শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য

সারাহ বেগম কবরী
Published : 5 May 2012, 06:18 PM
Updated : 5 May 2012, 06:18 PM

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি প্রতিদিনই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দু'দিন আগে একবার গিয়েছিলাম। শনিবার (পাঁচই মে) আবার গেলাম। অনশন করছে বাচ্চা ছেলেমেয়েরা। ওদের অনশন ভাঙাতেই আমার যাওয়া। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে তাই আমার অভিজ্ঞতাই অন্যরকম। আমার আহত বেদনার্ত মনটা খুব হাহাকার করছিল। কী হচ্ছে দেশের ওই নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে? সাড়ে চার মাস ধরে ওখানকার পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, জুবায়ের নামের ইংরেজি বিভাগের মেধাবী এক শিক্ষার্থী খুন পর্যন্ত হয়েছে। আমার যে কী কষ্ট লেগেছে তখন। আহা, এত সুন্দর ফুটফুটে একটি ছেলেকে তার বিপক্ষের ছেলেরা মেরে ফেললো। পত্রিকায় দেখলাম নিষ্ঠুরভাবে খুন করা হল ছেলেটাকে। এক মায়ের কোল খালি হল। মা হয়ে আমি তো এটা মানতে পারি না। একের পর এক ঘটনায় উত্তাল ক্যাম্পাস। তাই আর ওখানে না গিয়ে পারলাম না।

প্রাণের টানেই দু'দিন আগে ছুটে গিয়েছিলাম ওখানে। কথা বলেছিলাম উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনকারী এবং উপাচার্যের পক্ষের শিক্ষকদের সঙ্গে। শুনলাম দু'পক্ষের কথা। আন্দোলনকারীরা আমাকে জানালেন, উপাচার্যের মদদেই ছাত্রলীগের একটি অংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস করছে। আর এরই প্রেক্ষিতে খুন হয়েছে জুবায়ের। এখানে আরও কিছু সন্ত্রাসী কার্যকলাপের পেছনেও রয়েছে ছাত্রলীগ নামধারী ওই গ্রুপের ক্যাম্পাসে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা। অন্যদিকে উপাচার্যের শিক্ষকরাও অন্য পক্ষের বিরুদ্ধে বললেন। আমি তাদের একটা কথাই বলেছি, সমস্যাটার সমাধান তো খুব বেশি জটিল নয়। তবে আমি আমার দিক থেকে যা যা করার তা করব। যথাযোগ্য কর্তৃপক্ষের কাছে সংকটের বিষয়টা তুলে ধরব। আমি তাই করেছি এবং সে প্রেক্ষিতেই আন্দোলনকারী শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রী সমস্যার সমাধানে উদ্যোগ নিয়েছেন।

তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিষয়টি আলাদা। ওদের তো শিশুই বলা যায়। ওরা চাইছিল সবার কাছে গ্রহণযোগ্য কেউ এসে তাদের পাশে দাঁড়ান। তাদের অনশন ভাঙান। এই দায়িত্বটা আমাকে দেয়া হল। তাই আমি শনিবার সকালে ছুটে গেলাম জাহাঙ্গীরনগরে। ওদের অনশন ভাঙালাম। মায়ের মতো তাদের পাশে দাঁড়াতে পেরে খুব ভালো লেগেছে আমার।

ব্যক্তিগতভাবে আমি সবসময় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। আপনারা দেখেছেন, আমার নির্বাচনী এলাকা নারায়নগঞ্জেও আমি সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবসময় উচ্চকণ্ঠ থেকেছি। কারও সঙ্গে আপোষ করিনি। সেই একইভাবে আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে। আমি চাই সেখানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরে আসুক।

কবরী সারোয়ার: অভিনেত্রী ও সংসদ সদস্য।