গোলাপের অভিঘাত

পিয়াসমজিদ
Published : 2 Dec 2012, 05:43 PM
Updated : 2 Dec 2012, 05:43 PM

একটি গীতিময় মৃত্যুর মোহে
কাটাই গদ্যধূসর জীবন
কারণ জানি
শীতার্ত ঝংকার– কুয়াশাকণ্ঠের গানের পর আছে
রংধনুর নদী।
আর কৃষ্ণবসন্তের হাওয়া
এলোমেলো করে দেয়
সোনালি স্বপ্নসব।
পথে পথে কত লালগালিচা ভৎর্সনা
তবু সন্তপ্ত নক্ষত্রের
রক্ত ঝরে টুপটাপ;
একলা আমার বেঁচে থাকার ঢেউয়ে।
নিকষ রাত্রির কালো কালো প্রকল্পনা
সমুদ্রের স্বরগ্রামে রূপ নিলে
অথৈ জলমর্মরের কাছে
রুখাসুখা আমি
রক্তে-মাংসে ফাঁস হয়ে যাই।
অস্তগামী শেফালির ন্যায়
ফিকে হয়ে আসো জীবন
সমুদ্রে ঘনীভূত জলসংগীতে
আর আকাশের আঙ্গিকে আঙ্গিকে
আছড়ে পড়ে চাঁদ।
নিখিল নিদ্রার কালে
জাগ্রত বিবিধ রক্তে ছন্দ,
এখন আরবান পুষ্প ফোটার কাল
তবু বুকের মধ্যে বেঁচে থাকা
কোনো গহীন গ্রানাদা
লোরকার চেয়েও বেশি বেদূঈন করে তোলে
অদূরে কুলু কুলু আমার মৃত্যু বয়ে চলে
বেহালায় ভেঙে পড়ে
নিঃসুর সব মহাশূন্য-মহল।
নদী তার হৃদয় খুলে
গল্প করতে বসে
কতো গল্প, কতো গান!
নিরন্ন নীলিমার নিচে
এতো এতো ভোজসভার ঘ্রাণ শুঁকে
স্বপ্নগোলাপ গুটিয়ে নেয়
পাপড়ি তার।
দশদিকে এইমতো
ধ্বংসের টোন সত্ত্বেও
আমরা ডেসপারেট হয়ে
খুঁজছিলাম গভীর নির্জন পথ।
কিন্তু আমাদের সময় ছিলো
জনারণ্যময়
একপাল মৃত গদ্যের কারবারি
আর প্রসাধিত অথচ ভীষণ বিকলাঙ্গ
কবিতার নালা
বিস্তীর্ণ ছিলো শস্যক্ষেত্রের মতো
আর সবাই জানতো এইকালে
খাদ্য থেকে শিল্প
প্রেম থেকে স্পার্ম
সকল শস্যই ছিলো ফরমালিনম-িত
তবু পুষ্পগ্রস্থ স্মৃতির সৌন্দর্যে
মরে যেতে গিয়েও বেঁচে উঠতে হয়
এই বেঁচে থাকা শুধুতো বেঁচে থাকা নয়,
মরণকে একহাত নেয়াও বটে
যদিও মৃত্যুঝরোকার জন্ম হয় প্রতি রাতে
স্বপ্নের বিরামহারা চোরাস্রোতে।
বস্তুত মৃত্যুর ছলে
আমরাতো আবিস্কার করে চলি
জীবনেরই ভাবসম্প্রসারণ।
মৃত্যুগ্রস্থ জীবন বা জীবনগ্রস্থ মৃত্যুর পর্বে
চাই ঘূর্ণি অনিবার
তাই নদীনৃত্যের মুদ্রা শুষে
শ্যামল হয় মরুময় পরিগণ।
ফের আমাদের আলোকপাত শুরু
অন্ধকার টেক্সটের প্রতি
পাহাড় ঘুমিয়ে ছিলো যদিও
গিরিমালঞ্চের বিপুল প্রবাহে
সমুদ্রের ভেসে যাওয়ার দশা
থেকে থেকে পাতালহাওয়া ক্ষয় করে ফেলে
সমুদয় দিগন্ত
রূপান্বিত ইত্যাকার মরণের মন্দ্র সত্ত্বেও
দেখে চলেছি নেহায়েত একটা পুষ্পের শ্রম
প্রশাখা থেকে পাপড়ির রক্তিমে গিয়ে
ওড়ায় কেমন জয়ের কেতন!
তার ঝরে পড়া গোধূলিকে
ঘন হতে ঘনতর করে তোলে।
ওদিকে বিলয়ের অভূত রঙ লেগে
জন্ম হয় আমার;
শত শত নতুন গোলাপ।