খোলা চোখে ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং প্রস্তাবিত বাজেট

রাশেদ মেহেদী
Published : 20 June 2017, 02:14 PM
Updated : 20 June 2017, 02:14 PM

আপনি ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে সাধারণভাবে কী কাজ করেন? লেখেন, ছবি আঁকেন, ছবি সম্পাদনা করেন, হিসাব-নিকাশের কাজ করেন, ইন্টারনেট ব্রাউজ করেন এবং এর মাধ্যমে বিচিত্র সব ওয়েব পোর্টালে চোখ রেখে ঘরে বসেই বিশ্ব ভ্রমণ করেন।

এখন ভাবুন তো, উপরের এই কাজগুলো কি এখন শুধুই আপনার ডেস্কটপ বা ল্যাপটপে করছেন? না, আপনি এখন কম্পিউটিংএর কাজগুলো সবচেয়ে বেশি করছেন আপনার স্মার্টফোনে। ল্যাপটপ বা ডেস্কটপের চেয়েও একটি উপযুক্ত সক্ষমতার স্মার্টফোন প্রচলিত কম্পিউটিংএর চেয়েও অনেক বেশি সুবিধা দিচ্ছে। বিশেষ করে স্মার্টফোনে নিত্যনতুন অ্যাপ্লিকেশন আপনার প্রতিদিনের জীবনের অনেক কিছুই খুব সহজ করে দিচ্ছে। কথা বলা থেকে শুরু করে রাস্তায় বের হওয়ার জন্য গাড়ি ভাড়া করা পর্যন্ত সব কিছুই হচ্ছে স্মার্টফোনে আঙুলের ছোঁয়ায়।

গবেষণার দরকার নেই, খোলা চোখে তাকালেই বোঝা যায় এখন কম্পিউটিং ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ নয়, বরং অনেক বেশি স্মার্টফোন-নির্ভর। আগামী দিনে এই নির্ভরতা আরও বাড়বে। খুব ভারী কাজ ছাড়া সাধারণ কম্পিউটিংএর কাজের জন্য ডেস্কটপ কিংবা ল্যাপটপের ব্যবহার অদূরভবিষ্যতে বলতে গেলে থাকবে না, এটাও বেশ বোঝা যাচ্ছে। যে কারণে ল্যাপটপ কিংবা ডেস্কটপ তৈরির বিশ্বখ্যাত কোম্পানিগুলোও এখন স্মার্টফোনের বাজারে জায়গা করে নিতে প্রতিযোগিতায় নেমেছে।

বিশ্বের উন্নত, স্বল্পোন্নত অনেক দেশ, এমনকি আমাদের প্রতিবেশি ভারতের সরকারও সে দেশে জনগণকে স্মার্টফোনের ব্যবহার বিস্তৃত করতে কয়েক বছর আগেই নূন্যতম হারে আমদানি শুল্ক নির্ধারণসহ নানা রকম সুবিধা দিচ্ছে। কারণ সেসব দেশের নীতিনির্ধারকরা আজকের চলার পথটা ঠিক করেন ভবিষ্যতের গতিপথের প্রতি নিবিড় লক্ষ্য রেখে।

আমাদের নীতিনির্ধারকরাও কিন্তু দেশ এগিয়ে নিতে সুন্দর ভবিষ্যৎ রচনার স্বপ্ন দেখেন এবং দেখান। ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নির্বাচনী ইশতেহারে ডিজিটাল বাংলাদেশের যে রূপকল্প দেখানো হয়েছিল তা সত্যিই দেশের তরুণ প্রজন্মকে দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল। ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে মনোযোগী হন এবং তিন বছরের মধ্যেই সীমিত সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে তৃণমূলে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দিয়ে বুঝিয়ে দেন ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন নিছক কোনো কল্পনা নয় এবং সদিচ্ছা থাকলে মহৎ লক্ষ্য অর্জনে খুব বেশি সময় লাগেও না।

দুর্ভাগ্য হচ্ছে, আমাদের দেশে রাজনৈতিক নীতিনির্ধারকদের সদিচ্ছা থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সব কিছু স্থবির করে দেয় বার বার। সহজ সরল বিষয়গুলো রাজনৈতিক নেতৃত্বের সামনে আমলাতন্ত্র খুব বেশি জটিল করে তুলে এক ধরনের ধুম্রজাল এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এই বিভ্রান্তিতে আমলাতন্ত্রের কর্তৃত্ব এবং স্বার্থ দুটোই রক্ষা হয়, কিন্তু দেশ পিছিয়ে যায় যার দায়ভার নিতে হয় রাজনৈতিক নেতৃত্বকে।

এবারের প্রস্তাবিত বাজেটের দিকে তাকালেও সেই চিত্র স্পষ্ট হয়। অর্থমন্ত্রী বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন বটে, কিন্তু এর কাঠামো তৈরি করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। প্রস্তাবিত বাজেটের দিকে তাকালে তাই স্পষ্টত বোঝা যায় কম্পিউটার আর কম্পিউটিংএর পার্থক্যটাই এখন পর্যন্ত বুঝতে পারেননি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা। কম্পিউটিং চলমানের ভবিষ্যতটাও তাই তারা দেখতে পারছেন না।

যে কারণে বাজেটে ডেস্কটপ, ল্যাপটপে কর রেয়াত দেওয়া হলেও এই মুহূর্তে কম্পিউটিংএর জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত স্মার্টফোনের আমদানি শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, নতুন করে মূসক আরোপ করা হয়েছে বাজারে সরবরাহ পর্যায়েও। এই একটা ক্ষেত্রে কর বৃদ্ধি পুরো টেলিযোগাযোগ খাতে কত বড় সংকটের সৃষ্টি করবে সেটা তারা সম্ভবত ধারণা করতে পারছেন না।

কয়েক বছর আগে রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা ডেস্কটপ, ল্যাপটপ এবং অ্যাকসেসরিজ আমদানির ক্ষেত্রেও প্রতি বছর শুল্ক ও করের হার বাড়াতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। কিন্তু প্রবল জনমতের চাপে সরকারের নীতিনির্ধারকরা রাজস্ব বোর্ডের মতের বাইরে গিয়ে ল্যাপটপ-ডেস্কটপে কর রেয়াত সুবিধা ঘোষণা করলেন। দেশে কিন্তু এক-দুই বছরেই বিপ্লব ঘটে গেল। দাম কমে যাওয়ার কারণে কম্পিউটার ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেখানে দশ লাখ থেকে এক কোটি ছাড়িয়ে গেল।

এখন একইভাবে স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে কর রেয়াত সুবিধা দেশের স্বার্থেই কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বুঝতে পারছেন না। তারা বলতেই পারেন দেশে স্মার্টফোন সংযোজন শিল্পে উৎসাহ দিতে সংযোজনের জন্য যন্ত্রাংশ আমদানিতে এক অর্থে কর-অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে, এ কারণে আমদানিতে শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। দেশে সংযোজন শিল্পে উৎসাহদান অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু এই মুহূর্তের বাস্তবতাটাও বুঝতে হবে। চলমান বাস্তবতা রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা বুঝতে পারেননি।

এখনকার বাস্তবতা হচ্ছে, দেশে শুধু স্মার্টফোন নয়, সব ধরনের মোবাইল হ্যান্ডসেট শতভাগ আমদানিনির্ভর। কয়েক বছর ধরে বিশেষজ্ঞ এবং শিল্পেদ্যোক্তাদের পর্যায় থেকে জোরালো দাবি ওঠার পর এ বছর থেকে সংযোজন শিল্প উৎসাহিত করার যে পদক্ষেপ বাজেটে নেওয়া হয়েেেছ তার বাস্তব রূপ দেখতে হলে কমপক্ষে এক থেকে দুবছর অপেক্ষা করতে হবে। এই সময় বিবেচনায় না নিয়ে এখনই আমদানি শুল্ক বাড়ানো হলে হ্যান্ডসেটের দাম বাড়বে। নিম্নবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্তের কাছেও পাঁচশ টাকা দাম বেড়ে যাওয়া মানে অনেক কিছু। ফলে স্মার্টফোন তো দূরের কথা, ভালো মানের ফিচার ব্যবহারেও উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ স্বল্পআয়ের মানুষ।

এর ফলে দেশে মোবাইল ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির ধীরগতি আরও ধীর হবে। ইন্টারনেটের ব্যবহার না বাড়লে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের হাতে স্মার্টফোন অ্যাপ্লিকেশন উদ্ভাবনে স্মার্ট শিল্পের বিকাশের সম্ভাবনাও মুখ থুবড়ে পড়বে। স্মার্টফোনের মূল্যবৃদ্ধি বিলম্বিত করবে ফোর-জি চালুর বিষয়টিও। কারণ মোবাইল অপারেটরদের কাছে ব্যবসার 'ইকো সিস্টেম'এর হিসাবটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বল্পমূল্যে ফোর-জি সক্ষমতার হ্যান্ডসেট পাওয়া না গেলে ফোর-জি সুবিধা খুব বেশি গ্রাহক নেবেন না। ভালো সংখ্যক গ্রাহক পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে মোবাইল অপারেটরদের বিনিয়োগকারীরা ফোর-জির জন্য বিনিয়োগেও উৎসাহিত হবেন না। কারণ এখন থ্রি-জি সেবায় তাদের ব্যবসার যে চিত্র সেটাও সুখকর নয়।

হ্যান্ডসেট আমদানিকারক এবং মোবাইল অপারেটরদের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেশে থ্রি-জি সক্ষমতার স্মার্টফোন ব্যবহারকারী মোট গ্রাহকের ২৭ শতাংশ। আর থ্রি-জি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন মোট গ্রাহকের মাত্র ১৮ শতাংশ। এর কারণ হচ্ছে অনেকে স্মার্টফোন কিনেছেন, কিন্তু মানসম্পন্ন মোবাইল ইন্টারনেট সেবা না পাওয়ার কারণেই হোক কিংবা ডাটা প্যাকেজের দামের আধিক্যের জন্যই হোক, তারা থ্রি-জি ডাটা প্যাকেজ ব্যবহার করছেন না।

এখানেও কিন্তু করের বড় বাধা সামনে চলে আসে। ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর বর্তমানে রয়েছে ১৫ শতাংশ মূসক। আর মোবাইল ইন্টারনেট ব্যহারের ক্ষেত্রে ১৫ শতাংশ মূসকের পাশাপাশি সম্পুরক শুল্ক, সারচার্জসহ প্রায় ২২ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে ব্যবহারকারীকে। যেখানে এখন পর্যন্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের বিস্তৃতির ক্ষেত্রে দেশ অনেক পিছিয়ে আছে– যেখানে দেশের মোট ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর ৯৭ শতাংশই মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে সেবা নিচ্ছে– সেখানে ২২ শতাংশ কর আরোপ এক ধরনের অসুস্থ চিন্তার ফল। দুনিয়ার কোনো দেশে বিকাশমান এবং জরুরি সেবা খাতে সম্ভবত এ ধরনের অসুস্থ কর-হার আরোপের উদাহরণ পাওয়া যাবে না।

এখন মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর উচ্চ করের পাশপাশি হ্যান্ডসেট আমদানিতে কর-বৃদ্ধি মোবাইল ইন্টারনেট তথা ইন্টারনেট ব্যবহারের বিস্তৃতি ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করবে। হিসাবের কিছু শুভংকরের ফাঁকিও অনেক সময় বাস্তবতা বুঝতে দেয় না। যেমন বিটিআরসি মোট দাগে মোবাইল অপারেটরদের যত গ্রাহক ডাটা সার্ভিসে সংযুক্ত রয়েছেন তার একটা মোট হিসাব দিয়ে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যার হিসাব দিচ্ছে। কিন্তু এ থেকে প্রকৃত কিংবা নিয়মিত ব্যবহারকারীর হিসাবটা পাওয়া যাচ্ছে না।

ধরুন, জানুয়ারি মাসে একজন গ্রাহক হয়তো একটা প্যাকেজ নিয়ে সংযুক্ত হয়েছিলেন, তার হিসাব বিটিআরসি করেছে। কিন্তু সেই গ্রাহক তারপর আর প্যাকেজটি নবায়ন করেননি কিংবা নতুন প্যাকেজ নেননি। কিন্তু এই গ্রাহকও কিন্তু মাসের পর মাস বিটিআরসির হিসাবে ডাটার গ্রাহক হিসেবে থেকে যাচ্ছেন। এ কারণেই প্রায় ছয় কোটি মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের পরিসংখ্যানে মাত্র ১৮ শতাংশ থ্রি-জি ডাটার গ্রাহকের হিসাবটা বিস্মিত করে। যদিও পরিসংখ্যানের এই বিপুল ব্যবধানের চিত্র রাজস্ব বোর্ডকে একেবারেই ভাবায় না, সেটা বাজেটের চেহারা দেখলেই বোঝা যায়।

আরও দেখুন কী অদ্ভুত! দেশে ফোর-জি আসবে, এর জন্য নেটওয়ার্ক তৈরির কাজ করতে হবে অপারেটেরদের। সে মুহূর্তে এ বছরের বাজেটে নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতি আমদানিতে ইচ্ছেমতো শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনিতেই ফোর-জির বেতার তরঙ্গ নিলামের প্রস্তাবিত মূল্য নিয়ে অপারটেরদের উদ্বেগ রয়েছে, ৪৫ শতাংশ কর্পোরেট ট্যাক্সের কারণে অপারটেরদের সরাসরি বিনিয়োগের অংক দিন দিন কমছে। সেখানে নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্ক-বৃদ্ধি উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে দেবে সন্দেহ নেই।

এর ফলে অনিবার্যভাবে যেটা হবে, ফোর-জিতে তাদের বিনিয়োগ পিছিয়ে যাবে। ফোর-জি চালু আরও বিলম্ব হবে। হুংকার দিয়ে ফোর-জি চালুর কথা অনেকেই বলতে পারেন, কিন্তু যারা বিনিয়োগ করবেন তারা বিনিয়োগের সুরক্ষা এবং মুনাফার বিষয়টি নিশ্চিত না হয়ে নতুন বিনিয়োগে যাবেন না, এটাই স্বাভাবিক। ফলে উভয় পক্ষের সুবিধা হয় এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হওয়া খুব জরুরি। কিন্তু রাজস্ব বোর্ড এবং বিটিআরসি সে অবস্থা সৃষ্টিতে সফল হচ্ছে না বাস্তবতার বিপরীতে দ্রুত তাদের রাজস্ব আয়ের হিসাবের আকারটা বড় করার দুশ্চিন্তায়।

একটা কথা উঠতেই পারে, শুল্ক এবং কর হার কমানোর কথা বলা হলে সরকারের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে কীভাবে? এই অর্জনও তো রাজস্ব বোর্ডকেই করতে হয়। অতএব বড় বড় কথা বলা যেতে পারে, কিন্তু দেশ চালাতে সরকারের কাছে যে নগদ অর্থ দিতে হয় সেটা যোগাড় হবে কীভাবে সেটা তো সমালোচনাকারীরা বলছেন না।

কঠিন স্বরে এ প্রশ্ন রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তারা প্রায়ই ছুঁড়ে দেন। সত্যি, সরকার চালাতে যে নগদ টাকার দরকার সেটা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। কিন্তু একটা বিষয় তো নিশ্চয়ই ভাবা যায়, কোনো ক্ষেত্রে অপচয় কমিয়ে আয় বাড়ানো সম্ভব, কোনো ক্ষেত্রে করের আওতা বাড়ানো সম্ভব এবং কোনো ক্ষেত্রে কর হার বেশি হলেও সাধারণ মানুষ এবং সরকারের রাজনৈতিক সদিচ্ছা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে না। একই সঙ্গে দু-চার-দশ বছরের পরের ভবিষ্যতটা নজরে রেখে আজকের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দূরদৃষ্টিও থাকতে হবে। দূরদৃষ্টির অভাব বলেই প্রতিদিনের 'নুন আনতে পান্তা ফুরোয়' সংকটটা কাটে না।

অপচয় আমাদের দেশে কীভাবে হয়, তার একটা ছোট্ট উদাহরণ দিই। বেতার তরঙ্গ আমাদের মূল্যবান জাতীয় সম্পদ। এই সম্পদের অপচয় কোনোভাবেই কাম্য নয়। কিন্তু আমাদের দেশে গুরুত্বপূর্ণ ২৬০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের ব্যবহৃত বেতার তরঙ্গ সত্যিকার অর্থে অপচয়ের মধ্যে রয়েছে। এই ব্যান্ড থেকে বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিশ্বপ্রযুক্তি বাজারের ভবিষ্যত না দেখার কারণে একেবারেই পড়ন্ত সময়ে ওয়াইম্যাক্স লাইসেন্স দেওয়া হয়।

এরপর থ্রি-জি প্রযুক্তির আগমন কয়েক বছর ছলেবলেকৌশলে ঠেকিয়ে রেখেও ওয়াইম্যাক্সের ব্যবসা লাভজনক দূরের কথা, সাধারণভাবেও এটি গ্রাহককে আকৃষ্ট করেনি। ফলে ওয়াইম্যাক্স সেবা চালুর দশ বছরের বেশি সময় পরও বিটিআরসির পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট ওয়াইম্যাক্স গ্রাহক মাত্র ৮৯ হাজার! অথচ ওয়াইম্যাক্স অপারেটরদের কাছে রয়েছে ৪০ মেগাহার্টজের বেশি মূল্যবান বেতার তরঙ্গ যা দিয়ে ২০ থেকে ২৫ কোটি গ্রাহককে উন্নত মোবাইল নেটওয়ার্ক সেবা সেবা দেওয়া সম্ভব।

এই বেতার তরঙ্গ বাস্তবতা বুঝে সঠিকভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে এর মাধ্যমে দেশে অনেক বেশি মানসম্পন্ন সেবা মোবাইল নেটওয়ার্কে দেওয়া সম্ভব হত যা আমাদের প্রযুক্তিগত বিকাশের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দিত। একটা ক্ষেত্রে উদাহরণ দিলাম। টেলিযোগাযোগ খাতে এ ধরনের অপচয়ের ক্ষেত্র অনেক। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা এটা আরও অনেক ভালো জানেন এবং বোঝেন। তারা চাইলে নীতিনির্ধারকদের সুপরামর্শ দিয়ে অপচয় কমিয়ে এবং কর না বাড়িয়েও প্রযুক্তি বিকাশে সুযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে আয়ের পথ সস্প্রসারিত করতে পারেন।

কিন্তু কর্মকর্তাদের কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেই সুপরামর্শটাই দেখা যায় না। বরং বিভ্রান্তির বেড়জালে অপচয় ক্রমাগত বাড়ছে, সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে সব সুযোগ থাকা সত্বেও বাংলাদেশের পিছিয়ে পড়া দীর্ঘতর হচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নে সরকারের মহৎ লক্ষ্য অর্জনও পড়ে যাচ্ছে আশংকার মধ্যে।