রোহিঙ্গাদের একনদী দুঃখ, বাস্তবতা ও ভবিষ্যৎ

মুনতাসীর মামুন
Published : 23 Sept 2017, 03:01 PM
Updated : 23 Sept 2017, 03:01 PM

১.

পাশ্চাত্য একেক সময় একেকটি বিষয়ে নতুন সংজ্ঞা দেয় এবং সে-অনুযায়ী আমরা কাজ করি। ধরা যাক, গণহত্যা। এর সংজ্ঞা নানাভাবে দেওয়া হয়েছে, 'ম্যাস-মার্ডার' থেকে একে আলাদা করা হয়েছে। 'এথনিক ক্লিনজিং' এবং 'গণহত্যা' আবার ভিন্ন। নাম বা সংজ্ঞা যা-ই হোক, প্রতিটি জঘন্য অপরাধ এবং চরম শাস্তিযোগ্য। যিনি 'এথনিক ক্লিনজিং' করছেন তার অপরাধ ৯ ভাগ– যিনি 'গণহত্যা' চালাচ্ছেন তার অপরাধ ৯.৫ ভাগ– এগুলি হাস্যকর ব্যাপার। তিনটি বিষয়ের ভিত্তি হল হত্যা এবং হত্যার অপরাধ কখনও তামাদি হয় না।

মিয়ানমার বা বার্মা দীর্ঘদিন ধরে গণহত্যা চালাচ্ছে; বিশেষ করে সেখানে নে উইন ক্ষমতায় আসার পর থেকে– ব্রিটেনে বসবাসরত মিয়ানমারের গণতন্ত্রকামী ড. মং জার্নি এ কথা জানিয়েছেন। রোহিঙ্গাদের উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭৮ সাল থেকে এই গণহত্যা চলছে। পৃথিবীর বর্বরতম আইনি সন্ত্রাসী বাহিনী যা মিয়ানমার সেনাবাহিনী নামে পরিচিত তারা শুধু রোহিঙ্গা নয়, মিয়ানমারের শান, কাচিন প্রভৃতি গোষ্ঠীর ওপরও গণহত্যা চালিয়েছে। ২০১১ সালে কাচিনে লিম পা গ্রামে মর্টার চালিয়ে সেখানকার সব খ্রিস্টান অধিবাসীকে তারা হত্যা করেছিল।

মিয়ানমারের অধিবাসীদের যাদের অনেক সময় 'মগ' নামেও অভিহিত করা হয়, তারা দীর্ঘদিন ধরে সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠীর ওপর দমন চালিয়ে আসছে। তাদের সেনাবাহিনীর উদ্দেশ্য: এক মানুষ, এক ভাষা, এক দেশ কায়েম, অর্থাৎ বর্মন (আমাদের ভাষায়, বার্মিজ) ছাড়া আর কেউ সে দেশে থাকতে পারবে না।

মিয়ানমার-সংলগ্ন চীন ও ভারত বিষয়গুলো জানে। কিন্তু দেশটির খনিজ সম্পদের ওপর তাদের লোভ অনেকদিনের। সে জন্য তারা এতদিন এসব অগ্রাহ্য করেছে। তাদের এই সমর্থনের বিষয়টি এতদিন কেউ গুরুত্বসহকারে না নিলেও বোধহয় এখন তারা গণহত্যাকারী সমর্থক হিসেবে বিশ্বে চিহ্নিত হবে। পৃথিবী অনেক নিষ্ঠুর বটে, তবে সাধারণ মানুষও যথেষ্ট রাজনীতিসচেতন।

গত এক মাস আমরা দেখছি মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর কী হচ্ছে। গণমাধ্যম প্রথমে একে 'এথনিক ক্লিনজিং' বলেছে। প্রশ্ন হল, যারা বাংলাদেশে এসেছেন তাদের ৭০ ভাগ নারী-শিশু, পুরুষরা নারীর সমসংখ্যক হলে তারা কোথায় গেল? ধরে নিতে হবে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীরা (আলবদর/ আলশামস/ রাজাকার বলতে পারেন) খুন করেছে। জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ খুন 'গণহত্যা' হবে না তো কী?

রোহিঙ্গা সমস্যা এই প্রথম স্পষ্ট করল, পৃথিবীতে এখন আদর্শগত রাজনীতি মুখ্য বিষয় নয়, বাণিজ্য-স্বার্থই প্রধান। বিশ শতক পর্যন্ত অভ্যন্তরীন এবং পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে আদর্শের একটি স্থান ছিল। একুশ শতকে তা সম্পূর্ণ অন্তর্হিত। এখন শুধু বাণিজ্য নয়, পরমাণু-সমর্থিত সামরিক শক্তিও একটি উপাদান।

সু চি কী বলবেন তা নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু সবাই ভুলে গেছেন যে, তিনি আগেও রোহিঙ্গা বিতাড়ন সমর্থন করেছিলেন। চুলে অর্কিড গোঁজা, পরিপাটি সু চির যে চিত্র পাশ্চাত্য তুলে ধরেছিল এবং আমরাও মোহাবিস্ট হয়েছিলাম, আশা করি এখন তা কেটে যাবে। বাংলাদেশে যারা ইসলাম ও মুসলমানিত্ব নিয়ে রাজনীতি করেন রোহিঙ্গা সমস্যা তাদের জন্য চপেটাঘাত বিশেষ। কারণ এটা প্রমাণিত হয়েছে যে, সৌদি আরব থেকে ইরান সবাই ইসলামি স্বার্থ নয়, নিজ স্বার্থে বিশ্বাসী অথবা খ্রিস্টান দেশসমূহের ভৃত্য। প্যান-ইসলাম বা ইসলামি ভ্রাতৃত্ব বলে এখন আর কোনো বিষয় নেই। মানবতার কথা বললে, ইউরোপ (বা খ্রিস্টান সমাজ) মুসলমান, ইহুদি, হিন্দু, বৌদ্ধ সমাজ বা যে কোনো রাষ্ট্রের চেয়ে ঢের বেশি মানবিক।

মিয়ানমার যে যুক্তি দিয়ে রোহিঙ্গা বিতাড়ন করছে তা সর্বৈব এবং ঐতিহাসিকভাবে মিথ্যা। এ বক্তব্য কিন্তু কোনো রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়নি। বর্তমানে মিয়ানমারের একটি অংশ আরাকান, আগে যা ছিল স্বাধীন। প্রাচীনকালে দুটি রাজ্যে বিভক্ত ছিল আরাকান– স্যানডায়ে বা দক্ষিণ আরাকান এবং মূল আরাকান। এই দুই অংশ মিয়ানমারের সঙ্গে একীভূত হয় ১৭৮৫ সালে। একাদশ শতাব্দী থেকে ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত আরাকানের রাজধানী ছিল আকিয়াবের আটটি শহরে।

মিয়ানমার ও আরাকান সমুদ্রতীরবর্তী। প্রাচীন আমল থেকেই অঞ্চল দুটি পরস্পরের বিরুদ্ধে নৌ-যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্যানেরা দশম শতকে আরাকানের অংশ দখল করে। বাংলা বা বঙ্গের শাসকরাও আরাকান আক্রমণ করতেন। আরাকানিরা বঙ্গের চট্টগ্রাম কখনও কখনও দখল করেছে।

২.

আরাকানের আসল নাম 'রাখাইং'। এটি একটি গোত্রের নাম। বার্মা নামকরণটিও হয়েছে বর্মণ গোত্রের নামে। মুসলমান লেখকরা যারা এ এলাকাটি আমাদের কাছে পরিচিত করে তুলেছেন তারা এর নামকরণ করেছিলেন 'রাখাং' বা 'আরখাং'। রোহিঙ্গাদের ধারণা, এ নামকরণ আরবি সাল রুকন থেকে। মুসলমান কবিরা লিখতেন 'রোসাং'। ষোড়শ শতকে ইউরোপীয়রা এসে ভারতবর্ষসহ বিভিন্ন দখলকৃত এলাকার নাম নিজেদের মনমতো করে লেখে। 'রাখাইং'এর নামও দেয় তারা 'আরাকান'। 'রোসাঙ্গ' চট্টগ্রামী উচ্চারণে হয়েছে 'রোহাং'। আর এর অধিবাসীরা পরিচিত হয়ে ওঠে 'রোহাঙ্গি' বা 'রোহিঙ্গা' নামে।

অষ্টম শতকে আরব বণিকরা এ এলাকার সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্কে জড়িত হন। ৭৮৮-৮১০ সালের মধ্যে কোনো এক সময় আরব বণিকদের কয়েকটি জাহাজ ডুবে যায় উপকূলের কাছে। নাবিকরা সাঁতরে তীরে ওঠেন। তখন সেখানকার রাজা ছিলেন মাহাতোইং। তিনি তাদের বসবাসের জন্য একখণ্ড জমি দেন। এই প্রথম আরাকানে মুসলমান বসতির শুরু।

পঞ্চদশ শতকে আরাকানের যুবরাজের আমন্ত্রণে বাংলার অনেক মুসলমান সেখানে চলে যান। বর্মী রাজার কাছে হেরে আরাকান রাজা বাংলায় চলে গিয়েছিলেন। বাংলার সুলতানের সাহায্যে রাজ্য উদ্ধার করেন এবং আরাকানি রাজা বঙ্গীয় রাজের আধিপত্য মেনে নিয়ে মুদ্রায় ফার্সিতে তাদের নাম উৎকীর্ণ করেন। এ কারণেই যুবরাজ মুসলমানদের আমন্ত্রণ জানান। সেই রাজার নাম মিন-সাউ-মুন। তখন বাংলার শাসক ছিলেন গিয়াসউদ্দিন আজম শাহ। মুসলমানদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে তাদের সংস্কৃতিতে এর প্রভাব পড়ে।

বাংলার উপকূল থেকে হিন্দু ও মুসলমান উভয় ধর্মের মানুষজনকে আরাকানের মগ বা পর্তুগিজ জলদস্যুরা অপহরণ করত। এদের অনেককে বিক্রি করা হয় আরাকানে। পরে কেউ কেউ মুক্তি পেয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। সম্রাট শাহজাহানের পুত্র দারা ১৬৬০ সালে পালানোর সময় আরাকানে যান। সেখানেও প্রায় হাজারখানেক মুসলমান আশ্রয় নেয়।

আবদুল করিম উল্লেখ করেছেন, এভাবে বহিরাগতরা আরাকানবাসী হয়ে যান। যাদের মধ্যে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী রয়েছেন। সপ্তদশ শতকে তাদের রাজধানী রোসাঙ্গ সমৃদ্ধ এক শহরে পরিণত হয়। মধ্যযুগীয় বিখ্যাত কবিরা বাংলা ভাষায় কাব্য রচনা করেছেন; তাদের মধ্যে আলাওল, কাজি দৌলত, সর্দার নরুদ্দীন বা কোরাইশী মাগন ছিলেন রোসাঙ্গবাসী। অনেক মুসলমান আরাকান রাজদরবারের মন্ত্রী ছিলেন– বুরহান উদ্দিন, আশরাফ খান (প্রতিরক্ষা মন্ত্রী), মাগন ঠাকুর, সৈয়দ মুসা, নবরাজ মজলিস (প্রধানমন্ত্রী), সৈয়দ মোহাম্মদ, শ্রী মন্ত সোলায়মান মন্ত্রী প্রমুখ।

সুতরাং যাদের এখন বর্মীরা বিতাড়ন করছে মুসলমান এবং বাঙালি বলে তাদের পূর্বপুরুষরা ৫০০-৬০০ বছর আগে থেকেই সেখানকার আদি অধিবাসী, বহিরাগত বা বিদেশি নয়। সেই সময় আরাকানে কত দেশ থেকে যে মানুষজন এসেছেন তার ইয়ত্তা নেই। একই সময় এই ঢাকায়ও প্রচুর বিদেশি এসেছেন। যে দেশ/শহর সমৃদ্ধ সেখানে বণিকরা যাবেনই। আলাওলের কবিতায় সেই চিত্র পাই:

নানা দেশী নানা লোক শুনিয়া রোসাঙ্গ ভোগ আইসন্ত নৃপ ছায়াতল।
আরবি, মিছরি, সামি তরুকি, হাবসি রুমি
খোড়াছানা উপজেগী সাল \
লাহুরি সুলতান সিন্ধি কাশ্মিরি দক্ষিণী হিন্দি
কামরুপি আর বঙ্গ দেশি।

অহপাই খোটনচারি? বর্ণালি মলয়াবারী
আবি, কুচি, কর্ণাটক বাসী \
বহু শেখ সৈয়দ জাদা মোগল পাঠান যোদ্ধা
রাজপুত হিন্দু নানা জাতি \
আভাই বরমা শ্যাম ত্রিপুরা কুকীর নাম
কতেক কহিব ভাতি ভাতি \
আরকানি ওলন্দাজ দীনমার ইঙ্গ'রাজ
কাস্তিলাল আর ফরান্সিস।

হিসপানি, আল সানি ছোলদার নছরাণী
নানা জাতি আছে পুর্ত্তকীস।

১৭৮৫ সালে বার্মার রাজা বাদাউপ্যা আরাকান দখল করে বার্মার সঙ্গে একীভূত করেন। ১৮২৫ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বার্মা দখল করে ও আকিয়াবের পত্তন ঘটায়। আকিয়াব তখন থেকে আরাকানের রাজধানী। ১৮২৬ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী আরাকানের জনসংখ্যা ছিল এক লক্ষ যার ৩০ ভাগ ছিল মুসলমান। এরা নামবাইকতা, জেরবাদি, কামানন্তি এবং রোহিঙ্গা গোষ্ঠী। যার মধ্যে রোহিঙ্গারা হল ৮০ ভাগ। ১৯৮১ সালে বার্মার আদমশুমারি অনুযায়ী এরা সবাই বিদেশি। ১৯৯২ সালে জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক কমিটি রোহিঙ্গা জনসংখ্যা ১৪ লক্ষ বলে উল্লেখ করেছে। বিশ শতকে প্রচুর সংখ্যক বাঙালি বার্মায় বসতি স্থাপন করেন যা শরৎচন্দ্র ও অন্যান্যদের উপন্যাসে আছে। আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঙালিদের অনেকে বার্মা ত্যাগ করেন। ব্রিটিশরাও বর্মী রাজাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। অমিতাভ ঘোষ তা নিয়ে দ্য গ্লাস প্যালেস নামে চমৎকার এক উপন্যাস লিখেছিলেন।

১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীনতা লাভ করে এবং তখন থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। জেনারেল নে উইনের আমলে সিদ্ধান্ত হয় রোহিঙ্গাদের বিতাড়ন করার। অথচ ১৯৮২ সালের আইন অনুযায়ীও রোহিঙ্গারা বর্মী নাগরিক।

৩.

ঐতিহাসিকভাবে বর্মীরা বিদেশি বা তাদের নিজস্ব গোষ্ঠী ছাড়া সবার প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করেছে। মিয়ানমারের অন্যান্য গোষ্ঠী, যেমন, কাচিনদের বিরুদ্ধেও দমননীতি চালু ছিল। তখন কাচিনসহ অন্যান্যরা চীনে আশ্রয় নিচ্ছিল। পরে চীনের ধমকে বর্মী মিলিটারি পিছু হটে। সে এলাকায় এখন আপাতত এক ধরনের অস্বস্তিকর স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে। বর্মীদের নিপীড়নে তারাও বিদ্রোহী দল সংগঠিত করেছে। শান ও কাচিনদের অনেকে থাইল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছে। এদিকে আরাকানিরা নিপীড়িত হয়ে গঠন করেছে আরসা। সুতরাং মিয়ানমারে দমননীতির শিকার ও বিদ্রোহী কেবল আরাকানিরাই নয়।

বার্মা ১৯৪৮ সাল থেকেই বলা যেতে পারে সেনাবাহিনী দ্বারা শাসিত। এদের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অনেক বর্মীও নিতে হয়েছেন। সু চি এই গণতান্ত্রিক সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত ও আদৃত হয়েছেন। কিন্তু আমরা মনে রাখিনি যে, তিনিও এক জেনারেলের কন্যা। জেনারেলদের প্রতি এক ধরনের টান তাঁর নিজের মধ্যেও রয়েছে, থাকার কথা। পাশ্চাত্যের চাপে এক ধরনের সমঝোতায় তিনি বাহ্যত ক্ষমতা লাভ করেছেন। কিন্তু প্রকৃত ক্ষমতা সেখানে এখনও সেনাবাহিনীর হাতে। এসব পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরাও গিয়েছি। সুতরাং সে ইতিহাস নতুন করে বলার কিছু নেই।

পার্থক্যটা হল, আমাদের রাজনীতিবিদরা সেনাশাসন অপসারণ করেছেন। যদিও সেনাবাহিনী এখনও ক্ষমতাশালী। শেখ হাসিনার সঙ্গে সু চির পার্থক্য এখানেই যে, তিনি সম্পূর্ণভাবে সেনাবাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত; শেখ হাসিনা তা নন। কারণ এদেশের মানুষ সেনাশাসন-বিদ্বেষী। সেনাবাহিনী এ সত্য মেনে নিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে মনোনিবেশ করেছে এবং রাষ্ট্রও তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে যা একসময় আবার চরম তিক্ততার সৃষ্টি করবে।

সেনাবাহিনী যেমন আমাদের দেশে জাতির পিতাকে হত্যা করে ধর্মব্যবসায়ীদের শক্তিশালী করেছে, মিয়ানমারেও তাই হয়েছে। যিনি স্বাধীনতার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বার্মায়, সু চির পিতা অং সানকে হত্যা করেছে তারা। একই সঙ্গে বৌদ্ধ ধর্মের মূল সুরের বিপরীত গিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুদেরও মুসলমান-বিদ্বেষী করে তোলা হয়েছে।

শ্রীলংকায় ঠিক এমনটি ঘটেছে। সেখানকার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা মুসলমানবিদ্বেষী। অর্থাৎ বৌদ্ধ ধর্ম এখন বিভক্ত। মুসলমানদের মধ্যে যেমন সৃষ্টি হয়েছে জঙ্গি ইসলামের, তেমন উত্থান হয়েছে মূল বৌদ্ধ ধর্মবিরোধী জঙ্গি বৌদ্ধদের। সে দিক থেকে বলতে গেলে, বাংলাদেশের বৌদ্ধরা এখনও বৌদ্ধ ধর্মের মূলনীতি অহিংসা মেনে চলছেন। তারা রোহিঙ্গা-বিরোধী বৌদ্ধদের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন।

মিয়ানমারে জংলি সেনা শাসন চীন ও ভারত সব সময় সমর্থন করেছে। চীন বার্মায় আধিপত্য বিস্তার ও ভারতের বিরুদ্ধে ঘাঁটি করতে চায়। ভারত আরাকানে প্রভাব বিস্তার করতে চায় চীন ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। শোনা যায়, এক সময় এ দুটি শক্তি আরাকান ভাগ করে নেবে নিজেদের প্রভাবাধীন অঞ্চলে। এখন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া। চীনে কমিউনিস্ট আদর্শ এখন নামেমাত্র। কারণ ওই আর্দশ থাকলে সাম্রাজ্য বিস্তার বা পুঁজির বিকাশ ঘটানো যাবে না। গণহত্যা নিয়ে চীন কখনও মাথা ঘামায়নি। শুধু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান কর্তৃক চীনাদের গণহত্যার বিষয়টি তারা স্বীকার করে।

সোভিয়েত ইউনিয়ন নামের রাষ্ট্রটি যখন ছিল তখন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির অধিকার-সংগ্রামে তারা সহায়তা করেছে। এখন সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে অনেক রাষ্ট্র হয়েছে। ওদিকে ভারতে এখন সেক্যুলার আদর্শ বিপন্ন। তাছাড়া, ১৯৪৮ সাল থেকেই ভারত বার্মার বন্ধু। সেখানে এখন মোদী না থেকে অন্য কেউ ক্ষমতায় থাকলেও তাদের নীতি একই রকম হত। ধর্মের শুরু যেদিন থেকে সেদিন থেকেই মানবসমাজ বিভক্ত। এ বিভক্তি তীব্রতর হচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নতি হচ্ছে বটে কিন্তু মানসিকতার দিক থেকে আমরা মধ্যযুগে ফিরে যাচ্ছি যেখানে ধর্ম প্রধান উপাদান।

এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অবস্থান যে খুব নাজুক তা না বললেও চলে। আমরা সেনাবাহিনীকে যতই আধুনিক বানাই, তাদের জন্য যত বেশি অর্থ খরচ করি না কেন, তারা নিজ দেশ ছাড়া আর কোনো শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারবে না। এটি বাস্তবতা। বাংলাদেশের আকাশসীমা বারবার লঙ্ঘিত হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ জানিয়েছি এটা ঠিক, কিন্তু চীন বা ভারতের বিরুদ্ধে কোনো অবস্থান আমরা নিতে পারব না। আওয়ামী লীগের বিশাল দল গেছে চীনা কংগ্রেসে যোগ দিতে। আর এখনও আমরা বার্মা থেকে বেশি দামে চাল আমদানির উদ্যোগ নিচ্ছি। এই উদ্যোগ বাতিল করলে তবু বলা যেত যে, আমরা প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু যখন এই চুক্তি হবে তখন আমাদের অবস্থান কোথায় থাকে?

তাছাড়া অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে অকারণে বিএনপির রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে নানা কথা বলা মিয়ানমারের পক্ষেই যাচ্ছে। রোহিঙ্গা বিতাড়নে সেনাপ্রধান থেকে সু চি, বর্মি নাগরিক থেকে ভিক্ষুরা ঐকমত্যে আছে। আমরা বহুধাবিভক্ত। এটি হল বাস্তবতা।

৪.

যেভাবে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়ছেন তা দেখে আমাদের প্রজন্মের সবার ১৯৭১ সালের কথা মনে পড়ছে। এভাবে বাঙালিরাও ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল। মনে রাখা দরকার, তখন মিয়ানমার পাকিস্তানের পক্ষে ছিল এবং বাঙালিদের আরাকানে আশ্রয়গ্রহণে বাধা দিয়েছে। ওই দুঃখকষ্ট শুধু একই রকম কিন্তু পার্থক্য বিরাট। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত ছিলাম। রোহিঙ্গারা কোনো ধরনের স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত ছিল না।

রোহিঙ্গাদের নিয়ে আমাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতিও কাজ করছে। ১০ লক্ষ রোহিঙ্গা যদি থেকে যায় তাহলে পরিস্থিতি কী হতে পারে? কারণ আমাদের দেশটি তো খুব ছোট, আর সম্পদই-বা কতটুকু?

শেখ হাসিনা জাতিসংঘে বাংলাদেশের কথা তুলে ধরবেন। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ সমর্থন জানাবে। ইত্যেমধ্যে গণমাধ্যমে ১৯৭১ সালের মতো রোহিঙ্গারা জায়গা করে নিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এই ইস্যু সজীব রাখতে পারবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ আছে। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে এ ইস্যুর মোকাবেলা করতে হলে সমন্বিত উদ্যোগ চাই। শুধু আমলা দিয়ে এ প্রচার অব্যাহত রাখা যাবে না। এক্ষেত্রে রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক, আইনজীবী, শিক্ষক, মানবাধিকারকর্মী প্রমুখকে সংশ্লিষ্ট করতে হবে। প্রচারের লক্ষ্য, সরকার থেকে সাধারণ। ১৯৭১ সালে অধিকাংশ পরাশক্তি ও রাষ্ট্রসমূহ বাংলাদেশের বিপক্ষে ছিল। কিন্তু বাংলাদেশ ও ভারত সরকার প্রচারের ক্ষেত্রে সমন্বিত পদক্ষেপ নিয়েছিল। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে, ইউরোপ ও আমেরিকার সাধারণ মানুষ বাধ্য করেছিল নিজ নিজ সরকারকে বাংলাদেশের পক্ষ নিতে।

স্বীকার করি গত শতকের ষাট ও সত্তর দশক ছিল লিবারেল সময়, এখন রক্ষণশীলতার সময়। তা বলে লিবারেল বা সেক্যুলারপন্থীরা কিন্তু একেবারে শেষ হয়ে যায়নি। আমেরিকাতে মার্কিনিরাই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত সমাবেশ করছেন। মালয়েশিয়ায় মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য সু চি ও বর্মী সেনাপতিদের আন্তর্জাতিক গণআদালতের বিচার শুরু হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের মধ্যে রয়েছে কাচিন, শান, বৌদ্ধ, তারাং, রোহিঙ্গা ও খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানো। বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে এ ধরনের গণআদালত সংঘটন ইস্যুটি সজীব রাখবে। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে হবে যাতে সু চি আর কোথায় যেতে না পারেন এবং যদিও-বা যান ধিক্কারের মুখে পড়েন। বর্মী দেখলেই মানুষ যেন বুঝে নেয় এদের এবং মানুষে তফাৎ আছে।

৫.

ট্রাইবুনালে ফ্রি বার্মা কোয়ালিশনের প্রতিষ্ঠাতা ড. মং জার্নি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের অন্যতম নৃ-গোষ্ঠী উল্লেখ করে বলেন, প্রখ্যাত স্কটিশ ভূগোলবিদ ফ্রান্সিস বুকানন ১৭৭৮ সালেই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আরাকানের 'নেটিভ' হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। সুতরাং ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিকসহ সব বিবেচনায় তারা আরাকানের নাগরিক। তিনি নে উইন সরকারের ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনটি রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জেনোসাইড চালানোর অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে চিহ্নিত করেন। বিচারক প্যানেল থেকে প্রশ্ন করা হয় যে, কাচিন, শানসহ অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর ওপরও রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন চলে, তার সঙ্গে রোহিঙ্গা-বিরোধিতার কীভাবে পার্থক্য দেখেন? উত্তরে ড. মং জার্নি জানান যে, অন্যদের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের তফাত হল, তাদের মুছে ফেলাটাই নীতি হিসেবে নেওয়া হয়েছে, যেটা অন্যদের ক্ষেত্রে ঘটেনি।

ড. মং উল্লেখ করেন, ১৯৭৮ সালে যখন প্রথম রাখাইন তাড়ানো শুরু হয় তখন বাংলাদেশ-বার্মা দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রোহিঙ্গাদের ফেরত না নিলে তাদের অস্ত্র সরবরাহ করা হবে। তখন জেনারেল নে উইন পিছিয়ে যান। কিন্তু ১৯৮২ সালে প্রতিশোধ হিসেবে নে উইন রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেন।

মিয়ানমারের সেনাবহিনী, অং সান সু চি, চীন, ভারত ও রাশিয়া যা বলছে তা নস্যাৎ করেন ড. মং।রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি বা আরসার দ্বারা গত ২৫ আগস্টের হামলা বা এর আগের হামলার কারণে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী সন্ত্রাস দমনের অংশ হিসেবে সশস্ত্র অভিযান চালিয়েছে বলে যে ধারণা মিয়ানমার বিশ্বের কাছে তুলে ধরেছে, তিনি তা জোরালোভাবে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, শুধু জাতিগত পরিচয়ের কারণে রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমারে পদ্ধতিগতভাবে গণহত্যার শিকার হচ্ছে। তাদের রাষ্ট্রবিহীন হয়ে পড়া এবং তাদের সব ধরনের নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করার সঙ্গে মিয়ানমারে গণতন্ত্র আসা বা না-আসা কিংবা আরসার ২৫ আগস্ট বা তার আগে-পরের হামলা, বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক ধর্মীয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে বিপথগামী কোনো রোহিঙ্গা গোষ্ঠী হাত মেলানো– রোহিঙ্গাদের জাতিগত নির্মূল অভিযানের সঙ্গে এসব কিছুরই কোনো সম্পর্ক নেই।

ট্রাইবুনালে সাক্ষী দেন রাজিয়া সুলতানা। তিনি ২১ জন রোহিঙ্গা নারীর সাক্ষী গ্রহণ করেন। তিনি বলেন:

"ওই ২১ নারীর ১৯ জন স্বামীহারা হয়েছেন। ১৭ থেকে ৫১ বছর তাঁদের বয়স। তাদের একজন স্বামীর খোঁজ পান মংডু জেলে। ২১ নারীর মধ্যে ১১ নারীর ১৬ শিশু নিহত হয়েছে। দুটি শিশুকে মায়ের সামনে পুড়িয়ে মারা হয়। একটি শিশুর গলা কাটা হয়েছে। আরেকটি শিশুকে বুটের তলায় পিষে মারা হয়েছে। আরেকটি ছোট শিশুকে ছুঁড়ে ফেলা হয়, তার মস্তিষ্কে সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইয়ে খাত চং গ সান গ্রামের একজন বলেছেন, 'আমাদের সবাইকে গ্রামের বাইরে একটি ক্ষেতে জড়ো করা হয়। সৈন্যরা সুন্দরী তরুণীদের আলাদা করে। আমাদের গ্রুপে ১০০ নারী ছিল। এর মধ্য থেকে তারা ১০ সুন্দরী তরুণীকে বাছাই করে। তাদের কয়েকজনের বয়স ছিল ১০-১২ বছর।

এই ভাষ্য কি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের কুকর্ মের সঙ্গে মিরে যাচ্ছে না। মনে করিয়ে দিচ্ছে না সেদিনের কথা?

৬.

বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক সেটি বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ জ্ঞানের দরকার নেই। সু চি ও তাঁর সহযোগী জান্তার বিরুদ্ধে এখন একটি অস্ত্র; তা হল, আন্তর্জাতিক জনমত। এই জনমত সৃষ্টি ও সংহতকরণে বাংলাদেশকেই ১৯৭১ সালের মতো সংহত পদক্ষেপ নিতে হবে। চীন ও ভারতকেও কুটনৈতিক ভাষায় বোঝাতে হবে যে, বাংলাদেশ একেবারে তাদের ওপর নির্ভরশীল তা নয়। তারাও অনেক কিছুর জন্য বাংলাদেশের ওপর নির্ভরশীল। গত কয়েক বছরে ইউরোপে কয়েক লক্ষ শরণার্থী নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড হচ্ছে। বাংলাদেশ এক মাসে তাদের থেকেও বেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। বাংলাদেশ নৈতিকভাবে এ দিক এগিয়ে আছে এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের তুলনায় বাংলাদেশ যে অনেক মানবিক তা-ও প্রমাণিত হয়েছে। বিশ্বজনমত গড়ে তোলার ব্যাপারে এটি সহয়তা করবে এবং নোবেল প্রাইজ যে সু চির নয়, শেখ হাসিনার প্রাপ্য সেটিও প্রতিভাত হবে। অন্তিমে নৈতিকতা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায় সাধারণ মানুষের কাছে। এ নৈতিক বলের কারণেই গণহত্যার সমর্থনকারীরা ক্রমশ হারবে ১৯৭১ সালের মতো।

শেখ হাসিনা যথার্থই বলেছেন, ১৬ কোটি লোককে খাওয়াতে পারলে ১০ লক্ষকেও পারব। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সহায়তা করতে হবে সিভিল সমাজকে, যেভাবে ভারতীয় সিভিল সমাজ ইন্দিরা গান্ধীকে সমর্থন করেছিল ১৯৭১ সালে। সু চি এবং তাঁর সেনাবাহিনী যা করছে তা যে নিছক গণহত্যা তার প্রমাণ সু চি নিজেই দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ভিডিওর মাধ্যমে দেখিয়েছে যে, বাস্তব চিত্রের সঙ্গে সু চির বক্তব্যের মিল নেই। তিনি এটিও বলেছিলেন যে, আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়টি বার্মা পাত্তা দেয় না। তাঁর এ ভাষণ পৃথিবীজুড়ে তাঁকে 'সুন্দরী মিথ্যাবাদী' হিসেবে প্রমাণ করেছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে তাঁকে ধিক্কার জানানো হচ্ছে। কোনো নোবেল লরেট এর আগে এমনভাবে ধিকৃত হননি। ১৯৭১ সালে ইয়াহিয়া খান যে ধরনের ভাষণ দিয়েছিলেন সু চির ভাষণ অনুরুপ।

যারা এই গণহত্যায় সমর্থন দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের প্রয়োজনে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা শুধু বাণিজ্য বা বিনিয়োগ দেখব তা হতে পারে না। আমাদের কত ক্ষতি হবে তাতে? চীন, রাশিয়া বা মিয়ানমারে বাঙালিরা অভিবাসিত হতে যায় না। জনমত সজীব রাখতে পারলে, হয়তো মিয়ানমার পিছু হটতে পারে।

বাংলাদেশ সরকারের যে দাবি তাতে অটল থাকতেই হবে। অর্থাৎ মিয়ানমারের বাসিন্দাদের শুধু ফেরত নয়, নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তাও দিতে হবে। বাস্তব অবস্থা হল, মিয়ানমার এদের ফিরিয়ে নেবে না। তারা যে নিরাপত্তার কথা বলছে তা ফালতু। আজ ইয়াঙ্গুনে যদি সন্ত্রসী হামলা হয় তাহলে কি ইয়াঙ্গুনের সমস্ত বাসিন্দাকে ইয়াঙ্গুন ছাড়তে বাধ্য করা হবে? শেখ হাসিনা নিয়ত লড়াই করছেন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে। সে জন্য কি পাড়ার পর পাড়া জ্বালিয়ে দিচ্ছেন?

তাই এটাই সত্য যে, রোহিঙ্গারা যাবে না (গেলে তাদের ও আমাদের ভাগ্য)। সুতরাং তাদের বছরের পর বছর আশ্রয় কেন্দ্রে রেখে নতুন যাতনা সৃষ্টি করা কি ভালো হবে? নাকি এখন থেকে ভাবা উচিত যে, যদি শুভ উদ্যোগ ব্যর্থ হয় তাহলে তাদের কর্মশীলতার মধ্যে এনে দেশ ও তাদের উন্নয়নে রাখার চেষ্টা করা দরকার?

বাস্তবে থাকা ভালো। মিয়ানমার একমাত্র শক্তি বোঝে। তাদের সেনারা জানে চীন বা ভারত তাদের বিরুদ্ধে কিছুই করবে না। কেননা তাদের অস্ত্রের ও পণ্যের বাজার মিয়ানমার। কিন্তু তারপরও বলব, পৃথিবীতে শক্তির দম্ভ করে শেষ পর্যন্ত কেউ টিকতে পারেনি। সু চি বা মিয়ানমারের অসভ্য জান্তারাও পারবে না। তবে এটাও ঠিক যে, এরই মধ্যে কয়েকটি জাতি ধ্বংস হয়ে যাবে চিরতরে।

আশা রাখি তবু, যদি বর্বরাই সব সময় জিতে যেত তাহলে সভ্যতা এ পর্যন্ত এগুত না।