স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন এবং সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ

মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান
Published : 22 March 2017, 03:34 AM
Updated : 22 March 2017, 03:34 AM

স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন বা টেকসই উন্নয়ন কথাটা আগামী ১৫ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় এবং সামাজিক জীবনের সর্বস্তরে অনেক বেশি শোানা যাবে। জাতিসংঘের নেতৃত্বে ২০১৫ সালে পৃথিবীর ১৯৫টি দেশ ১৭টি স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের লক্ষ্যমালা নির্ধারণ করেছে। এটাকে এখন 'এজেন্ডা-২০৩০' বলা হচ্ছে।

স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন কী? সমাজের সবস্তরের উন্নয়নের মাধ্যমে একটি ন্যায়বিচার ও সাম্যভিত্তিক পৃথিবী গড়ার দিকে অগ্রসর হওয়াটাই হল স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন। প্রাণ-প্রকৃতি, প্রতিবেশ-পরিবেশ সম্পূর্ণ অক্ষত রেখে এই উন্নয়ন হতে হবে। এখানে প্রথম গুরুত্ব পাবে পরিবেশ; দ্বিতীয়ত, সামাজিক ন্যায়বিচার ও সাম্য, আর তৃতীয় হল উন্নয়ন।

বর্তমানে আমাদের দেশসহ পুঁজিবাদী ধারার দেশগুলোতে যে উন্নয়ন চলছে তা এই চিন্তাধারার উল্টো ধারার উন্নয়ন। উন্নয়নের জোয়ারের কথা আমরা প্রতিনিয়তই শুনি। আমাদের দেশেও উন্নয়ন হচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়নের ধারায় সামাজিক ন্যায়বিচার এবং পরিবেশের প্রশ্নটি সম্পূর্ণভাবে উপেক্ষিত। বাংলাদেশের সমাজের নিচের দিকের ১০% মানুষের বার্ষিক আয় বৃদ্ধির হার গত কয়েক দশকে -০.৭৪% হারে কমে; অন্যদিকে উপরের ১০% মানুষের এই হার ০.৭২% হারে বেড়ে গেছে। অর্থাৎ ধনী এবং গরিবের ফারাক আরও বেড়ে গেছে। আমাদের নদীগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে, বায়ু দূষণের মাত্রা পৃথিবীর নিকৃষ্টতমদের মধ্যে অন্যতম, জলাধার নষ্ট হচ্ছে, বনাঞ্চল ও পাহাড় ক্রমান্বয়ে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, এখন সুন্দরবনও হুমকির মুখে। এ রকম অনেক উদাহরণ দেওয়া যাবে। চলমান উন্নয়নের ধারায় প্রকৃতি একেবারেই বিপন্ন। পরিবেশ উন্নয়ন সূচকে ১৭৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান ১৬৯।

প্রকৃতিকে ধ্বংস করে যে উন্নয়নের ধারা বাংলাদেশে বহমান– এটা টেকসই উন্নয়ন নয়। কিন্তু বাংলাদেশ সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল বা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমালার একটি স্বাক্ষরকারী দেশ। বিশ্বের আরও ১৯৫টি দেশের সঙ্গে আমরাও এই অঙ্গীকার করেছি যে, আগামী ১৫ বছর ধরে আমরা টেকসই উন্নয়নের পথে হাঁটব। যদিও আমরা দেখতে পাচ্ছি, কার্যক্ষেত্রে তেমনটা ঘটছে না। বাস্তবে দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিকভাবে যদি টেকসই উন্নয়নের দাবি সচেতনভাবে উত্থাপন না করা হয়, তাহলে সেই উন্নয়ন কখনও টেকসই হবে না। কিন্তু জাতিসংঘ থেকে টেকসই উন্নয়নের নীতিমালা ঘোষণা করা হয়েছে, যা কিনা অনেকটা উপর থেকে আরোপ করার মতো। এর কারণ অনেক গভীরে। আমার পর্যবেক্ষণ হল, পুঁজিবাদের সংকটগুলো মোকাবিলা করার জন্য, পুঁজিবাদকে আরও স্থায়িত্বশীল করার জন্য সমাজতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণার অগ্রসরতাগুলো তারা কাজে লাগাতে চাচ্ছে। জাতিসংঘের ঘোষণার দিকে তাকালেই এটা বোঝা যায়।

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমালার ১৭টি গোল (লক্ষ্য) রয়েছে। এর মধ্যে এক নম্বর লক্ষ্যে বলা হয়েছে, দুনিয়ায় আর ক্ষুধা-দারিদ্র্য থাকতে পারবে না। দুই নম্বরে বলা হচ্ছে, সবার জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। পাঁচ নম্বরে বলা হচ্ছে, নারী ও পুরুষের সমতা আনতে হবে। ১০ নম্বর লক্ষ্যে বলা হয়েছে, সারা পৃথিবীতে সাম্য তৈরি করতে হবে। অর্থাৎ মৌলিক যে অধিকারগুলো মানুষের প্রয়োজন, উপর থেকে তারা বলে দিচ্ছে এগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৩ নম্বরে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পরিকল্পনা থাকতে হবে। ১৪ নম্বর লক্ষ্যে বলা হয়েছে, সমুদ্রের নিচের জলজ প্রাণীদের আমরা রক্ষা করব। ১৫ নম্বরে বলা হয়েছে স্থলবাসী প্রাণীদের সুষ্ঠুভাবে রক্ষা করার কথা। ১৬ নম্বর লক্ষ্যটি বেশ আগ্রহোদ্দীপক। এতে বলা হয়েছে, আমরা দুনিয়ায় শান্তি ও ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করব। ১৭ নম্বরে বলা হয়েছে, স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে আমরা বন্ধুত্ব ও অংশীদারত্বমূলক সম্পর্ক দৃঢ় করব।

যদি সরকার সত্যই স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন করতে চায়, কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। এটা তারা করতে পারবে কি পারবে না, সেটা রাজনৈতিক সদিচ্ছার উপর নির্ভর করে।কিন্তু আমাদের সরকার তো অঙ্গীকারাবদ্ধ যে, তারা এটা করবে। তাহলে যারা সমাজে পরিবর্তন চায়, জনগণের অধিকারের পক্ষে কথা বলে, তাদের সবার উচিত সরকারকে এই প্রতিজ্ঞা মানতে বাধ্য করা। সরকারকে প্রতিনিয়ত স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত যে, বিশ্বের দরবারে তোমরা যা বলে এসেছ, তা তোমাদের পালন করতে হবে।

সুন্দরবন প্রসঙ্গটিও টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমালার সঙ্গে যুক্ত। কারণ স্থল ও জলজ প্রাণী রক্ষা ও পরিবেশের বিষয়টি এর সঙ্গে জড়িত। সুন্দরবন একটা ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট (বাদাবন)। ম্যানগ্রোভ বনকে বলা হয় সবচেয়ে বেশি জৈবিকভাবে উৎপাদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বাস্তুতন্ত্র। বিশ্বে এরপরই যে বাস্তুতন্ত্র গুরুত্ব পায়, সেটা হল জলাভূমি তথা হাওর। আমাদের দেশে এই দুটি বাস্তুতন্ত্রই আজ বিপন্ন, হুমকির মুখে।

সুন্দরবন কিন্তু ২০০ বছর আগে ভূতাত্ত্বিকভাবে বর্তমানের আয়তনের চেয়ে বেশি বিস্তৃত ছিল। সুন্দরবনের উত্তরে গিয়ে মাটি খুঁড়লে এর অনেক নিদর্শন পাওয়া যাবে। পুরাতন গাছের গোড়া এখনো মাটির নীচে সেখানে রয়ে গেছে। এটা নিয়ে জিওলজিস্টরা গবেষণা করতে পারে। ইতিহাস বলছে, মানুষ এই বনকে ধীরে ধীরে সংকুচিত করে ফেলেছে। আমরা জানি যে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছি। এ রকম অবস্থায় সুন্দরবন কীভাবে রক্ষা পাবে।

প্রাকৃতিক নিয়মটা হল, বন নিজেই ক্রমশ ভূমির দিকে সরতে থাকবে। অর্থাৎ সুন্দরবন উত্তর দিকে বাড়তে থাকবে; কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে উত্তর দিকে যে বন ছিল তা মানুষ ধ্বংস করে দখল করেছে। সেখানে ঘরবাড়ি বানিয়ে মানুষ যেভাবে অবস্থান করছে, তাতে করে বনের পক্ষে আর সেদিকে আগানো সম্ভব নয়। মোট কথা, প্রাকৃতিকভাবে সুন্দরবন নিজেকে বাঁচাতে পারত, সেই সুযোগটা আমরা রাখিনি। এর সঙ্গে যেটুকু বন রয়েছে এখন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র, ওরিয়নের বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সেটুকুও আমরা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি।অথচ আমাদের সরকার টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় স্বাক্ষর করেছে।

পৃথিবীতে যে চারটি দেশ কয়লা সবচেয়ে বেশি উৎপাদন করে তাদের মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া। যুক্তরাষ্ট্রে এখনও কয়লাশক্তির ব্যবহার প্রচুর।পেনসিলভেনিয়া অঙ্গরাজ্য একসময় কয়লা উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্রে এক নম্বর অবস্থানে ছিল। এখন তারা আছে চতুর্থ অবস্থানে। কয়লাখনির কারণে এই পেনসিলভেনিয়ায় যে পরিমাণ পরিবেশগত বিপর্যয় ঘটেছে, গত ৬০-৭০ বছর ধরে তারা হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করে ও কয়লার ক্ষতি কাটিয়ে পরিবেশকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে পারছে না।

কয়লা হল সবচেয়ে নোংরা জ্বালানি। এ থেকে বহু প্রকারের বিষাক্ত দ্রব্য নির্গত হয়। কয়লা নিজেরা উত্তোলন করে পোড়াই, আর আমদানি করে পোড়াই এর ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা আমাদের জন্য মুশকিল।পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় অর্থনীতির দেশগুলো যে রকম বিনিয়োগ করতে পারে, আমরা তার এক শতাংশও করতে পারব না। সেসব দেশে অসংখ্য আইন ও বিধি মেনে এসব কাজ করতে হয়। আমাদের দেশে দেখা যাবে বিধি থাকলেও তা অনেকে পরোয়া করবে না। সেই অর্থে তাই সুন্দরবনের ধারে কয়লা প্রকল্পটা হবে আমাদের জন্য আত্মঘাতী।

সরকারের কর্মকাণ্ড বিশ্লেষণ করলে আরও উদ্বেজনক অনেক কিছুই দৃশ্যমান হয়। বছর দুয়েক আগে বাংলাদেশ সরকার নেদারল্যান্ডস সরকারের সঙ্গে মিলে যৌথভাবে একটি বড় পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এটার নাম দেওয়া হয়েছে 'বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান ২১০০' বা ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০। অর্থাৎ এটা হল ২১০০ সালকে সামনে রেখে, আগামী ৮৫ বছর ধরে বাংলাদেশের সব ভূমি ও পানি ব্যবস্থাপনার মহাপরিকল্পনা। এর চেয়ে বড় কোনো মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশের ইতিহাসে তো বটেই, এমনকি আমাদের উপমহাদেশেও গৃহীত হয়েছে বলে মনে হয় না। এত বড় একটা পরিকল্পনা হয়ে গেল, বলা যায় অনেকটাই গোপনে, নিভৃতে।

'ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০'এ বলা আছে যে, এটা হবে অংশীদারিত্বমূলক অর্থাৎ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে এটা বাস্তবায়ন করা হবে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমালায় যেমন কী করতে হবে, না-করতে হবে, সে বিষয়ে রচনা লেখা আছে, এখানেও তেমনই।কিন্তু বাস্তবতায় আমরা দেখি ভিন্ন চিত্র। সুন্দরবন নিয়ে ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় যেসব কথা আছে, তা মূলত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। কোথায় পোল্ডার বসাতে হবে, কোথায় বাধ দিতে হবে, কোথায় নদী খনন করতে হবে– এসব বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে এই বিষয়টির ওপর জোর দেওয়া হয়নি যে, পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।

এ রকম একটা পরিকল্পনা কাগজে-কলমে অংশীদারিত্বমূলক বলেই সরকার দায়িত্ব পালন করে ফেলল। এত বড় একটা মহাযজ্ঞ, সেটা কেন আমাদের দেশের সংসদে উত্থাপিত হল না, কেন প্রতিটি রাজনৈতিক সংগঠন জানল না, কেন প্রতিটি সামাজিক, পরিবেশবাদী সংগঠন জানতে পারল না? এখানে কোনো স্বচ্ছতা নেই, জবাবদিহিতা নেই, রাজনৈতিকভাবে এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা যদি ভূপ্রকৃতি বিবেচনায় নিই, তাহলেও এটা গ্রহণযোগ্য নয়। নেদারল্যান্ডস সরকার তাদের দেশে এ রকম একটা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে। তাদের দেশে জনসংখ্যা কম, পতিত জমিও অনেক। পোল্ডার, বেড়িবাধ করে তারা যেভাবে এগিয়েছে, সেই একই দর্শন আমাদের দেশে প্রয়োগ হলে বিরাট ক্ষতি হবে।ষাটের দশক থেকে আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলে কিন্তু সেটাই ঘটছে।ভূতাত্ত্বিক দিক থেকে এর কোনো ভালো ফল দেখা যায় না। বর্তমান এই ব-দ্বীপ পরিকল্পনারও মূল চালক হল নেদারল্যান্ডস। ফলে এটা নিয়ে কী হবে, তা পর্যবেক্ষণের দাবি রাখে।

এই পরিকল্পনায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের লোকদের ৬০ শতাংশই নেদারল্যান্ডসের। বাকি যে ৪০ শতাংশ লোক বাংলাদেশের, তাদের মধ্যেও অনেকে মূলত প্রবাসী বা তারা কাজ করবে কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের হয়ে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেন-বাপা যৌথ কনফারেন্সে এ বিষয়গুলো বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। সেই সভায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, ব-দ্বীপ একটা ভূতাত্ত্বিক ও পরিবেশগত ব্যাপার হলেও বিশেষজ্ঞ দলে কোনো ভূতত্ত্ববিদ, পরিবেশবিদ, মৃৎবিজ্ঞান বিশেষজ্ঞ, মৎস্যসম্পদ বিশেষজ্ঞ নেই। এতে মূলত রয়েছে প্রকৌশলীরা এবং কিছু অর্থনীতিবিদ। ওই সভায় ব-দ্বীপ পরিকল্পনা প্রকল্পের দায়িত্বরত সরকারি কর্মকর্তা জনাব শামসুল আলম উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন যে, এই পরিকল্পনা সরকার নতুন করে প্রণয়ন করছে। এটা ওয়েবে প্রকাশিত হবে, জনগণ মতামত দিতে পারবে।

এখানে উল্লেখ্য যে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমালা কিংবা ব-দ্বীপ পরিকল্পনার মতো ব্যাপারগুলোর সঙ্গে জনগণ যদি গোড়া থেকে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখতে পারে, তাহলে কিছুটা ভালো ফলাফল হয়তো পাওয়া যাবে। যদি সার্বিক জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী সবকিছু হতে হয়, তাহলে রাজনৈতিকভাবে ব্যাপারগুলো পরিচালনা করতে হবে। রাজনীতির উপরে কিছু নেই। কিন্তু যতদিন আমরা সেখানে না পৌঁছাতে পারি, ততদিন তাদের যে অঙ্গীকার, সেটা সামনে রেখেই সরকারকে বাধ্য করতে হবে।

কৌতূলোদ্দীপক বিষয় হল, ব-দ্বীপ পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে ছয় বিভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটা হল সচল ব-দ্বীপ বা উপকূলীয় এলাকা, সুন্দরবনও এর মধ্যে পড়ে। দ্বিতীয় হল বড় বড় শহরগুলো, ঢাকার মতো শহরগুলোকে কীভাবে রক্ষা করা হবে। তৃতীয় হল হাওড় অঞ্চল। যদিও হাওড় অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সরকারের একটা মাস্টার প্ল্যান আছে, তবু এটাকে ব-দ্বীপ পরিকল্পনার মধ্যে আনা হয়েছে। এভাবে পার্বত্য অঞ্চলকে এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বরেন্দ্র অঞ্চলকেও এর ভেতরে রাখা হয়েছে।

সবশেষে বলা হয়েছে বিবিধ এলাকার কথা, অর্থাৎ সারা বাংলাদেশই এর অন্তর্ভুক্ত। যদিও নাম দেওয়া হয়েছে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা, কিন্তু এর মধ্যে পুরো বাংলাদেশ রয়েছে। এ জন্যই জেনে রাখা জরুরি যে, এর চেয়ে বড় কোনো মহাপরিকল্পনা এর আগে কোনোদিন হয়নি। অথচ এত বড় একটা পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক মহল বা সংবাদমাধ্যম, কিংবা বিশেষজ্ঞ পর্যায় কোথাও কোনো নড়াচড়া নেই। অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে কিছুই জানে না। কিন্তু এখন সময় এসেছে, এগুলো নিয়ে সজাগ জনসচেতনতা বাড়ানোর।

পরিবেশ ঠিক না রাখতে পারলে আমরা কেউই বাঁচব না। তাই এসব বিষয়ে আমাদের আরও বেশি সোচ্চার হওয়ার এখনই সময়।