বাজেটের বাজেট

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
Published : 1 July 2017, 04:19 PM
Updated : 1 July 2017, 04:19 PM

মহামান্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনে বাজেট প্রস্তাব সংসদে উপস্থাপিত হয় এবং সংসদের বাজেট পাস প্রস্তাবে রাষ্ট্রপতির সম্মতি (assent) গ্রহণের বিধান থাকলেও সংসদীয় গণতন্ত্রে বাজেট প্রণয়ন, পর্যালোচনা ও পাসের ঐতিহাসিক এখতিয়ার সংসদের। সংসদের পূর্ণ দায়িত্ব কর আরোপের এবং পাবলিক মানি বরাদ্দ ও ব্যয়ের অনুমোদন তত্ত্বাবধানের। অর্থ বিলে যে পরিমাণ অর্থ অনুমোদিত থাকবে তার মধ্যে থেকে আয়-ব্যয় নির্বাহের জন্য নির্বাহী বিভাগ ক্ষমতাপ্রাপ্ত।

এর বাইরে যে কোনো প্রকার আয়-ব্যয় ও নীতি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আলাদাভাবে সংসদের সম্মতি এবং অনুমোদিত হতে হবে। বাজেট যেহেতু নীতি ও উন্নয়ন পরিকল্পনার পথনকশা এবং জনগণের কাছে সরকারের দায়বদ্ধতার দলিল, সেহেতু সংসদে উত্থাপিত বাজেট প্রস্তাব চুলচেরা বিশ্লেষণ ও অনুমোদন সুপারিশে সংসদে বাজেট বিতর্কের তাৎপর্য ও ভূমিকা অপরিসীম।

অতীতে এবং বর্তমানে বিশ্বের বহু দেশে আইন পরিষদে বাজেটে অর্থনীতির নীতি কৌশল নিয়ে প্রাণবন্ত অথচ জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হয়। তাতে তথ্য-উপাত্তের সঙ্গে যুক্তিতর্কের সুমহান সম্মিলন ঘটে। এ প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবিত ২০১৭-১৮ জাতীয় বাজেটের ওপর সংসদে কিংবা সংসদের বাইরে তর্ক-বিতর্কের সুরতহালে দেখা যায়: বাজেটের সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাসহ উন্নয়ন দর্শন ও নীতিকৌশল নিয়ে বিতর্কের (যা উদীয়মান অর্থনীতির দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য জরুরি) চেয়ে অতি তাৎক্ষণিক বিষয় (যেমন আবগারি শুল্ক, ভ্যাট ইত্যাদি) এবং এসবের সাময়িক প্রভাব নিয়ে সংসদের ভেতর-বাইরে তুখোড় সমালোচনার পরিসর গড়ে উঠছে।

সে আলোচনার ভিড়ে বাজেটে প্রক্ষেপিত অনেকগুলো নীতিগত বিষয়ে– যেমন: অর্থনীতিতে অর্জিতব্য সম্পদ ব্যবস্থাপনার নীতি-কৌশল, উন্নয়ন অভিপ্সার অভিসার, দেশকে স্বয়ম্ভরতার পথে নিয়ে যাওয়ার পথনকশায় গতিপ্রকৃতি সনাক্তকরণ– সমালোচনার সুযোগ হারিয়ে যাচ্ছে।

২০১৭-১৮ সালের বাজেট পরীক্ষা পর্যালোচনায় যে বিষয়গুলি উঠে আসা অনিবার্য ছিল–

জাতীয় বাজেটের জাতীয়তা বা গণতান্ত্রিক চরিত্র: বাজেট বস্তু জনগণের জন্য এবং জনগণের দ্বারা প্রণীত ও বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। যাদের বাজেট তাদের আগ্রহ আকাঙ্ক্ষা সেখানে প্রতিফলিত হওয়া বাঞ্ছনীয় এ জন্যে যে, তাহলে সবার সক্রিয় অংশগ্রহণে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, উন্নয়ন এবং সম্পদের সুষম বণ্টন সম্ভব হয়।

বাজেট বাস্তবায়নের দ্বারা সুফল প্রাপ্তিতে পক্ষপাতিত্ব, এক দেশদর্শিতা, বৈষম্য ও বঞ্চনা বৃদ্ধি কিংবা কর রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে প্রতিপক্ষতার পরিবেশ সৃষ্টি সমন্বিত উন্নয়ন ধারণার পরিপন্থী। নির্বাহী বিভাগ (অর্থ মন্ত্রণালয়) তাদের বশংবদ অভ্যাসবশত, সবার সঙ্গে আলোচনা থেকে যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রেখে, প্রস্তাবের পূর্ব পর্যন্ত গোপন রেখে যে নীতি-দৃষ্টিকোণ অবস্থা ব্যবস্থা বাজেটে প্রস্তাব করে, জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদের তাতে যদি তেমন কিছু বলার বা করার না থাকে তাহলে তো বাজেটের জাতীয় চরিত্র মেলে না।

এটি নিছক নির্বাহী বিভাগের বাজেট হয়ে যায় এবং দেখা যায় নীতি নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন একই পক্ষের হাতে থেকে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে মৌলিক সমস্যা হল, বাস্তবায়নকারী (নির্বাহী বিভাগ) তার নিজের স্বার্থ ও সীমাবদ্ধ দৃষ্টি দিয়েই যে নীতি 'প্রেসক্রাইব' করে সবার সেটা অনুসরণ করা ছাড়া যেন গত্যন্তর থাকে না।

সংসদকে প্রদত্ত সাংবিধানিক ক্ষমতা ব্যবহার ও দায়িত্ব পালিত না হলে, বাজেটকে জনগণের জন্য করার লক্ষ্যে যথা ব্যবচ্ছেদে না গেলে বাজেট জনগণের বা অর্থনীতির জন্য পুষ্টিকর বা উপাদেয় হয় না। এবার বাজেট নিয়ে সংসদে যেভাবে সমালোচনার সুত্রপাত ঘটেছে– সেটি ইতিবাচক বটে, তবে তা গৃহীত হওয়ার প্রাকরণিক সুযোগ ও সময় কম।

সংসদীয় কমিটির মাধ্যমে বাজেট প্রস্তাব প্রণয়ন ও পরীক্ষা এবং বাজেট বাস্তবায়ন উত্তর সম্পূরক বাজেট অনুমোদনে জবাবদিহিমূলক পন্থায় না গেলে একটি 'গণপ্রজাতন্ত্রী' দেশের বাজেট তার স্বৈরাচারী বলয় থেকে বের হতে পারবে না।

প্রত্যক্ষ কর টপকিয়ে পরোক্ষ কর: ২০১৭-১৮ বছরের বাজেট প্রস্তাবে পরোক্ষ কর ভ্যাটকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আনা হয়েছে। নতুন আইনটিতে (শূন্য তালিকা ব্যতিত) সব পণ্য ও সেবার ওপর একক ১৫% ভ্যাট আরোপ এবং 'ক্ষেত্র বিস্তুৃতকরন' এবং 'কর আদায় প্রক্রিয়া সহজীকরণ'-এর জন্য ভ্যাট হিসাবায়নের 'নতুন পদ্ধতি' প্রেসক্রাইব করা হয়েছে, যা অনলাইন পদ্ধতিতে সহজসাধ্য ও নিয়মনিষ্ঠ হবে। অবশ্য নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইনটি দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

এটি ভালো পদক্ষেপ। তবে নতুন আইনটি প্রবর্তনের শেষ মুহূর্তে বিলম্বকরণের ফলে প্রত্যাশিত বর্ধিত রাজস্ব কীভাবে সমন্বয় করা হবে এবং তা স্বস্তিদায়ক ও আহরণযোগ্য হবে কি না, সে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।

ভ্যাটের গুরুত্ব বাড়াতে গিয়ে প্রত্যক্ষ করের (আয়কর) প্রতি মনোযোগ ও গুরুত্ব হ্রাস ঠিক নয়। কারণ, প্রত্যক্ষ করই করন্যায্যতা প্রতিষ্ঠার অন্যতম উপায়।

পাবলিক সেক্টরের অদক্ষতা ও দুর্নীতির দায়ভার বেসরকারি ও ব্যক্তি খাতের ওপর চাপানো: রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের ৪৮টি সংস্থার মধ্যে এখন সবচেয়ে বেশি লোকসানে রয়েছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সর্বাধিক ভর্তুকি নিচ্ছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত ১৪টি প্রতিষ্ঠানকে সরকারি অনুদান বা ভর্তুকি মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার ১৮৬ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। আগের বছরে ১১টি প্রতিষ্ঠানকে অনুদান বা ভর্তুকি বাবদ দেওয়া হয়েছিল প্রায় এক হাজার ৭০৭ কোটি টাকা।

বাজেটে শিক্ষায় যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তার বড় অংশই যাবে বেতন-ভাতা ও ভবন নির্মাণে।
সাড়ে ১৬ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে জিডিপির মাত্র ৫ শতাংশ। অথচ রেলওয়েকে স্বাস্থ্য খাতের সমান বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মৌলিক অধিকার। স্বাস্থ্যের কারণে কেউ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠে যাবে, আবার অসুখ হলে তিনি দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে আসবেন– এটা দুঃখজনক।

রেলওয়ের বিকল্প বাহন আছে, স্বাস্থ্যের তো কোনো বিকল্প নেই। রিফাইন্যানসিংয়ের মাধ্যমে সরকারি ব্যাংকের অনিয়ম অদক্ষতার ঘাটতি পূরণ করা হচ্ছে। ফলে সরকারি ব্যাংকগুলোতে অনিয়ম উৎসাহিত হচ্ছে কি না, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। নন-এনবিআর এবং নন-ট্যাক্স রেভিনিউ খাতে (যা সরকারি সংস্থা প্রদেয়) অর্জন লক্ষ্যমাত্রা ক্রমশ কমানো হচ্ছে আর এ কারণে এনবিআর রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করতে হচ্ছে।

অন্তর্ভুক্তি বনাম বিচ্যুতি: নানা বিশ্লেষণে প্রতীয়মান হচ্ছে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি প্রবৃদ্ধির আত্মতুষ্টি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে বড় ধরনের ঝুঁকিতে ফেলছে। প্রবৃদ্ধির আত্মতুষ্টির বড় কুফল হচ্ছে, বাজেটে একধরনের বাহাদুরির আকার দেখানো অথচ প্রবৃদ্ধিকে টেকসইকরণে সব খাতকে অন্তর্ভুক্ত করায় যেখানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার, সেটি করা হচ্ছে না।

বিনিয়োগ, বাস্তবায়ন অদক্ষতা, সুশাসন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্য ও দক্ষ কোনো নীতি-কৌশলের অবর্তমানে সর্বভূক একধরনের বিশেষ চক্র তৈরি হচ্ছে, বড় বাজেট, বড় প্রকল্পমুখী হচ্ছে দেশ ও অর্থনীতি। যে অর্থের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে জনগণের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হচ্ছে।

অর্থনীতির আন্তসহায়ক শক্তি অন্তর্ভুক্তির পরিবর্তে বিচ্যুতির পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। পূর্বে গৃহীত নীতি পরিকল্পনায় অর্জিত সাফল্যকে টেকসইকরণের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণের পথেও বিচ্যুতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। যেমন সারা বিশ্বেই সৌরবিদ্যুৎ উৎসাহিত করা হচ্ছে। কয়লাবিদ্যুৎ থেকে সরে আসছে বিভিন্ন দেশ। প্রতিবেশী ভারতও গত মাসে প্রস্তাবিত প্রায় ১৪ হাজার মেগাওয়াটের কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিল করেছে। এর বিপরীতে তারা জোর দিচ্ছে নবায়নযোগ্য, বিশেষ করে সৌরবিদ্যুতের ওপর।

বাংলাদেশে সৌরবিদ্যুৎ উৎসাহিত করতে সোলার প্যানেল আমদানিতে এতদিন কর অব্যাহতি ছিল। কিন্তু এবার হঠাৎ করেই কয়লার ১০% আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করে সোলার প্যানেল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার কথা বলা হয়েছিল। যদিও তা পরে পরিহার করা হয়েছে।

উন্নয়ন ব্যয় যৌক্তিকতা: মেগা প্রকল্পের নামে মেগা খরচের পথে বাংলাদেশের মতো উদীয়মান অর্থনীতি। প্রকল্প খরচ অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে। এসবের ব্যয় সাশ্রয়ে যথা নজরদারির পরিবর্তে অবকাঠামো নিয়ে প্রচারমুখী প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। অথচ অবকাঠামোর সুফল নিশ্চিত করতে যে ধরনের সুশাসন দরকার তা নিশ্চিত করা হচ্ছে না। অন্যান্য প্রকল্পের টাকা কেটে বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হলেও স্বচ্ছতার সঙ্গে তা খরচ করা যাচ্ছে না। বিপুল অর্থ খরচ করেও যেসব অবকাঠামো (যেমন: মগবাজার মৌচাক ফ্লাইওভার) তৈরি করা হচ্ছে অথচ তার ব্যবহার উপযোগিতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।

বৈদেশিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীলতা: ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরতা বিগত বছরগুলোতে পর্যায়ক্রমে কমে এসেছিল। এবার যেহেতু বাজেটের আকার অনেক বড় করা হয়েছে, তাই বিদেশি উৎসের (প্রবৃদ্ধি ৫৭%) ওপর আগের চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতার জন্য শর্ত অনুযায়ী অর্থ খরচ করা যাচ্ছে না। স্বনির্ভর হওয়ার মনোবল বৃদ্ধির পরিবর্তে সাপ্লায়ার্স ক্রেডিট প্রকৃতির ঋণভারে ন্যূজ হয়ে পড়ছে অর্থনীতি। ফরেন কারেনসি রিজার্ভকে 'গৌরব' মনে করে ফরেন ডেট লায়াবিলিটিস এমনভাবে বাড়ানো হচ্ছে তাতে একসময় অর্থনীতি ডেট ও কারেনসি ক্রাইসিসে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন অভিজ্ঞ মহল।

বাজেট বাস্তবায়ন: বাজেট বাস্তবায়নে অর্থায়ন ও অর্থ ব্যয় সঠিকভাবে করতে না পারায় প্রতিবছরই বাজেট সংশোধন করতে হয়। তাই বাজেট বাস্তবায়নে বছরের শুরু থেকেই সুষ্ঠু তদারকি জরুরি। বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন।

সম্পূরক বাজেট পাসের সময় সংসদে জোর আলোচনা হওয়া উচিত। এই বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিচ্ছে রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে নিম্নমুখী প্রবণতায়। এ ছাড়া সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষি ফসল উৎপাদনে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায়ের উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা কঠিন হবে। অর্জনযোগ্য লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তদারকি ও নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। কর আদায়, উন্নয়ন বাজেট ও বিদেশি অর্থায়ন তিনটি ক্ষেত্রই বেশ ঝুঁকিপূর্ণ।

উচ্চাভিলাষ না থাকলে বড় লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয় না এটা যেমন ঠিক, তেমনি পরপর এমন বড় বাজেট বাস্তবায়িত না হওয়ায় বাজেটের বিশ্বাসযোগ্যতা ও উপযোগিতা বিপথগামী হয়, এটাও অনুধাবনযোগ্য। শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনা দিয়ে দক্ষতার সঙ্গে বাজেট বাস্তবায়ন করা যায় না।

বিনিয়োগ স্থবিরতা: নানা প্রতিবন্ধকতা ও ব্যবসার বৈরী পরিবেশের কারণে অর্থনীতিতে বিনিয়োগ স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন মেগা প্রকল্প ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) বাস্তবায়ন অগ্রগতি থেকে বাস্তবায়নের অদক্ষতার চিত্র পাওয়া যায়। বিনিয়োগ স্থবিরতায় কর্মসংস্থানের হার কমছে। ২০১০-১৩ ও ২০১৪-১৬ সময়ের কর্মসংস্থানের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় কর্মসংস্থানের হার আগের চেয়ে কমেছে। কর্মসংস্থান না হলে 'ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ট' পরিণত হতে পারে 'ডেমোগ্রাফিক ডিজাস্টার'-এ।

ব্যাংকিং, রেমিটেন্স ও রপ্তানি আয় পরিস্থিতি: বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের বর্তমান পরিস্থিতিকে কর্কট রোগের মতো ক্রমবর্ধমান ভয়াবহতার কথা বলছে সিপিডি। খেলাপি ঋণ, সংস্থান ও মূলধন ঘাটতি, মুনাফা বৃদ্ধির প্রতিযোগিতার কারণে ঋণ ব্যবস্থাপনায় আপস এবং সর্বোপরি সুশাসন প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন অন্তরায় ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে একটা নাজুক পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

দেশের অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি এই খাতকে শক্ত ভিত্তির ওপর তুলে আনতে না পারলে দেশের যাবতীয় অর্থনৈতিক অর্জন হুমকির মুখে পড়বে। এটি বিবেচনায় রেখেই সব পক্ষকে উপলব্ধি করতে হবে যে, একটি দুর্বল ব্যাংকিং খাত নিয়ে দীর্ঘস্থায়ী টেকসই উন্নয়নের স্বপ্ন অধরাই থেকে যাবে। সরকারি-বেসরকারি দুই ধরনের ব্যাংক থেকেই পুকুর নয়, সাগরচুরির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রতিকার দৃশ্যগোচর হেচ্ছে না।

রেমিটেন্স কমে যাচ্ছে। কাতার ইস্যু প্রবাসী আয়ের জন্য একটা ঝুঁকি হিসেবে দেখা যাচ্ছে। রপ্তানি আয় পরিস্থিতিও অনেকগুলো exogenous factor-এর দ্বারা প্রভাবিত। ক্রমশ রপ্তানি আয় কমছে। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি পণ্যের (বিশেষ করে গার্মেন্টস) বর্হিবাজারকরণের ওপর নানা বাধা আসছে। বিষয়গুলি যথা বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানি পণ্য বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিতে হবে, নতুন বাজার খুঁজতে হবে। রপ্তানি খাতকে কার্যকর পরিপোষণ ও শুল্ক কর প্রণোদনা সমন্বয়ের বিকল্প নেই।