ব্রিটেনে বাংলাদেশের বাজার

Published : 24 April 2017, 04:33 AM
Updated : 24 April 2017, 04:33 AM

সবেমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেরিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করেছে যুক্তরাজ্য। লিসবন চুক্তি অনুযায়ী আর্টিক্যাল ফিফটি আলোচনার টেবিলে ফেলে চলছে দর-কষাকষি। দুপক্ষই নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে পায়ে খুট লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যদিও ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে সমঝোতার ভিত্তিতে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আশ্বাস দিয়েছেন।

এখন দেখার বিষয় হল এই মানসিকতা কতটা টেকসই হয়। কারণ স্বার্থের বিষয়ে কোনো পক্ষই ছাড় দেবে বলে মনে হয় না।

আর্টিক্যাল ফিফটির আলোকে আলোচনা এগোবে। অন্য অনেক বিষয় রয়েছে এই আলোচনায়। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল বাণিজ্য। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে এলে ব্রিটেন একক বাজারে (সিঙ্গেল মার্কেট) থাকতে পারবে কি না, এ বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে বেশি। যদি থাকতে না পারে তা হলে ইইউভুক্তদেশগুলো থেকে আমদানি করতে গেলে বড় অংকের ব্যয়ের মুখে পড়বে যুক্তরাজ্য।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যের মোট আমদানির প্রায় ৫৩ শতাংশ আসে ইইউভুক্ত অন্যান্য দেশ থেকে। ফলে শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছে যুক্তরাজ্য। একক বাজার থেকে বেরিয়ে এলে সে সুবিধা পাবে না। ইইউ থেকে বেরিয়ে এলেও একক বাজারে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে মে সরকার।

তবে ব্রিটেনের অর্থনীতিবিদরা বলছেন সেই সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। যদি তা-ই হয়, তাহলে নতুন আমদানি বাজারের খোঁজে বেরোতে হবে যুক্তরাজ্যকে। ইতোমধ্যে সেই ইঙ্গিত ও প্রস্তুতির কথাও প্রকাশ করেছে কনজারভেটিভ সরকার।

ব্রিটিশ সরকারের দৃষ্টি এখন দক্ষিণ এশিয়ার দিকে। সম্প্রতি বাংলাদেশে সফরে গিয়ে ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রী লর্ড বেটস সে কথাই শুনিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশকে 'উন্নয়নের মডেল' আখ্যা দিয়েছেন। ডিএফআইডির অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছেন। প্রয়োজনে বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার কথাও ভাবা হচ্ছে এমন ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন। ফলে বাংলাদেশের উচিত যুক্তরাজ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ বা রপ্তানি খাতে মনোনিবেশ করা। এক্ষেত্রে একটি সার্ভে পরিচালনার মাধ্যমে সরকার বা ব্যবসায়ীদের সংগঠনগুলো অনুসন্ধান করতে পারে কোন কোন পণ্য যুক্তরাজ্যের বাজারে চাহিদা রয়েছে।

কেবল পণ্য নয়, সাংস্কৃতিক বাণিজ্যের বাজারও খুঁজতে পারে বাংলাদেশ সরকার এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো। যুক্তরাজ্যে শিল্প-সাহিত্যের বিশাল বাজার রয়েছে। মিশ্র ভাষাভাষীর এই দেশে বিভিন্ন ভাষা ও শিল্প-সংস্কৃতির কদর রয়েছে। সে হিসেবে পণ্য-দ্রব্যের বাজারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বাণিজ্যেও দিকেও দৃষ্টি মেলা যেতে পারে।

যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পোশাক শিল্পের বাজার রয়েছে। সমুদ্র ও কৃষিজাত পণ্যের বাজারও কিছুটা দখলে রয়েছে। হালে গ্রোসারি পণ্যের বাজারও তৈরি হয়েছে।

ইইউর সঙ্গে ছাড়াছাড়ির এই সময়ে এসব খাতের বাজার সম্প্রসারণ করার আরও বৃহৎ সুযোগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাজ্য সেবা খাতের নিজস্ব রপ্তানি বাজার বড়, কিন্তু অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে নিজস্ব বাজার একেবারে ছোট। ফলে আমদানি তাকে করতেই হবে। এতদিন এই চাহিদা মিটিয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ। ব্রেক্সিটের ফলে সেই পথ আর খোলা থাকবে না। ফলে নির্ভরশীল হতে হবে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের ওপর। কারণ পণ্যমূল্যের সহনশীলতা। বাংলাদেশ থেকে পণ্য-দ্রব্য আমদানি করতে যুক্তরাজ্যের ব্যয় অনেক কমে আসবে ইউরোপের অন্য দেশের তুলনায়।

ফলে ব্রেক্সিটের এই ডামাডোলের মধ্যে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বাজার আরও সম্প্রসারণ করতে পারে বাংলাদেশ। এর জন্য রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে এখনই কাজে নামা উচিত। লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

যদিও এ-সংক্রান্ত যে বিভাগটি লন্ডন হাই কমিশনে রয়েছে সেটি যুক্তরাজ্যের বাজারে দেশের নতুন রপ্তানি বাজার খোঁজার ক্ষেত্রে বলতে গেলে কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। কেবল কমিউনিটির মধ্যেই সভা-সেমিনার করেই দায়িত্ব পালন অব্যহত রেখেছে। মূলধারার কোনো বাণিজ্যিক সভা-সেমিনারে উপস্থিতি নেই বললেই চলে।

অতীতের সব আগল ভেঙে এই সময়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে হবে যুক্তরাজ্যের বাজারে। সরকারি হিসাব মতে, বাংলাদেশের মোট রপ্তানির মাত্র ১২ শতাংশ বর্তমানে যুক্তরাজ্যের বাজারে প্রবেশ করছে। এ হার আরও বৃদ্ধি করার সুযোগ এখন হাতের কাছে। এ সুযোগ কাজে লাগাতে হলে লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনকে আরও বেশি সক্রিয় হতে হবে। খুঁজতে হবে নতুন পণ্য বাজার।

এক্ষেত্রে হাই কমিশনারকে কেবল মানি একচেঞ্জ উদ্ধোধন বা গুরুত্বহীন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হওয়ার লোভ ত্যাগ করে ব্রিটেনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করতে হবে। ব্রিটিশ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দুটি সংগঠন রয়েছে লন্ডনে। এছাড়া ওয়েলস ও বার্মিংহামেও বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন রয়েছে। তারাও যে ব্রিটেনে বাংলাদেশের বাণিজ্য-বাজার সম্প্রসারণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে তা-ও নয়। তারাও নানারকম অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে হাই কমিশনার মূলধারার বাণিজ্য-বাজারে প্রবেশ করার পথ সুগম করতে পারেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে হঠাৎ করে আগামী ৮ জুন জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। এতে করে থেমে থাকার প্রয়োজন নেই। থেরেসা মে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া আরও গতিশীল করতে নির্বাচনের বিকল্প নেই বলে মনে করছেন। তা-ই যদি হয়, তাহলে এই উদ্যোগ আমাদের বাণিজ্য প্রবেশের পথ আরও সুগম করবে বলে মনে করি।

আগামী নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, সেটি বিবেচ্য বিষয় নয়। ব্রিটেনের অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন জাতীয় নির্বাচনের পর ব্রিটেনের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে। তার প্রমাণ হল, থেরেসা মে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মূল্য বাড়তে শুরু করেছে। বাড়তে শুরু করেছে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা। এই সুযোগ না নিতে পারলে ব্রিটেনে রপ্তানি-বাণিজ্যে আরও পিছিয়ে পড়বে বাংলাদেশ।

এমনিতেই গার্মেন্টস সেক্টর ছাড়া অন্য কোনো বাণিজ্য শাখায় বাংলাদেশের উপস্থিতি খুবই নগণ্য। পাশের দেশ ভারত ও পাকিস্তান যেভাবে বিলেতের বিভিন্ন প্রধান বাণিজ্যিক বাজারে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে পেরেছে তা বাংলাদেশ পারছে না। এর প্রধান কারণ উৎপাদনের মান এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কের দুর্বলতা। এ দেওয়াল টপকাতে কূটনীতিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে হবে।

বছর দুয়েক আগে 'বাংলাদেশ ট্রেড ফেয়ার' হয়েছিল লন্ডনে। সেটি আয়োজনের দৈন্যতার কারণে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছিল। কিছু ফড়িয়াদের কারণে ওই মেলায় মূলধারার তেমন কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিল না। যে কজন ছিল তারা বাংলাদেশের বাণিজ্যিক বাজার উপস্থাপনের প্রক্রিয়া সন্তুষ্ঠ ছিল না। ফলে ওই আয়োজনের ফলাফল ছিল 'জিরো'।

এই যে অক্ষমতাসমূহ ব্রিটেনে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক বাজারে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে তা অপসারণ করতে হবে। এ কাজটি করার জন্য লন্ডনের বাংলাদেশ হাই কমিশনের বাণিজ্যিক সেল আরও কার্যকর করতে হবে। মিশনের প্রধান হিসেবে হাই কমিশনারকে এ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে।

হাই কমিশন বিলেতে বসবাসরত বাংলাদেশিদের সেবা প্রদানে আন্তরিক। কিন্তু মিশনের কাজ তো কেবল কমিউনিটির মানুষকে সেবা দেওয়া নয়। তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে নিজের দেশকে ব্রিটেনের সর্বক্ষেত্রে প্রবেশ করানো। ব্রেক্সিটের ফলে কেবল পণ্য-দ্রব্যের বাজার নয়, শিল্প-সংস্কৃতির বাজারও তৈরি হচ্ছে।

মিশ্র সংস্কৃতির মানুষের বসবাস ব্রিটেনে। বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই, যে দেশের মানুষ ব্রিটেনে নেই। ফলে এখানে মিশ্র সংস্কৃতির বাণিজ্যিক বাজার বেশ বড়। ব্রিটেন সরকার এক্ষেত্রে বেশ উদার। সব কমিউনিটির শিল্প-সংস্কৃতির প্রসারে সরকারের ব্যয় বরাদ্দ রয়েছে। এ ছাড়া এসব কর্মকাণ্ডে আর্থিক সহায়তার জন্য বেশকিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্য চর্চা-প্রচার-প্রসারে এমন উদারনীতি অন্য কোনো দেশে আছে কি না, জানি না।

বাংলাদেশি কমিউনিটিতে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংগঠন রয়েছে, যেগুলো সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অনুদানে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে। কিন্তু এসব সংগঠনের হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া কেউই মূলধারার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। কারণ বেশিরভাগ সংগঠনের কার্যক্রম শিল্পোত্তীর্ণ নয়। কেননা শিল্প-সাহিত্য চর্চার যে মার্গীয় স্তর রয়েছে সেখানে পৌঁছুতে যে রসদ দরকার হয় তা নেই। এর জন্য নিরন্তর চর্চার প্রয়োজন, প্রয়োজন বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারের সহায়তা।

ভারত কিন্তু এই বাজার দখলে নিয়েছে কয়েক যুগ আগে। আমরা তাদের তুলনায় একেবারে শিশু। ভারতের চলচ্চিত্র বাজার বিশাল একটি অংশ জুড়ে আছে বিলেতে। নাটক, গান, নাচসহ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতির এমন কোনো শাখা নেই যার বাণিজ্যিক বাজার নেই ব্রিটেনে। পাকিস্তানও কোনো অংশে কম যায় না। কয়েকদিন আগে পাকিস্তানের শিল্পী আবদা পারভীন লন্ডনের সাউথব্যাংকের রয়েল ফ্যাস্টিভাল হলে অনুষ্ঠান করে গেলেন। হলটির আসন অনুযায়ী আড়াই হাজার টিকেট অনুষ্ঠানের অনেক আগেই শেষ হয়ে যায়। টিকেটের দাম রাখা হয় ১২০ পাউন্ড করে।

অথচ আমাদের শিল্পী রুনা লায়লা কয়েক মাস আগে পূর্ব লন্ডনের ছোট্ট একটি হলে অত্যন্ত ব্রাত্য আয়োজনে একটি অনুষ্ঠান করে গেলেন। ছিল না কোনো প্রচার-প্রচারণা, দর্শকের উপস্থিতিও ছিল অত্যন্ত নগণ্য।

আবদা পারভীন আর রুনা লায়লা একই মাপের শিল্পী। পার্থক্য আবদা পারভীনের বিলেত বাজার তৈরিতে পাকিস্তান দূতাবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তাঁকে মূলধারায় প্রচারের সবরকম প্রচেষ্টা গ্রহণ করে। অন্যদিকে রুনা লায়লাকে মূলধারায় নেওয়া তো দূরে থাক কমিউনিটির ভেতরে ছোট্ট যে অনুষ্ঠানটি করেছে তাতেও বাংলাদেশে দূতাবাসের তেমন কোনো ভূমিকা ছিল না।

কেন এমন হচ্ছে তা আমাদের জানা নেই। তবে এসবের মাঝেও দূতাবাসের প্রেস উইংস কাজ করার চেষ্টা করছে। গত দুবছরে উল্লেখযোগ্য কিছু কাজ হয়েছে এই বিভাগ থেকে। যে কারণে এত উদাহারণ টানা হল সেটি বিলেতের শিল্প-সংস্কৃতির বাজারে আমাদের দরিদ্র উপস্থিতি চিহ্নিত করার জন্য।

ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের পর ব্রিটেনের সাংস্কৃতিক জগতে আমাদের সম্ভাবনা আরও বৃদ্ধি পাবে। এই বাজার কেউ দেবে না, তা তৈরি করে নিতে হবে। বাংলাদেশে অসাধারণ সব মঞ্চ নাটক রয়েছে। এই খাতের বাজার বিলেতে অনায়াসে তৈরি করা যায়। কেবল সামারেই যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে বিশাল বিশাল মেলার আয়োজন করা হয়। এডিনবরার ফ্রিঞ্জ ফ্যাটিভাল, গ্লাস্টোনবাজেট মিউজিক্যাল ফেস্টিভাল ও স্টেঞ্জবে ফেস্টিভালসহ অসংখ্য বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে সামারে। এগুলোর মধ্যে ফ্রিঞ্জ ফেস্টিভালে নিজ উদ্যোগে খুব স্বল্প পরিসরে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের শিল্পীরা। এটি বিশ্বের সবেচেয়ে বড় শিল্প-সংস্কৃতির মেলা। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হলে এই মেলায় অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের বাজার তৈরি করা যাবে।

আমাদের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রায়ই লন্ডনে আসেন। তিনি নিশ্চয় অনুধাবন করতে পারেন বিলেতের শিল্পবাজারের পরিধি। তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত 'বঙ্গবন্ধু বইমেলা'তে এ বিষয়ে খোলামেলা কথাও বলেছেন। বলেছেন, কেবল কমিউনিটির মধ্যে নয়, মূলধারায় নিয়ে যেতে হবে বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি-সাহিত্যকে।

এই যে বক্তব্য একে বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে হবে। নানা জটিলতার ফাঁদে পড়ে এবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না 'বাংলাদেশ বইমেলা'। আর এর জন্য বিলেতের বইপ্রেমীরা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককেই দায়ী করছেন বেশি। কারণ এই মেলাটি কেবল যুক্তরাজ্যে নয়, পুরো ইউরোপের জন্য একটি বৃহৎ আয়োজনে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অথচ ব্যক্তিস্বার্থের কারণে এই মহৎ আয়োজনটি থেমে গেল। এই যে সংকীর্ণতা, এসবের ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ করতে হবে।

যুক্তরাজ্যে এখন যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে তাতে বাংলাদেশের জন্যও নতুন বার্তা রয়েছে। কম শ্রমমূল্যের দেশ হিসেবে যুক্তরাজ্য সবসময় বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি তাক করে রাখে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ছাড়াছাড়ির এ সময়ে যুক্তরাজ্যেও দৃষ্টি এখন বিশ্ববাজারে। এখন এই দৃষ্টি নিজের দিকে ফেরানোর কাজটি করতে হবে বাংলাদেশকে।

বহু খাতের বাজার পেতে পারে বাংলাদেশ। এ জন্য প্রয়োজন উদ্যোগ এবং তা বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ।