পালন করছেন। ব্লগারদেরদের গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়ায় দেশের প্রখ্যাত ব্লগসাইটগুলো ব্ল্যাকআউটে চলে যায় গত । চারদিনব্যাপী ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করেছিল আদিবাসী বাংলা ব্লগ, আমার ব্লগ, আমরা বন্ধু, ইস্টিশন, উন্মোচন, ক্যাডেট কলেজ ব্লগ, চতুর্মাত্রিক, নাগরিক ব্লগ, নকশা ব্লগ, প্রজন্ম ব্লগ, প্রযুক্তিবার্তা, বিজ্ঞান স্কুল ব্লগ, মুক্তমনা, মুক্তাঙ্গন, মুক্তচিন্তা ব্লগ, সচলায়তন, সরব, স্বাধীন বাংলা স্টেশন এবং শৈলীসহ বাংলাদেশের বাকস্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের ব্লগসাইটগুলো।

এভাবেই ধর্মঘটে থাকাকালীন একসময় জন্ম নেয় বাংলা কমিউনিটি ব্লগ অ্যালায়েন্স (বিসিবিএ)-এর [www.banglablogalliance.org], এই নবগঠিত 'বাংলা কমিউনিটি ব্লগ এলায়েন্স'-এর মাধ্যমে ব্লগগুলো চারদিন পর ব্ল্যাক আউট থেকে ফিরলেও, আটককৃত ব্লগারদের মুক্তির জন্য সার্বক্ষণিক কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার করছে। তারা ব্লগ এবং ব্লগারদের বাকস্বাধীনতার উপরে যে কোনো ধরনের হামলার ব্যাপারে একসঙ্গে কাজ করবে বলে শপথ করেছে। প্রত্যেক ব্লগ সাইটের উপরের দিকে ব্যানারে শোভা পাচ্ছে– 'অবিলম্বে আটক ব্লগারদের সসম্মানে মুক্তি দিতে হবে' শ্লোগান।

পাশাপাশি তারা ব্লগে ব্লগারদের ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা, ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী অবস্থান নিশ্চিত করা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে অবস্থান চির অটুট রাখাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। তাদের লড়াই যেমন চলবে রাজপথে, তেমনি চলবে ব্লগের পাতাতেও; স্বাধীন থাকবে বাংলা ব্লগ। চলবে ব্লগারদের মুক্তির জন্য ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনও।

অভিজিৎ রয়