নিরাপত্তাহীন নারী

শামীমা বিনতে রহমান
Published : 23 Feb 2016, 07:12 AM
Updated : 23 Dec 2012, 11:47 AM

ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার ভেদরেখা যেখানে এসে এক লাইনে গতি পায়, সেটা হল- নারীর নিরাপত্তাহীনতা। এটা কতটা ভয়াবহ আর নৃশংস হতে পারে ১৬ ডিসেম্বর রাতে ভারতের রাজধানী দিল্লির সবচেয়ে নিরাপদ জায়গা সাউথ দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনা, সেটাকে এখন প্রতিনিধিত্ব করছে। প্রতিবাদি শ্লোগান, প্ল্যাকার্ড, জমায়েত আর প্রতীকী মিছিলে ক্ষোভের উত্তাপে উত্তাল ভারতীয় নারীরা। তাদের আশঙ্কা আর উদ্বেগের স্টিল ফটোগ্রাফ দিল্লির গ্যাংরেইপ- যেটার সামনে দাঁড়িয়ে তারা ইন্টারেক্ট করছেন তাদের নিরাপত্তাহীনতার দিকগুলো, বিশেষ করে রাস্তায়।

দিল্লি ছাড়িয়ে লক্ষ্ণৌ, উত্তরখন্ডসহ বেশিরভাগ রাজ্যেই এখন ২৩ বছর বয়সী প্যারামেডিক্যাল কলেজের ছাত্রীকে গণধর্ষণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলছে। ২২ ডিসেম্বর লক্ষ্ণৌতে উত্তর প্রদেশ বিধানসভার সামনে মোমবাতি জ্বালিয়ে ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে সাহস জোগানোর মিছিলে আসা লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রাভিন্দর কাউর বলেন, 'ওর জায়গায় আমিও থাকতে পারতাম। আমাকেও ছয়টা হায়েনা পুরুষ ধর্ষণ করে চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করতে পারত। আমরা কেউই যে নিরাপদ নই, এ ঘটনা কি তা বলে দিচ্ছে না? আমি অবশ্যই ধর্ষণের আইন বদলানোর দাবি জানাচ্ছি। ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। আর আমার জন্য নিরাপদ শহর চাই, অবশ্যই রাতে এবং দিনে। আমি হায়েনা পুরুষদের ভয় পেয়ে চলতে চাই না।'

সেদিন রাতে সিনেমা দেখে ছেলেবন্ধুর সঙ্গে বাড়ি ফেরার সময়, তখন রাত বেশি নয়, নয়টা কি সোয়া নয়টার মতো, সাউথ দিল্লির পশ এলাকা বলে পরিচিত মুনির্কাতে চলন্ত বাসে, ড্রাইভার রাম সিংসহ ছয় পুরুষ ধর্ষণ করে ওই প্যারামেডিক ছাত্রীকে। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হয়নি- বর্বরেরা এরপর মেয়েটির যোনিতে রড ঢুকিয়ে নির্যাতন করে। তার ছেলেবন্ধুকে রড দিয়ে পিটায়। এরপর তাদের দুজনকেই চলন্ত বাস থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় ফ্লাইওভারের ফুটপাতে।

বিবিসি'র দিল্লি প্রতিনিধি সৌতিক বিশ্বাস দিল্লিকে 'রেইপের রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, 'ভারতীয় নারীরা যে রাস্তায় কতটা নিরাপত্তাহীন এ ঘটনা তা বোঝার একটা মোক্ষম উদাহরণ। পয়সাঅলা আর ক্ষমতাঅলা কিছু নারী বাদ দিলে দিল্লিতে কোনো নারীই নিরাপদ নন। নারীর প্রতি অসম্মান এবং নিরাপত্তাহীনতা ভারতের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় দিল্লি ও উত্তর ভারতে অনেক বেশি।'

১৬ ডিসেম্বরের ওই গণধর্ষণের ঘটনার পর গত পাঁচদিনেই, ২১ ডিসেম্বরের মধ্যে দিল্লী পুলিশ ছয় ধর্ষণকারীকে গ্রেফতার করে ফেলে। এর একটা বড় কারণ অবশ্য গণমাধ্যম। এখানকার গণমাধ্যম একটা বড় প্রেশার গ্রুপ হিসাবে কাজ করছে। রাস্তায় আ্যাকটিভিস্টদের প্রতিবাদের পাশাপাশি প্রায় সব গণমাধ্যমই ঘটনার ফলোআপ, জরিপ, কারণ-অনুসন্ধান জাতীয় এত এত খবর প্রচার করছে। 'হোয়াই ইন্ডিয়ান ম্যান রেইপ' শিরোনামে নানা ব্লগে নারী-পুরুষ লেখকরা কারণ খুঁজছেন। পুরুষের ব্যর্থতা, হতাশা, হিন্দি ছবি, পর্নোগ্রাফির প্রভাব, পুলিশের দায়িত্বপালনে ব্যর্থতা, পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক মূল্যবোধ ইত্যাদি অনেক অনেক মতামত উঠে আসছে। রাস্তায় দাবি উঠছে ধর্ষণের আইনে সংস্কার আনার জন্য। ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন থেকে ফাঁসি করার কথাও বলছেন অনেকে।

১৬ই ডিসেম্বর, গণধর্ষনের রাতে:
এনডিটিভি'র ২০ ডিসেম্বরের অনলাইন ভার্সন থেকে জানা যায় ঘটনার ধারাবাহিকতা। এনডিটিভির রিপোর্ট অনুযায়ী, মেয়েটির সফটওয়্যার প্রকৌশলী ছেলেবন্ধু পুলিশকে দেওয়া স্টেটমেন্টে জানান, তারা দুজনই উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা। পড়াশোনা ও চাকরির সুবাদে তাদের দিল্লিতে থাকা। সেদিন রাত ৮ টায় সিনেমা দেখে প্রথমে অটোরিক্সায় করে তারা বাসস্টপেজে যান, মেয়েটির বাসার উদ্দেশে যাওয়ার জন্য। সে সময় একটি বাস তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। ড্রাইভার জানতে চায় তারা কোথায় যাবেন। জায়গার নাম বলতেই ড্রাইভার জানায় সে ওদিকেই যাচ্ছে, তারা বাসে উঠতে পারেন। তখন তারা বাসে উঠে বসেন। বাসে ড্রাইভারসহ ছিল ছজন পুরুষ। মেযেটি ও তার ছেলেবন্ধু বাসে ওঠার পরপরই বাকি পাঁচ পুরুষ মেয়েটিকে উত্যক্ত করতে শুরু করে। এতে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে টিজিং বন্ধ করতে বলেন। তখন একটা রড দিয়ে তারা তার মাথায় আঘাত করতে থাকে। মেয়েটি তার ছেলেবন্ধুকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসেন। আর তখনই ওই পুরুষরা ছেলেটিকে ছেড়ে দিয়ে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে।'

দিল্লির সাফদারজং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মেয়েটির একজন চিকিৎসক জানান, গণধর্ষণ এবং রডের আঘাতে মেয়েটির পরিপাকতন্ত্রের ক্ষুদ্রান্ত্র নামের অংশটি পুরোপরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ক্ষতি এতটাই ভয়াবহ যে, মেয়েটির শরীরের এই অতি-প্রয়োজনীয় অংশটিকে রক্ষা করাই মুশকিল হযে পড়েছে। পাঁচবার সার্জারি করতে হয়েছে তার শরীরের বিভিন্ন অংশে। এখন তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে আছেন।

বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, মুখে টিউব থাকার কারণে প্রথমদিকে মেয়েটির পক্ষে কথা বলা সম্ভব হচ্ছিল না। জ্ঞান ফেরার পর তিনি কাগজে লিখে জানান, 'আমি বাঁচতে চাই।' আরও লিখেন, 'ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।' চিকিৎসক বলেছেন, 'ওর বেঁচে ওঠার স্পৃহা অসাধারণ। এমন ভয়ঙ্কর আঘাতের পরও ওর শরীর টিকে থাকার জন্য লড়াই করছে।'

গণধর্ষণ বেড়ে যাওয়ার কারণ কী:
সাউথ দিল্লির এ ঘটনার দুদিন পর হরিয়ানায়, একদিন পর উত্তর প্রদেশে, তার পরদিন পূর্ব দিল্লিতে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। প্যারামেডিক ছাত্রীর ওপর এ বীভৎসতার পর এখন আড্ডা, ফেইসবুক, ব্লগ, নিউজপেপারের অপিনিয়ন পেইজ সবখানে একটাই আলোচনা 'ভারতীয় ছেলেরা কেন ধর্ষণ করে?' এ শিরোনামে অনেকেই নানা মত দিয়ে যাচ্ছেন। কেউ বলছেন, হতাশা, ব্যর্থতা থেকে ভারতীয় পুরুষরা ধর্ষণ করে। কেউ কেউ বলেন পর্নোগ্রাফি এর কারণ। হিন্দি সিনেমার প্রভাবকে দায়ী করছেন অনেকে। কেউ কেউ মেয়েদের পোশাক নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন। আবার প্রশ্ন উঠেছে, দিল্লিসহ গোটা উত্তর ভারতের পিতৃতান্ত্রিক সামাজিক মূল্যবোধই এর কারণ কিনা। 'ভারতীয় পুরুষরা কেন ধর্ষণ করে' এ শিরোনামেই একজন ব্লগে লিখেছেন, চাকরির সুবাদে উত্তর-পূর্ব ভারতের সেভেন সিস্টার দেশগুলোতে থাকার কারণে দেখেছি, তাদের সমাজে নারীকে এভাবে অসম্মান করার কথা ওরা ভাবতেই পারে না। মিজো, খাসি, বোড়ো জাতিগোষ্ঠির সমাজে এটা কল্পনাই করা যায় না যেটা দিল্লি এবং উত্তর ভারতের বাস্তবতা।

কিছু তথ্যের দিকে চোখ ফেরানো যাক। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো, ইন্ডিয়া'র হিসাবমতে, প্রতি ২০ মিনিটে ভারতে একজন নারী ধর্ষণের শিকার হন। ২০১০ সালে ২৪ হাজার ২০৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে রিপোর্ট হয়েছে যেটা ২০০১ সালের চেয়ে ১০ শতাংশ বেশি।

সাউথ দিল্লির ঘটনার পর টাইমস অফ ইন্ডিয়া পাঠকদের মধ্যে একটা জরিপ চালায়, ধর্ষণসহ যৌন হয়রানির ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কারণ বের করতে। ২১ ডিসেম্বর ওই জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, প্রতি ১০ জন নারীর মধ্যে ৭ জনই যৌন নিপীড়নের শিকার হন। এতে অংশ নিয়েছেন ৩ হাজার ৮৪০ জন, যাদের মধ্যে দু'হাজার জনই নারী। নব্বইভাগ নারী বলেছেন, যৌন নিপীড়নের ঘটনার পর তারা থানায় কোনো লিখিত অভিযোগ করেন না, এ কারণেই যে তাতে কোনো ফল হয় না।

ভারতের 'ন্যাশনাল মিশন অফ এমপাওয়ারমেন্ট অব উইমেন'র সদস্য রঞ্জন কুমারী বলেন, 'ধর্ষণ বা যেকোনো যৌন হয়রানির বেলায় কেবল মেয়েদেরই দোষারোপ করা ভারতীয় সমাজের দীর্ঘদিনের চর্চা, সমাজের নকশা। যে নকশা সবসময় মেয়েদের দায়ী করে বলে, এসব কিছুর জন্য তুমিই দায়ী। এটা নারীকে শক্তিশালী হতে দেয় না। তাই এধরনের ঘটনা বেশি করে ঘটার সুযোগ তৈরি হয়।'

কয়েক মাস আগে লক্ষ্ণৌতে পড়তে আসায় আমি এখানকার মেয়েদের সঙ্গে ব্যাপক ইন্টারেকশনে গেছি। লক্ষ্য করেছি যে, এখানকার মেয়েদের বেশিরভাগই মোটর বাইক চালায় এবং এক্কেবারে নিম্নবিত্ত পরিবারের মেয়েটিও জিন্সের প্যান্ট আর টিশার্ট পরে। এখানে জিন্সকে ইউনিসেক্সুয়াল পোশাক হিসাবে দেখা হয়, যেটা বাংলাদেশে নয়। আমি খেয়াল করেছি, আ্যপারেন্টলি মেয়েদের অনেক কনফিডেন্ট দেখালেও ওরা ছেলেদের কাছ থেকে নিজেদের অনেক দূরে সরিয়ে রাখে। পুরুষ সম্পর্কে ওদের ধারণা খুবই আশঙ্কার। ওরা সিনেমা দেখতে চাইলে বিভিন্ন মলের সিনেপ্লেক্সে যায়, সিনেমা হলে নয়, কারণ ওখানকার ছেলেরা খারাপ।

একইসঙ্গে উত্তর ভারতের মেয়েরা ভোগে সামাজিক লজ্জা ও চাপে। লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স শেষ করা ছাত্রী একতা গুপ্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, তুমি এখন কী করবে? সে বলেছিল, বিএড করব এখন। আমি খুবই আশ্চর্য্ হয়ে বললাম, কেন? একতা বলেছিল, বিএড করলে শিক্ষকতা পেশায় যাওয়ার সব সুযোগ রয়েছে। আর এটা যেহেতু একটা নির্দিষ্ট সময়ের তাতে আমার বাবা-মাও খুশি, স্বামীও খুশী হবে নিশ্চয়। এখানে আমরা মেয়েরা শিক্ষকতা এবং ব্যাংকের চাকরি বেশি পছন্দ করি। কারণ অন্যান্য চাকরিতে শহরের বাইরে যাওয়ার ব্যাপার থাকে, রিস্ক থাকে; এসব ভালো চোখে দেখে না অন্যরা।

ভারতীয় সমাজের কাছে নারীরা কেমন, সেটা বোঝানোর জন্য লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও ক্যাম্পাস ডিরেক্টর ড. অখিল আহমেদকে উদ্বৃত করতে চাই। আলাপ প্রসঙ্গে তিনি ভারতীয় নারীদের তুলে ধরছিলেন এভাবে: 'ভারতীয় নারীরা যাই করুক না কেন, চাকরি অথবা ব্যবসা- বাড়ি ফিরে ঠিকই রান্না করে স্বামী-সন্তানকে খাওয়াবে, এটা আমাদের ঐতিহ্য।'

ভারতীয় নারীর সংজ্ঞা আসলেই এরকম, বেশিরভাগ পুরুষের কাছে। তারা যত যোগ্যই হোক না কেন, 'ভালো' তকমাটাকে আয়ত্ত করতে গিয়ে সমাজের পুরুষতান্ত্রিক মূল্যবোধগুলার কাছে নিজেদের দ্বিধাহীনভাবে সমর্পণ করেন, টিকে থাকার জন্য।

মেয়েরা এখন বেশি করে কিনছে মরিচের স্প্রে:
সাউথ দিল্লির গণধর্ষণের ঘটনার পর বাড়ির অভিভাবকরা মেয়েদের চলাফেরায় আরেক দফা বাগড়া দিয়ে বসেছেন। লক্ষ্ণৌতে টাটা তানিস্কে চাকরি করেন শুভ্রা মালহোত্রা। তিনি বলেন, 'দেখুন ওরা যেখানটায় মেয়েটাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে, সেটা এমন এক জায়গা, যেখানে পুলিশ সবসময় টহল দেয়। প্রায় ১ ঘন্টা রাস্তার পাশে, শীতের রাতে গায়ে কোনো কাপড় ছাড়া একটা মেয়ে আহত অবস্থায় পড়েছিল, আর পুলিশ দেখলই না! আসলে এখানকার পুলিশ নারীদের ব্যাপারে একদমই সেনসেটিভ নয়। তাহলে, আমার বাবা-মা কেন ভয় পাবে না? রাস্তায় আমাকে কে রক্ষা করবে পুরুষদের ভয়ঙ্করতা থেকে?'

অনেক মেয়েই মনে করছেন, ভারত এগিয়ে যাচ্ছে, আধুনিক হচ্ছে। তাই এর ব্যবস্থাপনাও আধুনিক মেয়েদের চলাফেরার উপযোগী হতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক সাধনা ট্যান্ডন বলেন, 'আমার যখন কাজ শেষ হবে, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া শেষ হবে, প্রেমিককে নিয়ে ঘোরাঘুরি শেষ হবে, তখন আমি বাসায় ফিরব। একজন আধুনিক মেয়ের রাস্তায় চলাচলের জন্য যে নিশ্চয়তা দরকার সেটাই করতে হবে ভারত সরকারকে। সেজন্য তো আমি আমাকে থামিয়ে রাখতে পারি না!'

বেশিরভাগ চাকরিজীবী, শিক্ষার্থী মেয়ে জানেন পুলিশ আসলে কোনো সহযোগিতাই করে না। তাই তারা বেছে নিচ্ছেন নিজের মতো প্রতিরোধক ব্যবস্থা। এটা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে হায়দ্রাবাদে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় হায়দ্রাবাদ সম্পর্কে ২১ ডিসেম্বর প্রকাশিত এক খবর জানাচ্ছে, ১৬ ডিসেম্বরের গণধর্ষণের পর সেখানে মরিচের স্প্রে এবং স্টেনগান কেনার হার ব্যাপকভোবে বেড়ে গেছে। কে পি জর্জ নামের কোবরা পিপার স্প্রে'র সরবরাহকারী জানান, আগে চারদিনে তিনি মরিচের স্প্রের একটিমাত্র অর্ডার পেতেন, আর এখন দিনে পাচ্ছেন দুটি করে অর্ডার। তবে হায়দ্রাবাদে ছোট অস্ত্র কেনাবেচা কঠিন, তাই ওদের অনেকে দিল্লিতে অর্ডার করছেন। খবরে একজন ব্যবসায়ীকে উদ্বৃত করে বলা হয়, আগে যেখানে স্টেনগানের জন্য হায়দ্রাবাদ থেকে মাসে গড়ে ৩০টা কল পাওয়া যেত- এ কদিনে তা কমপক্ষে ২০ শতাংশ বেড়েছে।

১৬ ডিসেম্বরের গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে উত্তপ্ত হয়েছে লোকসভা। ২৭ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংসদীয় কমিটির সঙ্গে বৈঠকে বসবেন। এর মধ্যেই পুলিশকে নারীর প্রতি সংবেদনশীল ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানোসহ টহল পুলিশ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

এআইডিডব্লিউএ (অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক উইমেন এসোসিয়েশন), ওয়াইডব্লিউসিও (ইয়াং উইমেন খ্রিস্টান এসোসিয়েশন) এবং জেএনইউএসইউ (জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন)- এ সব সংগঠন রাস্তায় প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছে। সবার একটাই দাবি, ধর্ষকদের ফাঁসি চাই। দিল্লিসহ উত্তর ভারতের নারীরা ভুগছেন ভয়ঙ্কর আশঙ্কা আর উদ্বেগে, শহরের রাস্তায় কাজ বা পড়াশুনার জন্য চলাফেরা ছাড়া তাদের উপায় নেই, এ বাস্তবতার কথা জানেন বলেই।

শামীমা বিনতে রহমান: লেখক ও সাংবাদিক। সাংবাদিকতা বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষার্থে লক্ষ্ণৌ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছেন ।