গণহত্যা জাদুঘর ও প্রসঙ্গকথা

কাজল আব্দুল্লাহ
Published : 29 Oct 2011, 01:33 AM
Updated : 29 March 2017, 04:28 AM

মাথাব্যথা সারাতে আমরা দোকানে গিয়ে সরাসরি মাথাব্যাথার ওষুধ চাই। তবে আমাদের এই শর্টকাট যোগাযোগ পদ্ধতি দোকানিরাও বোঝে। জাতিগতভাবে সবকিছুতেই শর্টকাট বা দ্রুত করা আমাদের পছন্দ। তবে সম্ভবত এটি কাজে নয়, কথায়। তা না হলে ২৫ মার্চ 'জাতীয় গণহত্যা দিবস' পালনে আমরা কিভাবে এত দেরি করে ফেললাম?

'জাতীয় গণহত্যা দিবস' আসলে হওয়া উচিত 'জাতীয় গণহত্যা স্মরণ দিবস' বা 'জাতীয় গণহত্যা প্রতিরোধ দিবস' অথবা 'গণশোক দিবস'। মাত্র দুবছর আগে, ২০১৫ সালে জাতিসংঘ ৯ ডিসেম্বরকে 'আন্তর্জাতিক গণহত্যা স্মরণ ও প্রতিরোধ দিবস' হিসেবে ঘোষণা করেছে। দুবছর আগে হলেও 'আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস'এর মতো 'আন্তর্জাতিক গণহত্যা (স্মরণ ও প্রতিরোধ) দিবস' হিসেবে ২৫ মার্চ অন্তর্ভুক্ত হওয়ার একটি ভালো সুযোগ ছিল।

স্বাধীনতার এত বছর পরে এই দিবস পালনের প্রস্তাব আসায় আমরা দিবসটিকে আন্তর্জাতিক দিবস হিসেবে পালনের সুযোগ হারালেও ১৯৭১ সালে আমাদের উপর চালানো গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের সুযোগ এখনও বিদ্যমান। দেরিতে হলেও এই উদ্যোগ নেওয়ার জন্য জাতীয় সংসদ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের কৃতজ্ঞতা। বিশেষ কৃতজ্ঞতা একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এবং সব সহযোদ্ধাকে যারা ২৫ বছর ধরে এই দাবিতে সংগ্রাম করেছেন।

গণহত্যার ইংরেজি হিসেবে সাধারণত 'জেনোসাইড' (Genocide) বা 'ম্যাস কিলিং' (Mass Killing) ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, শব্দ দুটির মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে। নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা হল 'ম্যাস কিলিং' বা 'ম্যাস মার্ডার'। আর বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত হত্যাযজ্ঞকে বলা হয় 'জেনোসাইড'।

অপরাধ হিসেবে গণহত্যাকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ১৯৪৮ সালে জাতিসংঘের The Convention on the Prevention and Punishment of the Crimes of Genocide বা জেনোসাইড কনভেনশনে। ওই সংজ্ঞায় গণহত্যার সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে গিয়ে এর যে পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের কথা বলা হয়েছে, সেগুলি হল:

'কোনো গোষ্ঠীর মানুষকে হত্যা, তাদের শারীরিক ও মানসিকভাবে চরম ক্ষতিসাধন, জীবনমানের প্রতি আঘাত ও শারীরিক ক্ষতিসাধন, জন্মদান বাধাগ্রস্ত করা এবং শিশুদের অন্য গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া।'

এর একটি বৈশিষ্ট্য থাকলেই সেটিকে গণহত্যা বলে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে চালানো গণহত্যায় উপরের পাঁচটি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে প্রথম চারটিই সংঘটিত হয়েছে।

গণহত্যা এতই মারাত্মক যে আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি বা কূটনীতির উৎস জাতিসংঘের ১৯৬৯ সালের ভিয়েনা কনভেনশন। সেখানেও গণহত্যাকে Jus Cogense বা সর্বমান্য আইনের আওতায় ফেলা হয়েছে। এই Jus Cogense-এর বিধান অনুযায়ী, গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো অপরাধ কোনো রাষ্ট্র বা সরকার ক্ষমা করতে পারবে না, এমনকি কোন দ্বিপাক্ষিক চুক্তিতেও এই অপরাধের ক্ষমা নেই।

এতকিছুর পরও বাংলাদেশ এখনও গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে সমর্থ হয়নি, উপরন্তু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির চেষ্টা চলেছে, শহীদ ও নির্যাতিতের সংখ্যা নিয়ে চলছে দেশি-বিদেশি অপপ্রচার। অন্যদিকে আমাদের গণহত্যা নিয়ে কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের অন্তত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হলেও, বাংলাদেশে শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এটি পড়ানো হয়।

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংরক্ষণ করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নজর সবসময় ইতিহাসের দিকে। সুযোগ পেলেই তারা পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস বদলে দেয়, ইতিহাসের মূল দলিল নষ্ট করে ফেলে, আর মিথ্যা তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালায়। অথচ এই গণহত্যা-নির্যাতনের ইতিহাস পড়ানোর কথা স্কুল থেকেই। এই চর্চার অভাবেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের গাছ বেয়ে ওঠে অপপ্রচারের আগাছা। এজন্য তরুণ প্রজন্মকে আমাদের প্রস্তুত করতে হবে, স্কুলের শিক্ষার্থীদের গণহত্যা জাদুঘরে নিয়ে আসতে হবে, তাদেরকে বিজয়ের পাশাপাশি গণহত্যার গল্প শোনাতে হবে।

মূলত এসব বিষয় অনুধাবণ করেই দক্ষিণের জেলাশহর খুলনায় গড়ে উঠেছে '১৯৭১: গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর'। এটি শুধু বাংলাদেশের নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর ও আর্কাইভ।

গণহত্যার স্মৃতি সংরক্ষণ এবং বাংলাদেশ ও বিশ্বের কাছে আমাদের গণহত্যার তাৎপর্য ছড়িয়ে দিতে গণহত্যা জাদুঘর যেসব কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো হল:

১) মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা-নির্যাতন, বধ্যভূমি, গণকবর সংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভ তৈরি ও সংরক্ষণ;
২) মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা-নির্যাতনের ছবি, স্মৃতি, স্মারক জাদুঘরের পাশাপাশি ডিজিটাল মাধ্যমে এবং ভার্চুয়ালি প্রদর্শন;
৩) দেশজুড়ে গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণে সেগুলি চিহ্নিত করা ও স্থায়ী স্মৃতিফলক লাগানো;
৪) গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী, সভা-সেমিনার, স্মারক বক্তৃতা ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা;
৫) বাংলাদেশের পূর্ণাঙ্গ গণহত্যা কোষ তৈরি;
৬) স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের গণহত্যা-নির্যাতনের গল্প বলা ও স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্ত করা;
৭) গণহত্যা-নির্যাতনের প্রত্যক্ষদর্শী বা ভুক্তভোগীদের সাক্ষাৎকারগ্রহণ এবং অডিও-ভিজুয়্যাল আর্কাইভ তৈরি;
৮) বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ও চর্চা কেন্দ্র তৈরি;
৯) বাংলাদেশের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য বৈশ্বিক প্রচারণা, নেটওয়ার্কিং ও অ্যাডভোকেসি করা;
১০) বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের প্রকাশনা।

২০১৪ সালের ১৭ মে খুলনা শহরের একটি ভাড়া বাড়িতে এই জাদুঘর ও আর্কাইভের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই জাদুঘরের জন্য জমি ও বাড়ি উপহার দেন এবং সেটিকে সংস্কার করে খুলনার ২৬ সাউথ সেন্ট্রাল রোডের নিজস্ব ভবনে গণহত্যা জাদুঘর নতুন করে যাত্রা শুরু করে গত বছরের ২৬ মার্চ। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই জাদুঘর ট্রাস্টের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন।

বাংলাদেশের এই একমাত্র প্রতিষ্ঠানটি খুলনায় স্থাপন করার পেছনে প্রধান দুটি কারণ। এক. চুকনগর গণহত্যাকে বিশ্ববাসীর নজরে আনা এবং দুই. মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত প্রতিষ্ঠান ও কার্যক্রমের বিকেন্দ্রীকরণ।

আমরা হয়তো লক্ষ করে থাকব, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণের অধিকংশ উদ্যোগই রাজধানী-কেন্দ্রিক। স্থানীয় পর্যায়ের যেসব উদ্যোগ আছে, বিশেষ দিবস ছাড়া সেগুলির দিকে নজর দিতে দেখা যায় না। অথচ মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা শুধু ঢাকাতে হয়নি, হয়েছে সারা বাংলায়। গণহত্যা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানা বা রাজারবাগে ঘটেনি, ঘটেছে সারা বাংলায়। বধ্যভূমি বলতে শুধু রায়েরবাজার নয়, সারা দেশে এরকম অসংখ্য বধ্যভূমি ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। অথচ পর্যাপ্ত গুরুত্বের অভাবে ঢাকার বাইরের এসব বধ্যভূমি বিলীন হতে শুরু করেছে।

গবেষকদের পাওয়া তথ্যমতে, মুক্তিযুদ্ধের সময়ে সবচেয়ে বড় গণহত্যা হয়েছিল খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার চুকনগর এলাকায়। অথচ এই গণহত্যাও ইতিহাসে উপেক্ষিত। ২০ মে চুকনগরে অন্তত ১০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল মাত্র ৫-৬ ঘণ্টায়। বিশ্বের কোথাও এত অল্প সময়ে এত মানুষ মারার নজির নেই। অথচ বাাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র যে ১৫ খণ্ড আছে তার কোথাও চুকনগরের গণহত্যার কথা স্থান পায়নি।

এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চুকনগরের এরশাদ মোড়ল– যার বাবা চেকন আলী মোড়লকে হত্যা করেছিল পাকিস্তান বাহিনী– তিনি এখনও শহীদ সন্তানের স্বীকৃতি পাননি। চুকনগর গণহত্যার লাশগুলি ভদ্রা ও ঘাংরাইল নদীতে লাশপ্রতি চার আনা চুক্তিতে ফেলে দিয়েছিল বেশ কয়েকজন। এরশাদ মোড়ল জানিয়েছেন, যারা লাশ ফেলেছিল তারা চারবার ৪,২০০ করে লাশ গুনেছিল। অথচ ভিয়েতনাম যুদ্ধে একসঙ্গে কয়েকশ' মানুষ হত্যার বিষয়টি অনেক বড় গণহত্যা হিসেবে আন্তর্জাতিক মহলে স্বীকৃত।

তাই জাদুঘরের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের একটি পূর্ণাঙ্গ আর্কাইভের গুরুত্বও অনেক। অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অনেক কাজ করেছেন এবং এর অধিকাংশই স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এবং আবেগ থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ধারাবাহিক ও পদ্ধতিগতভাবে করা হয়নি বলেই অধিকাংশ তথ্যই বিচ্ছিন্ন, অনেকটা ছেড়া মালার বিচ্ছিন্ন ফুলের মতো। ছেড়া এই মালাটিকে গাঁথতে এবং বিশ্ব দরবারে আমাদের গণহত্যা ও নির্যাতনের ইতিহাস তুলে ধরতে প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের ফসল গণহত্যা জাদুঘর ও আর্কাইভ।

বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র এই গণহত্যা জাদুঘরের বয়স তিন বছরও পার হয়নি। এরই মধ্যে এই জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ঝুলিতে যুক্ত হয়েছে বেশকিছু জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অর্জন। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিশেষ করে স্কুলের শিক্ষার্থী নিয়মিত এ জাদুঘরে আসছে, লাইব্রেরিতে পড়ছে, বিক্রয়কেন্দ্র থেকে মুক্তিযুদ্ধের বই কিনছে। জাদুঘর ট্রাস্টের উদ্যোগে প্রতিবছর একক বক্তৃতা, শহীদ স্মৃতি বক্তৃতা, এবং নানা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হচ্ছে। পালন করা হচ্ছে বিশেষ দিবসগুলি। আর্কাইভের হাতে এসেছে মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা ও নির্যাতনের উপর প্রচুর আলোকচিত্র,তথ্য, গ্রন্থ, প্রকাশনা, অডিও-ভিডিও জমা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম ও অর্জনের মধ্যে রয়েছে:

 পূর্ণাঙ্গ গণহত্যা কোষ/নির্ঘণ্ট তৈরিতে হাত দেওয়া হয়েছে, ইতোমধ্যেই এর ৩১ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে।
 খুলনা বিভাগে ২০টি বধ্যভূমি ও নির্যাতনকেন্দ্রে স্মৃতিফলক স্থাপন করা হয়েছে।
 জাতীয় জাদুঘরের সঙ্গে যৌথ প্রদর্শনী।
 ত্রিপুরা সরকারের সঙ্গে 'গণহত্যা-নির্যাতন ১৯৭১' শীর্ষক যৌথ প্রদর্শনী।
 আমাদের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে ত্রিপুরা সরকার একটি জাতীয় উদ্যান তৈরি করেছে এবং সেখানে গণহত্যা-নির্যাতন জাদুঘরের তত্ত্বাবধানে একটি ভাস্কর্য উদ্যান গড়ে তোলা হয়েছে।
 আমাদের উদ্যোগে 'মুক্তিযুদ্ধ ও ত্রিপুরা ১৯৭১' শিরোনামে ত্রিপুরা জাদুঘরের একটি কক্ষ সজ্জিত করা হয়েছে।
 বাংলাদেশ ডাকবিভাগ জাদুঘরের প্রস্তাবে সম্মত হয়ে গত বছর ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে ৭১টি স্মারক ডাক টিকেট প্রকাশ করছে। পাশাপাশি গত বছর গণহত্যা-নির্যাতন জাদুঘরের উপর একটি স্মারক খাম প্রকাশ করেছে।
 বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ বছরই গণহত্যা আর্কাইভ ও জাদুঘর চালু করতে যাচ্ছে গণহত্যা-নির্যাতন ও মুক্তিযুদ্ধ কেন্দ্র (Centre for Genocide-Torture and Liberation War Studies) শীর্ষক প্রকল্প। এই প্রকল্পের আওতায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, গণহত্যা এবং নির্যাতন নিয়ে তিন মাসের একটি একটি গবেষণাভিত্তিক একটি সার্টিফিকেট কোর্স করানো হবে। এর তত্ত্বাবধানে থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক খ্যাতনামা গবেষক, খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিক, শহীদ পরিবারের সদস্যরা। দেশের বিভিন্ন বধ্যভূমিতে স্মৃতিফলক লাগানো হবে এবং গণহত্যা ও নির্যাতন নিয়ে আন্তর্জাতিকমানের প্রকাশনা ও গবেষণা করা হবে। এই প্রকল্পের পৃষ্ঠপোষকতায় রয়েছে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

একাত্তরের গণহত্যা ও নির্যাতনকে বিশ্বদরবারে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি দরকার রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও গণসচেতনতা। এ বিষয়ে রাষ্ট্রের উদ্যোগী হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে সাম্প্রতিক সময়ে ২৫ মার্চকে রাষ্ট্রীয়ভাবে গণহত্যা দিবস পালনের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়টি।

রাষ্ট্রীয়ভাবে গণহত্যা দিবসের পালনের পরপরই আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ হবে ১৯৭১ সালের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়। বাংলাদেশের গণহত্যা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলে বর্তমান সরকার ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেটি আরও গ্রহণযোগ্যতা পাবে, এটি নিয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় অপপ্রচারকারীদের জলঘোলার সুযোগ কমে যাবে।

সীমিত সাধ্যে এই জাদুঘরের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বটে, কিন্তু এটি বিকশিত করার দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সবার। আর তাই সবার কাছে আমাদের আহ্বান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত শহীদদের নিদর্শন, স্মারক, আলোকচিত্র, বইপত্র, দলিল আমাদের দান করুন। বধ্যভূমি, গণহত্যা সম্পর্কে তথ্য থাকলে ফেসবুকে (www.facebook.com/71genocidemuseum), ইমেইলে (archivemuseum1971@gmail.com) বা অন্য যে কোনোভাবে জানান।