ছাত্ররাজনীতির অবক্ষয়ঃ দায় কার?

মোহাম্মদ সেলিম
Published : 11 July 2010, 01:44 PM
Updated : 11 July 2010, 01:44 PM

রাজনীতির বাইরে এখন কেউ নেই, কিছু নেই, রাজনীতি না থাকলে গণতন্ত্রও থাকে না। বিরাজনীতিকরণের চেষ্টা যে কখনো কখনো হয়নি, তা বলা যাবে না, কিন্তু সমাজের সাধারণ মানুষ তা গ্রহণ করেনি। তাই বলে রাজনীতির নামে অতি বাড়াবাড়িও মানুষ পছন্দ করে না। সেটা হরতালের নামে বিরোধীদলের গাড়ি পোড়ানো, মানুষ হত্যা আবার হরতাল প্রতিরোধে আইন শৃংখলা বাহিনীর অতি তৎপরতা যাই হোক কোনটাই সমর্থনযোগ্য নয়।

বর্তমানে দেশের শিক্ষাঙ্গনে মাথা ব্যাথার বড় কারণ হলো ছাত্র-রাজনীতি। ছাত্র রাজনীতির পক্ষে বিপক্ষে বিতর্ক বহু পুরনো। মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে ছাত্র লীগের পেশী শক্তির নানা ঘটনা প্রায়ই সংবাদ মাধ্যমে শিরোনাম হচ্ছে। অস্ত্র-সস্ত্রসহ ক্যাডারদের ছবি পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। পত্রিকায় ছবি ছাপা হওয়ায় তারা গৌরাবান্নিত বোধ(?) করে থাকতে পারে। কারণ গুরুত্বপূর্ণ বা প্রভাবশালী না হলে তো পত্রিকায় ছবি ছাপা হয় না।

বাস্তবতা হলো দু'একটি বাম ছাত্র সংগঠন বাদ দিলে বড় দলগুলোর কোন ছাত্র সংগঠনই প্রকৃত অর্থে ছাত্রদের দাবী-দাওয়া সম্পর্কিত ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করে না। দলীয় এজেন্ডা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে, শিক্ষার দিকে তাকানোর ফুসরত তাদের নেই। আর ছাত্রনেতাদের আয়-উন্নতির জন্য শিক্ষা খুব একটা কাজে লাগে না, কাজে লাগে ছাত্র পরিচয়ে চাঁদাবাজির জন্যে।

ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের গৌরবময় আন্দোলন এবং সংগ্রামের ইতিহাস যুক্ত। সেই গৌরবগাথাঁও তাদের অজানা। বর্তমানে বিভিন্ন সরকারি কলেজে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পুরোনো উপসর্গ রয়েছে ভর্তি বাণিজ্য। ছাত্র রাজনীতির নামে যে কোন উপায়ে, নুন্যতম সময়ে সীমাহীন অর্থ-বিত্তের অধিকারী হওয়াই লক্ষ। এই প্রবণতা গত দুই দশকে ক্রমে বেড়েছে। ছাত্রদের হাতে অর্থ-অস্ত্র তুলে দেওয়ার রাজনীতি অনেক দিনের পুরনো।

ছাত্র রাজনীতির অবক্ষয়ের জন্য কেবল ছাত্ররাই দায়ী? অভিভাবক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ তাঁদের কোন দায় নেই? ছাত্র রাজনীতিতে সুস্থ ধারা ফিরিয়ে আনতে গেলে শুধু ঘৃণা, সমালোচনা দিয়ে সম্ভব নয়। সহানুভূতি, সহযোগিতা, সহমর্মিতার প্রয়োজন। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদে নিয়মিত নির্বাচনের প্রচলন করতে হবে। অÑছাত্ররাই, ছাত্র-রাজনীতিকে বেশি দূষিত করছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বলে ছাত্র লীগ শিরোনাম হচ্ছে, বিএনপি আমলে ছাত্রদলের চেহারা এর চেয়ে ভালো ছিল না। কারণ নকল, টেন্ডার, ভর্তি বাণিজ্যের ইস্যুতে কোন ছাত্র সংগঠনকেই ভিন্ন অবস্থানে দেখিনি। জাতীয় রাজনীতি বা সমাজ থেকে তো ছাত্ররা বিচ্ছিন্ন নয়।

বাস্তবতা হলো দু'একটি বাম ছাত্র সংগঠন বাদ দিলে বড় দলগুলোর কোন ছাত্র সংগঠনই প্রকৃত অর্থে ছাত্রদের দাবী-দাওয়া সম্পর্কিত ইস্যু নিয়ে রাজনীতি করে না। দলীয় এজেন্ডা নিয়ে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে, শিক্ষার দিকে তাকানোর ফুসরত তাদের নেই। আর ছাত্রনেতাদের আয়-উন্নতির জন্য শিক্ষা খুব একটা কাজে লাগে না, কাজে লাগে ছাত্র পরিচয়ে চাঁদাবাজির জন্যে

মূল রাজনীতিতে পেশী শক্তি, অর্থের দৌরাত্ব থাকলে ছাত্ররা কেন সে পথে যাবে না? কথায় আছে বড় হাল যে দিকে যায়, ছোট হালও সে পথে যায়। ছাত্রদের কী কেবল রাজনীতিবিদরাই ব্যবহার করেন? শিক্ষকরা কি করেন না? হলফ করে বলা যাবে না। ভি. সি./ প্রো ভি. সি. বা কোন উচ্চ পদ পেতে ছাত্রদের তদবির বেশ সহায়ক হয় শুনেছি। সুতরাং ছাত্র-রাজনীতিকে যারা কুলষিত করছেন তাদের মুখে ছাত্র-রাজনীতির নিন্দা শোভা পায় না। বলার অপেক্ষা রাখে না জাতীয় স্বার্থে ছাত্র রাজনীতিতে সুস্থ গুণগত পরিবর্তন অপরিহার্য। এর অন্যতম শর্ত প্রধান দু'দলের মধ্যে ছাত্র-স্বাথে ঐকমত্য।

সরকার বিরোধী আন্দোলন এবং নির্বাচনী প্রচারণায় দু'দলই ব্যাপকভাবে এই তরুণদের ব্যবহার করে। এবং জাতি গঠনে এই তরুণ শক্তির গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার বিরাট সুযোগ আছে। ছাত্ররা রাজনীতি করবে আর্দশের জন্য। এমনি মহৎ কোন লক্ষ বা উদ্দেশ্য কী আছে? আমাদের সমাজে অনুকরণীয়। সত্যিকার অর্থে উদার মানবিক গুণাবলী সম্পন্ন নির্লোভ মানুষ কি খুব বেশী আছে? ছাত্ররা কাদের অনুসরণ করছে? এই ব্যর্থতার দায় আমরা কেউ এড়াতে পারবো না। বাবা নিজে সৎ না হলে সন্তানকে সৎ হবার পরামর্শ দিতে পারে না। অভিভাবক শিক্ষক, রাজনীতিবিদ –প্রত্যেকের দায়িত্ব তরুণ প্রজন্মের সামনে আদর্শবাদিতার মূর্তরূপ উপস্থাপন করা।