মহিউদ্দিন আহমদের ইতিহাস প্রকল্পের সাম্প্রতিক হালচাল

এম সানজীব হোসেন
Published : 22 July 2017, 05:33 AM
Updated : 22 July 2017, 05:33 AM

আজ পর্যন্ত লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদের দুটি লেখার পর্যালোচনা 'বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম'-এর মতামত পাতায় প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৩ ও ২০১৪ সালে প্রকাশিত "তাহের-জিয়া ও ৭ নভেম্বরের সাতকাহন – একটি সতর্ক পর্যালোচনা" এবং "মহিউদ্দিন আহমদের 'ইতিহাস প্রকল্প': একটি গবেষণানির্ভর পর্যালোচনা" রচনায় আমি জনাব আহমদের লেখায় তথ্যগত ও গবেষণার পদ্ধতিগত ভুল পাঠকদের সামনে তুলে ধরি।[১]

সেই সময় আমি জনাব আহমদের লেখার মূল উদ্দেশ্যগুলো চিহ্নিত করেছিলাম, যা ছিল:

১. বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত হোতাদের আড়াল;
২. কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে বঙ্গবন্ধু বিদ্বেষী হিসেবে উপস্থাপন;
৩. ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান সংগঠন প্রক্রিয়া থেকে সিরাজুল আলম খানকে বিচ্ছিন্ন এবং
৪. 'ঠাণ্ডা মাথার খুনি' জিয়াউর রহমানকে 'মানবিক' রূপে উপস্থাপন করা।

সেই সময় অনেকেই আমার পর্যালোচনাগুলো পড়েছিলেন এবং তাদের মতামত জানিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের প্রথিতযশা শিক্ষক অধ্যাপক আশফাক হোসেন বলেছিলেন:

"[…] it appears that Mr. Ahmed has very little idea about the methodology of history."[২]

বলে রাখা প্রয়োজন, অধ্যাপক আশফাক হোসেনের গবেষণাপত্র ক্যাবব্রিজ ইউনিভারসিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয়েছে বেশ কয়েকবার। আমাদের প্রজন্মের আলোর দিশারী প্রয়াত অভিজিৎ রায় আমার লেখাটি পড়ে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে জানিয়েছিলেন:

"It's a great article. Very articulate and very nicely done."[৩]

ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি পাওয়া ডাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক ড. মুশতাক হোসেন বলেন:

"এ যুগের বিপ্লবের প্রতীক, মুক্তিযুদ্ধের প্রবাদপ্রতিম নায়ক শহীদ কর্নেল আবু তাহের ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে দানবায়ন (demonize) করার যে হীন লক্ষ্য নিয়ে জনাব মহিউদ্দিন আহমদ কলম ধরেছেন তার জুতসই ও যথার্থ জবাব দিয়েছ।"[৪]

রংপুরের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী রিয়াদ আনোয়ার শুভ বলেন:

"পারলে লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ সানজীবের এই লেখার যুক্তি খণ্ডন করুন। আর 'ইচ্ছা থাকলে' গবেষণা কাকে বলে তাও তিনি এই লেখা থেকে শিখতে পারবেন। যদিও জানি, ফরমায়েশি ইতিহাস রচয়িতা বা গবেষকদের তা শেখার কোনো দরকার নেই। ব্যাপক তথ্যভিত্তিক লেখাটা পড়লে পরিষ্কার হয়ে যাবে ফরমায়েশি ইতিহাস রচয়িতা 'লেখক ও গবেষক' মহিউদ্দিন আহমদের মূল উদ্দেশ্য।"[৫]

অন্যদিকে আমার লেখা বিএনপি-জামায়াত সমর্থক ও 'বাঁশেরকেল্লা' অনুসারীদের পছন্দ হয়নি, যেমন হয়নি জনাব আহমদের। নিজের লেখার পর্যালোচনা বা রিভিউ প্রকাশিত হলে একজন প্রকৃত গবেষক সাধারণত যেমনভাবে সেই পর্যালোচনা গ্রহণ করেন বা তার জবাব দেন, জনাব আহমদ তেমনটা করেননি। ফেসবুকে তিনি আমাকে তুলনা করে বসেন কুকুরের সঙ্গে এবং বলেন:

"Bomabaajra ekhon baap-beta militobhabe amar biruddhe legechhe. Karon ami tader lash niye banijjo noshto kore diyechhi."[৬]

একজন সজ্জন ব্যক্তি বা একজন প্রকৃত গবেষক এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন না, এই বিবেচনায় জনাব মহিউদ্দিন আহমদের পরবর্তী লেখা পড়ার আগ্রহ বোধ করিনি।

এ বছর 'প্রথম আলো'র ঈদ সংখ্যায় মহিউদ্দিন আহমদ রচিত 'রক্তাক্ত আগস্ট' প্রকাশিত হয়েছে। বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারি এবারও জনাব আহমদ আমার প্রয়াত চাচা কর্নেল তাহের এবং বাবা মো. আনোয়ার হোসেন সম্পর্কে অত্যন্ত বিদ্বেষপূর্ণ ও বানোয়াট বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। এবার জনাব আহমদ পাঠকদের জানাচ্ছেন:

১৪ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখে আমার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বাকশালে যোগদান না করার থ্রেট হিসেবে সেখানে 'হাই এক্সপ্লোসিভ' ফাটানোর ব্যবস্থা করেন।[৭]

অন্যদিকে জনাব আহমদ সাইদুর রহমান নামের একজন তথাকথিত 'প্রভাবশালী মুক্তিযোদ্ধার' বরাত দিয়ে আরও জানাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা 'সন্দেহের' তালিকায় থাকলেও, কর্নেল তাহের নিশ্চিতভাবেই জড়িত ছিলেন এবং এই হত্যাকাণ্ডে তাঁর 'পুরোপুরি সম্মতি' ছিল।

এসব বালখিল্য এবং অবাস্তব অপবাদের জবাব দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে আজ লিখতে বসিনি। যেখানে ইয়েল ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা লরেন্স লিফশুলজের মতো প্রথিতযশা সাংবাদিক ও গবেষক বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে লিখছেন গত চার দশক ধরে, সেখানে কিছুদিন পর পর জনাব আহমদের চটকদার মন্তব্য সাময়িক বাহবা পেলেও তা 'ইতিহাস' হিসেবে টিকে থাকবে না।

গত কয়েকদিন স্বঘোষিত 'লেখক ও গবেষক' সম্পর্কে জানতে সচেষ্ট হয়েছি। তিনি এখন পর্যন্ত যা লিখেছেন, তা কেন লিখছেন, তা আরও গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করেছি। এই সুযোগে জনাব আহমদের কিছু পুরনো লেখাও চোখে পড়েছে। এমন দুটি লেখার কথা আজ তুলে ধরব। জনাব আহমদ সত্তরের দশকে নিজেও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেই সূত্রে তাঁর তৎকালীন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের দিকেও কিছুটা আলোকপাত করব।

প্রথমেই পাঠকদের সামনে তুলে ধরব 'মার্চের উত্তাল দিন' রচনাটি। ২০১৫ সালে দৈনিক 'প্রথম আলো'য় প্রকাশিত এই লেখায় জনাব আহমদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখে প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা অস্বীকার করে জানাচ্ছেন:

"২৫ মার্চ রাতে স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া কিংবা না দেওয়া নিয়ে পরে জল অনেক ঘোলা করা হয়েছে। শেখ মুজিব নিজেও তাতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল ঢাকায় অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় বক্তৃতা দেওয়ার একপর্যায়ে বলেন, ২৫ মার্চ রাতে তিনি চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছিলেন। জহুর আহমদ চৌধুরী এরকম একটি বার্তা পেয়েছিলেন– এমন কথা একাত্তর সালে কেউ শোনেননি।… অনেকেই মনে করেন, স্বাধীনতার একটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকলে মুক্তিযুদ্ধ বুঝি বৈধতা পায় না এবং এই ঘোষণা শেখ মুজিব নিজ কণ্ঠে না দিয়ে থাকলে তিনি যে মুক্তিযুদ্ধের নেতা, এটা প্রমাণ করা যায় না। এই ধারণা থেকেই সম্ভবত পরবর্তী সময়ে এর নানা রকমের ভাষ্য তৈরি হয়।"[৮]

মহিউদ্দিন আহমদের কথা যদি সত্য হিসেবে মেনে নেই, তাহলে ধরে নিতে হবে স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিথ্যা কথা বলছেন।

প্রথমেই স্পষ্ট করা দরকার বঙ্গবন্ধু ৭ এপ্রিল ১৯৭২ তারিখে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় কী বলেছিলেন। সেদিন ছিল স্বাধীন বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের কাউন্সিলের প্রথম দিন। ৮ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত 'বাংলাদেশ অবজারভার' পত্রিকার প্রতিবেদন পড়ে জানা যায়:

"[Bangabandhu] disclosed that he had told Mr Zahur Ahmed Chowdhury (now Minister) of Chittagong on the 25th night to broadcast his declaration of independence over the (former) EPR wireless network as he had Chittagong in our control."[৯]

এর পরের দিন, অর্থাৎ ১০ এপ্রিল ১৯৭২ তারিখের বাংলাদেশে গণপরিষদের দলিলের দিকে তাকালে এ প্রসঙ্গে আরও জানা যায়। এদিন প্রয়াত সৈয়দ নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ গণপরিষদে 'স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কীয় প্রস্তাব' উত্থাপন করেন। প্রস্তাব উত্থাপনের পর তৎকালীন গণপরিষদ সদস্য মিসেস নূর জাহান মুরশেদ বলেন:

"মাননীয় সভাপতি সাহেব, গত ২৬ মার্চ, ১৯৭১ তারিখে বঙ্গবন্ধু যে স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, সে সম্বন্ধে আমি জানতে চাই।"

এই প্রশ্নের জবাবে কিছুক্ষণ পরই বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন:

"[…] বর্বর ইয়াহিয়ার সেনাবাহিনীকে অসহায় ও নিরস্ত্র সাত কোটি বাঙালির উপর কুকুরের মতো লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেনাবাহিনী যদি যুদ্ধ ঘোষণা করত, তবে আমরা সেই যুদ্ধের মোকাবিলা করতে পারতাম। কিন্তু তারা অতর্কিতে ২৫শে মার্চ তারিখে আমাদের আক্রমণ করল। তখন আমরা বুঝতে পারলাম যে, আমাদের শেষ সংগ্রাম শুরু হয়ে গেছে। আমি ওয়ার্লেসে চট্টগ্রামে জানালাম বাংলাদেশে আজ থেকে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। এই খবর প্রত্যেককে পৌঁছিয়ে দেওয়া হোক, যাতে প্রতিটি থানায়, মহকুমায় জেলায় প্রতিরোধ সংগ্রাম গড়ে উঠতে পারে। সেই জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশ ও দিয়েছিলাম। এই ব্যাপারে আত্মসচেতন হতে হবে। দেশবাসী জানেন একই তারিখে দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিরোধ আন্দোলন শুরু হয়েছিল। এটা হাওয়ার উপর থেকে হয় নাই। যদি কোন নির্দেশ না থাকত, তবে কেমন করে একই সময়ে, একই মুহূর্তে সব জায়গায় সংগ্রাম শুরু হলো?"[১০]

মহিউদ্দিন আহমদের কথা অনুযায়ী আসলেই কি বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা ওয়ার্লেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামে পৌঁছায়নি? দলিল বলছে অন্য কথা। ১৯৭১ সালে যুক্তরাজ্য থেকে প্রকাশিত 'Pakistan Crisis' বইতে প্রখ্যাত সাংবাদিক ডেভিড লোশাক বলেন:

"Soon after darkness fell on March 25, the voice of Sheikh Mujibur Rahman came faintly through on a wavelength close to the official Pakistan Radio. In what must have been, and sounded like, a pre-recorded message, the Sheikh proclaimed East Pakistan to be the People's Republic of Bangladesh. He called on Bengalis to go underground, to reorganize and to attack the 'invaders'."[১১]

২৬ মার্চ ১৯৭১ তারিখে Central Intelligence Agency থেকে প্রকাশিত Intelligence Memorandum জানাচ্ছে:

"Sheikh Mujibur Rahman has proclaimed East Pakistan the sovereign republic of Bangla Desh, according to a clandestine radio broadcast […] speculate that the independence proclamation may have come from a radio station captured from the army — possibly in the port city of Chittagong."[১২]

আজকের জন্য পাঠকদের সামনে এই দুটি দলিল উপস্থাপন করলাম। মহিউদ্দিন আহমদ, আপনি আবারও মিথ্যা বলছেন এবং আপনার আসল চেহারা আবারও প্রকাশ করে ফেলেছেন। এভাবে আর কত?

এবার পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করব Pakistan Institute of International Affairs থেকে প্রকাশিত 'Pakistan Horizon' সাময়িকীর ৬৩(১) নম্বর ইস্যুতে। ২০১০ সালে প্রকাশিত এই ইস্যুর ২৩ থেকে ৩১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত জনাব মহিউদ্দিন আহমদের 'Socio-Political Situation in Bangladesh: Implications for the South Asian Region' রচনাটি পাওয়া যাবে। সেখানে এই লেখা এবং লেখক সম্পর্কে বলা হচ্ছে:

"From an address delivered by Bangladeshi writer, development researcher and poet Mohiuddin Ahmad at a seminar jointly organized by the Pakistan Institute of International Affairs and the Pakistan Institute of Labour Education and Research (PILER), on 27 September 2009."

এই লেখায় জনাব আহমদের বক্তব্যের ধরণ ও বিষয়বস্তু পড়ে পুলকিত না হয়ে পারা যায় না। প্রথমে প্যারাতেই তিনি বলছেন:

"Bangladesh is so close to Pakistan yet so far away, geographically and also psychologically. They were torn apart because of various historical and cultural reasons. History can always be rewritten, maybe in a different direction."[১৩]

এর পর লেখার ২৬ নম্বর পৃষ্ঠায় তিনি বলছেন:

"You know the Marxian postulate that in the beginning you go for primitive accumulation and capital is accumulated through plundering. So in 1947, capital accumulation started by, basically, looting the wealth of the Hindus. In 1971, it also included the wealth of the Biharis. […] In the 1970 general elections, so far as I remember, 56 per cent people cast the vote. […] Out of 56 per cent, there were minor manipulations and rigging. I do not know how you define minor and major. I myself cast three votes and I was under age because the voting age was 21 years at that time. But we registered ourselves as voters. I had just enrolled at Dhaka University. Even if we had not cast more than one vote, the result would have been the same; the margin would probably have been less."

২৮ নম্বর পৃষ্ঠায় জনাব আহমদ বলছেন:

"The trade imbalance between India and Bangladesh is huge. According to official figures, it is about 3 billion dollars. But unofficial and cross-border trade is also huge."

৩০ নম্বর পৃষ্ঠায় জনাব আহমদ বলছেন:

"Remembering and forgetting events are also sometimes matters of convenience. Bangladesh was ruled from Delhi for 500 years, from London for 200 years and from Karachi, Rawalpindi and Islamabad for 24 years. We tend to remember the recent past more than the distant past because our memory is still bitter. But perception is completely different from facts. When we analyze facts, it becomes clear that things did not change much. The rulers did not change but they speak Bangla. They used to speak Urdu, English or Persian."

নিঃসন্দেহে চমকপ্রদ বক্তব্য! 'লেখক ও গবেষক' মহিউদ্দিন আহমদ আমাদের শেখাচ্ছেন "geographically" এবং "psychological" দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান বাংলাদেশের খুব "close"।

জনাব আহমদ বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানকে খুব "close" ভাবতে পারলেও, আমি পারি না। পারি না যখন দেখি নিজামী-মুজাহিদ-সাকা চৌধুরীর মতো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেওয়ার পর পাকিস্তানের সংসদ একের পর এক প্রতিবাদী বিবৃতি দিতে থাকে এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা অস্বীকার করতে থাকে। অবাক না হয়ে পারি না যখন দেখি জনাব আহমদ ১৯৭১ সালে বিহারিদের সম্পত্তি দখল করার কথা বলেন, কিন্তু বিহারি কর্তৃক বাঙালিদের সম্পত্তি দখলের কথা বলেন না, বলেন না অসংখ্য বিহারির রাজাকার বাহিনীতে যোগদানের কথা।

ব্যথিত হই যখন দেখি জনাব আহমদ বলেন যে তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনের প্রশ্নে "minor and major" ও "manipulations and rigging" বোঝেন না, কিন্তু শ্রোতাদের জানিয়ে দেন যে, তিনি রেজিস্টার্ড ভোটার না হওয়া সত্ত্বেও তিনটি জাল ভোট প্রদান করেছিলেন। জনাব আহমদ অবশ্য বলছেন যে, ভোট রিগিং না হলেও নির্বাচনের ফলাফলে কোন হেরফের হত না।

পাঠকদের অনুরোধ করব বিবেচনা করতে, এমন অদ্ভুত কথাবার্তা বলে আমাদের স্বঘোষিত গবেষক ১৯৭০ সালের নির্বাচনী ফলাফলের লেজিটিমেসিকে প্রশ্নের মুখোমুখি করেছেন কি না। আমার সীমিত জ্ঞান বলে, তিনি নিঃসন্দেহে তা করছেন।

'Pakistan Horizon' সাময়িকীতে জনাব আহমদ ভারত ও বাংলাদেশের তিন বিলিয়ন ডলারের ট্রেড ইমব্যালেন্সের কথা বলেন, কিন্তু বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে 'অমীমাংসিত সম্পদ বণ্টন'-এর বিষয়ে তিনি নিশ্চুপ থাকেন। এ প্রসঙ্গে আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের বক্তব্য পাঠকদের এই বিষয়টি বুঝতে সহায়তা করবে:

"১৯৭৪ সালে দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৪,০০০ মিলিয়ন ডলার। তখন ডলারের মূল্যমান ছিল ৮ টাকা, এখন যা ৭৮ টাকা ছাড়িয়েছে। সে হিসাবে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের বর্তমানে পাওনা দাঁড়ায় ৩,০০,০০০ মিলিয়ন ডলারে। দ্বিপক্ষীয় পর্যায় এবং জরুরি প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি তুলে পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি করা জরুরি।"[১৪]

ফেসবুকে জনাব আহমদ গর্ববোধ করে বলেছেন, তিনি ভারতে ট্রেনিং প্রাপ্ত বাংলাদেশের অভ্যন্তরে যুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধা।[১৫]

একই পোস্টে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। ঢাকার অভিজাত এলাকায় বসবাস করা প্রাক্তন এনজিও কর্মকর্তা জনাব মহিউদ্দিনের মুক্তিযোদ্ধা ভাতার প্রয়োজন নাও থাকতে পারে। তবে বাংলাদেশের অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা যাঁরা গরিব, দুস্থ বা পঙ্গু, তাদের অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেটের প্রয়োজন আছে। কারণ, এই সার্টিফিকেটের মাধ্যমেই সরকার ও সাধারণ মানুষ তাদের সনাক্ত করে সাহায্যের হাত বাড়াতে পারে। তাই একজন মুক্তিযোদ্ধা হয়েও যখন মহিউদ্দিন আহমদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পর পরিস্থিতি তেমন বদলায়নি, শাসক বদলায়নি, শুধু বদলেছে তাদের ভাষা ("The rulers did not change but they speak Bangla. They used to speak Urdu, English or Persian") তখন থতমত হয়ে যাই।

মানতে কষ্ট হলেও মহিউদ্দিন আহমদের দিকে তাকালে প্রয়াত হুমায়ুন আজাদের কথার সত্যতা খুঁজে পাই। আসলেই একজন রাজাকার চিরকালই রাজাকার থেকে গেলেও একজন মুক্তিযোদ্ধা চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা থাকেন না।

কথা বলছিলেন জাসদ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সিলেট জেলা জাসদের সভাপতি জনাব লোকমান আহমেদ। ১৯৭৭ সালের কথা। ৭০ আম্বরখানা বড় বাজারে তাঁর পৈতৃক বাড়ি ফয়জুর বাগে ঢাকা থেকে মহিউদ্দিন আহমদ বুলবুল নামের একজন অপরিচিত আগুন্তুক এসেছেন। পরিচয় বলছেন তিনি ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকেন। জাসদ হেড কোয়ার্টার থেকে তাঁকে পাঠানো হয়েছে। লোকমান আহমেদ তখন জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট এমসি কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত ধর্ম ও সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক।

১৯৭৪-৭৫ সেসনের জন্য ওই ছাত্রসংসদ নির্বাচিত হলেও দেশে জরুরি অবস্থা, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড এবং জেনারেল জিয়াউর রহমান কর্তৃক প্রহসনের বিচারের নামে কর্নেল তাহের হত্যা-পরবর্তী সময়ে আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়নি বলে আগের ছাত্র সংসদই তখন বহাল ছিল। জাসদ ও ছাত্রলীগের উন্মুক্ত কার্যক্রম তখন সম্পূর্ণ বন্ধ। সিলেট জাসদ ও গণবাহিনীর অধিকাংশ শীর্ষ নেতা তখন কারাগারে। লোকমান আহমেদদের ফয়জুর বাগের বাড়িটি তখনও পলাতক নেতা-কর্মীদের যোগাযোগের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। লোকমান আহমেদের কাজ ছিল যোগাযোগের একজন বিশ্বস্ত কর্মী হিসেবে কাজ করা।

ঢাকা থেকে আগত মহিউদ্দিন আহমদ বুলবুল বললেন, সিলেট গণবাহিনীর শীর্ষ নেতার সঙ্গে তাঁর জরুরি দেখা করতে হবে। ঢাকা থেকে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা তাঁকে জানাতে হবে। সেদিন রাতে ফয়জুর বাগের বাড়ির নিচতলায় একটি কক্ষে মহিউদ্দিন বুলবুল রাত্রিযাপন করেন। পরদিন একটি বাইকে করে লোকমান আহমেদ মহিউদ্দিন বুলবুলকে নিয়ে যান কদমতলিতে, গণবাহিনীর নিরাপদ শেল্টারে, যেখানে আত্মগোপন করে আছেন গণবাহিনীর নেতৃত্বদানকারী জেলা জাসদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক।

বর্ষীয়ান রফিকুল হক বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। অপরিচিত আগুন্তুককে দেখে রফিকুল হক বিরক্ত হন এবং লোকমান আহমেদকে তিরস্কারও করেন কেন একজন অপরিচিত মানুষকে নিরাপদ শেল্টারে তিনি এনেছেন। মহিউদ্দিন জানান তাঁকে ঢাকার জাসদ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ একটি বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছেন। তা হল সারা বাংলাদেশ থেকে গণবাহিনীর সব অস্ত্র গুটিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে তিনি সিলেটের গণবাহিনীর অস্ত্র ক্লোজ করতে এসেছেন। এটা কেন্দ্রীয় নির্দেশ। এ কথা শুনে রফিকুল হক রেগে যান এবং বলেন:

"আমি তো কোনো কেন্দ্রীয় নির্দেশ পাইনি। আপনাকে চিনিও না।"

কৌতুক ও তাচ্ছিল্লের সুরে মহিউদ্দিনকে বলেন:

"মনে হয় কোন এজেন্সি আপনাকে পাঠিয়েছে। যাক, ঢাকা থেকে এসেছেন, টাকা-পয়সা নিশ্চয়ই ভালোই আছে। ক্যাপ্সটেন সিগারেট খাওয়ান। অনেক দিন খাই না।"

মহিউদ্দিনকে আরও বলেন:

"আপনাকে দেওয়ার মতো কোনো অস্ত্র সিলেটে নাই, আপনি বরং অন্য যেসব অস্ত্র উদ্ধার করেছেন, তা আমার জিম্মায় নিয়ে আসেন। আমি নিরাপদে রাখতে পারব।"

মহিউদ্দিনকে রফিকুল হকের বাড়িতে রেখে লোকমান বাড়িতে ফিরে আসেন। সেইদিনই রফিকুল হক জরুরি খবর দিয়ে লোকমান আহমেদকে ডেকে পাঠান। মহিউদ্দিন আহমেদ তখন চলে গেছেন। আবারও কঠিন তিরস্কার শুনতে হয় লোকমান আহমেদকে। রফিকুল হক জানান, তিনি নিশ্চিত যে এই মহিউদ্দিন দলের পক্ষ থেকে নয়, কোনো এজেন্সির পক্ষ থেকে এসেছে। তাঁর উদ্দেশ্য, গণবাহিনীর শক্তি ও সামর্থ, বিশেষ করে অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কে খোঁজখবর সংগ্রহ করা। তাই এই শেল্টারে থাকা একেবারে নিরাপদ নয়, দ্রুত তাঁকে নতুন শেল্টারে চলে যেতে হবে। সে দিনই তিনি অন্যত্র চলে যান।

বহু বছর পর যখন মহিউদ্দিন আহমেদ 'গবেষক' হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন, তখন লোকমান আহমেদ এক সাক্ষাতে মহিউদ্দিনকে ১৯৭৭ সালে তাঁর সিলেটে এসে গণবাহিনীর অস্ত্র ক্লোজ করা বিষয়ে জানতে চান। কিন্তু মহিউদ্দিন এ বিষয়ে কোনো কথা না বলে সিলেট জাসদের বিভিন্ন নেতা-কর্মীদের খোঁজখবর করেন। লোকমান আহমেদ জানান, অল্প কয়েকদিন আগেও জাসদ জেলা কমিটির এক সভা, যেখানে রফিকুল হক উপস্থিত ছিলেন, সেখানে ১৯৭৭ সালে গণবাহিনীর অস্ত্রের খোঁজে মহিউদ্দিন আহমেদ বুলবুলের রহস্যময় সিলেট আগমন বিষয়ে আলোচনা হয়। সেই রহস্যের কিনারা এখনও হয়নি।

'লেখক ও গবেষক' মহিউদ্দিন আহমদের এযাবতকাল পর্যন্ত প্রকাশিত লেখায় অসংখ্য তথ্যগত ও গবেষণার পদ্ধতিগত ভুল থাকার কারণ শুধুমাত্র এই না যে তিনি একজন 'নিম্নমানের' গবেষক। অবশ্যই তাঁর গবেষণার মান নিম্ন। তাই দেখা যায় Community Development Library (CDL) থেকে তিনি একের পর এক নিজের নামে বই ছাপিয়েছেন, যেই সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি ১৯৮০ সাল থেকে এবং যার চেয়ারম্যান তিনি ছিলেন ১৯৯৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত।

'গুগল' থেকে জোগাড় করা তাঁর curriculum vitae ঘাঁটলে দেখা যায় কিছু অখ্যাত আন্তর্জাতিক প্রকাশনা থেকে কিছু লেখা প্রকাশিত হয়েছে, যার অ্যাকাডেমিক স্ফিয়ারে ইমপ্যাক্ট একেবারেই সীমিত পর্যায়ে। গুগল স্কলার (Google Scholar) বা রিসার্চগেট (ResearchGate) ঘাঁটলেই তা সহজে জানা যায়। গবেষণার মৌলিক পদ্ধতির সঙ্গে অপরিচিত থাকার কারণেই জনাব আহমদ ২৭ আগস্ট ২০১৬ তারিখে তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাসের মাধ্যমে জানান যে কার্ল মার্কস অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।[১৬]

যিনি আসল খবর ও ফেক (Fake) খবরের তফাৎ বুঝতে পারেন না, তাঁর কাছ থেকে বস্তুনিষ্ঠ গবেষণা আমরা কীভাবে আশা করি?

জানি, এই লেখার পর এবার হয়তো আমাকে অন্য কোনো প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করে জনাব আহমদ হুঙ্কার দিয়ে জানাবেন তাঁর বইয়ের কততম সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কি আসলে কিছু আসে যায়? বাংলাদেশের মানুষ ইতিহাস জানতে চায়। সত্য ইতিহাস লেখা সহজ নয় এবং স্বাধীনতার পর তা বদলে গিয়েছে বেশ কয়েকবার। এমন পরিস্থিতিতে কেউ একজন বই লিখে ফেললে পাঠক তা গোগ্রাসে পড়বেন, তাতে অবাক হওয়ার কী আছে?

আজ যদি মতিউর রহমান রেন্টুর 'আমার ফাঁসি চাই' বইটি প্রথমা প্রকাশনী থেকে পুনঃপ্রকাশিত হয় তাহলে কি পাঠক তা পড়বেন না? নিশ্চয়ই পড়বেন, কিন্তু বিশ্বাস করবেন না, কারণ, প্রকৃত গবেষকরা সত্য উদঘাটন করবেনই।

মহিউদ্দিন আহমদ কি শুধুই একজন 'নিম্নমানের' গবেষক? আমার তা মনে হয় না। আগেই বলেছি, জনাব আহমদের লেখালেখির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে: ১. বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত হোতাদের আড়াল; ২. কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমকে বঙ্গবন্ধু বিদ্বেষী হিসেবে উপস্থাপন; ৩. ৭ নভেম্বরের অভ্যুত্থান সংগঠন প্রক্রিয়া থেকে সিরাজুল আলম খানকে বিচ্ছিন্ন এবং ৪. জিয়াউর রহমানকে 'মানবিক' রূপে উপস্থাপন করা।

তাহের হত্যা মামলার রায়ে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত জেনারেল জিয়াউর রহমানকে 'ঠাণ্ডা মাথার খুনি' আখ্যায়িত করার পর বিএনপি-জামায়াতের এমন একজন লেখকের প্রয়োজন ছিল, যিনি এককালে জাসদ করতেন এবং সুযোগ বুঝে ভোল পালটান, যিনি "patriot of the highest order" তাহেরকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে হেয় করবেন।

হোলি আর্টিজান সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে ২৬ নভেম্বর (১৯৭৫ সালের) সমর অভিযানকে একই পাল্লায় ফেলে তুলনা করে হেয় করবেন আমার প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা চাচা শাখাওয়াত হোসেন বাহার ও সেই নিঃস্বার্থ বিপ্লবী অভিযানে অংশ নেওয়া সাথীদের। হেয় করবেন তাহেরের ভাই ও আমার বাবা মো. আনোয়ার হোসেনকে যিনি সামরিক আদালত কর্তৃক তাহের হত্যা চ্যালেঞ্জ করা রিট পিটিশানের প্রধান বাদী ছিলেন, যিনি ১/১১-এর পর বাংলাদেশ যখন গভীর অন্ধকারে নিমজ্জিত তখন সিএমএম কোর্টে এক ঐতিহাসিক জবানবন্দির মাধ্যমে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার বিরুদ্ধে চরম সত্য উচ্চারণ করেছিলেন। কে না জানে, বাংলাদেশ যদি আবারও এমন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়, তখন মহিউদ্দিন আহমদের মতো 'বিক্রি হয়ে যাওয়া' মানুষদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না, লড়াইয়ের ময়দানে থাকবেন শুধু আনোয়ার হোসেনের মতো হাজার হাজার সাধারণ মানুষ?

পাঠক, আপনারাই বলুন 'লেখক ও গবেষক' মহিউদ্দিন আহমদের 'গবেষণার' নামে 'গাঁজাখুরি' বিশ্বাস করবেন কি না। ফেসবুকে জনাব আহমদ জানাচ্ছেন ১৯৭৫-১৯৭৬ ছিল তাঁর "political activism"-এর শেষ সময়।[১৭]

এখানেও তিনি মিথ্যা বলছেন। হতে পারে ১৯৭৬ সাল ছিল জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সঙ্গে জনাব আহমদের সম্পৃক্ততার শেষ বছর। ১৯৭৬ সালে কর্নেল আবু তাহের বীর উত্তমের ফাঁসি হয়েছে। জাসদের হাজার হাজার নেতা-কর্মী জেলখানায় আটক। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫ তারিখের অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া শত শত সিপাহীর ফাঁসি দেওয়া হচ্ছে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে।

একজন ভণ্ড ব্যক্তির জন্যে এটাই কি মোক্ষম সময় নয় ভোল পাল্টে শত্রপক্ষকে সাহায্য করার? তাই ১৯৭৭ সালে তিনি হাজির হয়েছেন কদমতলিতে গণবাহিনীর নিরাপদ শেল্টারে সব অস্ত্র গুটিয়ে নিতে। তাহলে দেখা যাচ্ছে ১৯৭৬ সালের পর, মহিউদ্দিন আহমদের "political activism" থেমে থাকেনি, তিনি শুধু পক্ষ পালটেছেন। যদি বলি ১৯৭৭ সালে মহিউদ্দিন আহমদ কদমতলিতে এসেছিলেন 'সামরিক জান্তার চর' হিসেবে, তাহলে কি বাড়িয়ে বলা হবে?

তথ্যসূত্র:

[১] এম সানজীব হোসেন, 'তাহের-জিয়া ও ৭ নভেম্বরের সাতকাহন – একটি সতর্ক পর্যালোচনা', 'বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম', জুন ১১, ২০১৩ http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/10061; এম সানজীব হোসেন, 'মহিউদ্দিন আহমদের 'ইতিহাস প্রকল্প': একটি গবেষণানির্ভর পর্যালোচনা', 'বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম', আগস্ট ২৯, ২০১৪ http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/20237

[৩] এম সানজীব হোসেন, 'অভিজিৎ হত্যা: অস্তিত্বের সংকটে আমরা', 'বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম' (মার্চ ০৪, ২০১৫) http://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/25624

[৭] মহিউদ্দিন আহমদ, 'রক্তাক্ত আগস্ট', ('প্রথম আলো' ঈদ সংখ্যা, ২০১৭), পৃষ্ঠা ১৯৮

[৮] মহিউদ্দিন আহমদ, 'মার্চের উত্তাল দিন', 'প্রথম আলো', মার্চ ২৬, ২০১৫) http://www.prothom-alo.com/special-supplement/article/486298/%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%9A%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%89%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%A4%E0%A6%BE%E0%A6%B2-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%A8

[৯] 'Serve people selflessly: Mujib' The Bangladesh Observer (08 April 1972) page 8, column 2

[১০] "স্বাধীনতা ঘোষণা সম্পর্কীয় প্রস্তাব" বাংলাদেশ গণপরিষদ, ১০ এপ্রিল ১৯৭২, পৃষ্ঠা ১০-১৪

[১১] David Loshak, Pakistan Crisis (Heinemann 1971) 89

[১৩] Mohiuddin Ahmad, 'Socio-Political Situation in Bangladesh: Implications for the South Asian Region' [2010] 63(1) Pakistan Horizon, 23 http://www.jstor.org/stable/24711018

[১৪] আবু মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন, 'পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা সম্পদ: প্রামাণ্য মূল্যায়ন', 'প্রতিচিন্তা' http://www.protichinta.com/articles/articleDetails/176