বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আত্মজীবনী ইতিহাসের অমূল্য সম্পদ

বেবী মওদুদ
Published : 15 Dec 2013, 05:24 PM
Updated : 29 June 2012, 08:44 AM

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর ধানমণ্ডি বত্রিশ নম্বর সড়কের বাড়িটি বন্ধ করে রাখা হয়। গেটে অনেকদিন সৈন্যরা পাহারা দিয়েছে। তারপর একসময় পুলিশ পাহারা দিয়েছে। ওই বাড়ির সামনে ফুটপাত ধরে হাঁটা যেত না। উল্টোদিকের ফুটপাত দিয়ে যাতায়াত করতে হতো। ঊনসত্তর ও একাত্তরে আন্দোলনের সময় যে বাড়িটি ছিল জনমুখর, আবার একাত্তরে পাকসেনাদের দখলবন্দি এবং স্বাধীনতার পর যে বাড়িটি ছিল প্রধানমন্ত্রীর, পরে রাষ্ট্রপতির, সে বাড়িটিতে এমন নিস্তব্ধতা বড় বেশি কঠিন মনে হতো।

১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হয়ে দেশে প্রত্যাবর্তন করলেও তাকে এ বাড়িতে উঠতে দেয়া হয়নি। ১৯৮১ সালের ১০ জুন ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট আবদুস সাত্তার এ বাড়িটি হস্তান্তর করেন। শেখ হাসিনা এ বাড়িটি তার অফিস হিসেবে ব্যবহার করতেন। দিনের অনেকটা সময় এ বাড়িতে থাকলেও রাতে থাকতেন না। তবে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাকে যখন এখানে গৃহবন্দি রাখা হয়, তখন তিনি দোতলা-তিনতলার ঘরগুলো পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে গুছিয়ে রাখেন। সে সময় তিনি গুলির চিহ্ন, রক্তের দাগ, ধুলোয় মাখা রক্ত–সবই দেখতে পান ও গুছিয়ে রাখেন।

বত্রিশ নম্বরে আমি প্রায়ই তাঁর কাছে যেতাম। একদিন গিয়ে দেখি গভীর মনোযোগ দিয়ে একটি খাতা পড়ছেন। আমাকে দেখে বলল, 'আয় বস। আব্বার লেখা পড়ছি।' তারপর খাতাটা বন্ধ করে আলমারির ভেতর রেখে দিয়ে এসে অন্য কতাবার্তা শুরু করলেন। আমার মনের মধ্যে তখন 'আব্বার লেখা' কথাটা বাজছিল। আমি অন্য কথার ভিড়ে জিজ্ঞেস করলাম, 'তুমি বলছিলে আব্বার লেখা, সেটা কী?' তিনি কোনো উত্তর দিলেন না দেখে আমিও আর জিজ্ঞেস করিনি। এরপর আবার একদিন গিয়ে তাকে ওই খাতা পড়তে দেখলাম। একসময় পড়া শেষ করে খাতাটা আমার হাতে দিয়ে বললেন, 'আব্বার লেখা, পড়বি।' খাতাটা হাতে নিয়ে একটা গভীর অনুভূতিতে আমার মন ভরে গেল। স্কুলের খাতার মতন। পৃষ্ঠা উল্টালাম, রুল টানা। কেন্দ্রীয় কারাগারের সিল মারা। আমি পৃষ্ঠা উল্টিয়ে যতখানি সম্ভব পড়ার চেষ্টা করলাম। বিশেষ করে যেখানে তিনি মায়ের কথা লিখেছেন। ঝরঝরে সরল-সহজ মুখের ভাষায় লেখা। আমি আকৃষ্ট হয়ে পড়লাম। সেদিন সামান্য ক'টা পাতা পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তিনি বললেন, 'আরো কয়েকটা খাতা আছে। মায়ের আলমারির ভেতরে ছিল। ভাগ্যিস ওরা বোঝেনি। নাহলে লুটপাট করে কোথায় ফেলে দিত। এ খাতাগুলো আমার মা খুব যত্ন করে রেখেছিলেন বলে এখনো আছে। একাত্তর সালেও বাড়ি থেকে সব লুটপাট করলেও এই খাতাগুলো রয়ে যায়। আসলে মায়ের জন্য। আব্বা বেঁচে থাকতে এই খাতাগুলো পড়তে দিতেন না। বলতেন, আমি মরে গেলে তখন পড়িস।'


এরপর তিনি একদিন খাতাগুলো ফটোস্ট্যাট করে বিভিন্ন স্থানে রেখে দিলেন। বললেন, 'সময় আসুক, তারপর এগুলো নিয়ে কাজ করব। কাউকে এখন কিছু বলিস না।' আমি বললাম, 'কাজ মানে। এই খাতাগুলো তো অমূল্য রত্ন। এগুলো ছাপিয়ে বই বের করে মানুষকে পড়তে দিতে হবে।' হাসিনা বললেন, 'হ্যাঁ, বই বের করব। সময় হোক।'

এরশাদ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সময় কেটে যায়। এই খাতাগুলো মাঝে মাঝে তিনি পড়লেও খুব যত্ন করে আলাদা লকার আলমারি কিনে রেখে দেন, যাতে আগুনেও না পোড়ে। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করা হলে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। তখন বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে এসবি রিপোর্টের ফাইল পাওয়া গেলে আমরা সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করি। এ সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বঙ্গবন্ধু চেয়ার' স্থাপন করা হয় এবং প্রফেসর এনায়েতুর রহিম এর অধ্যাপক হয়ে আসেন। তিনি গণভবনে এসে আমাদের সঙ্গে বসতেন। তিনি তখন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা 'আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা' সম্পর্কে কাজ করছিলেন। আমাদের কাছে এই মামলার এসবি রিপোর্ট দেখতেন। তখনই সিদ্ধান্ত হয় তিনি ১৯৬৬-৬৭-৬৮ সালের ডায়েরি রোজ অনুবাদ করবেন। এরপর ২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই শেখ হাসিনা বললেন, চল্, আমরা বঙ্গবন্ধুর খাতাগুলো নিয়ে কাজ শুরু করি। আর দেরি করব না। অনেক দেরি হয়ে গেছে।

২০০২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্রী ধনেশ্বর দাস চম্পককে দিয়ে সব খাতা ফটোস্ট্যাট করে আমাদের বিচিত্রা অফিসে সন্ধ্যার পর কম্পিউটারে কম্পোজ করে ফেলি। খাতাগুলোর নম্বর দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। ১নং খাতা স্মৃতিকথা, ২নং খাতা ১৯৬৬ সালের ডায়েরি, ৩নং খাতা ১৯৬৭-৬৮ সালের ডায়েরি, ৪নং খাতায় নোটস, ৫নং খাতা নয়াচীন ভ্রমণ এবং ৬নং খাতা ক্যান্টনমেন্টে বন্দিকালীন স্মৃতিচারণ। এছাড়া নোটস রাখার খাতাও ছিল, সংবাদপত্র থেকে সংবাদও লিখে রাখতেন, যেগুলো তাকে আকর্ষণ করত। এরপর কোরবানির ছুটি শুরু হলে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে হাসিনা মূল খাতা এবং আমি কম্পোজ করা কাগজ নিয়ে মিলিয়ে পড়তাম, সংশোধন ও প্রয়োজন হলে সম্পাদনা করতাম। তবে লেখা এত স্পষ্ট ও গোছানো ছিল যে সম্পাদনা তেমন করতে হয়নি। হাসিনা বলতেন, 'আব্বার লেখায় হাত দেবার কোনো অধিকার আমার নেই।' পড়তে পড়তে হাসিনা অনেক সময় ঝরঝর করে কাঁদতেন। আমি কাঁদতে দিতাম। আমার চোখও ভিজে উঠত। কখনো কাঁদতে কাঁদতে হাসিনা ঘুমিয়ে গেলে আমি কাগজপত্র গুছিয়ে রেখে সেদিনের মতো চলে আসতাম। আবার কখনো চোখের জল নিয়েই স্মৃতিচারণ করতেন। বঙ্গবন্ধুর অনেক কথা, ফজিলাতুন নেছার ত্যাগ, ধৈর্য এবং দাদা-দাদি ও ভাই-বোনদের গল্প বলতে বলতে তিনি আবার শক্তিধারণ করতেন। তারপর বলতেন, 'নে ধর, তাড়াতাড়ি শেষ করি। বই বের করতে হবে।' রেহানাও অনেক সময় আমাদের সঙ্গ দিতেন। ছবি বাছাই, হাতের লেখা বাছাই কাজে তিনি সাহায্য করেছেন। দু'বোনের সঙ্গে কাজ করার এই দুর্লভ স্মৃতি আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কম্পিটারে সংশোধন হলে হাসিনা সেগুলো ওয়াশিংটনে গিয়ে ড. এনায়েতুর রহিমের সঙ্গে অনুবাদের কাজ করতেন। এভাবে আমরা কয়েকবার সংশোধনের পর একদিন হাসিনা সিদ্ধান্ত নিলেন প্রফেসর এ এফ সালাহউদ্দীনের সঙ্গে এই খাতাগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। স্যারকে জানাতে খুব আগ্রহী হলেন এবং ২৫.৬.২০০৩ সুধাসদনে এলেন। অনেক আলোচনার পর তিনি বললেন, বেশি লোকজন না নিয়ে দু-একজনকে এ কাজে নেয়া যেতে পারে। বেশি জানাজানিরও দরকার নেই। নীরবে কাজ শেষ করতে হবে। স্যার আরও বললেন, যেকোনো সহযোগিতা তিনি করবেন, সময়ও দেবেন।

এর মধ্যে আমরা দু'জন মূল খাতা ও কাম্পোজ কাগজ মিলিয়ে পড়ে এবং সংশোধন শুরু করি। আমরা দু'জনেই কম্পিউটার কাজ মোটামুটি জানতাম বলে সমস্যা হয়নি। এর মধ্যে হাসিনা একদিন বললেন, আমরা দু'জন তো করেই যাচ্ছি, বাইরের আর কোনো একজন সাহিত্যিককে আনব, খুঁজতে থাকো। আমি কয়েকদিন পরে বললাম, শামসুজ্জামান খানকে আমরা অনুরোধ করতে পারি। তিনি তো শেখ ফজলুল হক মণির বন্ধু ছিলেন। হাসিনার কথামতো আমি একদিন শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে কথা বলে তাঁকে ২.৭.২০০৩ নিয়ে এলাম। তিনিও সব রকম সাহায্য করতে রাজি হলেন। তারপর থেকে আমরা সপ্তাহে পাঁচদিন বিকাল পাঁচটা থেকে রাত নয়টা-দশটা পর্যন্ত কাজ করতাম। হাসিনা তখন তাঁর দলীয় কাজে ও আন্দোলনে ব্যস্ত থাকলেও আমাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে এসে বসতেন এবং কম্পিউটারে সংশোধন করতেন। অধ্যাপক শামসুল হুদা হারুনকে হাসিনা আমন্ত্রণ করে আনলেন ইংরেজি অনুবাদের জন্য। তিনি প্রথমে স্মৃতিকথা অনুবাদের কাজ শুরু করলেন। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন খবর এলো ওয়াশিংটনে ড. এনায়েতুর রহিম মারা গেছেন। হাসিনা ওয়াশিংটনে গিয়ে তাঁর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন এবং তার অনুবাদকৃত অংশ সিডি করে আনলেন। আমরা সেগুলোও দেখলাম। তিনি শুধু দুই নম্বর খাতা এবং ক্যান্টনমেন্টের স্মৃতিকথা খাতাটি অনুবাদ করে রেখে যান। হাসিনা তাঁর কথা বারবার আমাদের বলতেন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেন।

ইতোমধ্যে বঙ্গবন্ধুর স্বকণ্ঠের কিছু ক্যাসেট নিয়ে আমরা দু'জন কাজ করি। এগুলো হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে বঙ্গভবনের কোষাগার থেকে উদ্ধার করে নতুন করে ক্যাসেটে আনেন। বঙ্গবন্ধু জীবিতকালে তাঁর বিশ্বস্ত কয়েকজনকে নিজের জীবনবৃত্তান্ত বলতেন। এগুলো তার লেখা স্মৃতিকথার সঙ্গে মিলে যায়। আমরা সব কানে শুনে শুনে কাগজে লিখি, তারপর কম্পোজ করাই। কয়েকবার ক্যাসেট বাজিয়ে সেগুলো মিলিয়ে সংশোধন করি। এসব কাজ করতেই দীর্ঘ সময় পার হয়ে যায়। এভাবে আমরা যখন কাজ করছি, ২০০৪ সালে একদিন কাজ শেষ করে বের হব। বাইরে বসে থাকতে দেখলাম শেখ হাসিনার এক আত্মীয়কে। তিনি আমাকে দেখে উঠে এসে বললেন, 'আজকের মতো কাজ শেষ আপনাদের। কাল এসে শুনবেন আমি কী এটম বোম এনেছি।' বলে হাতের একটা কাগজের প্যাকেট দেখালেন। বললাম, 'বোমাটি কী?' তিনি বললেন, 'আপাকে দেব। আপার কাছে শুনবেন।' আমি সেদিনের মতো বাসায় চলে আসি। পরদিন সকালে হাসিনার ফোন এলো, 'তুই কোথায়? শিগগির আয়।' আমি আর দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব সুধাসদনে পৌঁছালাম। বসার ঘরে লোকজন বসে আছেন। আমি অফিসে ঢুকেই দেখি হাসিনা বসে আছেন। নাসিমুন আরা নিনু কম্পিউটার ঠিক করছেন। আমাকে দেখে তিনি খুশি ছড়িয়ে বললেন, 'এই দ্যাখ, সেই খাতাটা পেয়েছি। আব্বার লেখা।' আমি দেখলাম চারখানা খাতা, সেই রুলটানা স্কুল এক্সারসাইজ–জীর্ণ, কোথাও অস্পষ্ট, কোথাও ছেঁড়া, সাদা পাতাগুলো হলুদ হয়ে গেছে। তবে পৃষ্ঠা নম্বর থাকায় অসুবিধা হয় না।

আমরা যখন প্রথমে কাজ শুরু করি, হাসিনা খাতাগুলোর সঙ্গে কয়েকটি বাংলায় টাইপ করা কাগজ পান, যেগুলো ছেঁড়া ছিল। তখন তাঁর মনে পড়ে যায়, আরো চারখানা খাতা ছিল, বঙ্গবন্ধু সেগুলো শেখ মণিকে দিয়েছিলেন বাংলার বাণীতে টাইপ করার জন্য। সেই খাতাগুলো এবং যিনি টাইপ করেছেন তাকেও অনেক খোঁজাখুঁজি করা হয়। কিন্তু কোনো হদিসই তখন আমরা পাইনি। সেই খাতাগুলোর আশা হাসিনা ছেড়েই দিয়েছিলেন। তার পরও মাঝে মাঝে সেই খাতাগুলোর জন্য আফসোস করতেন। এখন এই চারখানা খাতা চোখের সামনে হাতের মুঠোয় পেয়ে তিনি আবেগাপ্লুত, দুচোখ তার অশ্রুসজল। বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখা পুরো খাতার প্রতিটি পৃষ্ঠায়। আমি চারখানা হাতে নিয়ে দেখলাম। হাসিনা বললেন, 'আমি কিছুক্ষণ পড়ি আর নিনু কম্পোজ করুক। তারপর তুমি করো।' আমি তাকে পড়তে বলে রেহানার কাছে গেলাম। খাতাগুলো নিয়ে তিনি আবেগাপ্লুত। বললেন, 'মনে হয় যেন আব্বাকে স্পর্শ করছি।'

ঝরঝর করে চোখের পানি ঝরল তার। বললাম, 'তুমি একবার বলেছিলে আল্লাহ আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন। নিশ্চয় তাঁর মনে কিছু রয়েছে। নিশ্চয়ই তিনি কিছু ভালো কাজ করাবেন।' আমার মনে হয়, এই লেখাগুলো পাওয়া ও বই বের হওয়াটাই হবে বোধহয় সেই বড় কাজ এবং ভালো কাজ।' রেহানার মুখে আরো অনেক কথা শুনলাম। খাতাগুলো হাতে নিয়ে দু'বোন সারা রাত কেঁদেছে, পৃষ্ঠা উল্টে দেখেছে, আঙুল ছুঁয়ে ছুঁয়ে স্পর্শ করেছে এবং পড়ে পড়ে কেঁদেছে। শুনতে শুনতে আমারও দু'চোখ অশ্রুতে ভরে উঠেছে।

এরপর আমি বসে বসে পড়লাম আর নিনু কম্পোজ করলেন। একসময় হাসিনাও এসে বসলেন। এভাবে আমরা দু'দিনে খাতাগুলো পড়ে কম্পোজ করে ফেলি। অনেক সময় ম্যাগনিফায়িং গ্লাস দিয়ে অস্পষ্ট লেখা উদ্ধার করেছি। এরপর মূল খাতা পড়েছেন হাসিনা আর আমি কম্পোজ করা কাগজ দেখে মিলিয়েছি। প্রায় সাত-আটবার। এভাবে পড়ার পর আবার শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে বসে কাজ করি। এরপর হাসিনা সিদ্ধান্ত নিলেন, এটা আত্মজীবনী হিসেবে আগে বের হবে এবং ইংরেজি অনুবাদও একসঙ্গে বের করা হবে। ক'দিন পরই আমাদের সঙ্গে কাজ করতে এলেন অধ্যাপক ফকরুল আলম। তার নিজের কম্পিউটারে তিনি কিছু কিছু অনুবাদ কম্পোজ করে ফ্লপিতে আনলেন। কাজের সুবিধার্থে হাসিনা তাকে একটা ল্যাপটপ কিনে দেন। আমরা কম্পিউটারে নিয়ে প্রিন্ট বের করে নিলাম। তারপর শামসুজ্জামান খান ইংরেজি এবং আমি ও হাসিনা বাংলাটা পড়ে পড়ে শেষ করলাম। কোথাও শব্দ বা লাইন বা প্যারাও বাদ গেল কিনা সেটা যত্ন করে দেখতাম। এভাবে একদিন সব খাতা অনুবাদ হয়ে গেল। হাসিনা ও আমি কম্পিউটারে বসে নিজেরা সংশোধন করে নিতাম। এই কাজগুলো শেষ হলেও আমরা বারবার পড়েছি এবং মূল লেখার সঙ্গে মিলিয়ে নিতাম কোথাও যেন কোনো ত্রুটি না থাকে, কোনো কিছু বাদ না যায়। বঙ্গবন্ধুর লেখা শব্দ বা ভাষা আমরা যা দেখেছি, তা-ই রেখেছি। অনেক সময় হাসিনাকে দেখালে তিনি সিদ্ধান্ত দিতেন, থাক বদলানোর দরকার নেই।

দেখতে দেখতে ২০০৬ এসে গেল। সর্বশেষ পাওয়া চারখানা খাতা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর বাংলা ও ইংরেজি পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হয়ে গেল। প্রফেসর সালাহউদ্দীন ইংরেজিটা একবার পড়ে দেখলেন। গ্রাফিক্সের কাজগুলো ও ছবির স্ক্যান ধনেশ্বর দাস করে দেন। লন্ডন থেকে মাঝে মাঝে রেহানা এলে আমাদের কাজের তদারকি করতেন। এ সময় শেখ হাসিনাও নির্বাচন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন, দলীয় কাজকর্মে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। বিদেশে গিয়ে ফেরার সময় বাধার সম্মুখীন হলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে বহন করতে দেশী-বিদেশী বিমানগুলোয় নিষেধাজ্ঞা জারি করে। তিনি কয়েকদিন পর দেশে ফিরলেন, কিন্তু স্বস্তিতে থাকতে পারলেন না। তার বাড়িতে অবস্থানের ওপর নজরদারি শুরু হলো। বাড়িতে বাইরে থেকে যেতে দিতে বাধা দেয়া হতো। এই অবস্থায় তিনি বললেন, আত্মজীবনীর কম্পোজ কাগজ নিয়ে বসো। মূল খাতার সঙ্গে আর একবার মিলিয়ে কাজ শেষ করি। আমরা প্রতিদিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পড়া শুরু করলাম। তার সঙ্গে এটাই ছিল শেষ বার পড়া। এ সময় লোকজনও বাসায় কম আসত। তিনি দলীয় অফিসে গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে বসতেন। বাসায় যাওয়ার পথে চারদিকেই পুলিশ ও গোয়েন্দারা আমাদের বাধা দিত। তার পরও আমি কখনো আত্মীয় পরিচয়ে কখনো জোরে হেঁটে ভেতরে চলে যেতাম। মনে হতো কিছু ঘটতে যাচ্ছে। এর মধ্যে একদিন গভীর রাতে বাড়ি সার্চ করে গেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। বঙ্গবন্ধুর লেখা ও জরুরি কাগজপত্র আগেই কিছু সারিয়ে ফেলি। কাজকর্ম আগের দিনই শেষ হয়ে যায়।

১৫ জুলাই সকালে আমরা বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে গিয়ে বসি। জাদুঘরেই টিকিট নিয়ে অনেকে তার সঙ্গে দেখা করে গেলেন। মতিয়া চৌধুরীও এসে দেখা করে গেলেন। এরপর দুপুরে সুধাসদনে হাসিনা আমাকে বলেছিলেন, 'আব্বার লেখার সবকিছু থাকল। বই বের করে ফেলিস।' আমরা আবার বত্রিশে গেলাম, বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের সভা ছিল।

এখন সন্ধ্যা নেমে গেছে। আকাশ মেঘলা। আমরা কয়েকজন বাইরে কথা বলছিলাম। ভেতরে সভা চলছিল। এ সময় খবর পাওয়া গেল হাসিনা আজ রাতেই গ্রেফতার হতে পারেন। এ রকম খবর গত কয়েকদিন ধরে শোনা যাচ্ছিল। পুলিশ কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করে শোয়েব খবর আনল, পুলিশ বহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। আমি সভার দরজা ফাঁক করে একবার হাসিনাকে দেখে বাসায় চলে এলাম। পরে খবর পেলাম, হাসিনা সভা শেষ করে এগারোটায় সুধাসদনে ফিরে গেছেন।

১৬ জুলাই রাত তিনটায় আমার বড় ছেলে আমার ঘরে এসে টিভি খুলে কোপা ফুটবলের ফাইনাল দেখতে বসলে আমি উঠে বসলাম। প্রায় চারটার দিকে ফটো সাংবাদিক এস এম গোর্কীর ফোন পেলাম। তিনি বেশ উত্তেজিত কণ্ঠে বললেন, 'আপা খবর জানেন?' বললাম, 'বলো কী হয়েছে?' গোর্কী জানালেন, 'আমরা এখন সুধাসদনের সামনে। বৃষ্টিতে ভিজছি। আর্মি, র‌্যাব ও পুলিশ ভর্তি। বাড়ি ঘেরাও করেছে। তখন তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে। দু'বার ফোন করার পর হাসিনাকে পেয়ে জানালাম, খবর নিলাম। তারপর বাড়ির অন্যদের ফোন করে জানালাম। তৈরি হয়ে আমি বহু কষ্টে পৌঁছলাম। ধানমণ্ডির অনেক সড়ক বন্ধ ছিল। বাসা পর্যন্ত যেতে পারলাম না। হাসিনাকে কালো গাড়িতে তুলে কোর্টে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে জামিন না-মঞ্জুর করে সংসদের পাশের বিশেষ জেলে বন্দি করে রাখা হলো। কোর্টে তার সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। তিনি বলেছিলেন, সাবধানে থাকিস। বেলা তিনটায় সুধাসদন থেকে আর্মি, র‌্যাব ও পুলিশ বিদায় হলে আমি সেখানে যাই। ওয়াজেদ সাহেবের নাতনি শামু আমাকে বঙ্গবন্ধুর লেখা কাগজপত্রের একটা ব্যাগ দেয় এবং দেশবাসীর উদ্দেশে হাসিনার লেখা একটা খোলা চিঠি দিয়ে যায়। চিঠিটা আমি ফটোকপি করে রাজন, জসিম ও দুলালকে দিয়ে প্রেস ক্লাবে আবুল কালাম আজাদকে পাঠাই। বঙ্গবন্ধুর কাগজপত্র সব নিয়ে গিয়ে আমার বাসায় রাখি। ড. ওয়াজেদ সাহেবকে অসুস্থ দেখে সোহরাবউজ্জামান ও বরেন চক্রবর্তীকে ফোন করে ল্যাবএইডে পাঠাই। এসবই মাহবুব আরা গিনির পরামর্শে করেছি। সুধাসদন থেকে হাসিনার কম্পিউটার ধানমন্ডি থানায় নিয়ে গেছে। ওই কম্পিউটারে আমরা কাজ করতাম, তাই চিন্তিত হলাম–ফাইল খুলে ওরা নিশ্চয়ই দেখতে পাবে। আমরা অবশ্য সিডি করে অন্যত্র সরিয়ে রেখে দিয়েছিলাম। আমাদের কাগজপত্র সব একটা আলমারিতে রাখা ছিল। সেগুলো তার ব্যাগ থেকে বের করে এলোমেলো করে রেখে গেছে। কী খুঁজতে চেষ্টা করেছে কে জানে! আবার সব গুছিয়ে আলমারিতে রাখলাম প্রতীকার সাহায্যে।

এরপর খবর পেলাম তেজগাঁও ও ধানমণ্ডি থানার পুলিশ বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে আমায় খুঁজে গেছে। হাসিনাও খবর পাঠালেন, আমি যেন বাসায় না থাকি। আমার বাসায়ও সাংবাদিক ফরিদ খবর পাঠালেন, আমি যেন বাসায় না থাকি। আমি তখন সাংবাদিক হেলালের কাছে আমার ল্যাপটপ রাখতে চাইলে তিনি সরাসরি না করে দিলেন। আমি বুঝলাম, এর নাম বেইমান। এরপর হাসপাতালে ছোট একটা অপারেশনের সময় আমেরিকা থেকে জয় খবর দিল, 'ইউ মাইট বি অ্যারেস্টেড।' এরপর আর বাসায় না থেকে রাতে অন্যত্র থাকতাম। আমার ল্যাপটপ ও কাগজপত্র ভাইবোনদের বাসায় সরিয়ে রাখলাম। তারপরও ডিজিএফআই থেকে জনৈক মেজর ও তার লোকজন আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য ডেকে নেয়।

এই জিজ্ঞাসাবাদের পর আমি শামসুজ্জামান সাহেব ও সালাহউদ্দীন সাহেবের সঙ্গে কয়েকবার আলোচনা করে বই প্রকাশের উদ্যোগ নিই। অধ্যাপক সালাহউদ্দীন প্রস্তাব দেন ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডকে আত্মজীবনী প্রকাশের জন্য দিয়ে দিতে। কারাবন্দি শেখ হাসিনার কাছে আমি চিঠি পাঠাই বইয়ের ভূমিকা লিখে দিতে এবং ইউপিএলকে বই প্রকাশ করতে দেব কিনা জানতে চেয়ে? হাসিনা খবর পাঠান, 'ভূমিকা লিখছি এবং বই ইউপিএলকে দেয়াই ভালো হবে। ওদের সঙ্গে আলাপ করো।' এর মধ্যে একদিন অধ্যাপক শামসুল হুদা হারুন মৃত্যুবরণ করলেন। আমরা ইউপিএলের মহিউদ্দিন সাহেবকে নিয়ে সালাহউদ্দীন সাহেবের বাসায় বসি। তিনি খুবই আগ্রহী হন এবং অক্সফোর্ড ও পেঙ্গুইনের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানালেন।
২০০৮-এর ১২ জুন শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে বিদেশে চলে গেলেন। আমাকে বলে গেলেন, বইয়ের ভূমিকা ব্যাগে আছে প্রতীকা জানে।' আমি ব্যাগ খুলে ভূমিকা ও কারাগারে বসে লেখালেখির একটা খাতা পাই। এখানে একটা কথা উল্লেখযোগ্য, হাসিনা কারাবন্দি থাকাকালে লন্ডনে শেখ রেহানার সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। তিনি বইয়ের সব কাজ শেষ করার জন্য সব সময় খোঁজখবর নিতেন।

শেখ হাসিনা দেশে ফিরে নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর শপথ নেয়ার পর তিন বললেন, 'বইয়ের কাজ শেষ করো।' আমরাও যথাসম্ভব পাণ্ডুলিপির কাজ শেষ করে ফেললাম। একদিন গণভবনে সবাইকে নিয়ে বসার ব্যবস্থা হলো। সিদ্ধান্ত হলো আমি পরদিন ইউপিএলে পেন ড্রাইভে পাণ্ডুলিপি পৌঁছে দেব।

সেদিন উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক সালাহউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক শামসুজ্জমান খান, অধ্যাপক ফকরুল আলম, ইউপিএলের মহিউদ্দিন আহমেদ ও বদিউজ্জামান নাজির। আমি তো ছিলাম। হাসিনা সেদিন সবার সামনে বললেন, 'এতদিন সযত্নে রেখেছি, এখন ছাপাতে দেব যাতে সবার হাতে এই লেখা পৌঁছে যায়।' আমরা যারা এ কাজে জড়িত ছিলাম, সবারই একই রকম অনুভূতি হয়েছিল।

পরদিন বই দিতে যেতে পারলাম না। আমারও খুব কষ্ট লাগছিল। হাসিনাকে মেসেজ পাঠালাম। রেহানাকে ফোন করে অনেক কথা বললাম। হাসিনা জানালেন, 'আমারও কষ্ট হচ্ছে। আজ যাস নে। কালকে দিয়ে আয়।'

পরদিন অনেক কষ্টে সব অনুভূতিকে শক্ত করে মতিঝিলে ইউপিএলের অফিসে গিয়ে পেন ড্রাইভে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী পৌঁছে দিলাম। এরপর ছবি ও হাতের লেখা পৃষ্ঠা পৌঁছে দিলাম। সব যোগাযোগের দায়িত্ব আমাকে দেয়া হচ্ছিল। কোথাও সমস্যা হলে আমরা বসতাম, অথবা শেখ হাসিনা তার শত ব্যস্ততার মধ্যেও শুনে একটা সমাধান দিতেন। এর মধ্যে প্রকাশক ইউপিএলের সঙ্গে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। তার পরও বই প্রকাশ হতে ২০১২ সালের ১৮ জুন এসে যায়। আমাদের ইচ্ছা ছিল বাংলা ও ইংরেজি বই একই দিনে প্রকাশিত হবে। ইংরেজি পাণ্ডুলিপি বিদেশে ঠিকঠাক করতে দেরি হয়। লন্ডন, দিল্লি ও পাকিস্তানে এজন্য কাজের খবরাখবর দিতেন মহিউদ্দিন আহমেদ সাহেব। প্রচ্ছদ তৈরি হলে শেখ হাসিনা দেখে দেন। বইয়ের প্রুফ কপি একবার তিনি দেখে দেবার পর আমরাও দেখে দিই। প্রথম প্রিণ্ট বইও তাঁর কাছে আগে পৌঁছে দিই।

অবশেষে বঙ্গবন্ধুর লেখা 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী' প্রকাশিত হলো ১৮ জুন, ২০১২ সালে। মানুষের হাতে হাতে এই বই দেখে একটি প্রার্থনা শুধু করতে পারি: বঙ্গবন্ধুর আত্মা নিশ্চয়ই শান্তিতে থাকুক। এই মহান মানুষ কত বড় মাপের ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন, এই লেখার মধ্য দিয়ে তিনি তা-ই প্রকাশ করে গেছেন।

এই বইয়ের কাজের সঙ্গে আমরা যারা জড়িত ছিলাম, তারা প্রত্যেকেই বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার কাছে কৃতগ্ঞ যে আমাদের এ কাজের সঙ্গে জড়িত রেখেছেন এবং নিজেরাও এ কাজে আমাদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। আমাদের সৌভাগ্য জাতির পিতার এমন একটি ঐতিহাসিক কাজের সঙ্গে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে বইটি প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছি।

আজ আবার মনে পড়ছে, ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুর লেখা আত্মজীবনী পড়ে আমি মুগ্ধাবিষ্ট হয়েছিলাম। তারপর এই কাজের সঙ্গে জড়িত হওয়ার পর একটা দায়বদ্ধতার মধ্যে পড়ে যাই। শেখ হাসিনা আমাকে প্রথম দিন বলেছিলেন, এর সবদিকে খেয়াল রাখতে হবে। সবাই ভুল করলেও তোমার করা যাবে না। এ কারণে ছোটখাটো অনেক ব্যাপারে তাঁকে বিরক্ত করলেও তিনি হাসিমুখে সমাধান খুঁজে দিয়েছেন। অনেক সময় তাড়াহুড়ো করেছি, তিনি ধৈর্য ধরতে বলেছেন। তাড়াহুড়োর ফল যে ভালো হয় না, সেটা বুঝেছি। সালাহউদ্দীন স্যার ও শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে কাজ করতে বসে অনেক পরামর্শ পেয়েছি। অধ্যাপক ফকরুল আলম অনুবাদের কাজগুলো হাসিমুখে করে দিয়েছেন শেষদিন পর্যন্ত। মহিউদ্দিন আহমেদ সাহেব ও বদিউজ্জামান নাজির পাণ্ডুলিপির খুঁটিনাটি দেখেছেন। সেটাও একটা পরিশ্রমসাধ্য বিষয়। তাদের কাছেও আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা ছিল। আমাদের প্রথম দিনই সিদ্ধান্ত ছিল, আমরা এই বইয়ের তথ্য ও অন্যান্য বিষয় বাইরে আগে প্রকাশ করব না। বই প্রকাশের আগে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন, অনেক কথা জানতে চেয়েছেন, কিন্তু নীরবতা পালন করাই ছিল তখন আমাদের ধর্ম।

বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী বাংলার সংগ্রামমুখর ইতিহাসের একটি অসামান্য দলিল, আমাদের সাহিত্যের একটি অমূল্য সম্পদ হয়ে থাকবে। আত্মকথা লেখা বড় কঠিন। সত্য কথা স্পষ্ট করে বলতে পারাটাই একটা মহৎ কাজ।

বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক নেতা থেকে বাঙালি জাতির জনক হয়ে ওঠেন এবং বাংলাদেশের স্রষ্টাও তিনি। তার এই মহত্তর হয়ে ওঠার তথ্য, ঘটনা এবং ব্যক্তিজীবনের কথা তিনি তার প্রিয় সহজ, সরল, সাধারণ জনগণের দিকে তাকিয়ে করে গেছেন। ইতিহাস তাঁকে অমরত্ব দিয়েছে, ইতিহাস তাঁর এই শ্রেষ্ঠ কীর্তিকেও অমূল্য সম্পদ হিসেবে রক্ষা করবে। নতুন প্রজন্মকে আদর্শ ও সততায় আলোকবর্তিকা হয়ে উজ্জীবিত করবে।

বেবী মওদুদ : লেখক ও সাংবাদিক।