এ সপ্তাহের ভাবনা

মুহম্মদ জাফর ইকবালমুহম্মদ জাফর ইকবাল
Published : 5 May 2017, 04:19 AM
Updated : 5 May 2017, 04:19 AM

আমি সিলেট থাকি, সুনামগঞ্জের খুব কাছে। হাওর আমার খুব প্রিয় জায়গা, পুরো বর্ষার সময় উথালপাতাল পানিতে নৌকা ভাসিয়ে দিয়ে সেখানে বসে হাওরের সৌন্দর্যটি দেখার মাঝে অন্য একধরনের বিস্ময়কর অনুভূতি রয়েছে। শীতের সময় এই এলাকাটি আবার শুকিয়ে যায়, তখন সেখানে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ। দেখে বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে যাই, পৃথিবীর আর কোথাও এরকম বিচিত্র ভূ-প্রকৃতি পাওয়া যায় কি না, আমি জানি না।

শীতের সময় হাওর এলাকায় কথা মনে হলেই আমার বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের কথা মনে পড়ে। তিনি হাওর এলাকায় থাকতেন, যখন বেঁচে ছিলেন তখন তার সাথে আমার অনেকবার দেখা হয়েছে। আমার সবাই তার বাউল গানের কথা জানি, কিন্তু তাঁর যে অসাধারণ স্মৃতিশক্তি ছিল সেটা আমরা অনেকে জানি না। মনে আছে একবার কোনো একটা অনুষ্ঠানের আগে সুনামগঞ্জের সার্কিট হাউজে তাঁর সাথে সময় কাটাচ্ছি তখন তিনি কবিতার মতো করে তাঁর লেখা সবগুলো গান আমাদের শুনিয়ে যাচ্ছিলেন, আমি অবাক বিস্ময়ে তাঁর দিকে তাকিয়েছিলাম।

বেশ কিছুদিন আগে একবার শাহ আব্দুল করিমের বাড়িতে একটি বাউল সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে, আয়োজকেরা আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আমি খুব আগ্রহ নিয়ে রওনা দিয়েছি। কাছাকাছি গিয়ে আবিষ্কার করলাম সেখানে গাড়ি যায় না। একজন আমাকে মোটর সাইকেরলর পিছনে বসিয়ে নিয়ে যেতে রাজি হলেন, আমি হাওরের শুকনো মেঠো পথে মোটর সাইকেলেলর পিছনে বসে বসে গিয়েছি। কী অপূর্ব একটি অভিজ্ঞতা! সেখানে শাহ আব্দুল করিমের সাথে আমার শেষ দেখা।

এই বিস্তৃত হাওর অঞ্চল এখন পানির নিচে, সময়ের আগে উজান থেকে পানির ঢল এসে পুরো এলাকা ডুবিয়ে দিয়েছে। আর দুই সপ্তাহ সময় পেলেই বোরো ধানের ফসল কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারতেন, সেই সময়টুকু তারা পাননি। যাদের গোলা ভরা ধান থাকতে পারত তারা চোখের পলকে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছেন। শুধু যে ধান গিয়েছে তা নয়, ধানের পর গিয়েছে মাছ, তারপর গিয়েছে হাঁস।

এই এলাকায় মানুষের ওপর দুর্যোগের পর দুর্যোগ নেমে এসেছে। আমি পত্রপত্রিকায় খবরগুলো পড়ি এবং কেমন জানি অসহায় বোধ করি। সেদিন এই এলাকায় দুজন মানুষ আমার কাছে এসেছেন, বন্যা নিয়ে কথাবার্তা বলেছেন তারপর আমার কাছে একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়েছেন। কাগজটি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ নম্বর ধারা। বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এলাকার মানুষেরা তাদের অঞ্চলটিকে দুর্গত এলাকা হিসেবে ঘোষণা করার পর এই মন্ত্রণালয়ের সচিব এলাকার মানুষদের 'সস্তা' বক্তব্য দেওয়ার জন্যে বকাবকি করে বলেছেন:

"দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ নম্বর ধারায় লেখা আছে কোনো এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করার আগে সেই এলাকার অর্ধেক মানুষকে মারা পড়তে হবে।"

কী ভয়ংকর একটি কথা! কথা এখানেই শেষ হয়ে গেলে রক্ষা ছিল, কিন্তু সচিব মহোদয় এখানেই কথা শেষ করেননি, যারা দুর্গত এলাকা ঘোষণার কথা বলেছেন "তারা কিছুই জানেন না, না জেনে কথা বলছেন" সেটা নিয়ে উম্মা প্রকাশ করেছেন। তারপর বলেছেন:

"এই এলাকায় একটি ছাগল মারা যায়নি!"

ঠিক কী কারণ জানা নেই, এত বড় একটা বিপর্যয়কে ছাগলের মৃত্যুর মতো এত ছোট বিষয়ের সাথে তুলনা করে বিষয়টি হাস্যকর একটা পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার মাঝে একধরনের মমতাহীন অসম্মান প্রকাশ করার ব্যাপার আছে, যারা এই ভিডিওটি দেখেছেন তারা সবাই এই অসম্মানটুকু অনুভব করবেন।

আমি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইনের ২২ নম্বর ধারাটি খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়েছি, অর্ধেক মানুষ মরে যাওয়ার কোনো কথা সেখানে নেই। সচিব মহোদয় স্থানীয় মানুষেরা কিছু জানে না বলে তাদের বকাবকি করেছেন, অথচ দেখা যাচ্ছে আসলে তিনি নিজেই ব্যাপারটি জানেন না। কোনো কিছু না জেনে সেই বিষয়টি নিয়ে খুব জোর গলায় কথা বলার এই ভিডিওটি নিশ্চিতভাবে সচিব মহোদয়ের কর্মজীবনের একটি বড় কালিমা হয়ে থাকবে।

আমাদের দেশের মানুষের মতো এত কষ্টসহিষ্ণু মানুষ সারা পৃথিবীতে আর কোথাও আছে কি না, আমার জানা নেই। এই দেশের মানুষ অসংখ্যবার ঝড়-ঘূর্ণিঝড়-বন্যায় ক্ষতবিক্ষত হয়েছে, কিন্তু প্রত্যেকবার তারা মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। এবারেও তারা নিশ্চয়ই মাথা তুলে দাঁড়াবে, কিন্তু সেই মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্যে যেটুকু সাহায্যের দরকার তার সবচেয়ে বড় অংশটি হচ্ছে তাদের জন্যে একধরনের মমতা। ছাগলের মৃত্যুর উদাহরণ দেওয়া হলে সেই মমতাটুকু প্রকাশ পায় না।

আমি পত্রপত্রিকায় পড়ে দেখার চেষ্টা করছি এই বন্যাপ্লাবিত এলাকায় কোন ধরনের সাহায্য দেওয়া হচ্ছে। একটি সময় ছিল যখন বাংলাদেশের অর্থনীতি ছিল দুর্বল, এখন আর সে অবস্থা নেই। 'দুর্গত এলাকা' বলে ঘোষণা করা হোক আর না হোক এই দুর্গত মানুষগুলোর পাশে সরকার ও দেশ এসে দাঁড়াবে– সেই আশাটুকু নিশ্চয়ই করতে পারি।

২.
সেদিন বিকালবেলা হঠাৎ করে একজন সাংবাদিক আমার কাছে এসেছেন, হামিদ মির নামে একজন পাকিস্তানি সাংবাদিক তার বাবাকে দেওয়া পদকটি ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছেন– এ ব্যাপারে আমার কী মন্তব্য সেটি তিনি জানতে চান।

আমি ভাসা ভাসাভাবে পাকিস্তানের সাংবাদিক হামিদ মিররে নাম শুনেছি, কিন্তু তার বাবার পদক ফিরিয়ে দেওয়া সম্পর্কে তখনও আমি কিছুই জানি না। তাই আমি কোনো মন্তব্য দিতে পারলাম না।

রাতে খবর পড়ে জানলাম একাত্তরে বাংলাদেশের ওপর পাকিস্তানি নৃশংসতার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের যে কয়জন মানুষ প্রতিবাদ করেছিলেন তার মাঝে একজন হচ্ছেন এই সাংবাদিকের বাবা। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে অন্য অনেক বিদেশি বন্ধুর সাথে সাথে পাকিস্তানের এই সাহসী মানুষটিকে সম্মানিত করেছে। তিনি বেঁচে নেই বলে তাঁর পুত্র হামিদ মির বাবার পক্ষে এই সম্মাননাটুকু গ্রহণ করেছিলেন।

হামিদ মিরের ভাষায় এই পদকটি দিয়ে তাকে আসলে প্রতারণা করা হয়েছে, কারণ পদকটি দেওয়ার সময় তাকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল যে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ভালো করবে। কিন্তু সম্পর্ক ভালো হওয়া দূরে থাকুক, সম্পর্ক দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে; তার প্রতিবাদে হামিদ মির পদকটি ফিরিয়ে দিতে যাচ্ছেন।

পুরো ব্যাপারটার মাঝে একধরনের তামাশা আছে সেটা সবাই লক্ষ করেছে কি না, জানি না। আমরা নিজের চোখে একাত্তরে পাকিস্তানের নৃশংসতা দেখেছি বলে এই বর্বর রাষ্ট্রটির প্রতি আমাদের ভেতরে প্রবল একধরনের বিতৃষ্ণা আছে। যদি পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক খারাপ হতে হতে একসময় পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক কেটে দেওয়া হয়, আমি সম্ভবত সবার কাছে মিষ্টি বিতরণ করব। তবে আমার ইচ্ছা অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা হয় না, তাই চট করে মিষ্টি বিতরণের সুযোগ পাব বলে মনে হয় না।

কিন্তু সম্পর্ক যে খারাপ হয়েছে সেটি সবাই নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছে। সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কারণটিও নিশ্চয়ই কেউ ভুলে যায়নি। আমাদের দেশের যুদ্ধাপরাধীদের আমরা বিচার করে শাস্তি দিয়েছি, সেই যুদ্ধাপরাধীদের জন্যে দরদে উথলে পড়ে পাকিস্তান, তাদের পার্লামেন্টে আমাদের দেশের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব এনেছে। তারপরও যদি হামিদ মির সাহেব বুঝতে না পারেন কেন সম্পর্কটি খারাপ হয়েছে তাহলে তার আসলে সাংবাদিকতার পরিবর্তে অন্য একটা কাজ শুরু করা উচিত।

একজন সাংবাদিক এই সহজ বিষয়টা বুঝতে পারছেন না, আমার সেটা বিশ্বাস হয় না। আমার ধারণা বাংলাদেশের সাথে তার মাখামাখির কারণে সেই দেশের মিলিটারি কিংবা অন্য কেউ তাকে প্রাণের ভয় দেখিয়েছে এবং দুর্বল মানুষ প্রাণের ভয়ে যেটা করে তিনি সেটাই করেছেন। বাংরাদেশকে অপমান করার চেষ্টা করে নিজের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। দোয়া করি তিনি প্রাণে বেঁচে থাকুন।

আমার অবশ্য আরও একটা বিষয় নিয়ে খানিকটা বিভ্রান্তি রয়েছে। এই সম্মাননা পদকটি হামিদ মলিকে দেওয়া হয়নি, তার বাবাকে দেওয়া হয়েছে। পদকটি যদি ফিরিয়ে দিতে হয় তার বাবা সেটি ফিরিয়ে দিতে পারেন, হামিদ মিরের সেই অধিকার আর ক্ষমতা কোনোটাই নেই। আমরা তার বাবা সম্পর্কে যেটুকু জানি তার থেকে বলতে পারি, তিনি কখনও এই পদকটুকু ফিরিয়ে দিতেন না। যে মানুষ একাত্তরের সেই দুঃসময়ে পাকিস্তানের মতো বর্বর একটি দেশে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিবাদ করেছেন, তিনি নিশ্চয় এখনও তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে কথা বলতেন।

শুধু তাই না, আমরা আমাদের দেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছি, পাকিস্তান কোন সাহসে তাদের পার্লামেন্টে এর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নেয়, তিনি নিশ্চয় সেটারও প্রতিবাদ করতেন। আমার প্রশ্ন তার পুত্র-পুঙ্গবকে কে অধিকার দিয়েছে তার সম্মানিত বাবার নাম ভাঙিয়ে বাংলাদেশকে অপমান করার চেষ্টা করার?

৩.
শহীদ মিনারে কাজ আরিফের মৃতদেহের কফিন এবং তাকে ঘিরে তার আপনজনেরা দাঁড়িয়ে আছে এই দৃশ্যটি আমি চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছি না। বহুদিন তার সাথে যোগাযোগ নেই, সে অসুস্থ, চিকিৎসার জন্যে আমেরিকা গিয়েছে, সেটাও আমি জানতাম না। তাই হঠাৎ করে তার মৃত্যু সংবাদটি শুনে আমি খুব বড় একটা আঘাত পেয়েছি।

কাজী আরিফ আমার একেবারে ছেলেবেলার বন্ধু। আট বছর বয়সে আমি বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামে এসে সেখানকার পিটিআই স্কুলে ভর্তি হয়েছিলাম, সেখানে আমার কাজী আরিফের সাথে পরিচয়, আমরা দুজনেই তখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি। (কাজী আরিফকে আমরা অবশ্যি কখনও 'কাজী আরিফ' নামে ডাকিনি, তাকে তার ডাক নাম 'তৌহিদ' বলে ডেকেছি।)

শৈশবে কাজী আরিফ নিয়ে আমার যে এখনও সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল সেটি হচ্ছে ক্লাশের সামনে দাঁড়িয়ে সে কবিতা আবৃত্তি করছে। আমি একধরনের বিস্ময় নিয়ে তাকে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখতাম। 'শুনতাম' না বলে 'দেখতাম' লিখেছি, তার একটা কারণ আছে। সেই অতি শৈশবেই কাজী আরিফ অবিশ্বাস্য আন্তরিকভাবে কবিতা আবৃত্তি করত এবং জোর গলায় সে যখন কবিতা আবৃত্তি করত তখন তার গলায় একটা রগ রীতিমতো ফুলে ওঠত এবং সেটাই ছিল আমাদের কাছে সবচেয়ে দর্শনীয় বিষয়। সে যে বড় হয়ে বাংলাদেশের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ আবৃত্তি শিল্পী হবে সেই ক্লাস থ্রিতেই আমাদের অনুমান করা উচিত ছিল।

আজ থেকে অর্ধশতাব্দী থেকেও বেশি সময় আগে চট্টগ্রাম শহরটি অন্যরকম ছিল। আমরা ছোট ছোট শিশু চট্টগ্রাম শহরের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াতাম, কেউ কখনও সেটা নিয়ে দুর্ভাবনা করত না।

পিটিআই স্কুল থেকে পাস করে কলেজিয়েট স্কুলে, সেখান থেকে আমি বগুড়া চলে এলাম এবং কাজী আরিফের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তার সাথে আবার যোগাযোগ হল স্বাধীনতার পর; সে আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছে, আমি পদার্থ বিজ্ঞানে। বহুদিন পর প্রথম যখন তার সাথে দেখা হল সে আনন্দে হা হা করে হেসে বলল:

"মনে আছে তুমি যখন স্কুলে ছিলে তখন তুমি পোকাকে বলতে পুকা!"

আমার মনে ছিল না, কিন্তু আমি তাকে অবিশ্বাস করিনি। আমরা নেত্রকোনার মানুষ 'পোকা'কে 'পুকা' বলি, 'সূর্যের আলো'কে 'সূর্যের আলু' বলি– এটি নূতন কিছু নয়।

মুক্তিযোদ্ধা কাজী আরিফ যখন বাংলাদেশের একজন সর্বশ্রেষ্ঠ আবৃত্তি শিল্পী হয়ে উঠছে তখন আমি আমেরিকায়। সেখানে হঠাৎ একদিন তার সাথে দেখা জানতে পারলাম, সে আমেরিকা চলে এসেছে। নিউ জার্সি নিউ ইর্য়ক এলাকায় থাকে, মাঝে মাঝেই তার সাথে দেখা-সাক্ষাত হয়। একবার নির্মলেন্দু গুণ আমেরিকা বেড়াতে এলেন, আমি আর আমার স্ত্রী কাজী আরিফ আর নির্মলেন্দু গুণকে নায়েগ্রা ফলস নিয়ে গেলাম। ফিরে আমার সময় দীর্ঘ ভ্রমণে সবাই ক্লান্ত, আমি গাড়ি চালাচ্ছি। আমার স্ত্রী বাচ্চা দুজনকে দেখভাল করছে। তখন হঠাৎ গাড়ির পিছনে বসে থাকা কবি নির্মলেন্দু গুণ ও কাজী আরিফ আবৃত্তি করতে শুরু করলেন। একজন একটি শেষ করেন তখন আরেকজন শুরু করেন।

গভীর রাত নির্জন পথ, গাড়ির হেড লাইট হাইওয়ের একটুখানি পথ আলোকিত করে রেখেছে, দুই পাশে অরণ্য, তার মাঝে আমরা যাচ্ছি, গাড়ির পিছনে কবি নির্মলেন্দু গুণ এবং কাজী আরিফ কবিতা আবৃত্তি করে যাচ্ছেন। কবি নির্মলেন্দু গুণ তাঁর নিজের লেখা কবিতা গভীর মমতায় তার নিজের মতো করে বলে যাচ্ছেন। কাজী আরিফের ভরাট কণ্ঠ, নিঁখুত উচ্চারণ, কবিতার জন্যে গভীর ভালোবাসা; আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকি।

তারপর কতদিন পার হয়ে গেছে, আমার এখনও মনে হয় অন্ধকারে গাড়ি চালাচ্ছি, পিছনের সিটে বসে আছে কাজী আরিফ, আমাদের কবিতা আবৃত্তি করে শুনিয়ে যাচ্ছে।

আমরা আর তার কণ্ঠে কবিতা শুনতে পারব না। কাজী আরিফ, প্রিয়বন্ধু, বিদায়।