আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শক্র

স্বদেশ রায়
Published : 20 May 2017, 02:30 AM
Updated : 20 May 2017, 02:30 AM

আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্র এ মুহূর্তে এক শ্রেণির আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর কার্যক্রম। দলের জেনারেল সেক্রেটারি বলেছেন, "আওয়ামী লীগে কাউয়া (কাক) ঢুকেছে, তারা এসব করছে।"

বাস্তবে যে কাউয়ারা ঢুকেছে তারা অনেক কিছু করছে, কিন্তু পুরনো অনেকেই কমতি যাচ্ছেন না।

প্রথমত, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে যে সমস্যা হয় তা হল, শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন নেতা ছাড়া অধিকাংশই তাদের পুরনো বা ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করেন না। এমনকি যে ব্যক্তি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের চোঙা ফুকানো ছাড়া আর কিছু করেননি, তার ছেলের ভর্তির জন্যে কিছুদিন আগে তাঁর অতি আপনজন ছিলেন যে এমপি ওই এমপির দেখা সহজে পান না। দেখা পেলেও তিনি তার সামান্য সমস্যাটুকু সামান্য আর্থিক সাহায্যটুকুর কথা বলার সুযোগ পান না।

অথচ বঙ্গবন্ধুর সময় এ ধরনের ত্যাগী কর্মী যারা ছিলেন, বঙ্গবন্ধু নিজে তাদের খোঁজ নিতেন। তাঁর দেখাদেখি জেলার নেতারা সে কাজ করতেন। এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ঘটে তার উল্টো। আওয়ামী লীগের একজন ত্যাগী কর্মী যদি তার ছেলের একটি কাজ নিয়ে যান, ওই কাজের কোনো গুরুত্ব দেন না জেলার নেতারা। তারা বরং ব্যস্ত হয়ে পড়েন বিএনপি বা জামায়াতের কোনো ব্যক্তির কাজ করার জন্যে। কারণ ওই নেতা তার নিজের কর্মীর কাছে টাকা চাইতে পারবেন না। জামায়াত-বিএনপির কেউ হলে তাকে টাকা দেবে। তাই তাদের কাজ করার জন্যে তিনি ব্যস্ত হয়ে পড়েন।

যেসব এলাকায় এমন ঘটনা ঘটছে তার জন্যে মূল দায়ী কেন্দ্রীয় নেতারা। শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের ওপর দায়িত্ব দিয়েছেন সবসময় কাউন্সিল করে নেতৃত্ব গড়ে তোলার জন্যে– নেতৃত্বের জবাবদিহিতা আনার জন্যেও। কেন্দ্রীয় নেতারা কোনো এক অদৃশ্য কারণে অধিকাংশ জেলায় নেতৃত্ব বদল করেন না, আগের কমিটি রেখে আসেন। যদি প্রতি দুই বা তিন বছর পর পর প্রকৃত পদ্ধতিতে, অর্থাৎ কাজ, যোগ্যতা, সততা ও এলাকায় গ্রহণযোগ্যতার খোঁজ নিয়ে নেতৃত্ব তৈরি করা হত, তাহলে নেতৃত্বের জবাবদিহিতা থাকত। আজ স্থানীয় পর্যায়ে অনেক স্থানের নেতা যা করছেন সেটা সম্ভব হত না।

আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার কারণে দুই বার পরপর (যা আওয়ামী লীগের ইতিহাসে প্রথম) ক্ষমতায় আসায় অনেক এলাকার নেতারা মনে করছেন, ওই এলাকা তাদের জমিদারি। তাছাড়া দেখা যায় ওইসব নেতাদের কেউ ৪০-৪৫ বছর ধরে সভাপতি আছেন ওই এলাকার। তাই তারা অতি ন্যায্য মনে করে কর আদায় করছেন নিজস্ব এলাকা থেকে। সত্যি বলতে কী, ১০ বছর আগেও যে নেতাকে এলাকার লোকেরা দেখেছেন এখন ওই নেতাকে এলাকার মানুষজন আর চিনতে পারেন না।

শুধু তাই নয়, এলাকার লোকজন চোখের সামনে দেখছেন কীভাবে ওইসব নেতা ও তাদের ছেলেমেয়েরা জামায়াত ও বিএনপির নেতাদের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে ব্যবসা করছে। শুধু তাই নয়, জামায়াত-বিএনপির মাস্তানরা যোগ দিয়েছে বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগে। তাদের মাধ্যমে নেতারা নানাভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন।

আওয়ামী লীগের লোকাল ওইসব নেতার একেকটি কাজ সাধারণ মানুষের কাছে ঢেকে দেয় শেখ হাসিনার হাজারটি উন্নয়ন। তারা তো সিংহকে দেখতে পায় না। তারা ইঁদুর, ভয় পায় বিড়ালকে। তাদের সামনে আওয়ামী লীগ মানে শেখ হাসিনা নয়, সামনের ওই বিড়াল। ওই ছোট আওয়ামী লীগ নেতাই তার কাছে শেখ হাসিনা। আর এভাবে শেখ হাসিনার গায়ে কালি লাগাচ্ছে ওইসব আওয়ামী লীগ নেতা। প্রতিদিন তারা কমাচ্ছে দলের ভোট।

আওয়ামী লীগ নেতাদের এসব কাজের ফলে সবচেয়ে বেশি হতাশ হয়েছে ওইসব এলাকার আওয়ামী লীগের ভদ্র সমর্থকরা। তারা কেউ আওয়ামী লীগের কর্মী নয়। তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে তারা বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দেন না। বাস্তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির কাছে এখন বাংলাদেশে আওয়ামী জোট ছাড়া অন্য কাউকে ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

এই জোটের বাইরে একমাত্র কমিউনিস্ট পার্টি আছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি হিসেবে। নেতৃত্বের ভুলে তারা অধিকাংশ সময় যে কাজ করে ওই কাজ জামায়াত বা বিএনপির একাউন্টে জমা হয়।

যাহোক, এই যে বিশাল জনগোষ্ঠী বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যবহারে হতাশ, এরা এবারের ভোটে কী করবেন, এ-ও একটা বড় প্রশ্ন।

সত্য হল, তারা কেউ জঙ্গি-সমর্থক বিএনপিকে ভোট দেবেন না। তবে বেশিরভাগই ভোটকেন্দ্রে যাবেন না, অর্থাৎ ভোট দেবেন না। এমন প্রতিফলন ইতোমধ্যে দেখা গেছে কুমিল্লা পৌরসভা নির্বাচনে। এমনকি নেত্রকোনার একটি ছোট লোকাল গভার্মেন্ট নির্বাচনেও। সবখানে ভোটারের উপস্থিতি ছিল কম। কুমিল্লা পৌরসভায় দুই লাখের কিছু বেশি ভোটার, অথচ এক লাখের বেশি অনুপস্থিত। এই হতাশ ভোটারদের হতাশা কাটিয়ে আগামী দেড় বছরের ভেতর কীভাবে ভোটকেন্দ্রমুখী করা হবে তা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ জানে। তবে এই হতাশা আগামী নির্বাচনে তাদের অনেক বড় শত্রু।

হতাশ এই আওয়ামী লীগ সমর্থকদের পরে রয়েছে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ কর্মীরা। যাদের কথা শুরুতে উল্লেখ করেছি। দলের নেতাদের প্রতি, এমপির প্রতি, মন্ত্রীদের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে তারা এবার ভোটে আর প্রাণপাত করে কাজ করবে না, যেমনটি ঘটেছিল '৯৬এর নির্বাচনে বিএনপির মন্ত্রীদের ক্ষেত্রে; পার্টির জেনারেল সেক্রেটারি ও এলজিআরডি মন্ত্রী সালাম তালুকদারও হেরে গিয়েছিলেন। তাছাড়া হেরেছিলেন প্রায় অধিকাংশ মন্ত্রী। হেরেছিলেন স্পিকার রাজ্জাক আলী।

সালাম তালুকদার পরে একদিন ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় বলেছিলেন, একজন অতিসাধারণ মওলানার কাছে তাঁর হেরে যাওয়ার একমাত্র কারণ তাঁর ভাইপোরা। তারা এলাকার মানুষের সঙ্গে এতই খারাপ ব্যবহার করেছিল এবং সবকিছুতে দুর্নীতি করেছিল যা ছিল অসহনীয়। যার কারণে তিনি হেরে যান। এবারও আওয়ামী লীগের এই দশা নানা স্থানে। অনেক জেলা নেতার ও অনেক এমপি-মন্ত্রীর সন্তানই সেখানে নেতা বা এমপি, মন্ত্রী। অর্থাৎ তারাই ইঁদুরের সামনের বিড়ালটি। আর বিড়ালগুলো এতই বাছবিচার না করে মাছ খাচ্ছে যা ওই সালাম তালুকদারের ভাইপোদের মতো হয়ে যাচ্ছে।

এর পাশাপাশি দলে এক ধরনের নতুন নেতা হয়েছেন, তারা দলের কাঠামো গড়ে তোলার চেয়ে অর্থকে বড় মনে করছেন। তারা এখন মিছিল-মিটিং করছেন। টাকা দিচ্ছেন। টাকার বিনিময়ে আদর্শহীন লোকজন তাদের সব কাজ করে দিচ্ছে। এলাকায় বড় মিটিংও হচ্ছে। এদের ধারণা, নির্বাচনের সময়ও টাকার বিনিময় ওই সব লোকদের দিয়ে কাজ করানো যাবে। যখন কোনো নির্বাচন শুরু হয় তখন টাকার প্রতিযোগিতা চলে। আর এসব লোক তখন বারবনিতার মতো হয়ে যায়। যেদিন যে বেশি টাকা দেবে সেদিন সে তার জন্যে কাজ করবে।

অন্যদিকে আগেই জিতে যাওয়া ও কর্মীরা যদি ঠিকমতো ভোটার ভোট কেন্দ্রে নিয়ে না আসে তাহলে ফল কী হয় তা ১৯৯১তে দেখা গেছে। সেবার ঢাকা শহরের সবগুলো আসন হেরেছিল আওয়ামী লীগ। একজন রিপোর্টার হিসেবে, বিদেশি এক বড় সাংবাদিকের সঙ্গে সারা শহর ঘুরে ঘুরে সেদিন দেখেছিলাম, অধিকাংশ জায়গায় আওয়ামী লীগের কর্মী নেই। এমনকি আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে এসে ভোটাররা তাদের স্লিপটি পর্যন্ত পাচ্ছিল না।

এর মূল কারণ ছিল আওয়ামী লীগের এক ধরনের আগে থেকে জিতে বসে থাকার ভাব। এবারও দুর্বল বিএনপিকে দেখে তাদের ভিতর এই ভাব জম্মে গেছে এখন থেকে। তারা মনে করছে, বিএনপি তো ছিন্নভিন্ন। কোথাও দাঁড়াতে পারছে না। তাছাড়া শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কাছাকাছি কোনো নেতা নেই। এ কথা সত্য এ মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হলে শেখ হাসিনার কাছাকাছি কেউ ভোট পাবেন না। এমপি নির্বাচনে ওইভাবে ভোট আনা কষ্টকর। ১৯৭০এর নির্বাচনকে বঙ্গবন্ধু গণভোটে রূপান্তারিত করেছিলেন। এবারের ভোট গণভোটে রূপান্তরিত করা কি সম্ভব হবে শেখ হাসিনার পক্ষে?

শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার একটি বড় অংশ পাবে এমপি প্রার্থীরা, তবে নিজেদের জনপ্রিয়তাহীনতায় সে পার্সেন্টেজ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা-ও চিন্তার বিষয়। চিন্তার বিষয় তাদের জন্যে,তারা কি কর্মীদের নামাতে পারবে সঠিকভাবে?

আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ বিএনপি। তাদের হাওয়া ভবন, দুর্নীতি এ সবই সত্য। তবে আওয়ামী লীগকে মনে রাখতে হবে সে সব দশ বছর আগের ঘটনা। বাঙালির মেমোরি খুব শর্ট। দ্রুতই ভুলে যায়। বরং তাদের এবারের নির্বাচনের সময় মনে পড়বে তার সামনে গত কয়েক বছর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা কী করেছে সেসব।

অন্যদিকে যে উন্নয়ন আওয়ামী লীগের মূল সম্পদ, যার ওপর ভিত্তি করে তাকে নির্বাচন করতে হবে, সে ক্ষেত্রে দুটি ঘটনা ঘটেছে। এক, লীগ নেতারা সাধারণ মানুষের কাছে সত্যি অর্থে এটা তুলে ধরতে পারেননি যে, শেখ হাসিনা দেশকে কোথায় নিয়ে গেছেন। এমনকি বিএনপি যে যুক্তি দিচ্ছে– উন্নয়ন দৈনন্দিন কাজ– সে কথারও তারা উত্তর দিতে পারছেন না সঠিকভাবে। তারা জনগনের কাছে ওই অর্থে তুলে ধরতে পারেনি যে, খালেদার নেতৃত্বে কখনও গুড গর্ভনেন্স এদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। আর সুশাসন না হবার কারণে খালেদার আমলে কোনো উন্নয়ন হয়নি।

আওয়ামী লীগ আগামী দেড় বছরে কীভাবে তাদের উন্নয়নকে সাধার মানুষের কাছে তুলে ধরবে তা তাদের বিষয়। এখনও পর্যন্ত বাস্তবতা হল উন্নয়নকে লীগ নেতাকর্মীরা মানুষের কাছে তুলে ধরতে পারছে না। এই না পারার সবচেয়ে বড় কারণ, তারা নিজেরাও বোঝে না দেশের কী উন্নয়ন হয়েছে। তেমনি আওয়ামী লীগ তাদের ছাত্র বা যুবকদের দিয়ে এমন কোনো গ্রুপ বা দল তৈরি করেনি যারা দেশের মানুষের কাছে উন্নয়নের বিষয়টি তুলে ধরবে। এই প্রচারের জন্যে কর্মীদের যে ট্রেনিং দরকার তা দল তার নেতাকর্মীদের দেয়নি।

এছাড়াও কোনো দেশে যখন বিশাল আকারে উন্নয়নযজ্ঞ শুরু হয় তখন কাজের অর্থনৈতিক ভল্যুম বেড়ে যায়। তার থেকে যা চুইয়ে পড়ে তা-ও অনেক বড়। ভারতে মনমোহন সিংএর দ্বিতীয় মেয়াদে তাই ঘটেছিল। সাধারণ মানুষের সামনে ওই চুইয়ে পড়া অংশ অনেক বড়, ওটাই বিজেপি তুলে ধরেছিল মানুষের কাছে। অন্যদিকে বিএনপিতে যদিও কোনো মোদি নেই, তারপরেও বিএনপি এবার বলবে তারা এ উন্নয়ন করবে, সে উন্নয়ন করবে। এটাও কিন্তু আরেক বিপদ।

দেশে যে উন্নয়ন হয়েছেম ওই উন্নয়নটা কী– এ যদি যে দল উন্নয়ন করেছে তার কর্মীরা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে না পারে তাহলে মানুষ অনেক সময় উন্নয়ন হবে শুনে ভুল করে বসে। যেমনটি ভারতে লোকসভা নির্বাচনে বিহারের নীতিশের দলের ক্ষেত্রে হয়েছিল। সেখানে রব উঠে গেল যে, বিহারকে মোদি গুজরাট বানিয়ে দেবেন। কিন্তু নীতিশ যে মোদির থেকে ভালো করেছেন তা আর কেউ দেখল না, সবাই ছুটল মোদির পিছনে।

উন্নয়ন বিষয়টি যেহেতু সার্বিক, এ কারণে ব্যক্তি পর্যায়ে অর্থাৎ ভোটার পর্যায়ে এটি বোঝানো বেশ কঠিন কাজ। এই কাজ করার মত কর্মীবাহিনী আওয়ামী লীগ তৈরি করেছে বলে কোনো নমুনা কেউ পাচ্ছে না। অথচ উত্তর প্রদেশের প্রাদেশিক নির্বাচনের খোঁজ যারা আদি-অন্ত রাখেন তারা জানেন বিজেপির ওই নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেক্রেটারি ভুপেন্দ্র ইয়াদব কীভাবে কর্মীবাহিনী এক বছরেরও বেশি সময় আগে গড়ে তুলেছিলেন। কীভাবে তিনি তৈরি করেছিলেন পার্সোনাল কন্টাক্ট বাহিনী, সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপ, মিড়িয়ার কাছে খবর পৌঁছানো বা মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা গ্রুপ।

তার সঙ্গে হিসাব করে আওয়ামী লীগকে দেখলে অসহায় মনে হয় দলটিকে। বর্তমানে কিছু কিছু নেতা এমন বেফাঁস কথা বলছেন মাঝে মাঝে যার ফলে বিএনপির আর প্রয়োজন পড়ছে না। চৌদ্দ দলেরও মুখপত্র হিসেবে কোন বুদ্ধিমান ও চৌকষ ব্যক্তি নেই। সেখান থেকেও যে সব কথা বলা হয়, তা মূলত অর্থহীন। তাছাড়া আগে শেখ হাসিনার বাইরে বুদ্ধিদীপ্ত কথা বলার মতো সৈয়দ আশরাফ ছিলেন, তিনিও এখন নিশ্চুপ। তিনি দলের সেক্রেটারি থাকুন বা থাকুন সেটা বড় কথা নয়, আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় বেল্ট গ্রেটার ময়মনসিংহ এলাকা নিয়েও তিনি কাজ করছেন না।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের আরও বড় ব্যর্থতা হল, তারা দেশের মানুষের কাছে সত্যি অর্থে তুলে ধরতে পারেনি খালেদা জিয়ার পেট্রোল বোমার সন্ত্রাস। মানুষ পুড়িয়ে মারার সেই জঘন্য অপরাধ। ঘরে ঘরে সে ডকুমেন্টারি তারা পৌঁছাতে পারেনি।

সর্বোপরি কোনো দেশে প্রথমবারের মতো বড় মাপের উন্নয়ন হলে আরেকটি বিপদ হয়, মানুষের তখন চাহিদা বেড়ে যায়। গ্রামে বসে সে যখন তার খাবারের সব চাহিদা মেটাতে পারে তখন সে মনে করে এবার মনে হয় তার শহরে যাবার সময় হয়েছে। সে শহরে চলে আসে। গ্রামের কাজটি ফেলে এখানে এসে শহরের চাকুরি চায়। অত চাকুরি তো কোনো সরকারের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এ ধরনের উন্নয়ন হলে গ্রামের লোক যাতে গ্রামে থাকে, শহরমুখী না হয়, তাকে সেভাবেই মোটিভেট করতে হয়।

কংগ্রেস সে কাজ ভারতে করেনি। এখানে আওয়ামী লীগও তা করছে না।