দোষারোপের রাজনীতি ও অসহায় মানবতা

চিন্ময় মুৎসুদ্দী
Published : 2 March 2015, 03:26 PM
Updated : 15 Oct 2012, 08:02 AM

স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর সংসদীয় গণতন্ত্রের ২২ বছর ধরে যে ব্লেইম-গেইমের রাজনৈতিক-সংস্কৃতি চলছে তারই ধারাবাহিকতা দেখা যাচ্ছে রামুর মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনায়। ঘটনার পরদিনই ব্লেইম-গেইম শুরু করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি রামুতে গিয়ে বিএনপি'র স্থানীয় সংসদ সদস্যকে ঘটনার জন্য দায়ী করেন। তাঁর সফরসঙ্গী শিল্পমন্ত্রীও একই ভাষায় অন্য রাজনৈতিক পক্ষকে দোষারোপ করেন। বিএনপি-ও ব্লেইম-গেইমে অংশ নিয়ে সরকার ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করে। বিএনপি'র তদন্ত রিপোর্টে পরে একই কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৮ অক্টোবরের জনসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের মতোই বিএনপি'র এমপি ঘটনার জন্য দায়ী বলে মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ সব বক্তব্য তদন্তে সঠিক প্রমাণিত না হলে একজন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার কি তার রিপোর্টে সে কথা উল্লেখ করার সাহস রাখেন? ভারতের কোলকাতা শহরে একটি ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ভুল প্রমাণ করে তদন্ত রিপোর্ট দেওয়ার জন্য পুলিশের কমিশনার পর্যায়ের কর্মকর্তা দময়ন্তী সেনকে দূরের এক জেলায় গুরুত্বহীন পদে বদলি করে দেওয়া হয়। গলাবাজির রাজনীতির এই তো প্রশাসন।

২.
রামুতে প্রধানমন্ত্রীর বিলম্বিত সফর, সেখানে আয়োজিত জনসভায় আক্রান্তদের বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দেওয়া (অনির্ধারিত একজন হিসেবে দু'লাইন বক্তব্য দেন সত্যপ্রিয় মহাস্থবির, তা-ও প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে), আক্রান্তদের স্বল্প-সংখ্যায় উপস্থিতি, এবং আগুন দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে জড়িত ক'জনের সভাস্থলে বুক-ফুলিয়ে ঘোরাফেরা থেকে বুঝতে হয় সরকারি দলের কারও-কারও ইন্ধন ও অংশগ্রহণ ছিল এই নারকীয় ঘটনায়। ২৯ সেপ্টেম্বরের অল্পসময়ের ব্যবধানে বৌদ্ধদের ক'টি সংগঠনের ঢাকা ও চট্রগ্রামের ক'জন কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে নতুন কমিটি গঠন করেন। পরে এরাও সরকারের বক্তব্যের প্রতিধ্বনি করেন যা বিতর্ক সৃষ্টি করেছে।

৩.
শুরু থেকেই সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজ, বুদ্ধিজীবী মহল যতটা প্রতিবাদমুখর সরকার ঠিক ততটা তৎপর নন। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন না করা, রাজনৈতিক ব্লেইম-গেইম শুরু করা, প্রথম থেকেই বিরোধী দলকে দায়ী করা, প্রধানমন্ত্রীর বিলম্বিত রামু-সফর, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশের আগেই বিএনপি-দলীয় সংসদ সদস্য হামলার জন্য দায়ী বলে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘোষণা- ঘটনার নিরপেক্ষ অনুসন্ধানে প্রশাসনিক কমিটির ওপর প্রভাব ফেলতে বাধ্য। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর 'পুলিশ দায়িত্বপালনে অবহেলা করেনি' বলে দেওয়া সাফাই-বক্তব্যও যে সত্য নয় সেটা এখন দিনের আলোর মতো স্পষ্ট।

দেশের এতগুলো ঐতিহাসিক নিদর্শন বিনষ্ট করা হল অথচ আমাদের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এখনও এ নিয়ে কোনও উদ্বেগ প্রকাশ করেনি এটা আমাদের অবাক করেছে। এ সব ক্ষতি নিরূপণের কোনও চেষ্টাও দেখা যাচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কেই ক্ষোভ প্রকাশ করে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণের আশ্বাস দিলেও, নিম্নপদস্থ কর্মকর্তার নেতৃত্বে তদন্ত কমিটি গঠিত হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে সরকার ব্যাপারটিকে তেমন গুরুত্ব দেননি। প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে পরদিন রামুতে গেলে এ ঘটনায় তার সরকারের দৃঢ় অবস্থান তুলে ধরতে পারতেন।

এক লাখ টাকার চেক, পরিধেয় বস্ত্র আর প্রতিশ্রুতি দিয়ে এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়। পুড়ে যাওয়া বুদ্ধমুর্তি ও বিহারের পুননির্মাণ করেই সম্ভব হারানো সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা। কাজটি খুব সহজ নয় কিন্তু অসম্ভবও নয়। এ জন্য প্রয়োজন সরকারের আন্তরিকতা। সে আন্তরিকতা প্রত্যাশা করছেন বাংলাদেশের ঐতিহ্য-সচেতন মানুষ। ড. আনিসুজ্জামান বলেছেন, "রামুর ঘটনায় আমাদের সভ্যতা ও সংস্কৃতি ধ্বংস হয়েছে।" জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো.আনোয়ার হোসেন বলেছেন, "রামুর আগুনে বৌদ্ধদের আত্মাই পোড়েনি, পুড়েছে বাংলাদেশের আত্মাও।" এটা বুঝতে হবে বিহার বা মূর্তিগুলো কেবল বৌদ্ধদের সম্পদ নয়, এ আমাদের জাতীয় সম্পদ। আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শন। দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য রক্ষার জন্য রাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি হলেও দলবলসহ সরকারি ব্যক্তিদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ-সফরের টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে হলেও যোগার করা হয়। কিন্তু সভ্যতা ও সংস্কৃতির লালন হয় উপেক্ষিত। এই কর্মধারা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

৪.
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী রামু থানার তৎকালীন ওসির ভূমিকা রহস্যজনক, তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি উঠেছে। তারপরও প্রশ্ন থেকে যায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কী করেছেন? কক্সবাজারের ডিসি তখন কোথায় ছিলেন? দমকল বাহিনী কোথায় ছিল? প্রজ্ঞানন্দ মহাথেরোর বর্ণনা থেকে স্পষ্ট যে রামু থানার তখনকার ওসিকে ফোন করলে তিনি 'আসি আসি' বলেও আসেননি। দমকল বাহিনী অবতারণা করেছে এক তামাশার- সব জায়গায় তারা গিয়েছে বাড়িঘর ও বিহার পুড়ে যাওয়ার পর। রামুর বর্বরোচিত হামলার প্রস্তুতি ও হামলা চলে প্রায় ছয় ঘন্টা। পুরো সময় প্রশ্নবিদ্ধ রামু থানা ও কক্সবাজার জেলার পুলিশ, রামুর উপজেলা প্রশাসন এবং দমকল বাহিনী ছিল নিষ্ক্রিয়। ঘটনার জন্য বিএনপি'র এমপিকে দায়ী করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে কি বিএনপি এমপির নির্দেশেই তারা নিষ্ক্রিয় ছিল? তার নির্দেশেই ঘটনার শুরুতে ছাত্রলীগ মিছিল করেছে? সন্ধ্যায় আয়োজিত প্রতিবাদ-সভায় বিএনপি এমপি হয়তো উত্তেজনাকর বক্তব্য বলেছেন। একই সভায় আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ সরকারি দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতারাও তো ভাষণ দেন। এ কারণে শুধু একজন দায়ী হবেন কেন?

রামুর ঘটনার দীর্ঘদিন পরও মহাজোট সরকারের শরীক দলগুলোর একত্রে বসতে না পারাকে মহাজোট সরকারের অন্যতম শরীক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি সরকারের দুর্বলতা হিসেবে চি‎হ্নিত করেছেন। ‎তিনি বলেছেন,
"অথচ এই ১৪ দলের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে।"

৫.
জেলার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি কার্যকর কোনও রিপোর্ট তৈরি করতে পারবেন বলে মনে হয় না। বিভাগীয় কমিশনারের কথায় যে কর্মকর্তাকে উঠতে-বসতে হয় তার পক্ষে আমাদের দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের জটিল ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা প্রায় অসম্ভব। প্রধানমন্ত্রী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আভিযোগের পর কমিটি-প্রধানের নিশ্চয়ই ত্রিশঙ্কু অবস্থা। সে কারণে এ কমিটি আরও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নেতৃত্বে হওয়া উচিত ছিল। এ ক্ষেত্রে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন হওয়াই যথার্থ। সর্বদলীয় একটি পার্লামেন্টারি তদন্ত কমিটিও হতে পারত। বিএনপি-দলীয় সংসদ সদস্য দায়ী বলে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য তদন্ত-প্রক্রিয়ায় প্রভাব ফেলবে এবং দলীয় কর্মী-নেতা কেউ জড়িত থাকলে তাদের শাস্তির বিষয়টি প্রশাসনিক পর্যায়ে চাপা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মৎস্যজীবী লীগ ইত্যাদি সংগঠনের যে সব নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে তাদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ কী সিদ্ধান্ত নেয় তার ওপরই নির্ভর করছে এ ঘটনায় দলের প্রশ্রয় ছিল কিনা বা রয়েছে কিনা তা বুঝা।

বিএনপি'র স্থানীয় কোনও নেতা-কর্মীর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা পার্টির নৈতিক দায়িত্ব। রামুর ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের একটি প্রতিনিধি দলকে বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি'র চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া চীন থেকে ফিরে এসে রামু যাবেন বলে জানিয়েছেন। এ দলের সদস্যরা চারটি দাবি তুলে ধরেছেন তাঁর কাছে: একটি ত্রাণ তহবিল গঠন করে ক্ষতিগ্রস্থদের উপযুক্ত সহায়তা করা, ক্ষতিগ্রস্থ ও আক্রান্ত পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, মামলা-মোকদ্দমা থেকে রক্ষা করা এবং সবসময় বৌদ্ধসম্প্রদায়ের খোঁজখবর নেয়ার জন্য বিএনপি'র একজন প্রতিনিধি রাখা।

৬.
রামুর ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দেশের বিশিষ্টজনেরা কলাম লিখেছেন, অনেকে বিবৃতি দিয়েছেন। সারাদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভার আয়োজন করা হচ্ছে। ব্যক্তি পর্যায়ে লজ্জিত হওয়ার কথা বলেছেন অনেকে, ক্ষমা চেয়েছেন কেউ-কেউ। রামু, টেকনাফ, উখিয়া ও পটিয়ায় আক্রান্ত মানুষকে অর্থ ও দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করছেন অনেকে। ঢাকা, চট্রগ্রাম ও অন্যান্য জেলা থেকে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে সংস্কৃতিকর্মী, নাগরিক সমাজের সংঘবদ্ধ সদস্য এবং ব্যক্তি-পর্যায়েও অনেকে আক্রান্ত এলাকা সফর করে হতবিহ্বল মানুষদের সাহস দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিছু বিপথগামী স্বার্থবাজ মানুষের হিংস্র আচরণের পর সমব্যথীদের দেখে বৌদ্ধপল্লীর বাসিন্দারা আপাত স্বস্তি অনুভব করলেও, তাদের শঙ্কা কাটছে না। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনীতিবিদদের ওপর আস্থা স্থাপন করতে পারছেন না তারা। দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পারস্পরিক দোষারোপের ঘটনাও তাদের নতুন আতঙ্কের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় ঘটনাকে পুঁজি করে বৌদ্ধ-সংগঠনের কিছু কর্মকর্তার রাজনৈতিক অভিলাষ রামুর আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য নতুন বিপদ বয়ে আনতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

৭.
প্রথম দিন থেকেই বাংলাদেশের মিডিয়া রামুর ঘটনাটি জীবন্ত রেখেছে। নিয়মিত ফলো-আপ দিয়ে যাচ্ছে। ২৯ সেপ্টেম্বর শনিবার মধ্যরাতের ঘটনা পরদিন ভোর হওয়ার আগেই অনলাইন মিডিয়াগুলোতে চলে আসে। টেলিভিশনেও স্ক্রল চলে আসে সকালে। সোমবার থেকে প্রিন্ট মিডিয়া তাদের স্থানীয় ও জেলা প্রতিনিধি এবং বিশেষ প্রতিনিধির রিপোর্ট প্রকাশ করছে। এরই মাঝে অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গীতে রিপোর্ট করেছেন অনেকে। কেউ-কেউ ঘটনার বিশ্লেষণ করেছেন। চ্যানেল টুয়েন্টি ফোর'র মহসিনউল হাকিম হামলায় ব্যবহৃত একটি ট্রাকের মালিক ও চালককে খুঁজে বের করে কথা বলেছেন। একদিন পর সেই ট্রাক ও এর হেলপারকে পুলিশ আটক করেছে। এ সবই মিডিয়ার ইতিবাচক ভূমিকা ও প্রভাব। পুঁজির অশুভ অবস্থানের আওতায় মিডিয়াকর্মীর দায়িত্বসচেতনতা প্রশংসনীয়। পাশাপাশি ক'টি অপ্রধান দৈনিক অবশ্য রাজনৈতিক দলের স্বার্থ হাসিলের মতো করে ঘটনার বর্ণনা ও মতামত দেওয়ার চেষ্টা করেছে। সাধারণ পাঠক তা আমলে নিয়েছেন বলে মনে হয় না। কেউ কেউ জরুরি না হলেও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গটি এনেছেন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যার সঙ্গে রামুর বৌদ্ধদের নিয়তি একীভূত করা অযৌক্তিক। সেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ বার্মিজ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বিরোধে রামুর বৌদ্ধদের দায় কোথায়?

৮.
এই বর্বরোচিত হামলার পরও বুঝতে পারি সব শেষ হয়ে যায়নি, সব শেষ হবে না; যখন শুনি সেই দুর্যোগের রাতে অধ্যাপক শাহ আলম ও ফরিদ মেম্বার ক'জন সাহসী মানুষকে নিয়ে এগিয়ে আসেন নিরপরাধ নারী-শিশু-বৃদ্ধ-যুবাদের বাঁচাতে ও তাদের উপাসনালয় রক্ষা করতে। ফরিদ মেম্বার ও তার দল দুর্বৃত্তদের ঠেকিয়েছেন, রক্ষা করেছেন ফারিকুল বিহার। তারা সাহসী বীর। শাহ আলম শেষরক্ষা করতে পারেননি। তবুও তিনি এবং তার অনুগামীরা সাহসী বীর। তাদের জানাই আমাদের সশ্রদ্ধ অভিনন্দন। অভিনন্দন তাদেরও, যখন দেখি রামুর বৌদ্ধবিহার আর ঘরবাড়ি ধ্বংস হওয়ার পরপরই আফসান চৌধুরী লিখেন, ''শেইম ইজ নট এনাফ।'' ত্রিমিতি চাকমা বা প্রশান্ত ত্রিপুরা ধর্মীয় পরিচয়ে নয়, মানুষ হিসেবে ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করেন। এম এম আকাশ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে নিরপেক্ষতার আলোকে সব রাজনৈতিক শক্তির দুর্বলতা ও অপশক্তির আকাঙ্খা পাঠকের সামনে স্পষ্ট করে তোলেন। চ্যানেল ২৪-এর মহসিন-উল হাকিম জীবন বিপন্ন করে অপরাধে জড়িতদের ছবি ও কথা ক্যামেরাবন্দী করতে এগিয়ে যান। লুনা আলম বিন্দুমাত্র ভীত না হয়ে অনুসন্ধানী সাংবাদিকের দায়িত্ব নিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত রাজনৈতিক দলের সদস্যদের নাম রিপোর্টে উল্লেখ করেন। এবনে গোলাম সামাদ বাংলাদেশের বৌদ্ধ-মুসলিম সম্পর্কের হাজার বছরের ঐতিহ্য অনুসন্ধান করে এ দুই জনগোষ্ঠীর জীবনযাপনের সাদৃশ্যগুলো উপস্থাপন করে মানুষকে আলোকিত ভবিষ্যতের পথ দেখান।

৯.
রামুর ঘটনার শিকার মন্তিনি ও তাতু বড়ুয়ার প্রশ্ন- মানুষের ঘরে কি মানুষ আগুন দিতে পারে? এ সরল প্রশ্নের একটাই উত্তর: সে দিন রাতে যারা ঘরে ও উপাসনালয়ে আগুন দিয়েছেন তারা অজ্ঞানতার অন্ধকারে নিমজ্জিত মানুষের অবয়বে ইতর প্রাণীবিশেষ। এরা আসলে মুসলমানও নয়, হিন্দুও নয়, বৌদ্ধও নয়, খৃষ্টানও নয়।

১০.
আর পর্দার অন্তরালের কুশিলবদের মুখোশ উন্মোচন করা না গেলে বিপন্ন হবে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। তাই এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধে ঘুরে দাঁড়াতে হবে শুভবুদ্ধির ঐক্যবদ্ধ শক্তিকে ।

চিন্ময় মুৎসুদ্দী: লেখক সাংবাদিক ।