নয়াদিল্লির ঘটনা ও রক্ষণশীলতার সংস্কৃতি

হামিদা হোসেন
Published : 30 March 2016, 09:13 AM
Updated : 30 Dec 2012, 07:03 AM

অবশেষে মৃত্যুই ডেকে নিল মেয়েটিকে। ভারতের মিডিয়া ওর নাম প্রকাশ করেনি, ভিকটিমের নাম প্রকাশ না করার নীতি মেনে ওরা কাজটা করেছে। আগামীতেও মেযেটির নাম প্রকাশ না করা বা তার পরিবারের সাক্ষাৎকার ইত্যাদি না নেয়ার অঙ্গীকার করেছে মিডিয়া। এসব কারণে ভারতের মিডিয়ার প্রশংসা করতে হবে।

তেইশ বছরের মেযেটি প্যারামেডিকেল কলেজের ছাত্রী। ঘটনার রাতে বন্ধুর সঙ্গে সিনেমা দেখে ফেরার পথে বাসে গণধর্ষণের শিকার হয় সে। তারপর আরও নির্মম নির্যাতনের পর ওকে বাস থেকে রাস্তায় ফেলে দেয় নিপীড়করা। দিল্লির সেরা হাসপাতালে চিকিৎসা চলে ওর। এরপর ওকে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়।

মাস দুয়েক আগে উপমহাদেশের আরেকটি মেয়ে একইভাবে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে উঠে। মালালা ইউসুফজাইয়ের ওপর এই আক্রমণে আলোড়ন উঠেছিল গোটা বিশ্বে। আর দিল্লির ঘটনা নাড়িয়ে দিযেছে উপমহাদেশ। দুটো ঘটনার প্রেক্ষিত ভিন্ন। কারণও আলাদা। পাকিস্তানে এখন তালেবান নামের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তি সক্রিয় রয়েছে। ওদের আইডিওলজি বলে, নারী সবরকম ব্যক্তিঅধিকার প্রাপ্তির অযোগ্য। তাই নারীর শিক্ষাগ্রহণের অধিকারও কেড়ে নিতে চায় ওরা। এজন্য মালালার ওপর আক্রমণে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে। তবে মানুষের আলোচনা আর আবেগের জায়গা দখল করেছে পাকিস্তানের মালালা আর ভারতের নাম-না-জানা মেয়েটি। প্রসঙ্গটি তাই উল্লেখ করা।

নয়াদিল্লির ওই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায় যে, ভারত এখন অনেক এগিয়ে গেলেও কিছু সমস্যা ওই সমাজে রয়ে গেছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের সমাজব্যবস্থায় একটা জায়গায় বড় মিল। সেটা হল রক্ষণশীলতার দিক থেকে। এসব দেশে মেয়েরা এখন শিক্ষাদীক্ষায়, কাজেকর্মে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে এই রক্ষণশীল সমাজের প্রতি একটি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে। সমাজ তখন দেখছে এই মেয়েরা কী পোশাক পরছে বা কীভাবে চলছে ইত্যাদি বিষয়। এগুলো তাদের চোখে অগ্রহণযোগ্য হয়ে উঠে। রক্ষণশীল সমাজ তখন বলতে চায় যে, 'তুমি নারী, তোমার পোশাকই আমাকে উদ্বুদ্ধ করছে তোমার সঙ্গে পাশবিক ব্যবহার করতে।'

কিন্তু বাস্তব সত্য হল, ওই চ্যালেঞ্জটা। রক্ষণশীল সমাজের ওই পুরুষরাই অনেক সময় তথাকথিত পর্দা করা মেয়েদের ধর্ষণ করছে। এমনকী শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। বছর কয়েক আগে রংপুরের এক শিশু স্কুলছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন তুলেছিল। মাত্র দশ কী এগারো বছরের ওই মেয়েটি স্কুলে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্তকারীতের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার ভয়ে পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিল। উত্ত্যক্তকারীরা তখন ওই পুকুরের পারে দাঁড়িয়ে মেয়েটিকে ডুবে যেত দেখেছে। এমনকী ওরা মেয়েটির ওই ডুবে যাওয়া নিশ্চিত করে তবেই ওখান থেকে সরেছে। পাশবিকতার দিক থেকে এ ঘটনা দিল্লির ঘটনার চেয়ে কম ভয়াবহ নয়।

দিল্লির ওই তরুণী কলেজছাত্রী আর রংপুরের ওই শিশু স্কুলছাত্রীর নিয়তি শুধু এক নয়, দুজনের প্রতি রক্ষণশীল সমাজের কিছু পুরুষের পশু হযে ওঠার কারণ একই। সমাজ সাধারণভাবে নারীর দিক থেকে পাওয়া চ্যালেঞ্জটাকে মেনে নিতে পারছে না। আর তাই সময়-সুযোগ পেলেই কিছু কিছু নারীর ওপর পাশবিক আচরণ করছে।

নারীর প্রতি সমাজের এই পাশবিকতার ঘটনাগুলো থেকে একটি প্রশ্নই মনে জাগা স্বাভাবিক। কেন এতটা অনিরাপদ হবে নারীর জীবন? প্রথমত, নারীরধর্ষক বা নারীনিপীড়করা মনে করে, এভাবে তারা পৌরুষ প্রদর্শন করতে পারছে। দ্বিতীয়ত, তাদের ধারণা, নারীর প্রতি এ ধরনের আচরণ সহজেই করে ফেলা যায়। নারী খুব সহজ শিকার বলে তাদের ক্ষতি হওয়ার ভয় কম। কারণ অনেক সময় পুলিশ-প্রশাসনও নিপীড়কদের পক্ষে থাকে। ধর্ষণের শিকার নারীর প্রতি সহানুভূতির পরিবর্তে পুলিশ নেতিবাচক ধারণা পোষণ করতে পারে। সেক্ষেত্রে নারীর জন্য ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হযে যায়।

এমনকী কখনও কখনও পুলিশ বা সামরিক বাহিনীর সদস্যরাও ধর্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হযে যায়। দিনাজপুরে ইয়াসমিন আর চট্টগ্রামে সীমা চৌধুরীর পুলিশ সদস্যদের দ্বারা গণধর্ষিত হওয়ার কথা আমরা ভুলে যাইনি। ১৯৯৫ সালে ইয়াসমিন নামের পনেরো বছরের কিশোরীটিকে তিন পুলিশ সদস্য ধর্ষণ করলে সে মারা যায়। এর দু' কী তিন বছর পর আলোড়ন তোলে সীমা চৌধুরীর ঘটনা। এখানেও ধর্ষক পুলিশ। ইয়াসমিনকে ধর্ষণ ও হত্যার জন্য দায়ীদের শাস্তির রায় পেয়েছি আমরা। কিন্তু সীমার বেলায় পাইনি। মামলায় পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে বিচারক আসামীদের পুরোপুরি রেহাই দেন। তবে সেক্ষেত্রে তিনি পুনঃতদন্তের আদেশ দিতে পারতেন। সেটা করেননি বলে মৃত সীমার পরিবার বিচার থেকে বঞ্চিত রয়ে গেলেন। আমাদের এই মহানগরী ঢাকার বুকে সিমি নামের চারুকলার এক ছাত্রীকে হয়রানির শিকার হযে আত্মহত্যা করতে হয়েছিল, এ ঘটনা আমরা ভুলে যাইনি। এ ঘটনায়ও অপরাধীদের সঙ্গে কিছু পুলিশ সদস্যের যোগাযোগ ছিল বলে মেয়েটির পরিবারকে এখনও পর্যন্ত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

সম্প্রতি পুলিশের দ্বারা নারীনিপীড়নের কিছু ঘটনার কথা আমরা শুনতে পাচ্ছি। ঢাকায় দিনে-দুপুরে আদালত চত্বরে একজন মেয়েকে পুলিশ সদস্যরা হয়রানি করে। সেটা এই ক'মাস আগের ঘটনা। তারপর কুষ্টিয়াতে থানায় মা-মেয়েকে তিনদিন আটকে রেখে মেয়েকে ধর্ষণ করার ঘটনা তো আরও নির্মম। পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় সম্প্রতি রক্ষক বাহিনীগুলোর দ্বারা নারীধর্ষণের ঘটনা বাড়ছে। গত দু'তিন মাসে এমন একাধিক ঘটনার কথা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নজরে এসেছে। আমরা খুব শিগগির বিষয়গুলো নিয়ে তদন্তে যেতে চাচ্ছি।

ভারত, বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মতো রক্ষণশীল সমাজে কেন নারীরা ধর্ষণের শিকার হবেন এটা নিয়ে সমাজের সব পক্ষের ভাবা উচিত। নানা গবেষণায় দেখা গেছে, ভারতে নারীর প্রতি সহিংসতার মাত্রা বাড়ছে। তবে নয়াদিল্লিতে ধর্ষণের ঘটনা বেশি ঘটলেও কোলকাতায় কম বা দক্ষিণ ভারতের বড় শহরগুলোতে এমন উদাহরণ প্রায় নেই। তাই এসব জায়গার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে ধর্ষণের ঘটনা যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে কীভাবে কাজ করা যাবে সে সিদ্ধান্তে আসা যায়। মোট কথা, ধর্ষক হযে ওঠার সাইকালজি থেকে পুরুষকে সরিয়ে নিতে হবে। এটা মুধু নারীর একার দায়িত্ব নয়, গোটা সমাজের দায়িত্ব।

যেকোনো ধর্ষণ বা নারীনির্যাতনের ঘটনায় দুটি বিষয় থাকে। প্রথমত, পরিবারগুলো অনেক সময় ঘটনা চেপে যেতে চায়। ফলে ন্যায়বিচারের জন্য মানবাধিকার সংগঠন বা নারী্ আন্দোলনকর্মীদের পক্ষে লড়াই চালিয়ে যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে। আমরা সমাবেশ বা মানববন্ধন করি, অপরাধীদের বিচার দাবি করি। কিন্তু রক্ষণশীল সমাজের চোখ-রাঙানির ভয়ে মেয়েদের পরিবার পিছিয়ে যায়।

দ্বিতীয়ত, ধর্ষণ বা এ ধরনের অপরাধের জন্য শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও সেটা সময়সাপেক্ষ। নয়াদিল্লির ঘটনায় অপরাধীদের শাস্তি হবে এটা ঠিক। তবে যেকোনো মামলায় চূড়ান্ত রায় পেতে পেতে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। সেক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় ভুলেও যাই যে কী ঘটেছিল। তাই আমি বলব শাস্তির ব্যবস্থা থাকাই ষথেষ্ট নয়। পুরুষের ধর্ষক বা নিপীড়ক হযে ওঠার পেছনে সামাজিক যে কারণগুলো থাকে- শিক্ষা বা মিডিয়ার মাধ্যমে সেগুলোই দূর করতে হবে।

একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, নয়াদিল্লির ঘটনায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে অভিজিৎ মুখার্জির কিছু প্রতিক্রিয়ার কথাও আমরা শুনেছি। তিনি প্রশ্ন করেছেন, প্রতিবাদকারীরা সেজেগুজে আসছেন, এরা কারা? এরা তো শিক্ষার্থী নন! প্রতিবাদ কে করছেন সেটা তো বিষয় নয়, বিষয় এমন একটি ঘটনা। যেখানে ঘটনাটি মানুষকে এতটা আঘাত করেছে সেখানে তার এই মন্তব্য ছিল অনভিপ্রেত। তবে এটাও খুব স্বাভাবিক। সমাজের মধ্যে যে রক্ষণশীল মানসিকতা রয়ে গেছে এটা তারই প্রকাশ।

তবে আমাদের সঙ্গে ভারতের একটি পার্থক্য এখানেই যে সেখানে গণতন্ত্রের চর্চাটা দীর্ঘদিন ধরে চলছে। তাই প্রথম দুয়েকদিন সরকার বিক্ষোভকারীদের পুলিশ দিয়ে দমন করার চেষ্টা করলেও খুব দ্রুত বিষয়টি বুঝতে পেরেছেন। তাই একজন নারী বিচারকের নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ছয় ধর্ষককে দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকারের উচ্চ মহল থেকে সবাই ক্ষোভ ও সমবেদনা প্রকাশ করছেন।

এখানে আমাদের দেশের সঙ্গে তাদের একটি পার্থক্য রয়েছে। সাম্প্রতিক এক বিক্ষোভে নিহত বিশ্বজিতের ঘটনায় দেখা গেছে, সে কোন দলের সদস্য বা তার হত্যাকারীরা কোন দলের এসব নিয়ে রশি-টানাটানি হযেছে বেশি। বিশ্বজিতের ঘটনাটি ভিন্ন ধরনের হলেও, নির্মমতার দিক থেকে একই রকম। তাই দু'দেশের দুটো ঘটনায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও প্রশাসনের ভূমিকার দিক থেকে এই অমিলের কথাটি উল্লেখ করা দরকার।

আমাদের দেশে এধরনের ঘটনায় সাধারণত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পুলিশ দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে চায় বা অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপাতে চায়। এটাই আমাদের সংস্কৃতি হয়ে গেছে। ওদিকে এখনও রয়ে গেছে পুলিশের অদক্ষতা, মামলাগ্রহণে অনিচ্ছা ইত্যাদি। নির্যাতনের শিকার নারী বা তাদের পরিবার প্রায়ই অভিযোগ করেন যে, পুলিশ মামলা নিতে চায়নি বা বলেছে যে ঘটনার পক্ষে যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ নেই ইত্যাদি। আবারা কখনও কখনও তারা বলে যে, ঘটনার জন্য মেযেটিই দায়ী। আবার পুলিশ মামলা নিলেও মেয়েটি কোর্টে নানাভাবে অপদস্থ হন। আইনজীবীরা অযাচিত প্রশ্ন করেন। এসব কারণেই নারীনির্যাতনের ঘটনায় মামলা করতে গিয়ে পিছিয়ে যায় পরিবারগুলো। এ পরিস্থিতি ধর্ষণের ঘটনা ঘটাতে অপরাধীদের পরোক্ষভাবে উৎসাহই দেয়।

এটা তো গেল একটি দিক- নিপীড়নের শিকার মেয়েদের অনেকেই খুব অসহায় ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত থাকে। এ দিক চিন্তা করে গত কয়েক বছরে নিপীড়নের শিকার নারীদের পাশে দাঁড়াতে সরকার কিছু উদ্যোগ নিয়েছেন। সারাদেশের মোট ছয়টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসস সেন্টার খোলা হযেছে যেখান থেকে মেয়েরা আর্থিক, আইনগত, সামাজিক ও মানসিক সব ধরনের সমর্থন পাবেন। তবে বছর দুয়েক আগে এক নিপীড়িত মেয়েকে একটি ক্রাইসিস সেন্টারে দেখতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে সেন্টারগুলো আরও ভালোভাবে মনিটর করা উচিত। নইলে অসহায় নারীরা যথাযথ সেবা পাবেন না। তেজগাঁও থানায় একটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার গঠন করা হয়েছে। একে আমার কাছে বেশি কার্যকর মনে হয়েছে। তবে যেখানেই যে ব্যবস্থা নেয়া হোক না কেন, এগুলোর নিয়মিত মনিটরিং খুব জরুরি।

আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে- আইন থাকলে হবে না, এর প্রয়োগ দরকার। ফতোয়া নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট একটি সুন্দর রায় দিয়েছেন। ফতোয়া দেওয়া যাবে, কিন্তু ফতোয়ার মাধ্যমে প্রদত্ত শাস্তির প্রয়োগ করা যাবে না। তবু তো ফতোয়া বন্ধ হয়নি। এর কারণ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা। ফতোয়ার ঘটনা ঘটলে সরকার যদি তৎপর হতেন তাহলে এটা বন্ধ হত। এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আমরা কোর্ট থেকে একটি নির্দেশনা পেয়েছিলাম যেটি ছিল খুব ইতিবাচক। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে সেল গঠন করার নির্দেশ দেওয়া হযেছিল। কিন্তু বাস্তবে এটা আমরা এখনও পাইনি। তাছাড়া যেসব জায়গায় সেল গঠিত হযেছে সেগুলো কতটা কাজ করছে এটা একটা প্রশ্ন বটে।

নারীধর্ষণ বা নারীনিপীড়নের ঘটনায় কযেকটি বিষয় তাই মেনে রাখা জরুরি। প্রথমত, এটি হচ্ছে ক্ষমতার লড়াই। পুরুষ মনে করে, আমার শক্তি আছে। আমি যা খুশি তাই করব। সমাজ আমাকে কিছু বলবে না, আমার নিন্দা হবে না। এই মানসিকতা দূর করার জন্য শিক্ষা ও মিডিয়ার মাধ্যমে সচেতনতামূলক কাজ করা দরকার।

দ্বিতীয়ত, দেশে আইনের শাসন না থাকলে এ ধরনের অপরাধ বাড়ে। তাই এটি নিশ্চিত করতে হবে। উন্নত দেশগুলোতে নারীনির্যাতন কমানোর ক্ষেত্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার বিষয়টি একটি ভূমিকা রেখেছে।

তৃতীয়ত, নারীর অধিকার সম্পর্কে আমাদের কমিউনিটিকে সচেতন হতে হবে। কমিউনিটি যদি মনে করে যে, নারীর প্রতি সহিংসতার জন্য নারীই দায়ী তাহলে সমাজে মৌলিক পরিবর্তন হবে না। সমাজকে বুঝতে হবে যে নারীর নিরাপত্তা পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তাহলেই সমাজে নারীনির্যাতন বন্ধে গুণগত পরিবর্তন আসবে।

ড. হামিদা হোসেন : মানবাধিকারকর্মী, গবেষক এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।